ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার

ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার (রচনা ১৯৯৭-৯৮। প্রকাশ ১৯৯৯)

বিষণ্ণকরণী

রাত্রির ভিতরে এসে আরো রাত্রি মিশে যায় যদি
অন্ধকার থেকে যদি জেগে ওঠে আরো অন্ধকার
 সমস্ত মুখের থেকে মুখরতা মুছে যায় যদি
তোমার আমার মধ্যে ভেসে যায় সব পারাপার
 প্রত্যেক মুহূর্ত যদি নিয়ে আসে বিষণ্ণকরণী
প্রত্যেক অতীতবিন্দু ভরে দিয়ে ভবিষ্যৎজলে
কথা যদি থেমে যায় কথা যদি দৃষ্টি হয়ে যায়
প্রত্যেক শরীর যদি শরীর-উত্তর কথা বলে
 রাত্রির ভিতরে তবে আরো রাত্রি মিশে যাওয়া ভালো
অন্ধকার থেকে ভালো আরো অন্ধকার জেগে ওঠা।

তবে কি তোমাকে আমি সত্যি কথা বলিনি সেদিন?
অপমানক্ষতগুলি স্তোক দিয়ে ঢেকে রেখেছি কি?
ছড়ানো সমস্ত বর্ণ স্তব্ধতা ছড়িয়ে রাখে যদি
শব্দ দিয়ে কীভাবে-বা কেবলই তোমার কথা লিখি?
 ছন্দের ভিতরে তুমি, ছন্দ যদি না-ও থাকে, তুমি
তুমিই শ্মশান আর তুমিই নিবিড় জন্মভূমি
 রাত্রিগুলি মিশে গিয়ে গড়ে তোলে যে-মূর্তি তোমার
 সব অন্ধকার মিলে তোমার যে দৃষ্টি দেয় ভরে
সেই মূর্তি সেই দৃষ্টি ভাষা পায় রতিময় ঘরে
‘শিরোনামে নয়, তুমি নেমে এসো পঙক্তির ভিতরে।’

*

পক্ষাঘাত

একদিন আমরাও এই মাটিজলে ছিলাম, যেখানে
প্রত্যেক মুহূর্ত তার পক্ষাঘাতে মরে যেতে যেতে
হঠাৎ জাগর হতো, আর সেই জাগরণপলে
ভেসে আসত কত গুল্ম, কতই নক্ষত্র, কত তিথি
আয়নমণ্ডল ভেঙে নীলাভ বিপুল আলো এসে
অদৃশ্য নাচের টানে ভরে দিত শরীরমণ্ডল।
 তার পরে আর কেউ অন্য কারো মুখে তাকাত না
এক খণ্ড শুয়ে থাকত আরেক খণ্ডের বিপরীতে–
 এ-রকম ভ্রান্তি ছিল। লাঞ্ছনায় ছিন্নভিন্ন বুক
 পড়ে থাকত রাজপথে- জনহীন নৈশ রাজপথে।
 ভোরে তবু তারই তাপে ফুটে উঠত সূর্যমুখী ফুল
একটাদুটো কবিতা-বা। সারাদিন জেগে থেকে তারা
 আবার ধ্বংসের দিকে মুখ রেখে দাহ নিতে নিতে
 মরে যেত পক্ষাঘাতে ঈশ্বরের ভার বুকে নিয়ে
বলে যেত মনে রেখো, আমরাও ছিলাম পৃথিবীতে।

*

কথার ভিতরে কথা

সকলে না, অনেকেই কথার ভিতরে কথা খোঁজে।
 সহজের ভাষা তুমি ভুলে গেছ। এই বৃষ্টিজলে
 এসো, স্নান করি।
 জলের ভিতরে কত মুক্তিপথ আছে ভেবে দেখো।
 অবধারিতের জন্য বসে থেকে বসে থেকে
 আরো বেশি বসে থেকে থেকে
হৃদয় এখন কিছু কুঞ্চন পেয়েছে মনে হয়।
 তবে কি তোমার কোনো নিজস্ব গরিমাভাষা নেই? কেন আজ
প্রত্যেক মুহূর্তে এত নিজের বিরুদ্ধে কথা বলো?

*

এখনও সে

এখনও কীর্তনখোলা? এখনও কি আছে সেই নাম?
 তেমনই প্রবাহমুখ? এখনও কি সে-রকমই আছে?
 সে-রকম নেই আর, সে-রকম থাকার কথা না।
 বহু তরণের মধ্যে ঘুরে ঘুরে, মুড়ে নিয়ে ডানা
আরেক রূপের দিকে জলবতী আজও তার গান
সময় বেষ্টন করে পড়ে আছে। দেখেছে আমাকে?
 সেকথা ভাবিনি আর এই দুপুরের দেশে এসে
মনেও রাখিনি ঠিক সে আমাকে মনে রাখে কি না
 আমার শরীর শুধু জেগে ওঠে তার কাছে গেলে।

*

মঠ

তোমাকে পাই না আর তোমার সম্পূর্ণ কাছে গেলে
জল যদি যায় যাক রূপসা থেকে কীর্তনখোলায়
সে-জলের নাম আজ মনে পড়ে বহুদিন পরে
সে-জলের নামে আজ রক্তিমা পেয়েছে অবসাদ।
 তুমি এসে তার ধারে দাঁড়িয়েছ সুপুরির সারি
তোমার মাটির কাছে পড়ে আছে পঞ্চাশ বছর
 সে-মাটির নাম আজ মনে পড়ে বহুদিন পরে
সে-মাটির নামে আজ বয়স ভেঙেছে সব বাঁধ।
 তবুও তোমার কাছে যাবার পাইনি কোনো পথ
 তোমার হৃদয় আজ হয়ে আছে হৃদয়ের মঠ।

*

সন্ধ্যানদীজল

দুহাত তোমার স্রোতে, সাক্ষী থাকো, সন্ধ্যানদীজল।
 এমন দর্পণদিনে বহু মঠ পেরিয়ে পেরিয়ে
তোমার দুঃখের পাশে বসে আছি এই ভোরবেলা।
 আরো যারা এ-মুহূর্তে নেই হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে
 আমার শরীর ঘিরে এমন সম্পূর্ণ যবনিকা–
 তাদের সবার শ্বাস দুহাতে অঞ্জলি দিয়ে আজ
এইখানে বসে ভাবি আমার সম্বল স্থির থাকা।
 আমার সম্বল শুধু ঝুমকোঘেরা মঠ অবিকল
আমার নদীর নাম সন্ধ্যানদী, তুমি তার জল।

*

ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার

পরিধির পাশে বসে তুমি কি আমার অসম্ভব
 ইচ্ছেগুলি জানতে পাও? কিংবা এই বৃত্তের ভিতরে
আমার মুখের রেখা দেখে কোনো খরার ফাটল
টের পাও কোনোদিন? পরিপাটি নুড়িতে শিকড়ে
পাক খেয়ে ঘুরে আসে অ্যাকুয়ারিয়ামে ভাসা মাছ–
 তুমি কি আমাকে ভাবো তোমারই আরশির ভাঙা কাচ?
এত এত গণ্ডি টেনে অনড় করেছ দুই পা
 যা কিছু সহজে আসে তাকেই বলেছ শুধু ‘না’
কিছু শব্দ কটা দিন উচ্ছলতা পায় মুখে মুখে
 তার পরে মরে যায়, আমরা তার শব নিয়ে ঘুরি
দুহাতে তাকেই তুমি সাজাও যে রাগে-অনুরাগে–
 ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার জেনেছ কি আগে?

*

মহাপরিনির্বাণ

ভালো তো লাগেই। কিন্তু তবুও সে-লাগার পিঠোপিঠি
ভিতরে কোথাও জমে থাকে কিছু অপ্রস্তুত স্মৃতি।
 গানের ভিতরে জাগাব শরীর, শরীরের বুকে গান
বহুদিন হলো সে-মিলন থেকে মহাপরিনির্বাণ।

ভেবেছি আমার যা-বলার বলি, শোনা সে তোমার খুশি
ভেবেছি যে বলি যেয়ো না ওখানে। সাফল্য-রাক্ষুসি
গিলে খেয়ে নেবে আদ্যোপান্ত। বিশ্বাসে ঝলমল–
তোমাকে কি আর মানায় এসব? ছাড়ো এ সভাস্থল।

ছাড়োনি তবুও। ভুলে গেছ গীতপঞ্চাশিকার রাত
 প্রতিবাদহীন মুক্ত বাজারে বজায় রেখেছ ঠাট।
 চেয়ে তো ছিলাম ছন্ন কপালে জলতিলকের ফোঁটা
তোমার দুচোখে দেখি আজ শুধু প্রত্যুৎপন্নতা।

*

চক্ষুষ্মতী, তার কবিকে

বেঁচেই তো থাকতে চাই, ইচ্ছে তো করে না অন্ধ হতে–
 তবু যদি কোনোদিন হয়ে যাই, তাই এত আগে
এখানে এঁকেছি চোখ, এই দীর্ঘ কৃষ্ণচূড়াবীজে–
 এ চোখ তৃতীয় চোখ, এই চোখ আপনাকে দিলাম।
 আপনাকে দেখলেই বেশ বোঝা যায় বজ্রাহত বাড়ি
 ভিতরে সমস্ত ঘর বেঁকে পুড়ে খাক হয়ে আছে।
 আপনি কি কখনো একটু একা হন না? হতে ভয় করে?
আপনার ঝিনুক হতে ভয় করে? অথবা নুলিয়া?
 চলুন, আপনাকে নিয়ে চলে যাই বঙ্গোপসাগরে
ডুবোপাহাড়ের মতো সেখানে আপনার পাথরেরা
জলের ভিতরে খুব চুপ করে বসে থাকবে একা
শীর্ষও থাকবে না তার, তার থাকবে প্রসারণ শুধু,
 বুকের গহ্বরে শুধু ঢেউ দেবে মাছের রুপোলি
 কিংবা হয়তো কোনোদিন কোনো এক পৌরাণিক তিমি।
 তখন আপনার মধ্যে কত ইতিহাস জমে যাবে
কতই চণ্ডালচিহ্ন নীলিমার গায়ে গায়ে লেগে
ছুঁতেও পারবে না কেউ বহুযুগনিরুদ্ধ ফসিল–
 তখন আমিও যদি কোনোদিন অন্ধ হয়ে যাই
আমার তৃতীয় চোখ আমাকে তো ফিরিয়ে দেবেন?

*

বন্ধুকে বন্ধু

বারে বারে একই কথা শুনতে কিছু ভালো লাগে তোর?
লাগে না যে, জানি সেটা। তবু এত বলে যেতে চাই।
 তোকে দেখলে মনে হয় বিজন প্রান্তরমধ্যে চার্চ
 তার শ্বেত স্তব্ধতায় আমার সমস্ত কনফেশন।
 যেকথা মেঘেরও দিনে আদিতমা নারীকে বলিনি
 যেকথা অনেকদিন ভার হয়ে ছিল এ জীবনে
যেকথা ইড়ায় শুধু সরস্বতী হয়ে বয়ে যায়
ঝর্না করে তাকে আজ ঢেলে দিতে চাই তোর কাছে।
 বলে যেতে চাই আমি কীভাবে ফিরেছি ঠোঁট চেপে
কীভাবে নিজেকে আমি হত্যা করে গেছি প্রতিদিন–
 হৃৎপিণ্ড হাতে নিয়ে কীভাবে লুকোনো কুঠুরিতে
 বলেছি, এখানে থাকো, কোনো শব্দ কোরো না কখনো–
 আর সেই হৃৎপিণ্ড আমার কঙ্কাল ছুঁয়ে থেকে
অর্থহীন আর্তনাদ করে গেছে বর্ষ মাস দিন!
 সেই হত্যা গান গায়, সেই হত্যা অন্ধকারে হাসে
সেই হত্যা ভস্মাধারে গড়ায় সমস্ত ইতিহাসে
বেরোবার সব পথ সেই হত্যা করেছে আটক–
 কেননা নিজের কাছে নিজে আমি বিশ্বাসঘাতক।

*

রক্তের দোষ

বিশ্বের প্রভু কে সে তো সকলেই জানে, আমরা ঋণী
সে-মহাকেন্দ্রের কাছে। তারই থেকে আলো এসে পড়ে
আমাদের মাংসে, হাড়ে; আমাদের শোকে ও সংগমে
 নিজেদের মানে আমরা তাকে ছাড়া বুঝতেও পারিনি।
সে যদি না শুনতে পেত আমাদের চমকপ্রদ বাণী
যদি না বাহবা দিত তাথই বিভঙ্গে তালি দিয়ে
তাহলে কোথায় আমরা কোথায়-বা আমাদের স্বর–
 বিপথেই ঝরে থাকত গলে-যাওয়া মজ্জা সবখানি!
সেই আমরা আছি তাই দেশ তবু বেঁচেবর্তে আছে
মানচিত্রে ভেসে উঠে পেয়ে গেছে তবু কিছু মান।
 আর ওকে দেখো আজও অকাতরে আপন ভাষায়
 গাঁয়ে বসে খুঁটে খায় খুদকুঁড়ো, অথবা বিজনে
 হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকে আলপথে গরমে বা শীতে–
 রক্তে তো ইংরেজি নেই, বাঁচবে কীভাবে পৃথিবীতে!

*

শিল্পী

অর্ধেক রাত্রির মুখে আলো এসে পড়ে
অর্ধেক নিজের কাছে স্তব্ধ হয়ে আছে–
 তুমি আজও দিশেহারা, জানো না এখনও
 তারারা কোথায় মরে কোথায়-বা বাঁচে।

কখনো-বা হেঁটে যাও নিছক বামন
সমস্ত শরীর শুধু শব্দ দিয়ে ঘেরা,
 জাগ্রত বসন্ত পেয়ে শিয়রের পাশে
কখনো-বা অতিকায় নিজেরই প্রেতেরা।

ধ্বনি আর রঙে মিলে নিরঞ্জন শ্বাস
 কিছু উড়ে চলে যায় কিছু পড়ে থাকে–
 নিজেকে কি জানো তুমি? কতটুকু জানো?
তুমি তা-ই, মিডিয়া যা বানায় তোমাকে।

*

অপমান

গান মুহূর্তে ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে
 চারদিকে এত জম্পেশ খেলাধুলো
এরই মাঝখানে বয়ে যেতে হবে বলে
কানে তুলো আর পিঠেও বেঁধেছি কুলো।

তুমি ভেবেছিলে অপমান ছুঁড়ে যাবে
 দুকথা শুনিয়ে সুখ পাবে ভেবেছিলে
চোখের আড়ালে অশ্বত্থের ডালে
ভেবেছ দু-পাখি মরে যাবে এক ঢিলে।

মরেওছে বটে। তবে সে আমার নয়
আমার পাখি তো লুকোনো নৌকোজলে।
অবশ্য জানি যা-কিছু লুকোনো আজ
সবই পেতে চাও ছলেবলেকৌশলে।

‘লজ্জাও নেই নিজের ও-মুখ দেখে?’
 বলে ফোন রেখে দিয়েছ ঝনাৎ করে।
 এ-বিষয়ে আর বেশি কিছু বলব না
 যা বলার শেষ বলেছি একাক্ষরে।

খুবই দেখেশুনে বৈঠা বাইতে হবে
ওত পেতে আছে ঘাটে ঘাটে ঘড়িয়াল–
 কবিতায় যদি গল্প লুকোনো থাকে
 টপ করে তাকে গিলে নেবে সিরিয়াল।

*

ঈশ্বরী

যখন বরফে সব ঢেকে আছে, তুমি একা জেগে
যখন বিকল স্মৃতি, মনেও পড়ে না কে কোথায়
এইখানে টিলা ছিল ওইখানে ছিল বুঝি লেক
আজ সব শ্বেতাভায় কালো শুধু তোমার কালিমা
 যখন শপথ মানে কেবলই শ্বাসের অপঘাত
 যখন জীবন মানে কেশর, নখর, আর দাঁত
যখন নিজেকে শুধু মনে হয় তুষারের হিমে
ঝরে-যাওয়া জমে-যাওয়া নিরুদ্দেশে মরে-যাওয়া পাতা
 যখন ধ্বংসকে আরো ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়
এমনকী মুছে যায় সমস্ত অতীতকাতরতা–
 তখন ও মেয়ে, মেয়ে, তখন কি মনে পড়ে না
এ কেবল স্থানবিন্দু এ কেবল কালবিন্দুটুকু
 মনে কি পড়ে না এই বিন্দু ভেঙে তোমার হৃদয়
 শূন্য আলিঙ্গন করে নিজেই ঈশ্বরী হতে পারে?

*

সবুজ ছড়া

উত্থান- তার শেষ নেই কোনো, শেষ নেই দস্যুতার,
 ভোরের বেলায় শূন্যে উঠেছে পরশুরামের কুঠার।
 ত্রিসীমায় কোনো সঞ্চার কেউ রাখবে না কোনোভাবে
যেখানেই যত সবুজ রক্ত সবটুকু শুষে খাবে
নিঃসাড় করে দিয়ে যাবে সব সেগুন শিমুল শাল
আজ যাকে বলো বনভূমি তাকে জনভূমি বলো কাল।
 নান্দীমুখর দশ দিগন্ত হারিয়ে ফেলেছে খেই
 মনে হয় এই জীবনে কোথাও কোনো প্রতিরোধ নেই
 সেই মুহূর্তে কোথা থেকে এসে দিশাহীন প্রাঙ্গণে
পঁচিশটি মেয়ে পঁচিশটি গাছ বেঁধেছে আলিঙ্গনে।

পঁচিশটি মেয়ে পঁচিশটি শিখা জড়াল আলিঙ্গনে
 পরাদৃশ্যের মাঝখানে ওরা আশ্বাসে দিন গোনে
বাকলে বাকলে জড়িয়ে গিয়েছে পঁচিশ মেয়ের প্রাণ
 শরীরের প্রতি রোমকূপে জাগে বড়ে-গোলামের গান
 সামনে কেবল স্থির থেকে যায় রোদ্দুরে ঝকঝকে
উদ্যতফলা পঁচিশ কুড়াল, দূর থেকে দেখে লোকে।
দূর থেকে দেখে লোকে
ও-মেয়েরা যেন মেয়ে নয় ওরা টুনটুনি বুলবুলি
মেয়ে হয়ে আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে সমস্ত গাছগুলি।

*

শহিদশিখর

আমি এই শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে কথা বলি
 আমি এই শালপ্রাংশু মধ্যরাত্রি থেকে কথা বলি
আমার মায়ের রক্ত হাতে নিয়ে আমি কথা বলি
হোলি খেলেছিল যারা আমার মেয়ের রক্ত নিয়ে
 আগুন জ্বালিয়ে যারা শবের উপরে নেচেছিল
এই শেষ অন্ধকারে তাদের সবার কথা বলি
আর যারা চুপ ছিল যারা কিছু দেখেও দেখেনি
একাকার মনে যারা অনায়াসে ছিল অন্যমনে
 দলের ভিতরে যারা দলবৃত্তে অন্ধ হয়ে ছিল
অথবা মৃতই ছিল- সেইসব প্রাক্তন হৃদয়ে
একমুঠো ছাই ছুঁড়ে পিছনে না চেয়ে ফিরে এসে
নক্ষত্রের ক্ষত বুকে রক্ষাবাহিনীর ব্যূহমুখে
এই শতাব্দীর শেষ ভূমিহারদের কথা বলি
বলি যে জাতক বীজে মাটির কেশর মেখে মেখে
 এক মরণের থেকে আরেক মরণে যেতে যেতে
 আমার আমির থেকে জেগে ওঠে আরো আরো আমি
 আমিই শতাব্দী আমি আদিঅন্তহারা মহাদেশ
আমি এই শতাব্দীর শহিদশিখর থেকে বলি
মৃত্যুর ভিতরে আজ কোথাও মৃত্যুর নেই লেশ
দেখো এ মৃত্যুর মধ্যে কোথাও মৃত্যুর নেই লেশ।