চরণামৃত
ক্রেপ সোল–ক্রোম লেদার–সম্রাট অ্যান্ড কোম্পানির ডি-লুক্স দোকানদার আরও কী কী বলেছিল আমার মনে নেই। বাক্সে প্যাক করে দেবার আগে সে জুতোজোড়াকে পরম আদরে বারকয়েক থাবড়াল। তারপর বললে, যাও বেটা যাও, বেশ ভালো করে বড়বাবুর চরণ সেবা কোরো!
বড়বাবু! আমি পটলডাঙার প্যালারাম-পালাজ্বরে ভূগি আর বাসক পাতার রস খাই–আমাকে বড়বাবু বলা! ভাবলুম, মুখে যদি গোঁফ থাকত, তাহলে এই ফাঁকে তাতে বেশ করে তা দিয়ে নিতুম!
গম্ভীর হয়ে স্টাইলের মাথায় বললুম, জুতো টিকবে তো?
টিকবে মানে? আপনি যতদিন টিকবেন, তার চাইতে বেশি টেকসই হবে এ-জুতো। না, আপনার আয়ুক্ষয় কামনা করছি না স্যার। বলছিলুম, এ-জুতো পরা মানেই আপনার লাইফ ইনসিয়োর, মানে, ঠ্যাং ইনসিয়োর হয়ে গেল!
অগত্যা পকেট থেকে করকরে নগদ বারো টাকা বারো আনা বের করে দিলুম।
বেরোবার সময় দোকানদার বললে, হাঁটবেন আর আমার কথা মনে রাখবেন। দেখবেন, কী একখানা জুতো আপনাকে দিলুম।
একখানা জুতোই বটে!
পায়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই পায়াভারি। সে কী ওজন! এক-এক পাটি বোধহয় দু-সেরের কম নয়। হাত-দশেক হাঁটতে-হাঁটতেই কোমর টন-টন করতে লাগল।
দোকানদারকে ভোলবার জো আর রাখল না। টোপা কুলের মতো এক-একটা ফোস্কা পড়ল পায়ে। তারপর, সেগুলো যখন গলে গেল, তখন ব্যাণ্ডেজ বেঁধে সাত দিন শুয়ে থাকতে হল বিছানায়।
সেই অবস্থাতেই বড়দা আমার মাথায় গোটা-দুই চাঁটি মেরে দিয়ে দাঁত দিয়ে খিঁচিয়ে বললে, যেমন তোর মগজ নিরেট, তেমনি জুতোও কিনেছিস নিরেট! ফেলে দে রাস্তায় কুকুরে-টুকুরে খেয়ে নিক।
আমার ছোট বোন ঝন্টি বললে, ও-জুতো খেতে গেলে কুকুরও হার্টফেল করবে।
বড়দা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে দেখে আমি ধাঁ করে ঝণ্টির বিনুনিটায় টান দিলুম। বললুম, পরিস তত আধ-ছটাক লেডিজ শু–এসব সম্রাট ব্র্যান্ড জুতোর কদর বুঝবি কোত্থেকে!
ঝন্টি ভ্যা-ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে মার কাছে নালিশ করতে গেল। কিন্তু মুখে যাই বলি, ও-জুতো পায়ে দিয়ে আমার হৃৎকম্প হতে লাগল। অথচ নিজে পছন্দ করে কিনেছি, পায়ে না দিলেও বাড়িতে মান রাখা শক্ত। যা থাকে কপালে বলে আমি আবার জুতোর তোয়াজ করতে লেগে গেলুম।
চেষ্টা করলে নাকি ভগবানকে সুদ্ধ বশ করা যায়, কিন্তু এ-জুতো বোধহয় ভগবানের ওপরেও এক কাঠি! আজ এক বছর ধরে রয়ে-সয়ে পরবার চেষ্টা করছি, কিন্তু পায়ে দিলেই সেই দোকানদারকে মনে করিয়ে দেয়। বলতে গেলে জুতোজোড়া আমাকে জুতোতে থাকে। অনেক দাগা পাওয়ার পরে আজকাল একটা রেশনের থলে হাতে বেরোই–তাতে থাকে একজোড়া চটি। যখন দেখি জুতোর পাল্লায় পড়ে প্রাণ যাবার জো হয়েছে, তখন নিরিবিলি জায়গা দেখে ওটাকে পুরে ফেলি থলের মধ্যে। তারপর পায়ে চটি গলিয়ে গজেন্দ্র-গমনে হাঁটতে থাকি।
কেউ জিজ্ঞেস করলে বলি, মার্কেট থেকে ভালো আলফ্যানসো আম কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
ঈশ্বরের দয়ায় কলকাতায় ওই এক সুবিধে। আম, আপেল, আঙুর, বেদানা–নেহাত পক্ষে সিঙাপুরী কলা বারো মাসই কিনতে পাওয়া যায়। বেশ ছিলুম, কিন্তু হাবুল সেন বাগড়া দিলে।
তিন পুরুষ কলকাতায় আছে, কিন্তু মাতৃভাষা ছাড়া কথাই বলবে না হাবুল। আমাকে দেখেই একগাল হেসে বললে, কি রে, থইল্যার মধ্যে লইয়া যাস কী?
নাক উঁচু করে বললুম, পেশোয়ারী মেওয়া।
-পেশোয়ারী মেওয়া? কত কইর্যা আনছস?
নাকটা আরো উঁচু করে বললুম, কুড়ি টাকা সের।
কুড়ি টাকা সেরের মেওয়া? হাবুল একটা হাঁ করল : আইজকাল তো তুই সোনা খাইতে আছস? দেখি দেখি, কেমন তোর মেওয়া–
বলেই, আর আমাকে সামলাবার সময় দিলে না। খপ করে হাত পুরে দিলে থলের মধ্যে।
–আরে আরে, এই নি তোর মেওয়া? কার জুতো চুরি কইর্যা পলাইতে আছস–ক দেখি?
ব্যাপারটা সব মিলে এমন বিতিকিচ্ছি হয়ে দাঁড়াল যে কী বলব! দেখতে-দেখতে রাস্তায় জড়ো হয়ে গেল লোক।
কী মশাই, জুতা চুরি করে পালাচ্ছে নাকি?
–আজকাল চারিদিকে জুতো-চোরের মরশুম। ট্রাম থেকে পর্যন্ত সরাচ্ছে মশাই। সেদিন দুপুরবেলা শ্যামবাজার যেতে যেতে যেই চোখে একটু ঢুলুনি এসেছে, অমনি আর কথা নেই–আমার নতুন জুতো-জোড়া একেবরে ভোঁ-ভাঁ।
–দিন না ঘা কয়েক লাগিয়ে
এই ফাঁকে একজন একটা ছাতাও তুলেছিল–আর একটু হলেই ধপাস করে আমার পিঠে বসিয়ে দিত। কিন্তু হাবুল সেনই রক্ষা করলে। বললে, না, মশয় না। ভদ্রলোকের পোলা, জুতা চুরি করব ক্যান? আমার বন্ধু কিনা, তাই মস্করা করতে আছিলাম। পায়ে ফোস্কা পড়ছে বইলা থইল্যায় কইর্যা–
লোকে সে-যাত্ৰা ছেড়ে দিল বটে, কিন্তু এতক্ষণে পুলিশের টনক নড়ল। একটু দূরেই তেলেভাজার দোকানে বসে যে-ভোজপুরীটা আরামে ফুলুরি খাচ্ছিল, সে এতক্ষণে ধীরে-সুস্থে উঠে দাঁড়াল। তারপরেই হাঁক দিয়ে বললে, আরে কৌন রে?
এর পরেই হয়তো লালবাজারে গিয়ে হাজতে রাত্রিবাস করতে হবে। সুতরাং আর আমি দাঁড়ালুম না। হতভম্ব হাবুল সেনকে ধাঁ করে একটা ধাক্কা দিয়ে সাঁ করে ঢুকে গেলুম পাশের গলিতে। তারপর সেখান থেকে একেবারে লম্বা!
কিন্তু হাবুল সেন ব্যাপারটাকে চারিদিকে রটিয়ে দিলে। আর রটাল বিলক্ষণ রং ফলিয়ে।
বিকেলে দেখি, ক্যাবলা, গদাই আর পঞ্চা এসে হাজির।
পঞ্চা বললে, আহা–চুক-চুক!
গদাই বললে, হাসপাতাল থেকে ছাড়ান পেলি কবে?
ক্যাবলা করুণ স্বরে জিজ্ঞেস করলে, পিঠের চামড়া বুঝি একপর্দা তুলে নিয়েছে?
হতভম্ব হয়ে বললুম, মানে?
পঞ্চা বললে, কেন লুকোচ্ছিস ভাই? আমরা তো তোর বন্ধু! না-হয় জুতো চুরি করতে গিয়ে দু’ঘা খেয়েইছিস, তাই বলে কি আমরা সেবন্ধুত্ব ভুলতে পারি?
ক্যাবলা বললে, যাই বলিস ভাই, কাজটা কিন্তু ভালো হয়নি। না-হয় চাঁদা করে একজোড়া জুতো তোকে কিনেই দিতুম! তাই বলে তুই ট্রাম থেকে অন্য লোকের জুতো সরাবি?
উঃ, কী শয়তান হাবুল সেন। বানিয়ে বানিয়ে এইসব বলে বেরিয়েছে? একবার কাছে যদি পাই
দড়াম করে ওদের নাকের ডগাতেই আমি দরজাটা বন্ধ করে দিলুম।
এই জুতো! এই জুতোই আমার সর্বনাশ করবে!
রাত্রে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লুম। সমস্ত মেজাজ খিচড়ে গেছে–জীবনটাকে একেবারে অভিশপ্ত বলে বোধ হচ্ছে।
ঘরের একপাশে জুতো-জোড়া আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। যেন হাসছে আমার দুর্গতি দেখে। দোকানদারের কথাগুলো কানে বাজতে লাগল–আমি যদ্দিন টিকব, জুতোও তদ্দিন টিকবে! এখন দেখছি–জুতোই আমাকে আর টিকতে দেবে না।
বারো টাকা বারো আনার মায়ায় এতদিন অন্ধ হয়ে ছিলুম। কিন্তু আর নয়। হয় জুতো থাকবে নইলে আমি থাকব। এই পৃথিবীতে আমি আর জুতো–দুজনের জায়গা হতে পারে না। আজ জুতোর বিসর্জন!
শুধু বিসর্জন নয়! তার আগে প্রতিহিংসা নিতে হবে–নির্মম প্রতিশোধ!
কী করা যায়?
ভাবতেই দেখি, সামনে টেবিলের উপর কী একটা চকচক করছে। একটা ছোট কাঁচি। ওই কাঁচি দিয়ে মেজদা রোজ তরিবত করে গোঁফ ছাঁটে।
ইউরেকা! ওই কাঁচি দিয়ে জুতোটাকে আমি টুকরো-টুকরো করে কাটব! তারপর
একলাফে কাঁচিটাকে অধিকার করলুম। তারপর জুতোর চামড়ায় বসিয়ে চাপ দিতেই পট!
না, জুতো কাটল না। সম্রাট ব্র্যাণ্ড জুতোর কালান্তক চামড়ায় একটু আঁচড় লাগল না পর্যন্ত। মাঝখান থেকে কাঁচিটারই বারোটা বেজে গেল।
সর্বনাশ–সেরেছে!
কাল সকালে মেজদা গোঁফ ছাঁটতে এসে কাঁচির অবস্থা দেখে! আমারই কান ছেঁটে দেবে! এমনিতেই আমার কান দুটো একটু লম্বা–ও-দুটোর ওপর মেজদার লোভ আছে অনেকদিন থেকে। এবার আমি গেছি!
সামনে জুতো-জোড়া আমাকে যেন সমানে মুখ ভ্যাংচাচ্ছে। আমার মনে হল, ওরা যেন স্পষ্ট বলতে চাইছে, এখুনি হয়েছে কী! তোমার নাক কানের দফা নিকেশ করে তবে তোমায় ছাড়ব!
উঃ-কী ভয়ঙ্কর চক্রান্ত!
হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লুম।
সাত দিন পরে ম্যাট্রিক পরীক্ষা আরম্ভ। অঙ্কটাকে কায়দা করে উঠতে পারিনি বলে পর পর দু’বার ম্যাট্রিকে ডিগবাজি খেয়েছি। এবার যদিবা আশা ছিল–ওই জুতোই আমাকে আর পাশ করতে দেবে না।
কিন্তু জ্বালার ওপর আর-এক জ্বালা!– পাড়ায় কোথায় কদিন থেকে উৎপাত শুরু হয়েছে। সন্ধে হলেই ‘রামা হো–রামা হো’। কানের পোকা একেবারে বার করে দেবার জো করেছে। আর উৎপাতটা যেন আমার উপরেই বেশি–এ-ঘরের জানলাটা খুলেই আওয়াজ যেন কানের পর্দা ফাটিয়ে দিতে থাকে।
একে জুতোর জ্বালায় মরছি–তার ওপরে আবার ‘রামা হো’। আমার মধ্যে যেন অ্যাটম বোমা ফেটে গেল গোটাকতক। যা হবার হোক। এসপার কিংবা ওসপার!
খাট থেকে নেমে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালুম। তারপর ওই জুতো-জোড়া তুলে নিয়ে একটার পর একটা নির্ঘাত ছুঁড়ে দিলুম এই ‘রামা হো’ লক্ষ্য করে!
সঙ্গে সঙ্গে আকাশ-ফাটানো চিৎকার উঠল। আমি আর স্পিকটি নট! জানালা বন্ধ করে একলাফে খাটে চড়ে বসলুম, তারপর সোজা একদম লেপের তলায়।
আঃ, কী আরাম! এতদিন পরে শান্তিতে ঘুমুতে পারব!
দিন-দুই পরে বড়দার নজর পড়ল।
-হ্যাঁরে প্যালা, তোর সে-জগঝম্প জুতোটা গেল কোথায়?
আমার বুক কেঁপে উঠল। রামা হো-রা খুঁজে খুঁজে এসে হাজির হয়নি তো? তা হলেই গেছি।
ঘাড় চুলকে তো-তো করে বললুম, বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে চুরি হয়ে গেছে।
–চুরি হয়ে গেছে! সেই জুতো!-বড়দা এমন করে তাকাল যেন ভূত দেখেছে : এমন গাড়ল চোরও আছে নাকি?
আমি ফোঁস করে বললুম, কেন, জুতোটা বুঝি খারাপ ছিল? ক্রেপ সোল–ক্রোম লেদার
বড়দা বললে, ক্রোম লেদার নয়, তোর লেদার, মানে তোর মতো গোরুর লেদার! কিন্তু বলিহারি চোরের আক্কেল! দুনিয়ায় আর চুরি করার জিনিস পেলে না!
আমি নিঃশ্বাস ছেড়ে বাঁচলুম।
তারপর ক’দিন আর কোনওদিকে তাকাবার সময় ছিল না। সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা আর সেইসঙ্গে অঙ্কের করাল বিভীষিকা! দশমিক আর ভগ্নাংশ–ফ্যাক্টার আর ফরমুলা– প্রব্লেম আর একস্ট্রা–তার ভেতরে জুতো—’রামা হো’–সব বেমালুম তলিয়ে গেল।
অঙ্কের পরীক্ষার দিন তিনশো তেত্রিশ কোটি দেবতাকে ছশো ছত্রিশটা পাঁঠা মানত করে বেরুচ্ছি–এমন সময় পাশের বাড়ির পিসিমা এসে হাজির। হাতে মস্ত একটা জামবাটি।
পিসিমা ভারি ভালো লোক। বড্ড স্নেহ করেন আমাকে–যখন-তখন ব্রাহ্মণ-ভোজন করান, আর দেব-দ্বিজে পিসিমার বেজায় ভক্তি–প্রায়ই কালীঘাটের প্যাঁড়া এনে খাওয়ান আমাকে। প্রসাদে অরুচি আমার নেই–পেলেই পত্রপাঠ সেবা করে ফেলি।
পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস? নে, ঢক করে এই চন্নামৃতটুকু খেয়ে ফ্যাল। একেবারে জাগ্রত দেবতার চন্নামৃত-খেলেই পাশ হয়ে যাবি।
-কীসের চন্নামৃত পিসিমা? কেমন একটা বদখত গন্ধ!
পিসিমা শিউরে বললেন, অমন বলতে নেই রে, পাপ হয়। ওটা বাবার গায়ের গন্ধ।
বাবা। কোন্ বাবা।
জুতিয়া বাবা!
জুতিয়া বাবা!–পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়ে অবাক হয়ে বললুম : বিস্তর দেবতার নাম শুনেছি, কিন্তু জুতিয়া বাবার নাম তো শুনিনি কোনওদিন?
পিসিমা ফিসফিস করে বললেন, সে এক আশ্চর্য ব্যাপার! ওদিকের গলিতে হনুমানজীর একটা আখড়া আছে জানিস তো? কদিন আগে সেখানে রামলীলে হচ্ছিল। রাম বনবাসে গেছেন–ভরত নন্দীগ্রামে তাঁর জুতো পূজা করছেন বসে বসে। যেমনি জুতো পূজার গান শুরু হয়েছে অমনি এক অলৌকিক ব্যাপার।–পিসিমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল : সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে ধপধপ করে দুখানা জুতো পড়ল। সে কী জুতো। তার একখানার ওজনই হবে তিন সের! অমন পেল্লায় জুতো রামচন্দ্র ছাড়া কার হবে। ভক্তের ডাকে তিনি জুতো-জোড়া স্বর্গ থেকে ফেলে দিলেন।
আমি চমকে উঠলুম, বললুম, কিন্তু
পিসিমা রেগে বললেন, কিন্তু আবার কী? তোরা সব নাস্তিক হয়েছিস কিন্তু দেবতারা এখনও আছেন। আমি কত কষ্ট করে–দুটাকা প্রণামী দিয়ে তোর জন্যে বাবার জুতো-ধোয়া জল–
হায় জুতিয়া বাবা। এখন চরণামৃতটা কী করে বমি করি!