ছোটমাসির মেয়েরা
কলকাতা শহরে বাঘ, ভল্লুক কিংবা গন্ডার নেই বটে, তবে কিনা চোর-ডাকাত আর ছেলেধরা সবসময় গিসগিস করছে৷ আমার ছোটমাসির কাছে তাই এই শহরটাও গভীর জঙ্গলের মতন৷ সব সময় সাবধানে থাকতে হবে৷
ছোটমাসির দুই মেয়ে, রুমু আর ঝুমু৷ ওদের আরও দুটো বেশ ভালো-ভালো নাম আছে বটে, কিন্তু সে-দুটো বেশ শক্ত, রুমু-ঝুমু নামেই সবাই চেনে৷ ছোটমাসি তাদের এক মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করেন না৷ নেহাত ইস্কুলের সময়টুকু ছাড়া৷ তাও ছোটমাসি ওদের ইস্কুলে পৌঁছে দেন, দুপুরে টিফিনের সময় যান, আবার বিকেলে যান নিয়ে আসতে৷ রুমু আর ঝুমু পড়ে ক্লাস এইট আর নাইনে৷ ওরা বেশ বড় হয়ে গেছে, নিজেরাই স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, কিন্তু তার কোনো উপায়ই নেই, ছোটমাসি সবসময় ওদের পাহারা দিয়ে রাখতে চান যে!
আমি একদিন বলেছিলাম, ‘এই তো বাড়ির কাছেই স্কুল, ওরা তো হেঁটেই চলে আসতে পারে, কত ছেলেমেয়ে আসে৷’
ছোটমাসি চোখ গোল-গোল করে বললেন, ‘আর যদি ছেলেধরা ওদের ধরে নিয়ে যায়? ও পাশের পার্কটায় কয়েকটা বিচ্ছিরি চেহারার লোক বসে থাকে, দেখলেই আমার কীরকম যেন সন্দেহ হয়!’
আমি বললাম, ‘ছেলেধরা ওদের ধরবে কেন? ওরা তো ছেলে নয়!’
ছোটমাসি তখন এক ধমক দিলেন, ‘তুই চুপ কর৷ তুই কিছু বুঝিস না!’
টিফিনের সময় গিয়ে ছোটমাসি কড়া নজর রাখেন ওরা যাতে কোনোরকমে ফুচকা বা ঝালমুড়ি না খেয়ে ফেলে! রুমু-ঝুমুর ক্লাসের বন্ধুরা মনের সুখে আলুকাবলি আর ঘুগনি-চটপটি খায়, কিন্তু ওদের সেদিকে যাবারই উপায় নেই৷ ছোটমাসির চোখের সামনে বসে ওদের বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে হয়৷
আমি অবশ্য মাঝে-মাঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে ওদের ডালমুট, চানাচুর আর হজমি গুলি খাওয়াই৷ যদিও জানি, ধরা পড়ে গেলে ছোটমাসির হাতে আমাকেও বোধহয় মার খেতে হবে!
ছোটমাসির ধারণা, চোর-ডাকাতের মতন অসুখের জীবাণুরাও সবসময় আমাদের চারপাশে ওত পেতে আছে৷ কখন যে তারা মুখ দিয়ে নাক দিয়ে ঢুকে পড়ে তার ঠিক নেই৷ সেইজন্য বাইরের কোনো জিনিস খাওয়া ওঁর মেয়েদের একদম বারণ৷
একদিন আমি ছোটমাসির বাড়ির রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলাম৷ দেখি কী, সেখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখটা একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধা৷
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ছোটমাসি, ও কে?’
ছোটমাসি বললেন, ‘ও-ই তো আমাদের রান্নার ঠাকুর!’
‘ওর মুখ বাঁধা কেন?’
‘বাঃ মুখ বাঁধা থাকবে না? আমার রান্নাঘরে মুখ-খোলা কারুকে ঢুকতে দিই না৷ মনে কর, দুধ জ্বাল দিচ্ছে কিংবা ঝোল রাঁধছে, এমন সময় আপন মনে কথা বলে ফেলল! আর কথা বললেই একটু থুতু ছিটকে বেরিয়ে আসতে পারে! তাহলে ওদের সেই থুতুমাখা জিনিস আমরা খাব?’
‘রান্না করতে করতে আপন মনে কথা বলবে কেন?’
‘যদি বলে? হঠাৎ বলে ফেলতেও তো পারে!’
আমি হাসতে-হাসতে বললাম, ‘আমরা কথা বলার সময় তো থুতু বেরোয় না!’
ছোটমাসিও হাসতে-হাসতে বললেন, ‘একটু-একটু বেরোয়, চোখে দেখা যায় না! স্বাস্থ্য-বইতে লেখা আছে!’
ছোটমাসিদের দুধ নেওয়া হয় বাড়ির সামনেরই একজন গোয়ালার কাছ থেকে৷ দুধ দোয়াবার সময় ছোটমাসি রোজ সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে একফোঁটাও জল মেশানো না হয়৷ এ-ব্যাপারে তিনি ঠাকুর-চাকরদেরও বিশ্বাস করেন না৷ শুধু তাই নয়, তিনি আর-একটা কাণ্ডও করেন৷ সেটা অবশ্য আমি নিজে দেখিনি, তবে শুনেছি৷ দুধ দোয়াবার আগে নাকি ছোটমাসি রোজ সেই গরুকে দশখানা জেলুসিল ট্যাবলেট গুঁড়ো করে খাইয়ে দেন৷ গরুর যদি অম্বল হয়, তাহলে সেই দুধ খেয়ে ওঁর মেয়েদেরও অম্বল হবে সেইজন্য এই ব্যবস্থা৷
এই তো গেল খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার৷ কিন্তু কলকাতার রাস্তাঘাটে তো অনেক নোংরা থাকে, আর নিশ্বাসের সঙ্গে তার গন্ধও নাকে ঢুকে যায়৷ রাস্তায় বেরুলে নিশ্বাস তো নিতেই হবে! সেইজন্য ছোটমাসি মেয়েদের নাকেরও ব্যায়াম করান৷
প্রত্যেক শনি-রবিবার ছোটমাসি দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যান ঠাকুরপুকুর৷ সেখানে ওঁদের আর-একটা চমৎকার বাড়ি আছে৷ সাদারঙের তিনতলা বাড়ি, মস্ত বড়ো দেওয়াল দিয়ে ঘেরা, পাশে এক বৈঠকখানা এখানে থাকেন রুমু-ঝুমুর দাদু আর দিদিমা৷
এখানে ছোটমাসি মেয়েদের নিয়ে আসেন হাওয়া খাওয়াতে৷ এখানে ধুলোবালি নেই, কাছাকাছি কোথাও কল-কারখানা নেই বলে বাতাসে ধোঁয়া নেই, খুবই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ছোটমাসি রুমু-ঝুমুকে নিয়ে চলে আসেন সেই বাড়ির ছাদে৷ তারপর তাদের পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বলেন, ‘নিশ্বাস নে! ভালো করে নিশ্বাস নে!’
ঠিক ড্রিল মাস্টারের মতন ছোটমাসি সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন, ‘নিশ্বাস নে, এবার ছাড়, ছাড়৷ আবার নে!’
খানিকক্ষণ এরকম করার পর ছোটমাসি বলেন, ‘এবার হাঁ করে খানিকটা হাওয়া খেয়ে ফ্যাল! এরকম টাটকা হাওয়া তো কলকাতায় পাবি না!’
রুমু-ঝুমু মায়ের সব কথা শুনে যায় লক্ষ্মী মেয়ের মতন৷ ওরা বুঝে গেছে, প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই৷ ছোটমাসির মনটা বড্ড নরম, কেউ ওঁর কথায় কোনোদিন প্রতিবাদ করলেই উনি অমনি কেঁদে ফেলেন৷
এত সব করেও রুমু-ঝুমুর চেহারা বেশ সুন্দর হয়েছে, পড়াশোনোতেও ওরা ভালো৷ ছোটমাসির এরকম বাড়াবাড়ি দেখে আমরা মাঝে-মাঝে হাসাহাসি করি বটে, তাতে কিন্তু ছোটমাসি চটে যান না৷ নিজেও হেসে ফেলে বলেন, ‘তবুও দ্যাখ না, এত সাবধানে থেকেও কি সবসময় ভালো জিনিস পাওয়ার উপায় আছে? সেদিন ওদের খাওয়ার জন্য খুব বেছে বেছে ছোলা ভিজিয়ে দিলুম, তারপর ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে দেখি কী, একটা ছোলা পোকায় ফুটো করা!’
একদিন আমি ছোটমাসিদের বাড়িতে দুপুরে বেড়াতে গেছি৷ ছোটমাসি তখন স্নান করছিলেন৷ বাথরুম থেকে যখন বেরিয়ে এলেন তখন তাঁর চোখ দুটি কপালে উঠে গেছে, মুখে দারুণ ভয়ের চিহ্ন!
আমিও ভয় পেয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হল?’
ছোটমাসি বললেন, ‘হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল, আর তারপরেই যা বুকটা কাঁপতে লাগল…’
‘কী কথা?’
‘তুই জানিস, পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল?’
আমি আকাশ থেকে পড়লাম৷ এটা আবার একটা নতুন কথা নাকি? এতে ভয় পাবারই বা কী আছে?
আমি বললাম, ‘তাতে কী হয়েছে?’
ছোটমাসি বললেন, ‘পৃথিবীর তিনভাগ জল এটা আগে খেয়াল করিনি! তার মানে আমার মেয়েরা তো কখনো-না-কখনো জলের ধারে যাবেই৷ এদিকে আমি ওদের সাঁতার শেখাইনি! ওরা ডুবে যাবে যে! কালই যদি ডুবে যায়?’
আমি হাসতে লাগলাম৷
ছোটমাসি বললেন, ‘ধর, ওরা লেখাপড়ায় খুব ভালো হল৷ তারপর বিলেত-আমেরিকায় গেল…’
আমি বললাম, ‘তা তো যেতেই পারে৷’
‘তখন সমুদ্র পেরিয়ে যেতে হবে…মনে কর, সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্লেন যাচ্ছে, হঠাৎ প্লেনটা ভেঙে গেল আর ওরা সমুদ্রে গিয়ে পড়বে…তখন যদি সাঁতার না জানে, উরিবাব্বাঃ, কী সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার হবে!’
‘বালাই ষাট, ওদের প্লেন কেন ভাঙবে! তবে যদি প্লেন ভেঙেই যায়, তখন অত উঁচু থেকে সমুদ্রে পড়লে…’
‘প্যারাসুট থাকবে তো! প্লেনে প্যারাসুট থাকে না? প্যারাসুটে করে জলে নামবে, তারপর তো সাঁতার জানতে হবে৷’
আমি কল্পনা করেত লাগলুম প্লেন থেকে প্যারাসুট নিয়ে আমাদের রুমু আর ঝুমু নামছে আটলান্টিক মহাসাগরে, তারপর জলপরিদের মতন সাঁতার কাটতে লাগল৷
‘যদি জাহাজে করে যায়, জাহাজও তো ফুটো হয়ে যেতে পারে?’
‘তা তো বটেই!’
‘পরশু থেকে ওদের গরমের ছুটি৷ পরশু থেকেই আমি ওদের সাঁতার শেখাব!’
‘ঠিক আছে আমিই সাঁতার শিখিয়ে দেব ওদের৷’
‘তুই সাঁতার শেখাবি? কোথায়?’
‘কেন, গঙ্গায়৷’
‘গঙ্গায়? সাঁতার না শিখেই কেউ গঙ্গায় নামে? রোজ কত লোক ডুবে যায়৷’
‘তা হলে বালিগঞ্জের লেকে?’
‘ধুত ওখানে একগাদা লোক সাঁতার কাটে৷ কত রকম নোংরা থাকে জলে…৷’
ছোটমাসি উঠে পড়ে লেগে গেলেন তাঁর দুই মেয়ের সাঁতার শেখাবার ব্যবস্থা করতে৷ যে-কোনো জায়গায় তো ছোটমাসি মেয়েদের সাঁতার শেখাতে রাজি হতে পারেন না৷ একদম পরিষ্কার জল চাই, সেই জলে আবার ওষুধ ফেলতে হবে৷ তার আগে মেয়েদেরও নিতে হবে নানারকম ইঞ্জেকশান৷
ছোটমাসির নানান জায়গায় চেনাশোনা৷ শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা করে ফেললেন কলকাতার খুব বড় একটা ক্লাবের সুইমিং পুলে৷ তাও অন্য সকলের সঙ্গে নয়৷ খুব ভোরবেলা যখন কেউ যায় না, সেই সময় আগের দিনের জল বদলে নতুন জল ভরা হবে, তাতে মেশাবেন ছোটমাসি তাঁর নিজস্ব ওষুধ৷ এবং সাঁতার শেখাবার জন্য ছোটমাসি ঠিক করলেন একজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়েকে৷ ছোটমাসির ধারণা, যারা ইংরেজি বলে তারা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়৷
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, রুমু-ঝুমু এর আগে কখনো মায়ের কথার অবাধ্য না হলেও সাঁতার শিখতে রাজি হল না৷ দুজনেই বলল, জলে নামতে ওদের ভয় করে৷
এদিকে ছোটমাসি একটা জিনিস ধরলে কিছুতেই সেটা মাঝপথে ছাড়েন না৷ ওদের কত করে বোঝালেন৷ গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘এত ভয় কিসের? দেখবি একদিন-দু’দিন নামলেই ভয় কেটে যাবে৷ ভালো ট্রেনার থাকবে৷ দরকার হলে আমি জলে ঝাঁপিয়ে পড়ব!’
মেয়েরা তবু শুনতে চায় না৷ কাঁচুমাচু মুখ করে বলতে লাগল, ‘এ বছর না, পরের বছর!’
সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক, এখন মেয়েরা রাজি না হলে কি চলে? কত কষ্ট করে ছোটমাসি সেই ক্লাবের লোকদের রাজি করিয়েছেন আলাদা ব্যবস্থা করবার জন্য৷ সুতরাং ছোটমাসি কাঁদতে শুরু করলেন৷
কাঁদতে-কাঁদতে বলতে লাগলেন, ‘আমি তোদের ভালোর জন্য এত সব করি৷ আর তোরা আমার কথা শুনবি না? সাঁতার না শিখলে কবে হঠাৎ ডুবে যাবি, পৃথিবীর তিনভাগ জল, একভাগ স্থল!’
সুতরাং শেষ পর্যন্ত রুমু-ঝুমুকে রাজি হতেই হল৷
যেদিন প্রথম সাঁতার শিখতে যাওয়া হবে সেদিন আমিও ভোরবেলা গিয়ে হাজির হলাম৷ ওদের উৎসাহ দিতে হবে তো! রুমু-ঝুমুর মুখচোখে খুব ভয়-ভয় ভাব৷ তখনও বলছে, ‘মা, আজ না গেলে হয় না? বড্ড ভয় করছে!’
ছোটমাসি খুব নরম গলায় বললেন, ‘দেখিস, কোনো ভয় নেই৷ আমি তো পাশেই থাকব৷’
সেই ক্লাবে গিয়ে সুইমিং পুলের কাছে দাঁড়িয়ে রুমু আর ঝুমু এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ হি হি করে হেসে উঠল৷ ওদের ট্রেনার মেয়েটি জলে নেমে দাঁড়িয়ে আছে৷ সে অবাক৷ আমরা আরও বেশি অবাক৷ ভয়ের চোটে রুমু-ঝুমুর মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
ছোটমাসি বললেন, ‘ওমা, তোরা ওরকম করছিস কেন? ভয় নেই! ভয় নেই!’
ওরা আরও জোরে হেসে উঠল৷
ছোটমাসি বললেন, ‘থাক, থাক, ভয় পাচ্ছে৷ ওদের নামতে হবে না!’
রুমু আর ঝুমু অমনি লাফিয়ে পড়ল জলে৷ ছোটমাসি আঁতকে উঠলেন যেন৷
তারপরই দেখলাম একটা মজার দৃশ্য৷ ট্রেনার মেয়েটি ওদের দু’জনকে ধরতে আসতেই ওরা পাশ কাটিয়ে ঝপাস ঝপাস করে সাঁতার কেটে দূরে চলে গেল৷ খুব পাকা সাঁতারুর মতন৷
অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়েটিও হেসে উঠল৷ ছোটমাসি প্রথমটায় ঠিক বুঝতে পারেননি৷ তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হল? মেয়েটি হাসছে কেন?’
আমি বললাম, ‘ওর বোধহয় খুব হাসিখুশি স্বভাব!’
তারপর ছোটমাসি বললেন, ‘ওরা অতদূর চলে গেল কী করে? সাঁতার না জেনেও সাঁতার কাটছে?’
আমি বললাম, ‘তোমারই মেয়ে তো৷ তুমি খুব ভালো সাঁতার জানো, তাই ওদের আর শেখার দরকার হয়নি!’
রুমু-ঝুমু এই সময় টুপ করে ডুবে গেল৷ আর ওঠেই না, ওঠেই না৷ তখন ছোটমাসি খুব ভয় পেয়ে নিজেই শাড়ি-টাড়ি পরা অবস্থায় জলে লাফিয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন, আমি ওঁর হাত টেনে ধরলাম৷ রুমু-ঝুমু ডুবসাঁতার কেটে অনেক দূরে গিয়ে ভুশ করে আবার মাথা তুলল৷
এবার ছোটমাসি বুঝলেন৷ গালে হাত দিয়ে বললেন, ‘ওমা ওরা সাঁতার জানে? এই, তোরা কোথায় সাঁতার শিখলি? কবে শিখলি?’
রুমু-ঝুমু চিত-সাঁতার কাটতে-কাটতে উত্তর দিল, ‘ঠাকুরপুকুরে৷’
ছোটমাসি আরও অবাক হয়ে বললেন, ‘ঠাকুরপুকুরে ওরা কোথায় সাঁতার শিখল?’
আমি বললাম, ‘ঠাকুরপুকুর নাম যখন, নিশ্চয়ই সেখানে অনেক পুকুর আছে৷’
ছোটমাসি বললেন, ‘পুকুর কোথায়? আমাদের ঠাকুরপুকুরের বাড়িতে একটা নোংরা ডোবা আছে৷ সেটা তো পানায় ভরা, কেউ নামে না!’
রুমু-ঝুমু বলল, ‘আমরা সেটাতেই সাঁতার শিখেছি৷’
‘কে শেখাল?’
‘কেউ শেখায়নি! নিজে-নিজে!’
ছোটমাসি ধপাস করে একটা বেঞ্চির ওপর বসে পড়ে বললেন, ‘হায়, হায়, কী হবে? একা-একা সাঁতার শেখা কী সাঙ্ঘাতিক কথা! আর ওই বিচ্ছিরি নোংরা পুকুর, কতকাল ওর জল পরিষ্কার করা হয় না, সেটাতে নেমেছে আমার মেয়েরা! ওরা বেঁচে আছে কী করে? হ্যাঁরে নিলু, কী হল বল তো!’
আমি বললাম, ‘সত্যিই তো, ওরা বেঁচে আছে কী করে! খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার!’
রুমু-ঝুমু তখন মনের আনন্দে জল তোলপাড় করে সাঁতার কাটছে!
—