গ্রামপ্রধানের ছেলে

গ্রামপ্রধানের ছেলে

তখন খুব ভোর। গাড়িটা চলেছে সিয়েম রিপ থেকে আঙ্কোরভাট-এর দিকে। কম্বোডিয়ায়। গাছপালার আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ছে সাজগোজ করা বাড়ি। আসলে ওগুলো হোটেল। গাছপালার আড়ালে দেখা যায় খড়ের চালের ঘর। গ্রাম। মুরগির ডাক শুনলাম। একদম বাঁকুড়ার।

আমি একটা এন জি ও-তে কাজ করি। বেশ নাম আছে। এখন বাঁকুড়ায় পোস্টিং। একটা সেমিনারে এসেছিলাম নমপেন-এ। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিরা মিলিত হয়েছিলাম এইডস প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করতে। ভেবেছিলাম নমপেন-এ যখন আসাই হল, আঙ্কোরভাট না দেখে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না।

নমপেন শহরটা কেমন যেন বিষাদগ্রস্ত। রাস্তার আলোগুলো ম্রিয়মাণ। বাড়িগুলোয় রং হয়নি বহুকাল। বাতাসে মিশে আছে যুদ্ধশেষের দীর্ঘশ্বাস। সারাটা শহরে যেন বিছিয়ে রয়েছে গান্ধারীর শাড়ি। কত যুদ্ধের ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে দেশটার উপর দিয়ে, শহরটার উপর দিয়ে। নমপেন হল কম্বোডিয়ার রাজধানী। ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময় উত্তর ভিয়েতনামের গেরিলাবাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামে যেত কম্বোডিয়া হয়ে। কম্বোডিয়াতে বোমা ফেলেছে আমেরিকা। অনিচ্ছাতেও যুদ্ধে জড়িয়েছে দেশটা। তারপর এল পলপট। সে এক বিভীষিকার সময়। সারা দেশে চুলপাকা মানুষ নেই। যাদের চুল পাকার কথা ছিল, তারা আগেই মরে গেছে। সেমিনার পরিচালনা করছিলেন যে মহিলাটি, সে কম্বোডিয়ান। বয়স ঠিক বোঝা যায় না। তার গলার সোনার লকেটের ভিতরে একটি পুরুষমানুষের ছবি। হয়তো লকেটের সূক্ষ্ম সোনার ফ্রেমের ভিতরে স্তব্ধ রয়েছিল একটা গোটা যুদ্ধ, হাহাকার আর যন্ত্রণা।

আঙ্কোরভাট দেখতে হলে প্রথমে সিয়েম রিপ আসতেই হবে। সিয়েম রিপ-এ একটা এয়ারপোর্ট আছে। নমপেন থেকে বিমানে আধঘণ্টার মতো লাগে। বাসেও যাওয়া যায়। লঞ্চেও। মেকং নদীর উপর দিয়ে চার ঘণ্টা, তারপর একটা ছোট নদী। এঁকেবেঁকে অবশেষে সিয়েম রিপ। মেকং-এর স্থানীয় উচ্চারণ অনেকটা মাগং’-এর মতো। আমার তো মনেই হয়েছিল মাগংগা।

এখন কম্বোডিয়ান মুরগির ডাকে স্পষ্ট শুনলাম কাজে চলো—কাজে চলো। বৃষ্টি ভেজা গাছে পাখিরা কিচিরমিচির শুরু করে দিয়েছে। নারকোল গাছের ডালে ডালে ঝুলে আছে কুয়াশা। চওড়া রাস্তা। মসৃণ। রাস্তায় হু হু করে চলছে ট্যুরিস্ট বোঝাই গাড়ি। আমি একটা কনডাকটেড ট্যুর নিয়েছি। একাই। ভারত থেকে আরও দু’জন এসেছিল, ওরা কেউ আঙ্কোরভাট দেখতে আসেনি। সিয়েম রিপ-এ যে-হোটেলে উঠেছিলাম, তারাই এই ট্যুর-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাথাপিছু পঁচিশ ডলার। ইনকুডিং ব্রেকফাস্ট অ্যান্ড লাঞ্চ।

সেই ছোটবেলায় স্কুলের বইতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের একটা কবিতায় ছিল বোরোবুদর আর আঙ্কধাম মোদেরই প্রাচীন কীর্তি। মানে বইয়ের ‘টীকা লিখ’র মধ্যে আঙ্করধাম পড়েছিলাম। সেই আঙ্করধাম-এ কখনও আসা হবে ভাবিনি আমি।

কম্বোডিয়ায় এখনও প্রাচীন ভারতের বিপন্ন অবশেষ পড়ে আছে। আগেকার ইন্দোচিন এখন তিন টুকরো। লাওস, ভিয়েতনাম আর কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়া আসলে ছিল কম্বোজ। এখানে এখনও রাস্তার নাম বীথি। বড় রাস্তা মহাবীথি। হোটেলের নাম নাকোরালায়া। ওটা কি নগর-আলয়? যে-হোটেলে ছিলাম তার নাম হোটেল সোভান্ন। সোভান্ন কি সুবর্ণ? আর আঙ্কর মানে কি তবে ওঙ্কার? সিঙ্গাপুর তো নিশ্চয়ই সিংহপুরই ছিল। সুমাত্রা, যবদ্বীপ, বলিদ্বীপ—সব কিছুতেই ভারতের স্মৃতি। চম্পা দেশটা কোথায় ছিল? মলয় দেশ? ওটাই কি মালয়েশিয়া?

সব জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছিল। পুরো আঙ্কোরভাট। কেউ জানত না। ফরাসি সাহেবরা খুঁজে পেয়েছিলেন আঙ্কোরভাট। এখন সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসে এই আশ্চর্য মন্দিরটা দেখতে। আমিও যাচ্ছি, ফেলে আসা ভারতের দীর্ঘ আঁচল-ছায়ায় যাচ্ছি।

গাড়িটায় কুড়িজন। বারোজন আমেরিকান, চারজন ফ্রান্স থেকে এসেছে। তিনজন ফিলিপিনস-এর, আর একা ভারতীয় আমি। গাইড ছেলেটি বলল—মাই নেম ইজ খেম বং। আই অ্যাম এ পোস্ত গ্রাজুয়েত স্তদেন্ত ওফ হিস্তরি। ছেলেটি জানাল আঙ্কোরভাট একটা বিশাল জায়গা। কেউ যদি হারিয়ে যায়, মোবাইলে যোগাযোগ করে নিতে হবে। সবাইকে কার্ড দিল ছেলেটি। নাম এবং মোবাইল নম্বর লেখা আছে। লেখা আছে লাইসেনল্ড গাইড। তারও একটা নম্বর আছে। একদম তলায় লেখা কাম এগেইন।

হাইওয়ে থেকে একটা লাল মাটির রাস্তা চলে গেছে। গাড়িটা ওই পথে ঢুকল। একটা তোরণদ্বার। কম্বোডিয়ার কোনও গ্রামে ঢুকবার পথে এরকম তোরণ থাকে। এর আগেও দেখেছি। অরুণাচলেও দেখেছি এরকম কাঠের তোরণ। শুনেছিলাম যে-গাছের তলায় শুয়ে গ্রাম্যপ্রধান সুখস্বপ্ন দেখে, সেই গাছের কাঠ দিয়েই তৈরি হয় প্রবেশ তোরণ। সে তো অরুণাচলে। এখানকার তোরণগুলোও কাঠেরই। এসবও কি স্বপ্ন দেখানো গাছের?

তোরণের সামনে এই ভোরবেলায় কয়েকটা বালক দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন মহিলাও। গাইডটির হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল। দেখাতে লাগল বড় বড় নারকোল গাছ। দেখলাম গ্রামটা নারকোল গাছে ছাওয়া। দেখলাম একটা উচু গাছের মাথায় এক কাঁদি ডাবের সবুজে লেগেছে সূর্যের প্রথম আলো।

গাইড ছেলেটি কম্বোডিয়ার ভাষায় ওদের কী যেন বলছে। কিনহো কথাটা ঘুরেফিরে আসছে। গাইডটি একটি বছর দশেকের ছেলেকে টেনে নিল। ছেলেটি খালি গা, হাফ প্যান্ট পরা। ছেলেটির প্যান্টের খাঁজে একটা হাত দা। কাঁধে দড়ি। ছেলেটি লাফাতে লাফাতে একটি নারকোল গাছের কাছে গেল, তারপর তরতর করে উপরে উঠতে লাগল, যেন কাঠবেড়াল। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে লুঙ্গি আর ব্লাউজপরা কয়েকজন মহিলা। একটি মহিলার কালো দাঁতে হাসি ফুটেছে। সেই মহিলাটি চিৎকার করে ছেলেটিকে কিছু বলছে। আমার দিকে তাকিয়েও ওদের খমের ভাষায় কিছু বলল। আমি বেশ বুঝতে পারলাম মহিলাটি বলছে আমার ছেলের মতো এত তাড়াতাড়ি কেউ উঠতে পারেনা। নারকোল গাছের প্রান্তসীমায় উঠে দড়ি দিয়ে বাঁধল একটা ডাবের কাঁদি। দা দিয়ে কেটে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিল ছেলেটা। ওই মহিলাটিই এগিয়ে গেল সেই লম্বা নারকোল গাছটার তলায়। দু’হাত আকাশের দিকে তোলা, আকাশ থেকে নামছে একগুচ্ছ ডাব। আমি দেখলাম মহিলাটির পেটটা বেশ উঁচু হয়ে রয়েছে। স্ফীত পেটের উপরেই লুঙ্গিটির গিঁট। মহিলাটি দু’হাত বাড়িয়ে ধরে নিল ডাবের কাদি। ছেলেটা গাছ বেয়ে নেমে এসে গা থেকে ঝেড়ে নিল ভোরের পিঁপড়ে।

ডাবগুলোকে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে বলল গাইড। ওই ছেলেটা হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠিয়ে দিল শিশির লাগা ডাব। গাইডটি ট্যুরিস্টদের বলল, সি, উই অফার গ্রিন কোকোনাট টু ইউ অল। নো এক্সট্রা মানি। নো আদার কোম্পানি অফারস লাইক দিস। টু কোকোনাটস ইচ।

আরও কয়েকজন বালক ট্যুরিস্টদের হাত ধরে টানাটানি করছে। ফ্রেশ কোকোনাট স্যাব, ওনলি ওয়ান ডলার। ওকে স্যার, টু কোকোনাট ওয়ান ডলার। মর্নিং কোকোনাট ভেরিগুড স্যার, ফ্রেশ কোকোনাট স্যার…। গেয়ে চলেছে কথাগুলো, যেন মুখস্থ, যেন সুরও আছে ওই ভিক্ষাসংগীতে। যেন মনে হচ্ছে ভৈরবী।

গাইড ওদের খমের ভাষায় ধমক দেয়। বোধহয় বলে দেরি হয়ে গেছে, এখন আর ওসব হবে না। ছেড়ে দে সব। ছেলেগুলো মুখস্থ বলে—ওয়ান মিনিট স্যার। ভেরি কুইক। ছুকাং ছুকাং।

আমেরিকান সাহেবগুলো স্পটে দাঁড়িয়ে ডাব খাবার ইচ্ছে প্রকাশ করল। কয়েকটা ছেলে সাঁই সাঁই করে উঠে গেল গাছে। আর ওই মেয়েলোকটি, যার পেট যথেষ্টই উঁচু, সে তার কালো দাঁতের হাসি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগল।

নে হাতো পামাতে ছচকাই নেতাং ছুকাং চাইগছেং…

আমি যেন বেশ বুঝতে পারছি মহিলাটি বলছে—ওরাও গাছ বাইছে, আর আমার ছেলের গাছ বাওয়াও দেখলে। তোমরাই বিচার করো…।

ছেলেরা ডাব নিয়ে নেমে আসতেই কয়েকজন মহিলা কাটারি দিয়ে দ্রুত কাটতে লাগল ডাব। কে আগে কাটতে পারে, মুখের সামনে আগে তুলে ধরতে পারে। প্রতিযোগিতা।

আমার সামনে যে মেয়েটা দু’হাতে ডাব ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ওর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের আধখানা নেই।

সকাল হয়েছে, পাখিরা জেগেছে, ফরসা হয়েছে চরাচর। ডাবের উপরে শিশিরবিন্দু। মনোহর? আধখানা বুড়ো আঙুলের ডগায় মাংস-গুটুলি।

আমি ডাবটা তাড়াতাড়ি দু’হাতে তুলে নিই। স্ট্র দেয়া ছিল। সাহেবরাও ডাব খাচ্ছে। ফ্যান্টাস্টিক, এথনিক, এইসব শব্দ শোনা যাচ্ছে পাখির কলকাকলির সঙ্গে মিশিয়ে। সাহেবরা ডলার বের করল। যেন কিছু নয়। আমিও যত্নের ডলার থেকে একটা এক ডলারের নোট বের করলাম। গ্রামীণ জমায়েতে ডলারানন্দ। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।

এতক্ষণ কোনও পুরুষমানুষকে দেখা যায়নি। বালকদের ধরছি না। এইসব অঞ্চলে মেয়েরাই বেশি কাজ করে। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া— সর্বত্রই মেয়েরাই হাটে-বাজারে-হোটেলে। যখন এই ডাবোৎসব চলছিল, পুরুষরা ঘরের ভিতরে ভোরের মিঠে ঘুমটা সেরে নিচ্ছিল। একজন পুরুষ একটা ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ঘরগুলির দেয়াল বাঁশের, রঙিন টিনের চাল। লোকটা হাফপ্যান্ট পরা, খালি গা। হইচই দেখে আবার ভিতরে গেল এবং একটা বাঁশের টোকা মাথায় পরে বেরিয়ে এল। টোকার উপর একটা পাখির পালক গোঁজা। আমাদের গাইড ওকে দেখেই হাতজোড় করে বলল, ঝেমকতে কিনহো, ঝেমকতে। লোকটা সামনে এল। বুঝতে পারলাম লোকটা গ্রামপ্রধান। লোকটা বলল গুঃ মরনিং। গাইড পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, হি ইজ কিনহো, মিনস চিফ ওফ দি ভিলেইজ। সাহেবরাও গুড মর্নিং বলল। কিনহো বলল, কাম ইভিনিং। গুড সিপিং। গুড পাইনআপেল। গুড উওমেন।

টুরিস্টরা বাসে উঠল। বাসে উঠল ওই ছেলেটাও যে তরতর করে সবার আগে গাছে উঠে ডাবের কাঁদিটা পেড়েছিল। ছেলেটা একটা জামা পরে নিয়েছে। হাতে কাটারি।

আমি গাইডের পাশে গিয়ে বসলাম। মাথার মধ্যে একগাদা প্রশ্ন।

জিজ্ঞাসা করলাম, ওই ছেলেটাকে গাড়িতে তুললে কেন?

হি ইজ ভেরি গুড বয়। নাইস। হি উইল কাট দি কোকোনাটস অ্যান্ড ডু আদার জব্‌স। হি উইল গেট টিপস ফ্রম ইউ। আফতার ওল দি বোয় ইজ সন অফ দি কিন্‌হো। আমার জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছিল—ওই টিপস থেকে কি তোমার কোনও কমিশন আছে? কিংবা আরও তো ছেলে ছিল, ওই ছেলেটাকেই পছন্দ হল কেন? আরও তো নারকোল গাছ ভরা গ্রাম আছে, ওই গ্রামটাতেই বা গেল কেন? তা ছাড়া একজন গ্রামপ্রধানের ছেলেকে দিয়ে এরকম কাজ করানো যায়? এরকম কত প্রশ্ন। সব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যায় না। আবার বোঝানোও মুশকিল। ওরা ইংরেজিটা ভাল জানে না। আমিও না।

গাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে। পূব দিকের গাছগাছালির ফাঁকে লাল সূর্য।

গ্রামপ্রধানকে কিন্‌হো বলা হয়? কিহো? কৃষ্ণ তো মধ্যবাংলায় কান্‌হ হয়েছিল। কোথাকার মানুষ যে কোথায় যায়, কোথাকার কথা কোথায়। আমরা পূর্ববঙ্গের লোক। আমরা কলাগাছের থোড়কে বলতাম আইল্যা। ‘আইল্যা ভাজা কাল্যাই ভাইল।‘’ মানে কলার থোড়ের সঙ্গে কলাই ডাল খেতে ভাল। বহুদিন আইল্যা শব্দটা শুনিনি। আমার পিসিমার মৃত্যুর পরই আমার জগতে একটা ডায়লেক্টের পরিসমাপ্তি হয়েছে। বহুদিন পর ব্যাংককের ফুটপাথের খাবারের দোকানে শুনেছিলাম আইলা। আইলা-চিকেন। চেখে দেখেছিলাম, হ্যাঁ, সেই আইল্যাই তো। চিকেন দিয়ে রান্না করা।

নেতা অর্থেই কি এখানে কিনহো কথাটা চলে? বিভিন্ন জায়গায় আরও শুনেছি এই শব্দটা।

ওই কম্বোডিয়ার কৃষ্ণ আর একটা কী কথা বলল? কাম ইভিনিং। গুড সিপিং। সিপিং মানে কী? কী আবার। মাল খাওয়া। সিপ করেই তো খায়। উওমেনের কথাও বলে দিল ওই গ্রামপ্রধান? এই গ্রামটা তবে কী?

কী ঝড়ঝাপটাই না গেছে দেশটার উপর দিয়ে। ফরাসিদের দীর্ঘ দখলদারি। তারপর আমেরিকান বোমা। ১৯৭৫ থেকে চিনপন্থী খমের রুজ পলপট-এর শাসন। দশ লক্ষ মানুষকে মেরেছে পলপট। তারপর ভিয়েতনামের সেনাবাহিনী ঢুকেছে। তছনছ হয়ে গেছে সংসার।

এইডস সংক্রান্ত ওই সেমিনারে এসব নিয়ে কথা হয়েছিল। বলা হচ্ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাপক অঞ্চলে বেশ্যাবৃত্তির সামাজিকীকরণ হয়ে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের বেশ কিছু মেয়ে প্রথম যৌবনের কয়েক বছর বেশ্যাবৃত্তি করে। তারপর পরিবারে ফিরে যায়। এতে ওদের বিয়ে হতে সমস্যা হয় না। এই ধরনের বেশ্যাবৃত্তিতে রাষ্ট্রেরও মদত আছে। রাষ্ট্রের যত ঝামেলা বাঁচিয়ে দিচ্ছে বাচ্চা মেয়েগুলো। বিদেশ থেকে হাজারে হাজারে যৌনতালোভী পুরুষরা আসছে। আসলে ডলার আসছে, ডলার। মেয়েদের শরীর বেচা পয়সায় হাইওয়ে, এসি বাস, বেকারভাতাও। বেশ্যাবৃত্তির সামাজিক সম্মতি থাইল্যান্ড ছাড়িয়ে অন্য দেশগুলিতেও ছড়াচ্ছে। এতে এইডস বাড়ছে কি না এ নিয়ে তর্ক হয়েছিল। কেউ বলেছিল বেশ্যাবৃত্তি যদি বেআইনি না থাকে, গোপনতা না থাকে তা হলে এইডস-এর বিরুদ্ধে লড়া সহজ হয়। এতে এইডস বাড়ে না। থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি বলেছিল পাটেয়ার সমুদ্রের ধারের পুলিশের পকেটেও কনডোম রাখা সম্ভব হয়েছে, যদি কোনও ট্যুরিস্টের দরকার পড়ে যায়, পুলিশের কাছে চাইলেই পাওয়া যাবে। কম্বোডিয়াও কি ক্রমশ থাইল্যান্ড হতে চলেছে? ট্যুরিস্ট স্পটের আশেপাশের সেগুন-সুপুরিনারকোল গাছ ছাওয়া গ্রামগুলির ভিতরে জন্ম নিচ্ছে ডলার প্রত্যাশী ব্রথেল?

সি, দি পিক অফ দি টেম্পল। মন্দিরের চূড়া দেখাল গাইড। আকাশ উঁচিয়ে আছে মন্দিরের চূড়া। টিকিট কেটে ঢুকল গাড়িটা। এখনও জঙ্গল। তবে প্রাচীর ঘেরা। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা।

বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল এই আঙ্কোরক্ষেত্র। প্রায় তিনশো বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো ছিল এই ক্ষেত্র। কম করে দুশোটা মন্দিরের ভগ্নাবশেষ ছড়ানো আছে। এর মধ্যে বেশ কিছুটা অংশ প্রাচীর ঘেরা। এর মধ্যেই দশ-বারোটা বড় বড় মন্দির। আমাদের সামনে যেটা, ওটাই আঙ্কোরবাট। বাট মানে তো বাড়ি। বাস্তু থেকেই তো বাট। এদেশে প্যাগোডাকে বলে বাট। উচ্চারণ অনেকটা ভাট, আমরা মন্দিরের সামনে এসে নামলাম। সামনে বিশাল মন্দির। মন্দিরের পিছনের আকাশে সূর্য রয়েছে বলে মন্দিরটা সিল্যুয়েটের মতো লাগছে। বিশাল তিনটে চুড়ায় কবেকার বিদিশার নিশা। দেশ-বিদেশের কত-না ট্যুরিস্ট—ছবি তুলে চলেছে ক্যামেরায়।

গ্রাম থেকে তুলে আনা ছেলেটিকে গাইড কিছু বলল। পাউরুটি, মাখনের প্যাকেট এবং পলিথিনে ভরা ডিম সেদ্ধ দেখিয়ে দিল। তারপর আমাদের বলল—আমরা দু’ঘণ্টা ধরে এই মন্দিরটা দেখব, তারপর ফিরে এসে ব্রেকফাস্ট করব। এই ছেলেটা ব্রেকফাস্ট তৈরি করুক।

আমরা চললাম। মন্দিরের সামনে বিশাল জলাশয়। জলে আঁধারমাখা মন্দিরের ছায়া। তিরতির করে কাঁপছে। তার উপর ভাসছে কোকাকোলার প্লাস্টিক বোতল।

একটি বিশাল তোরণ পেরিয়ে মূল মন্দির। চারিদিকের দেওয়ালে কারুকার্যের গ্যালারি। কম্বোডিয়ার গাইড আমাদের বোঝাচ্ছে। বিষ্ণুর অনন্তশয্যা, অমৃতমন্থন। বোঝাচ্ছে রামায়ণ। লুঙ্গিপরা সীতা, লুঙ্গিপরা রাম। লঙ্কাজয়ের পর হনুমানদের উৎসব। শুয়োর পুড়িয়ে খাচ্ছে হনুমানের দল। ওদেরও একটা অযোধ্যা আছে। শুধু কম্বোডিয়া কেন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া—সবখানেই একটা করে অযোধ্যা রয়ে গেছে। শেষকালে কম্বোডিয়ার সীতা পাতাল প্রবেশ করে না, ভেলায় ভেসে সমুদ্রে চলে যায়। হারিয়ে যায় নীল জলে।

মূল মন্দিরের বিষ্ণুমূর্তির সামনে এখন বৌদ্ধ শ্ৰমণ। বিষ্ণু এখন ভগবান, ভগবান বুদ্ধ।

সেই কবে ভারতবর্ষ থেকে গিয়েছিলেন কৌণ্ডিল নামে এক বিতাড়িত রাজপুত্র। এই দেশ তখনও কম্বোজ হয়নি। সেই কৌণ্ডিল্য বিয়ে করলেন এখানকার কোনও ট্রাইবাল নারীকে। এদেরই বংশধর জয়বর্মন। নবম শতকের। খমের রাজবংশ। এক চিনা পর্যটক লিখেছিলেন—খমেররা সকালে উঠে স্নান করে। পুজো করে। খেতে বসে ভাতের থালার চারিপাশে জলের ছিটে দেয়।

গাইড খেম বং মন্দিরের গায়ের দশ অবতার বোঝাচ্ছে। বামন অবতারের গল্প বলছে।

এই গাইড খেম বং-এর রক্তেও ভারতবর্ষ রয়ে গেছে, ও কি জানে?

দু’ঘণ্টার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম গাড়ির কাছে। ছেলেটা কাগজের প্লেটে খাবার সাজিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ছেলেটির নাম জিজ্ঞাসা করলাম। নাম লিং ঝাও।

ডিম, রুটি আর একটা ফল। অনেকটা লিচুর মতোই, তবে লিচু নয়। আমাদের আশফলের মতো বলা যেতে পারে। তবে সাইজে অনেক বড়। আর ডাবগুলোকে কেটে রেখেছে অদ্ভুতভাবে। ডাবের চারদিকটা এমনভাবে কেটেছে যেন একটা ফুলদানি।

গাইড বলল এখান থেকে প্রথমে আট কিলোমিটার দূরে প্রে-খান-এ যাব। ওটা একটা সূর্যমন্দির। তারপর পঁচিশ কিলোমিটার দূরে বান্তেশ্রী মন্দির, ফেরার সময় বেয়ন মন্দির হয়ে আবার এই আঙ্কোরভাট-এ। পুবের আলোয় একটা রূপ দেখেছি, পশ্চিমের আলোয় নাকি অন্যরূপে দেখা দেয় আঙ্কোরভাট। “ইট উইল সি ভেরি ভেরি দিফারেন্ত বাই দি ওয়েস্ট ফোকাসিং সান।” ওর ইংরেজিটা এরকমই। আমাদের বুঝে নিতে হয়।

আমরা আবার গাড়িতে উঠেছি। দু’পাশে বিশাল মাপের গাছ। প্রচুর আমগাছ আছে। কাঁঠালগাছও। কোনও কোনও কাঁঠালগাছ এত মোটা যে দু’হাতের বেড়-এ কুলোবে না। এখন শরৎকাল, তাই এসব গাছে ফল নেই। যখন গাছগুলো ফলবতী হয়ে থাকে, তখন কীরকম দেখতে হয় কল্পনা করার চেষ্টা করি। প্রচুর শাল-সেগুন-অর্জুনও দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমাদের বটগাছ চোখে পড়ছে না। আকাশটা বেশ নীল এবং এখানে-ওখানে কাশফুলের ঝোপও দেখা যাচ্ছে। এক সময় সমস্ত মন্দিরগুলোকে ঢেকে নিয়েছিল জঙ্গল। আসলে, এই মন্দিরময় রাজধানী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল খমের রাজাদের। সম্ভবত বারো শতাব্দীতে। তারপর ঘোর নির্জনতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি সাহেবরা গভীর জঙ্গলের মধ্যে খুঁজে পেলেন এই ইতিহাসের অবশেষ।

লিং আমার পাশেই গুটিসুটি হয়ে বসে আছে। ওর সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছে করল। গাইড তো বলেছিল ও গ্রামপ্রধানের ছেলে। ও কি ভবিষ্যতের গ্রামপ্রধান? গ্রামপ্রধানের ছেলে চাকরের কাজ করছে। ওর সঙ্গে আলাপ করতে ইচ্ছে হয়।

জিজ্ঞাসা করি—হু ইজ ইয়োর ফাদার।

পাদার?

ইয়েস—ইয়স।

ছেলেটা হাসে। কী একটা যেন বলে।

আমি বলি কিন্‌হো? কিন্‌হো?

ও ঘাড় নাড়ে। বলে ইয়াঃ ইয়াঃ।

ছেলেটা ট্যুরিস্টদের সঙ্গে ঘুরে কিছু কিছু ইংরেজি শিখেছে। ইয়েস বলে না, বলে ইয়া। থ্যাংকিউ বলে, একসকিউজ মি বলে, নো প্রবলেম বলে।

ও এবার গুছিয়ে বলল, মাই পাদার কিন্‌হো সিরিলিং ঝাও।

জিজ্ঞাসা করি, স্কুল? ডু ইউ গো টু স্কুল?

নো স্কুল। নো। মাথা নাড়ায়। এক্কেবারে আমাদের বাসন্তী কিংবা পাথরপ্রতিমার ড্রপ আউট।

ক’জন ভাইবোন জিজ্ঞাসা করলাম। বোধহয় বোঝাতে পারলাম না। ও শুধু হাসল। কী খেতে ভালবাসে জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করলাম, বোঝাতে পারলাম না। আমাদের গাইডটি ওর সঙ্গে কথা বলে জানাল—ওর প্রিয় খাবার ইঁদুর।

তখন গাইডটি জানাল কম্বোডিয়াতে ইঁদুর অনেকেরই প্রিয় খাবার। উইনটার র‌্যাটস ভেরি টেস্টি বিকস দে ইট প্যাডি ফ্রম ফিল্ডস। যেন এক্কেবারে বাঁকুড়ার লোধা ছেলেগুলি। অঘ্রাণের ইন্দুরে কী ত্যাল বাবু…।

গাইড বলল, শুয়োরও খুব প্রিয় খাবার, কিন্তু বড্ড দাম। আরেকটা প্রিয় খাবার আছে, স্কুইরেল। কাঠবিড়াল। কিন্তু পাওয়া যায় না। সব শেষ করে দিয়েছে।

গাঢ় সবুজের মধ্য দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বাস চলার পর এক জায়গায় বাস থামল। একটা বিরাট মন্দির। অনেকটা রথের মতো দেখতে। খাড়াই সিড়ি চলে গেছে। বড় মন্দিরটার দু’পাশে দুটো ছোট মন্দির। গাইড বলল, দিস ইজ প্রে-খান। টেম্পল অফ দা সান। দুটো বিশাল গাছ মন্দিরের সামনে ছায়া ফেলেছে। গাছের নাম জানি না। গাছের ডালে কাঠবিড়ালি ঘুরছে। কাঠবিড়ালি দেখেই আমাদের লিং খুশি হয়ে উঠল—ছুকাং।

গাইড জানাল এই জঙ্গলটা প্রোটেকটেড বলে এখানে ছুকাং মানে স্কুইরেল দেখা যাচ্ছে। এখানে তবু কিছু টিকে আছে। বাইরের সব শেষ হয়ে গেছে।

সাহেব ট্যুরিস্টরা সব ক্যামেরা বাগিয়ে ছবি তুলছে মন্দিরের। আমিও আমার ডিজিটাল ক্যামেরায় একটা গাছে বসা কাঠবিড়ালিকে তাক করছি। লিং আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ক্যামেরার ফ্ল্যাট স্ক্রিনে ওই দৃশ্য দেখে কীরকম উত্তেজিত হয়ে যায়। লাফিয়ে ওঠে। আমার কাঁধেই একটা চাপড় মেরে দেয়। বলে হু-জি, ছুকাং ফিদাওনা খেতে। লিং দ্রুত ওই গাছের দিকে দৌড়ে যেতে যেতে একবার আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে, থ্যাংকিউ, তারপর গাছে উঠতে থাকে।

সাহেবরা মন্দিরে উঠবে কী, ছেলেটার গাছে চড়া দেখতে থাকে। ভিডিও তুলতে থাকে।

গাইড বলে, ও কি কাঠবিড়ালির বাসা দেখতে পেয়েছিল জুম ক্যামেরায়? ‘ছুকাং ফিদাওনা’ মানে তো কাঠবিড়ালির বাসা। বাট, দ্যাট বয় ইজ হিমসেলফ এ ছুকাং। ঠিক কাঠবিড়ালির মতোই কীরকম গাছ বাইছে দ্যাখো। তা ছাড়া উঠবে নাই বা কেন? ওরা তো ঝাও, মিন্‌স হনি কালেকটার্‌স। ইনিটিয়ালি দিজ পিপলস লিভড ইন মেকং দেলতা এরিয়াজ। দে আর ফ্রম মেকং দেলতাজ।

বলে কী গাইড? ওরা হনি কালেকটারস? মানে মধু? মানে ওরা মৌলে? মেকং ডেলটা থেকে এখানে এসেছে? মেকং ডেলটা মানে তো মেকং-এর সুন্দরবন!

একটা উঁচু ডালকে জড়িয়ে ধরে উপরে উঠছে লিং। একটা খাঁজের উপর বসে কী যেন করছে। গাছের অন্য ডাল ঢেকে দিয়েছে ওকে। মেকং-এর মৌলে এখন কাঠবিড়ালি।

ওদেরও কি বনবিবির গল্প ছিল?

মৌ দাও মা মৌ দাও? গরান-হোগলা-গেইয়া-গোলপাতা-সুন্দরী গাছ? বিধবা গ্রাম?

ওদেরও বিধবা গ্রাম আছে? আছে। যুদ্ধে মরা পুরুষদের কারণে।

মেকং মোহানা ছেড়ে ওরা এখন ট্যুরিস্ট স্পটে। মধু নয়, ডলার শিকারি।

নেমে আসছে লিং, মুখে হাসি৷ লিং-এর বাবা একজন কিনহো। গ্রামপ্রধান। লিং-এর বাবা ফিসফিস করে বলেছিল, কাম ইভিনিং। গুড উওমেন। ওর স্ত্রী, লিং ঝাও-এর মা-ও কি গুড উওম্যান? ডলারলাগা শরীর! আমি লিং-কে দেখতে থাকি। লিং-এর চোখ কি ততটা ছোট? নাক কি যথেষ্ট চাপা? লিং-এর হাতে একটা বড় মাপের পাতা মুড়িয়ে ঠোঙার মতো। লিং-এর সারা মুখে খুশি। ও সামনে এগিয়ে আসে। আমাকে পাতার ঠোঙাটা দেখায়। বলে ছকাং টুচ্চি। ইঁদুরের ছানার মতো দেখতে চারটে প্রাণী। লালচে রং। লম্বা লেজ, ছোট্ট ছোট্ট চোখ, হাত-পা নড়ছে, লেজ নড়ছে। ছুকাং টুচ্চি। ছুকাং তো কাঠবিড়ালি। এগুলো কি কাঠবিড়ালির বাচ্চা! গাইড মাথা নাড়ায়। বলে বেবি স্কুইরেল। লিং একটা ছোট্ট পলিথিনের ব্যাগ জোগাড় করে। পাতার ঠোঙাটাকে পলিথিন ব্যাগে ভরে আমায় দেয়। আমার কাধের ঝোলা ব্যাগের দিকে ওর আঙুল। ইশারায় বলে, ওই ব্যাগের ভিতরে যত্ন করে রেখে দাও।

আর কাউকে নয়, আমাকেই বলল লিং। আমাকে ওর নিজের লোক মনে হয়েছে। একবার ভাবলাম, বলি, কেন এগুলোকে খাবে, বড় হলে এরা গাছে গাছে ছুটত, এদের বাঁচতে দাও। কিন্তু এত কথা বোঝাতে পারব না। আমি ওর ঠোঙা ভরা কাঠবিড়ালির ছানা গ্রহণ করতে একটু ইতস্তত করছিলাম, লিং আমায় বলল—প্লিজ…। আঙুল দিয়ে কাক দেখাল। উপর আকাশের চিল দেখাল। বুঝলাম ও কী বলতে চাইছে। আমি পলিথিন ব্যাগে ঢোকালাম।

সামনেই সূর্যমন্দির। খাড়া পাথরের সিঁড়ি। গাইড বলল, দেরি হয়ে গেছে, যাওয়া যাক। আমরা যাচ্ছি। কালোপাথরের খাড়া সিঁড়ি। লিং এল না। কী সব বলল চেঁচিয়ে। গাইড বলল—ও এখন আসবে না, আরও ছুকাং টুচ্চি খুঁজতে যাচ্ছে গাছের কোটরে।

সিড়ি বেয়ে উঠছি। গাইড বলছে, মহারাজা জয়বর্মন তৈরি করেছিলেন এই কালোপাথরের মন্দির। এখানকার অন্য মন্দিরগুলো বেলেপাথরের তৈরি, শুধু এই মন্দিরটাই কালোপাথরের। তিনশো মাইল দূরের কোনও পাহাড় থেকে কেটে আনতে হয়েছে কালোপাথর।

সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের কাছে গেলাম। কয়েকটা ভাঙাচোরা ঘোড়া। গুনে দেখলাম পাঁচটা। একটার মুণ্ড নেই। গাইড বলল, এক সময় সাতটাই ছিল। একটা নিয়ে গেছে লোর্ড ইন্দ্র আর একটা নিয়ে গেছে লোর্ড বুডঢা। ভিতরে একটা কালোপাথরের দাড়ানো মূর্তি, কোনারকে যেমন, গাইড বলল ভোরের প্রথম পুবের আলো পড়ে এই সূর্যমূর্তির মুখে। এখন রোদ্দুর পড়েছে মূর্তিটির পায়ের কাছে। এখন বেলা সাড়ে এগারোটা।

মন্দিরের ভিতরের চার দেয়ালেই পাথরেরআললাচনা হচ্ছিল এখন কী করা উচিত জাফরি। গাইড বলল, সারাদিনই এই মূর্তির কোথাও না কোথাও সূর্যের আলো পড়ে। মন্দিরের ভিতরে হাজার বছরের ইতিহাস স্তব্ধ হয়ে আছে। এখন আর পূজাপাঠ হয় না। সূর্যদেবের কানের গহ্বরে কোনও পোকা বাসা বেঁধেছে। ঘাড়ের উপর স্তব্ধ হয়ে আছে একটা গিরগিটি, কিন্তু হাতে বাঁধা রঙিন কাপড়। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা- বাসনা। কারা সব মানত করে গেছে। কী একটা পোকার একটানা শব্দ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই চরাচরে। তখনই একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। একটা আর্তচিৎকার। আমরা পরস্পরের দিকে তাকালাম। আবার চিৎকার। মনে হল যেন লিং-এর গলা। খেম বং বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। আমরাও। দেখলাম একটু দূরে, একটা ঝোপের সামনে বসে আছে লিং। একটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে অন্য হাত। আমাদের সবাইকে দেখতে পেয়ে লিং চিৎকার করে কিছু বলল। ওটা শুনে থেম বং বলল, ওঃ, শিট। স্নেক বাইট। খেম বং সূর্যমূর্তির হাত থেকে একটা কাপড় খুলে নীচে নেমে যায় দ্রুত। কাপড়টা দিয়ে ওর ডান হাতের কবজির কিছুটা উপরে বেঁধে দেয়। ওর ডান হাতের কবজির কাছটায় সাপে কামড়েছে। লিং-এর মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়। বেশ বুঝতে পারছি, ও বলছে, তোমার কিচ্ছু হবে না, ভয় পেয়ো না, এই তো তোমার হাতে বেঁধে দিয়েছি সূর্যের ডোর।

খেম বং আমাদের বলে—ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল। এই অ্যাকসিডেন্টটার জন্য আমরা তৈরি ছিলাম না। ওকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এখন বেলা বারোটা বাজে। দুটোর মধ্যেই আশা করি ফিরে আসব। তারপর আমরা বান্তেশ্রী যাব। লাঞ্চ নামিয়ে রাখছি, আপনারা দয়া করে খেয়ে নেবেন। ছেলেটা গাছের কোটরে হাত ঢুকিয়ে কাঠবিড়ালির বাচ্চা তুলতে গিয়েছিল। সাপে ছোবল মেরেছে। সাপও তো আসে কাঠবিড়ালির বাচ্চা খেতে। মনে হচ্ছে বিষাক্ত সাপ। জানি না, কী হবে। কেন যে ওকে আনতে গিয়েছিলাম। আমাদের ড্রাইভারের সঙ্গে একজন হেল্পার থাকে, সেই সব করে। আজ সেই ছেলেটি আসেনি, জ্বর হয়েছে। তাই ওকে এনেছিলাম আজ। আপনারা দয়া করে মানিয়ে নেবেন।

লিং আমার দিকে একবার কাতর তাকায়। আমি বাংলায় বলি—ভাল হয়ে যাবে বাবা, ভাল হয়ে যাবে। ও ঘাড় কাত করে।

জায়গাটা বেশ ভালই। নির্জন। গাছের ছায়া, পাখির ডাক, প্রজাপতি, ফড়িং, ফুল, জঙ্গলের গন্ধ। একজন সাহেব বলল, সাবধানে থাকতে হবে। এখানে সাপ আছে। একজন সাহেব বলল, মানুষ বেসিকালি ফুড কালেকটার অ্যান্ড গ্যাদারার। পয়সা আছে বলে আমরা শপিং মলে যাই, পয়সা না থাকলে তো কালেক্ট করতেই হবে। অন্য একজন বলল—বেবি স্কুইরেল খেতে কি এতই ভাল, যে এরকম রিস্ক-এর মধ্যে যেতে হয়? মাথায় গোল টুপি পরা একজন বয়স্কা মেমসাহেব বলল, এমনও তো হতে পারে, ও বাচ্চাগুলোকে ওর গ্রামের গাছে ছেড়ে দেবে ভেবেছিল। ওরা স্কুইরেল শেষ করে দিয়েছে। এই প্রজন্ম আবার এদের ফিরে পেতে চায়। এভাবে ভাবছ না কেন? অন্যরা হেসে ওঠে। বলে, কবিদের নিয়ে আর পারা যায় না। মহিলাটি বলে, থিঙ্ক পজিটিভ অলওয়েজ, বি অপটিমিস্টিক।

আমার কীরকম যেন লাগছিল। একটা বিচ্ছিরি অপরাধবোধ। আমার ক্যামেরার জুমেই তো ও প্রথমে কাঠবিড়ালির কোটর আবিষ্কার করে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়?

চুপচাপ থাকা দু’জন ফিলিপিনো খাবারগুলো ভাগ করতে থাকে। কলা, আলু সেদ্ধ আর চিকেন বার্গার। ডাবগুলো গাড়ি থেকে নামানোই হয়নি। নামালেও কেই বা কাটত। খেতে খেতে খাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। দেশ-বিদেশের খাওয়া। জাপানের অক্টোপাস, মেক্সিকোর কুমিরের ডিম, ঘানা-মোজাম্বিকের কেঁচো, রেড ইন্ডিয়ানদের কলাগাছ পোড়া ছাই…। আমি তো জানি, অহমিয়াদের প্রিয় খাদ্য ওটা, ক্ষার। কলাগাছের থোড় শুকিয়ে, পুড়িয়ে ছাই করে রাখে। রেড ইন্ডিয়ানরাও ওরকম খায় বুঝি? আমেরিকানরা একমত হল যে মঙ্গোলিয়ানদের মতো সর্বভুক প্রাণী আর নেই। কথাটা বোধহয় মিথ্যে নয়। আমি দেখেছি ডাঁই করে রাখা উচ্চিংড়ে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। সাপ, সদ্য ডিম থেকে বের হওয়া রোঁয়া ওঠা মুরগির সদ্য ছানা আগুনে ঝলসে গোটা গোটা খেয়ে নিচ্ছে এরা। তবে কাঠবিড়ালির ছানাটা টু মাচ।

আরও ট্যুরিস্ট বাস এসে থামল। দেখল, আবার অন্য মন্দির দেখতে চলে গেল। আমাদের লাক খারাপ। আমেরিকানরা বলাবলি করছিল, যদি আজ সময় না পাওয়া যায়, তবে আগামীকাল আবার আসা যায় কি না। আমি আমার পকেটের ডলার এবং রিয়েল গুনতে থাকি। এক ডলার ভাঙালে ছ’হাজার রিয়েল পাওয়া যায়।

এক কাপ চা তিনশো রিয়েল, একটা সিগারেট দুশো। আজকের ট্রিপটা যদি কমপ্লিট না হয়, খেম বং কি আগামীকাল ফ্রিতে ট্রিপটা করিয়ে দেবে? নিদেনপক্ষে হাফ টাকায়? সে পরে হবে। ছেলেটা বাঁচুক।

আলোচনা হচ্ছিল এখন কী করা উচিত। হেঁটে হেঁটে ছড়ানো-ছিটানো মন্দিরগুলো দেখা সম্ভব নয়। একজন বলল, গাইডের মোবাইল নম্বর তো রয়েইছে, ফোন করেই দেখা যাক। একজন মোবাইলে ফোন করে জানল ছেলেটিকে এইমাত্র হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছে। ছেলেটির এখনও জ্ঞান আছে। ও আসছে।

তা হলে তো এখনই এসে পড়বে। সিয়েম রিপ থেকে এই জায়গাটা কুড়ি কিলোমিটারের মতো। আধঘণ্টার মধ্যেই এসে পড়বে। এখন ঘড়িতে একটা চল্লিশ। গোল টুপি পরা বুড়িমেমটা বলল—তা হলে এই সময়টুকু আমরা এখানে ওই লর্ড সান-এর কাছে ওই ছেলেটার জন্য প্রে করতে পারি। তারপর এক অদ্ভুত দৃশ্য। বারোশো বছরের পুরনো এক মন্দিরের সিঁড়ির সামনে আমেরিকান, ফিলিপিননা, ভারতীয় মিলে একটা বিশ্ব একটা গরিব কম্বোডিয়ানের জন্য আকাশে হাত তুলল। আকাশে চিল।

গাড়িটা এল। খেম বং-এর মুখে চিন্তার ছাপ। ঠোঁটটা উলটে বলল, আনফরচুনেট।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওর বাড়ির লোকজন জানে তো? খেম বং বলল, হাসপাতালে যাবার সময় বাড়ি থেকে ওর বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম।

হাসপাতাল কেমন?

সিয়েম রিপ-এর হাসপাতাল খুব ভাল। নমপেনেও এরকম হাসপাতাল নেই।

বেঁচে যাবে?

ভগবান বুদ্ধ জানেন। তবে হাসপাতালের ডাক্তার বলেছে খুব বিষাক্ত সাপ কেটেছে।

ছেলেটিকে সাপে কেটেছে, কিন্তু আমরা তো পচিশ ডলার করে দিয়েছি, এতদূর থেকে এসেছি, আমরা গাড়িতে উঠলাম। দেখতে যাব।

বান্তেশ্রী মন্দির। এখন আর মন্দিরের কথা বলার মানে হয় না। ফেরার সময় বায়ন মন্দির। সূর্য ডোবার আগে আর একবার আঙ্কোরভাট। পশ্চিমের আলোয় সত্যিই অন্যরকম। গোল টুপির মেমসাহেব বুদ্ধ বা বিষ্ণুর কাছে দাঁড়িয়ে টুপি খুলে বলল, ও লর্ড, সেভ দি বয়।

এবার ফিরব। আমার ব্যাগের পলিথিনে রয়ে গেছে সেই কাঠবিড়ালির ছানা। ব্যাগ থেকে পলিথিনটা বের করি। দেখি ওদের হাত-পা নড়ছে। বেশিক্ষণ তাকাতে পারি না। রেখে দি। খেম বং-কে বলি— এগুলো যে আমার কাছেই রয়ে গেল, কী করব এসব!

খেম বং বলল, ফেরার সময় ওদের ঘর হয়েই যাব। ওদের দিয়ে দিয়ো।

তখন গোধূলি। পাখিরা ফিরছে। রাঙামাটির পথ দিয়ে আমাদের ছোট বাস চলে এঁকে-বেঁকে। গ্রামে ঢুকতেই ওই স্বপ্নদেখানো কাঠের তোরণ। তোরণের তলা দিয়ে চলে যায় গাড়ি। গ্রাম ঢুকি। কান্না। সারা পৃথিবীর কান্নার ভাষা একই রকম।

আস্ত কলাপাতার উপরে শুয়ে আছে লিং। নাকে তুলো গোঁজা। ওর গায়ের উপর উথালিপাথালি ওর মা। ওকে ঘিরে বসে আছে সবাই। একটু দূরে একটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে কিন্‌হো। সূর্যডোবা আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।

খেম বং মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় কিন্‌হোর দিকে। কিন্‌হোর কাঁধে হাত রাখে। কিছু বলে। কিন্‌হো দু’হাত দিয়ে মাথার চুল ছিঁড়তে চায়। মাথা থাবড়ায়। তারপর সন্তানের শবদেহের মাথার কাছটায় বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে।

আমরা গাড়ির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মেমসাহেবটা টুপি খুলে হাত রেখেছে। একটা সন্ধ্যা লাগা শুকনো পাতা উড়ে এসে পড়ল গাড়ির বনেটে।

খেম বং আমাদের কাছে ফিরে এল। আমার কাছে হাত বাড়িয়ে কাঠবিড়ালির বাচ্চাগুলো চাইল। আমি পলিথিনের ক্যারিব্যাগটা ওর হাতে তুলে দিলাম। খেম বং ওটা নিয়ে কিন্‌হোর কাছে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কান্নার শব্দটা কেমন পালটে গেল। একটা শোরগোল মতন। লিং-এর মা-ও কয়েক মুহুর্তের জন্য চুপ।

খেম বং বলল—ওই বেবি স্কুইরেলগুলোকে নিজের খাবার জন্য ধরেনি লিং। ওদের ক্ল্যানের গর্ভিণী মায়েদের জন্য এনেছিল। ওরা ঝাও ট্রাইব। গাছে উঠে মধু পাড়ার জাত। ওদের বিশ্বাস, যদি কোনও গর্ভিণী মহিলা কাঠবিড়ালির বাচ্চা খায় তবে আগামী সন্তান কাঠবিড়ালির মতোই গাছ বাইতে পারবে। এখন, এখানে বিদেশিদের জন্য ডাব পাড়তে হয় যে ওদের।

আমাদের দিকে এগিয়ে আসে কিন্‌হো। কথা বলতে থাকে। বিষাদ-মাখানো কথা। চোখের জল মেশানো কথা খেম বং অনুবাদ করে দেয়। বলে—আমার ছেলের জন্য আমি গর্বিত। ও কিন্‌হোর ছেলের মতোই কাজ করেছে। আগামী প্রজন্মের জন্য ও প্রাণ দিল। এই টুচ্চি ছুকাং গর্ভিণী মায়েদের বিলি করে দিতে হবে। আমার ছেলে তো এটাই চেয়েছিল। কিন্‌হো ওই পলিব্যাগ আমার হাতে তুলে দিয়ে আমার হাত ধরে ভাঙা গলায় কত কিছু বলে যায়। ওই কথাগুলোই খেম বং বলতে থাকে আমায়।

কিনহো যেন মন্ত্র পড়ছে। হে বিদেশি, তুমি গ্রহণ করো এই পবিত্র টুচ্চি ছুকাং। আমি গর্ভিণী মায়েদের কাছে এ জিনিস তুলে দেবার যোগ্য নই। কারণ আমার নিজের স্ত্রী গর্ভবতী। লিং-এর পরে দুটো সন্তান মারা গেছে। লিং-ও চলে গেল। লিং ছিল কাঠবিড়ালির আশীর্বাদ পাওয়া এক ক্ষিপ্র সন্তান। আমার আগামী সন্তান বহন করছে আমার স্ত্রী। ও তো চাইবেই আর একটা লিং ফিরে পেতে। ওকে কী করে বঞ্চিত করব আমি? অথচ আমার গোষ্ঠীতে রয়েছে আরও গর্ভবতী মেয়ে। ওদের আগামী সন্তানদের পিতৃপরিচয় জানার দরকার নেই আমার। আমি জানি ওরা সন্তানধারক মা। ওরাও তো চাইবে ওদের সন্তানের মধ্যে থাকুক কাঠবিড়ালির অংশ। যে সমস্ত মা ওদের সন্তানদের দুধ খাওয়াচ্ছে, ওদেরও পরম আকাঙক্ষার ধন ওই টুচ্চি ছুকাং। স্তন্যদান করার আগে পবিত্র মাতৃস্তন্য ছুকাং-এর স্পর্শ পেতে চায়। দুগ্ধবতী মায়ের দুধের ভিতর দিয়ে সন্তানের শরীরে চলে যায় ছুকাং-এর আশ্চর্য শক্তি। এমতাবস্থায় আমি কী করব? আমি যে কিন্‌হো। কিং করিষ্যামি? আমি কি নিরপেক্ষ থাকতে পারব? জাতস্য নিধনে দুঃখং পোষাণাদৌ ততোধিকং। অতএব হে কৃষ্ণচামড়ার বিদেশি, তুমিই, হ্যাঁ, তুমিই কৃপা করে বণ্টন করো এই পবিত্র প্রকৃতি।

আমরা যে জঙ্গল ফেলে দুটো ভাতের জন্য চলে এসেছি এই শহরে। ডাব পেড়ে খাই। হে বিদেশি, আমাদের বাঁচাও। রক্ষাংসি, রক্ষাংসি ভদ্রে…

আমাকে ওরা নিয়ে গেল একটা গাছের তলায়। ওই কিন্‌হো, আর মৃতদেহ পিছনে ফেলে আসা আরও কিছু মানুষ। গাছটা চিনতে পারলাম। কদম্ববৃক্ষ। আমার হাতে পবিত্র পলিব্যাগ। কিন্‌হো আমার মাথায় পরিয়ে দিয়েছে পালক লাগানো বাঁশের টোকা। টোকা নয়, মুকুট। আমিই কিন্‌হো। কদম্বের ডালে ডালে ঝুলছে অদৃশ্য আব্রু-আর্তনাদ। মরণকে পিছনে রেখে গর্ভবতী-দুগ্ধবতী জননীরা সব উঠে এল। আমার চারদিকে ওরা। হাত বাড়িয়েছে আমার দিকে। দশ, শত, সহস্র হাত।

কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখপানে…।

শারদীয় বর্তমান, ২০০৫

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *