লালা গোলোকচাঁদ। পারিবারিক নাটক। শ্রীসুরেন্দ্রচন্দ্র বসু।
নাটকটি অসম্ভব আতিশয্যে পরিপূর্ণ। সমস্তটা একটা ভেলকির মতো। কতকগুলি অদ্ভুত ভালো লোক এবং অদ্ভুত মন্দ লোক একটা অদ্ভুত সমাজে যথেচ্ছা অদ্ভুত কাজ করিয়া যাইতেছে, মাথার উপরে একটা বুদ্ধিমান অভিভাবক কেহ নাই। স্থানে স্থানে লেখকের পারিবারিক চিত্ররচনার ক্ষমতা প্রকাশ পাইয়াছে। তীর্থযাত্রাকালে বৃদ্ধ কর্তা-গিন্নির গৃহত্যাগের দৃশ্য গ্রন্থের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট অংশ।
দেহাত্মিক-তত্ত্ব। ডাক্তার সাহা প্রণীত।
এই গ্রন্থে শ্রীদর্শন রাজচক্রবর্তী নামক একব্যক্তি গুরুর আসনে উপবিষ্ট। ভোলানাথ দাস নামক এক ব্যক্তি তাঁহার উপযুক্ত শিষ্য। উভয়ের মধ্যে কথোপকথন চলিতেছে। গুরুজি রূপকচ্ছলে জ্ঞানগর্ভ উপদেশ দিতেছেন– শিষ্য সেই উপদেশ শুনিয়া কৃতার্থ হইতেছেন। দেহ-মন ও জগতের শক্তি সকলকে দেব-দেবী রূপে কল্পনা করিয়া জগৎ-ব্রহ্মবাদের ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। “যোগাকর্ষণ-দেব” “মাধ্যাকর্ষণ-দেব” “রসায়ন-দেব” “মস্তিষ্কাদেবী” প্রভৃতি দেব-দেবীর অবতারণা করা হইয়াছে। গ্রন্থের সার মর্ম এই যে, ব্রহ্ম কতকটা দৈহিকভাবে ও কতকটা আত্মিকভাবে আত্মস্বরূপ প্রকাশ করিয়াছেন। এবং সকল ধর্মের মধ্যেই কতকটা দৈহিক ও কতকটা আত্মিক ভাব বিদ্যমান। উপদেশের কিঞ্চিত নমুনা নিম্নে দেওয়া যাইতেছে।
“বলি, মস্তিষ্কা দেবি! আপনার কয়টি পুত্র ও কয়টি কন্যা আমায় বলিবেন কি?”
“ভোলানাথ! তুমি কী নিমিত্ত এরূপ প্রশ্ন করিতেছ? তোমার সাধ্য নয় যে, তুমি এ সকল বুঝিতে পার। এই দেখো, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা, ইহার নাম স্পর্শ সত্তা বা ত্বক্, এই আমার দ্বিতীয় কন্যা, রসনা। এই আমার প্রথম পুত্র নয়ন, দ্বিতীয় পুত্র শ্রবণ, এই আমার তৃতীয় কন্যা নাসিকা” ইত্যাদি। গ্রন্থের “দৈহিক ভাবটি” অতি পরিপাটি। গ্রন্থের আত্মিক ভাব বুঝিবার জন্য ভোলানাথের ন্যায় সমজদার ব্যক্তির আবশ্যক। যাহা হউক, আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এইটুকু বুঝিতে পারি, এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে “মস্তিষ্কা দেবী” কে বিবিধ শৈত্য-উপচারে ঠাণ্ডা রাখা কর্তব্য।
সাধনা, ফাল্গুন, ১২৯৮