ছাতিয়ার (জন্মসংস্কার)

ছাতিয়ার (জন্মসংস্কার)

সন্তান পিতার উপাধিতে পরিচিত হয়, মাতার উপাধিতে নয়। যে গ্রামে সন্তানের জন্ম হয় সে গ্রামে অশৌচ হয়; সেজন্য অশৌচ না যাওয়া পর্যন্ত কোন দেব-পূজা সম্পন্ন হইতে পারে না। যে পরিবারে সন্তানের জন্ম হয় সে পরিবারের অশৌচ হয়, সেজন্য অশৌচ না ‘মেটা’ পর্য্যন্ত গ্রামের কেহই সে ঘরে পান-ভোজন করে না।

পুত্রসন্তান জন্মিলে পাঁচ দিনে ক্ষৌরকর্ম হয়। আর কন্যাসন্তান হইলে তিন দিনে হয়। ক্ষৌরকর্ম্মের দিন সন্তানের পিতা গ্রামের দীনদুঃখী সকলকেই ক্ষৌরকার্য্যের জন্য ডেকে আনে; সকলে তাহার ঘরে একত্রিত হলে একজন নাপিত তাহাদের সকলকে কামাইতে আরম্ভ করে। নাপিত প্রথমে ‘পুরোহিতকে কামায়, তারপর সহকারী পুরোহিতকে, তারপর মাঁঝিকে, পারাণিককে, জগ-মাঁঝিকে, জগ-পারাণিককে, পেয়াদাকে, তারপর গ্রামের অবশিষ্ট লোকজনকে, এবং সর্ব্বশেষে সন্তানের পিতাকে কামাইয়া থাকে।

সন্তানের ক্ষৌরি বিষয় ও জলের ঘাটে নেওয়া বিষয়

পরে নাপিত সদ্যজাত শিশুর খোঁজ করে। ধাইবুড়ী ইহাকে কোলে করে দুটি পাত্র সহ দুয়ারে আসে—একটি পাত্র জল রাখিবার জন্য, আর একটি পাত্র চুল রাখিবার জন্য। তারপর নাপিত শিশুকে কামায়; কামানের পরে ধাইবুড়ী চুলগুলি পাত্রে রেখে দেয়; পরে যে তীরদ্বারা ছেলের নাভী কেটেছিল সেই তীরের সঙ্গে দুটি সুতা বেন্ধে দেয়; ছেলের বাপ একটা পাত্রে তিল নিয়ে গ্রামের সকল পুরুষদের ডেকে স্নানের ঘাটে নিয়ে যায়। সকলে সেখানে স্নান করে। এরা মাঁঝি—Headman. পারাণিক—Asst. Headman. জগমাঁঝি—An official who looks after the works of Santal youths. স্নান করে এলে পর ধাইবুড়ী তেল, হলুদ, আর সূতাবদ্ধ তীরসহ গ্রামের মেয়েদিগকে স্নানের জন্য পুকুরের ঘাটে নিয়ে যায়। তাহারা সকলে ঘাটে উপস্থিত হলে ধাইবুড়ী একটি সুতা ছেলের চুলের সঙ্গে বেন্ধে ভাসিয়ে দেয় এবং পাঁচকোঁটা সিঁদুর দিয়ে জলের ঘাটে ফোঁটা দেয়। ইহাকে ঘাট-কেনা বলে। সকলের স্নান হলে অন্য সূতাগাছি ও তীরখানা ধু’য়ে ঘরে নিয়ে আসে। ফিরে এসে ধাইবুড়ী তীর ও সূতা হলুদে মাখিয়ে ছেলের “ঘুন্‌সী” (কোমরের ডোরা) বানিয়ে দেয়। তারপর ছেলের মা ছাঁচের নীচে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে এবং আসন গাছের পাতা কোলে নেয়।

