১১ |
|
শেষ রাত্রি অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদা |
|
চিত্রাঙ্গদা। | প্রভু, মিটিয়াছে সাধ? এই সুললিত সুগঠিত নবনীকোমল সৌন্দর্যের যত গন্ধ যত মধু ছিল সকলি কি করিয়াছ পান। আর-কিছু বাকি আছে? আর-কিছু চাও? আমার যা-কিছু ছিল সব হয়ে গেছে শেষ? হয় নাই প্রভু! ভালো হোক, মন্দ হোক, আরো কিছু বাকি আছে, সে আজিকে দিব। প্রিয়তম ভালো লেগেছিল ব’লে করেছিনু নিবেদন এ সৌন্দর্যপুষ্পরাশি চরণকমলে– নন্দনকানন হতে তুলে নিয়ে এসে বহু সাধনায়। যদি সাঙ্গ হল পূজা তবে আজ্ঞা করো প্রভু, নির্মাল্যের ডালি ফেলে দিই মন্দিরবাহিরে। এইবার প্রসন্ন নয়নে চাও সেবিকার পানে। যে ফুলে করেছি পূজা, নহি আমি কভু সে ফুলের মতো, প্রভু, এত সুমধুর, এত সুকোমল, এত সম্পূর্ণ সুন্দর। দোষ আছে, গুণ আছে, পাপ আছে,পুণ্য আছে; কত দৈন্য আছে; আছে আজন্মের কত অতৃপ্ত তিয়াষা। সংসারপথের পান্থ, ধুলিলিপ্তবাস বিক্ষতচরণ; কোথা পাব কুসুমলাবণ্য, দু-দণ্ডের জীবনের অকলঙ্ক শোভা। কিন্তু আছে অক্ষয় অমর এক রমণী-হৃদয়। দুঃখ সুখ আশা ভয় লজ্জা দুর্বলতা– ধূলিময়ী ধরণীর কোলের সন্তান, তার কত ভ্রান্তি, তার কত ব্যথা, তার কত ভালোবাসা, মিশ্রিত জড়িত হয়ে আছে একসাথে। আছে এক সীমাহীন অপূর্ণতা, অনন্ত মহৎ। কুসুমের সৌরভ মিলায়ে থাকে যদি, এইবার সেই জন্মজন্মান্তের সেবিকার পানে চাও। সূর্যোদয় অবগুন্ঠন খুলিয়া আমি চিত্রাঙ্গদা। রাজেন্দ্রনন্দিনী। |
অর্জুন। | প্রিয়ে আজ ধন্য আমি। |