ছাই থেকে আলো

।।ছাই থেকে আলো।।

.

গাড়িতে ওঠার পর দেবু ব্যাজার মুখে জিজ্ঞেস করল “কোথায় যাবেন?”

উপমন্যু বললেন “অফিস চ। তোর মুখ গোমড়া কেন? খিদে পেয়েছে?”

দেবু বলল “খেয়েছি”।

উপমন্যু বললেন “কোথায় খেলি? চ কোথাও একটা দাঁড়িয়ে খেয়ে নি। আমারও দুপুরে খাওয়া হয় নি”।

দেবু গাড়ি স্টার্ট দিল। ইন্সপেক্টর রায়ের অন্যত্র কাজ ছিল। তিনি চলে গেছিলেন।

রোদের তেজ আছে। উপমন্যু এক্সাম প্রিপারেশন বইটা পড়তে শুরু করলেন। জয়িতার বইতে দাগ দিয়ে দিয়ে পড়ার অভ্যাস ছিল। প্রথম চ্যাপ্টারটা ছোট ছোট অংকের। উপমন্যু কিছুক্ষণের মধ্যে বইয়ের প্রবলেমগুলোয় মগ্ন হলেন। হুশ ফিরল গাড়ি রাস্তার পাশের একটা ছোট হোটেলে থামতে।

দেবু বলল “চলুন, খেয়ে নি”।

উপমন্যু বইটা গাড়িতে রেখে গাড়ি থেকে নামলেন।

হোটেলের ভেতর ঢুকে একটা টেবিলে বসলেন। দেবুকে বললেন “যা খাবি অর্ডার কর”।

দেবু বলল “মাছ ভাত নি। আপনিও তাই খান। বাইরের মাংস খাওয়া ঠিক না। কী সব ভাগাড় টাগাড় শুনছি”।

উপমন্যু হাসলেন “তা ঠিক”।

দুটো কাতলা থালি অর্ডার করলেন উপমন্যু। একটু পরেই খেতে দিল। একটা থালায় ভাত, তার বিভিন্ন খোপে ডাল, তরকারি, আর একটা বাটিতে ছোট এক পিস মাছ। উপমন্যু ডাল দিয়ে ভাত মাখছিলেন। দেবু বলল “আজও কি কালকের মত অত রাত করবেন?”

উপমন্যু বললেন “হতে পারে। ঠিক নেই। কেন বলত?”

দেবু বলল “আজ তাড়াতাড়ি ফিরলে ভাল হত। বাড়িতে বড্ড খ্যাক খ্যাক করে”।

উপমন্যু বললেন “সে তো আমার বাড়িতেও করে। কী করব বল”।

দেবু বলল “তাড়াতাড়ি ফিরলেই পারেন”।

উপমন্যু হাসলেন “এই চাকরিতে কি সে সুযোগ আছে রে? ভাল চাকরি পেয়েও গেলাম না শুধু এই চাকরি করব বলে। সব খানেই অবশ্য এরকমই চাপ থাকে”।

দেবু বলল “আমার মেজো শালা আইটি কোম্পানির গাড়ি চালায়। ওদেরও অনেক রাত অবধি অফিস থাকে”।

উপমন্যু বললেন “তবে? সব খানেই তাই”।

দেবু আরেকবার ভাত নিল। উপমন্যু নিলেন না। হোটেলের কাউন্টারে বসা ভদ্রলোক খবরের কাগজে শব্দছক করছিলেন মন দিয়ে। উপমন্যু সে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ উঠে পড়লেন।

দেবু অবাক হয়ে বলল “কী হল? পুরোটা খেয়ে নিন”।

উপমন্যু বললেন “আমার হয়ে গেছে। তুই খেয়ে নে। আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি”।

দেবু মাথা নাড়তে নাড়তে বলল “কী যে করেন”।

উপমন্যু তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খাবারের বিল দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে এক্সাম প্রিপারেশন বইটা খুললেন। একের পর এক পাতা উলটে যেতে লাগলেন। শুরুর দিকে প্রতিটা পাতাতেই জয়িতা পেন্সিল দিয়ে বইতে দাগিয়েছে নিজের মত করে উত্তরগুলো। বেশ কয়েকটা পাতা উল্টাবার পর দেখা গেল একটা পাতায় এসে জয়িতা কোন উত্তরের অপশনে দাগ দেয় নি। বরং সে পেজের ওপরে পেন্সিল দিয়ে একটা ফোন নাম্বার লেখা। উপমন্যু আইটির নায়েককে ফোন করলেন। ফোন বেশ কয়েকবার বেজে থেমে গেল।

অধৈর্য হয়ে উপমন্যু সাইবার সেলে ফোন করে জানতে পারলেন নায়েক মন্দারমণি গেছে। ফোনটা রেখে উপমন্যু বললেন “তাই তো। বলেছিল। ভুলে গেছিলাম”।

দেবু হাত ধুয়ে চলে এসেছিল। গাড়িতে উঠে গম্ভীর গলায় বলল “কী যে করেন না। খাওয়ার নষ্ট করা মোটেও ভাল জিনিস না”।

উপমন্যু বললেন “তা ঠিক। অফিস চ দেখি এবার”।

দেবু গাড়ি স্টার্ট দিল।

উপমন্যু চিন্তিত মুখে জানলার বাইরে তাকিয়ে রইলেন। মিনিট দশেক পরে তার ফোন বেজে উঠল। নায়েক। উপমন্যু সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা ধরে বললেন ‘কী যে কর না, ফোনটা কাছে রাখতে বলেছিলাম না?”

নায়েক বললেন “স্যার এই স্নান সেরে উঠলাম। বলুন, কী হল আবার”।

উপমন্যু বললেন “জাস্ট একটা নাম্বার পেলাম। সেটার ঠিকুজি কুষ্ঠী, ট্র্যাকিং সব দিতে হবে”।

নায়েক অবাক গলায় বললেন “সেটা তো স্যার ডিপার্টমেন্টে দিলেও হত”।

উপমন্যু বললেন “উহু। হাই প্রোফাইল কেস। কোন রিস্ক নিতে পারব না। তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না”।

নায়েক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “ঠিক আছে স্যার। নাম্বারটা এস এম এস করুন। তবে আমার শিওর ডিভোর্স হবে। বউ হেবি খচে যাবে এখানে এসেও কাজ করতে দেখলে”।

উপমন্যু বললেন “ম্যানেজ কর হে। পুরুষদের কাজই হল সারাজীবন ভাল করে ম্যানেজ করে যাওয়া। তোমার কলটা এক্সপেক্ট করছি খুব শিগগিরি। রাখলাম”।

নায়েক বললেন “বাই স্যার”।

ফোন রেখে উপমন্যু বইটা খুলে আবার বইটার প্রবলেম সল্ভ করা শুরু করলেন।

।।ছাই থেকে আলো।।

.

অফিসে নিজের চেম্বারে এসে উপমন্যু কম্পিউটার খুলে বসলেন।

ঘটনাপ্রবাহ নিজের মত করে লিখতে শুরু করলেন।

টাইপ করার মাঝেই চোখটা ফোনের দিকে চলে যাচ্ছিল। একবার ভাবলেনও নায়েককে ফোন করবেন কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফোন থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। ব্যস্ত অফিস। প্রত্যেক অফিসারই কোন না কোন কেসে ব্যস্ত আছেন।

বহুকাঙ্খিত ফোনটা এল ঘন্টাখানেক পরে। নায়েকের নাম্বার দেখেই উপমন্যু সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা তুলে বললেন “বলো। জানা গেল কার নাম্বার, কী বৃত্তান্ত?”

নায়েক বললেন “হ্যাঁ। এই নম্বরটি রেজিস্টার আছে তন্ময় ভৌমিকের নামে। ডেট অফ বার্থ ১২-৩-১৯৮২। ঠিকানা দমদমের। আপনাকে সম্পূর্ণ ঠিকানাটা আমি মেসেজ করছি”।

উপমন্যু বললেন “কর। নাম্বারটা অফ আছে”?

নায়েক বললেন “হ্যাঁ। অফ আছে”।

উপমন্যু অন্যমনস্কভাবে বললেন “ঠিক আছে। থ্যাঙ্ক ইউ ভাই। নাও এঞ্জয় ইওর হলিডে। আপাতত আর জ্বালাচ্ছি না”।

নায়েক হাসলেন “ঠিক আছে স্যার”।

উপমন্যু বললেন “ঠিকানাটা এস এম এস কর এখনই”।

নায়েক বললেন “শিওর স্যার”।

ফোন রাখার এক মিনিটের মধ্যেই তন্ময় ভৌমিকের পুরো ঠিকানাটা উপমন্যুকে এস এম এস করে দিলেন নায়েক। উপমন্যু এস এম এসটা পাওয়া মাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেরোলেন। তাকে দেখে তার কলিগ রঙ্গন পালিত চেচিয়ে উঠলেন “কী হে উপমন্যু, তোমার তো খোঁজই নেই। খুব বিজি নাকি?”

উপমন্যু বললেন “তা বটে। পরে কথা বলছি ভাই”।

রঙ্গন বললেন “এইজন্য বলি টিম কর, টিম কর। বসও তেমন। তোমাকে একা ছেড়ে দেন। তুমি বলেই দেন হয়ত”।

উপমন্যু হেসে বললেন “তা বটে। তবে তোমাকে লাগতে পারে এই কেসে। তৈরী থেকো”।

রঙ্গন মাথা নাড়লেন “শিওর বস। অলওয়েজ অ্যাট ইওর সার্ভিস”।

দেবু গাড়িতেই ঘুমাচ্ছিল। উপমন্যু কাঁচে ঠক ঠক করে ওকে তুলে দিয়ে বললেন “ওঠ শিগগিরি। দমদম যাব”।

দেবু ধড়মড় করে উঠে গাড়ির দরজা খুলে দিল। উপমন্যু গাড়িতে উঠতে গাড়ি স্টার্ট দিল। উপমন্যু এস এম এসটা দেখে দেবুকে ঠিকানাটা বলে দিয়ে বললেন “জলদি চালা”।

দেবু উত্তর দিল না। বোঝা যাচ্ছিল দিবানিদ্রা ভঙ্গ হওয়ায় সে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। ঘন্টাখানেক লাগল ঠিকানায় পৌঁছতে। বাজারের কাছে পৌঁছে স্থানীয় লোকেদের জিজ্ঞেস করে খানিকটা গিয়ে দেখা গেল একটা সরু গলির মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেঁটে যেতে হবে। উপমন্যু বললেন “তুই এখানেই থাক। আমি দেখে আসছি”।

দেবু বলল “ঠিক আছে”।

গলিটা ধরে আরও মিনিট পাঁচেক হাঁটবার পরে নায়েকের পাঠানো ঠিকানায় পৌঁছলেন উপমন্যু। একটা ছোট একতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে ছোট বাগান করা। কলিং বেল টেপার মিনিট দুয়েক পরে এক ভদ্রমহিলা এসে দরজা খুলে অবাক চোখে উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বললেন “বলুন কী চাই?”

উপমন্যু বললেন “তন্ময়বাবু আছেন?”

মহিলাটি মাথা নেড়ে বললেন “না। উনি অফিসে এখন। কেন বলুন তো?”

উপমন্যু আই কার্ড বের করে দেখিয়ে বললেন “আমি পুলিশ থেকে আসছি একটা কেসের ব্যাপারে। তন্ময়বাবুর অফিসের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দেওয়া যাবে? আপনি কি ওঁর স্ত্রী?”

মহিলাটি খানিকটা ভয় পেয়ে বললেন “হ্যাঁ। আমি ওঁর স্ত্রী। কিন্তু আপনি কী বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না”।

উপমন্যু হেসে বললেন “সে তো এখনও আমিও কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। বোঝার চেষ্টা করছি বলতে পারেন। কোথায় চাকরি করেন আপনার স্বামী? এস আর জি ইনফোটেকে কি?”

মহিলাটি বললেন “না, উনি সরকারি চাকরি করেন। আপাতত সল্টলেকে পোস্টেড আছেন”।

উপমন্যু বললেন “বেশ। দেখুন তো এই মেয়েটিকে চিনতে পারেন কি না”।

উপমন্যু তার ফোনটা এগিয়ে দিলেন। মহিলাটি জয়িতার ছবি দেখে মাথা নাড়িয়ে বললেন “না। আমি একে চিনি না”।

উপমন্যু বললেন “আচ্ছা। আপনি অনুগ্রহ করে তন্ময়বাবুর একটি অ্যাক্টিভ নাম্বার এবং বর্তমান অফিসের ঠিকানাটা আমাকে দিন”।

মহিলাটি বললেন “আমি বলছি আপনি লিখে নিন”।

উপমন্যু বললেন “বেশ। বলুন”।

.

।।ছাই থেকে আলো?।।

গাড়িতে উঠে উপমন্যু বললেন “সল্টলেক চ”।

দেবু গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল “এই করি সারাদিন ধরে”।

উপমন্যু ঠিকানার কাগজটা দিয়ে তাকিয়ে ছদ্ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “কী করবি, এই তো জীবন”।

দেবু গোঁজ হয়ে চালাতে চালাতে বলল “আমার কিন্তু আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে”।

উপমন্যু বললেন “ছেড়ে দেব তো। চিন্তা করিস না। দাঁড়া একটা ফোন করে নি”।

কাগজে দেওয়া নাম্বারটা ডায়াল করলেন উপমন্যু। বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এল “আরে মশাই বললাম তো আমার ক্রেডিট কার্ড লাগবে না। দেওয়ার সময় তো দিয়ে দেবেন, তার পরে বিল দিতে একদিন দেরী হলে প্যান্ট হলুদ করে দেবেন। রাখুন তো”।

ফোনটা কেটে গেল।

উপমন্যু হতভম্ব গলায় বললেন “যাব্বাবা”।

নাম্বারটা আবার ডায়াল করলেন। এবার একবার রিং হতেই ওপ্রান্তে ধরলেন তন্ময়বাবু “কী হল? আবার জ্বালাচ্ছেন কেন? বললাম তো আমার চাই না ক্রেডিট কার্ড”।

উপমন্যু একটু গলা খাকরিয়ে বললেন “তন্ময় ভৌমিক বলছেন? আমি কলকাতা পুলিশ থেকে বলছি”।

“অ্যা?” ওপ্রান্তে যেন একটা ইলেকট্রিক শক খেলেন ভদ্রলোক, “পুলিশ? কেন? কী করলাম বলুন তো আমি?”

“আজ্ঞে একটা কেসের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে একটু বসতে হত। আপনার বাড়িতে এসেছিলাম, আপনার স্ত্রীর থেকে আপনার অফিসের ঠিকানা পেয়েছি। আপনি এখন অফিসে আছেন?” উপমন্যু নম্র গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

“বাড়িতে? জানতামই তো। ঘরশত্রু বিভীষণ বউ থাকতে আর চিন্তার কী আছে”। মনে মনেই বলতে চেয়েছিলেন তন্ময়বাবু কিন্তু কথাটা এদিকেও চলে এল।

উপমন্যু বললেন “আপনার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি তন্ময়বাবু। আমরা একটা কেসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় আছি এখন”।

তন্ময়বাবু বললেন “বেশ। অফিস অ্যাড্রেস যখন পেয়েই গেছেন তখন চলে আসুন। এখানেই কথা বলে নেব। পাঁচটার আগে আসবেন কিন্তু। তারপরে আমি থাকি না”।

উপমন্যু বললেন “থ্যাংক্স। আমি এখনই আসছি। চিন্তা করবেন না”।

ফোনটা কাটলেন উপমন্যু।

#

তন্ময় ভৌমিক মধ্য চল্লিশ, ছোটখাটো ফরসা চেহারার লোক। উপমন্যুকে অফিসের একটা ছোট ঘরে নিয়ে গিয়ে বললেন “বলুন”।

উপমন্যু আই কার্ড বের করে টেবিলে রাখলেন। তন্ময় ভৌমিক কার্ডটা তুলে দেখে বললেন “ওরে বাবা। গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশে ছুলে কত ঘা যেন?”

উপমন্যু পকেট থেকে ফোন বের করে জয়িতার ছবি বের করে তন্ময় ভৌমিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন “চেনেন এই মেয়েটাকে?”

তন্ময় ভৌমিকের চোখে পাওয়ার আছে। পকেট থেকে চশমা বের করে অনেকক্ষণ জয়িতার ফটো দেখে বললেন “নাহ। কে ইনি?”

উপমন্যু তন্ময়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন “সত্যি বলছেন তো? পুলিশ কিন্তু খুব বাজে জিনিস তন্ময়বাবু”।

তন্ময় বললেন “পুলিশ কী জিনিস আমি জানব না? আমার মেজো শালাও পুলিশে আছে। ভোর রাত থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লরি ধরে সংসার চালায়। মাইনের টাকায় হাতও দিতে হয় না। আমাকে পুলিশ নিয়ে আর নতুন কী বলবেন?”

উপমন্যু বহু কষ্টে হাসি চেপে গম্ভীর গলায় বললেন “মেয়েটি খুন হয়েছে তন্ময়বাবু। এবং অত্যন্ত নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। মৃত্যুর আগের দিন মেয়েটি একটি বইতে আপনার নাম্বার পেনসিলে লিখে রেখে গেছে”।

তন্ময় অবাক হয়ে বললেন “আমার নাম্বার? কোন নাম্বার?”

উপমন্যু নাম্বারটা বললেন তন্ময়কে।

তন্ময় রেগে গিয়ে বললেন “দূর মশায়। এই নাম্বার আমার কেন হতে যাবে। এটা আমার নাম্বার না। এই নিন, আমার ফোন নিন”… তন্ময় তার ফোন এগিয়ে দিলেন, “এই ফোনে দুটো নাম্বার আছে, আমার অফিসের সবাইকে জিজ্ঞেস করুন, সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে, আমার এই নাম্বার দুটো ছাড়া আর কোন নাম্বার নেই”।

উপমন্যু বললেন “ওকে। আপনার কথা মেনে নিলাম। তাহলে বুঝতে হবে আপনার আধার কার্ড ইউজ করে কেউ সিম তুলেছে। আপনার এই দুটো সিম আপনি কবে থেকে ইউজ করছেন?”

তন্ময় মাথা চুলকে বললেন “একটা তো জিও। আরেকটা বি এস এন এল। বি এস এন এলটা অনেক পুরনো সিম। জিও সিমটা এই ক’মাস আগে…”

তন্ময় থেমে গেলেন।

উপমন্যু বললেন “বলুন”।

তন্ময় বললেন “মাসখানেক না। বছর পেরিয়ে গেছে। কেউ একজন আমার সঙ্গে জিওর দোকানে গেছিল, যে আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে একটা সিম তুলেছিল। নামটা ভুলে গেছি বুঝলেন”।

উপমন্যু তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললেন “ভুলে গেছেন মানে? এসব ব্যাপার কেউ ভোলে নাকি?”

তন্ময় হতাশ গলায় বললেন “আমার মেমোরি খুব খারাপ। আমার বউও জানে। প্রায়ই আলু নিতে বললে আমি পেয়াজ নিয়ে যাই। তারপরে বউয়ের ঝাড় খেতে হয়”।

উপমন্যু তীক্ষ্ণ চোখে তন্ময়কে দেখে বললেন “দেখুন তন্ময়বাবু, হয় আপনি একবারেই কিছু জানেন না, নয়ত আপনি সব জেনে বোকা সাজছেন। ব্যাপারটা এরকম যদি হয় তাহলে কিন্তু আপনাকে হেফাজতে নিতে হবে। সিমটা কাকে দিয়েছিলেন মনে করুন”।

তন্ময় উপমন্যুর দিকে ভীত চোখে তাকিয়ে বললেন “হেফাজত? আচ্ছা, আমাকে একটু সময় দিন”।

উপমন্যু বিরক্ত মুখে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

.

।।যেখানে দেখিবে ছাই।।

.

নায়েককে ফোন করছিলেন উপমন্যু। নায়েক ফোন তুলছিলেন না। তন্ময় ভৌমিক চুপ করে উপমন্যুর সামনে বসে আছেন। উপমন্যু ফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাখতে তন্ময় বললেন “আমি কি এবার ছুটি পেতে পারি”?

উপমন্যু বললেন “আপনাকে আমি আটকে রাখি নি তন্ময়বাবু। সমস্যা হল, আপনার আধার কার্ড দিয়ে যে নাম্বারটা তোলা হয়েছে সেটা একটা ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যদি সেটা হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনি ফেঁসে যেতে পারেন। এখন আপনাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে”।

তন্ময় তেরিয়া হয়ে বললেন “আমি তো খুন করি নি। আমি কেন ফেঁসে যাব বলুন তো?”

উপমন্যু বললেন “আপনি খুন করেছেন কি করেন নি সেটা তো এখনই আমি কিছু বলতে পারব না, তাই না। আপনি কী করেছেন সে সম্পর্কেও আমরা এখন পুরোপুরি অন্ধকারে। আমি আবার আপনাকে বলছি, আপনি আমাদের সাহায্য করুন আপনার নিজের স্বার্থে। একটা ছোট মেয়ের স্বার্থেও, যাকে নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় এসে খুন হতে হয়েছে। প্লিজ”।

তন্ময় এবারে খানিকটা শান্ত হলেন। বললেন “বলুন, আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব”।

উপমন্যু বললেন “আমি কয়েকজনের ছবি দেখাচ্ছি। আপনি এই ছবিগুলো দেখে আমাকে বলুন এদের কাউকে আপনি চেনেন কি না”।

তন্ময় বললেন “বেশ। দেখান”।

উপমন্যু ফোনের গ্যালারি বের করে তন্ময়ের সামনে দিয়ে বললেন “সোয়াইপ করে যান। যাকে চিনতে পারেন, আমাকে জানান”।

তন্ময় ফোনটা নিয়ে সোয়াইপ করতে শুরু করলেন। প্রথমেই এল শঙ্করবাবুর ফটো। তন্ময় বললেন “ইনি তো বিখ্যাত লোক মশাই। ইনি খুন করেছেন নাকি?”

উপমন্যু মাথা নাড়লেন “না না, তা কেন হবে? আপনি কি একে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন?”

তন্ময় দাঁত বের করে হেসে বললেন “খেপেছেন মশাই, ছাপোষা মানুষ। শঙ্করবাবুকে চিনলে এখানে পড়ে থাকতাম নাকি”।

উপমন্যু বললেন “কেন? আপনি এখানে পড়ে আছেন তাতে খারাপ কী আছে? ভালই তো আছেন। সরকারি চাকরি করছেন, আজকালকার দিনে ক’টা লোক সরকারি চাকরি করেন?”

তন্ময় মুখ বেঁকিয়ে বললেন “সরকারি চাকরি? দূর মশাই, সে তো দীপুদা। দীঘা পুরী দার্জিলিংএর বাইরে যাওয়াই যায় না। বেসরকারি মানেই তো ব্যাংকক। সে তো স্বর্গ শুনেছি, থাই মামণিরা এসে মালিশ টালিশ করে দিয়ে যায়…”

কথার তোড়ে বলে যাচ্ছিলেন তন্ময়, বেশি বকে ফেলছেন বুঝে চুপ করে গেলেন। উপমন্যু বললেন “মালিশ… টালিশ… তো এই শহরেও হয়। করান বুঝি”?

তন্ময় উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বললেন “তার সঙ্গে আপনার কেসের সম্পর্ক আছে কি? আমার টাকা, আমি যা ইচ্ছা করব”।

উপমন্যু হাত তুলে মোবাইলের দিকে দেখিয়ে বললেন “প্লিজ দেখুন, আমায় অন্যত্র যেতে হবে”।

তন্ময় রাগী চোখে উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে ফটোগুলো তাড়াতাড়ি সোয়াইপ করে দেখে নিয়ে ফোনটা উপমন্যুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন “এদের মধ্যে কাউকেই চিনি না আমি। কারো সঙ্গে আমার কোন আলাপ নেই”।

উপমন্যু ফোনটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন “বেশ। আজ তাহলে এটুকুই থাকল। যদি দেখা হওয়ার হয়, তাহলে নিশ্চয়ই হবে”।

তন্ময় বললেন “আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আমার ফ্যামিলিতেও কিন্তু পুলিশের লোক আছেন, বলে দিলাম”।

উপমন্যু তন্ময়ের দিকে ঝুঁকে বললেন “আপনার ফ্যামিলিতে পুলিশের লোক আছেন, কিংবা সিবিআইয়ের লোক আছেন, তাতে আমার কোন যায় আসে না ভৌমিকবাবু। যদি আপনি দোষী হন, তাহলে আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও কোমরে দড়ি পরিয়ে জেলে নিয়ে যাবার ক্ষমতা ভারতীয় সংবিধান আমাদের দিয়ে রেখেছে”।

তন্ময় ঘাবড়ে গিয়ে দাঁত বের করে বললেন “এই দেখুন মশাই, খচে যাচ্ছেন কেন? বিশ্বাস করুন, আমি একটা পিপড়েও মারি নি জীবনে, খুন টুন তো দূরের কথা। আপনি বসুন, আমাদের অফিসের ক্যান্টিনের চা খেয়ে যান। অযথা রেগে যাচ্ছেন মশাই”।

উপমন্যু বসলেন। বললেন “বেশ। আপনার কথা বিশ্বাস করলাম। খাওয়ান চা”।

তন্ময় ঘর থেকে বেরিয়ে চা বলে এসে বসে বললেন “লোকজনের হেবি কৌতূহল। সবাই ভাবছে অফিসে পুলিশের গাড়ি কেন এল। এ কেমন ফেঁসে গেলাম বলুন তো মশাই। কোন কুক্ষণে সিম তুলতে যেতাম। সেই যে, খুব লম্বা লাইন পড়ল না? আরে ভুলে গেলেন? সেই যে ফ্রি সিম দিচ্ছিল আধার নাম্বার দিলেই। আমাকেও কে যেন বলল…” তন্ময় বিভ্রান্তের মত মুখ করে উপমন্যুর দিকে তাকালেন।

উপমন্যু বললেন “সিমটা এক বছর বা দেড় বছর আগে তোলা। হতে পারে, আপনার কোন অফিস কলিগের সঙ্গে গিয়ে তুলেছিলেন”।

তন্ময় কয়েক সেকেন্ড উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে বললেন “ঠিক বলেছেন মশাই, মনে পড়েছে। অতনু… অতনু। আমি সে সময়টা প্রোজেক্টের কাজে আমাদের বিবাদি বাগের অফিসে ছিলাম। অতনুই তো… হ্যাঁ, স্পষ্ট মনে পড়েছে, অতনু আর আমি চাদনি গিয়ে সিমটা তুলেছিলাম”।

উপমন্যু নড়ে চড়ে বসলেন “অতনু? অতনু কী? নাম ধাম যা জানেন বলুন”।

চা এসে গেছিল। তার সঙ্গে লম্বা বিস্কুট।

উপমন্যু চা টেবিলে রাখলেন। ক্যান্টিনের ছেলেটা অনেক প্রশ্ন নিয়ে উপমন্যুর দিকে তাকাচ্ছিল।

তন্ময় ক্যান্টিনের ছেলেটাকে ধমক দিয়ে বললেন “তুই যা এখন। পরে কথা বলব”।

ছেলেটা বেরোলে তন্ময় ঘরটার দরজা ভেজিয়ে দিয়ে চেয়ারে বসে বললেন “দাদা, আমার নাম যেন না ওঠে। অতনু ভটচাজ একটি চিজ”।

উপমন্যু বললেন “মানে?”

তন্ময় আবার ভাল করে দরজার দিকে তাকিয়ে একটু উশখুশ করে বললেন “এই যে মালিশ টালিশের কথা বলছিলেন না, সেটা অতনুর পাল্লায় পড়ে একবার করিয়েছিলাম। বালিগঞ্জে একটা সালোন না কী বলে সেসব আছে মশাই। বাইরে থেকে দেখলে কিস্যু বুঝবেন না। ভেতরে গিয়ে কন্ট্র্যাক্ট হল। সে এক এক্সপেরিয়েন্স। কীসব ক্রিম টিম দিয়ে নাঙ্গা মেয়ে বডি মালিশ করে দেয়, তারপর…”

তন্ময় কাশতে কাশতে চুপ করে গেলেন।

উপমন্যু বললেন “হু বুঝলাম। এই অতনুর ডিটেলসটা দিন তবে। কোথায় আছেন এই চিজটি?”

তন্ময় বললেন “এখন হাওড়ার অফিসে আছে। ইউনিয়নে চেনা পরিচিত আছে তাই নিজের ভাল পোস্টিং করিয়েছে আর কী”।

উপমন্যু বললেন “হু, আর বাড়ির ঠিকানা?”

তন্ময় বললেন “ওই তো, হাওড়াতেই ওর বাড়ি। শিবপুরে”।

উপমন্যু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “দেবুরে। হল তোর আজ।” তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললেন “দিন, অতনুর ফোন নাম্বার”।

.

দেবু বিড়ি খাচ্ছিল। উপমন্যুকে দেখে বিড়ি ফেলে দিল। উপমন্যু দেবুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন “তুই একটা কাজ কর, তুই বাড়ি চলে যা। আমি ক্যাব নিয়ে নিচ্ছি”।

দেবু বলল “কেন কোথায় যাবেন?”

উপমন্যু বলল “শিবপুর যেতে হবে। ফিরতে যথারীতি রাত হতে পারে। তুই বাড়ি চলে যা”।

দেবু গাড়িতে উঠে বলল “বসুন”।

উপমন্যু অবাক হয়ে বললেন “মানে?”

দেবু গম্ভীর গলায় বলল “আগে ডিউটি। কাজের মাঝখান থেকে আমি পালাই না”।

উপমন্যু অনেক কষ্টে হাসি চেপে গাড়িতে উঠলেন।

দেবু গাড়ি স্টার্ট দিল। উপমন্যুর ফোন বাজছিল। দেখলেন বিল্টু ফোন করছে।

উপমন্যু বললেন “বল বিল্টু”।

বিল্টু বলল “স্যার, দেখা হবে নাকি?”

উপমন্যু বললেন “হতেই পারে। কোথায় তুমি?”

বিল্টু বলল “আমি বেলেঘাটার কাছে আছি স্যার”।

উপমন্যু বললেন “বাহ, ভালই হল, আমি হাওড়া যাচ্ছি এখন। তুমি ওদিকেই থাকো। গাড়িতে তুলে নিচ্ছি”।

বিল্টু বলল “ঠিক আছে স্যার”।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বিল্টু গাড়িতে উঠল। বিল্টু পুলিশের ইনফরমার। ছোট খাটো চেহারা। এককালে প্রচুর বাজে কাজ করেছে। উপমন্যুই বিল্টুর মগজধোলাই করে ওকে সৎপথে আনেন। এখন শোলার ব্যবসায়ী। তবে উপমন্যু যে কোন কাজ দিলে নিষ্ঠা সহকারে করে।

গাড়িতে উঠে বিল্টু বলল “কলকাতায় কি ঠান্ডা পড়ে না স্যার? আমাদের হুগলীতে হেবি ঠান্ডা”।