গোময়জল গুঁড়িজল

তারপর ঘরের চালে ধাইবুড়ী গোবর জল গুলে রেখে দেয়; সেই জল ছাঁচ থেকে ছেলের মার উপরে পড়ে; ছেলের মা বামহাতে সেইজল নিয়ে কতক মাথায় মুখে দেয় এবং খানিকটা গণ্ডূষ করে খায়। তারপর ছেলের মা ছেলেকে ঘরে এনে খাটিয়ায় শোয়াইয়া রাখে। তারপর ধাইবুড়ী চাউলের গুঁড়ি জলেতে গুলে তিনটা পাতার পাত্রে রাখে; একপাত্র গুঁড়িজল ছেলের খাটিয়ার চারি পায়াতে ছিটাইয়া দেয় এবং পাত্রটাকে ফেলে দেয়; আর একপা গুঁড়িজল গ্রামের প্রধান পুরোহিতের, সহকারী পুরোহিতের, গ্রামের মাঁঝির, পারাণিকের, জগমাঁঝির, জগপারাণিকের, ও পেয়াদার ছাতিতে ছিটাইয়া দেয়; তারপরে গ্রামের অন্যান্য পুরুষদের ছাতিতে গুঁড়িজল ঢেলে দেয়। অবশিষ্ট গুঁড়িল প্রথমে পুরোহিতের স্ত্রীর, তারপর সহকারী পুরোহিতের স্ত্রীর, তারপর মাঁঝির স্ত্রীর, পারাণিকের স্ত্রীর, জগম!ঝির স্ত্রীর.. জগপারাণিকের স্ত্রীর, পেয়াদার স্ত্রীর, ছাতিতে ঢেলে দেওয়া হয়। সর্ব্বশেষে গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের ছাতিতেও জল ছিটাইয়া দেওয়া হয়।

ছেলের নামাকরণ

তারপর সেই পরিবারের স্ত্রী-পুরুষ জিজ্ঞাসাবাদ করে,—”এ ছেলেকে কার নাম দিব? যদি পুত্রসন্তান হয় তবে পিতার নাম দিব, আর কন্যা সন্তান হলে মাতার নাম দিব।” প্রথম ছেলে হইলে পিতামহের নামানুসারে তাহার নাম রাখা হয়, আর প্রথম মেয়ে হইলে পিতামহীর নামানুসারে তাহার নামাকরণ হয়। দ্বিতীয় ছেলে হইলে মাতামহের নামানুসারে নামাকরণ হয়, আর দ্বিতীয় মেয়ে হইলে মাতামহীর নামানুসারে নামাকরণ হয়। তার পরবর্ত্তী সন্তানদের কাকা, কাকী, কিংবা মামা, মামীর নামানুসারে নামাকরণ করা হয়। তারপর ধাইবুড়ী বাইরে এলে সকলকে নাম ব’লে দেয় এবং প্রণাম করে বলে, “আজ থেকে ইহাকে—যদি পুত্রসন্তান হয় তবে শিকার কালে, আর যদি মেয়ে সন্তান হয়, তবে জল তুলিবার সময়, অমুক নামেতে ডাকিবে।”

নিমজল

তারপর একটা পাত্রে নিমজল (rain water soaked with fried nim-leaves) আনা হয়। প্রথমে পুরোহিতকে, তারপর সহকারী পুরোহিতকে, মাঁঝিকে, পারাণিককে, জগমাঁঝিকে, জগপারাণিককে, পেয়াদাকে এবং তারপর গ্রামের সকল পুরুষেদের দেওয়া হয়। তারপর পুরোহিতের স্ত্রী, মাঁঝির স্ত্রী প্রভৃতিকে ও গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের দেওয়া হয়। এই প্রকারে অশৌচের নিবৃত্তি হয় ও সন্তানকে সমাজে গ্রহণ করা হয়। পাঁচদিন পরে পুনরায় কেবল নাপিত ও ধাইবুড়ী কামিয়ে দেয়। এইখানেই শেষ হয়।

ধাইবুড়ীর প্রাপ্য

ধাইবুড়ীর প্রাপ্য দুইপ্রকার—ছেলে হইলে তিনহাত পরিমিত একখানা পরিধেয় বস্ত্র, একমুড়ি (প্রায় একমণ) ধান, আর নাড়ীকাটার জন্য একটা বালা (কিংবা শাখা) পায়; আর মেয়ে হইলে একখানা তিনহাত পরিমিত বস্ত্র, দুইমণ ধান, আর নাড়ীকাটার জন্য একগাছা বালা পেয়ে থাকে।

জারজ সন্তান

কোন কুমারী কন্যার সন্তান হলে তাহার পিতা ও ভ্রাতা গ্রামের মাঁঝির ও প্রামাণিকের নিকট গিয়ে সংবাদ দেয়। তাঁরা গ্রামের সকল লোককে খবর দিয়া বৈঠক করে; সকলে হাজির হলে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে, “এ ছেলের পিতা কে?” গ্রামের পাঁচজন তাকেই দোষী সাব্যস্ত করে; মেয়েটি যে ছেলের নাম করে সে প্রতিবাদ করলেও কেহ গ্রাহ্য করে না। কিন্তু সে যদি প্রমাণ করতে পারে যে আরও লোক ইহাতে সংশ্লিষ্ট আছে, তবে সন্তানটী জারজ-জাত বলিয়া নিদ্দিষ্ট হয়। কিন্তু যদি সে কেবল একা দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাহাকে মেয়েটিকে গ্রহণ করতে হয়। একাধিক লোক প্রমাণিত হইলে তাহাদের জরিমানা দিতে হয় এবং জগমাঁঝির নামে ছেলেটির মস্তক মুণ্ডন করা হয়, এবং ছেলেটি জগমাঁঝির বংশের উপাধি প্রাপ্ত হয়; অথবা যদি জগমাঁঝি ইহার কুটুম্ব হয় তবে জগপ্রামাণিকের নামে কিম্বা অন্য কাহারও নামেই ইহার মস্তক মুণ্ডন করা হয়। দোষী যুবকদের দণ্ড জরিমানার টাকা কতক ছেলের মা ছেলেকে সাবালক করিবার জন্য (অর্থাৎ ছেলের শিক্ষার জন্য) পায়, কতক টাকা যাহার নামে চুল কাটা হয় সে পায়। আর অবশিষ্ট গ্রামের পাঁচজনে ভাগ করে নেয়। যদি ছেলের মা পিতার নাম না বলতে পারে কিংবা যদি তাহার বাপ ভাই কোন জামাই টাকা দিয়া না কিনতে পারে তবে সে ছেলেটি জারজ হয়। যদি জামাই কেনা হয়, তবে তাহার বংশানুসারে ছেলের নাম হয় এবং তাহার নামেই ছেলের মস্তক মুণ্ডন করা হয়। জামাই কিনতে এককুড়ি টাকা লাগে। যাহাকে জামাই স্থির করা হয় সে-ই এই টাকাটা পায়। যদি কোন জামাই স্থির করা না যায় তবে সন্তান জারজ হয় ও জগমাঁঝি, জগপ্রামাণিক, কিংব গ্রামের অন্য কারও নামে উহার চুল কাটান হয় এবং সে তাহারই বংশের উপাধি পায়। এসময়ে মেয়ের বাপ-ভাইকে টাকা দিতে হয় এবং যার নামে সন্তানের চুল কামান হয় সে-ই টাকাটা পায়। টাকা প্রচলন হবার পূর্ব্বে একজোড়া বলদ, একটি ধেনুগাই (সবৎসা গাভী) আর এক “পুড়া” ধান লাগিত। ইহাও সেই নির্দ্দিষ্ট জামাইর প্রাপ্য ছিল।

যদি কোন সাঁওতাল যুবতীর সঙ্গে অপর কোন জাতির যুবকের কিংবা অপর জাতির কোন যুবতীর সঙ্গে কোন সাঁওতাল যুবকের ব্যভিচার দোষে কোনও সন্তানের জন্ম হয়, তবে সেইসকল সাঁওতাল যাবজ্জীবন সমাজচ্যুত হয় ও তারা সমাজ হইতে পালিয়ে যায়।

চাচো ছাটিয়ার (শুদ্ধি)

[A ceremony which is obser ved any time before marriage. It seems to be the admission of the child to full privileges as a member of the Santhal community. At the same time there is the idea of purification connected with it. At the close of ceremony the following formula is repeated “we appeal to you five men; we were black like crows now we are white as white paddy birds, you five inen are our witnesses.“ (Campbell)] “চাচো ছাটিয়ার” ক্রিয়ার কোন নিদ্দিষ্ট সময় নাই; বিবাহের পূর্ব্বে যে কোন সময়ে ইহা সম্পন্ন হইতে পারে। এই ক্রিয়া অনুষ্ঠিত না হইলে ছেলেমেয়েদের কাহারও বিবাহ হইতে পারে না। কাহারও বহুসংখ্যক ছেলেমেয়ে থাকিলে সে তাদের সকলের জন্য একবার মাত্র “চাচো ছাটিয়ার” ক্রিয়া সম্পন্ন করে। চাচো ছাটিয়ারের পূর্ব্বে কোন ছেলে মৃত হইলে তার শবদাহ হয় না কিংবা তার অস্থিও নদীতে নেওয়া হয় না। ছেলের “চাচো ছাটিয়ার” করতে হ’লে প্রথমে হাঁড়ি মদ তৈয়ার করতে হয়; এবং গ্রামবাসীদের জন্য তেল ও হলুদের জোগাড় রাখতে হয়।

প্রথমে মাঁঝি ও পারাণিককে ডেকে এনে তাঁহাকে হাঁড়ি খেতে দেওয়া হয়; তারা জিজ্ঞাসা করে, “ওহে এ কিসের হাঁড়ি দিতেছ?” কৰ্ম্মকত্ৰী বলে, “বাবা এটা জানহাড়ি, আমি সঙ্কল্প করেছি যে, ছেলেদের এবার চাচো ছাটিয়ার করব।” এটা সকালবেলা হয়। মাঁঝি ও প্রামাণিক প্ৰথমে হাঁড়ি পান ক’রে গ্রামবাসীদের ডাকবার জন্যে পেয়াদা পাঠিয়ে দেয়। গ্রামের শোক সব একত্রিত হ’লে পর মেয়েরা প্রথমে পুরোহিত ও পুরোহিতের স্ত্রীকে, পাটিয়ে বসিয়ে তেল-হলুদ মাথায়; তারপর সহকারী পুরোহিত ও তাঁর স্ত্রীকে তেল মাখান হয়। তারপর মাঁঝি ও তাঁর স্ত্রী, পারাণিক ও তাঁর স্ত্রী জগমাঁঝি ও তাঁর স্ত্রী, জগপারাণিক ও তাঁর স্ত্রী, পেয়াদা ও তাঁর স্ত্রী, আর তারপর গ্রামের যাবতীয় মেয়েদের তেল মাখান হয়। এরপর সকলকে হাঁড়ি (মদ) বিতরণ করা হয়। প্রথমে মাঁঝি পারা—ণিককে, তারপর অপর সকলকে একবার হাঁড়ি দেওয়া হইলে সকলে ছেলের পিতাকে জিজ্ঞাসা করে “এ হাঁড়ি ক’জন ছেলের জন্য হয়েছে?” ছেলের পিতা বলে “এত ছেলের।” তারপর যত ছেলের জন্য “ছাটিয়ার” করা হয় ততবার চার চার পাত্র হাঁড়ি প্রত্যেককে দেওয়া হয়। এরপর সকলে ছেলের বাপকে জিজ্ঞাসা করে “তোমার কত ইরি ও কত এৰ্ব্বা (অর্থাৎ ছেলেমেয়ে) পেকেছে?” সে বলে “এত ছেলে এত মেয়ে।” তাহারা প্রত্যুত্তরে বলে “তুমি বেশ ভাগ্যবান্।”—আবার তাহারা জিজ্ঞাসা করে, “কোন্ কোন্ দেশে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিবে?” ছেলের বাপ তখন যে দেশে ছেলেমেয়েদের ঠাকুরদাদা কিংবা ঠাকুরমা আছেন সেই দেশের নাম বলে। তারপর তারা সম্বন্ধের হাঁড়ি চায়; তখন পাত্রপাত্রীদের ঘর থেকে আনিত হাঁড়ি পাঁচজনকে দেওয়া হয়। পাঁচজন তখন গান গায় ও নাচে। এইযে এইযে এ দিকে নীলগাইয়ের পদচিহ্নে।

এইযে এইযে এ দিকে পেছন পায়ের চিহ্নে।
খোঁজ খোঁজ নীলগাইয়ের পায়ের দাগ,
খোঁজ খোঁজ পেছন পায়ের দাগ।
পুকুরের পারে নীল গাইয়ের পায়ের দাগ,
নদীর তীরে পেছন পায়ের দাগ।
আয় বেন্ধে সেই সোনার ঘুন্টি (ঘণ্টা)
আয় বেন্ধে দেই কাঁসার ঘুন্টি।

পরে সকলেই আবার সেই হাঁড়ি পান করে।

বক্তৃতা

তারপর তাহারা বক্তৃতা আরম্ভ করে। কি করে পৃথিবীর সৃষ্টি হ’ল, আর গুটি পোকার মত সাঁওতালেরা কোন্ কোন্ দেশ চ’ড়ে এসেছে, এই সববিষয়ে কথাবার্তা হয়, যেন ছেলেপেলেরা কখনও না ভুলে যায়। বলতে বলতে যখন তারা “তারা এদিকে সেদিকে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে” একথা পৰ্য্যন্ত পৌঁছে, তখন তাহারা শিখার দেশের প্রথম “পরগণার” (সর্দ্দার) নাম “হিকিম” বলে উল্লেখ করে। হিকিম সর্দ্দার তাহাদের বলেছিল “এস আমরা উপনিবেশ স্থাপন করি; আমি বায়না দিয়ে বনের সন্ধান নিয়েছি।” তখন তারা (আদিম সাঁওতালেরা) বলেছিল “এস আমরা ইহার সঙ্গে যাই এবং বনজঙ্গল কেটে সাফা করে সংসার স্থাপনের উপযুক্ত করি।” এখানে তারা বিবাহের বিষয় উত্থাপিত করে।

****

“ধান ভানবার সময়ও আমরাই (সাঁওতালেরা) আগে আগে, আগুন আনবার সময়ও আমরাই আগে আগে, জল আনবার সময়ও আমরাই আগে আগে, কাঠ কুড়াইতেও আমরা আগে আগে, না যেতে চাইলেও যাইতে হয়, সেজন্য তোমাদের মন বিশেষ দুঃখিত হয়।”

পাঁচজনে তখন বলে, “মন দুঃখিত করে যে সে সূক্ষ্ম বালিতে ও সোমাই সকরাতে চলে গেল” (অর্থাৎ মরিল)

তারপর কর্মকর্তা ব’লে যে “আপনাদের পাঁচজনের নিকট হাতজোড় করে বলছি যে আজ নার্ভার জন্য, ছাটিয়ারের জন্য, শুণ্ডীর ঘর থেকে হাঁড়ি ঋণ ধার করে আপনাদের কুলাইয়াছি ও সন্তুষ্ট করেছি; আপনাদের পাঁচজনের সেবা ক’রে কৃতার্থ হয়েছি। আপনারা পদ—ব্রজে এসেছেন আপনাদের মাথায় তুলে নিয়েছি। আপনাদের উঠবার বসবার জায়গা দিতে না পেরে লজ্জিত আছি। আরও মিনতি করে বলছি যে, বিবাহের দিনে, নার্ভার দিনে, ছাটিয়ার দিনে মৃত্যুর দিনে আমরা পরিশ্রম করে হাঁড়ি তৈয়ার করব, জল আনব ও কাঠ জোগাইব। আমরা কাকের মত কালো ছিলাম, বকের মত সাদা হয়েছি, আপনারা পাঁচজনে সাক্ষী থাকেন।”

তারপর হাঁড়িপান করে “দং” ও ছাটিয়ার নাচ নাচতে আরম্ভ করে, এই ভাবে শেষ হয়।

সিকা

“সিকা” (বাম হাতে পোড়াচিহ্ন—one, three, five or seven marks burned on the left arm by a piece of cloth, which being rolled, is set fire to.)

আদিযুগের প্রাচীন সাঁওতালেরা বলে থাকে যে যদি কোন পুরুষের সিকা না হয়, তবে পরকালে গাছের মুণ্ডার মত এক রকম পোকা তাহাদের কোলে দেওয়া হয়, (কামড়াইবার জন্য) সেজন্য পুরুষমাত্রই সিকা নেওয়ার যন্ত্রণা কষ্টপূর্ব্বক সহ্য করে থাকে। কেহ কেহ মাত্র একটি, কেহ বা তিনটি, কেহ বা পাঁচটী, আর কেহ বা সাতটি সিক। নিয়া থাকে। ৰাম হাতে সিকা নিতে হয়। নিম্নপ্রকারে সিকা দেওয়া হয়; “চুরুটের মত কাপড়ের নলা তৈয়ার করে উপরে আগুন লাগাইয়া দেওয়া হয়, আর সিকার জায়গায় উহাকে বসাইয়া দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে পুড়িতে থাকে; পোড়া শেষ হ’লে উহাকে চিপে বসিয়ে দেওয়া হয়; তারপর ফোস্কা হ’য়ে ঘা হয়। ঘা ভাল হইলে সিকার দাগ পড়ে।”

খোদা (Tatoo)

মেয়েরা সিকা না নিয়ে খোদা নেয়, যেন পরকালে মুণ্ডার মত পোকা তাহাদের কোলে ব’সে যন্ত্রণা না দেয়। ছাতিতে খোদা নিতে হয়। কোন বিশেষ আক্বতি নাই, যার যে রকম ইচ্ছা সে রকম খোদা নেয় কেবল সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য। প্রথমে কাঠি দ্বারা ভূষার কালিতে লিখে দাগ করা হয় পরে সূচ দিয়ে লেখাগুলি (দাগে দাগে) ফুড়িয়ে দেয়। খোদা হ’লে পর হলুদ মেখে স্নান করে আসে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *