চিরঞ্জীব
জীবনের যাত্রাপথে যারা পড়িয়াছে ঝরি,
তবু হটে নাই– বাহিয়াছে তরী
উত্তাল ঝামত্ত সমুদ্রের বুকে
দুঃখে ও সুখে
হয় নাই আত্মহারা,
করে নাই অনুতাপ মুহূর্তের তরে
পাঞ্জা ধরিয়াছে যারা নিয়তির সাথে,
জীবনকে লয়ে খেলিয়াছে ছিনিমিনি!
বারংবার উদগ্র কৌতুকে
যারা হানা দিল নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে
যুগে যুগে
শান্তিময় শান্তিনিকেতন
করি উচ্ছেদন
মরুঝটিকার মত, উদ্দাম উদ্ধত
যারা ছুটিয়াছে,
লুঠিয়াছে বারে বারে
কামনার তীব্র সুরা যৌবনের মৃৎপাত্ৰধারে–
ভালবাসিয়াছে, কাদিয়াছে,
কাদায়েছে জয় করিয়াছে,
কখনও বা ক্ষণিকের তরে
ডুবিয়াছে বিস্মৃতির অতল সাগরে,
আপনারে হারায়েছে রমণীর রূপের পাথারে!
অবহেলা, অপমান, বিদ্রুপের তীব্র কশাঘাত
যারা সহিয়াছে
হাসিয়াছে,
হয় নাই ভীত
চির অসংযত
এরা জীনের মরুপথে জন্ম-বেদুইন!
বনচারী কেশরীর মত
উদ্দাম স্বাধীন এরা।
শুধু ভাঙ্গিয়াছে, গড়ে নাই,
অবিরাম অবিরত উদ্মাদ ঝঞ্ঝার মত
এরা ছুটিয়াছে
অনির্দিষ্ট উচ্ছল জীবনের পথে।
শাণিত ছুরির ধার পাথরের বুকে
ক্রমাগত ঘষিয়াছে,
মরিয়াছে,
পুনর্বার আসিছে ফিরিয়া
জন্ম নিতে পৃথিবীর উত্তপ্ত জঠরে।
লণ্ঠনের কাঁচের আধারে
এরা তো হয় না বন্দী!
অকস্মাৎ ভীষণ উত্তাপে
সর্বগ্রাসী দাবানলরূপে
জ্বলে উঠে নিভে যায়।
হাহাকার-পাপ!
এরা ক্ষণস্থায়ী, অগ্নিময়, অগ্নিলেখা,
দুর্বাসার ভয়ংকর দৃপ্ত অভিশাপ।
চিরকাল
গন্ডীবাঁধা জীবনের মধুর বন্ধন
এরা ছিঁড়িয়াছে, উড়ায়েছে খুশীর নিশান,
চির-উদ্ধত এরা মূর্তিমান জীবন্ত জেহাদ।
বাসব-বিদ্রোহী এরা বৃত্রের নন্দন!
ইতিহাসে মসীর আখরে
ইহাদের কেহ করে নি অমর,
সমষ্টির প্রশংসায়, কৃষ্টির কষ্টিপাথরে
যারা আপনারে করে নি পরখ।
আচম্বিতে
কক্ষচ্যুত উল্কার মত
প্রচন্ড গতির নেশায় যারা ছুটিয়াছে
জ্বলিতে জ্বলিতে,
নিঃশেষে পুড়িয়াছে, ফুরায়েছে অবশেষে!
তবু বারংবার
তারুণ্যের তপ্ত রক্তে এরা বেঁচে থাকে,
দুর্মদ গতির বেগে বিদ্যুতের অগ্নিছবি আঁকে
আপনার গতিপথে।
ইহারা অমর,
খরধার নাঙ্গা তলোয়ার, শাণিত প্রখর।
[নবকল্লোল, অগ্রাহায়ণ, ১৩৮৫]