উপমন্যু বললেন “পলিউশন বাড়ছে বলেই হয়ত। যাক গে, কাজের কথায় আসি। কী আপডেট বল”।

বিল্টু মোবাইল বের করে বলল “এই হালদার বাড়ির মালিক যিনি, মানে বয়স্ক লোক যে ভদ্রলোক, সুশান্ত হালদার, তিনি বাড়ি থেকে বেরোন না। পাড়ার লোকেদের থেকে শুনে বুঝলাম নিতান্ত ভদ্রলোক। কারো সাতে পাঁচে থাকেন না। আছেন, ওই অবধি। সুশান্ত বাবুর বড় ছেলে এখানে থাকে না। ছোট ছেলে থাকে। বিশ্বজিৎ আর ওর স্ত্রী। বিশ্বজিৎবাবু ভোকাল লোক। পাড়ার পুজোর মিটিংএ বাওয়াল টাওয়াল দেন… সরি স্যার, বাজে কথা বেরিয়ে গেল”।

উপমন্যু বললেন “আহ, তুমি বল না, বাজে কথা বেরোলে বেরোবে”।

বিল্টু খুশি হয়ে বলল “থ্যাঙ্কু স্যার। যা বলছিলাম, এই বিশ্বজিৎবাবু ভোকাল লোক। তবে চাউনি ভাল না”।

উপমন্যু বললেন “চাউনি ভাল না মানে?”

বিল্টু বলল “দেখুন না স্যার, বর বউ একসঙ্গেই অফিস যায়। কিন্তু বাসে টাসে কোন মেয়েকে দেখার চোখ তো দেখলাম, একেবারেই ভাল না”।

উপমন্যু বললেন “সে তুমি আর কী করবে। এই সিনড্রোমে অনেকেই ভোগে। ওসব কোন কাজের কথা না। কাজের কোন কথা থাকলে বল। নীলমের সম্পর্কে কিছু খবর পেলে?”

বিল্টু মাথা নেড়ে বলল “সেরকম কিছু না স্যার। এই দুদিনে কী আর হয়। আরো সময় লাগবে”।

উপমন্যু হতাশ হয়ে বললেন “তাহলে আর দেখা করলে কেন? সেরকম কোন ব্রেকিং নিউজ তো দিতে পারলে না”।

বিল্টু বলল “ব্রেকিং নিউজ স্যার জীবিত কারো সম্পর্কে দেওয়ার নেই”।

উপমন্যু বললেন “মানে? জয়িতার সম্পর্কে দেবে?”

বিল্টু বলল “হ্যাঁ স্যার। সে মেয়ের সম্পর্কেই। মেয়েটা অনেক রাত করে ঘরে ফিরত। পাড়ার লোকেদের কাছে মেয়েটার ইমেজ হেবি খারাপ। অনেকের ধারণা মেয়েটা… ইয়ে মানে কলগার্ল ছিল। আর খুব ডেসপারেট মেয়ে ছিল স্যার। পাড়ার দোকান থেকে একদিন নাকি কন্ডোম কিনেছিল”।

উপমন্যু বললেন “সে তো ভাল ব্যাপার। ছেলেরাই সব সময় কন্ডোম কিনবে এ কথা কোথায় লেখা আছে। যাক গে, বল তারপর”।

বিল্টু বলল “ও মেয়ের পাড়াতেও দিওয়ানা ছিল। কিন্তু কাউকে পাত্তা দিত না। সোজা বাড়িতে গিয়ে ঢুকত। তবে পাড়ার ছেলেপিলে ওই ঝাড়ি অবধিই আটকে ছিল। তার বেশি কোন দিন কিছু করে নি”।

উপমন্যু বললেন “আচ্ছা। আর?”

বিল্টু বলল “কালীপুজোর রাতে মেয়েটার সঙ্গে একটা ছেলের খুব ঝগড়া হয়েছিল। ছেলেটা বাইক নিয়ে মেয়েটাকে দিতে এসেছিল। পাড়ার মোড়েই মেয়েটা বাইক থেকে নেমে গিয়ে গালাগাল দিতে বাড়ি ফিরেছিল। এটা পাড়ার মোড়ের পানের দোকানের নিউজ”।

উপমন্যু বললেন “হু। বুঝেছি। নজর রাখো। খবর নিতে থাকো। তুমি এখন কোথায় যাবে?”

বিল্টু বলল “আপনি হাওড়া যাচ্ছেন না? আমায় ছেড়ে দিন। আমি ঢাকুরিয়া চলে যাই। একটা ডেরা জুটিয়েছি ক’দিনের জন্য”।

উপমন্যু পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে বিল্টুকে দিয়ে বললেন “এ নাও। পরে তোমার পেমেন্টের ব্যবস্থা করে দেব। দেবু, গাড়িটা বাঁ দিক করে দাঁড় করা”।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *