ঘোড়া-গমের কথা

ঘোড়া-গমের কথা

একরকম গম আছে যা মানুষে বড়ো খায় না, কিন্তু গোরুঘোড়া খুব খায়। তাকে অনেকে ঘোড়া-গম বলে থাকে। ঝড়ের পর যদি ঘোড়া-গমের খেতের মধ্যে দিয়ে যাও, দেখবে সব কালোয় কালো, যেন আগুনে জ্বলে গেছে। চড়াই পাখির কাছে যেমন যেমন শুনেছি, তেমন বলছি, কেন এবং কিসের জন্য এমন হয়। শস্য আর ঘোড়া-গমের খেতের পাশে একটা বুড়ো উইলোগাছ ছিল, কারণটা চড়াই তার কাছে শুনেছিল। ফল ধরেছে বলে শস্য গাছ কি খুশি আর কৃতজ্ঞও বটে, যতই তাদের শীষগুলি ভরে ওঠে ততই তারা মাটির দিকে মাথা নোয়ায়। ঘোড়া-গমের বেজায় দেমাক, সদাই মাথা উঁচু করে খাড়া হয়ে থাকে। সে বলে, “শস্যের যত সোনালি শীষ, আমারও তত সোনালি শীর্ষ, তার উপর দেখতে আমি ঢের ভালো। আমার ফুলগুলো আপেলফুলের মতো সুন্দর। বলি, ওহে বুড়ে উইলো, আমার চাইতে সুন্দর কাউকে দেখেছ কখনো ? ” শুনে উইলোগাছ খালি মাথা নাড়ল । ঘোড়া-গম বলল, “আরে, এ গাছটা কি বোকা রে! এত বুড়ো-হাবড়া, ওর মগজের মধ্যে ঘাস গজিয়েছে !”

ঠিক সেই সময় ভীষণ ঝড় উঠল। খেতের যত ছোটো ফুল ছিল, তারা সবাই পাপড়ি মুড়ে, ক্ষুদে-ক্ষুদে মাথাগুলো নোয়াল। ঘোড়া-গম দেমাক করে খাড়া রইল ।

সব ফুলরা বলল, “আমাদের মতো মাথা নিচু করে থাক গো।” ঘোড়া-গম বলল, “মোটেই না।” বুড়ো উইলোগাছ বলল, “ফুলের পাপড়ি মুদে, পাতা মুড়ে থাক। বিদ্যুতের ঝলকানির দিকে তাকিও না, তা হলে একেবারে স্বর্গের মধ্যিখানটা দেখতে পাবে! বিদ্যুৎ দেখলে মানুষরা পর্যন্ত অন্ধ হয় আর আমরা হলাম গিয়ে মাটির আগাছা, মাথা তুলে দেখার মতো আম্পর্ধা করলে, আমাদের কি অবস্থা হবে বল দিকিনি ?”

তাকে ধিক্কার দিয়ে ঘোড়া-গম বলল, “মাটির আগাছা বৈকি ? আমি মাথা তুলে ভগবানের স্বর্গের মধ্যিখানটা দেখে নেব ।” গর্ব ভরে ঘোড়া-গম আকাশের দিকে চাইল। আমনি মনে হল সমস্ত পৃথিবীটাতে বুঝি আগুন লেগেছে। ঝড় থেমে গেলে, বৃষ্টির পর চারদিকটাকে কি মধুর মনে হ’ল! ফুলরা আবার নিশ্বাস ফেলে বাঁচল, শস্যগাছ বাতাসে ভুলতে লাগল। শুধু ঘোড়া-গমের গাছগুলো শুকিয়ে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে মাটিতে লুটিয়ে রইল। বাতাস লেগে বুড়ে উইলোগাছ মাথা নাড়তে লাগল, অমনি মস্ত এক ফোঁটা বৃষ্টির জল তার পাতা থেকে ঝরে মাটিতে পড়ল । মনে হল যেন গাছটা কাঁদছে।

চড়াইরা চিপ চিপ করে বলল, “ও কি, কাঁদছ কেন ? ফুলপাতার সুগন্ধ পাচ্ছ না ? তবে কেন কাঁদছ বুড়ে উইলো গাছ ?” তখন উইলোগাছ ওদের কাছে খুলে বলল ঘোড়াগমের কি দশা হয়েছে। একদিন সন্ধেবেলায় চড়াইদের কাছে গল্প শুনতে চেয়েছিলাম, তারা আমাকে যা বলেছিল, তাই এখন তোমাদের কাছে বললাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *