ছোট তরফ : রাজা রাজকৃষ্ণ দেব বাহাদুর
মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের পুত্র রাজা রাজকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের জন্ম হয় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র পনের বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন; ফলে বিপুল ধনসম্পদ ও বিস্তৃত সম্পত্তির মালিক হওয়ায় রাজপুত্র বা আমীর ওমরাহ্’র মতো জীবন-যাপন করতে থাকেন। তাঁর বিবাহ হয় ১৭৯১ সালে; বিবাহের শোভাযাত্রায় বড়লাট, প্রধান সেনাপতি থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ বহু আধিকারিক যোগদান করেন; তাছাড়া মহারাজা নবকৃষ্ণ যে চার হাজার ‘সওয়ার’ রাখবার অধিকারী ছিলেন, তারাও এই শোভাযাত্রায় যোগদান করায় যে জাঁকজমকের সঙ্গে এই শুভ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার শোভা অত্যন্ত দর্শনীয় হয়েছিল।
রাজা রাজকৃষ্ণ অত্যন্ত রূপবান এবং দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন। তিনি বাংলা, হিন্দী ও ফার্সী ভাষা ভালই জানতেন। তাঁর সময়ের সঙ্গতি ও সংস্কৃত শিক্ষার তিনি শ্রেষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর দান ও উদারতা ছিল সীমাহীন। কুলীন কায়স্থদের বংশলতিকা ও মেলবন্ধনের উপর তিনি বাংলায় একখানি বই লেখেন। তিনি উর্দু ও ফার্সী উভয় ভাষাতেই ‘দেওয়ান রাজা’ ও ‘মসনবী রাজা’ নামক দু’খানি পুস্তক রচনা করেন। তিনি কাস্টমস হাউস ও কতকগুলি থানা নির্মাণের জন্য সরকারকে জমি দান করেন, এছাড়া ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণের জন্য তিন মাইল দীর্ঘ ভূমি দান করেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি একশ’টি পুকুর খনন করিয়েছিলেন। আর খড়দহ থেকে নাটাগড় পর্যন্ত একটি খাল খনন করিয়ে দিয়েছিলেন।
তাঁর পিতার মৃত্যুর পর, ভারতের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল স্যার জন ম্যাকফার্সন তাঁকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাসে মাত্র ৪২ বছর বয়সে রাজা রাজকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি রেখে যান আট পুত্র : ১. শিবকৃষ্ণ, ২. কালীকৃষ্ণ, ৩. দেবীকৃষ্ণ, ৪. অপূর্বকৃষ্ণ, ৫. মাধবকৃষ্ণ, ৬. কমলকৃষ্ণ, ৭. নরেন্দ্রকৃষ্ণ এবং ৮. যাদবেন্দ্রকৃষ্ণ। এঁদের মধ্যে দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ এবং সপ্তম পুত্রের সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে আলোচনা করা হলো।