ঘরছাড়া

এল সে জর্মনির থেকে
        এই অচেনার মাঝখানে,
    ঝড়ের মুখে নৌকো নোঙর-ছেঁড়া
               ঠেকল এসে দেশান্তরে।
পকেটে নেই টাকা,
        উদ্‌বেগ নেই মনে,
    দিন চলে যায় দিনের কাজে
        অল্পস্বল্প নিয়ে।
যেমন-তেমন থাকে
        অন্য দেশের সহজ চালে।
নেই ন্যূনতা, গুমর কিছুই নেই–
           মাথা-উঁচু
        দ্রুত পায়ের চাল।
একটুও নেই অকিঞ্চনের অবসাদ।
        দিনের প্রতি মুহূর্তকে
    জয় করে সে আপন জোরে,
পথের মধ্যে ফেলে দিয়ে যায় সে চলে,
        চায় না পিছন ফিরে–
    রাখে না তার এক কণাও বাকি।
খেলাধুলা হাসিগল্প যা হয় যেখানে
        তারি মধ্যে জায়গা সে নেয়
           সহজ মানুষ।
    কোথাও কিছু ঠেকে না তার
        একটুকুও অনভ্যাসের বাধা।
    একলা বটে, তবুও তো
        একলা সে নয়।
    প্রবাসে তার দিনগুলো সব
        হূহু করে কাটিয়ে দিচ্ছে হালকা মনে।
    ওকে দেখে অবাক হয়ে থাকি,
        সব মানুষের মধ্যে মানুষ
           অভয় অসংকোচ–
    তার বাড়া ওর নেই তো পরিচয়।
 
দেশের মানুষ এসেছে তার আরেক জনা।
        ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে
    যা-খুশি তাই ছবি এঁকে এঁকে
           যেখানে তার খুশি।
    সে ছবি কেউ দেখে কিম্বা না’ই দেখে
        ভালো বলে না’ই বলে–
           খেয়াল কিছুই নেই।
    দুইজনেতে পাশাপাশি
        কাঁকর-ঢালা পথ দিয়ে ওই
           যাচ্ছে চলে
    দুই টুকরো শরৎকালের মেঘ।
নয় ওরা তো শিকড়-বাঁধা গাছের মতো,
    ওরা মানুষ–
        ছুটি ওদের সকল দেশে সকল কালে,
           কর্ম ওদের সবখানে,
        নিবাস ওদের সব মানুষের মাঝে।
    মন যে ওদের স্রোতের মতো
        সব-কিছুরেই ভাসিয়ে চলে–
    কোনোখানেই আটকা পড়ে না সে।
        সব মানুষের ভিতর দিয়ে
    আনাগোনার বড়ো রাস্তা তৈরি হবে,
        এরাই আছে সেই রাস্তার কাজে
               এই যত-সব ঘরছাড়াদের দল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *