ঘনিষ্ঠ বন্ধু
বয়স যার চল্লিশ পেরিয়েছে, তার আর উত্তুরে হাওয়াকে অগ্রাহ্য করা চলে না। তাই গিগি মিয়ারের গায়ে আজ ঢাউস এক ওভারকোট, গলাবন্ধটা চোমরানো গোঁফের কায়দায় নাক পর্যন্ত তুলে দেওয়া, দুটো হাত মোটা ইংলিশ দস্তানার ভিতরে সুরক্ষিত।
কী নাদুসনুদুস চেহারা গিগির! মসৃণ, লালচে, আয়েশি, পুরুষ্টু! গাড়ি না-ডেকে ট্রামের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে তার মতো একটা দর্শনধারী মানুষ, এটা বেশ একটু আশ্চর্য। কিন্তু সেই আশ্চর্য ব্যাপারটাই নিত্য ঘটে এই লংগো টেভিয়ারে। এইখানে রোজ সে ট্রামে ওঠে, নামে গিয়ে ভায়া প্যাসত্রেঙ্গোতে, ‘কোর্টে দেই-কন্টি’র ঠিক সামনে। তার চাকরি ওই কোর্টে-দেই-কন্টিতেই।
জন্ম নাকি গিগির কোন এক কাউন্টবংশে। কিন্তু তালপুকুরে এখন আর ঘটিও ডোবে না। গিগির বাপই আভিজাত্যকে তিন সেলাম করে তালাক দিয়ে দিয়েছিলেন, গিগি মানুষ হয়েছে গরিবানা পরিবেশেই। ভালোই হয়েছে তার পক্ষে। সেইভাবে মানুষ হয়েছিল বলেই পাঁচ-কামরার ফ্ল্যাট তার কাছে এখন ভ্যাটিকান প্রাসাদ।
ট্রামের জন্য দাঁড়িয়ে আছে গিগি। কিন্তু এটা আর না-জানে কে যে, দরকারের সময় ট্রামের টিকি কোনোদিনই দেখতে পাওয়া যায় না! হয়তো আপনার কাছেই আসছিল সে, মাঝখানে বিদ্যুৎ কোম্পানির লোকেরা বজ্জাতি করে বিদ্যুৎ কেটে দিয়েছে। কিংবা হয়তো আপনারই অফিস যাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে বলে ব্যস্ততার দরুন বেচারি ট্রাম চাপা দিয়ে বসেছে অন্য কোনো অফিসযাত্রী অভাগাকে। না, ট্রামকে কেউ দোষ দেবেন না, ঠিক সময়ে যদিও সে আসতে পারে না সবসময়, তবু, ভেবে দেখুন, ট্রাম একটা উঁচুদরের সম্পদ আমাদের।
কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে বড্ড। আজকের উত্তুরে হাওয়াটা ঠিক বরফকুচির মতো গায়ে বিঁধে বিঁধে যাচ্ছে। গিগি মিয়ার একবার ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছে, একবার বাঁ-পায়ে। ওদিকে নদী দেখা যায়। দুই ধারে উঁচু বাঁধ, তার ভিতর ধোঁয়াটে জলস্রোতটাকেও কেমন যেন বিমর্ষ শীতার্ত বলে মনে হচ্ছে গিগির।
ডিং ডিং আওয়াজ একটা শোনা গেল এতক্ষণে। আসছে ট্রাম। দেবে লাফ গিগি, থামুক বা না-থামুক ট্রাম, এক লাফে উঠে পড়বে গিগি। চালাকি নয়, অফিসের হাজিরা খেয়াল-খুশির ব্যাপার নয়। নির্দিষ্ট ঘণ্টা মিনিট আছে তার। দেবে লাফ গিগি, দেবার জন্য তৈরি সে—
‘গিগি! ভাই গিগি—! গিগি গো!’
কে ডাকে হে? এমন সময়ে পিছু ডাকে কোন বেয়াক্কেল? লাফিয়ে ট্রামে ওঠার সময়ে অন্যমনা করে দেয়, কে হে সেই বেয়াক্কেল? গিগি লাফায়নি— এই যা রক্ষে! লাফ দিলে সে নির্ঘাত পড়ে মরত, আর সে-মৃত্যুর কারণ হত, পন্টে কাভুর পুলের উপর থেকে দু-হাত নেড়ে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসছে ওই যে লোকটা, ওই বেয়াক্কেল ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ নয়।
ট্রাম চলে গেল এবং গিগি দেখল, সে ধরা পড়েছে এক অচেনা ভদ্রলোকের বাহুবাঁধনে। অর্থাৎ চিনতে তাকে পারছে না গিগি এই মুহূর্তে। কিন্তু সে যে অতিঘনিষ্ঠ, অতিঅন্তরঙ্গ বন্ধু, তাতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না তার আলিঙ্গনের উষ্ণতা বিবেচনা করলে।
‘আরে, আরে, গিগি, ওভারকোট গায়ে চাপিয়ে কি আর বন্ধুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায়? অত দূর থেকেও তোমাকে চিনেছি আমি, একনজরেই চিনে ফেলেছি। কিন্তু এ কী? আরে, আরে, তুমি কি বুড়িয়ে যাচ্ছ নাকি? লজ্জা করে না, এরই মধ্যে চুল পাকিয়ে ফেললে? দূর থেকে তোমায় দেখে কী মনে হচ্ছিল জানো? মনে হচ্ছিল, তুমি যেন আমারই জন্য দাঁড়িয়ে আছ।’
কাষ্ঠহাসি হেসে গিগি বলল, ‘অফিসে যাচ্ছিলাম আমি—’
‘অফিস?’ অচেনা বন্ধু তিরিক্ষে মেজাজে বলে উঠল, ‘অফিসটফিসের নামও করো না বলে দিচ্ছি, ওসব ভুলে যাও আজকার মতো—’
‘অ্যাঁ? সে কী?’ জলে ডুবুডুবু মানুষের মতো হাঁইফাঁই করে গিগি, ‘অদ্ভুত লোক তো তুমি!’
‘অদভুদ? আমি যে অদ্ভুত তা আমার চেয়ে বেশি আর কে জানে? কিন্তু সে কথা থাকুক, এখানে এই সময়ে আমার খপ্পরে পড়ে যাবে, তা নিশ্চয় ভাবনি তুমি, কী বলো?’
আমতা আমতা করে গিগি বলে, ‘তা, তা—’
গিগির অবশ্য তা-তা করার দরকার কিছু ছিল না, বন্ধু একমুখে আসর গরম করে রেখেছে। ‘কাল সন্ধ্যায় এসেছি হে! তোমার দাদা আশীর্বাদ জানিয়েছেন তোমাকে। তোমার নামে একটা পরিচয়পত্রও দিতে চাইছিলেন আমার হাতে। আমি হেসে বাঁচি নে। বললাম, গিগিকে আমি আপনার চেয়ে বেশি জানি। আপনি তো স্রেফ ভাই ছাড়া কিছু নন, আমি হচ্ছি গিয়ে বন্ধু, যাকে বলে ঘনিষ্ঠ, একাত্মা বন্ধু, কী বলো ভাই গিগি, অ্যাঁ?’
গিগি নিজের স্মৃতিকে অভিশাপ দিচ্ছে, হিন্দুদের সমুদ্রমন্থনের মতো আলোড়ন তুলেছে সেই স্মৃতির সমুদ্রে। শুধু নামটাই বলে দিক ওই ফাঁকিবাজ স্মৃতি, আর কিছু তার কাছে দাবি নেই গিগির, শুধু এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামটা। নামটা মনে পড়লেই আর সব মনে পড়ে যাবে আপনা থেকে, কবে কোথায় কতখানি আলাপ সব—’
বন্ধু ততক্ষণ বলে চলেছে, ‘বন্ধু বলে বন্ধু! একসাথে ইশকুলে পড়েছি, কত যে মেরেছি তোমাকে আর কত যে মার খেয়েছি তোমার কাছে, ধারাবাহিক লিখলে দ্বিতীয় ইলিয়ড হয়ে যায়। তারপর! পদুয়ায়! বিশ্ববিদ্যালয়ে! হাঃ, হাঃ, হাঃ, কী সব কুকীর্তিই না-করেছি দু-জনে! রাতে জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়া, শহরের গলিতে গলিতে হানা দেওয়া, একদিন তো পুলিশে তাড়া করল চোর ভেবে। মনে আছে?’
ঘটনাগুলো মিলছে, কিন্তু লোকটার নাম কিছুতেই মনে পড়ছে না। কতই তো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল সেকালে! এক এক জন করে প্রত্যেকের চেহারা মনের মুকুরে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে গিগি। কোনো চেহারা স্পষ্ট ফুটছে, কোনোটা-বা ফুটছে না। কিন্তু যেটা ফুটুক, সমুখের এই মূর্তির সঙ্গে কোনো চেহারাটারই সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এ কী মুশকিল হল, বলো দেখি!
বক্তৃতার ঝড় হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে বন্ধু বলে উঠল, ‘কিন্তু আমার আক্কেলখানা কী, বলো তো হে! আমি কোথায় তোমার সঙ্গে লাঞ্চ খাব বলে ছুটে আসছি, আমার সোনার চাঁদ হোটেল ফেলে, আর তুমি নেমন্তন্নটা করতেই ভরসা পাচ্ছ না? না পাও নেই, বিনা নেমন্তন্নেই আমি খাব, খাবই— খাব লাঞ্চ তোমার সঙ্গে। কোথায় গেলা হয় এখন? সেই সেকেলে বাটাতেই নাকি? তাহলে চলো আর দেরি না-করে, বাটা তো এখান থেকে দূর কম নয়—’
‘না হে, বাটা-টাটা ছেড়েছি বহুদিন, এখন দস্তুরমতো সংযমী গেরস্ত আমি।’— বলে গিগি, ‘বাড়িতেই খাই সকাল-সন্ধ্যে, লাঞ্চটা অবশ্য অফিসেই ব্যবস্থা করে নিয়েছি। তা তুমি যদি সত্যিই খাবে আমার সঙ্গে, তাহলে বাড়িতেই চলো। রাঁধুনিকে বললেই সে চটপট রেঁধে ফেলবে দু-জনের খাবার। একটু গজগজ হয়তো করবে, রবিবারে ছাড়া লাঞ্চ তো তাকে হয় না রাঁধতে—’
বেশি দূর নয় লংগো টেভিয়ার থেকে। পাঁচতলার উপর ফ্ল্যাট। কড়া নাড়তে নাড়তে হাত ব্যথা হয়ে গেল। রাঁধুনি বলো দাসী বলো গৃহকর্ত্রী বলো— একমেবাদ্বিতীয়ং। বুড়িটা এ-সময়ে মনিবকে প্রত্যাশা করেনি। সে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল বোধ হয়। জেগে যখন উঠল, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে দরজা খুলতেই—
গিগি কোনো কথা বলবার আগেই তার বন্ধু হুকুম দিল, ‘তোমায় একটু কষ্ট করতে হবে বাছা। দু-জনের লাঞ্চ, খাই আমি একটু বেশি, আর ভালো জিনিস না-হলে মুখে তুলতে পারি নে— যাও তো, পেটে আগুন জ্বলছে, গিগিটা খামকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেড়ঘণ্টা কাটিয়ে দিলে কিনা!’
রাঁধুনি হতভম্ব। তবু কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ। লাঞ্চের অবস্থা তো বাড়িতে নেই, তবে ডিনারের উপকরণ কেনা রয়েছে, তারই কিছু কিছু এখন কাজে লাগিয়ে দেবে। তারপর ঘাটতি পূরণের জন্য আবার যদি দোকানে ছুটতে হয়, কী আর করা যাবে!
বসবার ঘরে গিয়ে বন্ধুকে চেপে ধরল গিগি, গল্পে গল্পে ওর নামটা ওর মুখ থেকেই বার করে নিতে হবে।
‘ওহে, আমার তো দেখছ শূন্য গৃহ, বে-থা করিনি, করবও না। তোমার অবস্থা কী? বিয়ে করলে কি না, ছেলেপুলে হল কি না, কোনো খবরই দাও না কোনোদিন। বলো এইবার, শুনি—’
‘আমি ভাই না-করে পারিনি। করেছি বিয়ে। একটা বেকায়দায় পড়ে ঘরে আনতে বাধ্য হয়েছি এক ভদ্রমহিলাকে। আরে, ভ্যালভার্ড! ভ্যালভার্ড! তার ব্যাঙ্কে তো কিছু পয়সাকড়ি রেখেছ তুমি না?’
‘শুধু পয়সাকড়ি রাখা কী বলছ, তার বাড়িতেও তো যাতায়াত ছিল আমার!’ বলে গিগি, ‘ওর স্ত্রী খুব মিশুক মহিলা, বলতে গেলে ভ্যালভার্ডের ব্যাঙ্কে যারা হিসাব খুলত তখন, তারা ওই মহিলার খাতিরেই খুলত। তার উপর একটা গায়ে-পড়া বোন ছিল ভ্যালভার্ডের, ট্যারা চোখ তার—’
হাঃ হাঃ হাঃ হোঃ হোঃ হোঃ— হাসির গররা বয়ে যাচ্ছে গিগির ছোট্ট বসবার ঘরে। তার বন্ধু হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে আর কী!
গিগি বিব্রত। সে কিছু বেফাঁস বলে ফেলেছে নাকি? তা না-হলে বন্ধু অত হাসে কেন? কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘চোখ তার ট্যারা নয় নাকি? অনেক দিনের কথা তো! আমার ভুলও হতে পারে—’
‘ট্যারা নয়?’ আর এক দফা অট্টহাসি, ‘ট্যারা তো বটেই, তার চেয়ে দ্রষ্টব্য হল তার নাক। সে-নাকের ফুটো এত মস্ত যে, তার ভিতর দিয়ে মগজের ঘিলু দেখা যায় মহিলার। কিন্তু আমি যে হাসছি, তা তার চোখের বা নাকের কথা মনে করে নয়, হাসছি এই ভেবে যে, ভ্যালভার্ডের বদমাইশির মুখের মতো জবাব আমি দিতে পেরেছি তার ওই বোনকে বিয়ে করে—’
‘বোনকে বিয়ে করে?’ লাফিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ল গিগি, ‘যার চোখ অত ট্যারা, আর যার নাক এত— এত—’
বন্ধু পাদপূরণ করল, ‘নাক নয়, নাকের ফুটো। এত মস্ত যে, হ্যাঁ, তাকেই আমি বিয়ে করে ফেললাম। তা নইলে টাকা যে দিচ্ছিল না ভ্যালভাড! একটা নতুন ব্যাবসা খুলবার জন্য কিছু অর্থের দরকার পড়ল, তা সে বদমাইশ বলে যে, ব্যাঙ্ক খুলেছি খয়রাতের উদ্দেশ্যে নয়, তোমার ঢের দেনা ব্যাঙ্কের কাছে, আর দিতে পারি না।’
‘তখন বুঝি—?’ কথা অসমাপ্ত রেখে জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে বন্ধুর পানে তাকাল গিগি।
‘হ্যাঁ, তখনই।’ জবাব দিল বন্ধু, ‘ভাবে বুঝলাম, ওর বোনকে বিয়ে করলেই টাকাটা আমি পাই। মহিলাটিকে বললাম, বিয়েতে আমি রাজি, কিন্তু বিয়ের ফলে আমাকে সে পাবে না, পাবে স্রেফ আমার নাম—’
নাম? গিগি সুযোগটা আঁকড়ে ধরল, ‘নাম! কী নাম?’
‘নাম? আমার নাম, আবার কী নাম!’ উত্তর দিল বন্ধু সহজসুরে, ‘নাম, মানে অ্যানথ্রোপোফেগাজ গোটবিয়ার্ড হর্নফুট— নরদেহধারী ছাগলদাড়ি— শিং— পা’
রাঁধুনি এসে বলল, ‘খাবার ঘরে খাবার দেওয়া হয়েছে।’ গিগি বন্ধুকে নিয়ে চলল, মনে মনে গজরাতে গজরাতে। কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না লোকটা, নাম বলছে না কোনোমতেই। থাকুক, খাওয়াটা হয়ে যাক আগে, নাম না-শুনে কোনোমতেই ছাড়ছে না গিগি। তাতে যদি একহাত মারামারিও হয়ে যায় তো যাবে।
খেয়ে উঠেই বন্ধু বলল, ‘আজ আর বসব না। তোমার দাদার সঙ্গে একসাথে একটা ব্যাবসা খুলেছি হে! তার সূত্রে এখানে আসা। আছি আরও দুই-চার দিন। অফিসফেরতা কবে যেতে পারবে বলো তো? একসাথে ডিনার খাব। কোথায় আছি? কেন? হোটেল কঁতিনাতালে! বলিনি যে, সোনার চাঁদ হোটেল আমার! তখনই তোমার বোঝা উচিত ছিল, ওইখানে সতেরো নম্বর ঘরে— আগে একটা ফোন করে দিও।’
‘কার নামে ফোন করব?’— আর মনের রাগ চেপে রাখতে পারল না গিগি, ‘সেই সকাল থেকে চেষ্টা করছি, তোমার নামটাই মনে করতে পারছি না। কী নাম তোমার?’
এবারকার হাসি আর অট্টহাসি নয়। মুচকি মুচকি হাসির রেখা অধরপ্রান্তে, ‘নামটা মনে করতে পারছ না, সেটা তোমার দোষ নয়। যেটা কোনোদিন জানোনি, সেটা মনে করবে কেমন করে?’
গিগি আকাশ থেকে পড়ল যেন, ‘কোনোদিন জানিনি? তার মানে? তবে কী—?’
‘না, কোনোদিন জানোনি আমার নামকে বা আমাকে। তবে জানবে, জানবে! চেষ্টা করতে থাকো যদি, একদিন নিশ্চয় জানবে। চলি ভাই—’
‘বলে যাও, বলে যাও’— বলে পিছনেই বুঝি ছুটতে যাচ্ছিল গিগি, হঠাৎ কী মনে করে থেমে গেল।
চেয়ারের উপরে আচ্ছন্নের মতো কতক্ষণ যে বসে ছিল গিগি, তা সে বলতে পারে না। রাঁধুনি এসে বৈকালিক সংবাদপত্রটা সমুখে রাখতে তবে সেই বেহুঁশ ভাবটা কাটল।
কাগজখানা তুলে নিতেই বড়ো বড়ো হরফের শিরোনামটা চোখে পড়ল প্রথমেই, ‘দারুণ দুর্ঘটনা! একান্ত আকস্মিকভাবে কোর্টে-দেহ-কন্টি বিধ্বস্ত! ধ্বংসস্তূপের নীচে কয়েক শত লোকের মৃতদেহ!’
ধাক্কাটা সামাল দিতে কয়েক দিন কাটল। তারপর গিগি একদিন ফোন করল হোটেল কঁতিনাতালে, ‘সতেরো নম্বর ঘরে যিনি আছেন তাঁর নামটি কী মশাই?’
‘সতেরো নম্বর ঘরে?’— উত্তর দিল হোটেল, ‘ঘরটাতে এক মাসের মধ্যে কোনো লোক বাস করেনি।’