গোয়েন্দা বরদাচরণ
গোয়েন্দা বরদাচরণ একটা লাউ চুরির কেস নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। কে বা কারা পরশু দিন ন’পাড়ার মোক্ষদা দিদিমার ঘরের চাল থেকে একটি নধর লাউ চুরি করে নিয়ে গেছে। মোক্ষদা দিদিমার নাতি নাড়গোপাল বাইরে চাকরি করে, সে বড় লাউয়ের ডাল ভালবাসে। নাতির জন্য লাউটা খুব যত্নে রেখেছিলেন দিদিমা। আজকালের মধ্যে নাড়গোপালের আসার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই পরশুদিন লাউটা চুরি গেছে। দিদিমা কেঁদে কেটে এসে পড়লেন বরদাচরণের কাছে, “ও বাবা বরদা, আমার লাউ উদ্ধার করে এনে দাও।”
সেই থেকে বরদাচরণের ঘুম নেই, খাওয়া নেই। সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট আর কুকুর নিয়ে সারাদিন আতসকাঁচ হাতে করে মোক্ষদা দিদিমার সারা বাড়ি, ঘরের চাল, পাড়া-প্রতিবেশীদের আনাচ-কানাচে তন্নতন্ন করে কু খুঁজেছেন। তারপর বাড়ি এসে সারাদিন বসে ভেবেছেন, কাগজ কলমে কী যেন লিখেছেন আর মাঝেমাঝে “হুঁ হুঁ বাবা! নাঃ, হচ্ছে না!” গোছের কথা বলেছেন আপনমনে।
বরদাচরণের বয়স ত্রিশ-বত্রিশ হবে। বাড়িতে বুড়ী মা আছেন, আর আছে তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাগ্নে চাক্কু, আর পোষা নেড়ী কুকুর ডঙ্কি। বরদাচরণ কিছু মোটাসোটা মানুষ, ডন-বৈঠক করা শরীর। ভাগ্নে চাক্কু রোগা হলেও জুডো জানে। ডঙ্কি খুবই ভাল ঘেউ-ঘেউ করতে পারে।
চাক্কু এসে বারবার খোঁজ করে যাচ্ছে, “মামা, কিছু ভেবে পেলে?”
বরদা খুবই অন্যমনস্কভাবে বলেন, “বোঁটা দেখে তো মনে হয় লাউটা বেশ বড়সড়ই ছিল।”
“তা ছিল।”
“লাউটা বোঁটা কেটে নেওয়া হয়নি, মুচড়ে ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে।”
“হুঁ, ঠিক ধরেছ।”
“টিনের চালের ওপর একটা বড় লাউকে মুচড়ে বোঁটা ছিঁড়ে নেওয়া হল, অথচ কোনো শব্দ হয়নি। মোক্ষদা দিদিমার ছেঁড়া মশারির মধ্যে প্রচুর মশা ঢুকে পড়েছিল বলে দিদিমার সে-রাতে ভাল ঘুম হয়নি, শব্দ হলে তার টের পাওয়ার কথা।”
চাক্কু চিন্তিতভাবে বলে, “সে ঠিক, তবে মোক্ষদা দিদিমা আবার কানে একটু খাটো কিনা।”
এই সময় বাইরে ডঙ্কি ঘেউ-ঘেউ করে উঠল, কে একজন চেঁচিয়ে বলল, “কুকুর সামলান!”
চাক্কু ছুটে বাইরে গেল। একটু বাদে একজন বেশ ভাল চেহারার লোক ঘরে ঢুকেই বললেন, “বরদাবাবু, একটা মার্ডার কেস।”
বরদাচরণ গম্ভীরভাবে তাকে বসতে বলে কেস ডায়েরির খাতাটা টেনে নিয়ে কলম বাগিয়ে বললেন, “ডিটেলস বলুন।”
“আমার পোষা কাকাতুয়াটাকে আজ সকালে তার দাঁড় থেকে মৃত অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।”
বরদাচরণ ভ্রূ কুঁচকে বললেন, “এটা যে অস্বাভাবিক মৃত্যু তা কী করে বুঝলেন?”
“খুবই স্বাভাবিকভাবে।” ভদ্রলোক উদভ্রান্ত মুখে বললেন, “পাখিটার প্রতি আমার প্রতিবেশী রামচন্দ্রের অনেকদিনের লোভ। সে প্রায়ই বলত, অম্বুজাক্ষ, তোমার কাকাতুয়াটা বড় চমৎকার হরির নাম করে হে! তখন থেকেই ওর মতলব আমার ভাল ঠেকেনি। আজ সকালে পাখিটাকে ঝুলতে দেখে আমি দাঁড়ে-রাখা জল আর পাখির খাবার পরীক্ষা করি। আমার মনে হচ্ছে, জলে বা খাবারে বিষ মেশানো আছে।”
বরদাচরণ ডায়েরি বন্ধ করে উঠলেন, পিস্তলটা ড্রয়ার থেকে বের করে পকেটে ভরলেন। আতসকাঁচ, দড়ি, ক্যামেরা, এবং কী ভেবে টেপ রেকর্ডারটাও সঙ্গে নিলেন। চাক্কু এবং ডঙ্কিকেও তৈরি হতে বললেন। তারপর ভদ্রলোকের দিকে চেয়ে বললেন, “অম্বুজাক্ষবাবু, কেসটা অত সরল নাও হতে পারে। রামচন্দ্রবাবুর যেমন মোটিভ থাকতে পারে, আবার কাকাতুয়াটা সুইসাইডও করতে পারে, কিংবা এর পেছনে হয়তো আরও অনেক গভীর চক্রান্ত হয়েছে।”
বেরোবার সময়ে বরদাচরণের মা ডেকে বললেন, “বরদা, দুটি পান্তাভাত খেয়ে যাবি না?”
কে শোনে কার কথা! বরদাচরণ বেরিয়ে পড়লেন।
অম্বুজাক্ষবাবুর বাড়িটা বেশ বড়। পিছনে একটা ঢাকা দরদালানে অনেকগুলো খাঁচা, আর দাঁড়ে বিস্তর পাখি চেঁচামেচি করছে।
বরদাচরণ কাকাতুয়ার দাঁড়টা ভাল করে দেখলেন। পাখিটা পায়ে বাঁধা শিকলি থেকে তখনো ঝুলছে। দাঁড়ের দুদিকে দুটি বাটিতে জল আর কাবলি ছোলা। একটা ছোলা তুলে নিয়ে পিছনের উঠানে ছুঁড়ে দিলেন বরদাচরণ, একটা কাক সঙ্গে সঙ্গে নেমে এসে সেটা খেয়ে ফেলল। কিছুক্ষণ বরদাচরণ কাকটাকে লক্ষ করলেন। না, কাকটা মরল না। তার অর্থ, ছোলায় বিষ নেই। জল থেকে খানিকটা ড্রপারে তুলে নিয়ে বরদাচরণ এদিক ওদিক তাকিয়ে অম্বুজাক্ষবাবুদের পোষা কাবলি বেড়ালটাকে একটা কাঠের বাক্সের ওপর বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে আচমকা চেপে ধরলেন সেটাকে। অম্বুজাক্ষ হাঁ-হাঁ করে এগিয়ে এসে বাধা দেওয়ার আগেই বরদাচরণ বেড়ালকে অদ্ভুত কৌশলে হাঁ করিয়ে ড্রপারের জল তার মুখগহ্বরে ফেলে দিলেন। বেড়ালটা বার’কয় খুব আপত্তিকর শব্দ করল বটে, কিন্তু মরল না।
বরদাচরণ গম্ভীরভাবে বললেন, “হুঁ।”
ওদিকে অম্বুজাক্ষবাবু একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি থেকে কয়েকটা বড়ি খেয়ে আপনমনেই বললেন, “গায়ে হাতে বড্ড ব্যথা।” ।
ওদিকে চাক্কু ডঙ্কির বকলস ধরে বাড়ির চারদিক ঘুরে ঘুরে কু খুঁজছিল। হঠাৎ সে দৌড়ে এসে বরদাচরণের কানে-কানে বলে গেল, “লাউয়ের খোসা! রামচন্দ্রবাবুর বাড়ির পিছন দিকে লাউয়ের খোসা পড়ে আছে, মামা।”
বরদাচরণ বিদ্যুৎবেগে উঠে পড়লেন।
বুড়ো মানুষ রামচন্দ্রবাবু ঘরে বসে রামায়ণ পড়ছিলেন। বরদাচরণকে দেখে যেন একটু চমকে উঠে বললেন, “আরে, আসুন আসুন বরদাবাবু! বিখ্যাত লোকদের দেখা পাওয়া এক মস্ত সৌভাগ্য।”
বরদাচরণ বসলেন। স্থির চোখে কিছুক্ষণ রামচন্দ্রবাবুকে স্টাডি করে দেখলেন তিনি।
রামচন্দ্রবাবু রামায়ণ বন্ধ করে বললেন, “ভাবছিলাম, আজই আপনার কাছে একবার যাব। আমার উঠোনের নারকোল গাছ থেকে কাল রাতে ছটা নারকেল কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। খুবই রহস্যময় ব্যাপার। বাইরে থেকে কারো পক্ষে উঠোনে আসা খুবই শক্ত। তবে
বলে রামচন্দ্রবাবু খুবই ইংগিতপূর্ণভাবে চুপ করে গেলেন।
বরদাচরণ ডায়েরিতে সেটা লিখে নিতে-নিতে বললেন–”কিছু গোপন করবেন না রামচন্দ্রবাবু।”
রামচন্দ্রবাবু লাজুক হাসি হেসে বললেন, “না, গোপন করে লাভ নেই। আপনার চোখকে কি ফাঁকি দেওয়া সম্ভব! বলেই ফেলি।” বলে গলাটা নিচু করে বললেন, “পাশের বাড়ির অম্বুজটা মহা নারকোল-খোর। দুবেলা নারকোল খায়। বড়া করে খাচ্ছে, নাড় বানিয়ে খাচ্ছে, মুড়ি দিয়ে খাচ্ছে, অমন নারকোল খেতে কাউকে দেখিনি। প্রায় সময়েই আমাকে বলে, রামচন্দ্রবাবু, আপনার গাছে বিস্তর নারকোল হয়েছে দেখছি! আমার সন্দেহ, কাল রাতে”
‘হুঁ।” বরদাচরণ খুবই গম্ভীর হয়ে গেলেন। একটু আগেই তিনি অম্বুজাক্ষবাবুকে গায়ের ব্যথার জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেতে দেখেছেন। গায়ের ব্যথা তো হবেই। এই বয়সে যদি অত উঁচু নারকোল গাছে কেউ ওঠে তবে ব্যথা হওয়াই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু খুঁজেপেতেও অম্বুজাক্ষবাবুর বাড়িতে নারকোল বা নারকোলের ছোবড়া পাওয়া গেল না। এটাও রহস্যজনক। কারণ, নারকোল খাওয়া যার নেশা, তার বাড়িতে নারকোলের চিহ্নও খুঁজে না-পাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক।
কিন্তু রামচন্দ্রবাবুর বাড়ির পিছনে চাক্কুর কথামত লাউয়ের খোসা ঠিকই পাওয়া গেল। পরিষ্কার ক্ল।
কিন্তু বরদাচরণ চট করে কিছু করেন না। অপরাধীকে সময় দেন। তাকে যে সন্দেহ করা হচ্ছে, তা টেরও পেতে দেন না।
মোক্ষদা দিদিমাকে লাউয়ের ব্যাপারে আরও কয়েকটা প্রশ্ন করবেন বলে বরদাচরণ ভরদপুরে দিদিমার বাড়ি এলেন। প্রশ্নগুলো এরকম, লাউয়ের রংটা কীরকম ছিল, গাঢ় সবুজ না সাদাটে? লাউয়ের গায়ে এক জায়গায় একটা পোকার গর্ত ছিল কিনা! বোঁটার কাছে এক জায়গায় একটা নখ বসানোর দাগও পাওয়া যাচ্ছে। রামচন্দ্রবাবুর বাড়ির পিছনের আস্তাকুঁড় থেকে সবকটা লাউয়ের খোসা কুড়িয়ে এনে বরদাচরণ তার মধ্যে এইসব অকাট্য চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন।
যখন মোক্ষদা-দিদিমাকে জেরা করছিলেন বরদাচরণ, তখনই হঠাৎ চাক্কু এসে চুপিচুপি কানে কানে খবর দিয়ে গেল, “মামা, মোক্ষদা দিদিমার ভঁড়ার ঘরে এক বস্তা নারকোলের ছোবড়া। আর ছ’টা খোসা-ছাড়ানো নারকোল।”
মাথাটা ঘুরে গেল বরদাচরণের। কেসগুলো খুবই জড়িয়ে যাচ্ছে, অসম্ভব জটিল হয়ে উঠছে। মোক্ষদা-দিদিমার বাড়িতে নারকোল গাছ নেই, তবে ছোবড়া বা নারকোল আসে কোত্থেকে? ওদিকে রামচন্দ্রবাবুর বাড়ির চুরি-যাওয়া নারকোল অম্বুজাক্ষবাবুর বাড়িতেও পাওয়া যায়নি। নারকোলের সংখ্যাটাও আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যাচ্ছে।
ভাবতে ভাবতে বরদাচরণ উঠে পড়েন। পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে দেখে নেন ছ’টা চেম্বারেই গুলি ভর্তি আছে কিনা। আছে।
রাস্তায় পা দিতেই একটা গাড়ি সামনে ঘাস করে থামল। গাড়ির ভিতরে এক সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক। তিনি হাতজোড় করে বললেন, “আসুন, বিখ্যাত গোয়েন্দাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ধন্য হই।”
বরদাচরণ উঠলেন। চাক্কু আর ডঙ্কিও উঠল সামনের সীটে। অচেনা ভদ্রলোক গলা নিচু করে বরদাচরণকে বললেন, একটা খুবই রহস্যময় কাণ্ড ঘটে গেছে। কাল আমার একটা বুড়ো কাকাতুয়া মারা গেছে। খুবই প্রিয় পাখি ছিল আমার। ঠিক করেছিলাম পাখিটার মৃতদেহ একটা ভাল জায়গায় কবর দিয়ে ওপরে একটা চমৎকার সমাধি তৈরি করে দেব। কিন্তু বিপদ হল, কাকাতুয়াটার মরদেহ একটা নাইলনের ব্যাগে ভরে বাইরের বারান্দায় রেখে গতকাল আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করার কথা বলতে গিয়ে ফিরে এসে দেখি, ব্যাগটা নেই। কী সাংঘাতিক কাণ্ড বলুন! কেটা যদি আপনি নেন!”
বরদাচরণ সবই টুকে নেন ডায়েরিতে। গম্ভীরভাবে বলেন, “হু, কাকাতুয়ার কেস দুটো হল তা হলে! আশ্চর্য!”
বলে দুশ্চিন্তিত বরদাচরণ বাড়ির সামনে নেমে গেলেন।
দুপুরে খুবই অন্যমনস্কভাবে খেতে বসেছেন বরদাচরণ। কী খাচ্ছেন তা বুঝতেই পারছেন না। লাউ, কাকাতুয়া, নারকোল, সব জট পাকিয়ে আছে মাথায়। তার মা বললেন, “ও বরদা, লাউঘণ্ট দিয়ে আর দুটো ভাত মাখ।”
লাউঘণ্ট কথাটা বরদাচরণের মাথার মধ্যে দু-একবার টংটং শব্দ করল। প্রায়ই তিনি লাউঘণ্ট খান, কাজেই বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
হঠাৎ বরদাচরণ চমকে উঠে বললেন, ‘লাউঘণ্ট! লাউ এল কোথা থেকে? আমি তো আজ বাজার থেকে লাউ আনিনি!”
মা বলেন, “তুই আনবি কেন? কাল চাক্কু লাউটা হাতে করে এনেছে, ওর কোন্ বন্ধুর বাড়িতে নাকি অনেক লাউ হয়েছে, তারা দিল।”
নিজের পাতের দিকে ভাল করে চেয়ে দেখলেন বরদাচরণ। লাউঘণ্টের পাশে দুটো বড়া পড়ে আছে। উঠে গিয়ে আতসকাঁচ নিয়ে এসে বড়াটা নিবিষ্টভাবে দেখছেন, মা বললেন “দেখছিস কী! ও তো নারকোলের বড়া। ছটা নারকোল এনেছিল চাক্কু, কোন্ গাছ থেকে নাকি পড়ে গিয়েছিল বাতাসে। তার দুটো ভেঙে ঐ বড়া করেছি।”
বরদাচরণ বাকি সময়টা ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করে উঠে পড়লেন। চাক্কু অনেক আগেই খেয়ে-দেয়ে কোন্ মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে পড়া বুঝতে গেছে।
বরদাচরণ পিস্তল আর আতসকাঁচ নিয়ে ডঙ্কির শেকল ধরে ঘর থেকে বেরোলেন। তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলেন চারদিক। অবশেষে ডঙ্কি ইংগিত বুঝতে পেরে তাঁকে গোয়ালঘরে টেনে আনল। সেখানে একটা সদ্য–কেনা দাঁড়ে জলজ্যান্ত একটা কাকাতুয়া বসে আছে। বরদাচরণকে দেখেই বলে উঠল “হরি বল, হরি বল ভাই, হরি ছাড়া গতি নাই।”
বরদাচরণ টেপ-রেকডার নিয়ে এসে পাখিটার কথা টেপ করতে লাগলেন।
তারপর সারা দুপুর আর সন্ধে, আর্কিমিডিস যেমন স্নানের চৌবাচ্চায় ডুব দিয়ে স্পেসিফিক গ্র্যাভিটির চিন্তা করেছিলেন, তেমনি এক চিন্তার চৌবাচ্চায় ডুবে থেকে বরদাচরণও লাউ, কাকাতুয়া আর নারকোলের রহস্যে মগ্ন রইলেন। তারপর আর্কিমিডিস যেমন ইউরেকা’ বলে লাফিয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনি তিনিও লাফিয়ে উঠলেন। সমস্ত রহস্যটাই তাঁর কাছে জল হয়ে গেছে।
বস্তুত তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন, যে-লোকটা মোক্ষদা দিদিমার লাউ চুরি করেছে, সেই একই লোক গতকাল গাড়িওলা ভদ্রলোকের মৃত কাকাতুয়াটা হাতসাফাই করে অম্বুজাক্ষবাবুর জ্যান্ত কাকাতুয়ার দাঁড়ে ঝুলিয়ে রেখে হরিনামপরায়ণ জ্যান্ত কাকাতুয়াটাকে সরিয়ে ফেলে। আবার সেই লোকটাই কোনো এক অজ্ঞাত কারণে রামভক্ত রামচন্দ্রবাবুর নারকোল গাছের ছটা নারকোলও গোপনে নামিয়ে নেয়। এবং ঐ একই অপরাধী প্রমাণ লোপের চেষ্টায় এবং তদন্তকে বিভ্রান্ত করার জন্য বরদাচরণকে রামচন্দ্রবাবুর বাড়ির পিছনে লাউয়ের খোসার সন্ধান দেয়, এবং মোক্ষদাদিদিমার বাড়িতে নারকোল-ছোবড়ার অস্তিত্বের কথা ফাঁস করে দেয়।
বেশ রাত হয়ে গেছে। সবাই গভীর ঘুমে। বরদাচরণ পিস্তল হাতে নিয়ে চুপিসাড়ে পাশের ঘরে এসে অন্ধকারে চেয়ে রইলেন। আবছা দেখা যাচ্ছে, দিদিমার বুক ঘেঁষে শুয়ে চাক্কু ঘুমোচ্ছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন গোয়েন্দা বরদাচরণ। না, এক্ষুনি তিনি কিছু করবেন না। অপরাধীকে তিনি সবসময়ে আরও সুযোগ দেন। তাতে অপরাধীকে যে সন্দেহ করা হচ্ছে, তা সে বুঝতে পারে না। এবং এইভাবেই সে একদিন নিজের অপরাধের জালে ধরা পড়ে যায়।
পিস্তল নামিয়ে গোয়েন্দা বরদাচরণ ফিরে এলেন নিজের ঘরে। তিনি এখন নিশ্চিন্তভাবে জেনে গেছেন, কে অপরাধী। অপরাধী আর কেউ নয়, অপরাধী হল…?