ভোজনের মাত্রা পরিপাকশক্তির সীমা ছাড়াইয়া গেলে তাহাতে লাভ নাই বরঞ্চ ক্ষতি, এ কথা অত্যন্ত পুরাতন। এমন-কি, স্বাস্থ্যতত্ত্ববিদ্দিগের মতে একেবারে ষোলো আনা ক্ষুধা মিটাইয়া আহার করাও ভালো নহে, দুই-এক আনা হাতে রাখাও কর্তব্য। মানসিক ভোজন সম্বন্ধেও এই নিয়ম খাটে এ কথাও নূতন নহে।
আমাদের এই দরিদ্র দেশের ছেলেদের আহারের পরিমাণ যেমনই হৌক, ইংরাজি শিক্ষার দায়ে পড়িয়া পড়াশুনাটা যে নিরতিশয় গুরুতর হইয়া পড়িয়াছে, তাহা স্বীকার করিতেই হইবে। ডাক্তর ডেলি সাহেব কিছুকাল বাঙালি ছাত্রদের শিক্ষকতা করিয়া স্টেটস্ম্যান্পত্রে তাঁহার যে অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাহা হইতে এই বলপূর্বক শিক্ষা গলাধঃকরণের হাস্যজনক, অথচ সুগভীর শোচনীয় ফল প্রমাণিত হইতেছে। অনেক বাঙালি ডেলি সাহেবের উক্তপত্র হইতে শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা না করিয়া অযথা রোষ প্রকাশ করিয়াছেন। অভিমান, দুর্বলহৃদয় বাঙালিচরিত্রের একটা প্রধান লক্ষণ। হিতৈষীদের নিকট হইতেও তিলমাত্র আঘাত আমরা সহ্য করিতে পারি না।
অন্তত এন্ট্রেন্স ক্লাস পর্যন্ত শিক্ষণীয় বিষয়গুলি যদি বাংলায় অধীত হয় তবে শিশুপীড়ন অনেকটা দূর হইতে পারে। কিন্তু কেহ কেহ বলেন, ছাত্রবৃত্তি দিয়া যাহারা এন্টে#ন্স পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয় তাহারা ভালো ফল প্রাপ্ত হয় না। প্রথমত, তাঁহাদের কথার সত্যতাসম্বন্ধে উপযুক্তরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় নাই, দ্বিতীয়ত, ছাত্রবৃত্তি পর্যন্ত যেরূপ ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় তাহাতে শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল না হইবারই কথা। এগারো-বারো বৎসর বয়সের মধ্যে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার্থীদিগকে যে পরিমাণে বিষয় শিক্ষা করিতে হয়, এমন বোধ হয় আর কোথাও নাই। নিম্নে আমরা দেশীয় ভাষা-ভিত্তিমূলক এন্টে#ন্স স্কুলের সহিত সেন্ট জেভিয়ার কলেজাধীন এন্টে#ন্স স্কুলের শ্রেণীপর্যায় অনুসারে পাঠ্যপুস্তকের তালিকা পাশাপাশি বিন্যাস করিলাম। প্রথমোক্ত স্কুলে এন্টে#ন্স পর্যন্ত নয় শ্রেণী, দ্বিতীয় স্কুলে ইন্ফ্যান্ট ক্লাস বাদ দিলে আট শ্রেণী। অতএব সেন্ট জেভিয়রের ইন্ফ্যান্ট ক্লাসকে আমরা প্রথমোক্তস্কুলের নবম শ্রেণীর সহিত তুলনা করিলাম। যদি ষোলোবৎসর বয়সকে এন্টে#ন্স দিবার উপযুক্ত বয়স বলিয়া ধরা যায় তবে সাত বৎসর বয়সের সময় স্কুলের পাঠ আরম্ভ করা হইতেছে বলিয়া ধরিতে হইবে।
বাংলা স্কুলনবম শ্রেণী
(৭ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। প্যারি সরকারের ফার্স্ট বুক।
২। Modern Spelling Book; Word Lessons।
বাংলা। ৩। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় -কৃত বর্ণপরিচয়।
৪। শিশুশিক্ষা দ্বিতীয় ভাগ।
৫। শিশুশিক্ষা তৃতীয় ভাগ।
গণিত। ৬। পাটিগণিত।
৭। ধারাপাত।
ভূগোল। ৮। মৌখিক।
সেন্ট জেভিয়র স্কুল
ইন্ফ্যান্ট ক্লাস
(৭ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Longman's Infant Reader।
২। Longman's Second Primer।
গণিত। ৩। একশত পর্যন্ত গণনা। যোগ, বিয়োগ এবং গুণ।
৮ম শ্রেণী
(৮ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। প্যারি সরকারের সেকেন্ড বুক।
২। Modern Spelling Book।
৩। গঙ্গাধরবাবুর Grammar and Composition।
বাংলা। ৪। চন্দ্রনাথবাবুর নূতন পাঠ।
৫। চিরঞ্জীব শর্মার বাল্যসখা।
৬। তারিণীবাবুর বাংলা ব্যাকরণ।
গণিত। ৭। পাটিগণিত।
৮। শুভঙ্করী।
৯। মানসাঙ্ক।
ইতিহাস। ১০। রাজকৃষ্ণবাবুর বাংলার ইতিহাস।
ভূগোল। ১১। শশীবাবুর ভূগোল পরিচয়।
বিজ্ঞান। ১২। কানিংহ্যামের স্বাস্থ্যের উপায়।
ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ড
(৮ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Longman's New Reader। No। 1
২। Arithmetical Primer। No। 1
৭ম শ্রেণী
(৯ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Royal Reader। No। 2
২। Child's Grammer and Composition।
বাংলা ৩। সাহিত্যপ্রসঙ্গ।
৪। পদ্যপাঠ দ্বিতীয় ভাগ।
৫। বাংলা ব্যাকরণ।
গণিত। ৬। পাটিগণিত।
৭। শুভঙ্করী।
৮। মানসাঙ্ক।
৯। সরল পরিমিতি।
১০। ব্রহ্মমোহনের জ্যামিতি।
ইতিহাস। ১১। বাংলার ইতিহাস।
১২। ভূগোল-পরিচয়।
১৩। বঙ্গদেশ ও আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
বিজ্ঞান। ১৪। কৃষি সোপান।
১৫। স্বাস্থ্যের উপায়।
১৬। ভারতচন্দ্র-কৃত স্বাস্থ্যশিক্ষা।
সেকেন্ড স্ট্যান্টার্ড
(৯ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Longman's New Reader। No। 2।
২। Arithmetical Primer। No। 1।
ইতিহাস। ৩। বাইবেল ইতিহাস।
৬ষ্ঠ শ্রেণী
(১০ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Royal Readers। No। 3।
২। McLeod's Grammar।
৩। Stapley's Exercises।
বাংলা ৪। সীতা।
৫। কবিগাথা।
৬। সাহিত্য প্রবেশ ব্যাকরণ।
গণিত। ৭। পাটিগণিত।
৮। শুভঙ্করী।
৯। সরল পরিমিতি।
১০। জ্যামিতি।
ইতিহাস। ১১। ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
১২। শশীবাবুর ভূগোল প্রকাশ।
১৩। যোগেশবাবুর প্রাকৃতিক ভূগোল।
বিজ্ঞান। ১৪। সরল পদার্থ বিজ্ঞান।
১৫। কানিংহ্যামের স্বাস্থ্যের উপায়।
১৬। রাধিকাবাবুর স্বাস্থ্যরক্ষা।
থার্ড স্ট্যান্টার্ড
(১০ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Longman's New Readers। No। 3।
২। Arithmetical Primer। No। 2।
ইতিহাস। ৩। বাইবেল ইতিহাস।
৪। Stories from English History No। 1।
ভূগোল। ৫। Geograhical Primer No। 2।
পঞ্চম শ্রেণী
(১১ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Lethbridge's Easy Selection।
২। Mcleod's Child's Grammar।
৩। Stapley's Exercises।
বাংলা। ৪। প্রবন্ধকুসুম।
৫। সদ্ভাবশতক।
৬। সাহিত্যপ্রবেশ ব্যাকরণ।
৭। রচনা সোপান।
গণিত। ৮। পাটিগণিত।
৯। শুভঙ্করী।
১০। জ্যামিতি।
১১। পরিমিতি।
ইতিহাস। ১২। ইংলন্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
১৩। ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
ভূগোল। ১৪। ভূগোল প্রকাশ।
১৫। ভারতবর্ষের বিশেষ বিবরণ।
১৬। প্রাকৃতিক ভূগোল।
বিজ্ঞান। ১৭। সরল প্রাকৃতদর্শন।
১৮। স্বাস্থ্যরক্ষা।
১৯। স্বাস্থ্যের উপায়।
ফোর্থ স্ট্যান্টার্ড
(১১ বৎসর বয়স)
ইংরাজি। ১। Longman's New Readers। No। 4।
২। Dictionary for Conjugation।
৩। Arithmetic for Beginners।
ইতিহাস। ৪। বাইব্ল্ ইতিহাস।
৫। Stories from English History। No। 2
ভূগোল। ৬। First Geography।
এইখানেই বাংলা পড়া শেষ হইল, অতএব আর ঊর্ধ্বে যাইবার আবশ্যক নাই। ইংরাজি স্কুলে ইংরাজিই মাতৃভাষা, সেখানে অন্যভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নাই সেইজন্য তুলনাস্থলে বাংলা স্কুলের পাঠ্য তালিকা হইতে ইংরাজি বহিগুলা বাদ দেওয়া কর্তব্য। তাহা দিয়াও পাঠকেরা দেখিবেন, বাঙালি শিশুর স্কন্ধে কীরূপ বিপরীত বোঝা চাপানো হইয়াছে। অথচ তাহাদের স্বাস্থ্যের প্রতি শিক্ষাবিভাগের কর্তৃপক্ষের এমনি সস্নেহ দৃষ্টিপাত যে, তিনজনের রচিত তিনখানা স্বাস্থ্য-বিষয়ক গ্রন্থ ছাত্রদিগকে মুখস্থ করাইয়া তবে তাঁহারা তৃপ্তিলাভ করিয়াছেন। ওই তিনখানি পুস্তকই যদি উঠাইয়া দেওয়া হয়, তবে সেই পরিমাণে ছাত্রদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হইবার সম্ভাবনা। বাংলা স্কুলগ্রন্থকারদিগের প্রতি সানুনয় নিবেদন এই যে, তাঁহারা আর কেহ যেন স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আর-একখানা বহি তৈরি করিয়া না বসেন, বরঞ্চ ছাত্রগণের পিতামাতাগণ বর্ষে বর্ষে তাঁহাদের অরচিত গ্রন্থের সম্ভাবিত মূল্য ধরিয়া দিতে পারেন; তাহা হইলেও ডাক্তার খরচটা লাভ থাকে।
যাঁহারা সাধারণ মফস্বল স্কুলপাঠীদিগের নিরতিশয় দারিদ্র-সম্বন্ধে কিছুমাত্র অবগত আছেন তাঁহারাই বুঝিতে পারিবেন এইরূপ রাশীকৃত অনাবশ্যক গ্রন্থভারে ছাত্রদিগকে নিপীড়িত করা কীরূপ হৃদয়হীন বিবেচনাহীন নিষ্ঠুরতা। কত ছাত্রকে অর্ধাশনে থাকিয়া পাঠ্যগ্রন্থ সংগ্রহের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিতে হয়। এইরূপে নির্বাসনে অনশনে কঠোর পরিশ্রমে বিদেশী খনি হইতে জ্ঞান সংগ্রহে যাহারা বাধ্য তাহাদের ভার যত লঘু, পথ যত সুগম করিয়া দেওয়া যায় ততই দেশের পক্ষে মঙ্গল। অল্পবয়সে শিক্ষার জাঁতায় বাঙালির ছেলের শরীর মন সম্পূর্ণ জীর্ণ নিষ্পেষিত করিয়া দিয়া সমস্ত বঙ্গদেশ ব্যাপিয়া এক হাস্যহীন ক্রীড়াহীন স্বাস্থ্যহীন অকালপক্ব প্রবীণতার অন্ধকার কলিযুগ অবতীর্ণ হইতেছে। দেশের রোগ, বিদেশের শিক্ষা, ঘরের দারিদ্র্য এবং পরের দাসত্ব এই সব-কটায় মিলিয়া আমাদের স্বল্পায়ু জীবনটাকে শোষণ করিতেছে। ইহার উপরে যদি আবার পাঠ্য নির্বাচন সমিতির স্বদেশীয় সভ্যগণও বাঙালির দুরদৃষ্টক্রমে নির্বিচারে বাঙালির ছেলের স্কন্ধে হেয়ার-প্রেস-বিনির্গত সকল প্রকার শুষ্ক বিদ্যার বোঝা চাপাইতে থাকেন তবে আমাদের দেশের দুর্দিন উপস্থিত হইয়াছে বলিতে হইবে।
অনেক ছাত্রবৃত্তিস্কুলে পদার্থবিদ্যা শিক্ষা দিবার জন্য মহেন্দ্রবাবুর গ্রন্থ অবলম্বন করা হইয়াছে; তাহাতে ছেলেদের বিদ্যা প্রায় পূর্ববৎ থাকে এবং পদার্থও শরীরে বড়ো অবশিষ্ট থাকে না। যখন দেখা যায় তিন বৎসর পূর্বে উক্ত গ্রন্থের ঊনবিংশ সংস্করণ মুদ্রিত হইয়াছে এবং যখন কল্পনা করি অন্তত অষ্টাদশ সহস্র হতভাগ্য বালককে এই গ্রন্থের পাষাণ সোপানের উপর জল হইতে উত্তোলিত মীনশাবকের ন্যায় আছাড় খাইতে ও খাবি খাইতে হইয়াছে, তখন শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে। যে-সকল ভীষণ প্রান্তরে প্রাচীনকাল হইতে দস্যুসম্প্রদায় নিরুপায় পান্থদিগের প্রাণসংহার করিয়া আসিয়াছে, সেই অস্থিসংকুল সুবিস্তীর্ণ দুর্গম প্রান্তর দেখিলে হৃদয় যেরূপ ব্যাকুল হয়, এই পদার্থবিদ্যার ঊনবিংশ সংস্করণ দেখিলেও মনের মধ্যে সেইরূপ করুণামিশ্রিত ভীষণ ভাবের উদ্রেক হইতে থাকে।
মফস্বলের দরিদ্রস্কুলে কীরূপ শিক্ষক নিযুক্ত হইয়া থাকে, এবং সেখানে বিজ্ঞান সহজে হৃদয়ংগম করাইবার কীরূপ উপকরণ পাওয়া যায় তাহা কাহারও অবিদিত নাই। এমন অবস্থায় যাঁহারা শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ বিদ্যারণ্য মহাশয়ের পদার্থবিদ্যা ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাঁহারা বিনাপরাধেই শিশুপালবধের জন্য প্রস্তুত। বিশ্বজগতে অনেকগুলি দুর্বোধ বিষয় আছে। যথা, নারিকেলের মতো এমন উপাদেয় ফল শাখাসংস্থানহীন বৃক্ষশিরে পঞ্চাশ হস্ত ঊর্ধ্বে ঝুলাইবার কী উদ্দেশ্য ছিল। হীরকের মতো এমন উজ্জ্বল রত্ন খনিগর্ভে দুর্গম অন্ধকারের মধ্যেই বা নিহিত থাকে কী অভিপ্রায়ে; ধান্য গোধূম যবের জন্য এত শ্রম সহকারে চাষের প্রয়োজন হয় কেন আর কাঁটা গাছগুলা বিনা চেষ্টায় অজস্র উৎপন্ন হইয়া কী উপকার সাধন করে; হিমালয়ের নির্জন শীতপ্রদেশে এত প্রচুর বরফ কী কাজে লাগে অথচ কলিকাতায় বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের অসহ্য গ্রীষ্মের সময় হঠাৎ বরফের জোগান বন্ধ হইয়া যায় কেন; যখন চোর পালায় তখন হঠাৎ বুদ্ধি বাড়িয়া উঠিয়া ফল কী; গৃহে ফিরিয়া আসিয়া পরদিনে পরিহাসের উত্তর জোগায় কেন; এবং ছাত্রবৃত্তিস্কুলে শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ বিদ্যারণ্য মহাশয়ের রচিত পদার্থবিজ্ঞান প্রচলিত হইবার কারণ কী?
উপরি-উক্ত কয়টা বিষয়ই দুর্বোধ, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা ও বিষয়বিন্যাস এই-সকল কয়েকটি প্রহেলিকা হইতেই দুর্বোধতর।
এই গ্রন্থখানি শিক্ষক ও ছাত্রদের পক্ষে যে কতদূর নিষ্ঠুর তাহা সহৃদয় ব্যক্তি মাত্রেই কয়েকপৃষ্ঠা পাঠ করিলেই বুঝিতে পারিবেন। ছাত্রদের অনেকের মা-বাপ আছে কি না জানি না, কিন্তু শিক্ষাবিভাগ যে তাহাদের মা-বাপ নহেন সে বিষয়ে সন্দেহ মাত্র নাই।
বিলাতে সুকুমারমতি বালকদিগকে সহজে বিজ্ঞানশিক্ষা দিবার বিচিত্র উপায় আছে; তথাপি ইংরাজি ভাষায় প্রথম শিক্ষার্থীদিগের জন্য হক্স্লিসাহেবের সম্পাদকতায় যে বৈজ্ঞানিক প্রথম পাঠগুলি রচিত হইয়াছে তাহা কীরূপ আশ্চর্য সরল!_ তাহাতে বিজ্ঞান-বিদ্যারণ্যের জটিলতা ও ভাষার দুর্গমতা লেশমাত্র নাই। কারণ, তাহার মুখ্য উদ্দেশ্য, ছাত্রদিগকে বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া। মুখ্যরূপে ভাষা শিক্ষা দেওয়া যে-সকল গ্রন্থের উদ্দেশ্য তাহাতে ভাষার কৌশল ও কাঠিন্য আবশ্যক হইতে পারে_ কিন্তু যে বিজ্ঞান আমাদের দেশের ছাত্রদের পক্ষে সহজেই অত্যন্ত দুরূহ তাহার ভাষা ও বিষয়বিন্যাস যতদূর সম্ভব সহজ করা উচিত, নতুবা ছাত্রদিগের মানসিক শক্তির অন্যায় এবং নির্দয় অপব্যয় সাধন করা হয়। এবং মাঝে হইতে না বুঝিয়া মুখস্থ করিয়া তাহারা ভাষাও শেখে না বিজ্ঞানও শেখে না, কেবল মনকে ক্লান্ত, সময়কে নষ্ট ও শরীরকে ক্লিষ্ট করিয়া অপরাপর শিক্ষার ব্যাঘাত করে মাত্র।
আমরা ছাত্রদিগের শারীরিক ও মানসিক শক্তির এই অন্যায় অপব্যায় নিবারণের উদ্দেশেই এন্ট্রেন্স স্কুলে বাংলা ভাষা বিষয় শিক্ষা দিতে অনুরোধ করি। এই প্রণালীতে, ছাত্রগণ যে সময় ও শক্তি হাতে পাইবে তাহা ইংরাজি শিক্ষায় প্রয়োগ করিয়া উক্ত ভাষা অনেক ভালো করিয়া শিখিবে সন্দেহ নাই এবং সেইসঙ্গে বিষয়গুলিও সহজে ও সম্পূর্ণতররূপে আয়ত্ত করিতে পারিবে। তাহাদের শরীরও অপেক্ষাকৃত সুস্থ হইবে এবং মনোবৃত্তির চর্চাও অপেক্ষাকৃত সুসাধ্য ও স্বাভাবিক হইয়া উঠিবে।
সাধনা, ভাদ্র-আশ্বিন, ১৩০২