ঘড়ির কাঁটা – ৪

রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন কৌশিক ফিরল না, তখন বাধ্য হয়ে ওঁরা নৈশ আহারে বসলেন। বাসু-সাহেব, মিসেস বাসু, আর কৌশিকের স্ত্রী সুজাতা। ওঁদের আহারপর্ব যখন মধ্যপথে তখন খানা-কামরায় কৌশিকের নাটকীয় প্রবেশ। মিসেস বাসু বললেন, কী ব্যাপার? এত রাত? টিকটিকিরাও তো খায়। না কী?

কৌশিক এক গাল হেসে বলে, এখন যত ইচ্ছে ধমক দিতে পারেন। আমি আজ দিগ্বিজয় করে ফিরেছি। রীতিমতো ‘গুরু-মারা-চেলা!’ বাসু বললেন, ওরে বাব্বা! কেন? কী সংবাদ নিয়ে এলে? শুনি?

কৌশিক একখানা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে। বলে, বলুন তো কমলেশ কেন খুন হল? মোটিভটা কী? বাসু বলেন, কমলেশই যে খুন হয়েছে এটাই তো আমার অজানা। কেন হয়েছে তা কোথা থেকে জানব?

—হ্যাঁ, মৃতদেহটা কমলেশ মিত্রেরই। ওর দুজন বন্ধু ও একজন বান্ধবী এসেছিল আপনি হোটেল ছেড়ে যাবার পরেই। তারাই শনাক্ত করে গেল। পুলিশ আমার জবানবন্দি নিয়ে ছেড়ে দেবার পরেই আমি ওদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করি। সুদীপ লাহিড়ী, নবীন চ্যাটার্জি আর মীনাক্ষী মজুমদার। আমি আরও জেনে এসেছি, মীনাক্ষী দেবী আর সুদীপবাবু দুজনেই ওই হোটেলে এসেছিলেন তিনটে থেকে চারটের ভেতর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মৃত্যুর সময়টা কী? মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়েছে পাঁচটা বাহান্ন মিনিটে—

বাধা দিয়ে বাসু বলেন, তোমার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়েছে সাড়ে তিনটে থেকে পৌনে চারটের মধ্যে। যা হোক, তারপর?

কৌশিক বলে, এ কথা কে বললে?

—আপাতত আমি বলছি, কিন্তু সে তো চেলার হাতে মৃত গুরুর সংগৃহীত সংবাদ। চেলামশায়ের গোটা রিপোর্টটা আগে শুনি।

কৌশিক এ কথায় দমে যায়। বলে, যাই হোক আপনার কথাই মেনে নিচ্ছি। মৃত্যু যদি তিনটে থেকে চারটের মধ্যে ঘটে থাকে তাহলে মীনাক্ষী এবং সুদীপ একটু ঝামেলায় পড়বেন। সেটা আমার আসল খবর নয়, আসল খবর হচ্ছে-

কৌশিকের মতে যেটা আসল খবর সেটা সে সংগ্রহ করেছিল সুদীপ লাহিড়ীর কাছ থেকে। সুদীপ জানত, কমলেশ আর মীনাক্ষী দোশরা সকালের ফ্লাইটে দার্জিলিঙ বেড়াতে যাচ্ছিল। কমলেশ সেজন্যই ছুটি নিয়েছিল। একত্রিশে মার্চ গেছে রবিবার, তার আগের দিন কমলেশ তাই ব্যাঙ্ক থেকে দশ হাজার টাকা নগদে তুলেছে। সুদীপ তা জানে কমলেশ বলেছিল, সোমবার সে ওই নগদ টাকা ট্রাভেলার্স চেক করিয়ে নেবে। কৌশিক খোঁজ নিয়ে জেনেছে, টাকাটা হোটেলের ভল্টে কমলেশ রাখেনি এবং মৃতদেহ আবিষ্কারের পরে সে টাকাটা পাওয়া যায়নি কোথাও। ফলে ওই দশ হাজার টাকাটাই হচ্ছে খুন হওয়ার হেতু। লটারির সওয়া লক্ষ টাকা সম্ভবত কমলেশ হাতে পায়নি। অবশ্য কৌশিক সে বিষয়ে খোঁজ নিয়েও দেখেনি।

বাসু-সাহেব পুনরায় বাধা দিয়ে বলেন, তোমার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, ওয়েস্ট বেঙ্গল লটারির প্রাইজ মানি অ্যাকাউন্ট-পেয়ী চেক-এ দেওয়া হয়। খবরের কাগজে ফলাফল ঘোষণার পর সে টাকা হাতে পেতে মাসখানেক সময়ও লেগে যেতে পারে। কারণ চেকটা দেন এ.জি. ডবলিউ.বি—ডিরেক্টরেট অফ লটারিজ-এর নির্দেশ পেলে। ফলে ও তদন্ত তোমাকে করতে হবে না।

মিসেস বাসু বললেন, কৌশিকের সাফল্যে মনে হচ্ছে তুমি চটে যাচ্ছ? বাসু বলেন, শাস্ত্র বলে, পুত্র এবং শিষ্যের হাতে পরাজয়ই কাম্য। কৌশিক হতাশ হয়ে বলে, সুজাতা, আমার খাবারটা আনো। বাসু বলেন, আর নবীন চ্যাটার্জি? তার বিষয়ে কোনো সন্ধান পাওনি?

—পেয়েছি। সে আদৌ হোটেলে আসেনি। মানে, তার কথা অনুযায়ী।

—নবীন কি জানত, কমলেশ ব্যাঙ্ক থেকে দশ হাজার টাকা তুলেছে?

—সে কেমন করে জানবে? না সে জানত না।

ফর ইয়োর ইনফরমেশন—নবীন জানত। তুমি কি এ খবরটা পেয়েছ যে, নবীন হচ্ছে কমলেশের শালা?

—নবীন চাটুজ্জে? কমলেশ মিত্রের শ্যালক!

বাসু-সাহেব তখন বলতে থাকেন—তাঁর তদন্তের ফলাফল। লিটন হোটেল থেকে তিনি গিয়েছিলেন কমলেশের ফ্ল্যাটে। কমলেশের ভৃত্য শিবু অত্যন্ত চালাক-চতুর। তার কাছ থেকে সন্ধান পাওয়া গেল—শনিবার বিকালেই নবীন তার ভগ্নীপতির বাসায় এসেছিল। কমলেশকে সে বলেছিল, অত টাকা এ-ভাবে বাড়িতে নগদে রেখেছ কেন? ভল্টে রাখলেই পারতে। জবাবে কমলেশ বলেছিল—সিংহের গুহায় ঢুকে কেউ তার বাচ্চা চুরি করে না নবীন। পকেট থেকে পিস্তল বার করে সে দেখিয়েছিল। শিবু তখন বারান্দায় ছিল। সবটুকু সে স্বচক্ষে দেখেছে।

বাসুসাহেব শেষমেশ বলেন, কে, কেন খুন করেছে তা জানি না। তবে খুনি যে দশ হাজার টাকা হাতাতে পারেনি, এটুকু জানি।

কৌশিক রুখে ওঠে—কেমন করে জানলেন?

—কারণ মৃত্যুর পূর্বেই টাকাটা হোটেল থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। আমি জানি!

.

পরদিন। দোশরা এপ্রিল। বেলা ঠিক নয়টার সময় বাসু-সাহেবের গাড়িটা এসে দাঁড়াল লিটন হোটেলের সামনে। প্রকাশ তৈরিই ছিল বলে, চলুন যাই।

—না। আগে তোমার ঘরে গিয়ে বসবে চল। কথা আছে। ঘরে বসে বাসু প্রশ্ন করেন, তুমি কি জানতে, গত শনিবার কমলেশ দশ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে হোটেলে নিয়ে এসেছিল?

—না। এই মাত্র শুনলাম।

—রিভলভারটা নিয়েছ? ওটা একবার খুলে ধরত

প্রকাশ আদেশ পালন করা মাত্র বাসু তার নম্বরটা নোটবুকে টুকে নিলেন। রুবি কোম্পানির পয়েন্ট টু-টু বোরের রিভলভার। নম্বর 732753* হঠাৎ চমকে ওঠেন বাসু। বলেন, এ কী! কাল দেখেছিলাম, ডিসচার্জড বুলেটটা ব্যারেলের ঠিক সামনে আছে। আজ এক ঘর সরে গেল কেমন করে?

প্রকাশ বললে, আমি বোধহয় অসাবধানে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে এক ঘর সরিয়েছি।

—খুব অন্যায় করেছ। ওটাতে হাত দেওয়া উচিত হয়নি তোমার।

তারপর হঠাৎ যেন কী মনে পড়ে গেল ওর। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তিনি তাকিয়ে রইলেন কয়েকটি মুহূর্ত। প্রকাশ একটু ঘাবড়ে যায়। বলে কী দেখছেন?

—কাল রাত্রে রিভলভারের নম্বরটা আমি টুকে রাখিনি। ডক্টর সেনগুপ্ত, এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি যে, রাতারাতি গোটা রিভলভারটাই পাল্টে গেছে।

—কী বলছেন! ওটা তো বরাবর আমার হেপাজতেই আছে!

—তা আছে। কিন্তু তুমি নিজেই ওটা করনি তো? মানে, জাস্ট অসাবধানে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে….

প্রকাশ বলে, আপনি কী বলছেন মাথামুণ্ডু—

চাপা গর্জন করে উঠেন বাসু, লুক হিয়ার ডক্টর। সাদা বাংলায় বলছি—এভাবে আমাকে এড়িয়ে মার্ডার-ওয়েপনটা বদলে ফেলনি তো?

প্রকাশ শুধু বললে, ঈশ্বরের দিব্যি।

.

থানার সামনে গাড়িটা দাঁড়াতেই এগিয়ে এলেন বিকাশবাবু—প্রকাশের দাদা। তার পিছনে সতী। প্রকাশ বললে, এ কী! তোমরা কোথা থেকে এলে?

সতী প্রকাশের হাতটা টেনে নিয়ে ভেঙে পড়ে, ছোড়দা! এ তুই কী করলি?

বিকাশবাবু জোর করে তাকে টেনে সরিয়ে নেন।

বিকাশবাবুর কাছ থেকে জানা গেল, গতকাল রাত নয়টার সময় থানা থেকে প্রকাশের খোঁজে লোক এসেছিল। রবি বসুও এসেছিল। রবির কাছ থেকেই ওরা জানতে পারেন প্রকাশ গা-ঢাকা দিয়েছে; কিন্তু সকাল দশটায় সে থানায় আসবে এজাহার দিতে। সতী রবিকে চেনে। রবি আগেও এদের বাড়িতে এসেছে অনেকবার।

প্রকাশ বাসু-সাহেবের সঙ্গে তার দাদার পরিচয় করিয়ে দিল। বাসু বললেন, আমাদের সময় হয়ে গেছে। আমাদের মাপ করতে হবে। এসো প্রকাশ।

থানার বড়বাবু সতীশ বর্মন প্রস্তুত হয়েই ছিলেন। রবি বসুও উপস্থিত। বৰ্মন প্রথমেই বললেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এমন একটা ব্যাপারে আপনি প্রধান সাক্ষীকে এভাবে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

বাসু বলেন, সাক্ষীকে লুকিয়ে রাখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আমার মক্কেল। প্রথম সুযোগেই আমি তাকে আপনার সামনে হাজির করেছি। সকাল দশটার আগে আপনাদের দপ্তর খোলে না।

–থানা যে রাতে ঘুমায় না এ খবরটা আপনাকে জানাতে হচ্ছে, এটাই আশ্চর্য।

—কিন্তু আমি যে রাতে ঘুমোই। আমার মক্কেলও।

—কিন্তু আপনার মক্কেল সারা রাত বাড়ি ফেরেনি কেন?

—সারা রাত বাড়ি না ফেরা পিনাল কোডের কত নম্বর ধারা মোতাবেক অপরাধ না জানলে কেমন করে মক্কেলকে ডিফেন্ড করব? তিনি কাল রাত্রে লিটন হোটেলে ছিলেন, স্ব-নামে। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। লুকিয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

—ঠিক আছে। এবার উনি ওঁর জবানবন্দি দিন। তবে প্রথমেই বলে রাখছি—তিনি যা বলবেন তা টেপরেকর্ড করে রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনবোধে তাঁর জবানবন্দি তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।

অতঃপর প্রকাশ তার দীর্ঘ জবানবন্দি দিল। গাড়িতে রিভলভার প্রাপ্তির প্রসঙ্গ আসতেই বর্মন বললেন—কই? সেই রিভলভারটা দেখি?

প্রকাশ সেটা হস্তান্তরিত করে দিতেই বর্মন তার চেম্বার খুলে দেখলেন। বাসু-সাহেবের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, আশ্চর্য! সারারাত এই মার্ডার-ওয়েপনটা লুকিয়ে রেখেছেন?

—মার্ডার-ওয়েপন! আপনি বলতে চান—ওই পিস্তলেই খুন হয়েছে!

বর্মন ব্যঙ্গোক্তি করে, এটা একটা দশ বছরের খোকাও বুঝতে পারে!

—নাকি? অথচ আমি তার হেতুটা বুঝছি না। কী করে বুঝলেন?

বর্মন জবাব দিলেন না বর রবি বোসকে বললেন, ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট জীতেন বসাককে ডেকে দিতে। অনতিবিলম্বেই ইন্সপেক্টর বসাককে ডেকে নিয়ে এল রবি। থানার বড়বাবু তাকে বললেন, বসাক, এই রিভলভারেই কাল হিন্দুস্থান পার্কে খুনটা হয়েছে। তুমি অটোপ্সি-সার্জেনের কাছ থেকে বুলেটটা পেয়েছ; এবার এটাতে একটা টেস্ট-বুলেট ছুঁড়ে কম্পারেটিভ মাইক্রোস্কোপে… ওয়েল, য়ু নো ইয়োর জব! কালকের মধ্যেই আমি লিখিত রিপোর্ট চাই।

বসাক চেম্বারটা খুলে দেখছিল। বললে, আমি একটা কথা বলব স্যার?

—নো। নট নাউ! আমি জবানবন্দিটা শেষ করতে চাই। যাও।

বসাক কিন্তু গেল না। বসল পাশের চেয়ারে। প্রকাশ বলে, গাড়িতে রিভলভারটা আবিষ্কার করেই আমি বুঝতে পারি, কেউ আমাকে একটা বিশ্রী কেস-এ জড়াতে চাইছে। তাই আমি তৎক্ষণাৎ চলে যাই ব্যারিস্টার পি.কে.বাসুর কাছে।

—তারপর?

বাসু বলেন, তারপর আর কিছু নেই মিস্টার বর্মন। জবানবন্দির এখানেই যবনিকা। এর পর আমার মক্কেল না কিছু করেছে তার জিম্মাদারি আমার। সে বিষয়ে তাকে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বিষেধ করছি।

—তা তো করছেন, কিন্তু যে অস্ত্রে খুন হল সেটা কেন উনি সারারাত লুকিয়ে রাখলেন—তা তো উনি বললেন, না, হয় এটুকুও বলুন যে, সেটাও আপনার নির্দেশে!

—কী আশ্চর্য! কেসটা যে বুলেটের আঘাতে খুন তাও তো আমাদের জানাননি আপনি। ডাক্তার যখন পরীক্ষা করলেন তখন আপনি আমাদের ঘরে ঢুকতে দিলেন না। লোকটা মরে পড়ে আছে এটুকুই আমার মক্কেল আর আমি জানতাম। আত্মহত্যা হতে পারে, থ্রম্বোসিস হতে পারে, ছোরার আঘাতে খুন হতে পারে—

—এবং ওই পিস্তলের গুলিতেও হতে পারে—

বসাক আবার বললে, আমি একটা কথা বলব স্যার?

ধমকে ওঠেন বড়বাবু, নো। প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, এর আগেও বলেছি খামকা আমাকে ইন্টারাপ্ট করবে না—তোমাকে ডেকেছিলাম রিভলভারটা দিতে। সেটা পেয়েছ, এবার যাও। কাল রিপোর্ট দিও। লিখিত রিপোর্ট।

বসাক নিজেকে অপমানিত বোধ করে উঠে দাঁড়ায়। টেবিলের উপর পিস্তলটা রেখে দিয়ে গটগট করে চলে যায়। বর্মন পিছন থেকে গর্জে ওঠেন, ওটা ফেলে যাচ্ছ কেন?

বসাক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল। ওখানে থেকেই বলল ওটার দরকার হবে না। আপনিও লিখিত রিপোর্ট চেয়েছেন। তাই পাবেন। কাল নয়, আজই। দশ মিনিটের মধ্যে।

—মানে?

—এটা পয়েন্ট টু-টু বোরের রিভলভার। অটোপ্সি-সার্জেন যে বুলেটটি আমাকে দিয়েছেন সেটা পয়েন্ট থ্রি-এইট বোরের। ফলে ল্যাবরেটারিতে এটাকে না নিয়ে গিয়েও আমি লিখিত রিপোর্ট দিতে পারব—এটা সেই মার্ডার-ওয়েপন নয়!

বসাক ঘুরে দেখল না তার ভাষণের প্রতিক্রিয়া। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

বর্মন চট করে ঘুরে বাসুকে বললেন, এর মানে কী?

বাসু গম্ভীর হয় বললেন, ভারি শক্ত প্রশ্ন! তাই তো! এর মানেটা কী হতে পারে?

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *