গ্লানির্ভবতি ভারত – ৩৫

৩৫

বাসুদেব বাচস্পতি গম্ভীরমুখে বললেন, “যাই বলো জগন্নাথ, তোমার এইসব আলটপকা মন্তব্য একেবারেই করা উচিত নয়। ওইজন্যই তোমার ওপর নবদ্বীপের পণ্ডিতরা খাপ্পা। এইজন্যেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র …।”

“তাতে আমার কিছু যায় আসেনা বাসুদেব।” জগন্নাথ হুঁকায় একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন, “সনাতন ধর্মের মতো প্রগতিশীল উদার শাস্ত্র বিরল। বৈদিক সাহিত্য পড়লেই তার উদারমনস্কতা বা যুক্তিবোধ বোঝা যায়। কিন্তু তার পরবর্তী হাজার হাজার বছর ধরে পণ্ডিতরা নিজেদের মতো করে নিজেদের স্বার্থ কায়েম করতে ইচ্ছেমতো নিয়ম বসিয়েছেন কিংবা সরিয়েছেন। আসল হিন্দু ধর্ম চাপা পড়ে গিয়েছে সেই পূতিগন্ধময় পুরু আস্তরণের নীচে।”

“তাই তুমি সেই আস্তরণ সরানোর দায়িত্ব নিয়েছ?” বাসুদেব বাচস্পতি শ্লেষযুক্ত স্বরে বললেন।

“নাহ! আমি আর কতটুকু পারব বাসুদেব। বয়স হচ্ছে। নেহাত আমার ওপর কেউ কথা বলার স্পর্ধা দেখায় না তাই, কিন্তু আমার এই চিন্তাধারাগুলো তো সকলের হজম হবে না।” তর্কপঞ্চানন ভারী গলায় বললেন, “তবে আমি স্বপ্ন দেখি।”

“কী স্বপ্ন দ্যাখো?”

“একদিন নিশ্চয়ই কেউ আমাদের এই বাংলায় আসবে। একদিন নিশ্চয়ই কেউ এইসব অর্ধশিক্ষিত স্মার্ত পণ্ডিতদের কবল থেকে টেনে বের করে আনবে সত্যিকারের সনাতন দর্শনকে। বন্ধ হবে সহমরণ। রাজবল্লভের কন্যার মতো মেয়েরা বিধবা হলেও আবার নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। বৈদিক যুগের লোপামুদ্রা, মৈত্রেয়ী, গার্গীরা আবার বাংলার ঘরে ঘরে জন্মাবে। সেদিন আমি হয়ত এই ধরাধামে থাকব না। কিন্তু যেখানেই থাক, মনেপ্রাণে আশীর্বাদ করব সেই যুগপুরুষকে। যে টান মেরে সরিয়ে দেবে এই মিথ্যে পুরু আস্তরণ।”

বাসুদেব বাচস্পতি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় এসে উপস্থিত হলেন উইলিয়াম জোন্স।

তাঁর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি বেশ উত্তেজিত। বিস্ফারিত চোখে নিজের জন্য নির্দিষ্ট আসনে বসে বললেন, “সংবাদ শ্রবণ করেছ, পণ্ডিত?”

তর্কপঞ্চানন শান্তস্বরে বললেন, “কোন সংবাদের কথা বলছ? চারপাশে তো অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। নবাবের মসনদ থেকে শুরু করে বাংলার রাজধানী, পট পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত।”

জোন্স বললেন, “রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে নবাব কারাগারে পুরেছেন। এই নবাব মিরকাশিম যে কী শুরু করলেন! কোম্পানির গভর্নর ভ্যান্সিটার্ট নবাব মিরজাফরকে অকর্মণ্য অপদার্থ বলে সরিয়ে দিয়ে মিরকাশিমকে বসিয়ে খাল কেটে কুমীর আনলেন। মিরকাশিম তো দেখছি ইংরেজদের ওপর হাড়ে চটা। একদিকে রাজধানী বদলাল মুঙ্গেরে, অন্যদিকে পলাশির চক্রান্তের সবার ওপর একে একে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। জগৎ শেঠ মহতাবচাঁদ, স্বরূপচন্দের পর এবার কৃষ্ণচন্দ্র! কারণ অতি বিচিত্র। কৃষ্ণচন্দ্র নাকি বহুদিনের রাজস্ব নবাবের তহবিলে বকেয়া রেখেছিলেন।”

“নবাবকে তাঁর প্রাপ্য রাজস্ব না দিলে তো কয়েদ করবেই।” বাসুদেব বাচস্পতি মন্তব্য করলেন।

উইলিয়াম জোন্স একটু বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, “এ তো আর কোনো ছোটখাটো জমিদার নয়, যে তুলে নিয়ে যাবে সটান। গোটা নদীয়ার অধিপতি, তামাম নবদ্বীপের পণ্ডিতুলের পৃষ্ঠপোষক, ন্যূনতম সম্মান তো তাঁর প্রাপ্য! রাতারাতি রাজা আর যুবরাজ শিবচন্দ্রকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মুঙ্গেরের কয়েদখানায় পোরা, এ তো চরম অন্যায়!”

“অন্যায়!” তর্কপঞ্চানন বললেন, “ন্যায় অন্যায় তুমি কাকে দেখাচ্ছ, সাহেব! আলিবর্দি খাঁ যখন নবাব ছিলেন, তখন এই কৃষ্ণচন্দ্রই এক অসহায় বিধবার সম্পত্তি গাপ করেছিলেন, তা কি জানো? ত্রিবেণীর পাশেই যে বংশবাটীর রাজা গোবিন্দদেবের মৃত্যুকালে তাঁর মহিষী গর্ভবতী ছিলেন, এত বড় সত্য জানা সত্ত্বেও তিনি নবাবের কাছে দরবার করেছিলেন বংশবাটির জমিদারি বাজেয়াপ্ত করতে। গোবিন্দদেবের বিধবা জানতেও পারেননি, কখন তাঁদের জমিদারি নবাব বাজেয়াপ্ত করে নয়া ব্যবস্থা করলেন কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে। যখন সংবাদ পেলেন, তড়িঘড়ি দূত পাঠালেন নবাব দরবারে। কিন্তু কৃষচন্দ্র লোক লাগিয়ে তাঁর সেই দূতের এত্তেলা হাজারদুয়ারির আমদরবার পেরোতে দিলেন না। আরও মোটা খাজনা ও নজরানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নবাবের মুখবন্ধ করলেন। গোবিন্দদেবের সেই পুত্র এখন সদ্যযুবা। নাম নৃসিংহদেব। হন্যে হয়ে সে ঘুরছে জমিদারি পুনরুদ্ধারের আশায়। জানো তো, পাপ বাপকেও ছাড়ে না? যে রাজস্বের লোভে কৃষ্ণচন্দ্র এত জমিদারি বাড়িয়েছিলেন, সেই রাজস্ব অনাদায়েই তিনি কয়েদ হলেন।”

উইলিয়াম জোন্স কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এক ছাত্র এসে বলল, “কাল প্রত্যুষে একেবারে প্রথম প্রহরে বজরা ছাড়বে, পণ্ডিতমশাই। খাজাঞ্চিমশাই আপনাকে জানাতে বললেন।”

“বেশ।” তর্কপঞ্চানন বললেন।

“আগামীকাল কি কোথাও যাচ্ছ নাকি, পণ্ডিত?”

তর্কপঞ্চানন কিছু বলার আগেই বাসুদেব বাচস্পতি বললেন, “হ্যাঁ। কাল উনি মুর্শিদাবাদ যাবেন।”

“হঠাৎ?”

জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন কিয়ৎক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “রায় রায়ান নন্দকুমারের সঙ্গে কিছু কথা আছে, তাই যেতে হচ্ছে। বিশেষ জরুরি প্রয়োজন।”

“কী প্রয়োজন?” উইলিয়াম জোন্স সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর ও তর্কপঞ্চাননের যতই মতবিরোধ হোক, তাঁরা পরম বন্ধু। এই বন্ধুত্ব এমন, যে দুজনেই দুজনকে নিঃসংকোচে সবকিছু বলতে পারেন।

জগন্নাথ পণ্ডিত সামান্য ইতস্তত করলেন। তারপর বললেন, “নন্দকুমারকে অনুরোধ করব, যাতে তিনি কৃষ্ণচন্দ্রকে মুক্তি দেন।”

“অর্থাৎ?” উইলিয়াম জোন্সের বিস্ময় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, “খুব যদি ভ্রম না করি, তুমিই তো কৃষ্ণচন্দ্রের প্রতি প্রতিশোধ নিতে তাঁকে কয়েদ করেছ। দেওয়ান নন্দকুমার যে তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আমি জানি।”

তর্কপঞ্চানন বললেন, “আমাদের শাস্ত্রে কী বলে জানো? অপরাধীকে তাঁর দোষের শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু তাঁকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাও কর্তব্য। তবেই তো ভ্রম সংশোধনের সুযোগ পাবে। কৃষ্ণচন্দ্র জগন্নাথ পণ্ডিতকে অপমান করেছিল, উপেক্ষা করার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। তাই সে শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু এবার তাকে যে ক্ষমা করতেই হবে!”

উইলিয়াম জোন্স অভিভূত কণ্ঠে বললেন, “সত্যি পণ্ডিত! তোমাকে এতবছর দেখছি, তবু যেন মাঝেমাঝে অচেনা লাগে। তুমি ধন্য!”

৩৬

ভবানীপুরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘চৌধুরীভিলা’ যেমন বিশাল, তেমনই সুন্দরভাবে সাজানো। বাড়ির সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে কেয়ারি করা ফুলের বাগান, তার পাশ দিয়ে সবুজ লন ঢুকে গিয়েছে গাড়িবারান্দা পেরিয়ে।

রুদ্র আর প্রিয়াঙ্কা ইচ্ছে করেই পুলিশ উর্দি পরেনি। সাধারণ পোশাকে বাড়ির পরিচারকের পিছুপিছু গিয়ে ওরা প্রকাণ্ড ড্রয়িং রুমে বসে হাঁ হয়ে গেল।

প্রিয়াঙ্কা চাপাস্বরে বলল, “এ’কোথায় এলাম ম্যাডাম! কোন মিউজিয়াম মনে হচ্ছে।”

রুদ্রও বেশ অবাক হয়ে দেখছিল। গোটা ড্রয়িং রুমটাই নানারকম বহুমূল্য আসবাবপত্র ও শৌখিন জিনিসপত্রে সুসজ্জিত। দুর্মূল্য ঝাড়বাতি থেকে শুরু করে অ্যান্টিক ভাস্কর্য, কী নেই! দেওয়ালের একেবারে ওপরদিকে রয়েছে বেশ কিছু স্টাফ করা প্রাণীর মুখ। বোঝাই যাচ্ছে, এই পরিবার যেমন বনেদি, তেমনই বিত্তশালী।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। পরনে দামি পাজামা-পাঞ্জাবি। বয়স আন্দাজ পঁচাত্তর, পরিবারের ধারা মেনেই গৌরকান্তি ও অসম্ভব সুপুরুষ। রুদ্রর উলটোদিকে বসে নমস্কার করলেন, “আমি শেখর চৌধুরী। আমিই আপনার ফোন ধরেছিলাম।”

“নমস্কার।” রুদ্র বলল, “আমাদের হাতে সময় এতটাই কম যে আমি সরাসরি প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আপনাদের আদি নিবাস তো হুগলীর বদনপুর গ্রামে ছিল?”

“হ্যাঁ।” শেখর চৌধুরী সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়লেন, “অনেক বছর আগে আমার বাবা ওখানকার পাট চুকিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। তখন আমি বাইশ বছরের যুবক, লন্ডনে পড়াশুনো করছি। আমাদের অন্যান্য শরিকেরা তারও আগে গ্রাম ছেড়েছিল। আমরাই অতদিন ছিলাম। তবে ওই গ্রামে আমাদের নাটমন্দির, জমিদারবাড়ি, সেসব এখনো আছে। মানে থাকার কথা।”

“আর আপনাদের মন্দির?” রুদ্র জিজ্ঞাসা করল।

শেখর চৌধুরী মনে পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, “ও হ্যাঁ। নদীর ধারে আমাদের পারিবারিক চণ্ডীমন্দির ছিল। পারিবারিক হলেও গোটা গ্রামই তার প্রসাদ পেত। পাশের দুর্গাদালানে দুর্গাপুজোও হত। আমাদের বংশ ঘোরতরভাবে শক্তির উপাসক।”

“সেই মন্দিরের পুরোহিত কে ছিলেন, মনে আছে?”

শেখর চৌধুরী মনে করার চেষ্টা করে বললেন, “না, মানে আমি তো স্কুলের পাট শেষ করেই বিলেতে পড়তে চলে যাই। আমার ঠিক মনে নেই।”

রুদ্র বলল, “আপনার কানু চক্রবর্তী বলে কাউকে মনে আছে? আপনাদের ওই চণ্ডীমন্দিরের পুরোহিতের ছেলে। আপনাদেরই বাড়ির এক ছেলের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালায়?”

“আমাদের বাড়ির ছেলে?” শেখর চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন, “আমি তো আমার বাবার একমাত্র পুত্র। আপনি যে সময়ের কথা বলছেন, সেইসময় তো এরকম কিছু ঘটেনি! আর কোনো শরিকও সেইসময় গ্রামে থাকত না।”

রুদ্রর মুখটা কালো হয়ে গেল। অনেক আশা করে ও এসেছিল আজ। ওর বারবার মনে হচ্ছিল, কানু চক্রবর্তীর সঙ্গে পালানো ওই ছেলেটির সঙ্গে এই ঘটনার কিছু যোগাযোগ আছে।

কিন্তু ইনি বলছেন, তেমন কিছু ঘটেইনি। তবে কি লোকেশবাবুকে কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে?

ভদ্রলোক তখন তাকিয়ে আছেন দেখে ও জিজ্ঞেস করল, “আপনি কী করেন?”

শেখর চৌধুরী বললেন, “আমার বাবা গ্রামে থাকার সময়েই কলকাতায় গার্মেন্টের ব্যবসায় লগ্নি শুরু করেছিলেন। আমি বিলেত থেকে ফিরে সেটাকেই বাড়িয়েছি। এখন হাওড়া, কলকাতা মিলিয়ে মোট তিনটে ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি আমাদের। আমার ছেলেই সবকিছুর দেখাশোনা করে। স্ত্রী গত হয়েছেন।”

“আপনার ছেলেও এখানেই থাকে?”

শেখর চৌধুরী বললেন, “না। ও বাইপাসের ধারে ফ্ল্যাট কিনেছে। সেখানেই স্ত্রীকন্যা নিয়ে থাকে। আমিই বলেছিলাম বিয়ের পর আলাদা থাকতে। দূরে থাকলে সম্পর্ক ভালো থাকে। ভালোই আছি। আর সে তো খুব ব্যস্ত, ব্যবসার নানা ডিলের জন্য দেশবিদেশ ট্যুর করতে হয়। তবে যতই ব্যস্ত হোক, এক দেড়মাস অন্তর বউ-মেয়েকে নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে।”

“কী নাম আপনাদের কোম্পানির?”

“মৃন্ময়ী টেক্সটাইলস।”

রুদ্রর চোখ চলে গেল অদূরে রাখা একটা বিশাল শো-পিসের দিকে। কোম্পানির বার্ষিক সম্মেলনে বানানো একটি আবক্ষ দুর্গামূর্তি। নিপুণ হাতের কাজ। মূর্তির নীচে লেখা ‘গোল্ডেন জুবিলি সেলিব্রেশন— মৃন্ময়ী টেক্সটাইলস পরিবার।’ কোম্পানির লোগোটিও দুর্গার ধাঁচের।

রুদ্রর মনে পড়ে গেল, চৌধুরীরা বংশানুক্রমে মা চণ্ডীর সেবাইত। মৃন্ময়ী মানেও তো দুর্গা।

ও আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে শেখর চৌধুরী বললেন, “আমাদের কারখানা একটা আস্ত পরিবার। আমাদের কর্মচারীরা একেবারে নিজেদের মতো।”

রুদ্র জিজ্ঞেস করল, “আপনি এত বড় বাড়িতে একাই থাকেন?”

শেখর চৌধুরী হাসলেন। বললেন, “হ্যাঁ। একাকীত্ব আমি বেশ পছন্দ করি। ঠিকে কাজের লোক আছে কয়েকজন, তবে তারা আসে চলে যায়।”

রুদ্র নমস্কার জানিয়ে উঠে পড়ল। এখানে আর সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

বাইরে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে প্রিয়াঙ্কা বলল, “কী হবে বলুন তো, ম্যাডাম! এদিকে একটা একটা করে দিন কমছে।”

“কীসের দিন?”

প্রিয়াঙ্কা বলল, “আপনার ওই কৃষ্ণপক্ষ থিওরিটা ঠিক হলে এই মাসের কৃষ্ণপক্ষ তো শুরু হয়ে গিয়েছে। এই আগস্ট মাসের ৪ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ, যে কোনোদিন আবার খুন হবে।”

মাথায় যখন দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ একসঙ্গে কাজ করা শুরু করে, তখন একটা অসম্ভব বিরক্তি এসে জাপটে ধরে। রুদ্ররও সেটাই হচ্ছিল। প্রিয়াঙ্কার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ও একটা নম্বরে ফোন করল।

নম্বরটা মিন্টু বলে একটা ছেলের। সে বদনপুর গ্রামে থাকে। পুলিশের ইনফর্মারের কাজ করে। লোকাল থানার ওসি আশুতোষ তরফদার, তিনিই খোঁজ দিয়েছেন। আজ সকালে কলকাতা আসার আগেও মিন্টুর সঙ্গে রুদ্রর কথা হয়েছে। রুদ্র তাকে যতটা সম্ভব খুলে বলেছে, যাতে ছেলেটার কাজ করতে সুবিধা হয়।

মিন্টু ফোন রিসিভ করে বলল, “আরে ম্যাডাম, আমি আপনাকেই কল করতে যাচ্ছিলাম। হেব্বি খবর আছে।”

“কী খবর?”

“কানু চক্রবর্তী যতই মুখ বুজে থাকুক, লোকটা অনেক কিছু জানে। রাতবিরেতে কার সঙ্গে ফোনে তর্কাতর্কি করে। হাউহাউ করে কাঁদে। আবার চিৎকারও করে।”

“কানু চক্রবর্তীর নম্বরটা আশুতোষবাবুকে দিয়েছ?”

“হ্যাঁ ম্যাডাম। দিয়েছি। উনি খোঁজ নিচ্ছেন। আপনি কী জানতে পারলেন?”

“বিশেষ কিছুই নয়। শেখর চৌধুরী বললেন, ওরকম কোনো ঘটনাই নাকি ঘটেনি। কানু চক্রবর্তীর সঙ্গে চৌধুরীবাড়ির কেউ পালায়নি।”

“সে আবার কি!” গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেরিয়ে মিন্টুর গলা শোনা গেল, “বললেই হল? মামদোবাজি নাকি! আমাদের এই গ্রামে তিনপুরুষের বাস। আমার ঠাকুমা এখনো বেঁচে, তিনি সব জানেন। ওই শেখর চৌধুরীর ভাইয়ের নাম ছিল শঙ্কর চৌধুরী। দুই ভাইয়ের বয়সের পনেরো ষোলো বছরের তফাত। শঙ্করের সঙ্গে ছোট থেকে বাড়ির লোকদের লাফড়া। কানু আর শঙ্কর ছিল গলায় গলায় বন্ধু, ওরা যখন পালায়, তখন বয়স তেরো কি চোদ্দো। কানু চক্রবর্তী গ্রামে ফিরে আসে প্রায় দশবছর পর। কিন্তু শঙ্কর হাওয়া হয়ে যায়।”

“শেখর চৌধুরী তাহলে জেনেশুনে মিথ্যা বললেন?” নিজের মনে ফিসফিস করল রুদ্র, “কিন্তু কেন?”

“আরও শুনুন। শেখর আর শঙ্করের মা ছিলেন আপনাদের সেই ত্রিবেণীর ভট্টাচার্য বাড়ির মেয়ে।”

“অ্যাঁ?” রুদ্র অবাক।

“ইয়েস ম্যাডাম। মৃন্ময়ী চৌধুরী। লেট নীলকণ্ঠ চৌধুরীর স্ত্রী। তাঁদের বিয়ের সময় হেব্বি ঝামেলা হয়েছিল।”

“কেন? ঝামেলা হয়েছিল কেন?”

“বাহ, চৌধুরীরা তো চণ্ডীর উপাসক। আর ওই ত্রিবেণীর ভটচায বাড়ি যে ঘোর বৈষ্ণব! ক্যাচাল হবে না? তবে নীলকণ্ঠ চৌধুরী ঠিক করেছিলেন, বিয়ে করলে তিনি ওই মৃন্ময়ীকেই করবেন।”

“ঠিক আছে আমি রাখছি। আর কিছু জানতে পারলে জানিও।”

রুদ্র বিহ্বল হয়ে ফোনটা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোন বাজল।

“হ্যাঁ স্যার বলুন।”

ওপাশ থেকে রাধানাথ রায়ের রাগত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “তুমি কোথায় রয়েছ, রুদ্রাণী?”

রুদ্র বলল, “ভবানীপুরে। ওই বদনপুর গ্রাম থেকে একটা ক্ল্যু পেয়েছিলাম, সেইজন্য ইন্টারো …।”

রাধানাথ রায় এবার প্রায় চিৎকার করে বললেন, “তুমি নিজেকে কী মনে করছ? একটা ইনভেস্টিগেশন টিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তুমি কোনো প্রোটোকল মানবে না? যাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা জেরা করতে চলে যাবে? লিসন রুদ্রাণী, তোমাকে আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। তোমার এইসব কাজের জন্য আমাকে অ্যাকাউন্টেবল হতে হয়। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট?”

“কী হয়েছে স্যার?” রুদ্র থতমত খেয়ে গেল। বলল, “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

“তুমি একটু আগে যাকে তোমার তদন্তের জন্য জেরা করতে গিয়েছিলে, সেই ভদ্রলোকের অনেক উঁচুমহলে রেফারেন্স রয়েছে। উনি ফোন করে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ জানিয়েছেন। তোমার জন্য কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে আমাকে কথা শুনতে হচ্ছে। তুমি জানো না, যে অন্য জুরিসডিকশনে ইনভেস্টিগেট করতে গেলে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে আগে কথা বলতে হয়? যতই ক্ষমতা থাকুক রুদ্রাণী, আসলে আমাদের হাতপাগুলো বাঁধা। তুমি কি নিজেকে একজন গোয়েন্দা ভাবছ? তুমি জানো আমি ছুটিতে রয়েছি, এই সময়েও তোমার জন্য আমাকে এইসব পরিস্থিতি ফেস করতে হচ্ছে। বারবার তুমি আমাকে ইনসিস্ট করছ তোমার বিরুদ্ধে কোনো পিউনিটিভ অ্যাকশন নেওয়ার জন্য।”

রুদ্রর মেজাজটা তেতো হয়ে আসছিল। একটু আগে মিন্টুর মুখে শোনা চৌধুরীবাড়ি আর তর্কপঞ্চাননের বাড়ির যোগসূত্র খুঁজে পেয়ে যতটা উত্তেজনা হচ্ছিল, তা এখন প্রায় পুরোটাই স্তিমিত হয়ে আসছে।

মনে হচ্ছে, কাজটা যেন এখানে গৌণ, অফিসিয়াল নিয়মকানুনগুলোই মুখ্য। শেখর চৌধুরী যত ইনফ্লুয়েনশিয়াল লোকই হোন, তাঁর যত ওপরমহলেই চেনাজানা থাকুক, রুদ্র তো তাঁকে কোনরকম অসম্মান করেনি। শুধু কয়েকটা তথ্য জানতে গিয়েছিল মাত্র!

হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ ওঠে কি করে! এত দ্রুত ওর যাওয়ার কথাটা স্যারের কাছে পৌঁছলই বা কী করে!

কিন্তু এত কথা ওর এই মুহূর্তে এস পি স্যারকে বলতে ইচ্ছে হল না। স্যার আরও কী সব বলে যাচ্ছিলেন, আওয়াজে ও ঠিকঠাক শুনতে পাচ্ছিল না। ও ম্লানগলায় বলল, “স্যরি স্যার। এরকম আর হবে না।”

এস পি স্যার বললেন, “তোমাকে যতটুকু কাজ দেওয়া হয়েছে, ততটুকুই করবে। আপাতত তোমার কাজ হল ডেইলি বেসিসে প্রোগ্রেস রিপোর্ট পাঠানো। আমি জয়েন করলে নেক্সট স্টেপ ভাবা যাবে। রিমেম্বার, দিজ ইজ মাই ফাইনাল ওয়ার্নিং।”

“ওকে স্যার!” রুদ্র অন্ধকার মুখে ফোন রেখে দিল। স্যার খুব রেগে গিয়েছেন।

প্রিয়াঙ্কা বলল, “এবার আমরা কোথায় যাচ্ছি, ম্যাডাম?”

“পার্কস্ট্রিট। এশিয়াটিক সোসাইটি।” রুদ্র খুব আস্তে করে উত্তর দিল। ওর মনের মধ্যে কী যেন একটা খচখচ করছে। কিন্তু সেটা কি, তা ও কিছুতেই বুঝতে পারছেনা।

 শেখর চৌধুরী নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে এত বড় মিথ্যা বললেন কেন?

৩৭

দ্বারিকা মনে মনে হিসাব করছিল। ওদের বৈদিক সমাজের ব্রাহ্মণপল্লির মোট জনসংখ্যা হাজার দেড়েক হবে। তার মধ্যে পুরুষ আট-ন’শো। তার মধ্যে জনা আড়াইশো লোক কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে উধাও হয়েছে সমাজ থেকে। তারা কোথায় গিয়েছে দ্বারিকা জানে না।

যত মানুষকে ও এখন দেখতে পাচ্ছে, তার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ওর মনে প্রশ্ন জাগছে, বৈদিক সমাজের সমস্ত পুরুষই কি আজ বাইরে বেরিয়ে এসেছে?

ওর প্রশ্নটা অমূলক নয়। গোলাপদীঘির পার্শ্ববর্তী বিস্তৃত শস্যখেত, খেলাধুলার জন্য যে সবুজ মাঠ, প্রধান পুষ্করিণীর ওপারের আরেকটি শস্যখেত, সমস্ত স্থানেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাতাতে কাতারে মানুষ। কোনো সারি ব্রাহ্মণের, কোনো সারি তাঁতিদের, কোনো সারি আবার তিলি বা কামারদের।

একেবারে দক্ষিণের সারিগুলোতে দাঁড়িয়ে রয়েছে কৈবর্ত ও বাগদিরা।

এখানে দ্বারিকার নিজের বাবা, দাদারাও কি রয়েছে? নিশ্চয়ই রয়েছে। বৈদিক সমাজের কঠোর নিয়ম, দশবছর বয়সে নারায়ণী চতুষ্পাঠীতে শিক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবে দূরত্ব বৃদ্ধি করতে হবে পরিবারের সঙ্গে। তাতে নাকি কিশোর বয়সে মনঃসংযোগের অভাব হয়। তাই এখানে প্রশ্রয় দেওয়া হয়না কোনরকম ঘনিষ্ঠতা। বাবা পৃথক সংসার পাতলেও দাদা আর সে তো এক ছাদের তলাতেই থাকে। কিন্তু তবু তেমন কথাবার্তা হয় না।

এতদিন ও যেন চোখ থাকতেও ছিল অন্ধ, সবকিছুকেই শাস্ত্রের অনুশাসন বলে মেনে নিত। সেই মেনে নেওয়ার অনেকটা স্থান জুড়ে থাকত ভয়। ওর সেই ভয় নিয়ে অচ্যুত মজা করত, হাসত।

অচ্যুত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি দ্বারিকার ভেতর বছরের পর বছর ধরে জাঁকিয়ে বসা ভয়টাকেও টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে?

নাহলে এত খোলামনে ভাবতে কবে থেকে শুরু করল ও?

হঠাৎ এক প্রচণ্ড শঙ্খধ্বনিতে দ্বারিকার চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল। দেখল, দূরে বিষ্ণু মন্দির আর কীর্তন মঞ্চের দালান থেকে শাখে ফুঁ দিচ্ছে সমাজের মহিলারা। যেমন তেমন করে নয়, প্রত্যেকে যেন একই তরঙ্গে বাজিয়ে চলেছে শঙ্খ। অনেকক্ষণ ধরে একটানা, তারপর সামান্য থেমে দু’বার ছাড়া ছাড়া। তারপর আবার একটানা। এভাবেই চক্রাকারে গোটা বৈদিক সমাজে আবর্তিত হতে শুরু করল শঙ্খধ্বনি।

নিরবচ্ছিন্ন সেই ধ্বনি শুনতে শুনতে যেন ঘোর লেগে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেন দেবলোকে পৌঁছে গিয়েছে।

প্রায় এক দণ্ড এইভাবে চলল। তারপর হঠাৎ একসময় থেমে গেল শঙ্খ। সকলেই যেন উঁকিঝুঁকি মেরে প্রণাম জানাতে লাগল একেবারে সামনে এসে দাঁড়ানো কাউকে উদ্দেশ্য করে।

গুরুদেব। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য স্নান করে উঠে এসেছেন প্রধান পুষ্করিণী থেকে। পরনে শ্বেতশুভ্র ধুতি। নিরাবরণ ঊর্ধাঙ্গে শোভা পাচ্ছে সামবেদী উপবীত। গুরুদেবের দুই পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কৃষ্ণকান্ত লাহিড়ী, গোপাল ব্যানার্জি এবং তরুণ শিক্ষক বংশীধর।

দ্বারিকা গোড়ালির ওপর ভর দিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়েও ওদের শ্রেণীশিক্ষক মধুসূদনকে দেখতে পেল না।

ও মনে করতে চেষ্টা করল। আজ কী বার? গুরুদেব তো প্রতি বুধবার উপস্থিত থাকেন এখানে। আজ কি বুধবার?

হঠাৎ সমস্ত নৈঃশব্দকে খান খান করে দিয়ে গুরুদেবের দৃপ্ত কণ্ঠস্বর শোনা গেল।

“শুভমস্তু। আজ পবিত্র বৈদিক সমাজের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আগামীকাল মাহেন্দ্র মহোৎসব। মহোৎসব অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুণ্যজন্মতিথি। আর মাহেন্দ্রযোগ শুধু এইবছরেই রয়েছে। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের এই অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্র তার প্রাধান্য বিস্তার করছিল, তখনই দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্রের যুগে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। যিনি আদতে সমগ্র মহাভারতের মহানায়ক ও প্রাণপুরুষ। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, দুর্বাসার আতিথ্য থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে বারবার অর্জুনকে প্রতিটি মুহূর্তে কূটনৈতিক পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন কৃষ্ণ। বলেছেন,

“যদা যদা হি ধর্মস্য

গ্লানির্ভবতি ভারত।

অভ্যুত্থানমধর্মস্য

তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।

পরিত্রাণায় সাধুনাং

বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।।

ধর্মসংস্থাপনার্থায়

সম্ভবামি যুগে যুগে।।”

গুরুদেব কিছুক্ষণ থামলেন। একঝলক চোখ বুলিয়ে নিলেন সকলের ওপর। তারপর ইঙ্গিত করলেন গোপাল ব্যানার্জিকে।

গোপাল ব্যানার্জি সামান্য গলা পরিষ্কার করে এগিয়ে এলেন। বললেন, “বাবাসকল! আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশবছর আগের এক পুণ্যলগ্নে পাপে নিমজ্জিত আধুনিক সমাজ ত্যাগ করে এসে আমাদের বৈদিক সমাজ শুরু হয়েছিল। তখন আমরা যে কয়েকজন মিলে আমাদের প্রথম গুরু ও বর্তমান গুরুদেবের সঙ্গলাভের সুযোগ পেয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ আর ইহলোকে নেই। থাকলে তাঁরা হয়তো সাক্ষী হতেন এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। যে মুহূর্তে শুরু হবে যুগাবসানের মহৎ প্রক্রিয়া। শুভসূচনা হবে মাহেন্দ্রমহোৎসবের।”

দ্বারিকা যত শুনছিল, ওর মনের ভেতর রাগ উত্তরোত্তর বাড়ছিল। পুতুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এই গোপাল ব্যানার্জিকে দেখলেই ওর অসম্ভব রাগ হয়। পুতুর মতো একটা শিশুকে যে প্রৌঢ় বিবাহ করতে পারেন, সে বিকৃতকাম ছাড়া আর কি? দ্বারিকার মনে পড়ে যায় অচ্যুতের কথাগুলো।

“শোন দ্বারিকা, আমাদের এই সমাজের নাম বৈদিক সমাজ বটে, কিন্তু আসলে বৈদিক কোনো রীতিনীতিই এখানে অনুসরণ করা হয় না। বৈদিক যুগে মেয়েরা অনেকেই বিবাহ করতেন না। তাঁরা বেদ পড়তেন, পড়াতেন এবং জ্ঞানার্জনের জন্য নানা দেশে যেতেন। নিয়মিত দর্শন ও ঈশ্বরতত্ত্বের আলোচনায় অংশ নিতেন। তাঁদের বলা হত ব্রহ্মবাদিনী। এমনকি তাঁদের উপনয়নও হত। গরুড়পুরাণ পড়ার সময় মিনা ও বৈতরণী নামে দুজন ব্রহ্মবাদিনীর কথা পেয়েছিলি, মনে করে দ্যাখ। এছাড়াও গার্গী, অপালাদের নাম তো শুনেইছিস।”

“কোনো মেয়েই বিবাহ করত না? তা কী করে হয়?” দ্বারিকা সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।

অচ্যুত বলেছিল, “যারা বিবাহ করতেন, তাঁরা উত্তমরূপে শিক্ষিত হয়ে যুবতীদশায় বিবাহ করতেন। তাঁদের বলা হত সদ্যোদ্বাহা। বৈদিকযুগে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাও নিষেধ ছিল না, এইসব বাচ্চাবয়সে তাঁদের বিবাহ দেওয়াও হত না। পরের কয়েকশো বছরে নানা অপভ্রংশে এইসব কুসংস্কার জাঁকিয়ে বসেছে আমাদের সমাজে।”

“সে কিরে!” দ্বারিকা অবাক হয়ে বলেছিল, “তবে ক্ষমাকে জোর করে ওর বরের সাথে সহমরণে পাঠানো হচ্ছিল কেন? ব্রজেন্দ্রদাদা তো তবে কোনো অন্যায় করেনি ক্ষমাকে বাঁচাতে চেয়ে?”

অচ্যুত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দাঁতে দাঁত চিপেছিল, “আমাদের এই সমাজ অনেকগুলো মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, দ্বারিকা! এখানে সবাই অন্ধ। কেউ জেনে অন্ধ। কেউ না জেনে।”

৩৮

তরুণ শিক্ষক বংশীধরের উদাত্ত কণ্ঠে দ্বারিকা আবার বাস্তবের মাটিতে ফিরে এল।

“কলিযুগের শেষ ঘনিয়ে এসেছে দুশো বছর পূর্বেই। পরম গুরুর জন্ম হয়েছিল সেই উদ্দেশ্যেই। পিতার প্রায় বার্ধক্যে দৈব নির্দেশেই ভগবান বিষ্ণু ধরাধামে এসেছিলেন ‘জগন্নাথ’ নাম নিয়ে।

“কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, পরম গুরু তাঁর সেই কাজ সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি। সেই কাজকে সফল করতে পরবর্তীকালে আমাদের যুগপুরুষ প্রথম গুরু চেষ্টা করেছিলেন। সফল না হলেও আজকের এই পথ সুগম করে দিয়ে গিয়েছেন তিনিই।

“কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের বর্তমান গুরুদেবই কল্কি অবতার। যিনি তাঁর দেবদত্ত অশ্বে আরোহণ করে এসেছেন গোটা কলিযুগের অবসান ঘটাতে। যিনি ভগবান বিষ্ণুর অন্তিম অবতার। পৃথিবী এখন পাপের পাঁকে নিমজ্জিত। অপরাধ ও নির্মমতা মানুষের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে পড়েছে। আধুনিক সভ্যতার অভিশাপে মানুষ এখন যন্ত্র, তার মধ্যে নেই কোনো মনুষ্যত্ব, মমত্ব। শাসক এখন দুরাচারী, দুষ্কৃতিরা আজ সমাজপতি। কল্কি অবতার তাই অবসান ঘটাবেন এই কলঙ্কিত কলিযুগের। তাঁর হাত ধরে পুনরাগমন ঘটবে সত্য যুগের।

“এই কাজের শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। আমাদের নারায়ণী সেনারা সকলের অলক্ষ্যে ছড়িয়ে গিয়েছেন কলুষিত পৃথিবীর সেই ভরকেন্দ্রে, যেখানে পাপে নিমজ্জিত হয়ে আরাধনা করা হচ্ছে ভগবানের। এবং তা দ্বিগুণ অপরাধ।”

পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটা চাপা কন্ঠস্বরের কথোপকথনে দ্বারিকার শ্রবণে বারবার বাধা পড়ছিল।

“আজ রাতেই সারতে হবে।”

“আমরা কি তাহলে যাব না?”

“না। আমরা গেলে এই কাজটা করবে কে? গুরুদেব জানলে মত দেবেন না। হাজার হোক, স্বামীর চিতা ছাড়া সতীদাহ করা যায় না। পরে প্রজ্বলনের কোনো গুরুত্ব নেই। পুণ্যও নেই।”

“তাহলে পরে শুনলে তো রেগে যাবেন!”

“রাগলেও তা সাময়িক। গেরস্থবাড়িতে এত বড় পাপ রয়েছে, তাতে আমাদেরও তো পাপ হচ্ছে। পরজন্মে গিয়ে সেগুলোর হিসেব কে দেবে শুনি? ভয় পাস না। এখন তো আর ব্রজেন্দ্র নেই।”

দ্বারিকা আড়চোখে ঘাড় ঘোরাল। কেষ্টহরি ঘোষালের দুই ছেলে নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ করছে।

পুরো বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে কয়েক মুহূর্ত লাগল দ্বারিকার। সতীদাহ, পাপ, ব্রজেন্দ্র, এইসব টুকরো টুকরো শব্দগুলো নিজের মতো করে জোড়া লাগানো মাত্র কেঁপে উঠল ও। আগে হলে হয়তো ভয়ে কাঁপত, কিন্তু অচ্যুত চলে গিয়ে ওকে সাহস জুগিয়ে দিয়ে গিয়েছে বলেই বোধ হয় ও রাগে কাঁপতে লাগল।

গ্রামে ফিরে আসা ক্ষমার সরল নিষ্পাপ মুখটা ওর আবার মনে পড়ে গেল। মা কথায় কথায় বলেছিলেন, মেয়েটাকে নিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ির সকলে কতটা অসন্তুষ্ট, বিরক্ত। এমনকি মেয়েটার নিজের বাবা থাকোগোপালও পাপের ভয়ে রুষ্ট।

আজ রাতে তার মানে ক্ষমাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হবে? ওকে মারার জন্যই ধরে নিয়ে এসেছে কেষ্টহরি ঘোষালের ছেলেরা?

বংশীধর বলে চলেছিলেন, “এখানে যারা ব্রাহ্মণ, প্রত্যেকে কোনো না কোনো সময় শিক্ষালাভ করেছেন আমাদের নারায়ণী চতুষ্পাঠীতে। তাই প্রবীণ থেকে নবীন, সকলেই আপনারা নারায়ণী সেনা। নিশ্চয়ই বিস্মৃত হননি, শ্রীকৃষ্ণের নিজস্ব একটি অসম শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছিল, যার নাম নারায়ণী সেনা। দুর্ধর্ষ সেই সংসপ্তক সেনাবাহিনী শ্রীকৃষ্ণ গড়ে তুলেছিলেন নিজরাজ্যকে প্রতিরক্ষায়। আমরাও কল্কি অবতারের, আমাদের গুরুদেবের নারায়ণী সেনা। তাই আমরা, এই বৈদিক সমাজের প্রতিটি ব্রাহ্মণ বহন করে চলেছি শ্রীকৃষ্ণের একেকটি নাম। নির্ভীকভাবে আমরা লড়াই করবো আমৃত্যু।

“কুরুক্ষেত্রের মতো এখানেও লড়তে লড়তে মৃত্যু হলে আমরা স্বর্গেই যাব। আমরা নেতৃত্ব দেব কায়স্থ, নবশায়ক ও তিলিকৈবর্তদের। শ্রদ্ধেয় প্রথম গুরুর জন্মশতবর্ষে এই অর্ঘ্যই দেব আমরা।”

ভগবান বিষ্ণু

পরম গুরু জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন

প্রথম গুরু গোপালকৃষ্ণ মহারাজ

বর্তমান গুরুদেব (কল্কি অবতার)

 দ্বারিকা শুনছিল বংশীধরের কথা। ওরা সকলে নারায়ণী সেনা? সত্যিই গুরুদেব নিজে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার?

নারায়ণী সেনারা কুরুক্ষেত্রে লড়েছিল, ওরা কোথায় লড়বে? আর কেনই বা লড়বে? এই পঙ্কিল সমাজের জন্য?

যেখানে প্রতি মুহূর্তে সংঘটিত হচ্ছে পাপ, অন্যায়, অবিচার?

৩৯

পার্কস্ট্রিটের একনম্বর বাড়িটাই হল এশিয়াটিক সোসাইটি। ব্যস্ত রাজপথের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে একভাবে। সকাল এগারোটা। সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে অজস্র গাড়ি। অদূরেই পার্ক স্ট্রিটের নামীদামি সব রেস্তোরাঁ। তাদের দিন সবে শুরু হচ্ছে। ঝাঁপ খুলছে একে একে।

প্রিয়াঙ্কা রুদ্রর পিছন পিছন ঢুকছিল। সামনে লাগানো প্রস্তরফলকটা দেখে বলল, “বাপরে! ১৭৮৪ সালে তৈরি হয়েছিল। এখানে কী থাকে, ম্যাডাম? বই?”

রুদ্র উত্তর দিল, “বই ঠিক নয়। এখানে বহু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আছে। অধিকাংশই সংস্কৃত। তাছাড়াও বহু দুষ্প্রাপ্য বই, মানচিত্র …।”

রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসেছেন একজন কর্মচারী। বাইরে পুলিশের গাড়ি দেখে বোধ হয় দ্বাররক্ষক গিয়ে খবর দিয়েছে তাঁকে।

রুদ্রর কাঁধে দুটি তারা সহযোগে ‘আই পি এস’ এমব্লেম দেখে তিনি সসম্ভ্রমে বললেন, “নমস্কার ম্যাডাম।”

“নমস্কার। চন্দননগর কমিশনারেট থেকে আসছি, আমি এ এস পি রুদ্রাণী সিংহরায়।” রুদ্র হাতজোড় করে নমস্কার করল, “আপনাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলা যাবে?”

“হ্যাঁ। নিশ্চয়ই যাবে। কিন্তু উনি তো একটু পরে আসেন। আমি চিফ লাইব্রেরিয়ান। আমার নাম সমর বসু। আপনারা আমার চেম্বারে এসে বসতে পারেন।” ভদ্রলোক বললেন।

“ঠিক আছে। কোনো অসুবিধা নেই।” রুদ্র পা বাড়াল। হাঁটতে হাঁটতে বলল, “ততক্ষণ না হয় আপনার সঙ্গে একটু কথাবার্তা বলি। এইট্টিন্থ সেঞ্চুরির বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? আইনের বই লিখেছিলেন। এখানে তাঁর কোনো ম্যানুস্ক্রিপ্ট আছে?”

সমর বসু খানিকটা বিস্মিত হয়ে বললেন, “অবশ্যই। আমাদের এই এশিয়াটিক সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জানেন তো? সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোন্স। তিনি ছিলেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওই আইন জাতীয় বই লেখার সুবাদেই দুজনের হৃদ্যতা বাড়ে। আটানব্বই বছর বয়সে তর্কপঞ্চানন আটশো পৃষ্ঠার বিবাদভঙ্গার্ণব বইটি লেখা শেষ করেছিলেন।”

* * *

এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে বেরোতে বেরোতে বিকেল চারটে বেজে গেল। রুদ্র যতক্ষণ ম্যানুস্ক্রিপ্ট ডিভিশনে সমরবাবুর সঙ্গে এদিক ওদিক ঘাঁটছিল, প্রিয়াঙ্কা ততক্ষণ বাইরে বসেছিল।

সব কাজ শেষে রুদ্র বাইরে বেরোতে বেরোতে সমরবাবুর দিকে ফিরে বলল, “হ্যাঁ, আপনি যা বলছিলেন। এইরকম মাইক্রোফিশ আপনাদের সংগ্রহে কত আছে, সমরবাবু?”

সমর বসু উত্তর দিলেন, “প্রায় পঞ্চাশ হাজার।”

রুদ্র বলল, “আপনি ওই ম্যাপটা আর ওই ক’টা মাইক্রোফিশ আমাকে তাহলে স্ক্যান করে …।”

“হ্যাঁ, সে বলতে হবেনা।” সমরবাবু বললেন, “আমি আপনাকে ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই সব পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

“থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!”

প্রিয়াঙ্কা রুদ্রকে দেখতে পাওয়া মাত্র উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ম্যাডাম, সুগন্ধা থানার ওসি আশুতোষ তরফদার ফোন করেছিলেন। আপনাকে না পেয়ে আমাকে। ওই কানু চক্রবর্তীর সঙ্গে থাকা ছেলেটা আজ ভোরে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে।”

“হোয়াট!” রুদ্র স্তম্ভিত হয়ে গেল।

“ইয়েস ম্যাডাম।” প্রিয়াঙ্কা বলল, “ভোরবেলা সে নাকি মন্দিরের পেছনের জঙ্গলে গিয়েছিল। আর ফেরেনি।”

“ভোরবেলা সে জঙ্গলে গিয়েছিলই বা কেন?”

“বলতে পারব না ম্যাডাম। থানা থেকে আশপাশের সব জায়গা সার্চ করা হয়েছে। কানু চক্রবর্তীকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে গেছে। আপনি কি এখন একবার যাবেন?”

রুদ্র উত্তর না দিয়ে ফোন করল লোকেশবাবুকে। রাগে ওর কপালের রগদুটো দপদপ করছিল। লোকেশবাবু ‘হ্যালো’ বলামাত্র ও স্থান কাল ভুলে চেঁচিয়ে উঠল, “আপনাকে বলেছিলাম, কানু চক্রবর্তীর সঙ্গে থাকা ছেলেটাকে টাইট সিকিউরিটি দিতে। প্রয়োজনে কোনো ক্লজ দেখিয়ে কয়েকদিনের জন্য থানায় নিয়ে গিয়ে লক আপে পুরে রাখতে। আপনি সেই ব্যবস্থা করেননি?”

যথারীতি সেই খোলকরতালের আওয়াজ। তার মধ্যেই লোকেশবাবুর অপরাধী কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “স্যরি ম্যাডাম, একদম ভুলে গিয়েছি। আসলে এখানে দিনরাত এত কাজে ব্যস্ত …!”

“রাবিশ!” রুদ্র দাঁতে দাঁত চিপে বলল, “ওখান থেকে ফিরে এসে আর ডিউটিতে জয়েন করবেন না। আমার অফিসে এসে সাসপেনশন অর্ডার নিয়ে যাবেন।”

“এত চেষ্টা করেও ছেলেটাকে আটকাতে পারলাম না। ঠিক ক্ষমার মতোই …!” ফোনটা রেখে ও আফসোসের ভঙ্গিতে কয়েক মুহূর্ত দীর্ঘশ্বাস নিল। তারপর নিজেকে কিছুটা সংযত করে গাড়িতে উঠে বসল।

“এখন কোথায় যাবেন ম্যাডাম।”

“সুগন্ধা।” রুদ্র ছোট্ট করে উত্তর দিল। নিজের মনে একের পর এক ঘটনাগুলো ও সাজাচ্ছিল।

১। জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের এক দত্তক নেওয়া বংশধর গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য আমেরিকার আমীশ সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে এসে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাতেও এমনই কোন আমীশ সমাজ গড়ে তোলার চিন্তা করেন।

২। দেশে ফিরে তিনি বাংলার কোথাও, সম্ভবত গঙ্গা নদীর তীরে সেই সমাজ গড়ে তোলেন। সেই সমাজ থেকে পালিয়ে আসা শিবনাথ বিশ্বাস বা মহম্মদ তারেককে একে একে খুন করা হয়েছে। প্রতিটি কৃষ্ণপক্ষে। যে সাতটি মানুষ খুন হয়েছে, প্রত্যেকেই এমন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল, যেটা আমীশ সমাজের কাছে পাপ।

হত্যার কারণ কি শুধুই তাই?

কী চাইছে তারা?

৩। বাংলার সেই আমীশ সমাজের সঙ্গে কি বাগডাঙার ওই সরলাশ্রমের কোনো যোগ আছে? সরলাশ্রমের সেই বইয়ের আলমারিতে বিবাদভঙ্গার্ণব কেন? কেনই বা শেষ দিন আশ্রম সুনসান ছিল? স্বপন সরকার ওই আশ্রমে কেন যেতেন?

৪। কানাই, বলরাম, গোবিন্দ, শ্যামসুন্দর। এদেরকে কি আধুনিক জগতে পাঠানো হয়েছিল শুধুমাত্র ভিক্টিমের সঙ্গে সখ্যতা করে পৃথিবী থেকে সরানোর জন্য? তাই যদি হয়, তবে এই মাসের ৪ থেকে ১৯ কৃষ্ণপক্ষ, এইসময় কোথায় খুন হবে? কে খুন হবে?

৫। প্রতিটি খুন নদীর পাশের টাউনে হয়েছে। তারা যদি খুনের জন্য নদীপথ ব্যবহার করে থাকে, তবে তারা থাকে কোথায়? বদনপুরে একে একে পালিয়ে এসেছে মহম্মদ তারেক ও এখনকার কানু চক্রবর্তীর কাছে থাকা ছেলেটি। তবে কি বদনপুর গ্রামের কাছাকাছি কোথাও তাদের আস্তানা?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *