গেট ওয়েল সুন

গেট ওয়েল সুন

কেবিনে পা দিয়েই নন্দনা এত জোরে ‘ফুল’ বলে চেঁচিয়ে উঠল, যেন শাশুড়ির বেডের পাশে আর ডি এক্স রাখা আছে। চেঁচানির চোটে বুক ধড়ফড় করে উঠল অনসূয়ার। সামলে নিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। তাতে আরও নার্ভাস হয়ে গেল নন্দনা। ধপাস করে বসে পড়ল ভিজিটার্স টুলে। বেডসাইড টেবিলটায় রাখা ফুল সাজানো বাস্কেটের নীচে উজ্জ্বল রঙের একটা কাৰ্ড৷ ‘এই বুঝি ফেটে যায়’ সতর্কতায় কার্ডটা তুলে নেয় নন্দনা। ‘গেট ওয়েল সুন’ ছাপা অক্ষরের তলায় হাতে লেখা ‘কুনাল’।

ইনি কে মা? অবাক গলায় জানতে চায় নন্দনা।

অনসূয়া বললেন, আমার বন্ধু।

এঁর কথা তো আগে কখনও শুনিনি।

সামান্য লজ্জা পাওয়া হাসি হাসলেন অনসূয়া। প্রসঙ্গ এড়িয়ে জানতে চান, বাবাই আসবে আজ?

হ্যা এইবার এসে পড়বে। অফিস থেকে বেরিয়ে ফোন করেছিল। নন্দনা আগের পয়েন্টে চলে যায়, কখন এসেছিলেন উনি?

ও বেলার ভিজিটিং আওয়ার্সে।

ইস ঋজুর স্কুলে পেরেন্টস মিটিং না থাকলে ঠিক আসতাম সকালে। দেখা হয়ে যেত ওঁর সঙ্গে। আক্ষেপ ঝরে পড়ল নন্দনার গলায়। আহ্লাদের সুরে ফের জানতে চায়, বন্ধুটি কি নতুন?

হাসেন অনসূয়া। বলেন, এখন কি আর নতুন বন্ধু করার বয়স আছে? ও আমার অনেক পুরনো বন্ধু। বাইরে চাকরি করত। রিটায়ারমেন্টের পর ফিরে এসেছে কলকাতায়। তারপর আবার যোগাযোগ…

কথা শেষ হওয়ার আগেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে কেবিনে ঢুকল অনসূয়ার বড় ছেলে বাবাই। উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলে ওঠে, এই তো মাকে আজ একদম ফ্রেশ লাগছে।

বলার পরেই স্ত্রীর দিকে চোখ যায়। কপাল কুঁচকে বলে, তোমাকে কেমন যেন একটু ডাউন মনে হচ্ছে। হোয়াট হ্যাপেনড?

চট করে মুড পালটে ফেলল নন্দনা। ফ্লাওয়ার বাস্কেটের দিকে আঙুল তুলে প্রগল্ভতার সুরে বলল, মায়ের বন্ধু এসেছিল সকালে। এটা দিয়ে গেছে। কী সুন্দর না?

বাস্কেটটা তুলে নিল বাবাই। বলল, রিয়েলি? সো নাইস। কেবিনে ঢুকেই চোখে পড়েছিল। ভাবলাম তুমি এনেছ।

কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল নন্দনা, পরদা সরিয়ে ঢুকল মলি। অনসূয়ার মেয়ে। বাবাইয়ের হাতের ফুলের তোড়া দেখে বাঁকা গলায় বলে, কী ব্যাপার রে বড়দা? আজ হঠাৎ মায়ের জন্য ফুল নিয়ে এলি! মায়ের বার্থ ডে-টাই তো মনে রাখতে পারিস না।

বাবাইয়ের হয়ে নন্দনা কোনও কড়া জবাব দিতে যাচ্ছিল। অনর্থ ঘটবে আন্দাজ করে অনসূয়া মেয়ের উদ্দেশে বলে ওঠেন, তুই কী করে উঠে এলি? দু’জনের বেশি তো অ্যালাও করে না।

এ সব তোমার জামাইয়ের ক্যালি। এই ক’দিনেই রিসেপশনে যা জমিয়ে নিয়েছে, ভিজিটার্স পাসের কথা কেউ জিজ্ঞেসই করল না।

অনসূয়া জানতে চান, তুই কি আজ একা এলি?

ও মা! একা আসতে যাব কেন? আমার মা হাসপাতালে আছে, দেখতে আসবে না মানে। সে অফিস নিয়ে ও যতই ব্যস্ত থাকুক।

তা সে এখন কোথায়? জানতে চায় বাবাই।

নীচে, ডাক্তারের সঙ্গে ডিসকাস করছে একটু।

ভ্রূ কুঁচকে বাবাই জিজ্ঞেস করে, কী নিয়ে?

ডাক্তারকে বলবে মাকে আরও দুটো দিন রাখতে পারেন অবজারভেশনে। আমাদের কোনও তাড়া নেই। বাড়ি নিয়ে গিয়ে কোনও প্রবলেম ফেস করতে চাই না। বলার পর পজ নিয়ে মলি যোগ করে, চিন্তা করিস না। এই দু’দিনের এক্সপেন্সেজ সায়নই বেয়ার করবে বলেছে।

কোনও প্রয়োজন নেই। আমি পুরোপুরি ভাল হয়ে গেছি। কী এমন হয়েছিল আমার! তোরাই এত দামি নার্সিংহোমে ভরতি করলি। আমি কালই বাড়ি ফিরে যাব। বেশ জোরের সঙ্গে বললেন অনসূয়া।

কথাটার পাশ কাটিয়ে মলি বাবাইয়ের হাত থেকে ফুলের বাস্কেটটা নিয়ে বলে, তোর চয়েস আছে দাদা। বড় কোনও দোকান থেকে নিয়েছিস মনে হচ্ছে। কনফারেন্স থাকলে সায়ন এরকম বোকে-ই পায়।

খোঁচাটা গায়ে মাখল না বাবাই। ফুল সে আনেনি। তাই অফিস থেকে পাওয়া মাল চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। নন্দনা কার্ডটা মলির দিকে বাড়িয়ে দেয়। কার্ডের লেখা পড়ে একটু থমকায় মলি। মাকে বলে, কুনাল কে? আমি কি তাঁকে দেখেছি?

এবার আর লজ্জা নয়, রহস্যময় হাসি ফিরে আসে অনসূয়ার মুখে। দু’পাশে মাথা নাড়েন।

ভিজিটার্স টুল ছেড়ে উঠে পড়ে নন্দনা। কেবিনের বাইরে যাওয়ার আগে মলির কনুই ধরে বলে, বাইরে এসো একবার।

ফোন বেজে ওঠে বাবাইয়ের। স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে বলে, ভাইয়ের ফোন। বোধহয় চলে এসেছে রিসেপশনে। গেটপাস লাগবে। ফোন কানে নিয়ে বাবাই বলে, হ্যাঁ বল…। ও প্রান্তের কথা শুনতে শুনতে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

স্বস্তির শ্বাস ছাড়েন অনসূয়া। কেবিনের এসি চলা সত্ত্বেও এই চাপানউতোরে ঘেমে

উঠেছিলেন। ফুলের স্তবকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। অনসূয়া ভাল করেই জানেন, এরা এই যে গেল, খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে না। জামাই, ছোট ছেলে আছে নীচে। সকলে মিলে মিটিং করবে। বিষয়, ফুলের তোড়া। কে দিল? মায়ের ওই বন্ধু হঠাৎ উদয় হল কোথা থেকে? বিষয়সম্পত্তি সব হাতিয়ে নেবে না তো লোকটা?

শ্যামপুকুর স্ট্রিটে একশো বছরের পুরনো শ্বশুরের ভিটেতে বলতে গেলে একাই থাকেন অনসূয়া। ঠিকে কাজের লোক আছে একজন। রাতে শোয় বকুলের মা। কর্তা গত হয়েছেন বছর পনেরো হল। ছেলে বউমাদের পছন্দ নয় ওই মান্ধাতার আমলের বাড়ি। সরু গলিতে গাড়ি ঢোকে না। পাশেই কলোনি, অমার্জিত পরিবেশ। তারা সব বড় চাকরি করে। কলকাতার পশ এলাকায় থাকে। এদিকে ছ’কাঠা সমেত দোতলা বাড়িটার অনেক দর দিচ্ছে প্রোমোটার। তাতেই মাথা ঘুরে গেছে ছেলে, মেয়ে, বউমা, জামাইয়ের। অনসূয়া এখনও অবধি কোনও ডিসিশন নেননি। ওরা ভীষণ উৎকণ্ঠায় আছে, মা আদৌ বিক্রি করবে কি না। করলে কাকে কতটা ভাগ দেবে? নিজেদের গোছানো সংসার ছেড়ে এখনই মায়ের কাছে গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। প্রোমোটারের দর শোনার পর থেকে অনসূয়ার সবচেয়ে আপনজনেরা পালা করে দু’বেলা ফোন করে। নাতিনাতনিরাও আছে এদের মধ্যে। বাবামায়েরাই করায় তাদের। মাথা টলে সোফায় বসে পড়ার খবর কাজের লোকের মারফত শুনে দৌড়ে এসেছিল ছেলেমেয়েরা। লোকাল ডাক্তার বলল, প্রেশার ফল করেছে। চেকআপ দরকার। ওরা ভরতি করে দিল এই নার্সিংহোমে।

ফুল, কার্ড পাঠানোর মতো মায়ের কোনও নিকটজন যে কলকাতায় আছে, এটা ওদের কল্পনাতেও ছিল না।

অনসূয়াও ভাবেননি আরোগ্যকামনায় কেউ তাঁকে ফুল দিয়ে যাবে। ঘটনাটা ভুলক্রমেই ঘটেছে। তবে অভিঘাতটা ভারী রোমাঞ্চকর।

আজ সকালের ভিজিটিং আওয়ার্সে অনসূয়ার কোনও ভিজিটার্স ছিল না। ওয়ার্কিং ডে, তাই সকলেই ব্যস্ত। তা ছাড়া এখন দু’বেলা দেখতে আসার প্রয়োজনও নেই। একেবারেই তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। কাল হয়তো ছুটিও দিয়ে দেবে। মন দিয়ে পুজোসংখ্যা পড়ছিলেন অনসূয়া। পত্রিকাটা মেয়ে দিয়ে গেছে। কেবিনের পরদা সরিয়ে ঢুকলেন সৌম্যদর্শন এক পুরুষ। হাতে ফুল সাজানো বাস্কেট, মাথার সব চুল সাদা, ক্লিন শেভন, চোখে দামি ফ্রেমের চশমা, সাদা পাজামার ওপর লাইট ইয়েলো পাঞ্জাবি। মানুষটিকে কস্মিন কালে দেখেননি অনসূয়া। অথচ ভদ্রলোক হাসছিলেন পরিচিতের হাসি। বললেন, কেমন আছেন এখন?

থতমত খেয়ে যাওয়া অনসূয়া ঘাড় হেলিয়ে ছিলেন আলতো করে। ভদ্রলোক ফুল ভরতি সাজি আর কার্ড হাতে দিয়ে বলেছিলেন, আপনার আগামী দিনগুলো নীরোগ, আনন্দময় হোক। শুভেচ্ছা রইল।

অনসূয়া বলতে যাবেন, আপনাকে তো ঠিক… সুযোগই পেলেন না। নিমেষে বেরিয়ে গেলেন মানুষটি। খানিক বাদে ওষুধ খাওয়াতে এসেছিল নার্স। ফুলের বাস্কেটটা দেখে খুশি হল সে। বলল, দারুণ তো! হতভম্ব ভাব তখনও কাটেনি অনসূয়ার। নার্সকে ঘটনাটা জানিয়ে বললেন, মনে হচ্ছে ভদ্রলোক ভুল ডেলিভারি করে গেলেন। হয়তো আশপাশে কোনও

কেবিনে দেওয়ার কথা ছিল। নার্স বলল, সম্ভবত না। পাশের কেবিনগুলোর পেশেন্টরা কেউ-ই আপনার মতো স্টেবল কন্ডিশনে নেই। এই সিচুয়েশনে ভিজিটররা ফুল নিয়ে আসেন না। আমার মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো ঠিক প্লেস করতে পারছেন না ভদ্রলোককে। ওয়েট করুন, নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে।

ভুলো মনের অপবাদ অনসূয়াকে কেউ দিতে পারবে না। বরং সব কিছুর খুঁটিনাটি মনে থাকে। ছেলেমেয়েরা তো বটেই, আত্মীয়রাও সাহায্য নেয় তাঁর। এখন সমস্যা হচ্ছে, বাড়ির লোকেদের কাছে অনসূয়া ঝোঁকের মাথায় বলে ফেলেছেন, ফুল নিয়ে আসা কুনাল তাঁর বন্ধু। মানুষটির সম্বন্ধে আরও তথ্য জানতে চাইবে ওরা। মায়ের বন্ধু তাদের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, না বোঝা অবধি অনসূয়াকে রেহাই দেবে না।

অনুমান মিথ্যে হয়নি। অনসূয়া বাড়ি ফিরেছেন এক সপ্তাহের ওপর হল। ছেলে-বউমারা, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি— সব ঘনঘন দেখা করতে এসেছে। দু’-চার কথার পরই বড়দের দল টেনে এনেছে কুনালের প্রসঙ্গ। অনসূয়াকে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলতে হয়েছে। সময় পেলেই কুনাল এ-বাড়িতে আসে, ফোন করে খবরাখবর নেয়, আমাদের প্রেসিডেন্সিতেই পড়ত কুনাল, আমার চেয়ে দু’বছরের সিনিয়র, একসঙ্গে সিনেমা থিয়েটারে গেছি, কত আড্ডা…

কুনালের সঙ্গে আলাপ করতে চেয়ে ঝুলে পড়েছিল ছেলে, মেয়ে, বউমা, জামাই। ছোট নাতনিটা তো একদিন জিজ্ঞেসই করে বসল, হু ইজ কুনাল ঠাম্মা? ইয়োর বয়ফ্রেন্ড? অনসূয়া পড়ছিলেন মহা ফাঁপরে। নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন মানুষটার খোঁজ পেতে। একবার নিজের লোকেদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। ক্ষণিকের ওই দেখায় মানুষটিকে যতটুকু বুঝেছেন অনসূয়া, অনুরোধ করলে উনি বন্ধু পরিচয়ে সকলের সামনে দাঁড়াতে অরাজি হবেন না।

সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মানুষটাকে আর বোধহয় পাওয়া যাবে না। নার্সিংহোমে ফোন করে অনসূয়া জেনেছেন, তাঁর ঠিক আগে ওই কেবিনের থাকা পেশেন্টের বাড়ির নম্বর। ফোন করেছিলেন সে বাড়িতে। তারা কুনাল নামে ওই বয়সি কাউকে চেনে না। অনসূয়া সোজা পৌঁছে গিয়েছিলেন নার্সিংহোমের রিসেপশনে। একুশে মার্চ তাঁর আশেপাশের কেবিনের পেশেন্টদের বাড়ির ফোন নম্বর নেন। এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করে কাউন্টারে বসা শ্রেয়া। ভারী ভাল ব্যবহার মেয়েটির। অনসূয়ার হয়ে শ্রেয়াই ফোন করে পেশেন্ট পার্টিদের। কুনালের কোনও হদিশ পাওয়া গেল না। উপর্যুপরি অনুরোধের ঠেলায় অনসূয়া এদিকে ঘরের লোকেদের কথা দিয়ে ফেলেছেন, আলাপ করিয়ে দেবেন বন্ধুর সঙ্গে। গত পরশু ওদের কাছে উলটো সুর গাইতে হল। বলে দিলেন, কুনাল চাইছে না আমার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে পরিচিত হতে। বেশি জানাজানি হলে ওঁর ফ্যামিলিতে প্রবলেম হতে পারে। অশান্তির ভয়েই এতদিন আমরা সম্পর্কটা গোপন করে রেখেছি।

ছেলে, মেয়ে, জামাই গম্ভীর হয়ে গেল। দুই বউমা ট্যারাব্যাকা কথা বলল দু’-চারটে। মাঝে একটা গোটা দিন চলে গেল। কোনও ফোন এল না ওদের। ভালই হয়েছে। দমফাঁস

অবস্থাটা কেটেছে অনসূয়ার। কৃতজ্ঞ বোধ করছেন কুনালের প্রতি। মিনিট খানেকের উপস্থিতিতে মানুষটা তাঁকে অনেকটা মুক্ত করেছে।

আজ ঘুম থেকে উঠেই অদ্ভূত ইচ্ছে জাগল অনসূয়ার মাথায়। বেলা বাড়তেই ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। দোকান থেকে কিনেছেন ফুল সাজানো সুন্দর বাস্কেট। ‘গেট ওয়েল সুন’এর কার্ড নিতে ভোলেননি। কার্ডে নিজের নামটুকু লিখেছেন। পদবি নয়।

শ্রেয়াকে আলাদা ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে মনোবাসনা জানালেন অনসূয়া। ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে শ্রেয়া বলল, কুড়ি নম্বর কেবিনে চলে যান।

নির্দিষ্ট কেবিনে ঢুকলেন অনসূয়া। এক বৃদ্ধ কাচের জানলার বাইরে আকাশ দেখছেন। আকাশ যতই নির্জন, নিঃসীম হোক, দামি নার্সিংহোম থেকে বেশ চকচকে দেখায়। পায়ের শব্দে ফিরে তাকান বৃদ্ধ। অনসূয়া পরিচিতের হাসি হেসে বলেন, কেমন আছেন এখন?

বৃদ্ধের চোখে স্মৃতি তোলপাড় করা দৃষ্টি। মনে করার চেষ্টা করছেন সামনে দাঁড়ানো মহিলাকে। অনসূয়া ফুলের স্তবক, কার্ড বৃদ্ধের হাতে ধরিয়ে বললেন, আপনার আগামী দিনগুলো নীরোগ, আনন্দময় হোক, শুভেচ্ছা রইল।

কথা খুঁজে পাচ্ছেন না বৃদ্ধ৷ অনসূয়া কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।

ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরছেন অনসূয়া, ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। শ্রেয়াকে তিনি বলেছিলেন, পেশেন্ট স্টেবল কন্ডিশনে আছে, এমন কোনও কেবিন নম্বর বলো। অবশ্য সকাল থেকে যাঁর কোনও ভিজিটর আসেনি। শ্রেয়া বুদ্ধিমতী, একই সঙ্গে সংবেদনশীল মেয়ে। কোনও প্রশ্ন না করে ফুলের বাস্কেটের দিকে আরও একবার তাকিয়ে অনসূয়াকে কেবিন নম্বরটা বলে। অনসূয়া শ্রেয়াকে রিকোয়েস্ট করেন, পেশেন্ট আমার অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর চাইবে। প্লিজ দিয়ো না।

একগাল হেসে আশ্বস্ত করেছে শ্রেয়া। অনসূয়ার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে কুনালও অন্য কোনও নার্সিংহোমের কেবিনে ফুল দিয়ে বেরিয়ে এল। এবার থেকে অনসূয়া মাঝে মাঝেই বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ‘গেট ওয়েল সুন’ জানিয়ে আসবে। কুনালও নিশ্চয়ই এমনই করে। বাস্তবে দু’জনের কোনও দিনই দেখা হবে না। গল্প, উপন্যাস হলে লেখক ঠিক দু’জনকে একটি নার্সিংহোমের লাউঞ্জে দেখা করিয়ে দিতেন। দু’জনের হাতেই ফুলের তোড়া। অনসূয়া এগিয়ে যেতেন কুনালের কাছে। বলতেন, জানতাম, একদিন ঠিক দেখা হবে।

আনন্দবাজার পত্রিকা ওয়ান স্টপ জুলাই-১১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *