ছায়াচরাচর – ২৮

আঠাশ 

“বাষ্কলি আর বারে উপাখ্যানটি কি আমাকে বলিবেন, আচার্য?” 

বলভদ্রের প্রশ্নে কমলনয়নের হুঁশ ফিরিল। এতক্ষণ সে কী যেন ভাবিতেছিল। মধ্যাহ্ন অতিক্রান্ত হইয়াছে। বাতায়নপথে শরতের নীল আকাশ দেখা যায়। একটা পাখি ওই নিঃসীম নীলের ভিতর ঊর্ধ্বে উঠিয়াছে। এখন তাহাকে বিন্দুবৎ প্রতীয়মান হইতেছে। 

“বলিব”, এই বলিয়া কমলনয়ন আবার সুদূর আকাশের দিকে তাকাইয়া রহিল। বাঁশির সুরটা আজ নীলাকাশ হইয়াছে। সেই সুর দিয়া গড়া আকাশ সমস্ত ভুবন ঘিরিয়া রাখিয়াছে। 

অধ্যাপনা করিতে আর ভালো লাগে না। কী হইবে এইসব পড়াইয়া? এমনিতেই তাহাকে লইয়া কাশীতে কানাকানি হইতেছে। সেই ভাণ্ডারার দিনে সন্ন্যাসীরা তাহার নিহিত কক্ষে কৃষ্ণকিশোরকে দেখিয়া গিয়াছে। তাহার ভাবতন্ময়তাও দেখিয়াছে। তাহার পর হইতেই কমলনয়নের পরিচয় কী, সে অদ্বৈতবাদী, না দ্বৈতবাদী এই লইয়া জল্পনাকল্পনা চলিতেছে। কাশীর ঘাটে শাস্ত্রালোচনা করিতে গিয়াও দেখিয়াছে। সে যখন শানিত যুক্তির দ্বারা অদ্বৈতসিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে, কোনো কোনো শ্রোতা তখন মুখ টিপিয়া টিপিয়া হসে। সেও তো তাহার দার্শনিক অবস্থান স্পষ্ট করিতে পারে নাই। কী লাভ? সে যাহা, তাহাই! কিন্তু অন্যে তাহাকে বিদ্রূপ করিতেছে, তাহাকে লইয়া হাসাহাসি করিতেছে। 

“বাষ্কলি আর বারে কী হইয়াছিল? কে গুরু, কে শিষ্য?” বলভদ্র পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল। 

“বার্ধ্ব গুরু। বাষ্কলি শিষ্য”, কমলনয়ন বলিল, “অতি প্রাচীন আখ্যায়িকা।” 

“কী ঘটিয়াছিল?” 

“বাষ্কলি বলিয়াছিলেন, অধীহি ভগবো ব্রহ্মেতি—হে ভগবন! আমাকে ব্রহ্ম-বিষয়ে উপদেশ করুন। ব্রহ্ম কী, তাহা বলুন। তখন বার্ধ্ব চুপ করিয়া রহিলেন—স তৃষ্ণাং বভূব। তখন বাষ্কলি আবার এই প্রশ্ন করিলেন, অধীহি ভগবো ব্ৰহ্ম—আমাকে ব্ৰহ্ম কী, তাহা বলুন।” 

“এবারও বার্ধ্ব চুপ করিয়া রহিলেন?” 

“হাঁ, এবারেও কোনো উত্তর নাই। বাষ্কলি উপর্যুপরি দুইবার তিনবার একই প্রশ্ন করিলেন। তখন বার্ধ্ব মুখ খুলিলেন।” 

“কী বলিলেন?” 

“বলিলেন, আমি তো প্রতিবারই তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতেছি, তুমিই তো বুঝিতে পারিতেছ না। এই নৈঃশব্দ্যই তো ব্রহ্ম। তাই, এই নৈঃশব্দ্যই তোমার প্রশ্নের প্রকৃষ্ট উত্তর। উপশাস্তোংয়মাত্মা। সকল জিজ্ঞাসা যেখানে শান্ত হইয়া যায়, সকল বাক্য ও চিন্তা যেখানে স্তব্ধ হইয়া যায়, সেই এই শান্তস্বরূপ আত্মা।” 

“এই একটি কথা ঠিক করিয়া বুঝিলে বেদান্ত বুঝা যায়!” বলভদ্ৰ বলিল।

“ঠিক ধরিয়াছ, এই একটি কথা… ইহাই যথেষ্ট। এই একটি কথা বুঝাইবার জন্যই অনেক কথার অবতারণা করা হইয়াছে…এই লইয়াই যত তর্কযুক্তি। যত শাস্ত্রের আড়ম্বর…বস্তুত, কথাটি অত্যন্ত সরল, তাহার অর্থও সরল… চিত্ত বাসনাময় হইয়া আছে বলিয়াই এই একটি কথা বুঝিতে এত জটিল লাগিতেছে…” 

কথা ঠিকমতো শেষ হইল না, ময়ূখ আসিয়া কক্ষে প্রবেশ করিল, সে হাঁপাইতেছে।

“কী হইয়াছে, ময়ূখ? এত হাঁপাইতেছ কেন? কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে?”

“সাংঘাতিক ব্যাপার! হরিশচন্দ্র ঘাটে আজ আবার হামলা হইয়াছে। কিন্তু আজ ব্যাপার অন্যরূপ। মুসলমান আততায়ীরা ঘাটের জনতার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িতে উদ্যত। কিন্তু ঘাটের নিকটেই নাগা সন্ন্যাসীরা ছিল। মুসলমানদিগকে আক্রমণ করিতে দেখিয়াই নাগারা অশ্বারূঢ় হইয়া অকুস্থলে আসিয়া পড়ে। মুসলমান সৈন্যের সহিত নাগা সন্ন্যাসীদের প্রচণ্ড যুদ্ধ বাধে। একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড!” 

বলভদ্র উত্তেজিত হইয়া বলিল, “যুদ্ধের পরিণাম কী হইল?” 

“নাগারা ভয়ংকর যুদ্ধ করিয়াছে। তাহাদের প্রতাপে ভীত হইয়া মুসলমান অশ্বারোহীদের কেহ কেহ প্রাণ লইয়া পলাইয়াছে। অবশিষ্ট মুসলমান সৈন্যদের নাগারা মুণ্ডচ্ছেদ করিয়া মারিয়া ফেলিয়াছে। দুই-একজন নাগা মাত্র আহত হইয়াছে। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রাণরক্ষা করিয়া অন্যত্র লইয়া যাওয়া হইয়াছে। কিন্তু ঘাটের দৃশ্য ভয়াবহ!” 

কমলনয়ন কহিল, “চলো তো, যাই। স্বচক্ষে দেখিয়া আসি, কী হইয়াছে।” 

বলভদ্র ও ময়ূখ কমলনয়নের সঙ্গে চলিল। হরিশচন্দ্র ঘাটের কাছাকাছি আসিতেই কতিপয় মানুষের মরণান্তিক আর্তনাদ শুনিতে পাইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, আহত রক্তাপ্লুত নাগাদের লইয়া অবশিষ্ট নাগারা ফিরিতেছে। কমলনয়নকে দেখিয়া তাহারা সংক্ষিপ্ত নমস্কার জ্ঞাপন করিয়াই দ্রুতপদে চলিয়া গেল। আহত নাগা সন্ন্যাসীদের শুশ্রূষার প্রয়োজন। 

হরিশচন্দ্র ঘাটে আসিয়া কমলনয়ন দেখিল, ভয়াবহ কাণ্ডই বটে! ঘাটের উপরে, চাতালের গায়ে, রানার উপর, সোপানশ্রেণীর নিম্নে সর্বত্র নিহত মানুষের শবদেহ। অশ্বগুলাকেও নাগারা সক্রোধে আঘাত করিয়াছে। রানার উপর পতিত দুই-একটা অশ্ব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছে; তাহাদের উদরদেশ ভয়ংকরভাবে উঠিতেছে, পড়িতেছে। রুধিরাপ্লুত মানুষের কর্তিত মুগুগুলা গড়াগড়ি যাইতেছে। কৃষ্ণবাসে আবৃত বহু মানুষের মুণ্ডহীন ধড় শুধু নিম্নের সোপানের উপর পড়িয়া আছে। নিহত ব্যক্তি সকলেই মুসলমান। তাহাদের বেশবাস হইতে তাহাই অনুমিত হয়। কোনো কোনো ব্যক্তির অবস্থা আরও ভয়ংকর। ধড় হইতে মাথা ছিন্ন হইয়াছে মাত্র, কিন্তু সম্পূর্ণ বিশ্লিষ্ট হইয়া যায় নাই। ফিনকি দিয়া রক্ত ছুটিতেছে। বিদীর্ণ উদরদেশ হইতে অন্ত্রতন্ত্র নাড়িভুঁড়ি বাহির হইয়া আসিয়া ঘাটের উপর লাফাইতেছে। চূর্ণীকৃত করোটিগহ্বর হইতে মগজের ঘিলু গড়াইয়া পড়িয়া স্পন্দিত হইতেছে। ছিন্ন হস্ত, কর্তিত পদ, রুধিরাক্ত খণ্ডিত অঙ্গ, উদর…সর্বত্র রক্তের স্রোত বহিয়া যাইতেছে। গঙ্গার জল আরক্তিম হইয়া উঠিয়াছে। 

বহুদিন পূর্বে কমলনয়ন গঙ্গার ঘাটে এইরূপ আর-একটা দৃশ্য দেখিয়াছিল, মনে পড়িল। সেই একই ভয়াবহতা! 

ঘাটের নিম্নদিকে কমলনয়ন নামিয়া আসিল। কিন্তু এ কী! এক অতি বৃদ্ধ মুসলমানের মৃতদেহের পার্শ্বে এক মূক ব্যক্তি বসিয়া গোঙাইয়া কাঁদিতেছে। একটা বাঁশি মৃতব্যক্তির হস্তচ্যুত হইয়া ঘাটের সোপানের উপর পড়িয়া আছে। এ কী হইল? এ বৃদ্ধ ব্যক্তি তো কোনোক্রমেই আক্রমণকারী হইতে পারে না! 

কমলনয়ন প্রশ্ন করিল, “ময়ূখ! এ কী ব্যাপার? এ যে নিরীহ লোক!”

ময়ূখ বলিল, “হাঁ। নাগারা নির্বিচারে মারিয়াছে। ভল্পের আঘাতে এ বৃদ্ধের বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া চলিয়া গিয়াছে! আমি এ বৃদ্ধকে চিনি।” 

“তুমি ইহাকে চেনো? কে এই বৃদ্ধ?” 

“বংশীবাদক এনায়েৎ খাঁ। ক্রন্দনরত ব্যক্তিটি তাহার সহিত মৃদঙ্গ বাজায়। নাম মেহবুব। হয়তো ঘাটে বসিয়া বাজাইতেছিল। সহসা গোলমালের ভিতর পড়িয়া বৃদ্ধ প্রাণ হারাইয়াছে।” 

অন্য দিক হইতে বলভদ্রের কণ্ঠস্বর শুনা গেল, “আচার্যদেব! একবার কৃপা করিয়া এইদিকে আসুন।” 

কমলনয়ন বলভদ্রের নিকটে আসিলে বলভদ্র একটি মৃতদেহের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিল। এক মুসলমান রমণী ও একটি শিশু। উভয়েই নিহত হইয়া পড়িয়া আছে। রক্তে তাহাদের শরীর ভাসিয়া যাইতেছে। মৃত্যুবরণ করিয়াও জননী তাহার মৃতশিশুটিকে বাম বাহুতে জড়াইয়া রাখিয়াছে। 

“হে ভগবান! এ কী! ইহারা তো সব নিরীহ ব্যক্তি! ইহাদের মারিয়াছে!” 

বলভদ্র গম্ভীর স্বরে বলিল, “হাঁ। মারিবার সময়ে কে আক্রমণকারী, কে আক্রমণকারী নয়, নাগারা এসব বিচার করে নাই। নির্বিচারে অস্ত্র চালাইয়াছে।” 

ক্রোধে, বিস্ময়ে থরথর করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে কমলনয়ন ঘাটের সোপানের উপর বসিয়া পড়িল। এ কী হইল? হায়, এই কি সে চাহিয়াছিল? ইহা তো প্রতিরক্ষা নহে, ইহা যে হত্যার বিরুদ্ধে হত্যা করিয়া প্রতিশোধ গ্রহণ! 

ধনু হইতে শর জ্যামুক্ত হইয়া বাহির হইয়া গিয়াছে; আর ফিরত পাইবার উপায় নাই। অমোঘ লক্ষ্যে গিয়া বিদ্ধ করিবেই। যাহাদের কেবল রক্ষা করিতে বলা হইয়াছিল, তাহারা নিষাদ। বধ করিয়াই তাহাদের আনন্দ, তাহাদের আক্রোশের অবধারিত পরিতৃপ্তি। এই নিষাদ মানুষের রক্তের ভিতর সৃষ্টির আদিম প্রত্যুষ হইতে ধাবিত হইতেছে। ইহার হাত হইতে কাহারও রক্ষা নাই, পরিত্রাণ নাই। 

সহসা কমলনয়নের মনশ্চক্ষের সম্মুখে কী কতগুলা ছবি নড়িয়া চড়িয়া উঠিতে লাগিল। বর্তমানের চিত্র নহে, অতীতের দৃশ্য নহে, ভবিষ্যতের ছবি। আজ হইতেই সেই ভয়ংকর ভবিষ্যৎ শুরু হইয়াছে। অহিনকুলের ন্যায় বিবদমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ উঠিয়া আসিতেছে। সকলেরই হস্তে রুধিরাপ্লুত অস্ত্র। হত্যার পরিবর্তে হত্যা। ধর্মের নামে তাহারা দুই দলে বিভক্ত হইয়াছে। একদল হিন্দু, আর-এক দল মুসলমান। পরস্পর পরস্পরকে আঘাত করিতেছে। রক্তস্রোতে প্লাবিত ভাবীকালের দৃশ্যগুলি একের পর এক কমলনয়নের চোখের সম্মুখে যেন আবর্তিত হইতেছে। হাঁ, ইহাই হইবে, কোনো নিস্তার নাই… আজ হইতেই আরম্ভ! 

ওই তাহারা এ উহার মুণ্ডচ্ছেদ করিতেছে। ধর্মের ভিত্তিতে তাহাদের স্বদেশ ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করিতেছে। ভারতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিকার লইয়া হিন্দু-মুসলমান লুব্ধ সারমেয়ের ন্যায় টানাটানি করিয়া খাইতেছে। নগরীর রাজপথ অগণ্য মানুষের রক্তে ভাসিয়া যাইতেছে। মৃতদেহের আর গণনা নাই। হিন্দু সরোষে মুসলমানের মসজিদে সশস্ত্র ঢুকিয়া পড়িতেছে। মুসলমান হিন্দুর মন্দির ভাঙিতেছে। হিন্দু মুসলমানের মসজিদ চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া দিতেছে। মসজিদ ভাঙিয়া মন্দির গড়িবে। হিন্দুর মন্দিরে আট বৎসরের বালিকা—মুসলমান কন্যা দিনের পর দিন গণধর্ষিত হইতেছে। মুসলমানের মসজিদের অন্তরালে হিন্দু কন্যার উপর লোলুপ পুরুষ ঝাঁপাইয়া পড়িতেছে। বৃদ্ধ ইমামের তরুণ পুত্রকে হিন্দু আততায়ীর দল কাটিয়া ফেলিতেছে। গ্রাম ভাঙিয়া পড়িতেছে। শহর তাহার লোলুপ হস্ত দিয়া গ্রামকে গ্রাস করিতেছে। হিন্দু কন্যাকে ভালোবাসিবার অপরাধে মুসলমান যুবকের দেহে আগুন লাগাইয়া দিয়া হিন্দু যুবক পৈশাচিক উল্লাস করিতেছে। হিন্দু জনতায় পরিপূর্ণ শকটে অগ্নিসংযোগ করা হইতেছে। পরিবর্তে অসহায় মুসলমান গ্রামের প্রতিটি প্রাণীকে নির্মমভাবে বধ করা হইতেছে। পুত্রের সম্মুখে জননীকে ধর্ষণ করা হইতেছে, স্ত্রীর সম্মুখে স্বামীর জঘন্য হত্যাকাণ্ড অনুষ্ঠিত হইতেছে। অসহায় দেশের সিংহাসনে মূর্খরা বসিয়া রাজত্ব করিতেছে। সাম্প্রদায়িক বিভেদকে কাজে লাগাইয়া উভয় তরফ হইতে রাজনৈতিক সুবিধা লুণ্ঠন করা হইতেছে। একদিক হইতে ‘আল্লা হু আকবর’ ধ্বনি উঠিতেছে। অন্য দিক দিয়া ‘জয় শ্রীরাম’ বলিয়া কাহারা আস্ফালন করিতেছে। বাল্মীকির রাম নহে, তুলসীদাসের রামও নহে, ইহা এক অন্য রাম—রক্তপিপাসু, যুদ্ধলোলুপ রাম! যে-হিন্দুরা, ‘একং সবিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি’—সত্য এক, বিপ্ররা তাহাই বহুভাবে ব্যাখ্যা করেন আবিষ্কার করিয়া সকল ধর্ম ও সকল মতের একই গন্তব্য ঘোষণা করিয়াছিল, সেই সব অহিংসক নিরস্ত্র হিন্দুদের হস্তে অস্ত্র তুলিয়া দিল কে? 

আমি, আমিই তাহাদের হস্তে অস্ত্র তুলিয়া দিয়াছি। আমিই তাহাদের এক ভ্রাতাকে বলিয়াছি, অন্য ভ্রাতার রক্তে হস্ত রাঙাইয়া লও। একজনকে বলিয়াছি, অন্যের হৃৎপিণ্ড তুলিয়া লও। চক্ষু উপড়াইয়া লও, শিরা-ধমনী ছিঁড়িয়া লও, মানুষের করোটি খুলিয়া লইয়া সেই নরখপরে রক্ত পান করো, গর্ভিণী নারীর উদরে পদাঘাত করিয়া ভ্রূণ হত্যা করো। আমিই মানুষকে বলিয়াছি, যতদূর সম্ভব পশুর অপেক্ষাও হিংস্র আচরণ করো। অথবা পশুও লজ্জা পাইবে এমন পৈশাচিক কর্মে আমিই তাহাদের নিয়োগ করিয়াছি। আমার দুইটা হাত ভবিষ্যতের কোটি কোটি অগণ্য মানবের রক্তে লাল হইয়া গিয়াছে! আহ, এ কী দুর্নিবার শোচনা!! 

কাহার যেন কণ্ঠস্বর কমলনয়নের কর্ণে অতীতের পটভূমিকা হইতে উঠিয়া আসিয়া বজ্ৰনাদে বলিতেছে, “এ হিন্দু, ও মুসলমান, এ মিত্র, ও অরাতি—ইত্যাকার ভেদ কোথা হইতে আসিল? এই ভেদদর্শনই তো মিথ্যা। তুমি নিজেকেই তো এসকল নানা রূপে, নানা ভেদে অভিব্যক্ত হইতে দেখিতেছ। ইহা তো ভ্রান্তি! মায়ার খেলা মাত্র! বস্তুত, তুমি ছাড়া আর কিছুই তো নাই! এ কথা একবার বুঝিতে পারিলে কে কাহাকে আঘাত করিবে? কে কাহার আঘাতে হতাহত হইবে? তুমি নিজে নিজেকে আঘাত করিবে?…কাদা দিয়া কখনও কাদা ধোওয়া যায়? রক্ত দিয়া কখনও রক্তস্রোত মুছিতে পারো?” 

কমলনয়ন তাকাইয়া দেখিল, কোথা হইতে কতগুলা শৃগাল আসিয়া ঘাটের উপর রক্ত চাটিয়া চাটিয়া খাইতেছে। মাথার উপর শবভুক শকুনের পাল উড়িতেছে। 

.

এখনই ভারতবর্ষের উপর নামিয়া আসিবে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *