চ্যালেঞ্জ – সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

চ্যালেঞ্জ – সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ সকালেও একই ব্যাপার হল। ঠিক ঘরের মাঝখানে বলটা। অথচ আমার ভালোই মনে আছে রাতে ওটাকে টেবিলের নীচে এককোণে সরিয়ে রেখেছিলাম। সপ্তাহ দুয়েক হল ম্যানেজারের পোস্টে এই অফিসে জয়েন করেছি। উঠেছি এই বিশাল বাড়িতে। এতবড়ো কোয়ার্টারে আগে কখনো থাকিনি। হয়ত তাই, রাতে ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না। ছেলে বুবাই-এর এবারেই ক্লাস টেন হল। ফলে স্ত্রী বা ছেলে কেউই সঙ্গে আসেনি। একা থাকতে হবে জেনেই আসা। তবু এই থাকাটা ভালোভাবে মানাতে পারছি না। কোথায় যেন একটা অস্বস্তি জ্বালিয়ে মারছে।

চা বাগান ভেদ করে অফিসের জিপটা যখন ওপরে উঠছিল, অদ্ভুত ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। একপাশে চা পাতার বাগান, পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি বানিয়েছে। অন্যদিকে নেমে যাওয়া খাদের ধারে ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল গাছ। তাদের দীর্ঘশাখা প্রশাখায় আকাশ ছোঁবার এক নিরলস আকাঙক্ষা। টের পাই চা পাতার বুনো গন্ধ আমাকে আস্তে আস্তে ঘিরে ফেলছে। কার্শিয়াং-এ গাড়ি দাঁড় করিয়ে মোমো খাওয়া হল। সঙ্গে এই অঞ্চলের বিখ্যাত সুগন্ধী চা। বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু গাড়ি চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ বাদেই ভুতুড়ে সাদা কুয়াশা যখন সমস্ত রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করল, খুবই হতাশ হলাম। ঘড়িতে তখন সবে পাঁচটা, অথচ চারপাশে অসময়ের সন্ধ্যা। কিংবা বলা যায়, দিনের কোন সময়ে আছি কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মনখারাপটা তখনই দরজা খুলে বুকের একদম কোনে সেঁধোয়। আর এখনও যায়নি।

আপাতত মাথার মধ্যে একটা কথাই ঘুরছে, বলটা ঘরের মধ্যে এল কীভাবে? আবার কাছে গিয়ে একশ্যুট মারলাম ওটাকে। দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফের আগের জায়গায় ফিরে এল। অবাক কাণ্ড! ওখানে কি অদৃশ্য চক দিয়ে কোনো পয়েন্ট করা আছে যে বলটা বারবার ওখানেই ফিরে আসে।

বলটার বেয়াড়া আচরণ অগ্রাহ্য করে পেছন ফিরলাম আমি। না, এক্ষুনি চ্যালেঞ্জটা নেওয়া যাচ্ছে না। অফিস যেতে হবে। তার বাঁধাধরা প্রস্তুতি আছে। বলটা ইয়ার্কি মারলেও আমার তাতে যোগ দেওয়ার সময় কই?

এখানে বদলির অর্ডারটা পেয়ে কলকাতা থেকে ফোন করেছিলাম। এই অফিসের তৎকালীন ম্যানেজার মি. সান্যাল সেসময় খুবই আশ্বস্ত করেন।

আরে বোসসাহেব, এত ভাবছেন কেন? একটা সুটকেসে ঘানকতক জামাকাপড় ভরে স্রেফ চলে আসুন। ওয়েল ফার্নিসড কোয়ার্টার। একজন আধুনিক মানুষের যা যা লাগে সব আছে। আর হ্যাঁ, তাস খেলার নেশা আছে? তাহলে একসেট নিয়ে আসতে পারেন। আমি মশাই ফাঁকা কোয়ার্টারে একা একাই পেসেন্স খেলে কাটাই। এইরকম পাহাড়ি জায়গায়, নিরিবিলিতে, তাসটা জমে ভালো। হাঃ হাঃ হাঃ।

ওনার হাসির আওয়াজ আমার কানে ঠিক ভালো ঠেকেনি। কলকাতার ফ্ল্যাটে বউ-বাচ্চা রেখে বিদেশ যাত্রা এর আগে করিনি তা নয়, তবে প্লেন ল্যান্ড আর হিলের মধ্যে তফাৎ আছে বৈকি। নাঃ ওনার কথামতো তাস নিয়ে আসিনি। বই পড়তে ভালোবাসি। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের তিনটি খণ্ড, বিভূতিভূষণ আর শরদিন্দুর রচনাবলির বেশ কয়েকটা, সুটকেসে ভরে নিয়ে এসেছি। এছাড়া ইংরেজি কিছু পুরোনো নভেল তো এখানেই খুঁজে পেলাম। সময় খারাপ কাটছিল না। কোথা থেকে যে এক উটকো অশান্তি শুরু হল।

প্রথম যেদিন কোয়ার্টারে এসে ঢুকি তখন সন্ধে সাতটা। সমস্ত এলাকায় লোডসেডিং। ইনভার্টারের কল্যাণে আমার বাসস্থানে শুধু দু-একটি বিজলি বাতি টিমটিম করে জ্বলছে। গার্ড দরজা খুলতে লাল কার্পেট মোড়া দীর্ঘ কড়িডর দেখে একেবারে হাঁ হয়ে গেলাম! এত বিশাল ব্যাপার স্যাপার! আমার মতো নশো স্কোয়ারফিটের খুপরি বাড়ির বাসিন্দার এখানে পোষালে হয়! করিডরে নেভা আলোগুলো নিঃশব্দে ঢুলছে। তার ছায়া পড়েছে পাশের দেয়ালে। বেডরুমে ঢুকেও বুকটা ঢিপঢিপ করে উঠল। যেন রাজার ঘর! ঘরের চারপাশের প্রান্তে ঠেসানো সেগুন কাঠের দেরাজ, খোলা বুকসেলফ, পুরোনো আমলের বিশাল বিশাল আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল। অন্যপাশে ফায়ারপ্লেসের ঘোলাটে গর্ত। একমাত্র খাট আর আলনাটাকে মোটামুটি চেনা যাচ্ছে। সেগুন কাঠের হলেও আমাদের বাড়ির ফার্নিচারগুলোর সঙ্গে একটু-আধটু মিল আছে। কার্শিয়াং পেরোতেই রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সুটকেস থেকে সোয়েটার বার করেছি। বাগড়োাগরা এয়ারপোর্টে নেপালি ড্রাইভার বলেছিল বাবুজি, আপকা সোয়েটার কাঁহা?

ওসব লাগবে না আমার।

সেসময় ওই কথা শুনে বোধহয় মনে মনে হেসেছিল ছেলেটা। যেমন হেসেছিলাম আমি ওর গায়ে চামড়ার জ্যাকেট দেখে। নাঃ এখানের ঠান্ডাটা বেশ ভালোই। হয়ত সেজন্যই চাপা অস্বস্তিতে ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না। কাল রাতে ঘুমের ঘোরেই শুনেছিলাম, পাশের ঘরের কাঠের মেঝেতে বল গড়াচ্ছে। ঠিক যেন শ্যুট মেরে মেরে খেলছে কেউ। যদিও সকালে ঘুম ভাঙতে, রাতের সবকিছুকেই দুঃস্বপ্ন বলে সহজেই উড়িয়ে দিয়েছি।

বলটা আছে ওই ঘরেই। ওটা বসার ঘর। সোফা-কোচেও চোদ্দ-পনেরো জনের বসার আয়োজন। অন্দর সজ্জাতেও অ্যান্টিকের ছড়াছড়ি। এখানে ছেলের কথা বারবার মনে হচ্ছে। ও ছবি আঁকতে ভালোবাসে। চারিদিকে বিষয়ের তো অভাব নেই। বসে বসে আঁকতেই পারত। বাইরের ঘরেও একটা হাতে আঁকা ছবি নজরে এল। মনে হয় ঘরের জানলার একপাশের ধুলো সরিয়ে ঝাঁট দিতে দিতে, ঝাড়ুদার ময়লা ঝেড়ে আবার যত্ন করে রেখে দিয়ে গেছে রোল করা কাগজটা। খুলে দেখি অপটু হাতের স্কেচ। পেন্সিলে পাহাড়তলির রাস্তা, চা বাগান, ঘরবাড়ি, কাগজের বুকে ফুটিয়ে তুলেছে কেউ। দেখে মনে হচ্ছে ছোটো বাচ্চার আঁকা। এখানে থাকত হয়ত।

কিসকো হ্যায় ইয়ে? ওটা দেখিয়ে ঝাড়ুদারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি।

মালুম নেহি।

তর ফেঁক দো…।

একদম কথা শোনেনা লোকটা। ওঘরের পর্দা সরিয়ে দেখি আজও কাগজটা তেমনি পড়ে আছে। বিরক্ত হই। আচ্ছা ঠ্যাঁটা তো! কবে থেকে বলছি, তবু বলটা ও ফেলছে না। ওঘরে ঢুকলেই ওটা ড্যাব ড্যার করে আমার দিকে তাকিয়ে মিচকি-মিচকি হাসে। আমি যেই শ্যুট মারি দেয়াল ছুঁয়ে আবার জায়গায় ফিরে আসে। বুঝে যাই ঝাড়ুদারটার মতো বলটাও বেজায় অবাধ্য। নিজের মতে চলে।

দুদিন হল আবার একটা নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে। সাদা ধবধবে লোমে ঢাকা এক কুকুরছাড়া যখন তখন ঘরে ঢুকে ঘোরাঘুরি করছে। প্রথমদিন ওকে বেশ পছন্দ হয়েছিল। রবিবার, তাই অফিস বন্ধ। বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছিলাম। রান্নার দিদি জিনিস কিনতে বাজারে। বোধহয় ঠিকমতো লাগেনি বাইরের দরজা। শরদিন্দুর ব্যোমকেশ বক্সী আমার হাতে। চারপাশে জগৎসংসার প্রায় বিলুপ্ত! তখনই আওয়াজটা পেলাম। মৃদু খসখসে আওয়াজ, তবে বোঝা যায় স্পষ্ট।

হঠাৎ বসার ঘরে বল গড়ানোর শব্দ শুরু হতে গিয়ে দেখি বল ছাড়াও একটা লোম ঝুলঝুল মিষ্টি বাচ্চা কুকুর এসে দাঁড়িয়েছে ওঘরের লাল কার্পেটে। আমি যেতে ভালো করে একবার আপাদমস্তক দেখল আমায়। তারপর দরজার নীচে ভাঙা কাঠের ফাঁক গলে সুরুত করে চলে গেল বাইরে। বুঝলাম ওর এভাবে যাওয়া আসার পুরোনো অভ্যেস আছে।

ওই ঘরের আর একটা দরজা বাড়ির পেছনের দিকে। খুলে দেখি পেছনের ঢালু জমি বেয়ে ওটা তরতরিয়ে নীচে নামছে। এককালে কুকুর ভালোবাসতাম, তাই সাধ হয়েছিল ভাব করার। হল না।

ফিরে আসতেই চোখে পড়ল, বাজার থেকে ফিরে রান্নার দিদি করিডরের কার্পেটটা ভিজে কাপড় দিয়ে মুছছে। তার মানে ও এদিক দিয়েই এসেছিল। আমি টের পাইনি।

সারাদিন এখানে কুয়াশা আছেই। ছুটির দিনেও ঘরবন্দি থাকতে হয়। দুপুরবেলা চারপাশ মেঘলা করে ঝুপঝাপ বৃষ্টি নামে। বড়ো মনখারাপ হয়। এতবড়ো কোয়ার্টারে কিই বা করি, বিছানায় বইহাতে গড়াতে গড়াতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি। আধোঘুমে বল গড়ানোর শব্দটা যেন মিহি উৎপাতের মতো কানের পর্দায় ধাক্কা মারে। কুঁড়েমির জন্য উঠি না। তা ছাড়া মনে মনে বুঝে নিয়েছি ওই ঝুলঝুলে ডগ-ই এসেছে আবার। বিকেলে ওঘরের আলো জ্বালতেই নজরে এল ঘরের এককোণে, কুণ্ডুলি পাকিয়ে, চুপ করে শুয়ে আছে। টানা বৃষ্টিতে বেচারি ফিরতে পারেনি হয়ত। মায়া হয়। আর বিরক্ত করি না।

প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতেও লম্বা বারান্দা পেরিয়ে খেতে যাই ডাইনিং হলে। আলো জ্বললেও রাতে এদিকটা বড়ো নিঃশব্দ হয়ে থাকে। কেমন ছমছমে ভাব! দরজা খুলতেই চমকাই। এখানেও লাল কার্পেটে ছোটো ছোটো পায়ের ময়লাটে ছোপ। বেশি পুরোনো নয়। কিন্তু কুকুরটা এ ঘরে এল কীভাবে? দরজা তো বন্ধই থাকে। কিংবা হয়তো রান্নার দিদির ভুলে ঘটেছে ঘটনাটা। লম্বা টেবিলের একপাশে খেতে বসে যাই। একা একা খেতে খেতে চারপাশের সারি দেওয়া চেয়ারগুলোর দিকে তাকলেই মনে হয় পথ ভুলে কোনো এক বিচিত্র জগতে আটকা পড়েছি। আজ মনে হল কুকুরটার জন্য একবাটি দুধ মাখা ভাত নিয়ে গেলে হয়। পরমুহূর্তেই ভাবি, খাবে কিনা কে জানে, ও তো আমাকে পাত্তাই দেয়নি।

সেদিনও ভালো ঘুম হয় না। ঘুমের মধ্যে সেই চেনা আওয়াজটা ফিরে ফিরে আসে। বল গড়াচ্ছে। গড়াতে গড়াতে গড়গড় গড়গড় আওয়াজ তুলছে। তার মানে কুকুরটা রাতেও ফিরতে পারেনি।

সকালে অফিসে গিয়ে কাজের তাড়ায় কিছুই মনে ছিল না। বিজি ব্রাঞ্চ। থৈ থৈ করছে কাস্টমার। সবাই ব্যস্ত। মাঝে মাঝেই সেন্ট্রাল অফিসের ফোন আসছে। এ ছাড়াও অফিসের অন্য কাজকর্ম দেখাশোনার ব্যাপার আছে। নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই। এরই মাঝে মোবাইলটা বেজে উঠল হঠাৎ। ছেলের কল। বাবা, কেমন আছ তুমি? আমাদের ওখানে নিয়ে যাবে? কতদিন পাহাড় দেখি না।

এই তো দেখি, পুজোর ছুটিতেই না হয়…।

তোমার একা একা খুব খারাপ লাগছে না?

তেমন কিছু না। কিন্তু তোর ব্যাপার কি? স্কুল যাসনি কেন? একটু জ্বরজ্বর লাগছে। তুমি আবার দুশ্চিন্তা করতে আরম্ভ করো না।

ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেখি আমার চেম্বারের এককোণে ঝাড়ুদার হাতজোর করে দাঁড়িয়ে। ভীতু চোখে তাকিয়ে বলে। নমস্তে সাব। মেরা পেমেন্ট আভিতক নেহি মিলা। থোড়া সে …। ক্যাজুয়াল লেবার। এখনও টাকা পায়নি। ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলি, নবীন…।

সাব,…।

তুমকো বোলা হ্যায় না ও বল ফেঁক দেও…।

হাঁ।

তব?

জরুর ফেঁক দেগা। বাকি সার…।

ঠিক হ্যায়। আভি যাও।

মনে মনে ভাবি কথা না শুনলে ওর বিল আটকে রাখব। সন্ধেবেলা বসার ঘরে ঢুকে বলটাকে দেখতে পাই না। দুপুর আড়াইটে নাগাদ অফিসের কাজ সেরে ও আমার কোয়ার্টারে ঝাড়ু দিতে যায়। বলটা ফেলেই দিয়েছে বোধ হয়।

রাতে লোডশেডিং। ইনভার্টারেও গোলমাল। তবু অদ্ভুতভাবে একটানা ঘুমিয়ে থাকি। ঘুম ভাঙে ভোরের দিকে, একটা চেনা শব্দে। যেন বলটা গড়াচ্ছে পাশের ঘরে। কাঠের মেঝেতে আওয়াজ বাড়তেই থাকে। তখনও আবছা অন্ধকার। দিনের আলো ফোটেনি। আমি কাঠ হয়ে বিছানায় শুয়ে। বিছানা ছেড়ে উঠি না।

সকালে বল আর কুকুরের খোঁজে ঘরটার আনাচকানাচ দেখি। না কোথাও কিচ্ছু নেই। থম মারা শূন্যতায় গায়ে কাঁটা দেয়। ভাঙা শার্সি দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে একটু দূরে, পাহাড়ের ঢালু গা বেয়ে লাফাতে লাফাতে নামছে কুকুরটা। ওর পাশে পাশে হাঁটছে লাল সোয়েটার পরা একটা বাচ্চা ছেলে। এদিকে তো কোনো ঘরবাড়ি নেই। ছেলেটা কোথা থেকে এল? ভাবতে ভাবতেই সে সোজা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আমার দিকে। ওর রাগত দৃষ্টির ঝাপটা দূর থেকেও আমাকে ছুঁয়ে যায়। হয়তো একটু বেসামালই হয়েছিলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি ঘোর কুয়াশা। আর নীচু অবধি বিস্তৃত ঢালু জমিটা হঠাৎই ফাঁকা! ছেলে বা কুকুরের চিহ্ন নেই।

পেছন ফিরতেই চমকে যাই। লাল কার্পেটের ওপর উদ্ধত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে বলটা। মনে মনে ওটার ‘যুদ্ধং দেহি’ ভাব টের পেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসি। মনে হয় অজানা কেউ যেন এখুনি তাড়া করবে। দরজার বাইরের ক্ল্যাচ আটকে টেনে দেখে নিই। তালা এনে লাগিয়ে দিতে হবে।

সকাল থেকে নিজের সঙ্গে নিজের স্নায়ুযুদ্ধ সামলে কোনোরকমে অফিসে যাই। আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতো কাজে মন দিতে চেষ্টা করি।

হঠাৎ কি মনে হতে ঝাড়ুদারকে ডেকে পাঠাই। এসে দাঁড়ায় লোকটা।

তুমহারা পেমেন্ট কেয়া মিল গিয়া?

হাঁ সাব।

ঔর ও বল?

কিঁউ? ও তো কব বাহার ফেঁক দিয়া।

ঠিক হ্যায়। যাও।

আর কিছু ভাবতে পারি না। সব গোলমাল হয়ে যায়। ওর কথা সত্যি হলে ঘরে বলটা এল কী করে? কাকেই বা বলব কথাটা। তা ছাড়া এরকম একটা উদ্ভট সন্দেহের কথা কাউকে বলা যায় কি?

তখনই ফোন আসে। কলকাতা থেকে। স্ত্রীর ফোন।

জানো, বুবাই-এর জ্বর একদম সেরে গিয়েছিল। আবার ভোররাত থেকে তেড়েফুঁড়ে এসেছে।

আমি ভাবতে কোনো সময় নিই না। ওকে বলি, ডঃ সেনকে কল দাও, জ্বর বাড়লে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হবে। অফিসের কাজ সামলে আজকের ফ্লাইটেই যাচ্ছি। ঘাবড়িও না।

ফোন রাখতে রাখতে বলটার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিটা মনে পড়ছিল। ও কি আমায় চ্যালেঞ্জ করছে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *