ছন্দিতা
১। ‘স্বাগতা’ – ১৬ মাত্রা (তা – না তা – নাবাবা – তা – নানা – তা – তা -) স্বাগতা কনক-চম্পক-বর্ণা ছন্দিতা চপল নৃত্যের ঝরনা। মঞ্জুলা বিধুর যৌবন-কুঞ্জে যেন ও চরণ-নূপুর গুঞ্জে, মন্দিরা মুরলি-শোভিত হাতে এসো গো বিরহ-নীরস-রাতে হে প্রিয়া কবির প্রাণ অপর্ণা॥ ২। ‘প্রিয়া’ – ৭ মাত্রা (নাবা তা – না তা -) ‘মহুয়া’-বনে বন-পাপিয়া এখনও ঝুরে নিশি জাগিয়া। ফিরিয়া কবে প্রিয় আসিবে ধরিয়া বুকে কহিবে প্রিয়া॥ শুনি, নীরবে গগনে বসি কহ যে-কথা বিরহী শশী, তব রোদনে বঁধু এ মনে যমুনা বহে কূল-প্লাবিয়া॥ ৩। ‘মধুমতী’ - ৮ মাত্রা (নাবাবাবা নানা তা – দু-বার) বনকুসুম-তনু তুমি কি মধুমতী। ঢলঢল নয়নে রস-ঘন মিনতি। রুমুঝুমু ঘুমুরে ঘুমুঘুমু বিবশা, নিথর বসুমতী, নিশিমদ-অলসা, মুরছিত চরণে শত মদন রতি॥ রস-ছলছল গো তব মধু-কলসে ঝরঝর ঝরনা অনুখন বরষে, – অরুণিত-নয়না মধুর রসবতী॥ ৪। ‘মত্তময়ূর’ – ২২ মাত্রা মত্তময়ুরছন্দে নাচে কৃষ্ণ প্রেমানন্দে। রুম ঝুম ঝুম মঞ্জীর বাজে কঙ্কণ মণিবন্ধে॥ রিমঝিম রিমঝিম ঝিম কেকা-বর্ণ ঘন বরষে, তৃষ্ণা-তৃপ্ত আত্মা নাচে নন্দনলোকে হরষে, ঝঞ্ঝার ঝাঁঝরতাল বাজে শূন্যে মেঘ-মন্দ্রে॥ পল্লব-ঘন-চক্ষে ঝরে অশ্রু-রসধারা পুব-হাওয়াতে বংশী ডাকে আয় রে পথহারা। বন্দে দামিনী-বর্ণা রাধা বৃন্দাবন-চন্দে॥ ৫। ‘রুচিরা’ – ১৮ মাত্রা ভ্রমর নূপুর-পরিহিতা কৃষ্ণ-কুন্তলা। বলয়-কাঁকন-ঝনকিতা ছন্দ-চঞ্চলা॥ মলয়-সমীর ঝিরিঝিরি অঙ্গে গুঞ্জরে। কদম কেশর ঝুরুঝুরু চম্পা মুঞ্জরে। চটুলনয়ন চমকিতা জ্যোৎস্না-অঞ্চলা॥ বিধুর কোকিল-কুহরিত আম্রকুঞ্জে গো, রূপের পরাগ ঝরে তব পুঞ্জে পুঞ্জে গো। নিখিল-ভুবন তব রাস নৃত্য হিন্দোলা॥ ৬। ‘দীপক-মালা’ – ১৬ মাত্রা (তা – নানা – তা – তা, তা না তা নাতা) দীপক-মালা গাঁথো গাঁথো গাঁথো সই। আনত আঁখি তোলো তোলো গো! বেদন-জ্বালা ভোলো ভোলো গো! মান-ভুলানো এল রাত সই॥ কাজল আঁকো নীল আঁখিতে, চেয়ো না লাজে আঁখি ঢাকিতে, আসন প্রাণে পাতো পাতো সই॥ ৭। ‘মন্দাকিনী’ – ১৬ মাত্রা (নানা নানা নানা তা না তা তা নাতা) জল-ছলছল এসো মন্দাকিনী। রস-ঢলঢল বারি-সঞ্চারিণী॥ হৃদয়-গগন আজি তৃষ্ণাভরে উতল হইল প্রেম-গঙ্গা তরে, মুদিত নয়ন খোলো বৈরাগিনী॥ বিরস ভুবন রাখো সঞ্জীবিতা, সজল সলিল আনো হিল্লোলিতা, ঝর ঝর স্রোত-উন্মাদিনী॥ ৮। ‘মঞ্জুভাষিণী’ – ১৮ মাত্রা (নানা তা – নাতা নানানা তানা তানাতা) আজও ফাল্গুনে বকুল কিংশুকের বনে, কহে কোন কথা নিশীথ স্বপনে আনমনে॥ মৃদুমর্মরে পথের পল্লবের সাথে গাহের কোন গীতি নিশীথে পানসে জ্যোৎস্নাতে, খোঁজে কার স্মৃতি নীরস শুভ্র চন্দনে॥ গ্রহচন্দ্রে কয় – সে কি গো মৃত্যু-দ্বার খুলে হয়ে সৃষ্টিপার গিয়াছে অমৃতের কূলে, কাঁদে কোন শোকে পরম সুন্দরের সনে॥ ৯। ‘মণিমালা’ – ২০ মাত্রা মঞ্জু মধু-ছন্দা নিত্যা, তব সঙ্গী সিন্ধুর তরঙ্গ নৃত্যের কুরঙ্গী॥ গুঞ্জা বেলা পদ্ম পুঞ্জীভূত বক্ষে, অশ্রু-লাজ কুন্ঠা শঙ্কা-ঘন চক্ষে, অঙ্গে শ্যামকান্তা মন্দাকিনী-ভঙ্গি॥ অঙ্গুলিতে বন্দী অঙ্কুরিত ছন্দ, কণ্ঠে সুর-লক্ষ্মী বৃন্দাবনানন্দ, গঙ্গা এলে বক্ষে সন্ধ্যারাগে রঙ্গি॥ ১০। ‘ছন্দবৃষ্টিপ্রপাত’ – ৪৮ মাত্রা তারকা-নূপুরে নীল নভে ছন্দ শোন ছন্দিতার সৃষ্টিময় বৃষ্টি হয় নৃত্য সেই নন্দিতা সাগরে নদীতে ঢেউ তোলে সেই দেবীর মুক্তকেশ, সংগীতের হিন্দোলে তাঁর আঁখির প্রেম আবেশ, পবনে পবনে হিল্লোলে নীল আঁচল চঞ্চলার ছন্দোময় আনন্দময় চরণশ্রী বন্দি তাঁর॥ ১১। সৌরাষ্ট্র ভৈরব – তেতালা (বাদী মধ্যম) মদালস ময়ুর-বীণা কার বাজে অরুণ-বিভাসিত অম্বর-মাঝে॥ কোন মহা-মৌনীর ধ্যান হল ভঙ্গ? নেচে ফেরে অশান্ত মায়া-কুরঙ্গ তপোবনে রঙ্গে অনঙ্গ বিরাজে॥ নিদ্রিত রুদ্রের ললাট-বহ্নি পাশে তার হেসে ফেরে বনবালা-তন্বী। বিজড়িত জটাজুটে খেলে শিশু শশী দেয় মালা চন্দন ভীরু উর্বশী শংকর সাজিল রে নটরাজ সাজে॥