ঘাটবাবু – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ঘাটবাবু – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

রাত কটা বাজে তার ঠিক নেই। অনেকক্ষণ ধরেই একটানা বৃষ্টি পড়ছে। ঝমঝমে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে নেশা লেগে যায়।

বাসু হালদারের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে বার বার। একটা অস্বস্তি হচ্ছে কিরকম। দরজার বাইরে দুটো কুকুর এসে গুটি-শুটি হয়ে শুয়ে কুঁই কুঁই শব্দ করছে। বাসু হালদার চেঁচিয়ে উঠলে, এই যাঃ যাঃ।

যদিও সে ভাল করে জানে, কুকুর দুটো এই সামান্য ধমক শুনে মোটেই যাবে না। এই বৃষ্টির মধ্যে যাবেই বা কোথায়।

বাসু হালদার জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল একবার। বৃষ্টি থামবার কোন লক্ষণ নেই। আজ আর কেউ আসবে না মনে হয়! বাসু হালদার আজ সন্ধের মুখেই বাড়ি চলে যাবে ভেবেছিল। সেই সময়ই মুখিয়া ডোমটা এক ছিলিম গাঁজা সেজে এনে বলেছিল, একটু পেসাদ করে দেবেন নাকি, বড়বাবু!

মুখিয়ার মুখে বড়বাবু ডাকটা বড় মধুর লাগে। এই দুনিয়ায় বাসু হালদারকে খাতির করে না কেউ, শুধু মুখিয়াই তাকে ওই নামে ডাকে। মুখিয়াটাও যেন কোথায় চলে গেছে। এই সময় আর এক ছিলিম গাঁজা পেলে মন্দ হত না।

বাসু হালদার এই মফস্বল শহরের ঘাটবাবু। তার কাজ হচ্ছে, কেউ মড়া নিয়ে এলে ডাক্তারের সার্টিফিকেট আছে কিনা দেখে নেওয়া আর মিউনিসিপ্যালিটির দুটি টাকা ফি আদায় করা।

একটা পা ল্যাংড়া, জীবনে আর কোন চাকরি জুটত না। অনেক বছর আগে রসরাজ গুহ যখন এখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি দয়া করে বাসুকে এই কাজটা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে বাসু হালদারকে সারা দিন রাত শ্মশান-ঘরের ছোট্ট অফিস ঘরটাতেই পড়ে থাকতে হয়। একটা পেট চলে যায়।

এরকম বৃষ্টি বাদলার দিনে বাসু হালদার বাড়ি চলে গেলে কোন ক্ষতি ছিল না। কেউ এলেও তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনত নিজের গরজে! কিন্তু মিউনিসিপ্যালিটির বর্তমান চেয়ারম্যান পঞ্চানন দাস সরকারের মায়ের এখন-তখন অবস্থা। যে-কোন সময় টেঁসে যেতে পারে। ওরা বাড়ির মড়াকে বাসি করে না, যদি এই মাঝ রাত্তিরেও এসে হাজির হয়, আর তখন যদি বাসু হালদারকে না পায়—

বাসু হালদার একটা বিড়ি ধরাল। চেয়ার-টেবিলে বসে ঘুমোলে দোষ নেই। কিন্তু ঘুম যে আসছে না। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক। ইস, যদি মুখিয়াটাও থাকত এ সময়ে।

হঠাৎ অস্পষ্টভাবে মানুষ জনের আওয়াজ শোনা গেল। বল হরি, হরি বোল-ই হাঁক দিচ্ছে। তা হলে চেয়ারম্যান সাহেবের মা গত হয়েছেন। আহা, কি মাতৃভক্তি চেয়ারম্যান সাহেবের, এই বৃষ্টির মধ্যেও পোড়াতে আনতে ভোলেনি। চিতা জ্বলবে কি করে, সে খেয়াল নেই। যাই হোক, ওরা বড়লোক, বেশ খরচ-খরচা করবে মনে হয়। বাসু হালদারের কি আর কিছু জুটবে!

বাসু হালদার ঘর থেকে বেরুবার আগেই কয়েকজন লোক একটা মড়ার খাটিঁয়া ঘাড়ে করে তার ঘর ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল চুল্লীর দিকে।

বাসু হালদার বুঝল, এ তো চেয়ারম্যান সাহেবের মা নয়! তাহলে সঙ্গে অনেক লোক থাকত। অনেক চ্যাঁচামেচি, অনেক ধূমধাম। তাহলে আর ব্যস্ততা দেখিয়ে কি হবে।

সে নিজের টেবিলে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকবে। আসুক না, ওরাই আসুক! ঘাটবাবুর অফিসে আর কোন কর্মচারী না থাকলেও, সেই তো বড়বাবু।

বেশ কিছু সময় কেটে গেল, ওরা কেউ এল না। আর কোন সাড়া শব্দও পাওয়া গেল না! কৌতূহলে বাসু হালদার বেরিয়ে এল।

বৃষ্টি অকস্মাৎ ধরে এসেছে। আকাশে গুঁড়ি গুঁড়ি করে পড়ছে, তবে আর বেশিক্ষণ চলবে না বোঝা যায়। কয়েকজন লোক মড়ার খাটটা এক পাশে নামিয়ে রেখে নিজেরাই কাঠ সাজাতে শুরু করেছে।

বাসু হালদার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললে, কি ব্যাপার?

লোকগুলো একটু চমকে উঠল। তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে বলল, ডোম-টোম কাউকে দেখছি না, তাই আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা করে নিচ্ছি।

বাসু হালদার ভুরু কুঁচকে বলল, ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন মানে? মড়া রেজিস্ট্রি করতে হবে না?

—মড়া রেজিষ্ট্রি? সে আবার কি?

—বাঃ, যে-কোন মড়া এনেই আপনারা পুড়িয়ে ফেলবেন! একি বেওয়ারিস কারবার নাকি?

লোকটি এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে, রেজিষ্ট্রি করে নিন। ক’টাকা লাগবে। লোকটি জামার পকেট থেকে ফস করে দু’খানা দশ টাকার নোট বার করে দিল। অন্য লোকগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

বাসু হালদার সবার দিকে একবার চোখ বুলোল। কেউই তার চেনা নয়। এরকম ছোট শহরে এতগুলো অচেনা লোক!

বাসু হালদার মুখ ঘুরিয়ে মড়ার খাটের দিকে তাকাল। একটি যুবতী মেয়ের মুখখানা শুধু দেখা যাচ্ছে। শরীরটা একটা মোটা কম্বল দিয়ে ঢাকা।

শ্মশানের ঘাটবাবুর দয়া মায়া থাকতে নেই। মড়া দেখতে দেখতে চোখ পচে গেছে। তবু বাসু হালদার জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছিল?

—কলেরা। হঠাৎ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। —আহা!

লোকটি খুব দুঃখের ভাব দেখিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল। তারপর দশ টাকার নোট দু’খানা এগিয়ে দিয়ে বললে, নিন! বৃষ্টি ধরে এসেছে, চটপট কাজ শুরু করে ফেলি।

বাসু হালদার বলল, ডোম না এলে আপনারা কি করবেন? চিতা সাজানো কি সহজ কথা?

—ও আমরা ঠিক ব্যবস্থা করে ফেলব।

বাসু হালদার এবার গম্ভীরভাবে বলল, কই, দেখি ডাক্তারের সার্টিফিকেট!

যে লোকটি এগিয়ে এসে কথা বলছিল, সে একটু যেন চমকে গেল। তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিরে ডাক্তারের সার্টিফিকেটখানা কার কাছে রাখলি?

একজন বলল, সেটা বোধ হয় ফেলে এসেছি!

বাসু হালদার কড়া হয়ে বলল, ফেলে এসেছেন? জানেন না শ্মশানে মড়া নিয়ে এলে সার্টিফিকেট আনতে হয়? যান, এক্ষুনি নিয়ে আসুন!

—এই বৃষ্টির মধ্যে আবার যেতে হবে?

—নিশ্চয়ই।

—আপনি এই কুড়িটা টাকা রাখুন না!

—টাকার কথা পরে। আগে সার্টিফিকেট দেখি!

আর একজন পকেটে হাত দিয়ে বলল, ও, এই তো, সার্টিফিকেট আমার কাছেই রয়ে গেছে।

লোকটি পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে দিল, তাতে কিছু একটা লেখা ছিল, এখন জলে ভিজে একেবারে ঝাপসা হয়ে গেছে।

—এটা কি? এটা তো কিছুই পড়া যাচ্ছে না!

—জলে ভিজে গেছে, কি করব।

—তা বললে তো চলবে না। রুগী কিসে মরল, সেটা তো খাতায় লিখতে হবে।

—বললাম তো কলেরায়।

—আপনার মুখের কথায় তো হবে না। ডাক্তারের লেখা চাই।

লোকটি এবার এগিয়ে এসে বাসু হালদারের হাতে নোট দু’খানা গুঁজে দিয়ে বলল, কেন আর ঝামেলা করবেন? খাতায় যা হোক একটা কিছু লিখে নিন না।

বাসু হালদার হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, ও সব চলবে না।

বাসু হালদারের মানে লেগেছে। সে এই ঘাটের ‘বড়বাবু’। তার একটা মাত্র পেট, সে টাকা পয়সার পরোয়া করে না। তাকে ঘুষ দিতে আসা!

বাসু হালদার নিচু হয়ে মড়ার গা থেকে কম্বলখানা একটানে তুলে ফেলল। তারপরই একটা আর্ত চিৎকার করে ফেলল সে।

মৃত যুবতীর বুক ও সারা শরীরে জমাট বাঁধা রক্ত। বুক ও পেট ফালা ফালা করে চেরা। কেউ যেন একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে কুপিয়ে কেটেছে।

দৃশ্যটা দেখেই বাসু হালদার অদ্ভুত ধরনের ভয় পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তার মনে হল, এবার ওরা তাকেও কুপিয়ে কুপিয়ে কাটবে।

একটু অপেক্ষা করে বাসু হালদার দেখল, কেউ তাকে মারছে না। তখন সে মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাত সরাল। তাকিয়ে দেখল, আর কেউ নেই কোথাও। লোকগুলো দৌড়ে পালিয়েছে।

খুনের মড়া নিয়ে এসেছিল লোকগুলো। বৃষ্টির রাতে গোপনে গোপনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টায় ছিল। যদি চেয়ারম্যান সাহেবের মায়ের অসুখ না করত, তাহলে বাসু হালদার কিছু জানতেই পারত না।

দশ টাকার নোট দু’খানা পাশেই পড়ে আছে। সে দুটো যেন কাঁকড়া বিছে, ছুঁতেও ভয় করল বাসু হালদারের। তাড়াতাড়ি সে মৃতদেহটির ওপরে কম্বলটা টেনে দিল আবার।

এর পরেই বাসু হালদারের ইচ্ছে হল দৌড়ে পালাতে।

এক ছুটে যদি সমস্ত চেনা লোকের জগৎ থেকে দূরে পালিয়ে যাওয়া যেত!

কিন্তু এই বৃষ্টি কাদার মধ্যে খোঁড়া পায়ে সে কত দূরেই বা দৌড়ে যাবে। পালাবেই বা কোথায়?

তাছাড়া, পালাবে কেন, সে তো কোন দোষ করেনি ; আর, মুখিয়াটাও যদি এই সময় থাকত!

এখন বাসু হালদারের কর্তব্য হচ্ছে পুলিশে খবর দেওয়া। খুনের মড়া কারা এসে ফেলে রেখে গেছে শ্মশানে, পুলিশই এখন এর দায়িত্ব নিক।

কিন্তু থানা এখান থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে। এই দুর্যোগের রাতে তিন মাইল রাস্তা সে যাবে কি করে?

এখান থেকে আধ মাইল হেঁটে গেলে কেষ্টপুরের মোড় থেকে রিক্সা পাওয়া যায়। তবে, এত রাত্রে সেখানে কোন রিক্সাওয়ালা বসে থাকবে!

আঃ, কি যে করা যায় এখন। ভয়-ভাবনায় বাসু হালদার ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল।

বাসু হালদারের ঘোর ভাঙল একটা কুকুরের কুঁই কুঁই শব্দে। কুকুরটি মৃতদেহটির কাছে এসে গন্ধ শুঁকছে।

বাসু হালদার আবার ধাতস্থ হয়ে কুকুরটাকে তাড়া দিল, হুস্ হুস্!

কুকুরটা যদি আবার মড়াটাকে টেনে নিয়ে যায়, তা হলেই কেলেঙ্কারি!

কুকুরটাকে একটা চ্যালা কাঠ তুলে ছুঁড়ে মারতে, তবে সেটা একটু দূরে গেল।

শ্মশানে বাসু হালদার বহু রাত্রে একা কাটিয়েছে। কিন্তু কোনদিন তার এমন ভয় হয়নি।

মৃতদেহটির দিকে আর একবার তাকাল। শুধু মুখখানা দেখে কিছুই বোঝা যায় না। ফুটফুটে একটি যুবতীর মুখ। যেন একবার ডাকলেই জেগে উঠবে।

এখন তো এই মড়া ফেলে পুলিশ ডাকতে যাওয়ার আর প্রশ্নই ওঠে না। কুকুরে যদি মড়া টেনে নিয়ে যায় তাহলে আবার সে কোন্ ফ্যাসাদে পড়বে কে জানে। যে-লোকগুলো মৃতদেহটি এনেছিল, তারা সবাই অচেনা। বাসু হালদার পুলিশকে তাদের হদিশ কিছুই দিতে পারবে না। অন্য কোন জায়গা থেকে তারা এই খুনের মড়া নিয়ে এসেছে।

বাসু হালদার আর দাঁড়াতে পারছে না। আস্তে আস্তে বসে পড়ল মড়াটার খাটিয়ার পাশে। আবার ঝুপ্ ঝুপ্ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ইস্, ভিজে যাচ্ছে মেয়েটা। ঠিক যেন একটা জ্যান্ত মেয়ে, ঘুমিয়ে পড়েছে, আর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে তার মুখ।

নিজের অজ্ঞাতেই বাসু হালদার হাতটা বাড়িয়ে মেয়েটির মুখ থেকে জল মুছে দিতে গেল।

ফর্সা, সরল মুখখানা। এরকম কোন সুন্দরী যুবতীর এত কাছাকাছি কখনো বসেনি বাসু হালদার। যদি জীবিত থাকত মেয়েটি, তাহলে তার গালে এরকম হাত দিলে সে রেগে চেঁচিয়ে উঠত না?

আহা, সত্যিই যদি তাই হয়! বাসু হালদারের ওপর রাগ করার জন্যই মেয়েটি যদি বেঁচে ওঠে! সে যত ইচ্ছে রাগ করুক, তবু বেঁচে উঠুক। এরকম একটা সুন্দর মেয়েকে কোন্ পাষণ্ড খুন করল?

বাসু হালদার মেয়েটির গালে আবার হাত রাখল। কি নরম স্পর্শ! কতক্ষণ আগে মারা গেছে কে জানে, এত বৃষ্টিতে ভিজেছে, তবু তার গা-টা তো সে রকম ঠাণ্ডা নয়! যেন বেঁচে আছে!

বাসু হালদার মেয়েটির গালে একটা টোকা মেরে বলল, জেগে ওঠো, অনেকক্ষণ তো ঘুমোলে!

নিজেই হাসল বাসু হালদার। এ কখনো হয়! মেয়েটির শরীরে অন্তত পনের-কুড়িটা ছোরার আঘাত। শুধু একে খুন করেনি, কেউ যেন প্রতিহিংসা নেবার জন্যই এর সুন্দর শরীরটা ফালা ফালা করে কেটেছে।

কিছুক্ষণ খাটিয়ার পাশে বসে থেকে বাসু হালদার মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলল। তার নিঃসঙ্গ জীবনে এই যেন একমাত্র নারী, যার গালে হাত দিলেও কোন প্রতিবাদ করে না।

চুমু খেলে? একে একটা চুমু খেলে কি রাগ করবে?

এই চিন্তায় বাসু হালদার এমনই উতলা হয়ে উঠল যে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। সে মুখটা এগিয়ে এনে মেয়েটির ঠাণ্ডা রক্তহীন ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখল।

তখন মৃত মেয়েটি ফিসফিস করে বলে উঠল, আমার নাম অঞ্জলি সরকার। সোনাবাড়ি গ্রামের রতন নাগ আমাকে খুন করেছে। তুমি একটু দেখো—

ছিটকে খানিকটা দূরে পড়ে গিয়ে বাসু হালদার গোঁ গোঁ শব্দ করতে লাগল। অজ্ঞান হয়ে গেল অবিলম্বেই।

পরের দিন বাসু হালদারের জ্ঞান ফিরেছিল দুপুরবেলা। সে অনবরত চিৎকার করছিল, রতন নাগ, সোনাবাড়ির রতন নাগ!

পুলিশ রতন নাগকে গ্রেপ্তার করে তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করবার পর বাসু হালদার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *