গোলাবাড়ির সার্কিট হাউস

গোলাবাড়ির সার্কিট হাউস

যারা শহরে বাস করে তারা দুচোখ বুজে জীবনটা কাটায়। কোনো একটা বিদেশি তেল কোম্পানির সব থেকে ছোট সাহেব অরূপ ঘোষের মুখে এ কথা প্রায়ই শোনা যেত। সাহেব বলতে যে বাঙালি সাহেব বোঝাচ্ছে, আশা করি সে কথা কাউকে বলে দিতে হবে না। বিলিতি বড় সাহেব আজকাল যদি-বা গুটিকতক দেখা যায়, ছোট সাহেব মানেই দিশি! তবে অরূপের বুকের পাটাও যে কারো চেয়ে নেহাত কম, এ কথা তার শত্রুরাও বলবে না।

সমস্ত বিহার, ওড়িষ্যা, আর পশ্চিমবাংলা জুড়ে যে অজস্র গাড়ি চলার ভালোমন্দ পথ আর অগুন্তি রাত কাটাবার আস্তানা আছে, এ বিষয়ে যারা ও-সব জায়গায় না গিয়েছে, তাদের কোনো ধারণাই নেই। অদ্ভূত সব অভিজ্ঞতার গল্প বলে তারা। বিশেষ করে কোনো নির্জন আস্তানায় দু-চার জনা যদি অতর্কিতে একত্র হয়। সেদিন যেমন হয়েছিল। বলাবাহুল্য অরূপ ছিল তাদের একজন।

বিদেশি তেল কোম্পানির ছোট বড় সাহেবদের তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি চড়ে বেড়ানো নিতান্ত নিন্দনীয়! কাজেই অরূপের গাড়িটা খুব পুরোনো ছিল না। কিন্তু হলে হবে কী, দুর্ভোগ কপালে থাকলে তাকে এড়ানো সহজ কথা নয়, কাজেই এই আস্তানায় পৌঁছতে শেষ বারো মাইল আসতে, তার দেড় ঘণ্টা লেগেছিল এবং পঁচিশবার নামতে হয়েছিল। ফুয়েল পাম্পের গোলমাল, সেটি না সারালেই নয়। অথচ ক্ষুদে অখ্যাত বিরামাগারের সামনের নদীর মাথায় কোথাও প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়ে থাকবে, তার ফলে নদী ফেঁপে ফুলে একাকার। পুরনো লজঝড়ে পুল থরহরি কম্পমান। আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক ছাড়া কেউ তাতে চড়তে রাজি হবে না।

তবে এর চাইতে অনেক মন্দ জায়গাতেও রাত কাটিয়েছে অরূপ। সেই কথাই হচ্ছিল। ম্যানেজার ছাড়া, শুধু একটা চাকর। তা ছাড়া তিনজন আগন্তুক; অরূপকে নিয়ে চারজন। ম্যানেজার মানে কেয়ার-টেকার। এখানে কেউ থাকে না, খায়-দায়ও না। হয়তো দৈবাৎ অসুবিধায় পড়লে রাত কাটিয়ে যায়। নিজেদের খাবার-দাবার খায়।

বনবিভাগের ইন্সপেক্টর কালো সাহেব ডি-সিলভা বলল, “আরে তোমরাও তো খাও-দাও, ঘুমোও।” তা খায় সত্যিই। কেয়ার-টেকার খ্রিশ্চান; যে বেয়ারা রাঁধে সে কেয়ার-টেকারের হুকুম পালে বটে; কিন্তু তার হাতে খায় না। নদীর ওপারে মাইল দেড়েক দূরে রবি গাঁও থেকে রসদ কিনে আনতে হয়। আজ আর কেউ নদী পার হতে পারেনি। ভাঁড়ার ঠনঠন। তা ছাড়া এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখন আর যে-কেউ এসে উঠলেই অমনি তার নফর হতে হবে, এমন যেন কেউ আশা না করে।

ডি-সিলভা পরিষ্কার বাংলা বলে, তার আদি নিবাস ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। এবার সে রেগে উঠল। “মাই ডিয়ার ফেলো, আমি তোমাদের মতো নই, আমি ইউরোপিয়ান, তোমাদের রাঁধাবাড়ার তোয়াক্কা রাখি না। আমার রসদ আমার সঙ্গে থাকে। আমি শুধু জানতে চাই এ জায়গাটা রাত কাটাবার পক্ষে নিরাপদ কি না।”

অরূপ না হেসে পারল না। “বনের মধ্যে যার কাজ তার অত ভয় কীসের?”

তৃতীয় ব্যক্তির নাম নমসমুদ্রম কি ঐ ধরনের কিছু। বোধহয় পুলিশের লোক। ডি-সিলভার সঙ্গেই এসেছিল। সে সর্বদা ইংরেজি ছাড়া কিছু বলে না। এবার সে ব্যস্ত হয়ে বলল, “না, না, সেরকম ভয়ের কথা হচ্ছে না। আর হবেই-বা কেন? তোমাদের মতো উৎসাহী ইয়ংমেন তো এ-সব বনের শ্রেষ্ঠ-সম্পদ বন্য জন্তু মেরে-কেটে সাবাড় করে এনেছ! ও অন্য ভয়ের কথা বলছে।”

অরূপ জুতোর ফিতে ঢিলে করে, মোজাসুদ্ধ পা টেনে বাইরে এনে, আঙুলগুলো নেড়ে একটু আরাম বোধ করে বলল, “তা হলে কীরকম ভয়ের কথা মশাই?” সে তেল কোম্পানির কর্মী, রাষ্ট্রভাষা তার মুখে সহজে আসে। শুনে চতুর্থ ব্যক্তি দাড়ি নেড়ে বলল, “ঠিক, রাইট।” নমসমুদ্রম কাষ্ঠ হাসল— “এমন সব ভয়ের ব্যাপার যা বন্দুকের গুলিতে বাগ মানে না। ঠিক কি না?”ডি-সিলভা বলল, “অবিশ্যি আমার তাতে এসে যায় না। ইউরোপের লোকেরা এ-সব বিষয়ে অনেকটা উদার। তা ছাড়া আমার পীরের দরগায় মানত করা আছে। আমার ক্ষতি করে কার সাধ্যি।”

সরদারজি বললেন, “তবে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে বই কী। এই যেমন গত বছর সবাই পই-পই করে বারণ করা সত্ত্বেও আমাদের ট্রাক দুর্ঘটনার অকুস্থলে যাবার পথে মোপানির ডাক-বাংলায় রাত কাটালাম। বেশ ভালো ব্যবস্থা, আমার ডালরুটি আমার সঙ্গে থাকে, চৌকিদারটিও ভদ্র। আমার ঘর দেখিয়ে দিয়ে আর স্নানের ঘরে জল আছে কি না অনুসন্ধান করেই সে হাওয়া হয়ে গেল। আমিও ক্লান্ত ছিলাম, মনে যথেষ্ট দুর্ভাবনাও ছিল, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। মাঝরাতে উঠতে গিয়ে খাটের পাশে ঠ্যাং ঝুলিয়ে, ও হরি, তল পাই না! কিছুতেই আর মেঝেতে পা ঠেকল না। নামাও হল না। কখন আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে উঠে দেখি যে-কে সেই। খাটের পাশে ঐ তো চটিজোড়া রয়েছে, কেউ ছোঁয়নি। ভালো করে ঘরটা পরখ করলাম, কেউ যে দড়ি বেঁধে কি অন্য উপায়ে খাটটাকে শূন্যে তুলবে, তার কোনো চিহ্ন নেই। ভাবলাম দুঃস্বপ্ন দেখেছি। কাপড়-চোপড় পরে চায়ের জন্য বসে বসে হয়রান হয়ে, চৌকিদারের ঘরে গিয়ে তাকে টেনে বের করলাম। আমাকে দেখে সে অবাক! ‘সাহাব, আপনি— আপনি—! ও বাংলোতে তো কেউ রাত কাটায় না। কাল সেই কথাই বলতে চেষ্টা করছিলাম, আপনি কানও দিলেন না।’

“হাসলাম। আমার কনুই-এর ওপর কালীঘাটের মাদুলী বাঁধা সে কথা আর ব্যাটার কাছে প্রকাশ করলাম না। অবিশ্যি বলা বাহুল্য জায়গাটার নাম মোপানি নয়। সরকারের ক্ষতি করতে চাই না বলে নামটা পালটে দিলাম।”

নমসমুদ্রম বলল, “ডি-সিলভার আর আমার গত বছর এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তরাইয়ের এক চা বাগানে এক বন্ধুর বাড়িতে অতিথি হয়েছিলাম। বাগানও দেখব, ডি-সিলভা কীসব গাছের নমুনা সংগ্রহ করবে আর আমার একটা তদন্তের কাজও ছিল। সন্ধে থেকে চা-বাগানে কেমন একটা অস্বস্তি লক্ষ করলাম। অন্ধকারের আগেই আপিস-সেরেস্তার কারখানা-গুদোমখানার দরজা-জানলা দুমদাম বন্ধ হয়ে গেল। কর্মীরা যে যার কোয়ার্টারে দোর দিল। অথচ এখানে এমন কিছু একটা শীত পড়েনি। আকাশে ফুটফুট করছে চাঁদ। সকাল সকাল খাওয়া-দাওয়া সেরে, চা-বাগানের মালিকও নিজের শোবার ঘরের দিকে রওনা হলেন। আমাদের বললেন, “শুয়ে পড় তোমরা, এ সময়টা এ-সব জায়গায় খুব ভালো নয়। শিকার? কাল সকালে ভালো শিকারের বন্দোবস্ত করেছি।” কিন্তু এত সকালে শোব কী! বন্দুক নিয়ে দুজনে বাথরুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

“চা-বাগান গিয়ে ঘন বনে মিশেছে। মাঝখানে শুধু একটা উঁচু সেতু। সেটা পেরুনো আমাদের কাছে কিছুই নয়। পূর্ণিমায় কখনো বনের মধ্যে বেড়িয়েছেন? চাঁদের আলো পাতার ফাঁক দিয়ে কুচিকুচি হয়ে, এখানে ওখানে পড়ে হিরের মতো জ্বলে। কোথাও অন্ধকার জমে থক থক করে। মনে হয় গাছগুলো জেগে উঠে চোখ মেলে চেয়ে দেখছে। গা শিরশির করে। কোথাও সাড়া-শব্দ নেই।

“হঠাৎ দেখি আমাদের থেকে দশ হাত দূরে প্রকাণ্ড নেকড়ে বাঘ। এত বড় নেকড়ে এ দেশে হয় জানতাম না। তার চোখ দিয়ে আলো ঠিকরোচ্ছে, মুখটা একটু হাঁ করা, বড়-বড় দাঁতের ফাঁক দিয়ে লালা ঝরছে। মাথাটা একটু নিচু করে বিদ্যুৎবেগে সে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আর গায়ের চাপে ঝোপঝাপগুলো সরে সরে যাচ্ছে।

“আমার সারা গা হিমের মতো ঠাণ্ডা ঘামে ভিজে গেল। বন্দুক তুলবার জোর পাচ্ছিলাম না। অথচ ডি-সিলভা নির্বিকার। যেই জানোয়ারটা আমাদের পার হয়ে গেল মনে হল এমন সুযোগ আর পাব না। অমনি সম্বিৎ ফিরে এল। বন্দুক তুলে ঘোড়া টিপলাম। খুব বেশি হলে জন্তুটা তখন আমাদের কাছ থেকে সাত-আট হাত দূরে। আমার অব্যর্থ লক্ষ্য। গুলিটা তার গা ছুঁড়ে ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গেল। পরদিন একটা গাছের গায়ে সেটাকে বিধে থাকতে দেখা গেছিল।

“নেকড়েটা ভ্রূক্ষেপও করল না যেমন যাচ্ছিল তেমনি নিমেষের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে গেল। আমার কেমন মাথা ঘুরে গেল, ডি-সিলভা না ধরলে পড়েই যেতাম।” অরূপ বলল, “ভারী অদ্ভুত তো?”

ডি-সিলভা চুপ করে শুনছিল। এবার সে মুখ থেকে সিগারেট বের করে বলল, “অদ্ভুত বলে অদ্ভুত! আমি তো ওর পাশে দাঁড়িয়েও নেকড়ে-ফেকড়ে কিছু দেখলাম না, খালি একটা বুনো গন্ধ নাকে এল। একফোঁটা রক্তও মাটিতে দেখা গেল না। পরদিন ভোরে বাগানের মালিক শিকারের প্ল্যান বাতিল করে দিয়ে, একরকম জোর করেই আমাদের রওনা করে দিলেন। খুব বিরক্ত মনে হল। তবে এ সব ব্যাপারে কোনো এক্সপ্ল্যানেশন খুঁজবেন না, মশাই। নেহাত সমুদ্রের মা গুরু-বংশের মেয়ে, নইলে আর দেখতে হত না।”

অরূপ খুবই অস্বস্তি বোধ করছিল। এদের যত সব গাঁজাখুরি গল্প। ইন্টেলিজেন্সের অপমান। ডি-সিলভা বলল, “কী হল? বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? বনে-জঙ্গলে, নির্জন জায়গায় আমাদের মতো ঘুরে বেড়ান কিছুদিন, তার পর দেখবেন সব অন্যরকম মনে হবে।”

সরদারজিও হাসলেন। বললেন, “বিশেষ করে যদি গোলাবাড়ির সার্কিট হাউসে একবারটি রাত কাটাতে হয়।” পরিবেশটি যে এইরকম একটা আলোচনারই যোগ্য সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। এক দিকে ক্ষুব্ধ নদীর জল ফুঁসছে, অন্য দিকে বনের গাছপালায় বাতাসের আলোড়ন, তার উপর মেঘলা আকাশের নীচে চার দিক থেকে এরই মধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। বাতাসটা থমথমে।

তবু, গোলাবাড়ির সার্কিট হাউসের নাম শুনে অরূপের হাসি পেল। সে উঠে বসে জিজ্ঞাসা করল, “কেন সেখানে কী হয়?” সরদারজি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। “সেকী! আপনি থাকেন কোথায় যে অমন একটা সুখ্যাত জায়গার কথা জানেন না? ভাবতে পারেন সেখানে টাকা দিয়েও সরকার কখনো একটা চৌকিদার কি বেয়ারা রাখতে পারেনি। কেউ রাজী হয়নি। এটা একটা হিস্টরিক্যাল ফ্যাক্ট। বনের মধ্যে খাঁ-খাঁ খালি বাংলো পড়ে থাকত। নাকি সন্ধের পর জন্তু-জানোয়ারও তার ত্রি-সীমানায় ঘেঁষত না।”

অরূপ আবার হেসে উঠল। “তাই নাকি? অথচ আমি সেখানে পরম আরামে গতকাল রাত্রিবাস করে এলাম। চৌকিদারের আপ্যায়ন আর বাবুর্চির রান্নার তুলনা হয় না। কোত্থেকে যে ওই ব্যাক-অফ-বিয়ন্ডে আমার জন্য মাশরুম আর অ্যাসপ্যারাগাস জোগাড় করে খাওয়াল তা ওরাই জানে। জানেন ফেদার-বেডে রাত কাটালাম। পোর্সিলিনের বাথ-টাব ভরে গরম জল দিল। একটা পয়সা নিল না দুজনার একজনও। কত মন-গড়া গল্পই যে আপনারা বিশ্বাস করেন তার ঠিক নেই। তবে এ কথা সত্যি যে আমার গাইড বুকে ওটার নামেও পাশে লেখা আছে, অ্যাবান্ডনড ১৯০০ এ. ডি! গাইড-বুকের লেখকও তেমনি। নিশ্চয় আপনাদের কারো কাছ থেকে ওই তথ্য সংগ্রহ করেছিল!” বলে অরূপ খুব হাসতে লাগল। “আর তাই যদি বলেন, গাইডবুকে আমাদের আজকের এই আস্তানারও নাম নেই, তা জানেন? এটাই-বা এল কোত্থেকে?”

অরূপ হাসলেও বাকিরা কেউ হাসল না। তারা বরং ত্রস্ত চঞ্চল হয়ে উঠে, “ম্যানেজার! ম্যানেজার!” বলে চেঁচাতে লাগল। এলও ম্যানেজার এক মুহূর্তের জন্য, বেয়ারাটাও এল। কী যেন বলবারও চেষ্টা করল। তার পরেই সব ছায়া-ছায়া হয়ে গেল। ঘর বারান্দা কিছুই রইল না। শুধু সামনে অন্ধকার বন আর পিছনে নদীর ফোঁস ফোঁসানি। ওরা ধুপধাপ করে যে যার গাড়িতে উঠে পড়ল। সরদারজি অরূপকে সঙ্গে টেনে নিলেন। পনেরো মাইল ফিরে গিয়ে ছোট শহরে ওরা রাত কাটিয়ে সকালে যে যার পথ দেখল। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

খালি অরূপকে জিপ ও লোকজন নিয়ে একটু বেলায় গিয়ে গাড়িটা উদ্ধার করতে হল। তখন নদীর জল কমে গেছে, পুল আর কাঁপবে না। গাড়ি সারানো হলে অরূপ পুল পার হয়ে ওদিকের পথ ধরল। তার আনা লোকগুলোর পাওনা চুকিয়ে জিজ্ঞাসা না করে পারল না, “নদীর তীরে গাছের নীচে শুকনো ফুল কেন?” তারা হেসে বলল, “গাঁয়ের লোকের কুসংস্কার মশাই। মাসে একবার এখানে বুনকিদেওর পুজো দেয়। তিনি নাকি বিপন্ন যাত্রীদের রক্ষা করেন।” অরূপ বলল, “গোলাবাড়ি সার্কিট হাউসের ব্যাপারটা কী?” তারা অবাক হয়ে বলল, “সে তো কবে ভেঙেচুরে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *