ছোটমামার ব্যাপারটা
ছোটমামা আড়ষ্ট গলায় বললেন, ওই দ্যাখ নীলু!
সামনের দিকে তাকিয়ে আমি হেসে ফেললাম। একটা খুবই নিরীহ চেহারার কুকুর। একদম নেড়ি কুত্তা যাকে বলে, রোগা, লম্বাটে, মুখখানা ভীতু ভীতু। এই কুকুরটাকে দেখেও ছোটমামার ভয়। অথচ মজা এই যে ছোটমামার জানোয়ারে ভীষণ ইন্টারেস্ট, যদি সেটা খাঁচর জানোয়ার হয়। এখনও এই বয়সে প্রতিমাসে একবার করে চিড়িয়াখানা যাওয়া চাই।
গ্রামের রাস্তা, কাদায় একেবারে চটপটে। দু’পাশে মাঠ, মাঝখান দিয়ে উঁচু রাস্তা। প্রত্যেক বছরই বোধ হয় রাস্তাটায় নতুন মাটি ফেলা হয়, আর বর্ষার সময় সেই মাটি আস্তে আস্তে গলে ধুয়ে যায়। গোরুর গাড়ি ছাড়া এ রাস্তায় কিছু চলে না।
যখনকার কথা বলছি, তখন আমার বয়স উনিশ আর ছোটমামার বয়স পঁয়তিরিশ। ছোটমামার ছিপছিপে লম্বা চেহারা, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, সাদা ধুতি—পাঞ্জাবি ছাড়া কক্ষনো কিছু পরতেন না। অদ্ভুত বইয়ের নেশা। ঠিক পছন্দমত বই পেলে তা নিয়ে ছোটমামা সারাদিন ভুলে থাকতে পারেন। আর জানোয়ারের বই হলে তো কথাই নেই। নাওয়া—খাওয়ার কথাও মনে থাকে না।
সে দিনটার কথা আমি কোনো দিন ভুলবো না!
মুর্শিদাবাদ জেলার সালার নামে এক রেল স্টেশনে নেমে আমরা দু’জনে যাচ্ছিলাম সাত মাইল দূরে এক নবাব বাড়িতে। আসল নবাব নয়, তাদেরই হয়তো দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয়। কিংবা অনেক ছোটখাটো মুসলমান জমিদারদেরও লোকে নবাব বলতো। যেমন অনেক হিন্দু জমিদারের বাড়িকেই লোকে বলতো রাজবাড়ি।
এই নবাব—বাড়িতে অনেক পুরনো বই আছে শুনেছিলাম। আগেকার দিনে নবাবরা চিতাবাঘ—টিতাবাঘ পুষত, তাই ছোটমামার বিশ্বাস এ—বাড়িতেও জানোয়ারের বই থাকা আশ্চর্য নয়। আমরা যাচ্ছিলাম সেই বই—এর খোঁজে!
গোরুর গাড়ি ছাড়া এই সাত মাইল পথ যাবার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্তত তখন ছিল না। গোরুর গাড়িটা আমার খুব পছন্দ নয়। ছোটমামাও বলেছিলেন, ফেরার সময় বইপত্র নিয়ে তো গোরুর গাড়িতে আসতেই হবে, চল, এখন হেঁটে যাই।
পথের মধ্যে সেই কুকুর। গ্রামের রাস্তায় এরকম একটা—দুটো কুকুর তো থাকবেই। ছোটমামাকে নিয়ে বাইরে বেরুনোর এই এক মুশকিল।
ছোটমামা যেমন কুকুরটাকে দেখে ভয় পেয়েছেন কুকুরটাও সেই রকম আমাদের দেখে ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে।
ছোটমামা বললেন, নীলু, কুকুরটাকে তাড়া!
আমি বললাম, ও কিচ্ছু করবে না! আমরা এগোলেই ও সরে যাবে।
উঁহু! পাগলা কুকুর হতে পারে। দেখছিস না ল্যাজ ঝোলা?
ভয় পেলে সব কুকুরেরই ল্যাজ ঝুলে যায়।
জিভ বার করে আছে।
হাঁপিয়ে গেছে বোধ হয়। কুকুর জিভ বার করে দম নেয়।
কুকুরে কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়, জানিস। নেড়ি কুত্তা কামড়ালেও হয়, বুল ডগ কামড়ালেও হয়।
কুকুরের ব্যাপারে আমিও যে খুব একটা সাহসী তা নয়। অনেক জায়গায় খুব বড় সাইজের অ্যালসেশিয়ান, গ্রেড ডেন বা ডোবারম্যান জাতীয় কুকুর দেখলে আমারও বুক ধড়ফড় করে। কিন্তু একটা রোগা নেড়ি কুত্তা, খুব কাছে এলে ওকে তো একটা লাথি মেরেও হঠিয়ে দিতে পারবো।
আমি বললাম, এই যা, যাঃ!
কুকুরটা খুব আস্তে ঘেউ করে উঠলো। সেটা ঠিক রাগের ডাক নয়, যেন ভয়ে ভয়ে কোনো অনুরোধ জানাচ্ছে।
ছোটমামা বললেন, দেখলি! রাস্তা ছেড়ে যাবে না।
আমি বললাম, ও এদিকেই আসতে চায়।
আকাশে কালো মেঘ। রাস্তার দু’পাশের ধান ক্ষেতে খুব গাঢ় সবুজ রংও পাল্টে গেছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে, আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। ছোটমামার কাছে ছাতা আছে, কিন্তু এই রকম ফাঁকা জায়গায় ঝড়—বৃষ্টি শুরু হলে ছাতায় কোনো কাজ হয় না।
কুকুরটা আস্তে আস্তে কয়েক পা এগিয়ে এলো আমাদের দিকে। খুব সম্ভবত সে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইছিল, কিন্তু ওকে এগোতে দেখেই ছোটমামা রাস্তার বাঁ দিকের ঢালু জায়গাটা দিয়ে দৌড়ে খানিকটা নিচে নেমে গেলেন। কত ছোটখাটো ঘটনা থেকে বিরাট কাণ্ড হয়ে যায়। সেদিন ছোটমামা রাস্তাটার বাঁ দিকে না নেমে যদি ডানদিকে নামতেন, তা হলে তাঁর জীবনটা এরকম সাঙ্ঘাতিক ভাবে বদলে যেত না। কিছুই হতো না।
ছোটমামার সঙ্গে সঙ্গে আমিও নিচে নেমে এলাম। ভাবলাম, কুকুরটা এবার পার হয়ে যাবে। কিন্তু কুকুরটাও নেমে এলো বাঁ দিকের ঢালু ধার দিয়ে। খানিকটা দূরত্ব রেখে রেগে গর—র—র গর—র—র আওয়াজ করতে লাগলো।
ছোটমামা বললেন, বলেছিলাম না পাগলা কুকুর। খবরদার, দৌড়াবার চেষ্টা করিস না।
আমার তখনও কুকুটাকে পাগলা বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ কুকুরটার মুখ—চোখে রাগের ভাব নেই। গলা দিয়ে একটা আওয়াজ করছে বটে, কিন্তু সেটাও বেশ নরমভাবে।
আমরা দু’জনে কুকুরটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাদের পেছন দিকে একটা ঝোপ। সামনে খানিক দূরে একটা নোংরা জলের ডোবা। কাছাকাছি কোনো বাড়ি—ঘর বা মানুষজন নেই।
কুকুরটা সেইরকম আওয়াজ করতে করতে এক—পা এক—পা করে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসতে লাগলো। ছোটমামা ছাতাটা বাগিয়ে ধরলেন। আমি হুস—হাস, যাঃ বলতে লাগলাম।
খুব ভীতু লোকরাও এক সময় খুব সাহসী হয়ে ওঠে। কুকুরটা আর একটু কাছাকাছি আসতেই ছোটমামা নিজে দু’পা এগিয়ে ছাতাটা দিয়ে ওর পিঠে খুব জোরে এক ঘা কষালেন।
কুকুরটা প্রচণ্ড আর্তনাদ করে উঠলো। কিন্তু উল্টে আমাদের আক্রমণ না করে সে পেছন ফিরে প্রাণপণে দৌড় মারলো।
ছোটমামা বীরের মতন বললেন, দেখলি? ব্যাটাকে দিয়েছি ঠাণ্ডা করে।
কিন্তু ততক্ষণে আর একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে গেছে। কুকুরটা খুব জোরে পালাতে গিয়ে হুড়মুড় করে গিয়ে পড়লো সেই ডোবাটার মধ্যে। জলের মধ্যে দাপাদাপি করলো একটুক্ষণ, তারপর হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেল আবার। কুকুরটা ঘাড় কাত করে ভাসছে, আর তার চোখ দুটো দেখলে মনে হয়, মরে গেছে।
আমরা হতবাক। কুকুর কক্ষনো জলে ডোবে না, সব জন্তু—জানোয়ারই জন্ম থেকে সাঁতারু। তা হলে কুকুরটা মরে গেল কেন? তা হলে কি ছোটমামার ছাতার ঘা খেয়েই মরে গেল? কিন্তু সব নেড়ি কুত্তাই খুব মারধোর খায়, এক ঘা ছাতার বাড়ি খেয়ে তার তো কিছু হবার কথা নয়।
আমরা ডোবাটার কাছে এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখলাম। কুকুরটা যে মরে গেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ছোটমামা আর আমি চোখাচোখি করলাম কয়েকবার, কিছুই বুঝতে পারলাম না। ছোটমামার নরম মন, তাঁর মুখখানা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। তিনি কুকুরটাকে মেরে ফেলতে চাননি মোটেই।
এমন হতে পারে যে কুকুরটা খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিল। ও যে—কোনো সময় মরতে পারতো। ছাতার ঘা খেয়ে ভয় পেয়ে জলের মধ্যে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট ফেল করেছে।
এই সময় কুঁই কুঁই শব্দ পেয়ে আমরা আবার চমকে পেছন ফিরে তাকালাম। ঝোপটার আড়াল থেকে তুরতুরে পায়ে বেরিয়ে আসছে তিন—চারটে কুকুরছানা। তখন সব ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। ওই কুকুরটা আমাদের তাড়া করে আসেনি। ও ওর বাচ্চাদের কাছে আসতে চাইছিল। আমরাই বা সেটা বুঝবো কী করে। সব কুকুরকেই আমরা কুকুর বলি, কিন্তু ওটা ছিল কুকুরী। ছানাগুলো ঘুমোচ্ছিল বোধ হয়, আওয়াজ শুনে জেগে উঠেছে।
আমাদের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। মা মরে গেল, এখন বাচ্চাগুলোর কী হবে? আমরাই বা এখন কী করবো? নবাব—বাড়িতে যাচ্ছি, সেখানে তো আর কয়েকটা নেড়ি কুত্তার বাচ্চা কোলে করে যাওয়া যায় না।
এমন সময় টপাটপ ফোঁটায় বৃষ্টি নামলো। বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে বাজ ডাকলো একবার। ছোটমামা বললেন, চল এবার। ওরা ঠিক বেঁচে যাবে। একমত হয়ে আমিও উঠে এলাম রাস্তার ওপরে। মনে হলো যেন মরা কুকুরীটা তখনও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
খানিকটা যেতে না যেতেই শুরু হলো ঝড়। আকাশের এদিক থেকে ওদিক চিরে যেতে লাগলো বিদ্যুতে। আর কী অসম্ভব জোর বজ্রের আওয়াজ। ফাঁকা মাঠের মধ্যে এই আওয়াজ যে কত সাঙ্ঘাতিক তা সেদিনই বুঝেছিলাম। মনে হয় যেন একটা বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে।
হাঁটবার বদলে আমরা প্রায় দৌড়তে শুরু করেছি। রাস্তার ধারে একটা খেজুর গাছ দেখে ছোটমামা বললেন, আয়, এখানে একটু দাঁড়াই। আমি বললাম, না, এখনো জোরে বৃষ্টি নামেনি, কোনো গ্রাম—ট্রাম পাওয়া যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে বিরাট জোরে একটা বাজ পড়লো। আমি চোখ বুজে কান ঢেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। একটু পরে চোখ মেলে দেখি, ছোটমামা খেজুর গাছটার কাছেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন। আর গাছটার রং হয়ে গেছে কালো।
আমার বুকের মধ্যেও যেন একটা বাজ ডেকে উঠলো। বজ্রপাতে মানুষ মরে যাবার কথা শুনেছি। তবে কী তাই হলো; ছুটে গেলাম ছোটমামার কাছে। পিঠে হাত রেখে বললাম, ছোটমামা!
ছোটমামা চোখ মেলে বললেন, কী?
আমি একটা মস্ত বড় নিশ্বাস ফেললাম। আমার মাথায় যেন ঠাণ্ডা বাতাস লাগলো। এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
ছোটমামা, তোমার কিছু হয়নি তো?
না তো! আমি রাস্তায় শুয়ে আছি কেন?
পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে বোধ হয়? উঠতে পারবে?
হ্যাঁ, কেন পারবো না!
ছোটমামা নিজে উঠে দাঁড়ালেন। ছাতাটা ছিটকে এক পাশে পড়ে গিয়েছিল, সেটাকে তুলে নিলাম। আমার জন্যে অপেক্ষা না করেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করলেন ছোটমামা। আমি এগিয়ে দু’একটা কথা বলার চেষ্টা করলাম, ছোটমামা কোনো উত্তর দিলেন না। মুখখানা অসম্ভব গম্ভীর।
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় আমি চমকে উঠলাম। ছোটমামার চোখে চশমা নেই। অথচ চশমা ছাড়া উনি ভালো দেখতেই পান না। হাঁটতে পর্যন্ত অসুবিধে হয়।
ছোটমামা, তোমার চশমা?
ভুরু কুঁচকে ছোটমামা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, চশমা! আমার চশমা ছিল, তাই না। সেটা কোথায় গেল?
আমি দেখছি!
দৌড়ে ফিরে গেলাম খেজুর গাছটার কাছে। একটু খুঁজতেই চশমাটা পাওয়া গেল। ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলাম, ছোটমামা, তোমার সত্যি কিছু হয়নি তো? শরীর ঠিক আছে?
কোনো উত্তর না দিয়ে আমার কাছ থেকে চশমাটা নিয়ে ছোটমামা আবার হাঁটতে শুরু করলেন। যে রকম মেঘ ডাকছিল, সেই তুলনায় জোর বৃষ্টি হলো না। আমরা সন্ধের একটু আগেই পৌঁছে গেলাম নবাব—বাড়িতে।
সে—বাড়ি দেখলে কান্না পায়। এক সময় নিশ্চয়ই দারুণ ব্যাপার ছিল, এখন অনেকখানি জায়গা জুড়ে পড়ে আছে একটা ভগ্নস্তূপ। সিংহদ্বারের একটা সিংহ এখনো টিকে আছে, অন্যদিকে কিছুই নেই। কোথাও দাঁড়িয়ে শুধু একখানা দেওয়াল, কোথাও একখানা—দু’খানা ঘর আস্ত আছে, কিন্তু দরজা—জানালা নেই। মনে হয়, সাত মহলা না হলেও তিন চার মহলা প্রাসাদ ছিল। এখন এই ভাঙাচুরো বাড়ির মধ্যেও কিন্তু অনেক লোক আছে। জোড়াতালি দিয়ে থাকে, কেউ এ—বাড়ি সারাবার কথা চিন্তা করে না।
একটু খোঁজ করতেই নবাবকে পাওয়া গেল। বর্তমান নবাবের বয়স খুব কম। বাইশ—তেইশ বছর মাত্র, নবাবী চাল কিছু নেই, প্যান্ট—শার্ট পরা সাধারণ কলেজের ছাত্রদের মতন মনে হয়। বেশ হাসি—খুশি। ছোটমামার কাছে হাইকোর্টের জজ ইউসুফ সাহেবের একটা চিঠি ছিল। সেটা দেখে তরুণ নবাব বললেন, বইপত্র সব প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, উইপোকায় শেষ করে দিয়েছে। আপনারা দেখে ইচ্ছে মতন যে—কটা খুশি নিতে পারেন। আমি শিগগির পাকাপাকিভাবে বিলেত চলে যাচ্ছি, তাই যা আছে সব বিলিয়ে দিয়ে যেতে চাই।
গোটা একটা বাড়িতে নাকি ছিল লাইব্রেরি। আশ্চর্যের ব্যাপার, সে—বাড়িটা কিন্তু এখনো পুরোপুরি ভেঙে যায়নি। দু’—তিনখানা ঘর এখনো প্রায় আস্তই আছে। একটা ঘরে ঢুকে দেখলাম, বইপত্র একেবারে পাহাড় হয়ে আছে। খুব সম্ভবত আগে এ—ঘরে বড় বড় আলমারি বা কাঠের র্যাক ছিল। কেউ একজন তার থেকে সব বইগুলো বার করে মেঝেতে ফেলে সেই আলমারি আর র্যাক বিক্রি করে দিয়েছে। অধিকাংশ বই—ই ছিঁড়ে কুটিকুটি।
ছোটমামা আন্দাজে ভুল করেনি। জানোয়ারের বইও বেরুল দু—একখানা। অতিকষ্টে গোটা চারেক বই আমরা বেছে নিতে পারলাম। বাকি আবার কাল সকালে দেখবো বলে বেরিয়ে এলাম। ধুলো আর ভ্যাপসা—গন্ধ ভরা ওই ঘরের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে দম আটকে আসে।
অবস্থা খারাপ হয়ে গেলেও নবাব—বাড়ির আতিথ্য বেশ উঁচুদরের। ছোটমামার জামা—কাপড়ে কাদা লেগে গিয়েছিল বলে ওকে দেওয়া হলো একটা সিল্কের লুঙ্গি আর একটা ভাঁজ—ভাঙা পাঞ্জাবি। রাত্রে খাওয়া—দাওয়াও জমলো বেশ, তিনরকম কাবার আর ঘি—চপচপে পরোটা। থাকার জন্য একটা ঘরও পাওয়া গেল। সেখানটায় একতলার সব ঘর আবর্জনায় ভর্তি, কিন্তু সিঁড়ি আর দোতলার একটা ঘর অটুট আছে। সেখানে পাশাপাশি দু’খানা খাটে পরিষ্কার চাদর পাতা। নবাব নিজে এসে আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে গেলেন। আমাদের খুবই অসুবিধে হবে বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন বার বার। আমরা খুব না না বলতে লাগলুম। আমি একাই বেশি বললাম অবশ্য, ছোটমামা সেই বিকেলের পর থেকে কথা বলছেন খুব কম।
ইলেকট্রিসিটি নেই, একটা হারিকেন রাখা আছে আমাদের ঘরে। ছোটমামা সেই টিমটিমে আলোতেই একটা বই খুলে বসেছেন। কিছুক্ষণ বই না খুলে ছোটমামা ঘুমোবেন না আমি জানি। কিন্তু আমার ঘুম পেয়ে গেছে। আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে, আর সারারাত বৃষ্টি পড়লেও কোনো ক্ষতি নেই, ঘুমটা জমবে ভালো। অবশ্য বেশি বৃষ্টি হলে এই বাড়িটা না ধসে পড়ে!
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ একটা বিশ্রী শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কেউ যেন একটা মাটির হাঁড়ির মধ্যে মুখ দিয়ে আওয়াজ করছে। এতরাত্রে এ রকম ইয়ার্কি কে করে? পাশ ফিরে দেখলাম নিজের খাটের উপর সোজা হয়ে বসে ছোটমামা এক মনে বই পড়ছেন।
ছোটমামা, কোনো আওয়াজ শুনেছো?
ছোটমামা শুধু আমার দিকে একবার তাকালেন। কোনো উত্তর দিলেন না। পড়ার সময় ডিসটার্ব করা পছন্দ করেন না ছোটমামা। আমি ভাবলাম, তাহলে ঘুমের মধ্যে নিশ্চয়ই ভুল শুনেছি। পাতলা ঘুমের মধ্যে এরকম অনেক অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়।
আবার চোখ বুজলাম। কিন্তু কিসের যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি। খুব খারাপ গন্ধটা। অথচ একটু চেনা চেনা। যাই হোক ঘুমোবার চেষ্টা করলাম জোর করে। গন্ধটা যেন বেড়েই যেতে লাগলো। এবার চিনতে পারলাম, ছোটমামার সঙ্গেই চিড়িয়াখানায় গেছি কয়েকবার, সেখানে বাঘ—সিংহের খাঁচার সামনে এরকম গন্ধ পাওয়া যায়। সেই রকমই বোঁটকা গন্ধ। তখন মনে হলো, একটু আগে যে আওয়াজটা শুনেছিলাম, সেটাও যেন বাঘের ডাকের মতন।
তক্ষুনি আবার সেই রকম বাঘের ডাক শোনা গেল। একেবারে ঘরের মধ্যে। ধড়মড় করে উঠে বসে দেখলাম, সামনে খোলা বইখানির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছোটমামা আওয়াজ করছেন উম স্মা! উম স্মা! অবিকল বাঘের মতন। ঘরটাতে অসম্ভব গন্ধ। ভয়ে আমার হাত—পা ঠাণ্ডা হয়ে এলেও আমি ডাকলাম, ছোটমামা!
ছোটমামা ডাক থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন। একদম অন্যরকম মুখ। অসম্ভব হিংস্র। গলা দিয়ে গর—র—র আওয়াজ বেরুচ্ছে।
ছোট্টমামার বদলে অন্য কোনো লোক হলে আমি কি করতাম জানি না। কিন্তু ইনি তো আমার নিজের ছোটমামা। খাট থেকে লাফিয়ে উঠে ছোটমামাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, ছোটমামা। ছোটমামা! কী হয়েছে? তোমার কী হয়েছে।
তাকিয়ে দেখলাম, ছোটোমামার সামনে খোলা বইটাতে একটা বাঘের ছবি। কিছু না ভেবেই আমি বইটা বন্ধ করে দিলাম। ছোটমামা অমনি সাধারণ গলায় বললেন, কিছু হয়নি তো! তুই অমন করছিস কেন?
তুমি ওরকম শব্দ করছিলে কেন? ঘরে কিসের গন্ধ?
কই, কিছু না তো! আমি তো গন্ধ পাচ্ছি না।
আমি ভয়ে ভয়ে খাটের তলা দেখলাম। কিন্তু দোতলার ওপর খাটের নিচে তো বাঘ লুকিয়ে থাকতে পারে না! আওয়াজটা ছোটমামাকেই করতে দেখেছি। ছোটমামা আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছেন? না মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
ছোটমামা হাই তুলে বললেন, আমিও এবার শুয়ে পড়বো। হারিকেনটা কমিয়ে রাখা হলো খাটের পাশে। ছোটমামা একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁরে নীলু, কুকুরটাকে কি আমি মেরে ফেললাম?
আমি বললাম, না না, অত সহজে কি কুকুর মরে?
হয়তো আমার ছাতার ঘায়ে ওর শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল! তাই জলে পড়ে গিয়ে…
আমার তা মনে হয় না। ওর নিশ্চয়ই মরার সময় হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ গলার আওয়াজটা বদলে ফেলে ছোটমামা হুংকার দিয়ে বললেন, বেশ করেছি, মেরেছি! একটা পাগলা কুকুর তেড়ে এলে মারবো না?
আমার ছোট মামা বরাবর শান্ত স্বভাবের মানুষ। কোনোদিন এরকম দাঁত খিঁচিয়ে কথা বলেন না। কিন্তু এ—সবের চেয়েও আমি বাঘের ডাকটার কথা বেশি চিন্তা করছিলাম। ছোটমামা এরকম বাঘের মতন ডাকতে পারেন? কোনোদিন শুনিনি আগে ছোটমামা আমায় ভয় দেখাতে চাইছিলেন। তা হলে বাঘের গায়ের বোঁটকা গন্ধটা পেলাম কি করে? ওটা কি আমি মনে মনে কল্পনা করেছি! গন্ধটা এখনো ঘর থেকে যায়নি পুরোপুরি।
রাত্রে আর কিছু হলো না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ছোটমামা বললেন, চল, আমরা এখান থেকে চলে যাই। আমি বাঘের প্রসঙ্গটা একটু তুলতে যেতেই ছোটমামা বললেন, তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছিস! এই মুর্শিদাবাদে বাঘ? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।
একটু বেলা হতেই তরুণ নবাব এলেন আমাদের খোঁজ—খবর নিতে। চা খাবার পর বললেন, চলুন, বই দেখতে যাবেন না! ছোটমামার কোনো উৎসাহ দেখলাম না। বইয়ের ঘরে ঢুকেও ছোটমামা চুপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন, একটা বই ও ছুঁয়ে দেখলেন না। যে ছোটমামা বইয়ের পোকা যার জন্য এতদূরে আসা! আস্ত দেখে পঁচিশ—তিরিশ—খানা বই বেছে নিয়ে বললাম, ব্যস যথেষ্ট হয়েছে। কয়েকটা বান্ডিলে বেঁধে নিলাম বইগুলো।
ফেরার পথে আমরা এলাম গোরুর গাড়িতে। নবাবকে প্রচুর ধন্যবাদ দিয়ে আমরা উঠে পড়লাম সেটাতে। বিদায় নেবার সময় ছোটমামা একটাও কথা বললেন না। আমার খুব লজ্জা করছিল।
আগের দিন যেখানে সেই ঘটনাটা ঘটেছিল, সে—জায়গাটা মনে ছিল আমার। রাস্তার ওপর থেকেই নিচের সেই ডোবাটা দেখা যায়। মরা কুকুরটা এখনো জলে ভাসছে। বাচ্চাগুলোকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আমার পাশে তাকিয়ে দেখলাম, ছোটমামা চোখ বন্ধ করে আছেন। আর বিড় বিড় করে কী যেন বলছেন। ছোটমামার ব্যবহার দেখে আমি রীতিমতন চিন্তায় পড়ে গেছি। কলকাতায় ফিরেই ডাক্তার দেখাতে হবে। সামান্য একটা কুকুরকে মারা নিয়ে কী যেন হয়ে গেল। তাও তো ইচ্ছে করে মারা হয়নি। কিংবা ওই যে বাজের আওয়াজে ছোটমামার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, সেই জন্যই এসব হচ্ছে! কিন্তু কুকুরটার জন্য এখানে দেরি না হলে বাজ পড়বার আগেই আমরা অনেকটা চলে যেতাম।
স্টেশনে এসে মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা পেয়ে গেলাম একটা ট্রেন। উঠে পড়লাম টিকিট কেটে। আমাদের কামরায় খুব বেশি ভিড় নেই। একটাই মাত্র জানলার ধারের সিট ছিল, সেটা ছোটমামাকে দিয়ে আমি বসলাম পাশে। ছোটমামা আবার চোখ বুজে বিড়বিড় করতে লাগলেন।
আধঘণ্টাখানেক বাদে ছোটমামা আবার চোখ মেলে গা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। খুব স্বাভাবিক গলায় বললেন, অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে। দে তো একটা বই পড়ি।
আমি খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি একটা বইয়ের বান্ডিল খুলতে গেলাম। ছোটমামা অন্য একটা বান্ডিলের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ওর থেকে তিন নম্বর বইটা দে।
একটা চওড়া মতন বই, জার্মান ভাষায় লেখা, ভেতরে অনেক জন্তু—জানোয়ারের ছবি। বইটা ছোটমামার দিকে এগিয়ে দিলাম। ছোটমামা বইটির মাঝখানের একটা পাতা উল্টেই চোখ বিস্ফারিত করে ফেললেন। একটা অদ্ভুত চিৎকার করে বইটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন কামরার মেঝেতে।
কামরার সবাই আমাদের দিকে তাকালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হলো, ছোটমামা?
ছোটমামা কুকুরের মতন ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলেন। নকল কুকুরের ডাক নয়। ঠিক যেন একটা কুকুর ডাকছে।
বহু লোক ভিড় করে এলো আমাদের দিকে। ছোটমামা তখনও ডেকে চলেছেন। কেউ কেউ ব্যাপারটাকে ঠাট্টা মনে করে হাসতে লাগলো। আমার যেন লজ্জায় মাথা কাটা গেল। আমি ঝুঁকে ছোটমামার হাত ধরে বললাম, কী হয়েছে, ছোটমামা, এরকম করছ কেন?
ছোটমামা খ্যাঁক করে আমার হাত কামড়ে ধরলেন দারুণ জোরে। অন্য লোকেরা এসে তাড়াতাড়ি না ছাড়িয়ে দিলে ছোটমামা বোধ হয় আমার হাতেই মাংসই তুলে নিতেন। আমাকে ছাড়বার পরই ছোটমামা অন্যদের কামড়াতে গেলেন, তখন সবাই ছোটমামাকে দমাদম করে মারতে শুরু করলো।
এ রকম অবস্থায় আমি জীবনে কখনো পড়িনি। আমার কান্না পেয়ে গেল। আমরা ছোটমামাকে অন্য লোকেরা মারছে! আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে ছোটমামাকে আড়াল করে কাতর গলায় বললাম, ছেড়ে দিন, দয়া করে ছেড়ে দিন।
ছোটমামা তখনই আবার স্বাভাবিক গলায় বললেন, কী হয়েছে রে, নীলু? লোকগুলো এমন ক্ষেপে গেল কেন!
একজন লোক মাটিতে ওল্টানো বইটা তুলে এনে দিল আমার হাতে। খোলা পাতাটায় একটা কুকুরের ছবি।
অনেক লোক তখনও বলতে লাগলো, নামিয়ে দিন লোকটাকে, নামিয়ে দিন। আমি হাত জোড় করে সকলের কাছে ক্ষমা চাইলাম। ছোটমামা বারবার অসহায়ভাবে বলতে লাগলেন, লোকগুলো এত রাগ করছে কেন? কী হয়েছে?
আমার হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছিল। আমি সেখানে একটা রুমাল চাপা দিয়ে বললাম, কিছু হয়নি। আপনি চোখ বুজে থাকুন। আমাদের কাছাকাছি আর কোনো লোক বসলো না।
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছোলাম ভালোভাবেই। ট্রেনের দু’জন সহযাত্রী আমার প্রতি দয়া করে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিলেন। বেশ শান্তভাবেই ট্যাক্সিতে উঠলেন ছোটমামা। এমনকি লোকদুটিকে নমস্কার করে ধন্যবাদ জানালেন। ট্যাক্সি চলতে শুরু করার পর আমাকে বললেন, বেশ ভালো লোক তো ওরা। এবার বেড়ানোটা তেমন ভালো হলো না, সকাল থেকে মাথাটা ঝিম ঝিম করছিল কেমন যেন।
আমি বললাম, রাত্তিরে ভালো ঘুম হয়নি বোধ হয়। বাড়ি গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুই ভালো বই এনেছিস তো। আমার আর কিছু দেখা হলো না।
হ্যাঁ, ভালো বই আছে কয়েকটা।
দেখি, দে তো।
আমি সঙ্গে সঙ্গে বইগুলো আড়াল করে বললাম, না, এখন নয়, বাড়িতে গিয়ে দেখবে!
ছোটমামা আর জোর করলেন না। বললেন, সত্যি রে, আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
আমরা তখন থাকি মোমিনপুরের কাছে। ট্যাক্সিটা ময়দান পেরিয়ে খিদিরপুরে উঠেছে। সামনে অনেকগুলো গাড়ি। ট্যাক্সিটা চলছে খুব আস্তে আস্তে। হঠাৎ পাশেই একটা ডুমডুম আওয়াজ পেলাম। ছোটমামা চোখ বুজে ছিলেন। অমনি আবার চোখ মেলে খাড়া হয়ে বসলেন। আমি দেখলাম, আমাদের ট্যাক্সির পাশ দিয়ে একজন বাঁদর—নাচওয়ালা চলেছে দুটো বাঁদর নিয়ে। ছোটমামা মুখ দিয়ে দু’বার হুপ হুপ করে ঝট করে ট্যাক্সির দরজা খুলে নেমে গেলেন রাস্তায়। তারপর লাফাতে লাগলেন। সেই বাঁদর—দুটোর পাশে। আর অবিকল একটা গোদা বাঁদরের মতন দাঁত—মুখ খিঁচোতে লাগলেন বাঁদরওয়ালার দিকে।
একটা দারুণ হইচই পড়ে গেল। কলকাতার রাস্তায় ভিড় জমতে এক মিনিটও দেরি হয় না। তাছাড়া এমন দৃশ্য, একজন ধুতি—পাঞ্জাবি পরা লোক বাঁদরের মতন শব্দ করছে আর লাফাচ্ছে!
ছোটমামাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ঠিকই। তারপর তাঁর অনেক চিকিৎসা করা হয়েছে। কোনো ডাক্তার তাঁর মধ্যে পাগলামির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি। কিন্তু তাঁর পাগলামি দিন দিনই বাড়তে লাগলো। এমনিতে ছোটমামা খুব চমৎকার স্বাভাবিক মানুষ। কিন্তু কোনো জন্তু—জানোয়ার দেখলে কিংবা বইতে কোনো জন্তু—জানোয়ারের ছবি, এমনকি নামটা দেখলেও তিনি বদলে যান। অমনি সেই জন্তুটির লক্ষণ তাঁর মধ্যে ফুটে ওঠে। কোনো ওষুধে কোনো কাজ হলো না।
শেষ পর্যন্ত ছোটমামাকে রাখা হলো মধুপুরের একটা ফাঁকা বাড়িতে। সে—বাড়িতে কোনো ছাগল বা বেড়ালও ঢুকতে দেওয়া হয় না। ছোটমামা সর্বক্ষণ অঙ্ক বা জ্যামিতির বই পড়েন। গল্পের বই পড়া একেবারে বন্ধ। কারণ আমি দেখেছি বাংলা বা ইংরেজিতে এমন কোনো গল্পের বই নেই, যেখানে একবার না একবার কোনো না কোনো জন্তু—জানোয়ারের উল্লেখ থাকে না। একবার একটা বইতে শুধু ‘বিড়ালের মতন সতর্ক’ এই লাইনটা পড়েই ছোটমামা বিড়াল ডাক ডাকতে শুরু করেছিলেন।
আমার মনে হয়, পশু সমাজের কোনো আলাদা ব্যবস্থা আছে। তারাই কোনো রহস্যময় উপায়ে ছোটমামার ওপরে এরকম প্রতিশোধ নিয়েছে। যদিও জানি, আমার এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। অবশ্য মধুপুরে গিয়ে যে—কেউ আমার ছোটমামাকে এখনো দেখে আসতে পারে।
আর একটা কথা আমার প্রায়ই মনে হয়। সেদিন কেন সেই মাটির রাস্তাটার বাঁ দিকে না নেমে ডান দিকে নামলাম না আমরা? তাহলেই তো সব ঠিকঠাক থাকতো।