ঘণ্টায় একশো – এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়

ঘণ্টায় একশো – এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়

ঝুপ করে সূর্য ডুবে যেতেই দৌড়োদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। পার্কের ঘণ্টা বাজতে লাগল ঢং ঢং, পিঁ-পিঁ করে হুইশল বাজিয়ে বেরিয়ে পড়ল পাহারাদারেরা, ‘কে কোথায় আছ, বেরিয়ে এসো, বেরিয়ে এসো। এইবার গেট বন্ধ হয়ে যাবে, তালাবন্ধ হবে। কেউ যদি ভেতরে থেকে যাও তাহলে সকাল হওয়ার আগে আর বেরোতে পারবে না।’ গাছের হনুমান, খাঁচার খরগোশ আর গিনিপিগ—যে যার জায়গায় সুটসাট সেঁধিয়ে গেল। হরিণরা আর হাঁসেরাও বুঝে গেল মুখ বাড়িয়ে ঘাস খাওয়া আজকের মতো বন্ধ হল। ‘হরিণকে ঘাস খাওয়াইবেন না’ নোটিসে ‘না’টা মুছে দিয়েছে কোনো দুষ্টু ছেলে, তারপর মনের আনন্দে সব খোকাখুকুরা ছুটে-ছুটে মাঠে যায়, মুঠো-মুঠো ঘাস তুলে আনে। নিয়ম নেই, তবু পাতাও ছেঁড়ে। আর হরিণরা পেটুকের মতো গলা বার করে সেগুলো ঝটপট মুখে চালান দেয়।

সূর্য ডোবার সঙ্গেসঙ্গেই এইসব মজা তখনকার মতো শেষ। ‘কেবলমাত্র দু-বৎসরের শিশুদের জন্য’ লেখা দোলনা থেকে চ্যাঁ-ভ্যা শোনা যায়, আর একটু বড়োদের ঘূর্ণি দোলনায় গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে সক্কলে—‘নামো, নামো’ বলে যত বকাবকি করেন বড়োরা, তারা কিছুতেই নামবে না। ‘আর একটু’ বলে কাতর আবেদন শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত যখন টর্চ আর লাঠি হাতে ইউনিফর্ম-পরা চৌকিদার হাজির হয়, আর জোরে জোরে লাঠি ঠুকতে থাকে, তখন ব্যাজার মুখ করে সবাই গুটিগুটি গেটের দিকে হাঁটা দেয়। সেখানে বেলুনওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা, আইসক্রিমওয়ালা, ভুট্টাওয়ালা আর বন্দুক ছুড়ে বেলুন ফাটানোর টার্গেট প্র্যাকটিসওয়ালাদের জমায়েত। কিছু ছেলেমেয়ে বাবা-মা’র হাত ধরে ঝুলোঝুলি করে, ‘বেলুন নেব, বন্দুক ছুড়ব, আইসক্রিম খাব—’ মোটমাট, বাড়ি এখনই ফিরব না।

মোটরবাইকে বসে এদের লক্ষ করছিল রাহুল। বেশ ইন্টারেস্টিং দৃশ্য। তার ছোটোবেলায়, মনে আছে, বাবার হাত ধরে লিলিপুলে বেড়াতে আসত, ছোট্ট সাঁকো, কোথাও পাহাড়, কোথাও লাল নীল পাখি—এদিকে ময়ূর ওদিকে পদ্মফুল ফুটে আছে। মনে হত যেন স্বর্গে পৌঁছে গেছে। কিন্তু গত সপ্তাহে দিদির বাচ্চাদের নিয়ে ওখানে গিয়ে তার তো চক্ষুস্থির! কোথায় গেল সেই সব ছবির মতো সাজানো জাপানি বাগান, যত্ন করে লাগানো গাছপালা, ছোটো করে ছাঁটা ঘাসে ঢাকা মাঠ। সব উধাও। কেবল ধুলো আর বড়ো বড়ো ঘাসের জঙ্গল। কিছু লোকজন সেখানে ঘোরাফেরা করছে বটে, কিন্তু তারা কেউই ছোটো নয়। চেহারাগুলোও সন্দেহজনক।

মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল রাহুলের। বিঙ্কু-মিঙ্কুদের কাছে একটু লজ্জাও পেতে হল, কারণ ক-দিন ধরে তাদের কাছে লিলিপুলের যা গুণগান করেছে, তাতে ওরাও অস্থির হয়ে উঠেছিল মা আর মামার ছোটোবেলার পার্কে যাওয়ার জন্য। ওদের পালামপুরে এসব কিছুই নেই। যখন লিলিপুলে গিয়ে সেইসব দৃশ্য দেখা গেল না, তখন অদম্য রাহুল ওদের বলল, ‘চল, তোদের আর-একটা দারুণ জায়গায় নিয়ে যাই।’

‘সেটা কোথায়, সেটা কোথায় মামু?’

‘কাছেই আছে, চল না। ভয় পেলে চলবে না কিন্তু!’

ভয় কাকে বলে, পাহাড়ে মানুষ হওয়া ছেলে-মেয়েরা জানে না। তারা ভাবল মামু বোধ হয় ওদের কোনও খাড়া পাহাড়ে ট্রেকিং করতে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় কোনো পাহাড় নেই, সেটা তাদের জানা ছিল না। তবে মায়ের কাছে লেকের গল্প শুনে শুনে তাদের মনে একটা ধারণা জন্মেছে যে, বৈকাল হ্রদের মতো এটাও একটা বিরাট হ্রদ, যেখানে কালো জলে ঢেউ খেলছে—এপার-ওপার দেখা যায় না, এদিক-ওদিক ছিটিয়ে আছে কিছু রং-বেরঙের পাল-তোলা নৌকা।

কিন্তু মামার পেছন-পেছন একটা ঘোরানো রাস্তা ধরে ওরা যেখানে এসে পৌঁছোল সেটা একটা ঝুলন্ত সাঁকো। ওপারে একটা ছোট্ট দ্বীপ। সেখানে মসজিদের মাথায় আলো জ্বলছে।

‘ওখানে কি জলদস্যুরা থাকে?’ রিঙ্কু জিজ্ঞেস করল রাহুলকে।

‘জলদস্যু? কী জানি। আগে তো থাকত না। চল, আমরা গিয়েই দেখি।’

একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে রেলিং। ওরা যখন মাঝপথে, তখন শুনল ওদিক থেকে আসা রাহুলেরই বয়সি দুটো ছেলে বলছে, ‘আরে, মাছগুলো কোথায় গেল?’

থমকে গেল ওরা সবাই। তাই তো, মাছগুলো গেল কোথায়? রাহুলও ভাবল। ভুলেই গিয়েছিল। ছোটোবেলায় যখন এখানে এসেছে, তখন কী রোমাঞ্চকর মনে হত সেইসব গম্ভীর চেহারার মাছগুলোকে। তাদের অন্ধকার ছায়া দেখা যেত কেবল, তারা মাঝে মাঝে মুখটা উঁচু করেই ডুব মারত। বাবা বলতেন, ‘ওদের অনেক বয়স। দেখছ না গায়ে কত শ্যাওলা জমেছে।’

রাহুল জিজ্ঞেস করত বিঙ্কুর মতো, ‘অ-নে-ক বয়স?’

‘হ্যাঁ, অনেক।’

‘কত? এক-শো বছর?’

‘দূর পাগল? এক-শো বছর আগে এই লেকই ছিল না। এটা তো মানুষের তৈরি করা। এটা খুঁড়ে সেই মাটি দিয়ে হল সাদার্ন অ্যাভেনিউ। আর খুঁড়তে খুঁড়তে পাওয়া গেল পুরোনো আমলের গোটা কতক কামান।’

রাহুল কয়েক মুহূর্তের জন্য ছোটোবেলায় ফিরে গিয়েছিল। এখন সে কলেজের ছাত্র, মোটরবাইক চালায়, কলকাতার ইতিহাস, ভূগোল তার মোটামুটি জানা। দুই ভাগ্নে-ভাগ্নিকে নিয়ে আজ সে কলকাতা চেনাতে বেরিয়েছে। কিন্তু এ তো মহামুশকিল! লিলিপুলের এমন ভগ্নদশা কে জানত—আর মাছেরাও উধাও!

‘কোথায় গেল মাছগুলো?’ নিজেকেই প্রশ্ন করল সে।

‘কী মাছ মামু? এখানে কী মাছ ছিল?’ মিঙ্কু তৎক্ষণাৎ কানখাড়া করেছে।

‘তুই যেমন বোকা! মাছ থাকে অ্যাকুয়েরিয়ামে—’ তার দাদা বিঙ্কু তাকে বোঝাবার চেষ্টা করল।

রাহুল কোনো কথাই বলল না। সে কেবল জলের মধ্যে যতদূর দৃষ্টি যায় খুঁজছে সেইসব কালো-কালো ছায়াদের—যাদের পিঠে অনেক বছরের জমানো শ্যাওলা, লেকের গভীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের বাস, অনেক বছর আগে দলবেঁধে ছোটো ছেলে-মেয়েরা তাদের দেখতে আসত।

‘কী খুঁজছেন দাদা? মাছ?’ একটি লোক উবু হয়ে বসে বিড়ি ফুঁকছিল দ্বীপের প্রথম ধাপের পাথরে।

‘হ্যাঁ। তাই। দেখছি না তো!’

‘কী করে দেখবেন? আছে নাকি তারা? সব খেয়ে ফেলেছে। কিমা বানিয়ে। হ্যা:।’ বলে লোকটা একটা তাচ্ছিল্যসূচক শব্দ করল।

‘কীসের কিমা মামু?’

‘মাছের কি কিমা হয়?’

বিঙ্কু-মিঙ্কুর সব ব্যাপারেই অসীম কৌতূহল। কিন্তু রাহুল একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। প্রথমে মনে হয়েছিল জিজ্ঞেস করে কারা কিমা বানিয়ে খেয়ে ফেলল? তারপর নিজেই ভাবল, এটা কী জিজ্ঞেস করার মতো কথা!

আবার বিফল মনোরথ হয়ে পিছু হাঁটা দিল তারা। এবারে নতুন পার্কটার দিকে। রাহুলদের ছোটোবেলায় এটা ছিল না সম্ভবত। কিংবা থাকলেও বাবা কখনো ওদের এখানে আনেননি। দেখাই যাক, এই পার্কে আজকালকার ছেলে-মেয়েরা যায় কিনা, আর গিয়েই বা কী করে!

পৌঁছোতে-পৌঁছোতে প্রায় রোদ পড়ে গেল। রাহুল মোটরসাইকেল থেকে বিঙ্কু-মিঙ্কুকে নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘দৌড়ে যা, এখনই গেট বন্ধ হয়ে যাবে।’ বলে নিজে বসে-বসে আকাশপাতাল চিন্তা করতে লাগল।

কিন্তু ততক্ষণে সূর্য ডোবার মুখে। ঘণ্টার শব্দ ভেসে এল। অনিচ্ছুক বাচ্চাদের নিয়ে বড়োরা গেট থেকে বেরিয়ে আসছেন। এদিকে অনেক গাড়ি, স্কুটার, দু-একটা মোটরসাইকেল পার্ক করা।

রাহুলের কানে এল, একটি বছর আড়াই-তিনের ছেলে প্রচন্ড আপত্তি জানাচ্ছে। সে কিছুতেই বাড়ি যাবে না। তার সঙ্গের লোকটির হাত ছাড়িয়ে সে ছুট দিয়েছে উলটো দিকে। খানিক পরে তাকে কাঁধে তুলে তার সঙ্গের লোকটি পাশ দিয়ে চলে গেলেন। রাহুল শুনল তিনি বলছেন, ‘জানো তো, অন্ধকার হওয়ার পর পার্কে কী হয়?’

‘কী হয়?’

‘বাঘ আসে।’

এই কথা শুনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিশুটি ঠাণ্ডা। তার হাত-পা ছোড়া বন্ধ হয়ে গেল। তারপর গভীর সম্ভ্রম সহকারে তিনি বলে উঠলেন, ‘অন্ধকার হয়ে গেলে পার্কে বাঘ আসে। জানো তো? টাবু বলেছে।’

টাবু বোধ হয় এই লোকটির নাম। ভালো কায়দা তো! রাহুল তার বুদ্ধির তারিফ করল মনে মনে। তবে বাঘের নাম করে অনর্থক ছোটোদের মনে ভয় ঢোকানো কী উচিত? বাঘ সম্বন্ধে এইভাবে অল্প বয়স থেকেই একটা অন্যরকম ধারণা গড়ে উঠবে—সেটা তো ঠিক নয়।

রাহুল ভাবল, একবার গিয়ে টাবু নামে সেই লোকটিকে একটু বলে আসে। কিন্তু তাদের আর দেখা গেল না। ততক্ষণে ছুটতে-ছুটতে এগিয়ে আসছে বিঙ্কু আর মিঙ্কু। ‘মামু, মামু আমরা হনুমান দেখেছি।’

‘বিঙ্কু ধমক দিয়ে বলল, হনুমান কী—বলতে হয় হনুমানজি।’

‘হনুমানজিকে ওরা কেন শিকলি দিয়ে বেঁধে রেখেছে?’

রাহুল কিছু না ভেবেই ফস করে বলে বসল, ‘তোরা ওখানে বাঘ দেখিসনি? অন্ধকারের পর বাঘ বেরোয়!’

বিঙ্কু-মিঙ্কু দু-জনেই স্ট্যাচু। ‘মামু, বাঘ আছে ওখানে? বাঘ? আমরা বাঘ দেখব।’

মিঙ্কু বলল, ‘আমি বাঘের পিঠে চড়ব।’

রাহুল বলল, ‘বাঘ থাকলেও তার পিঠে কি চড়া যাবে?’

বিঙ্কু বলল, ‘কেন, ঘোড়া আছে তো! ঘোড়ার পিঠে চড়ছে সবাই।’

‘ঘোড়া আর বাঘ বুঝি এক হল?’ রাহুল বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল।

‘কেন? এক নয় কেন?’

‘যেমন বাঘ থাকে জঙ্গলে।’

‘কেন, বাঘ কি কখনো শহরে আসে না? আমি তো দেখেছি বাঘ মোটরবাইকের মতো সাঁ-সাঁ করে পিচের রাস্তা দিয়ে ছুটছে।’

‘সে তো বিজ্ঞাপন।’

ক্যাঁচ করে একটা ব্রেক দেওয়ার শব্দ। একটা গাড়ি এসে ঘচাক করে থামল পাশে।

‘এই যে রাহুলবাবু। কোন দিকে?’

‘ও, জামাইবাবু? আপনি কি বাড়ি যাচ্ছেন? তাহলে এদের দু-জনকে নিয়ে নিন। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা আছে।’

গাড়িতে উঠে চলে গেল বিঙ্কু-মিঙ্কু। ততক্ষণে আশপাশে আর একটিও গাড়ি নেই, স্কুটারও নেই। সব খাবারওয়ালা আর বেলুনওয়ালারা পোঁটলা-পুঁটলি বেঁধে ফেলেছে। বিরাট ঝুপসি গাছগুলোর ওপর ছায়া ঘন হয়ে এসেছে। কেবল সাদার্ন অ্যাভিনিউ দিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে যাচ্ছে বাস। আওয়াজ হচ্ছে গোঁ-গোঁ ঘিস-ঘিস। মাঝে মাঝে গাড়ির তীব্র হর্ন।

আমি এখানে কেন বসে আছি—মনে-মনে ভাবল রাহুল। আমার তো কোনও বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা নেই! জামাইবাবুকে হঠাৎ এরকম একটা এক্সকিউজ দিলাম বা কেন? বাচ্চা দুটোর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য? কিন্তু তা কেন হবে? ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার তো ভালোই লাগে। অন্য রাজ্যে থাকে, হিমাচল প্রদেশে, ওদের চেনাজানার জগৎটা কত অন্যরকম। কীরকম অনায়াসে বলে বসল, আমি বাঘের পিঠে চড়ব। বাঘ যেন ঘোড়া। নিজের মনেই শব্দ করে হেসে উঠল রাহুল।

‘এত হাসি কীসের?’ কে যেন গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে উঠল।

এত চমকে গেল রাহুল যে, আর-একটু হলে উলটে পড়েই যেত! এ আবার কে রে বাবা! অন্ধকারে ভালো করে দেখাও যাচ্ছে না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে বলল, ‘কে তুমি? কোনখান থেকে কথা বললে?’

‘আমি হিরো। তোমার পেছন দিকে তাকাও।’

পেছন দিকে লেকের জলে তখনও ঝাপসা আলোর আভাস আছে। সেই আলোর ব্যাকগ্রাউণ্ডে কে একজন গুঁড়ি মেরে বসে আছে। বসে? না দাঁড়িয়ে? ঠিক বোঝা গেল না।

‘আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না!’

‘পাবে কী করে? মানুষ তো! তোমাদের নজর তো এইটুকু।’

এবারে রাহুল একটু সতর্ক হল। মানুষ তুলে খোঁটা দেওয়া। লোকটা তবে কী ভূত?

‘তুমি কি মানুষ নও?’

‘ছ্যা:, মানুষ হতে যাব কোন দুঃখে! আমি এসেছি সুন্দরবন থেকে।’

‘তুমি কে?’

‘আমার নাম হিরো।’

‘হিরো?’

‘হ্যাঁ, আজকাল আমরা মানুষদের সঙ্গে এত ঘেষাঘেষি করে থাকি, মানে থাকতে বাধ্য হয়েছি যে, তোমাদের যন্ত্রপাতি, কলের বাক্স সবই আমাদের চেনা। জানালা দিয়ে আমরা টিভিও দেখি।’

‘ওহো। তাই হিরো।’

‘হ্যাঁ, মা বলেছিল আমার নাম দেবে ডিডিওপম ওয়াশি মাসি। বাবা বলল, ছেলের নাম কি মাসি হয়? তাই আমার নাম হল হিরো মুনডা। বাড়িতে সবাই হিরো বলেই ডাকে।’

‘এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি তুমি কে? তুমি বাঘ।’

‘বাঘ তো বটেই! তবে আমাকে ‘বাঘ, বাঘ’ কোরো না। সব বাঘেরা কী এক? আমার নাম, বললামই তো—হিরো। তোমরা মানুষরা বড়ো তাড়াতাড়ি সব কিছু ভুলে যাও। মানুষদের স্মরণশক্তি তো! তোমার নাম কী? মামু?’

‘তুমি এতক্ষণ আনাচে-কানাচে থেকে বিঙ্কু-মিঙ্কুর কথাবার্তা শুনছিলে। ওরা আমাকে মামু বলে ডাকে। আসলে আমার নাম রাহুল।’

আড়মোড়া ভেঙে এগিয়ে এল হিরো। কী বলল। রাজার মতো। অন্ধকারে যতটা বোঝা গেল তাতে রাহুলের মনে হল বডিখানা দারুণ, যেন ইলাস্টিকে তৈরি।

হিরো আরও কাছে এসে গোল হয়ে ঘুরতে লাগল।

‘কী করছ তুমি?’

‘শুঁকে দেখছি। এই জন্তুটা নাকি খুব জোরে দৌড়োয়?’

‘এই ধরো, ঘণ্টায় এক-শো।’

‘গুনতে-ফুনতে জানি না। লাগাবে আমার সঙ্গে দৌড়? দেখা যাক, ঘন্টায় কে কতখানি যায়!’

‘চলে এসো। দেখাই যাক।’

পরের দিন সকাল বেলা ঘুমন্ত রাহুলের ওপর দুই ভাগ্নে-ভাগ্নির আক্রমণ, ‘মামু, মামু শোনো, রেডিয়োতে কী বলছে? ওঠো না, কত ঘুমোবে?’

অনেক কষ্টে একটা চোখ ফাঁক করল রাহুল। ‘উহ একটু ঘুমোতে দিবি না! কী হয়েছেটা কী? বাড়িতে আগুন লেগেছে?’

‘শোনোই না, রেডিয়োতে বলছে, কাল সাদার্ন অ্যাভেনিউতে একটা বাঘকে একটা মোটর সাইকেলের সঙ্গে রেস দিতে দেখা গেছে। বাঘের ধাক্কায় দু-চারজন স্কুটার আরোহী জখম। তারা থানায় গিয়ে নালিশ করে এসেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের কথা বিশ্বাস করছে না। বলছে, বাঘ কী শহরে আসে নাকি?’

‘কে বলেছে আসে না?’ বলে রাহুল পাশ ফিরে চোখ বুজল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *