চিঠিপত্র – ৬ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)

তুমি এমন করে সব প্রশ্ন ফাঁদ যে দুচার কথায় সেরে দেওয়া অসম্ভব হয়, তোমার সম্বন্ধে আমার এই নালিশ।

১। “আবার এরা ঘিরেছে মোর মন’– এই পঙ্‌ক্তির ছন্দোমাত্রার সঙ্গে “দাহ আবার বেড়ে ওঠে ক্রমে’র মাত্রার অসাম্য ঘটেছে এই তোমার মত। “ক্রমে’ শব্দটার “ক্র’র উপর যদি যথোচিত ঝোঁক দাও তাহলে হিসাবের গোল থাকে না। “বেড়ে ওঠেক্‌রমে’ — বস্তুত সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে “ক্র’ পরে থাকাতে “ওঠে’র “এ’ স্বরবর্ণে মাত্রা বেড়ে ওঠা উচিত। তুমি বলতে পার, আমরা সাধারণত শব্দের প্রথম বর্ণস্থিত র-ফলাকে দুই মাত্রা দিতে কৃপণতা করি। “আক্রমণ’ শব্দের “ক্র’কে তার প্রাপ্য মাত্রা দিই, কিন্তু “ওঠে ক্রমে’র “ক্র’ হ্রস্বমাত্রায় খর্ব করে থাকি। আমি সুযোগ বুঝে বিকল্পে দুইরকম নিয়মই চালাই।

২। ভক্‌ত । সেথায় । খোলো দ্বা । ০০র্‌ । এইরকম ভাগে কোনো দোষ নেই। কিন্তু, তুমি যে ভাগ করেছিল । র০০ । এটা চলে না; যেহেতু “র’ হসন্ত বর্ণ, ওর পরে স্বরবর্ণ নেই, অতএব টানব কাকে।

৩। “জনগণ’ গান যখন লিখেছিলেম তখন “মারাঠা’ বানান করি নি। মরাঠিরাও প্রথমবর্ণে আকার দেয় না। আমার ছিল “মরাঠা’। তারপরে যাঁরা শোধন করেছেন তাঁরাই নিরাকারকে সাকার করে তুলেছেন, আমার চোখে পড়ে নি।

৪। “জাগিয়ে’ ও “রটিয়ে’ শব্দের “গিয়ে’ ও “টিয়ে’ প্রাকঁত-বাংলার মতে একমাত্রাই। আমি যদি পরিবর্তন করে থাকি সেটাকে স্বীকার করবার প্রয়োজন নেই।

১০ নভেম্বর, ১৯২৯

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *