চ্যাপ্টার ৪ : লেট’স কম্পেয়ার আন্সার’স
মিয়াগিকে বললাম, “একটা কল করবো, এই যাবো আর আসবো,” তারপর ইচ্ছে করেই অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গেলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফোনে কথা বলার সময় ও যাতে না শোনে। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না মিয়াগি পিছে পিছে ঠিকই চলে এসেছে। বেশ অনেকদিন হয়ে গিয়েছে আমি কাউকে ফোন করেছি। ফোনের স্ক্রিনের “ওকান্ডা” নাম্বারটা দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের ঝোপ থেকে গ্রীষ্মকালীন পোকামাকড়ের উচ্চস্বরের আওয়াজ আসছিল।
আমি ফোনে অতিমাত্রায় নার্ভাস হয়ে যাই। আসলে, একদম ছোটবেলা থেকেই এরকম ছিলাম। আমি কখনই কাউকেই নিমন্ত্রণ করিনি। অথবা হঠাৎ করেই কারো সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করিনি।
এটা সত্যি, এই কারণে আমি অনেক সুযোগ হারিয়েছি। কিন্তু এটা আমাকে সমপরিমাণ দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেছে। এ-ব্যাপারে অনুতপ্ত কিংবা সন্তুষ্ট নই আমি।
চিন্তার ট্রেন থামিয়ে দিয়ে, চিন্তাহীন কয়েকটি মুহূর্তকে কল বাটনে প্রেস করার কাজে ব্যবহার করলাম। আমাকে শুধু একটা কল করতে হবে। সত্যিকারের কথোপকথন যা হবার তা হবে
ডায়ালটোন আমার স্নায়ুর উপর চাপ ফেলল। একবার, দু’বার, তিনবার। সেই মুহূর্তে, ‘ও ফোনটা নাও ধরতে পারে’ সম্ভাবনাটা আমার মনে উদয় হলো। অনেকদিন হলো আমি কাউকে ফোন করিনি। আমার জানা মতে মানুষজন সবসময়ই ফোনের উত্তর দেয়।
চার, পাঁচ, ছয়। মনে হচ্ছে না ও “অতি শীঘ্রই” ফোনটা ধরবে। আমার মনের একাংশ নির্ভার হয়ে গেল। অষ্টমবারের সময়, আমি হাল ছেড়ে দিয়ে এন্ড বাটনে ক্লিক করলাম।
ওকান্ডা হচ্ছে কলেজের পরিচিত একটা মেয়ে। আমার চেয়ে বয়সে ছোট। আমি ওকে ডিনার করাবো কিংবা এরকম কিছু একটার পরিকল্পনা করেছি। এবং যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, বাকি যে কয়দিন বাকি আছে সে কয়টা দিন ওর সাথে কাটাতে চাই।
সেই মুহূর্তে, হঠাৎ নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে লাগলাম আমি। প্ৰথম পরিবর্তনটা বুঝতে পেরেছিলাম যখন আমার জীবনের শেষটা নিশ্চিত হয়ে গেলে। সেই মুহূর্তে অন্য কারো সাথে থাকার অদম্য আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল। অন্ততপক্ষে কারো সাথে কথা বলার প্রচণ্ড তাড়না জেগে উঠল।
ওকান্ডা হচ্ছে একমাত্র মানুষ যে কিনা কলেজে আমার প্রতি কিছুটা হলেও অনুরাগ দেখিয়েছে। ওর সাথে আমার এই বসন্তে বইয়ের দোকানে দেখা হয়েছিল। ও তখন সবে স্কুলে উঠেছে।
ওকান্ডাকে পুরাতন ধুলোবালিযুক্ত বই একাগ্রভাবে নাড়াচাড়া করতে দেখে, “এই যে ভদ্রমহিলা, সরে দাঁড়ান” ধরনের দৃষ্টি দিয়েছিলাম। কিন্তু সচরাচর যে ধরনের ভুল হলে মানুষজন অন্য একজনের জীবনে প্রবেশ করে সেরকম কিছুর মতো হয়ে গেল। ও ভেবেছে “এমন কঠোর দৃষ্টির কোনো ছেলেকে তো আমার মনে পড়ছে না, হয়তো বা আমাদের আগে কোথাও দেখা হয়েছিল?”
“এই যে… এক্সিউজ মি…আমাদের কি আগে কোথাও দেখা হয়েছিল?” ওকান্ডা ত্রস্তভাবে জিজ্ঞেস করল।
“না” আমি উত্তর দিলাম। “আজকের আগে কখনো দেখিনি আপনাকে।”
“ওহ, আচ্ছা আচ্ছা…আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত” ভুল বুঝতে পেরে ওকান্ডা বলল। অপ্রস্তুত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে। কিন্তু তারপরেই ও হেসে ফেলল, দ্বিতীয় আরেকবার চেষ্টা করে দেখবে বলে হয়তো।
“তো, তাহলে আমাদের এই বইয়ের দোকানেই দেখা হয়েছে?”
এবার আমার বিরক্ত হওয়ার পালা। “আপনি ঠিকই বলেছেন।
“আমি জানি আমি ঠিকই বলছি। ব্যাপারটা দারুণ” একটা পুরাতন বই সেলফে রাখতে রাখতে বলল ওকান্ডা।
কিছুদিন পরে, আমরা কলেজে পুনরায় মিলিত হলাম। এরপর থেকে, আমরা একত্রে বেশ কয়েকবার লাঞ্চ করেছি, বই এবং মিউজিক নিয়ে অনেক বিশাল-বিশাল আলাপ-আলোচনা করেছি। এবং আমাদের সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে।
“আমার প্রজন্মে আমার চেয়ে বেশি বই পড়েছে এমন কারো সাথে আমার এর আগে দেখা হয়নি।” ওকান্ডা বলল জ্বলজ্বলে চোখে।
“আমি শুধুই পড়ি। এর থেকে কিছুই অর্জনের চেষ্টা করি না” আমি উত্তর দিলাম। “বইয়ের প্রকৃত মূল্য বের করে আনার ক্ষেত্রে আমার কোনো যোগ্যতা নেই। আমি শুধু পাত্র থেকে ছোট প্লেটে সুপ ঢালছি। ওটা যদি আবার প্লেট ছাপিয়ে উপচে পড়ে, তবে এটা কোনো পুষ্টি যোগাবে না।”
“তুমি কী বলছ এসব?” ওকান্ডা মাথাটা একটু হেলিয়ে বলল। “এমনকি যদি এটা পুষ্টিকর হিসাবে নাও দেখা যায়। আর তুমি যদি সাথে সাথে ভুলেও যাও, আমি মনে করি তুমি যা পড়েছ তা তোমার মস্তিষ্কে থেকে যাবে। আর সময়মতো ওগুলোকে কাজে লাগাবে। এমনকি যদি তুমি নাও লক্ষ্য করো তবুও।”
“আসলে, হয়তো এটা সত্যি। আমার শুধু মনে হয়েছে…আমার মনে হয় না যৌবন থাকা অবস্থায় বইয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়া খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত ব্যাপার। বই পড়া হচ্ছে তাদের জন্য; যাদের এছাড়া আর কিছু করার নেই।”
“তোমারও কি আর কিছুই করার নেই না-কি, কুসুনোকি?”
“পার্ট-টাইম জব ছাড়া, সত্যিই কিছু করার নেই” আমি উত্তর দিলাম।
ওকান্ডা কিছুতেই হাসি আটকাতে পারল না। আমার কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বলল, “তাহলে, তোমাকে কিছু কাজ দিতে হয়।” এরপর ও আমার সেলফোনটা তুলে নিয়ে ওর নাম্বার সেইভ করে দিলো।
যদি সেই মুহূর্তে আমি জানতাম হিমেনো ইতোমধ্যে প্রেগন্যান্ট হয়েছে, বিয়ে করেছে, বাচ্চা জন্ম দিয়েছে, ডিভোর্স হয়েছে, এবং ততদিনে আমাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলেও গিয়েছে। আমি ওকান্ডার সাথে আরেকটু রোম্যান্টিক হতাম।
কিন্তু আমি আমার কৈশোরে হিমেনোকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষায় দৃঢ়সংকল্প ছিলাম এবং একা থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইলাম। তাই আমি কখনই ওকান্ডাকে ফোন করিনি। যদিও দুই একটা মেসেজ আর কল পেয়েছিলাম। সেগুলোও খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে গেল। আমি তখন ভেবেছিলাম, আমি ওকে মিথ্যা আশা দিতে পারি না।
সত্যি বলতে, আমি এমন একজন মানুষ ছিলাম যে কিনা নিজেই নিজেকে বাঁচানো কঠিন করে তুলেছিলাম।
*******
অ্যান্সারিং মেশিনে মেসেজ রেখে দেওয়া আমার ধাতের না। তার বদলে আমি ওকে ফোন করেছিলাম এই কথা লিখে, টেক্সট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
“দ্রুত সবকিছু ঘটছে বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু তুমি কি আগামীকাল কোথাও যেতে চাও?” এটা খুবই স্পষ্ট, কিন্তু আমার প্রতি ওকান্ডার অনুভূতি যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রেখে টেক্সটটা পাঠিয়ে দিলাম।
উত্তরটা সাথে-সাথেই এলো। আমি নিঃসন্দেহে স্বস্তি অনুভব করেছিলাম। এখনো কেউ একজন আছে যে আমাকে গুরুত্ব দেয়।
আমি নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে তখনই উত্তর দিতে গেলাম। আর তখনই আমার ভুল বুঝতে পারলাম।
টেক্সটটা ওকান্ডার থেকে আসেনি। সেটা হলেও কোনো সমস্যা ছিল না। স্ক্রিনের ইংলিশ আমাকে বলছে এরকম কোনো প্রাপকের অস্তিত্ব নেই।
বাস্তবতা আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো। ওকান্ডা ওর ঠিকানা পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আমাকে এই ব্যাপারে জানায়নি। এর মানে হচ্ছে ও আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি।
ও দুর্ঘটনাবসত কাজটা করে ফেলেছে, এই একটা সম্ভাবনা অবশ্যই থেকে যায়। আমাকে হয়তো বা ওর নতুন ঠিকানাটা খুব দ্রুতই জানিয়ে দিবে।
কিন্তু আমার সহজাত প্রবৃত্তি বলে দিচ্ছে সত্যিটা কী। সেসময়টা অনেক আগেই পার হয়ে গিয়েছে।
স্ক্রিনের দিকে আমার শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা দেখে মিয়াগি হয়তো পরিস্থিতি আঁচ করে নিয়েছে। ও দ্রুত বেগে আমার পাশে হেঁটে এসে ফোনের দিকে তাকালো।
“এখন তাহলে, চলুন উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক” সে বলল।
***********
“যে মেয়েটাকে আপনি একটু আগে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন, উনি ছিল আপনার শেষ আশা। মিস ওকান্ডাই শেষ ব্যক্তি যে কিনা আপনাকে ভালোবাসে বলে ভেবেছিলেন। আমার মনে হয়, গত বসন্তে উনি যখন আপনার প্রতি আগ্রহ দেখায়, আপনি যদি তখন কোনো পদক্ষেপ নিতেন তাহলে এই মুহূর্তে আপনারা বেশ ভালো একটা অবস্থানে থাকতেন। সেটা যদি হতো, আপনার আয়ুষ্কালের দাম এত কম হতো না… কিন্তু আপনি একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছেন। মিস ওকান্ডা আপনার প্রতি নিরাসক্ত হয়ে গিয়েছেন। না, এর চেয়েও বেশি। সম্ভবত উনার আকর্ষণ উপেক্ষা করার জন্য মি. কুসুনোকির প্রতি কিঞ্চিৎ বিদ্বেষ পোষণ করেছেন। এমনকি উনার নতুন বয়ফ্রেন্ডের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়েও দিতে পারে।”
মিয়াগি এমন স্বরে কথা বলছে যে সেটা শুনে কিছুতেই বোঝা যাবে না; ও সামনে দাঁড়ানো কারো সম্পর্কে কথা বলছে কিনা।
“শেষ পর্যন্ত, আপনাকে ভালোবেসে এগিয়ে আসার মতো আর কেউ নেই। সত্যি বলতে আপনি মানুষকে আপনার একাকিত্ব দূর করার উপকরণ হিসাবে দেখেন।“
আমি পাশের বাসা থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। শুনে মনে হচ্ছে একদল কলেজের বাচ্চা। ওদের জানালা দিয়ে আসা আলোটা পর্যন্ত আমার ঘরের আলোর সাথে তুলনা করা যায় না।
আমি এর আগে এই সম্পর্কে খুব একটা পাত্তা দেইনি। কিন্তু এখন বিষয়টা তীব্রভাবে আমার হৃদয়ে আঘাত করল।
আমার ফোনটা সবচেয়ে বাজে সময়ে বেজে উঠল। ওকান্ডার ফোন। উপেক্ষা করবো কিনা চিন্তা করলাম। কিন্তু ও পরে ফোন করতে পারে এই বিরক্তি নিতে চাচ্ছি না। সুতরাং ফোনটা ধরলাম।
“কুসুনোকি! তুমি কি একটু আগে ফোন করেছিলে নাকি? কী হয়েছে?”
ও সম্ভবত স্বাভাবিক কণ্ঠেই কথা বলছে। হয়তো ওর সাথে পূর্বে কথা হয়েছে বলেই; আমার মনে হলো ওকান্ডা আমার সমালোচনা করছে। যেন ও বলতে চাইছে, “এতদিন পরে আমাকে ফোন করার বিশাল কারণটা কী?”
“দুঃখিত, আমি ভুল করে ফোন দিয়েছিলাম” প্রফুল্ল কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলাম।
“সত্যি? তাই হওয়ার কথা। তুমি এমন মানুষ নও; যে কিনা প্ৰথমে কল করবে, তাই না কুসুনোকি?” ওকান্ডা হাসল। ওর হাসিও বিদ্রূপের মতো শোনাচ্ছিল। “যে কারণে আমি তোমার আশা ছেড়ে দিয়েছি।”
“হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ।” ফোন করার জন্য ওকে ধন্যবাদ দিয়ে রেখে দিলাম।
কয়েক সেকেন্ড পরেই পাশের ঘরের পার্টি আওয়াজ বেড়ে গেল।
***********
আমার ভেতরে যেতে মনে চাচ্ছিল না। তাই সেখানে দাঁড়িয়েই একটা সিগারেট ধরালাম।
দু’টো সিগারেট ফুঁকে, একটা লোকাল সুপারমার্কেটের উদ্দেশ্যে গেলাম। সেখানে অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমার বাস্কেটে একটা ছয় প্যাকের বিয়ার, ফ্রাইড চিকেন এবং কাপ রামেন রাখলাম।
আয়ুষ্কাল বিক্রি করে পাওয়া ৩০০,০০০ ইয়েন থেকে এই প্রথমবার খরচ করলাম। আমি খুব সাবধানে কিনতে চাচ্ছিলাম। আমার আসলে কোনো ধারণাই নেই কী কিনবো।
মিয়াগি ওর নিজের বাস্কেট বহন করছিল। তাতে ক্যালরি মেইটস এবং মিনারেল ওয়াটার দিয়ে ভর্তি করে ফেলল। ও এভাবে কেনাকাটা করছে দেখে অদ্ভুত লাগল না। কিন্তু ও কেনা জিনিস খাচ্ছে এমন কল্পনা করতে কষ্টই হচ্ছে আমার।
ওকে দেখে মানুষ বলে মনে হয় না। তাই মানুষের মতো আচরণ যেমন খাওয়াদাওয়াটা ওকে ঠিক মানায় না।
তবুও…আমাদের দেখতে একসাথে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকার মতো লাগছে। মনে মনে নিজেই কথাটা ভাবলাম। এটা সত্যিই হাস্যকর কিন্তু কল্পনার দিক থেকে সুখকর।
আমি এমনকি এটাও ভাবতে লাগলাম অন্য মানুষরা আমার মতো একই হ্যালুসিনেশন দেখলে ভালোই হতো।
বলার জন্য বলছি আরকি; আমার জীবনে মিয়াগির মতো একটা মেয়ের উপস্থিতির জন্য অনেকদিন ধরে লালায়িত ছিলাম। একটা মেয়ের সাথে থাকার খায়েশ অনেক দিন ধরেই ছিল আমার। লাউঞ্জওয়্যার পরা অবস্থায় খাবার দাবার এবং বিয়ার কেনাকাটা করতে যাবো।
প্রতিবারই যখন আমি কোনো যুগলকে এটা করতে দেখি, ঈষৎ দীর্ঘশ্বাস বুক চিরে বেরিয়ে আসে। এমনকি যদিও ওর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে পর্যবেক্ষণ করা, তবুও গভীর রাতে একজন তরুণী মেয়ের সাথে কেনাকাটা করাটা আমি উপভোগ করছিলাম বেশ ভালোভাবেই।
সম্ভবত, এটা অন্তঃসারশূন্য সুখ। কিন্তু আমাকে বিচার করতে আসবেন না। আমার জন্য এটাই বাস্তব।
আমার আগে খুব দ্রুতই মিয়াগি নিজের কেনাকাটা সেরে ফেলল। নিজ নিজ ব্যাগে বয়ে নিয়ে আমরা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে ফিরে এলাম।
পাশের বাসার হইচই এখনো চলছে। দেয়ালের এপাশ থেকেও পদশব্দ শুনতে পাচ্ছি।
সত্যি কথা বলতে, আমি ওদের প্রতি ঈর্ষান্বিত। আমার কখনই এরকম অনুভব হয়নি। যখন আমি একদল মানুষকে নিজেদের উপভোগ করতে দেখতাম, আমি শুধু ভাবতাম “এতে মজা পাওয়ার কী আছে?”
কিন্তু মৃত্যুর চিন্তা আমার বিকৃত মূল্যায়নের উপায়টা সংশোধন করেছে। আমি অন্য সকলের মতো সাহচর্য্যের কাঙাল হয়ে গিয়েছি।
বেশিরভাগ মানুষই এ-সময়ে পরিবারের দিকে চেয়ে থাকে। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, মানুষ সবসময়ই পরিবারের উপর ভরসা করতে পারে। দিন শেষে এটাই হচ্ছে ফিরে আসার শেষ জায়গা। আমার জানামতে এটাই হচ্ছে বেশি প্রচলিত চিন্তাধারা।
কিন্তু “পরিবার” সবার জন্য আরামদায়ক কোনো জায়গা না। ধরা যাক, আমার কোনো পরিকল্পনাই নেই জীবনের শেষ তিন মাসে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার। কারণ, আমার হাতে এত অল্প সময় বাকি আছে যে, আমি পুরোপুরিভাবে সম্পূর্ণ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চাচ্ছি।
আমি যখন একদম ছোটো ছিলাম, আমার ছোটো ভাই নিয়মিতভাবে বাবা মায়ের স্নেহ কেড়ে নিত। প্রথম থেকেই সব দিক দিয়ে ও আমার চেয়ে এগিয়ে ছিল।
ও ছিল সৎ, লম্বা, সুদর্শন। ওর বারো থেকে এখনকার উনিশতম বছর পর্যন্ত কখনই গার্লফ্রেন্ড খরায় ভোগেনি। ও আমার চেয়েও ভালো কলেজে গিয়েছে। এমনকি ওর রিফ্লেক্সও ভালো। ন্যাশনাল হাই স্কুল বাস্কেটবল পর্যন্ত খেলেছে।
আমি ওর বড় ভাই হয়েও, কোনো ক্ষেত্রেই ওকে হারাতে পারিনি। আমি কিছুটা ধীরে শুরু করেছিলাম। ও নিয়মিতভাবে বছরের পর বছর দ্রুত পার্থক্যটা বাড়িয়েই চলেছে।
স্নেহ প্রাকৃতিকভাবেই ছোটদের দিকে স্থানান্তরিত হয়। আমার সাথে অকৃতকার্যের মতো আচরণ করার জন্য আমি এমনকি বাবা-মাকে পক্ষপাতদুষ্ট বলতে পারি না।
ওর সাথে তুলনা করলে আমি যে ব্যর্থ সেটা একদম সত্যি। বরং আমরা যদি একই পরিমাণ স্নেহ লাভ করতাম তবে সেটা পক্ষপাতদুষ্ট হতো।
উনাদের জায়গায় আমি হলেও একই কাজ করতাম। যে যোগ্য তাকে ভালোবাসা এবং যে অযোগ্য তাকে বাতিল করে দেওয়ার মাঝে দোষের কী আছে?
আমি যদি বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাই, তাহলে শান্তিতে পিতা-মাতার নিঃশর্ত ভালোবাসায় বসবাস করার সম্ভাবনা একদম শূন্য। এর চেয়ে বরং যদি আমি পাশের বাসার পার্টিতে হুট করে ঢুকে পড়ি, ওরা আমাকে সাথে নিয়ে নিবে।
মিয়াগি কোণায় বসে ওর নোটবুকে লিখছে এমতাবস্থায় আমি ওর দিকে গেলাম। “খাবে নাকি?” আমি ওকে আমন্ত্রণ জানালাম। মিয়াগি মেয়েটা কে সেটা আমি পরোয়া করি না। আমি শুধু কোন একজনের সাথে ড্রিঙ্ক করতে চাই। “আমি এখন ডিউটিতে আছি” মিয়াগি এমনকি না তাকিয়েই প্রত্যাখ্যান করে দিলো।
“তুমি কী লিখছ?”
“আপনার কার্যকলাপের বিস্তারিত।”
“ওহ, আমি এখন মাতাল।”
“হ্যাঁ, আমি তা দেখতেই পাচ্ছি।” মিয়াগি অসন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ল।
“শুধু তাই নয়, আমি তোমার সাথে ড্রিঙ্ক করতে চাই।”
“হ্যাঁ, আমি শুনেছি” একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ও।