চতুষ্পাঠী – ১৪

চোদ্দ

আজ দুপুরবেলাটা কোথায় যেন গিয়েছে অঞ্জলি। গায়ে পশমের লাল চাদরটা জড়িয়েছে। বিধবার গায়ে ঐ লাল রঙ ভাল লাগছিল না অনঙ্গমোহনের। তাঁর পূর্বপুরুষের কোনো বিধবাই এভাবে লাল জিনিস পরেনি।

তাঁর পূর্বপুরুষের কোনো মহিলাই কি চাকরি করতে বেরিয়েছিল কোনোদিন।

অঞ্জলি যখন বেরিয়ে গেল, তার আঁচল-বাতাসে সুগন্ধ পেয়েছিলেন অনঙ্গমোহন। প্রসাধনের। যাবার সময় কিচ্ছু বলে গেল না অঞ্জলি।

কোথায় যাচ্ছে কী বৃত্তান্ত কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি অনঙ্গমোহন। প্রশ্ন করার জন্য যে জোরটুকু থাকা দরকার, সেটাও তাঁর নেই। আজ সকালেই অঞ্জলি বলে দিয়েছে—বড় বড় কথা বলবেন না বাবা। আপনার স্বার্থের জন্য আমাকে বাইরে পাঠিয়েছেন। তাতেও হল না, আমাকে রাঁধুনির কাজ করতে পাঠিয়েছেন…

অজিতবাবুর ঘরে অঞ্জলি এখন রান্না করে। অঞ্জলি স্ব-ইচ্ছায় গেছে। জয়া হাসপাতাল থেকে ফেরার পর ওর পক্ষে রান্না করা সম্ভব হচ্ছিল না। অজিতবাবু একজন রাঁধুনির সন্ধানে ছিল। অঞ্জলি তো তখন নিজেই বলল …

অঞ্জলি বলে দিয়েছে—কাল থেকে অসীমের ভাত রান্না করতে পারবে না। অঞ্জলি কোথাও যাবার সময় অনঙ্গমোহনকে বলে যায়। আজ কিছুই বলেনি।

যশবাবু এসেছিলেন গতকাল। যশবাবু তো জানেন না যে, অঞ্জলি এখন রাঁধুনি। যশবাবু এসে প্রণাম করেছিলেন অনঙ্গমোহনকে। অনঙ্গমোহন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, চাকরিস্থলের খবর কী। যশবাবু বলেছিল, চেষ্টা চলছে। মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। আসলে মালিক টিনের কারবার গুটিয়ে দিতে চাইছে। টিন আর তেমন চলছে না, এখন প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের যুগ। যশবাবুর গলার স্বর শুনে অঞ্জলি হাত মুছতে মুছতে এল। ওরা কথা বলল রাস্তায় গিয়ে। বিলু বলেছিল, যশবাবু হল মালিকের এক নম্বরের চামচে। অনঙ্গমোহন বুঝে নিয়েছিল ‘চামচে’ শব্দটির আলঙ্কারিক প্রয়োগ।

স্বপ্নাও নেই এখন। অঞ্জলি বের হবার পর স্বপ্নাও বের হয়েছে ঘর থেকে। ‘দাদু, বন্ধুর বাড়ি থেকে একটু আসছি। আজ তুমি ভাত নিয়ে খেয়ো।’ এই বলে স্বপ্নাও বেরিয়েছে। বাইরের পৌষের রোদ যেন জরির ঝালর। বাইরের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন অনঙ্গমোহন। ভাবেন, সুমিতার বাড়ি একবার যেতে পারলে ভাল হত। ওর বিবাহটা স্থির করতে পারেননি অনঙ্গমোহন। নগেনের ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহটা শেষপর্যন্ত হয়ে উঠল না। ঠিকুজি মেলেনি। নাড়িবেধ যোগ।

সুমিতার কথা ভাবতে ভাবতেই প্রকাশকটি এল। পুরন্দর গোস্বামী। দি আইডিয়াল পাবলিশার্স-এর মালিক। এসে বললেন—কী স্যার, স্ক্রিপ্ট রেডি তো?

—পাণ্ডুলিপি তৈরিই আছে। অনঙ্গমোহন খাবার কথা ভুলে গেলেন।

এই প্রকাশকটিকে সুমিতাই পাঠিয়েছিল কিছুদিন আগে। সুমিতা এঁরই কাজ করছিল। পুরন্দরবাবু বলেছিলেন—আপনি হলেন কোয়ালিফাইড সংস্কৃত—। আপনি কেন টেক্সট বই লিখবেন? আপনাকে দিয়ে অরিজিনাল কাজ করাব। অনুবাদের কাজ। আপনি ভাল করে কয়েকটা অনুবাদ করে দিন তো—যেমন ধরুন, শৃঙ্গাররসাষ্টক, রতিমঞ্জরী, শৃঙ্গার তিলক, পুষ্পবাণ বিলাস কিংবা ধরুন চৌরপঞ্চাশিকা। খাবে ভাল। স্যাংস্কৃটের মার্কেট এখন হায় হায়। বুঝলেন না। যেসব বই কিছুটা খাবে, ঐ সব কিছু করব। বেশ ভাল করে কভার করে বাজারে ছাড়বো। চৌরপঞ্চাশিকা দিয়েই শুরু করুন।

অনঙ্গমোহন চৌরপঞ্চাশিকার অনুবাদটি নিয়ে আসেন।

পুরন্দর গোস্বামী বলেন—নিন, পড়ুন তো দেখি।

অনঙ্গমোহন পদ্মাসনে বসেন। পড়তে থাকেন—আজও তাহাকে স্মরণে আসিতেছে সেই শশীবেদনা নবযৌবনা গৌরকান্তি সুন্দরীকে। আমি তাহাকে শৈত্যদান করিতে পারি। আজও যদি তাহাকে আর একবার প্রাপ্ত হই। সেই পদ্মালোচনা পীনস্তনীকে, তাহাকে আলিঙ্গন করতঃ মধুকর সদৃশ তার সুধা পান করি। তার সম্ভোগ ক্লান্ত দেহের উপর এলায়িত চূর্ণকুন্তলরাজি স্মরণ করিতেছি…

—আরে না না—এভাবে হবে না পণ্ডিতমশাই। আমরা আক্ষরিক অনুবাদ চাইছি না। ভাবানুবাদ চাইছি। দেখুন, আমি স্যাংস্কৃট জানি না, তবে গোস্বামী বংশের ছেলে। রসটস বুঝি। বিশেষত, বুঝলেন কিনা, আদি রস। এভাবে করুন, চলতি ভাষায়, যেমন ধরুন, আঃ, আজও তাকে মনে পড়ে মদন জ্বালায় জ্বলছে ঐ নবযৌবনা পীনস্তনী সুন্দরী। আমি এখনো তার মদন জ্বালাকে ঠাণ্ডা করে দিতে পারি। আজও তাকে আর একবার যদি পাই সে আয়তনয়না, পীনস্তন ভারে ন্যুব্জ দেহলতা, তাকে আমার দুই বাহুর আলিঙ্গনে রেখে উন্মত্তের মতো তার মুখসুধা পান করি, যেমন মধুকর ফুলের মধু চুষে খায়। আজও তাকে মনে পড়ে, সম্ভোগের পর তার এলিয়ে পড়া চুলগুলি…। এরকম করুন।

অনঙ্গমোহন বললেন—মূল রচনায় তো ঐরকম নাই, অদ্যাপি তাং কনকচম্পকদাম গৌরীং …

—আরে রাখুন তো গৌরীং। আপনি ভাবানুবাদ করুন। এখনকার পাঠকের যা ভাব, সেই ভাবে। মহাকাল প্রকাশনী নিষিদ্ধ গ্রন্থমালা সিরিজে এইসব স্যাংস্কৃট ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমরাও ভাবছি, শৃঙ্গার সিরিজ বার করব।

অনঙ্গমোহন বললেন—আমি পারতাম না।

ঐ ভদ্রলোকটি চলে গেলে অনঙ্গমোহনের খিদে লাগে ফের। আজ খাবেন না, খিদে পেলেও খাবেন না। আজ উপবাস। কাল থেকে স্বপাকী হবেন। হাঁড়িকড়াই কিনে নিজে রান্না করে খাবেন।

তারপরই ভাবেন, নিজে একা স্বপাক আহার করলে সমস্যা মিটছে কোথায়? অসীম? অসীমকে নিয়েই তো সমস্যা।

তবে অসীমও অনঙ্গমোহনের সঙ্গেই খাক। তখন বিলু যদি বলে, দাদু, আমিও তোমার দলে?

সংসার এভাবে বাড়ালে চলবে না। অনঙ্গমোহন বলবেন, দাদু তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে খাও। আমাগোরে নিয়াই যত্ত ঝামেলা, আমি আর অসীম আলাদা খামু

তবে তো আলাদা হাঁড়ি-কড়াই পাক-পাত্র চাই, শিশি-বোতল চাই, কৌটাকৌটি চাই, উনুন চাই। কেরোসিন স্টোভে রাঁধলে হয় না?

স্টোভ কই?

একটা কিনলে হয় না?

টাকা? স্টোভ, হাঁড়ি, কড়াই…বহু টাকা…

পাক করব কোথায়?

কেন, বারান্দায়?

—টোল বসবে কোথায়?

তবে অসীম তুই যা। তোরে বাড়ি পাঠাইয়া দি। আমি তোরে রাখতে পারলাম না আর।

বড় বেশি বয়সে বিবাহ করেছিলেন অসীমের বাবা, বোবাঠাকুর। বোবাঠাকুরের অন্য একটা নাম আছে। হরিদাস। সেই নাম এখন লোকে জানে না। বোবাঠাকুর নামেই তাঁর পরিচিতি। বোবা বলতে যা বোঝায়, উনি ঠিক তাই নন। উনি শুনতে পান। মুখ থেকে আওয়াজও বের হয়। এগার বছর বয়সে উপনয়ন হয়েছিল এবং তাঁর বাবার সঙ্গে থেকে যাজকবৃত্তিও করছিলেন পূর্ব বাংলায়। যে ব্রাহ্মণ সন্ধ্যামন্ত্র পড়ে না—সে শূদ্র সমান। তাঁর হাতের অন্ন বিষ্ঠা তুল্য—একথা শাস্ত্রে লেখা আছে, কিন্তু যে ব্রাহ্মণ পূজাকালে মুখ থেকে গোঁ গোঁ ভিন্ন অন্য শব্দ উৎপাদন করতে পারে না তার সম্পর্কে কী বিধান হবে তা কোনো সংহিতায় লেখা নেই। তবে মনঃ শব্দজাত মন্ত্ৰ মনে মনেই পড়া যায় এরকম ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। তা হরিদাস যাজকবৃত্তি করতে গিয়ে বোবাঠাকুর হলেন। কিন্তু বোবার পক্ষে পাত্রী জোটানো কষ্টকর। বোবাঠাকুরের বিবাহের বয়স অতিক্রান্ত হয়ে গেল। অনঙ্গমোহনের স্ত্রী সুরবালা প্রায়শই ক্যাটক্যাট করতে থাকেন।

তুমি থাকতে দাদার আমার বিয়া হইল না। দাদারে বুড়া বয়সে কে দেখব? অনঙ্গমোহন সচেষ্ট হলেন, তাঁরই এক দূর সম্পর্কের দুঃস্থ জ্ঞাতি ভাইঝির সঙ্গে বিবাহের বন্দোবস্ত করলেন।

প্রথম সন্তান হবার বেশ কয়েক বছর পর এপার বাংলায় এসে অসীমের জন্ম। বোবাঠাকুরের বয়স তখন পঞ্চাশের উপর। অসীমের জন্মের পর অনঙ্গমোহন গিয়েছিলেন অশোকনগরে। বোবাঠাকুর নানারকম শব্দ করে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন। অনঙ্গমোহন বুঝতে পারছিলেন না। বোবাঠাকুরের স্ত্রী আসলে অনঙ্গমোহনের ভ্রাতুষ্পুত্রী হলেও বিবাহের পর শালাবৌ। ও বলল—আর বল কেন, বুড়া বয়সে …

আরে বুড়া তো কি, শ্যালক আমার রসবান পুরুষ।

বোবাঠাকুর আবার দ্বিগুণ শব্দে গোঁ গোঁ করতে থাকেন।

বোবাঠাকুরের স্ত্রী বলেন—বাচ্চাটারে কে দেখবে, কে মানুষ করবে—

অনঙ্গমোহন বুকে চাপড় মেরে বলেছিলেন-সোহমস্মি…

তারপর ঐ দেড় মাসের বাচ্চাটার কাছে মুখ নিয়ে অনঙ্গমোহন বলেছিলেন—ওরে পরাইন্যারে পরাইন্যা, আমার কইলজা, তুই তোর বাপের ন, তুই আঁয়ার।

অসীমের আট-নয় বছর বয়স হলে বোবাঠাকুর অনঙ্গমোহনের সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন নানা ইঙ্গিতে। অনঙ্গমোহন অসীমকে নিয়ে এসেছিলেন, উপনয়ন দিয়েছিলেন। এইভাবে অসীম গুরুগৃহে এল। পূর্ণচন্দ্র চতুষ্পাঠীর আবাসিক ছাত্র।

অনঙ্গমোহন থালা চাপা দেওয়া ভাতের দিকে একবার তাকালেন। না, ঐ ভাত কিছুতেই খাবেন না। আজ উপবাসে থাকবেন।

থালাটা একবার উঠিয়ে পদ কী আছে দেখতে ইচ্ছে হল। থালাটা ওঠালেই গরম মশলার ঘ্রাণ। সে কী, মোচাঘণ্টা কেন? মোচা তো আনেননি অনঙ্গমোহন। একে তো শীতকালে মোচার দাম বেশি, তার উপর তেল লাগে বেশি। ইচ্ছে থাকলেও মোচা আনতে পারেন না অনঙ্গমোহন। মোচা কী করে এল? অনঙ্গমোহন মোচা খেতে ভালবাসেন অঞ্জলি জানে। অঞ্জলি কি অজিতবাবুর ঘর থেকে চুরি করেছে? নাকি, এটা অঞ্জলি চেয়ে এনেছে। আমার শ্বশুরমশাই মোচাঘণ্ট খুব ভালবাসে, একটু নিই?—জয়া তখন কি বলেছে, একটু কেন, নাও, নাও, বেশি করে নাও…অঞ্জলি ওর নিজের ভাগেরটা না খেয়ে শ্বশুরের জন্য রেখে দিয়েছে।

হঠাৎ অঞ্জলির উপর কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠেন মনে মনে। মেয়েটা সত্যিই কী পরিশ্রমটাই না করছে। ভোরে উঠে অজিতবাবুর ঘরের রান্নাবান্না মিটিয়ে নিজের ঘরের রান্নাবান্না। তারপর ঠোঙা তৈরি। ঘর-গৃহস্থালির যাবতীয় কাজকর্ম।

জয়া যেদিন ফিরল হাসপাতাল থেকে, ঘোমটায় মুখ ঢেকে ফিরল। আগুনে তার মুখ বিকৃতি ঘটেনি। তবু কেন সে অবগুণ্ঠনাবৃত ছিল? মৃত্যু থেকে বেঁচে আসার লজ্জা? শিখা আর বিজুকে দু’হাতে জড়িয়ে কাঁদল কিছুক্ষণ, তারপর অঞ্জলিকে ডেকে নিল। অঞ্জলির সঙ্গে কতই না ঝগড়া করেছে জয়া, কিন্তু সেদিন অঞ্জলির সঙ্গে কী আশ্চর্য সখী ব্যবহার।

এক মুহূর্তের দুর্বলতায় গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল জয়া। ঠিক যে কী কারণ, সুমিতার সঙ্গে অজিতবাবুর যে ঠিক কী সম্পর্ক ছিল, অনঙ্গমোহন জানেন না। সুমিতাকেও কখনো জিজ্ঞাসা করেননি তিনি। তবে সুমিতা কথা রেখেছে। সুমিতাকে বলেছিলেন—আর যেও না ও বাড়ি। সুমিতা আসেনি আর।

অসীম আর বিলুর কাছে অনঙ্গমোহন শুনেছিলেন—সেদিন রাত্রের অজিতবাবুর ঘরে কথা কাটাকাটি। অজিতবাবু বলেছিল, যা করছি বেশ করছি, হাজারবার করব। শিখার মা বলেছিল—এটাই তোমার শেষ কথা? অজিতবাবু বলেছিল- হ্যাঁ।

তারপর সেই রাত্রেই বিশ্রী ঘটনা।

মোচার ঘণ্টটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন অনঙ্গমোহন। একবার কি চাখবেন? একটু? কেউ জানবে না। অঞ্জলি, স্বপ্না, কেউ না। ওরা এসে দেখবে, বুড়োর এতই রাগ যে মোচার ঘণ্টটাও খায়নি।

ঠং করে ঢাকনাটা ফেলে দেন অনঙ্গমোহন। ব্রাহ্মণের এই লোভ হীনতার লক্ষণ।

অনঙ্গমোহন আবার ঢাকনাটা ওঠান। ছোট্ট বাটি। বাটির মধ্যে মোচার ঘণ্ট। কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। হাতার দাগ নেই, হাল্কা তৈলাক্ত সর পড়েছে। আর কেউ খায়নি এই মোচাঘণ্ট। অনঙ্গমোহনের জন্য যে থালাটি, বাটিটা সেখানেই বসানো।

এর আগেও অসীমের ব্যাপার নিয়ে কলহ হয়েছে। অসীমকে দিয়ে আসতেও উদ্যত হয়েছিলেন। অঞ্জলি শেষ সময় বলেছে—না থাক। আপনার কষ্ট হবে। অঞ্জলির কঠিন আবরণের মধ্যে একটা নরম মন আছে। নারিকেলের ভিতরে যেমন স্নিগ্ধ জল থাকে।

অনঙ্গমোহন ঢাকনাটা খুলে নেন আবার, থালাটা টেনে নেন। জল গড়িয়ে নেন। প্রথমে ডাল, তারপর বাঁধাকপি এবং শেষকালে মোচার ঘণ্টের বাটি ভোজন পাত্রের সংলগ্ন করে নেন। তারপরই হাতে জল নিয়ে ওঁ নাগায় নমঃ ওঁ কূর্মায় নমঃ ওঁ কৃকরায় নমঃ, ওঁ দেবদত্তায় নমঃ, ওঁ ধনঞ্জায় নমঃ করলেন। ভোজন করলেন। তারপর ঐ উচ্ছিষ্ট থালা-বাসনগুলি নিয়ে চললেন কলতলায়। কোনোদিন করেননি এরকম, নিজের বাসন কখনো মাজেননি আগে। অনঙ্গমোহন বাসন মাজতে বসলেন। বাসন মাজার কোনো মন্ত্ৰ নেই, কোনো স্তোত্র কিংবা ধ্যান নেই। অনঙ্গমোহনের মনে হল, এটাও এক ধরনের পূজা। অনঙ্গমোহন আবার উপরে উঠে আসেন। হাঁড়ি, কড়াই, ফেন গালার পাত্র, সবগুলো নিয়ে যান নিচের কলতলায়। ছাই মাখান হাঁড়িতে। হাঁড়িতে মমতা মাখান। ঠাণ্ডা জলে হাত কন কন করে। প্রাণে বড় তৃপ্তি হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *