গ্রেটা গার্বো

গ্রেটা গার্বো

বয়স চবিবশ কি পঁচিশ৷ একটু বেশি হলেও হতে পারে৷ শরীরের গড়নপেটন চমৎকার, যৌবন যেন উপচে পড়ছে৷ একবার চোখ পড়ে গেলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন৷ হাইট প্রায় পাঁচ চার, মুখেও একটা আলগা লাবণ্য আছে৷ গায়ের রঙে গাছের পাতার আভাস৷ শুকনো শুকনো, তবে সবুজই৷ নাক ঈষৎ চাপা, কিন্তু চোখ দুটো বড়ো বড়ো, ড্যাবা ড্যাবা৷ মুখের মধ্যে সব থেকে আগে নজর কাড়ে চিবুকখানা৷ অসম্ভব ধারালো চিবুক, যেন অহংকারের ইস্পাত দিয়ে বাঁধানো৷

আর্ট কলেজে ঢোকার পর থেকে রোজই প্রায়ই চোখে পড়ত তাকে৷ সদর স্ট্রিটে মিউজিয়ামের পাঁচিলের গায়ে দিব্যি একটা স্থায়ী সংসার পেতে বসেছে৷ উনুন হাঁড়ি কড়া থালা গেলাস, ভাঙা টিনের বাক্স, বস্তা পুঁটলি— কী নেই সেখানে! রোদ বৃষ্টিকে কলা দেখাতে মাথার ওপর পলিথিনের ছাউনিও বেঁধেছে একটা৷ যাদুঘরের রেলিং তার আলনা, সেখানেই ঝোলে কাপড়চোপড়৷ যাদুঘর যে গরিবদুঃখীদেরও কাজে লাগে, বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না৷

ঘরকন্না অবশ্য তার একলার নয়৷ খানতিনেক কালোকুলো আধন্যাংটো বাচচা দামাল পায়ে চরে বেড়াত ফুটপাথে৷ বাচচাগুলোও মোটামুটি নধরকান্তি, দেখে মনে হত ভালোই খাবার-দাবার জোটে৷ মা বসে বসে কুটনো কুটছে, রান্না করছে, বাসন মাজছে, রাস্তার কলে ঘষা সাবান দিয়ে কাপড় কাচছে, বাচচারা এসে দুমদাম হামলে পড়ছে মা-র পিঠে, ওমনি তাদের হাতের ঝাপটায় বেড়ালছানার মতো সরিয়ে দিচ্ছে মা— এ ছিল নিত্য দৃশ্য৷

আরও একটা দৃশ্য চোখে পড়ত আমাদের৷ পলিথিনের ছায়ায় সারাক্ষণই একটা লোক পড়ে পড়ে ঘুমোয়৷ সকাল দশটাতেও ভোঁস ভোঁস নাক ডাকাচ্ছে, দুপুরেও তাই, বিকেলেও৷ ক্কচিৎ কখনো তাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখা যায়৷ মিউজিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে রাজাবাদশার মেজাজে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক মারে লোকটা৷ তার স্বাস্থ্যটিও দেখার মতো৷ ইয়া লম্বা চওড়া, রীতিমতো তাগড়াই জোয়ান, পেশিতে রোদ পিছলোয়৷ মুখভরতি জঙ্গল জঙ্গল দাড়ি, দু-চোখ পাকা করমচার মতো লাল, যেন এইমাত্র গাঁজার আড্ডা থেকে উঠে এল৷

তা লোকটাকে নিয়ে আমার গল্প নয়, আমার কাহিনি তার সঙ্গিনীকে নিয়ে৷ আমরা ওর নাম দিয়েছিলাম গ্রেটা গার্বো৷ সম্ভবত ওই ধারালো চিবুকটার জন্যই৷ অথবা ওর ফিগার৷ তিন বাচচার মা হয়েও শরীরের কী বাঁধুনি!

প্রথম প্রথম বন্ধুমহলে গ্রেটাকে নিয়ে গবেষণা চলত জোর৷

—দেখেছিস, গোটা ফ্যামিলি কেমন তেলচুকচুকে? কী করে চলে রে গ্রেটাদের?

—ভিক্ষে৷ ভিক্ষেই তো সবচেয়ে লাভজনক প্রফেশান৷ নো পরিশ্রম, মোটামুটি সেফ ইনকাম৷

—উঁহু, গ্রেটা ভিক্ষে করে না৷

—যাহ, ফুটপাথে সিকি আধুলিগুলো তবে পড়ে কেন?

—লক্ষ্য করে দেখিস, গ্রেটা একটা পয়সাও তোলে না৷ বাচচাদেরও তুলতে দেয় না৷ সেদিন একটা সিকিতে হাত দিয়েছিল বলে বড়ো বাচচাটাকে কী পেটান পেটাচ্ছিল!

—তাহলে পয়সাগুলো এমনি এমনিই পড়ে বলছিস?

—অনেকেই তো হাঁ করে গ্রেটাকে গেলে৷ তারাই হয়তো কেউ কেউ দর্শনী দিয়ে যায়৷

—কিন্তু গার্বো ফ্যামিলির তাহলে সোর্স অফ ইনকামটা কী?

—বর কামায়৷

—হতে পারে৷ ব্যাটা শিওর চোর৷ দিনে ঘুমিয়ে নেয়, রাতে তেল টেল মেখে…

—ও ব্যাটা অতো ছোটোখাটো কাজ করার লোক নয়৷ ব্যাটা নির্ঘাত ডাকাত৷ কিংবা ভাড়াকরা খুনি লুঠেরা৷

—তাহলে মোটা মালকড়ি থাকত৷ থোড়াই ডেরা বাঁধত ফুটপাতে৷

—হয়তো এটাই ক্যামোফ্লেজ৷ কোনদিন দেখবি কাগজে বড়ো করে ছবি বেরিয়েছে৷ ডাকাতের বউ বলেই না গ্রেটার ভিক্ষে নিতে মানে লাগে৷

—দিব্যি আছে মাইরি৷ কলকাতার একদম সেন্ট্রাল প্লেসে, মিনিমাম এসট্যাব্লিশমেন্ট খরচায়…

হঠাৎই একদিন অভিজিৎ কলেজে একটা উড়ো খবর ভাসিয়ে দিল৷ গ্রেটা নাকি মোটেই ওর বরের পয়সায় খায় না, সে রীতিমতো গতর খাটিয়ে খায়৷ কিংবা বলা যায় গতর বেচে৷ অর্থাৎ সে একজন দেহোপজীবিনী৷ অভিজিৎ ডায়মন্ডহারবার লাইনের শিরাকোলে থাকে, গঙ্গার ধার থেকে বাস ধরে রোজ, সে নাকি ইডেন গার্ডেনের গেটে রঙচঙ মেখে গ্রেটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে৷

সঙ্গে সঙ্গে অভিজিতের পিছনে লেগে গেলাম আমরা৷

নন্দিনী চোখ পাকাল— অ্যাই, আমাদের গ্রেটা গার্বোর ক্যারেক্টারে তুই কালি ছেটাচ্ছিস কেন?

বিপাশা ভুরু নাচাল— তুই বুঝি ওইসব মেয়েদের দেখে বেড়াস?

গুরুপদ চাঁটি কসাল— ঝেড়ে কাশ তো৷ তুই ট্রাই নিয়েছিলি নাকি?

ঠাট্টা ইয়ার্কি হল ঠিকই, তবে অভিজিতের সংবাদটাকে আমরা পুরোপুরি উড়িয়েও দিলাম না৷ অমন যৌবন আছে, ভিক্ষাবৃত্তির বদলে গ্রেটা আদিম পেশা অবলম্বন করতেই পারে৷ তবে আমাদের মধ্যে একচোট তর্কও হয়ে গেল৷ অভিজিৎ-রমেন-নন্দিনী-বিপাশাদের মতে ওরকম নোংরা জীবন যাপন করার চেয়ে ভিক্ষে করা ঢের ভালো! বেশ তো গতর আছে, দেহ না বেচে লোকের বাড়ি খেটেও তো খেতে পারে৷ সমর গুরুপদ লোকেন্দ্র আর আমি অবশ্য বিপরীত মতের, ভিক্ষে করার চরম বিরোধী৷ আমরা গলা ফাটিয়ে বললাম, যেকোনো মানুষের যেকোনো স্বাধীন পেশা বেছে নেওয়ার অধিকার আছে৷ লোকের বাড়ি কাপড় কাচা বাসন মাজা যেমন এক ধরনের সার্ভিস, তেমন শরীর বিক্রিটাকেও আর এক ধরনের সার্ভিস বলে মেনে নিলেই হয়৷ এই যে মেয়েগুলো আমাদের কলেজে মডেল হতে আসে, পেটের তাড়নায় চোখ বুজে নিজেদের উন্মোচিত করে দেয়, আমরা শিল্পীরা কি তাদের হীন চোখে দেখতে পারি? না দেখাটা উচিত?

তবে গ্রেটার বরটিকে নিয়ে কৌতূহল আমাদের রয়েই গেল৷ বউয়ের দেহ নিংড়ানো রোজগারে আয়েস করে খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমোচ্ছে… এ কেমন ধারার পুরুষ মানুষ?

আমরা যখন সেকেন্ড ইয়ারের মাঝামাঝি, গ্রেটা তার চতুর্থ সন্তানটি প্রসব করল৷ যেতে আসতে দেখেছি গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপেও ইয়া বড়ো একখানা ভুঁড়ি নিয়ে অনায়াসে সংসারের কাজকর্ম করে চলেছে গ্রেটা৷ তারপর কবে হল, কোথায় হল, ভগবান জানে, একদিন দেখি ইঁদুরছানার মতো লাল লাল একটা বাচচাকে দুধ খাওয়াচ্ছে৷ লজ্জা শরমের বালাই নেই, ভারী ভারী স্তন দু-খানা পুরোপুরি উন্মুক্ত, অনেক পথচারীই তার দেহশোভা উপভোগ করছে, কিন্তু তা নিয়ে এতটুকু ভ্রূক্ষেপ নেই গ্রেটার৷ বরং সে যেন ওই দৃষ্টিতে গর্বই অনুভব করে৷ সত্যি কথা বলতে কি, আমরাও চোরা চোখে তাকিয়েছি৷

লোকেন্দ্র তো একদিন বলেই ফেলল— ইশ, গ্রেটাকে দেখলেই আমার হাতটা কেমন নিশপিশ করে৷

—তোরও? ইউ টুউ ব্রুটাস?

—বডির কার্ভগুলো দেখেছিস? ওকে যদি মডেল করা যেত…

গুরুপদ হা হা হেসে বলল— লাভ নেই বস, ও মডেল হবে না৷

—কী করে বুঝলি?

—একবার ট্রাই নিয়েছিলাম৷ প্রোপোজাল শুনে বলে, আমায় কী করতে হবে?

আমি বললাম, কিছুই না, জাস্ট বসে থাকবে, তোমায় আমি আঁকব… পয়সাও পাবে…৷ শুনে গা মোচড়ালো, আর কী করতে হবে…? আমি বললাম, ব্যস ওইটুকুই৷… কিছুতেই রাজি হল না মাইরি৷ বলে, শুধু বসে বসে আমি রোজগার করি না৷ টাকা বেশি থাকলে অন্য লোককে বিলিও! প্রেগন্যান্ট গ্রেটার একটা স্কেচ করতে পারলে কী দারুণ হত বল?

নন্দিনী মুখ বেঁকিয়ে বলল— পারিসও বটে তোরা৷ ফুটপাতের একটা নোংরা মেয়েমানুষ, মাথাভরতি উকুন, গায়ে গন্ধ… অ্যাপ্রোচ করলি কী করে৷

তা ফুটপাতের মেয়েমানুষ ফুটপাতেই রয়ে গেল৷ নিজের মতো করেই৷ বছর দেড়েক পর আর একটা বাচচা বিয়োল, গিনিপিগের মতো বাচচাগুলো ঘুরে বেড়ায় ফুটপাতময়, আর মা বসে বসে রাঁধাবাড়া করে, বাচচা খাওয়ায়, উকুন বাছে, চুল আঁচড়ায়, তারপর অন্ধকার গাঢ় হলে খোঁপা বেঁধে কোমর দুলিয়ে বেরিয়ে পড়ে নিজের ধান্দায়৷ শরীর খানিক টসকেছে বটে, কিন্তু পেশা ছাড়েনি গ্রেটা৷

বরটারও কোনো পরিবর্তন নেই৷ ঘুমোয়, ঘুমোয় এবং ঘুমোয়৷ আর মর্জি হলে চোখ লাল করে চৌরঙ্গি টহল দেয়৷ ছানাপোনাগুলোর ওপরেও লোকটার কোনো মায়ামমতা দেখি না৷ হয়তো ওগুলোকে নিজের বাচচা বলে মনেই করে না৷

তা ছবিটা আচমকাই বদলে গেল একদিন৷

আমরা তখন ফোর্থ ইয়ারে৷ সামনেই অ্যানুয়াল এগজিবিশান, আমাদের তখন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই৷ ছবি আঁকছি, ছবি সাজাচ্ছি, এই স্যারের কাছে ছুটছি, ওই ম্যাডামের কাছে যাচ্ছি… ডিসেম্বরের শীতেও আমাদের গলদঘর্ম দশা৷ তার মধ্যেই বিপাশা হঠাৎ এসে বলল— অ্যাই বরুণ, আমাদের গ্রেটা গার্বো তো যায় যায়৷

জুনিয়ার ক্লাসের একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলছিলাম৷ ঘুরে তাকিয়ে বললাম,

—কী হয়েছে?

—খুব অসুখ৷

—যাহ, এই তো কবে একটা দেখলাম বসে রোদ পোয়াচ্ছে…

—না রে, পরশু থেকে বেচারা কাঁথা মুড়ি দিয়ে পড়ে৷ আজ ওই ফুটপাত ধরে আসছিলাম… একবার উঁকি মেরেছিলাম ওর ডেরায়…৷ যাচ্ছেতাই অবস্থা৷ বাচচাগুলো বাইরে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে, আর গ্রেটা গুটিসুটি মেরে ঘঙঘঙ কাশছে…

—তাই? …তা সেই ঘুমন্ত ডাকাতটি কোথায়?

—দেখলাম না৷ …মনে হল ডাক্তার-ফাক্তারও দেখায়নি, ওষুধ-বিষুধও খায়নি…

গ্রেটার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই, আলাপই বা কতটুকু আছে? তবু আমাদের কলেজের ক-পা দূরে বসবাস করার সূত্রে ও আমাদের এক ধরনের প্রতিবেশী তো বটে৷ তা ছাড়া সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখছি… খারাপই লাগল শুনে৷

কলেজ থেকে বেরোতে সেদিন রাত হল৷ প্রায় সাড়ে আটটা বাজে৷ শীতের সন্ধে এর মধ্যেই বেশ জবুথবু মেরে গেছে৷ ময়দানে কুয়াশার পর্দা, গাছগাছালিগুলোকে কেমন ভূতুড়ে ভূতুড়ে লাগে৷ বাস ট্রাম চলছে, তবু একটা আলগা নির্জনতা যেন গ্রাস করে নিয়েছে চৌরঙ্গিকে৷ হ্যালোজেন পথবাতিও কেমন ম্রিয়মাণ এখন৷

বাসস্টপে এসে দাঁড়িয়েছি, নন্দিনী ঠেলল— ওই দ্যাখ, গ্রেটার বরটা৷

দেখলাম৷ মিউজিয়ামের বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে যেন গুজগুজ করছে৷

রমেন বলল— বউয়ের জন্য খদ্দের ফিট করছে নাকি?

—হতে পারে৷ বউ জ্বরে কাবু, বেরোতে পারছে না…

বিপাশা শিউরে উঠল— কী সাংঘাতিক! …অ্যাই, তোরা গিয়ে একটু কথা বল না, জিজ্ঞেস কর না বউয়ের কী হয়েছে৷

—দুর, বাদ দে৷

গুরুপদ বলল— আমি যাব? জেনে আসব?

রমেন বলল— চল তবে?

আমিই ডাকলাম— এই যে, শোনো৷

লোকটা এগিয়ে এল— বলছিলেন কিছু?

—কী হয়েছে তোমার বউয়ের?

বুঝি একটু অবাকই হল লোকটা৷ চোখ কুঁচকে একবার কলেজটাকে দেখল, একবার আমাদের৷ ভারিক্কি গলায় বলল— ব্যামো হয়েছে৷

—ওষুধপত্র খাইয়েছ কিছু?

খাঞ্জা খাঁর কায়দায় বলল— ও এমনি জ্বরজারি৷ এমনিই সেরে যাবে৷

—ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে একটা ডাক্তারখানা তো আছে, বিনা পয়সায় ওষুধ দেয়৷ ওখানে তো দেখিয়ে আনতে পার৷

—বললাম তো, এমনি সারবে৷

ধুত্তেরি ছাই, যার বউ তার গা নেই…! আমরাও আর বেশি মাথা ঘামালাম না৷ খেয়ে দেয়ে প্রচুর কাজ আছে আমাদের৷

গ্রেটা আর আমাদের মগজেই ছিল না৷ বাৎসরিক প্রদর্শনীর রাজসূয় যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর ছুটি পড়ল ক-দিন৷ জানুয়ারিতে আবার কলেজে এসেছি, নন্দিনী ঢুকেই বলল— গ্রেটার হাল খুব খারাপ রে৷ বোধ হয় আর বাঁচবে না৷ চল, একটু দেখে আসি৷ যাবি? চল না৷

গ্রেটার আস্তানায় গিয়ে ঘাবড়ে গেলাম রীতিমতো৷ এ যে খুবই ঘোরালো পরিস্থিতি৷ বেচারা গ্রেটা বিছানায় প্রায় মিশে গেছে৷ চোখের নীচে গাঢ় কালি, চোয়ালভাঙা, চেহারায় সেই জৌলুসই নেই আর৷ বাচচাগুলোও কেমন ন্যাতা ন্যাতা হয়ে গেছে, ঝাঁক বেঁধে বসে মুড়ি খাচ্ছে খুঁটে খুঁটে৷ আপাদমস্তক কাঁথা মুড়ি দেওয়া গ্রেটা কাশির দমকে উঠে বসছে বারবার, আর হাপরের মতো হাঁপাচ্ছে৷

গুরুপদ জিজ্ঞেস করল— কী ওষুধ খেয়েছ?

আমাদের দেখে থতমত খেয়েছে গ্রেটা৷ দম নিয়ে বলল— জ্বরের বড়ি৷

—তো জ্বর ছাড়ছে না কেন?

—ছাড়ে৷ আবার আসে৷ বলতে বলতে ফের কাশি৷ গ্রেটা কাঁথা চেপেছে মুখে৷ স্তম্ভিত হয়ে দেখি কাঁথায় রক্ত!

আমরা চারজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম৷ টিবি! এ তো মহা ফাঁদে পড়া গেল৷ শুকনো আহা উহু করে তো আর কেটে পড়া যায় না৷ জিজ্ঞেস করলাম— কবে থেকে রক্ত উঠছে? গ্রেটা নিজেও বোধ হয় জানে নিজের রোগের গুরুত্ব৷ অপরাধী মুখ করে বলল— বেশি নয়, এক আধদিন বেরোয়৷

—এরকম জ্বর কদ্দিন ধরে হচ্ছে?

উত্তর নেই৷

নন্দিনী উবু হয়ে বসেছে৷ প্রশ্ন করল— তোমার বরকে দেখছি না?

ধুঁকতে ধুঁকতেও গ্রেটা ঝেঁঝে উঠেছে— আ মরণ! ও আমার বর কেন হবে? ও আমার নাঙ৷ ওকে আমি রেখেছিলাম৷

বৈপ্লবিক ঘোষণা! নন্দিনী বিষম খেল যেন৷ ঢোক গিলে বলল— ওই হল৷ তা তোমার ওই ইয়ে কোথায়?

—কী জানি! খেতে দিতে পারছিলাম না৷ ভেগে গেছে৷

—এই সময়ে কেটে পড়ল?

—আমার গতর সারলে পরেই ফিরবে৷

গুরুপদ বলল— একে তো এক্ষুনি হাসপাতালে দিতে হয় রে৷

হাসপাতালের নাম শুনেই দাপুটে গ্রেটার সে কী হাউমাউ কান্না— আমি যাবনি, আমি যাবনি৷ আমি মরে গেলে আমার কচিগুলোর কী হবে?

মার দেখাদেখি বাচচাগুলোও তারস্বরে কান্না জুড়েছে৷ প্যাঁ পোঁ মিলে সে এক ক্যাডাভ্যারাস কনসার্ট৷

বিপাশা পেশাদার পশুপ্রেমিক৷ রাস্তার বহু নাছোড়বান্দা তে-এঁটে কুকুর বেড়ালকে সে বশ করে ফেলে৷ তার শরীরে ঘেন্নাপিত্তিও কম৷ গ্রেটার নোংরা বিছানায় বসে পড়েছে সে৷ গ্রেটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল— হাসপাতালে গেলে কেউ মরে নাকি? ওষুধ দেবে, পথ্য দেবে, একদম ঠিক হয়ে যাবে৷

—না গো দিদিমণি, কচিদের ফেলে আমি কোত্থাও যাবনি৷

—ওদের নিয়ে ভেবো না৷ আমরা তো আছি৷

কী বুঝল কে জানে, গ্রেটা নিমরাজি মত হল শেষে৷ আর দেরি নয়, আমরা চাঁদা তুলে কলেজে একটা ‘সেভ গ্রেটা’ ফান্ড তৈরি করে ফেললাম৷ শিক্ষক শিক্ষিকারাও যথেষ্ট সহযোগিতা করলেন৷ প্রিন্সিপাল প্রভাব খাটিয়ে কাছেই এক মিশনারি হাসপাতালে ভরতির বন্দোবস্ত করলেন গ্রেটার৷ বাচচাগুলোকে জিম্মা করে দেওয়া হল গ্রেটার প্রতিবেশিনী এক কেঁদো ভিখারিণীর হাতে৷ অবশ্য মাগনা নয়, খরচা দিতে হত নিয়মিত৷ পার ডে তিরিশ টাকা, তখনকার দিনে নেহাত কম নয়৷

বিপাশা নন্দিনী মাঝে মাঝেই যেত হাসপাতালে৷ ওদের মুখেই শুনলাম গ্রেটার অসুখের মূল কারণ চরম অপুষ্টি৷ অত রান্নাবাড়া তবে কার জন্য করত গ্রেটা? নিজে খেত না? আশ্চর্য, সেই হারামজাদাটা খেয়ে দেয় কেঁদো মোষ হয়ে পালিয়ে গেল? যাই হোক, স্বস্তির খবরও পেলাম৷ দুধটা ঘি-টা ডিমটা মাখনটা পাচ্ছে গ্রেটা, তার শরীর আবার ফিরছে, কড়া কড়া ওষুধ ইঞ্জেকশানে রোগও চাপা পড়ছে দ্রুত৷

মাস খানেক পরেই হঠাৎ একদিন দেখি গ্রেটা আবার স্বস্থানে৷ বাচচাগুলো ফের গ্রেটার ঘাড়ে মাথায় নেচে বেড়াচ্ছে৷ শরীরের চেকনাই যদিও পুরো ফেরেনি, তবে অসুখ অসুখ ভাবটা নেই আর৷ হাসি হাসি মুখে দাঁড়ালাম ফুটপাথে— কী গো, ছাড়া পেয়ে গেলে?

—উঁহু৷ গ্রেটা একগাল হাসল— পেইলে এসছি৷

—সে কী? কেন?

—ও আমার পোষাচ্ছিল না গো দাদা৷ নিত্যি নিত্যি মাছ মাংস ডিম… এই বড়ো গেলাসে দুধ… এদিকে আমার ছাওয়ালগুলো কী খাচ্ছে ঠিক নেই…

—এ তো ভারি অন্যায় কথা৷ আমরা এত কাঠখড় পুড়িয়ে তোমায় একটা ভালো জায়গায় ভরতি করলাম…

—আমি সেরে গেছি দাদা৷ আর জ্বর আসে না৷

—কিন্তু এখনও নিশ্চয়ই ওষুধপত্র দরকার…!

—ওষুধ আর লাগবে না৷ পেট ভরে ভাত খাব, সেরে যাবে৷

মনে মনে বললাম, হ্যাঁ আবার ওই ময়দানের অন্ধকারে ছোটো!

গ্রেটা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল— আর আমি হাসপাতালে যাবনি গো দাদা৷ আমার ছাওয়ালগুলোন তবে এক্কেরে নষ্ট হয়ে যাবে৷ জানো, ওই মিনতি হারামজাদি আমার হাবু পটলিকে এর মধ্যেই ভিক্ষে করা শিখিয়ে দিয়েছে!

গম্ভীর সমস্যা! কেড়েকুড়ে খাক, চোরবদমাশ বনুক, বেশ্যা হয়ে যাক… তা বলে গ্রেটা গার্বোর বাচচারা ভিখিরি? নৈব নৈব চ!

নাহ, এত গভীর জীবনদর্শন আমার মাথায় সিঁধোবে না৷ ক্লাসে এসেই বন্ধুদের গ্রেটার প্রত্যাবর্তন সমাচার শোনালাম৷ শুনে সকলের মাথায় হাত৷

নন্দিনী ভার মুখে বলল— এখন প্রিন্সিপালের কাছে মুখ দেখাব কী করে?

অভিজিৎ ঠোঁট ওল্টাল— এই জন্যই তো ওই ছোটোলোক ক্লাসের জন্য কিছু করতে নেই৷

গুরুপদ বলল— দেখতে হবে না, ক-দিন বাদেই আবার মুখ দিয়ে রক্ত তুলবে৷

রমেন কাঁধ ঝাঁকাল— যা খুশি হোক, আমরা আর ওর ব্যাপারে নেই৷

মুখে বললাম বটে, কিন্তু গ্রেটাকে পুরোপুরি ঝেড়েও ফেলা গেল না৷ গ্রেটাই ডেকে ডেকে কথা বলে৷ তার চোখে আমরা তখন পুরুষও নই, নারীও নই, শিল্পীও নই, একেবারে পুরোদস্তুর ভগবান৷ গ্রেটার জীবনকাহিনিও অনেকটাই জানা হয়ে গেল আমাদের৷ তার বাড়ি নাকি সুন্দরবনের অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলে৷ গ্রামের নাম নটেখালি, বিস্তর নদীনালা টপকে সেখানে পৌঁছতে হয়৷ ট্রেনে ক্যানিং, মাতলা টপকে ডকের খেয়া, ভ্যানরিক্সায় সোনাখালি, সেখান থেকে পুরন্দর পার হয়ে বাসন্তী, আবার ভ্যানরিক্সা, ফের গাঙ পেরিয়ে গোসাবা, ফের ভ্যানরিক্সা, ফের গাঙ পেরোনো… সে যাকে বলে রেকারিং ডেসিমেল৷

আমরা জিজ্ঞেস করি— তা তুমি সেখান থেকে এখানে পৌঁছলে কী করে?

—ওই ভবই আমায় ফুঁসলে নে এল৷

—ভব মানে তোমার সেই রাখেলটা?

—নাউকে তোমরা বুঝি রাখেল বলো?… ওর সঙ্গে আমার পিরিত হয়েছিল গো৷ শ্যামটি সেজে বংশী বাজাল, আমিও আমার আয়ান ঘোষ ছেড়ে…

—আয়ান ঘোষ? আই মিন তোমার স্বামী?

—স্বামী নয়, বলো ঢ্যামনা৷ সুখ দেওয়ার মুরোদ নেই, বউ পোষার শখ!

—বাচচা কাচচা হয়েছিল তখন?

—বললাম না ক্ষ্যামতা ছিল না? সেই জন্যই তো ত্যাগ দিলাম৷

কে বলে এ দেশে নারী স্বাধীনতা নেই৷ এ যে দেখি নিজেই কোর্ট, নিজেই জজ!

—তা তোমার ভবকে বিয়ে করোনি কেন?

—ঢ্যামনাটাকে ছাড়ার সময়েই পণ করেছিলাম, পুরুষমানুষকে আর বিয়ে করবনি৷ রাখব৷

—বাহ, অসাধারণ! কিন্তু তোমার ভবর রোজগারপাতিতে এত অনীহা কেন?

—আহা, সে কেন খাটতে যাবে? আমি আছি কী করতে? মাগ যদি মরদেরটা খেতে পারে, মরদ কেন মাগেরটা খেতে পারবে না? তার অমন রাজার মতো রূপ, খাটলে পরে সোনার অঙ্গ কালি হয়ে যেত নি?

—কিন্তু সেই রাজা যে এখন ভাগলবা হল?

—ফিরবে ফিরবে৷ আমি ছাড়া তার গতি কী!

হ্যাঁ, গ্রেটার এরকমই বিশ্বাস ছিল৷ তবে গ্রেটার রাজার সঙ্গে গ্রেটার পুনর্মিলন দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমাদের৷ গ্রেটাও নতুন উদ্যমে নেমে পড়ল তার নিজস্ব ধান্দায়৷ আমরাও পাস-টাস করে ছড়িয়ে পড়লাম যে যার মতো৷ বছরখানেকের মাথায় একটা ফ্রেঞ্চ স্কলারশিপ জুটে গেল আমার৷ এক বছরের স্কলারশিপ নিয়ে নিজেই চেষ্টাচরিত্র করে আরও বছর তিনেক কাটিয়ে দিলাম প্যারিসে৷ কলকাতা ফিরেই ঢুঁ মারতে গিয়েছিলাম কলেজে৷ কিন্তু সদর স্ট্রিটের মুখে গ্রেটার আর দেখা পাইনি, তার সাধের সংসারটিও উধাও৷ শুনলাম ঝুপড়ি-টুপড়ি সব ভেঙে দিয়েছে পুলিশ৷

গ্রেটাকে আস্তে আস্তে প্রায় ভুলেই গেলাম৷

আঁকাআঁকি নিয়েই থাকি৷ বিয়ে একটা করে ফেললাম বটে, কিন্তু সে বিয়ে টিকল না৷ বছর কয়েক ব্রহ্মচারী থেকে ফের মাথা মোড়ালাম৷ ক্রমশ একটা থিতু সংসার গড়ে উঠল আমার৷ পাশাপাশি নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে আঁকার জগতেও পনেরো বছরে পৌঁছেছি একটা জায়গায়৷ চিত্রশিল্পী হিসেবে আমাকে মোটামুটি নামিই বলা চলে৷

এই সেদিন দুপুরে পার্ক স্ট্রিটের পরিত্যক্ত কবরখানাটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ হঠাৎই মনে পড়ে গেল ক-দিন ধরেই কিছু পাতাবাহার গাছের কথা বলছে মৈত্রেয়ী৷ আমাদের সদ্য কেনা ফ্ল্যাটটা সাজাবে৷ মৈত্রেয়ীর খুব গাছের শখ, ঘরবাড়িকে সবুজ দেখতে ভালোবাসে৷ দাঁড়িয়ে গেলাম৷ আজই নিয়ে নেব? এক্ষুনি? বাড়ি কি ফিরব এখন?

দোনামোনা করতে করতে ঢুকেই পড়লাম ভেতরে৷ এই কবরখানার হাড়হদ্দ আমার চেনা, কলেজজীবনের অনেক সোনালি মুহূর্ত ছড়িয়ে আছে এখানে৷ এই মধ্যবয়সে হঠাৎ হঠাৎ এসে পড়লে ভালোই লাগে৷

এখানকার নার্সারিটাও পুরোনো৷ এখনও আমায় চিনতে পারল বুড়ো মালিটা৷ ওই আমায় বেছে বেছে গাছ দিল গোটা পাঁচেক৷ সাইকাস, আডেনিয়াম, জেড আর তরতাজা দুটো এরিকা পাম৷ টবগুলো আলাদা করে রেখে একটু ঘুরছিলাম চারদিক৷ কত যুগ আগের মৃত মানুষ এখানে শুয়ে আছে সার সার৷ কোথাও ছোট্ট করে এপিটাফ লেখা সমাধি, কোথাও গথিক স্থাপত্যের মনোরম স্মৃতিসৌধ৷ ভেঙে ভেঙে পড়ছে সব, ইঁট বেরিয়ে পড়েছে, তবু ইতিহাস এখনও যেন মুখর এখানে৷ ওই তো ওখানে চার্লস ডিকেন্সের ছেলে শুয়ে, ওই তো ওখানে শায়িত রয়েছেন উইলিয়াম জোনস…৷ আগে জায়গাটা গাছ আগাছায় আরও কত সবুজ ছিল, এখন দেখলাম একদিকের কোণ কেমন ন্যাড়া ন্যাড়া৷ ওদিকে তো বেশ কিছু বড়ো বড়ো শিরীষ শিমুল ছিল৷ কোথায় যে গেল!

হাঁটতে হাঁটতে পিছন ভাগটায় চলে এসেছি৷ সহসা দৃষ্টি স্থির৷ একটা প্রায় ভাঙা স্মৃতিফলক, তার পাশে এক জীবন্ত কঙ্কাল!

হাড্ডিসার দেহ ঝুঁকে পড়ে কী যেন খাচ্ছে হাপুস হুপুস করে৷ পরনে একটা কালো চিট কাপড়ের টুকরো, খালি গা, রুক্ষ চুলে থোকা থোকা জটা৷ শুকনো চিমসে স্তন ঝুলে আছে কাপড়ের পাশ দিয়ে৷

কী খাচ্ছে ওটা? বুভুক্ষুর মতো? ভাত?

পায়ের শব্দ পেয়ে জ্যান্ত শব চোখ তুলেছে৷ ড্যাবাড্যাবা চোখে দু-এক পল দেখল আমায়৷ আবার ডুব দিয়েছে আহারে৷ চটপট হাত চালাচ্ছে, কষ বেয়ে গড়াচ্ছে খাদ্যরস৷

মুখটা খুব চেনা চেনা যেন? বড়ো বড়ো চোখ, নিখুঁত ভি শেপ চিবুক…!

গ্রেটা গার্বো না?

হ্যাঁ, গ্রেটাই তো৷ কিন্তু এ কী চেহারা হয়েছে?

পায়ে পায়ে কাছে গেলাম— কি গো, চিনতে পারছ?

গ্রেটা তাকালই না৷ হাত চাটছে এক মনে৷

—মনে পড়ছে না? সেই যে তোমার অসুখ করল, হাসপাতালে নিয়ে এলাম…৷

শুনছে কি আদৌ?

বুড়ো মালি ডাকছে পিছন থেকে— কার সঙ্গে কথা বলছেন বাবু? ও তো পাগলি৷

সরে এসে মালিকে জিজ্ঞেস করলাম— এ কবে থেকে এখানে আছে?

—তা হবে এক দু-বছর৷

—কেউ নেই ওর?

—কী জানি বাবু, বলতে পারব না৷ কখনো ফুটপাথে পড়ে থাকে, কখনো কবরখানায়…৷ মালি দাঁত বার করে হাসল— পাগলির কিন্তু খুব তেজ৷ কেউ খেতে দিলে খায় না, পয়সা দিলে নেয় না… দিতে গেলে উল্টোপাল্টা কথা বলে৷

—তো খাবার জোটে কোত্থেকে?

—ঘুরে ঘুরে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনে৷

—ও৷

—আপনার ট্যাক্সি ডাকব বাবু?

—ডাকো৷

মালি চলে যেতেই আবার গ্রেটার কাছে গেলাম— তোমার ছেলেপুলেগুলো সব কোথায়?

গ্রেটা যেন এবার ভুরু কুঁচকে শুনল কথাটা৷ দু-দিকে মাথা দোলাচ্ছে৷

—আর তোমার সেই ভব?

চমকে চোখ তুলেছে গ্রেটা৷ তাকিয়ে রয়েছে নিষ্পলক৷

আহা রে, সবাই গ্রেটাকে ছেড়ে চলে গেছে৷ মায়ায় ভরে গেল বুকটা৷ উবু হয়ে বসলাম সামনে৷ পকেট থেকে একখানা একশো টাকার নোট বার করে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম— শোনো, এটাকে ভিক্ষে বলে মনে কোরো না৷ রাখো৷ রেখে দাও…

কথা শেষ হল না, অদ্ভুত এক কাণ্ড করে বসল গ্রেটা৷ টাকাটার দিকে ঝলকে তাকিয়েই গায়ের আঁচলখানা ফেলে দিয়েছে৷ হলদেটে চোখে বিদঘুটে এক কটাক্ষ হানল৷ বিস্মৃত স্বরে বলে উঠল— শুবি আমার সঙ্গে? শুবি? আয়৷ আয়৷

চৈত্রের হাওয়া ঘূর্ণি তুলছে কবরখানায়৷ ধুলো উড়ছে, শুকনো পাতাও৷ রোদ্দুর শুষে নিচ্ছে ছায়াকে৷ জীর্ণ বুকের খাঁচায় ঝুলছে দু-টুকরো চামড়া৷

আমার গা শিরশির করছিল৷

গ্রেটার সঙ্গে সেই আমার শেষ দেখা৷ মাস আটেক পরে আর একবার গিয়েছিলাম কবরখানায়৷ গ্রেটা তখন মরে গেছে৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *