রাজমালা - প্ৰথম ভাগ - উপক্রমণিকা
রাজমালা - দ্বিতীয় ভাগ
রাজমালা - তৃতীয় ভাগ

চতুর্থ অধ্যায় – চট্টগ্রামের প্রাচীন ও আধুনিক বিবরণ

চতুর্থ অধ্যায় – চট্টগ্রামের প্রাচীন ও আধুনিক বিবরণ

কর্নেল উইল ফোর্ড বলেন, “চট্টগ্রামের প্রাচীন নাম ‘পুষ্পগ্রাম।’ ইহা প্রাচীন ত্রিপুরা রাজ্যের একটি অংশ। যে তিনটি নগরী হইতে ত্রিপুরা, ত্রিপুরা নাম প্রাপ্ত হইয়াছে, চট্টল তাহার অন্যতম নগরী। কমলাঙ্ক (কুমিল্লা) চট্টল এবং বর্ম্মণকে (বা রসাং) এই তিনটি ‘পুর’ হইতে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি। এই ত্রিপুরাপতি ভগবান আশুতোষ ত্রিশূল দ্বারা বিনষ্ট করত সেই ত্রিশূল কমলাঙ্ক প্রদেশে সংস্থাপন করিয়াছিলেন।”

পুরাণ ও তন্ত্র সমূহে চট্টগ্রামের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। কবিতায় চট্টগ্রামের পরিবর্ত্তে “চট্টল” শব্দ লিখিত হইয়াছে। বোধ হয় চট্ট ভট্টজাতি চট্টলের প্রাচীন আধিবাসী, এজন্যই হিন্দুগণ ইহাকে চট্টগ্রাম আখ্যা প্রদান করিয়াছিলেন। কোন কোন লেখক চট্টগ্রাম নামকরণের অন্যরূপ ব্যাখ্যা করিয়াছেন। আমাদের বিবেচনায় তাহা সমীচীন নহে। আরব দেশীয় বিখ্যাত ভূগোলবেত্তা এদূসি ১১৫৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামকে ‘কর্ণবুল’ লিখিয়াছেন। ইউরোপীয় প্রাচীন ভ্রমণকারীগণ ॥৩০৭॥ ইহাকে ‘পোর্টগ্রেণ্ডো’ আখ্যা দ্বারা পরিচিত করিয়াছেন।

৮৭৫ শকাব্দে আরাকানের ইতিহাস চট্টগ্রামের প্রথম উল্লেখ দৃষ্ট হয়। ঐ অব্দে আরাকানপতি ষোলসিংহচন্দ্র চট্টগ্রাম জয় করত, প্রস্তর দ্বারা তথায় একটি জয়স্তম্ভ নির্মাণ করিয়াছিলেন।

১১৬৫ শকাব্দের একখণ্ড তাম্রশাসন পাঠে অনুমিত হয় যে, তৎকালে চন্দ্রবংশীয় দামোদর দেব নামক নরপতি চট্টগ্রামের রাজদণ্ড পরিচালন করিতেছিলেন। তিনি যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণ শ্রীপৃথ্বীধর শর্মাকে কামনপৌণ্ডিয়া ও কেতঙ্গপাল গ্রামস্থিত পঞ্চদ্রোণ ভূমি দান করিয়াছিলেন। শ্রীমদত্ত নামক এক ব্যক্তি দামোদর দেবের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। তাঁহার আদেশ অনুসারে প্রোক্ত অনুশাসন-পত্র লিখিত হইয়াছিল। দামোদরদেবের পিতৃপুরুষগণের নাম উল্লেখ করা হইয়াছে। দামোদর দেব কিম্বা তাঁহার উত্তরাধিকারী হইতে বর্তমান ত্রিপুর রাজবংশীয়গণ চট্টলের রাজদণ্ড বলক্রমে গ্রহণ করেন।

সুবিখ্যাত মূর পরিব্রাজক ইবন বতোতা ১২৭২ শকাব্দে বাণিজ্যোন্নত চট্টগ্রামে উপনীত হন। সুবিখ্যাত ॥৩০৮॥ মুসলমান পীরদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য মহাত্মা ইবন বতোতা স্বীয় জন্মভূমি আফ্রিকার উত্তর প্রান্তস্থিত টেঞ্জিয়ার হইতে খানবালিক (পিকিন) নগরী পর্য্যন্ত ভ্রমণ করিয়াছিলেন। চট্টগ্রাম নিবাসী সুবিখ্যাত পীর বদরুদ্দিন ১৩৬২ শকাব্দে পরলোক গমন করেন। ইহার ৯০ বৎসর পূর্বে ইবন বতোতা চট্টগ্রামে উপনীত হন। সুতরাং বদরের সহিত ইবনের সাক্ষাৎ হইয়াছিল বলিয়া বোধ হয় না। পরিব্রাজক ইবন বতোতা বলেন, বাঙ্গালার সুলতান ফকিরোদ্দিন (আবুল মোজাফল মৌবারক সাহ) সে সময়ে চট্টালাধিকারী ছিলেন, ঐ অব্দের অন্তভাগে আরাকান রাজ মেজদি চট্টালাধিকার করেন।

১৫৩৪ শকাব্দে চট্টলের আধিপত্য লইয়া এক তুমুল কাণ্ড হইয়াছিল। যবন ও মগদিগের ভূজগর্ব খর্ব করিয়া ত্রিপুরসেনানী রায় চয়চাগ কিরূপে বিজয় বৈজয়ন্তীতে পরিশোভিত হইয়াছিলেন, তাহা যথাস্থানে বর্ণিত হইয়াছে। ত্রিপুরেশ্বর মহারাজ ধন্যমাণিক্য এবং তাঁহার বিখ্যাত সেনাপতি বীরবর চয়চাগের মৃত্যুর পর মহারাজ দেবমাণিক্যকে জয় করিয়া হুসেনসাহের পুত্র নছরদ্দিন নছরৎ সাহ চট্টলাধিকার করেন।

রাস্তি খাঁর পুত্র পরাগল খাঁ সুলতান নছরদ্দিন নছরৎ সাহ কর্তৃক চট্টগ্রামের শাসন কর্তৃত্বে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। প্রকৃত ॥৩০৯॥ পক্ষে পরাগল খাঁ ও তৎপুত্র ছুটি খাঁ বাহুবলে চট্টগ্রাম হুসেনি বংশের করায়ত্ত হইয়াছিল। লস্কর পরাগলের আশ্রয়ে থাকিয়া ব্রাহ্মণকুলজ কবীন্দ্র পরমেশ্বর জৈমিনির ভারতসংহিতা অবলম্বন পূর্বক বাঙ্গালা মহাভারত রচনা করেন। সেনাপতি ছুটি খাঁর সহচর কবির শ্রীকরনন্দী মহাভারতের অন্তর্গত অশ্বমেধ পবর্ব বাঙ্গালা পয়ারাদি ছন্দে রচনা করিয়াছিলেন। তাঁহাদের গ্রন্থে পরাগল ও ছুটিখার বিশেষ পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। ফেণী নদীর তীরে পরাগল খাঁ স্বীয় বাস ভবন নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, অদ্যাপি “পরাগরপুরে” তাহার ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হইয়া থাকে। পরাগর যে বৃহৎ জলাশয় খনন করিয়াছিলেন, তাহা অদ্যাপি “পরাগলের দীঘি” বলিয়া পরিচিত হইতেছে।

সুবিখ্যাত পর্তুগিজ লেখক ডি বরোস বলেন, “পর্তুগিজদিগের চট্টগ্রামে পঁহুছিবার শতাধিক বৎসর পূর্বে, আরবদেশস্থ জনৈক ভদ্রলোক দুইশত অনুচরের সহিত চট্টগ্রামে উপনীত হন। রাজ্যের তদানীন্তন অবস্থা দর্শনে তাঁহার হৃদয়ে একটি দুরাশা জন্মে। তিনি সেই আশায় মুগ্ধ হইয়া একটি কুঠি খুলিয়া বাণিজ্য আরম্ভ করিলেন। ক্রমে তাঁহার সৈন্য সংখ্যা দুই হইতে পঞ্চশত হইল। বণিক গৌড়েশ্বর নিকট পরিচিত হইয়া একবার উড়িষ্যাপতির বিরুদ্ধে প্রেরিত হইয়াছিলেন। তৎপর তিনি বঙ্গেশ্বরের শরীর রক্ষক সেনাদলের অধ্যক্ষ ॥৩১০॥ পদে নিযুক্ত হন। তদনন্তর রাজার প্রাণবধ করিয়া সিংহাসন অধিকার করেন।” বাঙ্গালার স্বাধীন মুসলমান নরপতিগণের ইতিহাস পর্যালোচনা দ্বারা অনুমিত হয় যে, ডি বরোস, হয় হাসবি রাজ- শ্রেণীর ফিরোজ, নয় হুসন সাহকে লক্ষ করিয়াছেন। যদিচ আমরা হুসেন সাহের উন্নতির ইতিহাস অন্যরূপ অবগত আছি,[২] কিন্তু চট্টগ্রামের প্রতি হুসনি বংশের প্রবল অনুরাগ দর্শনে ডিবরোসের বর্ণনা সত্যের অতি নিকটবর্ত্তী বলিয়া অনুমান করিবার জন্য আমাদের হৃদয় নিতান্ত আগ্রহান্বিত হইয়াছে। বোধ হয় চট্টগ্রাম হইতেই হুসন সাহের উন্নতির সূত্রপাত হইয়াছিল। এজন্য তিনি বারংবার ত্রিপুর ও মগসৈন্য জয় করিয়া চট্টগ্রাম অধিকার করিবার জন্য বিশেষ যত্ন করিয়াছিলেন, তাঁহার যত্ন সফল হয় নাই। কিন্তু তাঁহার উপযুক্ত পুত্র নছরৎ সাহ চট্টগ্রামে বিজয়পতাকা উডডীন করিয়া স্বীয় পিতার প্রেতাত্মার পরিতোষ সাধন করিয়াছিলেন। চট্টগ্রামের ইতিহাস লেখক মৌলবি হামিদউল্লা খাঁ বাহাদুর বলেন যে, সুলতান নছরদ্দিন নছরৎ সাহ চট্টগ্রাম জয় করিয়া কিছুকাল তথায় বাস করিয়াছিলেন। তৎকালে পশ্চিমবঙ্গ নিবাসী ভদ্রবংশীয় কতগুলি হিন্দু ও মুসলমান রাজকার্য্যানুরোধে চট্টগ্রামে উপনিবেশ স্থাপন করেন। নছরৎ ॥৩১১। সাহের অত্যাচারে চট্টগ্রাম ও তৎসন্নিহিত দেশবাসী নিম্নশ্রেণীর হিন্দুগণ মুসলমানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।

সুলতান নছরৎসাহ যে স্থানে স্কন্ধবার সংস্থাপন করেন সেইস্থান ‘ফতেয়াবাদ’ আখ্যা প্রাপ্ত হয়। চট্টগ্রামের অপভ্রংশ ভাষায় অধুনা তাহা “ফইত্যাবাজ” নামে পরিচিত হইয়া থাকে। ফতেয়াবাদ মধ্যে নছরৎসাহ যে প্রকাণ্ড দীর্ঘিকা খনন করিয়াছিলেন, তাহা আদ্যাপি “নছরৎসাহর দীঘি” বলিয়া আখ্যাত হইয়া থাকে। নছরৎ সাহের নিৰ্ম্মিত ফতেয়াবাদের মসজিদ কালের করালগ্রাসে ধুলিস্মাৎ হইয়া গিয়াছে।

হুসনিবংশের নিযুক্ত শাসনকর্তার লস্কর পরাগল খাঁর পিতৃপুরুষগণ বহুকাল পূৰ্ব্ব হইতে চট্টগ্রামে বাস করিতেছিলেন। কব্বির শ্রীকরনন্দী, পরাগল খাঁ ও তৎপুত্র ছুটি খাঁ এবং তাঁহাদের বাসস্থানের সুন্দর বর্ণনা করিয়াছেন।৩।৩১২॥ গোয়ার পর্তুগজি গবর্ণর নুনো, ডা, চোনা চট্টগ্রামে বাণিজ্যাগার সংস্থাপন করিতে অভিলাষী হইলেন, তিনি পাঁচখানি জাহাজ, দুইশত সৈন্য এবং ডি, মেল্লোকে তাহার অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করিয়া (১৪৫৭) শকাব্দে ১৫৩৫ খ্রিঃ) চট্টলে প্রেরণ করেন। তৎকালে গৌড়েশ্বর মহাম্মদ সাহ চট্টলাধিকারী ছিলেন। ডি, মেল্লো চট্টগ্রামে উপনীত হইয়া ॥৩১৩। সুলতান মহম্মদ সমীপে উপঢৌকন প্রেরণ পূর্বক তাঁহার অনুমত্যনুসারে তথায় বাণিজ্যাগার সংস্থাপন করেন।

ত্রিপুরকুলতিলক বিজয়মাণিক্য চট্টগ্রাম অধিকার করেন। তাঁহার মৃত্যুর পর পুনর্বার মগ নরপতি বৃষভ চিহ্ন লাঞ্ছিত পতাকা চট্টগ্রামে সংস্থাপন করেন। তৎকালে চট্টলের অধিপত্য লইয়া ত্রিপুরেশ্বর ও আরাকানপতির।৩১৪॥ মধ্যে কিরূপ অবিরত কলহ চলিতেছিল তাহা বিখ্যাত ইংরেজ ভ্রমণকারী রলফ ফিছ বর্ণনা করিয়াছেন। সেই বর্ণনা পূর্বে উদ্ধৃত হইয়াছে।

মোঘল সম্রাট আকবরের সুবিখ্যাত মন্ত্রী আবুল ফজল স্বীয় আইন আকবরী গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে, “চট্টগ্রাম সমুদ্র তীরবর্ত্তী ও পর্বত মধ্যস্থিত একটি বৃহৎ বন্দর ইহা খ্রিষ্টান ও অন্যান্য বৈদেশিক বণিকদিগের একটি প্রধান বাণিজ্য স্থান। এই বন্দর মগরাজের অধিকারভুক্ত।” যে সময় আবুল ফাজেল চট্টল, আরাকানের শাসনাধীন ॥৩১৫॥ লিখিয়াছেন, ঠিক সেই সময়ে আকবরের সুবিখ্যাত রাজস্বমন্ত্রী রাজা তুডরমল্ল কুটিল রাজনীতি শাস্ত্রের উপদেশ অনুসারে সরকার চট্টগ্রাম স্বীয় জমাবন্দি ভুক্ত করিয়াছেন। রাজা তুডরমল্লের কৃত ‘ওয়াশলি তুমার জমাতে’ সরকার চট্টগ্রামের যেরূপ বর্ণনা দৃষ্ট হয়, তাহা অবিকল এস্থানে উদ্ধৃত হইল।

সরকার চট্টগ্রাম— ইহার সৈন্য সংখ্যা ১০০ অশ্বারোহী ও ১৫০০ পদাতিক। রাজস্ব ২৮৫৬০৭ টাকা ৩০ দাম। এই সরকারে ৭টি মাত্র মহাল। (চট্টগ্রামে পরগণা বিভাগ নাই )

১। মালগাঁও তালগঁও রাজস্ব ৫০৬০০০ দাম। (বোধ হয় মিরেশ্বরী থানার অন্তর্গত তালবাড়ীয়া হইবে)

২। চাটগাঁও। রাজস্ব ৬৬৪৯৪১০ দাম।

৩। দেওগাঁও। রাজস্ব ৭৭৫৫৪০ দাম। আনওয়াড়া থানার অধীন দেবগ্রাম বা দেওয়াং।

৪। সুলেমান ওরাক সেখপুর। রাজস্ব ১৫৭২৪০০ দাম।

৫। লবণের মাসুল। ৭৩৭৫২০ দাম।

৬। সহুরা। রাজস্ব ৫০৭৯৩৪০ দাম। বোধ হয় পটিয়া থানার অধীন সারুয়াখালি হইবে।

৭। নওয়াপাড়া। রাজস্ব ৭০৩৩০০ দাম। রাওজান থানার অধীন একখানি গণ্ডগ্রাম। পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, সুবিখ্যাত পাঠান ॥৩১৬॥ সম্রাট সেরসাহ আধুনিক ডবল পয়সার ন্যায় এক প্রকার তাম্র মুদ্রা প্রচার করেন, তাহার নাম দাম, ৪০ দামে সেরসাহী ১ টাকা হইত। রাজস্ব সেই নিয়মে লিখিত হইয়াছে, এজন্যই বোধ হয়, রাজা তুডরমল্ল সেরসাহের জমাবন্দি নকল করিয়া স্বীয় ওয়াশীল তোমরজমা প্রস্তুত করিয়াছেন।

১৫০৫ শকাব্দে সুবর্ণগ্রামের ভৌমিক ঈষা খাঁ মছনদে আলি আকবরের সেনাপতি সাহাবাজ খাঁ কর্তৃক অধিকার-চ্যুত হইয়া চট্টলে গমন করেন। তথায় তিনি একদল সৈন্য সংগ্রহ করত সুবর্ণগ্রামে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই সৈন্যদলের সাহায্যে তিনি মোগল সৈন্যও কোচবিহারের রাজাকে জয় করিয়াছিলেন। আমাদের বোধ হয়, রাজমালা গ্রন্থে অমর মাণিক্যের সেনাপতি ঈশা খাঁ কর্তৃক মোগল সৈন্য জয় (৭১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য) ও উল্লিখিত বর্ণনা একই ঘটনামূলক। ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় ইতিহাসে একই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে চিত্রিত হইয়াছে। সময় সম্বন্ধীয় অসামাঞ্জস্য এস্থলে ধৰ্ত্তব্য নহে[৪]।

১৫৩২ শকাব্দে আরাকান রাজ পর্তুগিজদের সাহায্যে ত্রিপুর সৈন্য জয় করিয়া চট্টগ্রাম অধিকার করেন। অমর ॥৩১৭॥ মাণিক্যের মৃত্যুর পর অন্য কোন ত্রিপুরা নরপতি চট্টগ্রাম অধিকার করিতে পারেন নাই। প্রকৃত পক্ষে এই সময় হইতে ত্রিপুরার অধঃপতনের সূত্রপাত হয়। অমর মাণিক্যের দুর্ভাগ্যের সহিত ত্রিপুরার সৌভাগ্যভাস্কর চিরকালের তরে অদৃষ্টাকাশের পশ্চিম প্রান্তে ঝুলিয়া পড়িল। চট্টগ্রাম রঙ্গভূমির এক অভিনেতার অভিনয় ক্রিয়া শেষ হইল।

চট্টগ্রাম স্থায়ীরূপে মগরাজের কুক্ষিগত হইল। তাহার শাসনজন্য একজন মগ শাসনকর্তা নিযুক্ত হইলেন। আরাকানপতি পর্তুগিজদিগকে তথায় সংস্থাপনপূর্বক তাহাদিগকে স্বীয় রাজ্যর সীমান্ত রক্ষণে নিযুক্ত করিলেন। কোন কোন ব্যক্তি রাজ সরকার হইতে বেতন ও জায়গীর প্রাপ্ত হইলেন। তাহারা বলপ্রয়োগ দ্বারা নিঃস্ব প্রজা ও ইতর লোকদিগকে খ্রিষ্ট মন্ত্রে দীক্ষিত করিতে লাগিল। অনেকে দেশীয় রমণী সংযোগে এক নূতন জাতীয় জীবের সৃষ্টি করিল। সেই মন্ত্র দীক্ষিত ও মিশ্র পর্তুগিজ সন্তানগণ নিম্নশ্রেণীর বাঙ্গালি সংযোগে একটি নূতন জাতি সৃষ্টি করিল। ইহারাই “দেশী মগ” বা “রাজবংশী”। কিছুকাল মগদিগের অধীনে থাকিয়া চট্টলবাসী হিন্দু সন্তানদিগের একটি সংস্কার জন্মে; সেই সংস্কারের বশবৰ্ত্তি হইয়া অদ্যাপি তাহারা পার্শ্ববর্ত্তী অন্যান্য জেলা বাসীদিগকে “বংদেই” (বঙ্গদেশী) ॥৩১৮॥ বলিয়া থাকেন। এই সময় হইতে চট্টগ্রামে “মগী” শব্দের ব্যবহার আরম্ভ হয়।

মগ ও পর্তুগিজগণ সময় সময় ত্রিপুরাও পূর্ববঙ্গ আক্রমণ ও লুণ্ঠন করিয়া দেশবাসীদিগকে জ্বালাতন করিতেছিল। বঙ্গীয় শাসনকর্তা ইসলাম খাঁ মসহৌদি মগদিগের দণ্ড বিধান জন্য চট্টগ্রাম আক্রমণ করেন। পরাক্রান্ত শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া মগ শাসনকর্তা মুকুট রায় ১৫৬০ শকাব্দে মোগল সম্রাটের অধীনতা স্বীকার করেন। কিন্তু অল্পকাল অন্তে আরাকান রাজ চট্টলোদ্ধার করিয়াছিলেন।

সুলতান সুজার নিধন বাৰ্ত্তা শ্রবণ করত দুর্দান্ত আঔরংজেব মির জুম্লাকে অতি সত্বর আরাকান রাজ্য আক্রমণ করিবার জন্য আদেশ করেন। প্রতিকূল ঘটনা বশত জুম্না সম্রাটের আজ্ঞা অবহেলা করত কোচ ও আসাম রাজ্য আক্রমণ করেন। জুম্লার মৃত্যুর পর আঔরংজেবের মাতুল সায়েস্তা খাঁ বাঙ্গালার শাসন কর্তৃত্বে নিযুক্ত হন। তিনি বাঙ্গালায় পদার্পণ করিয়াই মগদিগের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। সায়েস্তা খাঁ পর্তুগিজদিগের জল রণ নৈপুন্য দর্শনে ওলন্দাজদিগের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন। কিন্তু বেটেভিয়া হইতে ওলন্দাজদিগের রণতরী সমূহ বাঙ্গালা পহুঁছিবার পূর্বেই সায়েস্তা খাঁ উৎকোচ ও প্রলোভন দ্বারা পর্তুগিজদিগকে বাধ্য করত চট্টগ্রাম অধিকার করেন। কার্যোদ্ধার ॥৩১৯॥ পূর্বক সায়েস্তা খাঁ আত্মপ্রতিশ্রুতি প্রতিপালনে পরাঙ্মুখ হইলেন। ১৫৮৮ শকাব্দে (১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে) চট্টগ্রাম রঙ্গভূমির দ্বিতীয় অভিনেতার অভিনয় ক্রিয়া শেষ হইল। আরাকাণপতি চট্টগ্রাম হারাইলেন। ক্রমে তাঁহার সৌভাগ্য ভাস্কর পশ্চিম গগণাঙ্গনে ঝুলিয়া পড়িল। ব্রহ্মসাম্রাজ্যের স্থাপন কর্তা মহাবীর আলংক্রার তৃতীয় পুত্র হদোফায়া ১৭০৪ শকাব্দে আরাকাণ রাজ্য বিনষ্ট ও অধিকার করেন।

তোডরমল্লের ওয়াশিল তোমরজমার ন্যায় সুজার জমা তোমরিতে সরকার চট্টগ্রামের রাজস্ব ২৮৫৬০৭ টাকা লিখিত আছে। প্রকৃত পক্ষে আকবরের ন্যায় সাহজেহান ও চট্টলের রাজস্ব ভোগ করিতে পারেন নাই। আঔরংজেবের রাজদণ্ডই সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে স্থায়িভাবে সংরোপিত হইয়াছিল। নবাব সায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম অধিকার পূর্বক ইহাকে “ইসলামাবাদ” আখ্যা প্রদান করেন। ১১২৮ বঙ্গাব্দে (১৭২২ খ্রিস্টাব্দে) নবাব মুরশিদকুলি খাঁ “জমা কামেল তোমরি” নামক বাঙ্গালার রাজস্বের হিসাব প্রস্তুত করেন। তিনি বাঙ্গালা ত্রয়োদশ চাকলায় বিভক্ত করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে সরকার চট্টগ্রাম “চাকলেই ইসালামাবাদ” আখ্যাদ্বারা পরিচিত হইয়াছে। এই চাকলায় ১৪৪টি মহাল ও তাহার রাজস্ব ১৭৬৭৯৫ টাকা লিখিত হইয়াছে। যথাঃ— ॥৩২০॥

চাকলে ইসলামাবাদ, সরকার চাটিগাঁ

হাবিলি চাটিগাঁ … ২১৮৫৬

জুগদা (জুগীদিয়া?) … ৩৫১৩৫

দক্ষিণকুল … ২১২৩৫

বন্দর আলমগীর নগর … ১৮৮২৫

ফতেয়াবাদ … ৫৯২৩

সদুনা … ৪০৫০

আরঙ্গা নগর … ২২৬৪

খর্দাখা জাহানাবাদ … ২৪১৯

তরাঘোড়া … ৩০৯১

দেবৎ (দেয়াং) … ৪৪০১

সারুয়াথলি … ২১৯৭

সায়রাতমহাল … ১৩১৭৭

নরসিংহআবাদ, সেনাবাদ প্রভৃতি ৬টি নিমক মহল … ১৩২১৮

১২৬টি ক্ষুদ্র মহল … ৩২৫১১

মোট … ১৭৬৭৯৫

নবাব মুরশিদকুলি খাঁ যে টাকা চট্টগ্রামের রাজস্ব অবধারণ করেন, তৎ সমস্তই চট্টগ্রামে ব্যয় হইত। একটি কপদকও তৎকালে চট্টগ্রাম হইতে মুরশিদাবাদের রাজকোষে প্রেরিত হইত না। ব্যয়ের তালিকা এস্থানে প্রদত্ত হইল।

॥৩২১। ৩৫৩২ জন পদাতিক সৈন্যের ব্যয় … ১৫০২৫১

ফৌজদার ও সেনাপতিগণের বেতনের পরিবর্তে জায়গীর … ২৪০০০

রণতরীর ব্যয় ও দুইজন গোলান্দাজ দারোগার জায়গীর … ২৫৪৪

মোট … ১৭৬৭৯৫

নবাব মুরশিদ কুলি খাঁর উত্তরাধিকারী নবাব সুজাউদ্দিনের সংশোধিত রাজস্বের হিসাবে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত রাজস্ব ১৫৮৩৪০ টাকা দৃষ্ট হইতেছে। ১৭১৩ খৃষ্টাব্দ হইতে চট্টগ্রামের ফৌজদার “থানাদারি” মহালের জায়গীরদারগণ হইতে একটি নূতন কর সংগ্রহ করিতে আরম্ভ করেন, তদ্বারা বার্ষিক ৬৮৪২২ টাকা লাভ হইত।

কালবশে মোগলেরা সৌভাগ্যের উন্নত শিখর হইতে অধঃপতিত হইলেন। প্রবল প্রতাপ বঙ্গেশ্বরগণ ব্রিটনবাসী বণিকদিগের ক্রীড়াপুত্তল হইলেন। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারিগণ মিরজাফরকে পদচ্যুত করিয়া মিরকাশেমকে বাঙ্গালার সিংহাসনে স্থাপন করেন। নবাব কাশেমালি খাঁ সৈন্যের ব্যয় নির্বাহ জন্য ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকে চট্টগ্রাম, বর্দ্ধমান ও মেদিনীপুর দান করেন। এই সময়ে চট্টগ্রামের বার্ষিক রাজস্ব (৩৩৫১৩৫ টাকা, ‘সেবন্দিখরচ’ ১২০০০ টাকা বাদে) ৩২৩১৩৫ টাকা ছিল। কিন্তু ॥৩২২॥ অল্পকাল মধ্যেই কোম্পানির কর্মচারিগণ চট্টগ্রামের রাজস্ব ৪৬৬৪২৮ টাকা স্থির করিয়াছিলেন। বারলেষ্ট সাহেব প্রথমত চট্টগ্রামের শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হন, তাঁহার সরদার (Chief) উপাধি ছিল।

১৬৮৪ শকাব্দে (১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে) চট্টগ্রামে একটি ভূমিকম্প হয়। অনেক স্থানে ভূগর্ভ বিদীর্ণ হইয়া জল ও কদম নিঃসৃত হইয়াছিল। সেই নিঃসৃত দ্রব্যের সহিত গন্ধকের গন্ধ পাওয়া যাইত। বান্দরবন নামক স্থানে একটি বৃহৎ নদী শুকাইয়া যায়। বাখরচং নামক সমুদ্র নিকটবর্ত্তী স্থানটি দুই শত লোক ও দারীদের গবতি পশুর সহিত সমুদ্র গর্ভে প্রবিষ্ট হইয়াছিল।

এই সময় আরাকানে রাষ্ট্রবিপ্লব উপস্থিত হয়। প্রাচীন রাজবংশকে বিনষ্ট করিয়া ব্রহ্মরাজ হদোফায়া আরাকান অধিকার করেন। মগগণ ক্রমে ক্রমে আরাকান পরিত্যাগ পূর্বক চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করিতেছিল।

১৬৯৮ শকাব্দে (১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে) পর্বতবাসী চাকমা সরদার শ্রীদৌলত খাঁ এবং রামখাওন নামক অন্য একজন মগ সদাগর ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন, তাহাদের দমন জন্য একটি যুদ্ধযাত্রার প্রয়োজন হইয়াছিল।

১৬৯৯ শকাব্দে কোম্পানিবাহদুর প্রথমত চট্টগ্রামের পর্বত মধ্যে “খেদা” করিয়া হস্তীধৃত করেন। সেই বৎসর ॥৩২৩। প্রায় দশসহস্র মগ আরাকান পরিত্যাগপূর্বক চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

১৭০৮ শকাব্দে (১৭৮২ খ্রিঃ অঃ) আরাকান ব্রহ্মরাজ কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বিজিত হয়। রাষ্ট্রবিপ্লবের সুযোগ প্রাপ্ত হইয়া আরাকানবাসী দস্যুগণ নিরীহ প্রজাবৃন্দের সর্বস্ব লুণ্ঠনপূর্বক চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আরাকানের শাসনকর্তা সেই সকল দুষ্ট লোকদিগকে প্রত্যার্পণ করিবার জন্য চট্টগ্রামের “সরদার” সাহেবকে বন্ধুভাবে পত্ৰ লিখিয়াছিলেন। ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। এই সকল ঘটনা হইতে ক্রমে একটি লোমহর্ষণ ঘটনার সূত্রপাত হইতে লাগিল। এক দিবসের সঞ্চিত মেঘে যে বৃষ্টি হয়, তাহাতে কখনই দেশ প্লাবিত হইতে পারে না।

১৭০৬ শকাব্দে ব্রহ্মরাজ তরফুমার স্বাক্ষরিত একখানি পত্র চট্টগ্রামের শাসনকর্তার হস্তগত হয়। উভয় রাজ্যমধ্যে অবাধ বাণিজ্য সংস্থাপন জন্যেই ব্রহ্মরাজ এই পত্র লিখিয়াছেন। উপসংহারে ব্রহ্মরাজ লিখিয়াছিলেন যে, “ইংরেজদিগের সহিত বন্ধুত্ব সংস্থাপনোদ্দেশে আমি ৩০ জন লোকদ্বারা ৪টি গজদন্ত প্রেরণ করিতেছি।”

ইন্ডিয়া গবর্ণমেন্টের ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞাপনী৬ পাঠে অবগত হওয়া যায় যে, চট্টগ্রামের ॥৩২৪॥ সীমান্ত স্থান হইতেও ব্রহ্মযুদ্ধের সূচনা হইয়াছিল। গবর্ণমেন্টের বিজ্ঞাপনী সমূহে আরাকানের শাসনকর্তার অত্যাচার কাহিনী বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু ‘১১৮৬ মগি’ অব্দের “৮ই জ্যৈষ্ঠ” তারিখে- আরাকাণের শাসন কর্তার লিখিত পত্রে কোম্পানির কর্মচারী ও চট্টগ্রামের বাঙ্গালি প্রজাবৃন্দের প্রতি দোষারোপ করা হইয়াছে। যাহা হউক এস্থানে আমরা ব্রহ্মযুদ্ধের ইতিহাস লিখিতে ইচ্ছা করি না। চট্টগ্রামের সীমান্ত স্থান হইতে যে, এই ভীষণ অনলক্রিয়ার সূত্রপাত হইয়াছিল, তাহাই এস্থলে উল্লেখ করা হইল।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারত রণাঙ্গনে যে লোমহর্ষণ নাটকাভিনয় হইয়াছিল, তাহা অনন্তকাল ইতিহাস পাঠকগণ স্মৃতিনয়নে দর্শন করিয়া বিস্মিত হইলেন। ১৮৫৭- ৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতবক্ষে যে অনল প্রজ্জ্বলিত হয় চট্টগ্রাম তাহা হইতে অব্যাহতি লাভ করিতে পারে নাই। সীমান্ত প্রদেশ রক্ষা করিবার জন্য চট্টগ্রামের গবর্ণমেন্টে তিনশত সৈন্য ছিল[৭]। তাহারা বিদ্রোহী হইয়া কারাগারের দ্বার ভঙ্গ করিয়া বন্দিগণকে মুক্ত ও রাজকীয় ধনাগার লুণ্ঠন করে।॥৩২৫॥ ধনাগার লুণ্ঠন করিয়া তাহারা ২৭৮২৬৭/৫ টাকা প্রাপ্ত হইয়াছিল। তৎপর সরকারি ফিলখানা হইতে তিনটি হস্তী লইয়া ত্রিপুরাভিমুখে যাত্ৰা করে। এই সংবাদ শ্রবণকরত কুমিল্লাবাসী কর্তৃপক্ষগণ ভয়ে ম্রিয়মাণ হইলেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত তাহারা কুমিল্লার পথ পরিত্যাগপূর্বক ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার পথাবলম্বন করিয়াছিল। তাহারা মহারাজের আদেশ শ্রবণে ত্রিপুরা রাজ্য পরিত্যাগপূর্বক কাছাড়াভিমুখে গমন করে। গমনকালে বিদ্রোহীগণ পথিপার্শ্বস্থ জমিদারদিগের গৃহে উপস্থিত হইয়া খাদ্য যাচ্ঞা করিত। দুর্বল ও নিরস্ত্র ভূস্বামিগণ তাহাদিগকে এক বেলার খাদ্য প্রদানপূর্বক স্ব-স্ব পরিবারের প্রাণরক্ষা করিত। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া শ্রীহট্টের পদাতিকদলের নায়ক মেজর বিং বলিয়াছিলেন, “হারামজাদা লোককে (সেই সকল জমিদারগণকে) ফাঁসী দেনে হোগা”।

লাতু নামক স্থানে শ্রীহট্টের পদাতিকদলের সহিত বিদ্রোহীদিগের একটি যুদ্ধ হয়। বিদ্রোহীদিগের বন্দুকের গুলিতে প্রথমেই মেজর বিং পরলোক গমন করেন। মেজর সাহেবের মৃত্যুর পর সুবাদার অযোধ্যা সিংহ জয়লাভ করিয়াছিলেন। লাতুর যুদ্ধের পর বিদ্রোহীগণ পূর্বাভিমুখে গমন করে। মোহনপুর ও বিননকান্দী নামক স্থানে ব্রিটিশ ॥৩২৬॥ সৈন্যের সহিত বিদ্রোহীদিগের দুইটি যুদ্ধ হয়। উভয় যুদ্ধে বিদ্রোহীগণ পরাজিত হইয়াছিল। মণিপুরের রাজকুমার চাইহুম (নরেন্দ্রজিৎ)৮ এই সময়ে কাছাড়ে বাস করিতেছিলেন। তিনি দুরাশায় মুগ্ধ হইয়া স্বীয় সহচরবর্গকে লইয়া, হতাবশিষ্ট বিদ্রোহীদলের অঙ্গপুষ্টি করিলেন। তখন মণিপুরের রাজাসন তাহাদের প্রধান লক্ষ হইল। মহারাজ চন্দ্রকীর্ত্তি এই সংবাদ শ্রবণমাত্র চারিশত সৈন্য তাহাদিগের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিলেন। ঘোর সংগ্রামে বিদ্রোহীগণ পরাজিত হইয়াছিল। হতাবশিষ্ট অল্পসংখ্যক বিদ্রোহী কুকিদিগের আশ্রয় গ্রহণ করে। এইরূপে চট্টগ্রামের বিদ্রোহী সেনাদলের বিনাশ সাধিত হয়।

চট্টগ্রাম মধ্যে একমাত্র নেজামপুর ব্যতীত অন্য কোন পরগণা নাই। বাঙ্গালার অন্যান্য জেলার ন্যায় এখানে জমিদারী বিভাগও নাই। চট্টগ্রামের অন্তর্গত স্থান সমূহকে অধুনা তিন ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে, যথা- তরফ, নওয়াবাদ তালুক এবং লাখেরাজ।

১। তরফ— চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্বে গবর্ণমেন্ট তিনবার চট্টগ্রামের অন্তর্গত সমস্ত ভূমি জরিপ করেন (১৭৬৭, ১৭৮২, এবং ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে)। সেই জরিপ অনুসারে নির্দ্দিষ্ট ॥৩২৭॥ পরিমাণ ভূমি এক একটি তরফ আখ্যা দ্বরা আখ্যাত হইয়াছিল। এক কিম্বা ততোধিক পরিমাণ তরফ এক এক জন ভূম্যধিকারীর সহিত বন্দোবস্ত করা যাইত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দ্বারা সেই সকল তরফদারবর্গ বঙ্গদেশীয় জমিদারগণের ন্যায় নিদ্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ জমায় চিরকালের নিমিত্ত ভোগাধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ৩৩৮১টি তরফের দশশালা বন্দোবস্ত হয়। লর্ড কর্ণওয়ালিসের কৃপায় ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই সকল তরফ চিরস্থায়ী হইয়াছিল। ধুনা কালেক্টরির তৌজিতে ৩৩৭৮টি তরফ দৃষ্ট হইয়া থাকে।

২। নওয়াবাদ তালুক— নওয়াবাদ শব্দের সরল অর্থ নূতন আবাদী ভূমি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর এবং নূতন প্রজাস্বত্ববিষয়ক আইন (১৮৮৫ সালের ৮ আইন) বিধিবদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্য্যন্ত গবর্ণমেন্ট চারবার চট্টগ্রামের ভূমির পরিমাপ করিয়াছেন (১৮০০, ১৮১৫, ১৮১৭-১৯, ১৮৩৫-৪৮ খ্রিস্টাব্দে)। এই সকল জরিপ দ্বারা গবর্ণমেন্ট দেখিলেন যে, তরফদারগণ জঙ্গল এবং অন্যান্য প্রকার ভূমি আবাদ করিয়া তরফের ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করিয়া লইয়াছেন। সুতরাং জরিপ দ্বারা গবর্ণমেন্ট সেই সমস্ত অতিরিক্ত ভূমির আবাদকারিগণের সহিত মেয়াদি তালুক স্বরূপে বন্দোবস্ত করেন। ইহাই নওয়াবাদ তালুক। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ৩২২৫৮টি নওয়াবাদ তালুক বন্দোবস্ত ॥৩২৮॥ হইয়াছিল। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ডেলহাউসি বারংবার জরিপ জমাবন্দী প্রভৃতি যন্ত্রণা হইতে মুক্তিলাভ করিবার অভিপ্রায়ে নওয়াবাদী তালুকগুলিকে মকররি জমায় বন্দোবস্ত করিতে অভিলাষ করেন। কিন্তু ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ১১ই জুলাইর পূর্ব পর্য্যন্ত একজন তালুকদারও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য প্রার্থী হন নাই। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে যৎকালে লর্ড ডেলহাউসির আদেশ লিপি প্রত্যাহার করা হইল, তৎকালে দৃষ্ট হইল যে ২৯৭৪৩টি নওয়াবাদি তালুকের মধ্যে কেবলমাত্র ৩৬০টি তালুকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হইয়াছে। ভূকৈলাসের রাজবংশের পূর্বপুরুষ জয় নারায়ণ ঘোষালের নামে জয়নগর জমিদারী সৃষ্টি হইয়াছিল। তাহাও নওয়াবাদের অন্তর্গত।

৩। লাখেরাজ— লাখেরাজ দুই প্রকার, বহালী ও বাজেয়াপ্তি। বহালী লাখেরাজের অতিরিক্ত ভূমি বাজেয়াপ্ত হইয়া নওয়াবাদ তালুকের রাজস্বের অনুসারে বন্দোবস্ত হইয়াছে। প্রোক্ত ভূম্যধিকারিগণের অধীনে প্রধানত পত্তনি, তালুক এবং এমাম নামক মধ্যবর্তী স্বত্ব দৃষ্ট হয়।

বাণিজ্য— চট্টগ্রাম চিরবাণিজ্যোন্নত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বণিকগণ প্রাচীনকাল হইতে বাণিজ্যার্থ এস্থানে উপস্থিত হইতেন। খ্রিস্টাব্দের দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে চট্টগ্রামের বাণিজ্য খ্যাতি ইউরোপ প্রচারিত হইয়াছিল। খৃঃ ॥৩২৯॥ চতুৰ্দ্দশ শতাব্দীতে তথায় চীন ও আরবদেশীয় বণিকগণের সমাগম হইত। পাশ্চাত্য বণিকগণ ইহাকে “পোর্ট গ্রেণ্ডা” আখ্যা দ্বারা পরিচিত করিয়াছেন। বিনীসদেশীয় বণিক লিঝার ফ্রেডিক খ্রিস্টাব্দের ষোড়শ শতাব্দীতে আমাদের দেশে আসিয়াছিলেন, তিনি বলেন পিণ্ড হইতে প্রচুর পরিমাণে রৌপ্য চট্টগ্রামে আমদানী হইয়া থাকে। তৎকালে চট্টগ্রামই বাঙ্গালা দেশ মধ্যে রৌপ্যের প্রধান বন্দর ছিল। ১৫৫২ শকাব্দে হার্বাট সাহেব চট্টগ্রামকে বাঙ্গালার বাণিজ্যোন্নত ও সমৃদ্ধিসম্পন্ন অন্যতম প্রধান নগরী বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। ১৫৬১ শকাব্দে মণ্ডলের লুই রাজমহল, ডোকা, ফিলিপাঠাম ও চট্টগ্রাম বাঙ্গালার সর্বপ্রধান নগর বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।

প্রাচীনকাল হইতে চট্টগ্রামে একপ্রকার অর্ণবতরী প্রস্তুত হইয়া আসিতেছে। সুতরাং অন্তর্বাণিজ্য অপেক্ষা চট্টগ্রামের বহির্বাণিজ্য ন্যূন ছিল বলিয়া বোধ হয় না।

অদ্যাপি বাণিজ্য বিষয়ে চট্টগ্রাম পূর্ববঙ্গে অদ্বিতীয়। অধুনা ইহার প্রধান পণ্যদ্রব্য তণ্ডুল। কিন্তু চট্টগ্রামে যে পরিমাণ ধান্য জন্মে, তদ্বারা চট্টগ্রাম কেবল আত্মরক্ষা করিতেই সক্ষম। তাহার ভগিনী ত্রিপুরা ও নওয়াখালী তাহাকে প্রচুর পরিমাণে তণ্ডুল যোগাইতেছে। চট্টগ্রামের ভূতপূর্ব কমিসনর হেঙ্কি সাহেব লিখিয়াছেন যে, তণ্ডুলের ॥৩৩০॥ প্রধান বাণিজ্যস্থানের বাণিজ্য কেবল ইউরোপীয় বণিকদিগের হস্তে ন্যস্ত রহিয়াছে। চট্টগ্রাম হইতে গড়ে প্রায় ৩০ লক্ষ মণ চাউল প্রতি বৎসর বিদেশে রপ্তানী হইয়া থাকে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার অন্তর্গত এদেন, সিংহল ও মালদ্বীপ প্রভৃতি স্থানসমূহে চট্টগ্রাম হইতে তণ্ডুল প্রেরিত হইয়া থাকে।

চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রদেশে দুই প্রকার কার্পাস জন্মে। ফুলসুতা ও বেণীসুতা। ফুলসুতা শ্বেতবর্ণ ও উৎকৃষ্ট। জুম প্রণালিতে চাষ হইয়া থাকে বেণীসুতা ধূসরবর্ণ। ইহার চাষ হয় না। ফুলের বিচির সহিত ইহার বিচি মিশ্রিত থাকায় অল্প পরিমাণ জন্মে। কাষ্টম হাউসের বিজ্ঞাপন পাঠে অনুমিত হয় যে, চট্টগ্রাম হইতে গড়ে ১৬ হাজার মণ কার্পাস প্রতি বৎসর বিদেশে প্রেরিত হইয়া থাকে।

চট্টগ্রামের পর্বত হইতে প্রায় ৪০ প্রকার কাষ্ঠ রপ্তানী হয়। তন্মধ্যে জারুলই সর্বোৎকৃষ্ট। ইহা দ্বারা জাহাজ ও নৌকা প্রস্তুত হইয়া থাকে।

প্রতি বৎসর প্রায় ৩০ লক্ষ মণ লবণ বিদেশ হইতে চট্টগ্রামে আইসে। যে চট্টগ্রাম চিরকাল পূর্ববঙ্গকে লবণ দান করিয়াছে, অদ্য তাহাকে লিবারপুলের নিকট লবণ ভিক্ষা করিতে হয়। অদৃষ্টদেব তোমাকে নমস্কার।

“লবণাম্বুরাশি বেষ্টিত যে স্থান,
জন্মে লিবারপুলে লবণ তাহার।” ॥৩৩১॥

এই জেলার উত্তর সীমান্তে ফেণী, ইহাকে ত্রিপুরা ও নোয়াখালী হইতে পৃথক করিতেছে। দক্ষিণ সীমান্তে নাভী নদী আরাকান ও চট্টগ্রামের সাধারণ সীমা রক্ষা করিতেছে। মধ্য দিয়া কর্ণফুলী ও শঙ্খ অনন্ত ভ্রুকুটী বিস্তার পূর্বক সমুদ্রে গমন করিতেছে।

চট্টগ্রাম প্রদেশ কি সুন্দর! একবার ইহার প্রকৃতির সৌন্দর্য সন্দর্শন করিলে আর ভুলিতে পারা যায় না। কেমন সুন্দর প্রকৃতির প্রাচীর স্বরূপ মেঘমালা সদৃশ শিখরমালা উত্তর দক্ষিণে ধাবিত। চট্টগ্রামের পূর্বদিকে অভ্রংলিহ শিখরশ্রেণী আর পশ্চিমদিকে বঙ্গোপসাগরের সুনীল ফেনীল অসীম অনন্ত জলরাশি।

পর্বতমধ্যে নানা প্রকার নির্ঝর, সুনির্মল জলোৎস ও লবণ-কূপ দৃষ্ট হইয়া থাকে।

চন্দ্রনাথ পাহাড় নামক উচ্চ পর্বতের সানুদেশে ভগবান শশাঙ্কশেখর কৈলাসনাথ অবস্থানপূর্বক প্রাচীন ত্রিপুরেশ্বর দিগের অনন্তকীর্ত্তি ঘোষণা করিতেছেন। অনতিদূরে কলুষনাশিনী পাতালগঙ্গা ভোগবতী চন্দ্রশেখরের পরির্য্যার্থ আবির্ভূত হইয়াছেন। তাহার প্রায় ৫ মাইল দূরে “বাডব” নামক কুণ্ডমধ্যে হুতাশন জলের সহিত ক্রীড়া করিতেছেন। সীতাকুণ্ড পর্বতমধ্যে এক সময়ে দুইটি জ্বালামুখী দৃষ্ট হইয়াছিল।৩৩২॥

অধুনা চট্টগ্রাম জেলার আয়তন ২৫৬৭ বর্গমাইল। ইহার অধিবাসী সংখ্যা ১২৯০১৬৭।

.

টীকা

১. চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীন প্রবাদ অনুসারে চট্টলাধিপতির কর্ণের কুণ্ডল পতিত হইয়াছে বলিয়া এই নদী ‘কর্ণফুলী’ নামে পরিচিত হইয়াছে। সম্ভবত এদেসর লিখিত ‘কর্ণবুল’ শব্দটি কর্ণফুলী হইতে উদ্ভুত।

২. মল্লিখিত “কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দীর মহাভারত” শীর্ষক প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য (সাহিত্য, ৫ম বর্ষ, পৃঃ ৮০০ )

৩. আমরা সেই প্রাচীন কবির সুললিত পদাবলী ইতিহাসে রক্ষা করা আমাদের কৰ্ত্তব্য কাৰ্য্য বলিয়া বিবেচনা করিতেছি। এই কবিশ্রেষ্ঠের গ্রন্থখানা যে মুদ্রিত হইবে এরূপ আশা দুরাশা মাত্র। সুতরাং তাহাতে যে ঐতিহাসিক তত্ত্ব প্রাপ্ত হওয়া যাইতেছে, তাহা রক্ষা করা ইতিহাস লেখকের কর্তব্য। যে হস্তলিপি পুস্তক হইতে নিম্নলিখিত অংশ উদ্ধৃত হইল, তাহা ১৫৭৬ শকাব্দের লিখিত, সুতরাং ইহার বয়ক্রম ২৪০ বৎসর হইয়াছে।

নরসত সাহা তাত অতি মহারাজা।
রামবৎ নিত্য পালে সব প্রজা।।
নৃপতি হুসন সাহ হয় ক্ষিতিপতি।
সামদান দণ্ড ভেদে পালে বসুমতী।।
তান এক সেনাপতি লস্কর ছুটিখান।
ত্রিপুরার উপরে করিল সন্নিধান।।
চাটিগ্রাম নগরের নিকট উত্তরে।
চন্দ্রশেখর পর্বত কন্দরে।।
চরেলোল গিরি তার পৈতৃক বসতি।
বিধি এ নির্মিল তাকে কি কহিব অতি।।
চারি বর্ণ বসে লোক সেনা সন্নিহিত।
নানাগুণে প্রজা সব সময়ে তথাত।।
ফেণী নামে নদী এ বেষ্টিত চারিধার।
পূর্বদিকে মহাগিরি পার নাহি তার।।
লস্কর পরাগল খানের তনয়।
সমরে নির্ভয় ছুটিখান মহাশয়।।
আজানুলম্বিত বাহু কমললোচন।
বিলাস হৃদয়ে মত্ত গজেন্দ্ৰ গমণ॥
চতুঃষষ্ঠি কলা বসতি গুণের নিধি।
পৃথিবী বিখ্যাত সে যে নির্মাইল বিধি।।
দৈত্য বলি, কর্ণ সম অপার মহিমা।
শৌর্য্যে বীর্য্যে গাম্ভীর্য্যে নাহিক উপমা।।
কপট নাহিক যে তার প্রসন্ন হৃদয়।
রামসম পিতৃভক্ত খান মহাশয়।।
তাহার যতগুণ শুনিয়া নরপতি।
সম্বাদিয়া আনিলেক কুতূহল মতি।।
নৃপতি অগ্রেতে তার বহুল সম্মান।
ঘোটক প্রসাদ পাইল ছুটিখান।।
লস্করী বিষয় পাইয়া মহামতী।
সামদণ্ড ভেদে পালে বসুমতী।।
ত্রিপুর নৃপতি যায় ডরে এড়ে দেশ।
পর্বতে গহ্বরে গিয়া করিল প্রবেশ।।
গজবাজী কর দিয়া করিল সম্মান।
মহাবন মধ্যে তার পুরীর নির্মাণ।।
অদ্যাপি ভয় না দিল মহামতি।
তথাপি আতঙ্কে বসে ত্রিপুর নৃপতি।।
আপন নৃপতি সন্তপিয়া বিশেষে।
সুখে বসে লস্কর আপনার দেশে।।
দিনে দিনে বাড়ে তার রাজসম্মান।
যাবত পৃথিবী থাকে সন্তপি তাহান।।
পণ্ডিতে পণ্ডিতে সভা খণ্ড মহামতী।
একদিন বসিলেক বান্ধব সংহতি।।
শুনন্ত ভারত তবে অতি পূৰ্ণ কথা।
মহীমুনি জৈমিনী কহিল সংহিতা।।
অশ্বমেধ কথা শুনি প্ৰসন্ন হৃদয়।
সভাখণ্ডে আদেশিল খান মহাশয়।।
দেশ ভাষায় এই কথা রচিল পয়ার।
সঞ্চারৌক কীৰ্ত্তি মোর জগত সংসার।।
তাহান আদেশ মান্য মস্তকে ধরিয়া।।
শ্রীকর নন্দী কহিলেক পয়ার রচিয়া।

৪. Long’s Analysis of Rajmala. (J.A.S.B.Vol. XIX. P.549) and Wise’ Bara Bhuyas of Eastern Bengal (J.A.S.B.Vol. XLII. Part 1. P. 213.)

৫. Bernier’s Travels in the Magul Empire Vol-1, P. 203.

৬. Despatch from the Governor General in Council to the secret Committee of the Court of Director : Dated the 23rd February, 1824.

৭. 2nd, 3rd, and 4th Companies of the 34th Regiment Native Infantry.

৮. চাইহুম অর্থ তিন বৎসর। প্রবাদ অনুসারে নরেন্দ্রজিৎ তিন বৎসর মাতৃগর্ভে বাস করিয়াছিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *