গৃধিনি – পার্থসারথী চক্রবর্তী
ইরানি আর পপি আমাদের পরিবারের খুবই আপনজন। ইরানি হল বেজি আর পপি হল ছোট্ট একটা টেরিয়ার কুকুর, সারা গা তার সাদা নরম সুন্দর লোমে বোঝাই। পপির যখন বয়স মাত্র একমাস তখন আমাকে একজন বিদেশি বন্ধু ওটা উপহার দিয়েছিলেন। আর ইরানিকে একেবারে বাচ্চা অবস্থায় পাওয়া যায় আমাদের বাড়ির পিছনের বাগানে। আমিই প্রথম ইরানিকে দেখতে পাই। সেই থেকে ও আমাদের বাড়িতেই বড়ো হয়েছে। হঠাৎ ছোটোমামা ডেকে পাঠাতেই ওদের মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে নীচের ঘরে এলাম। দেখি ছোটোমামার সামনের চেয়ারে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন। তাঁর হাতে বিশাল বড়ো একটা খাঁচা। খাঁচার মধ্যে পাখিটাকে দেখে আমি তো একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কাকাতুয়া টিয়া, ময়না, পাপিয়া, বুলবুল নয়—খাঁচার মধ্যে রয়েছে আস্ত জলজ্যান্ত একটা ধাড়ি শকুন। ভদ্রলোকের গায়ে সাদা আদ্দির একটা পাঞ্জাবি, চওড়া পাড়ের ধুতি পরেছেন। রং ফর্সা, চুলগুলো কোঁকড়ানো, বয়স পঞ্চাশ কি তার কিছু নীচেই হবে। পুরু গোঁফ জোড়াটা দেখবার মতো। ওঁর ভরাট মুখে মানিয়েছেও খাসা। মুখে একটা মৃদু হাসির রেখা সব সময় লেগেই রয়েছে দেখলাম।
ছোটোমামা বললেন—ইনি হচ্ছেন রামবল্লভ ধর। এঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল বিহারের পুর্নিয়া জেলার একটা গণ্ডগ্রাম। পাখি—বিশেষ করে শকুন সম্পর্কে ইনি খুবই আগ্রহী। শকুনের চমকপ্রদ জীবনযাত্রা নিয়ে রামবল্লভ বাবু দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়েছেন।
তারপর ছোটোমামা আমার দিকে চেয়ে বললেন—’আর এই হল আমার একমাত্র ভাগ্নে লম্বু ওরফে পজিট্রন মুখার্জি, যার কথা আপনাকে একটু আগে বলছিলাম’।
এরপর রামবল্লভ বাবু ছোটোমামার দিকে তাকিয়ে বললেন—’আমি তাহলে আজ উঠি। শকুনটা আপনার হেফাজতেই আপাতত এখানে থাক। আমার কাছে অবশ্য আরও ছোটো বড়ো নানান ধরনের শকুন আছে। চাইলেই পাবেন।’ তারপর একটা পলিথিনের ব্যাগ ছোটোমামার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন—’এর ভেতর কিছু পচা মাংস আছে। দিনে চারবার করে খেতে দেবেন। শকুনের আবার খাওয়াদাওয়া যা বিশ্রী রকম। এটা থাকলে আপনার সুবিধে হবে।’
রামবল্লভ বেরিয়ে যাবার পর আমি শকুনটাকে ঘুরে ফিরে দেখছি এমন সময় ছোটোমামা বললেন—’শকুনিকে চলতি কথায় আমরা শকুন বলে থাকি। আসলে আমাদের দেশে দু’রকমের শকুন দেখতে পাওয়া যায়। শকুনি ও গৃধিনি। গৃধিনিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ‘গিন্নি শকুন’ বলে। এদের কানের দু’পাশে দুটো কানপাশার মতো লাল জিনিস থাকে। আমি খাঁচার মধ্যে শকুনটার দিকে চেয়ে দেখলাম, তারও কানের দু’পাশটা লাল কানপাশার মতো দেখতে। চিৎকার করে বলে উঠলাম—’ছোটোমামা এর নাম রাখা হোক তাহলে গৃধিনি।’
ছোটোমামা মৃদু হেসে উত্তর দিলেন—’তা, বেশ তো।’
শকুনটার দিকে তাকিয়ে দেখি সে ঘাড় ঘুরিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তার চোখের পলক পড়ছে না। আর মাঝে মাঝে ডানাদুটো সামান্য ওপরে তোলবার চেষ্টা করছে।
এমন সময় ঘরের মধ্যে এসে ঢুকল ভীম ঠাকুর। সে তো খাঁচার মধ্যে শকুন দেখে একেবারে রেগে টং। গজগজ করে বলতে লাগল—’একটা বেজি আর একটা কুকুর নিয়েই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না, তারপর কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল আবার একটা শকুন। এ যে দেখছি গোদের ওপর বিষফোঁড়া।’
ভীম আমাদের বাড়িতে রান্না করে। এছাড়া ঘরদোর গোছানো, দুধ আনা, বাজার করা—সব কাজই সে করে। অনেকদিন ধরে আছে, ছোটোমামাকেও বড়ো একটা মানে না। মাঝে মধ্যে আমাকে তো বটেই, এমনকী তার মনিবকেও ধমক দেয়।
আমি বললাম—’ ভীম ঠাকুর, তোমায় কিছু করতে হবে না। শকুনের যাবতীয় দেখাশোনা সব আমিই করব। তুমি শুধু একটু মুরগির মাংসের ঝোল করে ওকে খাইও।’
—’শকুন খাবে রান্না করা মুরগির ঝোল। এমন বেআক্কেলে কথা তো কোনোদিন শুনিনি বাপু। ইচ্ছে হয়, তুমি নিজে হেঁসেলে গিয়ে রান্না করে খাইও। আমি ওসব পারবো-টারবো না। আমার গতরের অত জোর এখন আর নেই।’—এই বলে মেজাজ খারাপ করে ভীম ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ছোটোমামা আমার দিকে চেয়ে বললেন, ‘লম্বু, তুই তাহলে গৃধিনিকে ছাদের ওপরের ঘরে পপি আর ইরানির কাছে রেখে আয়। আপাতত ও খাঁচার মধ্যেই থাক। পরে যা হয় দেখা যাবে।’
—’যদি পপি খাঁচার মধ্যে থাবা ঢুকিয়ে কিছু করে বসে?’
—’দূর পাগল—কিছু করবে না, তুই রেখে আয় তো কিছু হলে আমি দেখব তখন।’
আমি গৃধিনির খাঁচাটা তুলতে গিয়ে দেখি—অবাক কাণ্ড, তার ওজন তো নেহাত কম নয়। বেশ ভারী লাগছে। আবার খাঁচাটা ওঠাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যা ভারী, কিছুতেই তুলতে পারলাম না।
ছোটোমামা ততক্ষণে দোতলার ল্যাবরেটরি ঘরে ঢুকে পড়েছেন। জেনেটিক্স নিয়ে উনি দিনরাত কি সব রিসার্চ করছেন। অবশ্য আমি তার বিন্দু বিসর্গও বুঝিনে। সবাই বলে ছোটোমামা খুব নাম করা সায়েন্টিস্ট। পি সি আর (PCR) নিয়ে তাঁর গবেষণা নাকি সারা বিশ্বে দারুণ হইচই ফেলে দিয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ওঁর কি সব কাজ নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে একটা ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার বসবে। আমি, পিসি আর মাসি এসবের বিন্দু বিসর্গও বুঝি না। দোতলায় বড়ো বড়ো আস্ত চারটে ঘর জুড়ে ছোটোমামার ল্যাবরেটরি। তাতে কম্পিউটার, লেসার, স্পেকট্রোফটোমিটার এসব দামি যন্ত্র বসানো রয়েছে। আমি এর মাথামুণ্ডু কিছুই জানি না। তবে ছোটোমামার ল্যাবরেটরির আশ্চর্য কার্যকলাপ আমার দেখতে ভারি ভালো লাগে, স্বপ্নের মতো মনে হয়।
মনে মনে ঠিক করলাম ভীম ঠাকুরকে আর একবার অনুরোধ করে দেখব। আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দরজার কাছে গিয়ে ভীম ঠাকুরকে বললাম—’শকুনের খাঁচাখানা ছাদে রেখে দিয়ে এসো না একবার। ভীষণ ভারী যে, আমি যে খাঁচাটা তুলতেই পারছি না।’
ভীম ঠাকুর সে কথা শোনামাত্র হইচই করে সঙ্গে সঙ্গে তার আপত্তির কথা জানিয়ে দিল।
এদিকে আমিও নাছোড়বান্দা। বললাম—’তুমি যদি শকুনের খাঁচাটা ওপরে রেখে আস, তাহলে কালকে তোমার জন্য হিরাভাই মিশ্রর একটা গানের ক্যাসেট এনে দেব। ওই যে তুমি একদিন বলছিলে—’মেরা সাইয়া বুলায়ে আঁধি রাতে নদিয়া কিনারে’ এই গানটা নাকি তোমার বেজায় পছন্দ। কি তাহলে রাজি তো?
ভীম ঠাকুর গান শুনতে ভারি ভালোবাসে। বিশেষ করে বেগম আখতার, হিরাবাই মিশ্র আর গিরিজা দেবীর গান। তাই আমার প্রস্তাবে সে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। তবে এক শর্তে—আগামীকাল বিকেলেই ক্যাসেটটা ওকে এনে দিতে হবে।
আমি বললাম—’আচ্ছা, আচ্ছা তাই হবে’।
আমি রামবল্লভ ধরের দেওয়া মাংসের থলিটা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ছাদের ঘটে উঠে এলাম। পিছনে পিছনে ভীম ঠাকুর এল শকুনের খাঁচাটা নিয়ে।
ছাদের ঘরটা বেশ বড়ো। চার চারটে নিওন টিউব এখানে জ্বলে। তাই ঘরটা সবসময় দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
ভীম ঠাকুর শকুনের খাঁচাখানা রেখে দিয়ে গেল। এদিকে দেখি পপি আর ইরানি এই নবীন আগন্তুককে দেখে একযোগে তারস্বরে চিৎকার করতে আরম্ভ করেছে। সে এক দারুণ বিশ্রী ব্যাপার।
গৃধিনির কিন্তু এতে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই। তার কোনো চিত্ত-চাঞ্চল্য ঘটেছে বলে বোধ হল না। অর্থাৎ ওনার ভাবখানা এমন যে সারা পক্ষীজগতের সমাজই যখন তাকে একঘরে করেছে, তখন অন্য প্রাণীরাও যদি বয়কট করে তাহলে আর ক্ষতি কোথায়!
আমি গৃধিনির খাঁচার দরজা খুলে তার মধ্যে খাবারটা রেখে দিলাম। দেখলাম খাবারের দিকে তার বিন্দুমাত্র রুচি নেই। সে ঘাড়টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিক পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। সেই সঙ্গে সম্ভবত পপি, আর ইরানির কাণ্ডকারখানাও উপভোগ করছে। কিছুক্ষিণ বাদে লক্ষ করা গেল ওদের চেঁচামেচির তীব্রতা সামান্য কমের দিকে। আমি গৃধিনির ঘাড়ের কাছে একটা বেগুনি রংয়ের স্কেচ পেন দিয়ে ইংরেজি V অক্ষর লিখে দিলাম। তারপর দরজাটা আস্তে ভেজিয়ে দিয়ে পড়ার ঘরে চলে এলাম।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ছোটোমামাকে জিজ্ঞেস করলাম—’আচ্ছা, দুনিয়ার এত জিনিস থাকতে খামোখা শকুন নিয়ে রিসার্চ করতে যাচ্ছ কেন? শকুন নিয়ে আগে কি কেউ কখনো রিসার্চ করেনি ছোটোমামা?’
ছোটোমামা উত্তর দিলেন—’হ্যাঁ, করেছে ঠিকই, তবে কম। উডস নামে একজন ইংরেজ সাহেব যিনি ‘বয়েজ ওন ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ এই বিখ্যাত বইটা লিখেছিলেন, তিনি কিছু কাজ করেছেন। তবে আধুনিক জেনেটিক্স নিয়ে শকুনের ওপর গবেষণা বিশেষ কেউ করেছে বলে জানি না।’
ছোটোমামার মুড এসে গেছে এখন। ইজিচেয়ারে গা-টা এলিয়ে দিয়ে ছোটোমামা বলতে শুরু করলেন—
‘পক্ষীজগতে যদি কোনো সমাজ থাকে তবে নিশ্চয়ই তার শকুনিকে একঘরে করেছে বলতে হবে। শকুনি তাদের কাছে হরিজন পাখি। পক্ষীমহলে শকুনির জল অচল। তাদের সঙ্গে অন্য পাখির ওঠাবসা এবং সামাজিক ক্রিয়া-কর্ম কিছুই চলে না। অবশ্য শকুনিকে সকলেই যে বয়কট করেছে এমন নয়। পক্ষীজগতে যাদের সম্মান নেই, রবাহুত বা অনাহুত হয়েই যারা ভোজবাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয় ও যাদের দেখলে লোকে ‘দূরছাই’ করে, সেই কাক একমাত্র স্বার্থসিদ্ধির সময় শকুনির সাহচর্য গ্রহণ করে।
‘আমাদের দেশে সাধারণত দু’রকমের শকুনি দেখতে পাওয়া যায়। শকুনি ও গৃধিনি বা গিন্নি শকুন। শকুনির চেহারা দেখে সহজেই মনে হয় এরা বেশ শক্ত আর বাঁচেও অনেকদিন।
যেসব প্রাণীর চামড়া শক্ত, কাক বা শিয়াল তা ছিঁড়তে পারে না শকুনি এসে তার তীব্র তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ওই চামড়া তুলে দেয়। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে ওই প্রাণীর মৃতদেহ অদৃশ্য হয়ে পড়ে। কেবল তার কঙ্কালটা পড়ে থাকে মাত্র।’
‘শকুনি যদি না থাকত তবে রোজ বহু প্রাণী পচে গলে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করত তা বলবার নয়। শকুনি যতই দেখতে কুৎসিত হোক না কেন, ওরা মানুষের যথেষ্ট উপকার করে। আমাদের দেশে শকুনের সংখ্যা এখন ভীষণ ভাবে কমে আসছে—এটা দারুণ দুশ্চিন্তার কথা।’
এই পর্যন্ত বলার পর ছোটোমামা থামলেন। তারপর বললেন—’রাত অনেক হল, এবার শুতে যা।’
আজ রবিবার, স্কুল নেই। ঘুম থেকে উঠে সোজা ছুটে গেলাম তিনতলার ছাদের ঘরে। গিয়ে দেখি তাজ্জব ব্যাপার! একটা শকুন, বেজি আর একটা কুকুর এই তিনটে জানোয়ার মিলে মিশে একসঙ্গে খেলা করছে। এর চাইতে আশ্চর্য দৃশ্য আর কী হতে পারে? আরও অবাক কাণ্ড, খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার পর গৃধিনি কিন্তু অনায়াসে উড়ে পালিয়ে যেতে পারত। কিন্তু তা সে যায়নি।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর ছোটোমামা গৃধিনিকে নিয়ে তার ল্যাবরেটরিতে ঢুকলেন। আর আমি বসলাম সংস্কৃত ব্যাকরণ কৌমুদী নিয়ে। স্থা ধাতু, গম ধাতু আর হস ধাতু মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, হস ধাতু পড়লেই কি আর মুখে হাসি ফোটে? সংস্কৃত ধাতুরূপ আর শব্দরূপ মুখস্থ করতে গেলে আমার কান্না পায়। অথচ সেভেন আর এইট এই দুটো ক্লাসে সংস্কৃত পড়তেই হবে। কম্পিউটার আর ইলেকট্রনিক্সের যুগে সংস্কৃত পড়ে যে কী হবে তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। কিন্তু পরীক্ষায় তো পাস করা চাই। তাই নিমরাজি হয়েও ব্যাকরণ কৌমুদী নিয়ে পড়তে বসে গেলাম।
আজ কদিন ধরে দেখছি গৃধিনির দেহে এক অদ্ভুত পরিবর্তন। তার গলা, বুক, ঠোঁট একেবারে অন্যরকম দেখাচ্ছে। ডানার বিশ্রী পালকগুলো সুন্দর সবুজ রংয়ের হয়েছে আর তার সঙ্গে কোথাও কোথাও মিশে আছে হালকা, হলুদ, কমলা রংয়ের দারুণ বাহার। ছোটোমামাও এখন খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়ে শকুনের রিসার্চে দারুণ ব্যস্ত। অন্য কোনো বিষয়ে এখন তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। নতুন নতুন সব জিন আর হরেমোন প্রয়োগ করে চলেছেন তিনি গৃধিনির ওপর। রামবল্লভ ধর মাঝে মধ্যেই এসে খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরও উৎসাহের অন্ত নেই।
মাসখানেক পরের কথা। এখন গৃধিনির দেহে একেবারে আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। হঠাৎ তাকে দেখে বিন্দুমাত্র বোঝবার উপায় নেই যে সে একটা শকুন। তার কদর্য ভাবটা এখন একেবারেই নেই। সবুজ, হলুদ, কমলা রং মেশানো চকচকে মসৃণ ডানার রং। চোখ মুখ ময়ূরের মতো সুন্দর না হলেও বেশ ভালো। অনেকটা টার্কি পাখির মতো দেখাচ্ছে এখন তাকে, এ এক দারুণ আশ্চর্য ঘটনা। ছোটোমামা লন্ডনের কিংস কলেজের ইগারটন স্মিথকে খবরটা জানিয়েছেন ই-মেল করে। ব্যাপারটা জেনে উনি তো একেবারে চমকে গিয়েছেন। শুনতে পাচ্ছি ছোটোমামা আর ইগারটন স্মিথ নাকি শকুনের দেহ থেকে একটা ক্যানসারের ওষুধ, যাকে বলে এন্টিক্যানসার ড্রাগ তা আবিষ্কার করতে চলেছেন। সামনের মাসে ছোটোমামার লন্ডন যাবার কথা, ‘হরমোন-জিন কম্বাইন্ড এফেক্ট’ সম্পর্কে বক্তৃতা দেবার জন্য।
আজ শনিবার। খুব সকালে ভীম ঠাকুরের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল। তখনও আমার ঘুমের রেশ ভালো করে কাটেনি। ব্যাপার কী? এত চেঁচামেচি কীসের? আওয়াজটা আসছে তিনতলা থেকে। দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি ছোটোমামা ঘরের মেঝের ওপর চুপচাপ বসে আর ভীম ঠাকুর একনাগাড়ে বলে চলেছে—’গৃধিনির খাঁচার দরজা আমি রাতে বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছিলাম। এটা আমার ঠিক মনে আছে।
তাহলে গৃধিনি খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেছে! আশ্চর্য ব্যাপার! মাত্র এই ক’দিনে বাড়ির সকলের সঙ্গে তার বেশ ভাব জমে গিয়েছিল। অনেক সময় খাচার দরজা খুলে দিলেও গৃধিনি খানিকটা ঘোরাঘুরি করে আবার নিজেই খাঁচায় ফিরে যেত। সম্ভবত খাঁচাখানা তার কাছে ছিল একটা নিরাপদ আশ্রয়। তাহলে সে পালিয়ে গেল কেন? নাকি কেউ তাকে চুরি করে সরে পড়েছে? কিন্তু আমাদের বাড়িতে ভীম ঠাকুর থাকতে চোর ঢুকে চুরি করে পালিয়ে যাবে এত স্বপ্নেও ভাবা যায় না। তাহলে গৃধিনি গেল কোথায়?
ছোটোমামা পাড়ার কাছেপিঠের প্রায় সব বাড়িতেই খোঁজখবর নিলেন। না, কোথাও সে নেই। চেনা-জানা সবাইকে ফোন করাও হল। তবু গৃধিনির সন্ধান মিলল না। ছোটোমামা থানাতেও একটা ডায়েরি করে এলেন। থানার ওসি বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটোমামার পরিচিত। তিনি আশ্বাস দিলেন কোনো খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেবেন।
আর সাত দিন হয়ে গেল তবুও গৃধিনীর কোনো সন্ধান মিলল না। সত্যি সত্যি সে গেল কোথায়? যদি সে পুরনো স্মৃতির টানে আবার কোনো ভাগাড়ে গিয়ে থাকে সেই ভেবে ছোটোমামা কাছেপিঠের ভাগাড়গুলোও দেখে এসেছেন। সেখানকার লোকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। কিন্তু কোনো লাভই হয়নি। রামবল্লভ ধরকেও ব্যাপারটা জানান হয়েছে। সেও খবরটা শুনে একেবারে স্তম্ভিত।
আজ সকালে বোম্বের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকার প্রথম পাতায় বড়ো বড়ো হরফে একটা নিউজ বেরিয়েছে—বৈজ্ঞানিক পি কে মাথুরের আশ্চর্য আবিষ্কার। পাখির দেহে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন জিন প্রযুক্তি কৌশল আবিষ্কার করে ইত্যাদি।
ছোটোমামা চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন ইজিচেয়ারে বসে। নিউজটার দিকে চোখ পড়তেই সোজা ফোন করলেন ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এডিটরকে।
—আমি সায়েন্টিস্ট দেবপ্রসাদ কথা বলছি। কাগজে দেখলাম আপনারা পি কে মাথুরের একটা নিউজ ছেপেছেন। ওঁর ঠিকানা আর টেলিফোন নাম্বারটা আমাকে দিতে পারেন কি?
—নিশ্চয়ই। আপনি পাঁচ মিনিট বাদে আবার ফোন করুন আমি অফিস থেকে আনিয়ে রাখছি।
ছোটোমামা টেলিফোনের সামনে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। ওঁকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে। পাঁচ মিনিট যেন পাঁচঘন্টা। সময় যেন আর কাটতেই চায় না। অবশেষে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এডিটরের কাছ থেকে মাথুরের ঠিকানা পাওয়া গেল।
ছোটোমামা বললেন—চট করে তৈরি হয়ে নে লম্বু। এক্ষুনি আমাদের বোম্বে রওনা হতে হবে। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনসের ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। সাহারা ফ্লাইট ছাড়বে একটু পরেই।
বোম্বে যাবার খবর শুনে আমি তো একেবারে আহ্লাদে আটখানা। গৃধিনি হারিয়ে যাবার পর মনটা খারাপ হয়েছিল খুবই। কিন্তু আবার বোম্বে যাবার কথা শুনে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।
দমদম এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি কাটিয়ে যখন সাহারা এয়ারক্রাফটে উঠলাম তখন আমার বেশ অ্যাডভেঞ্চারের মেজাজ। ছোটোমামারও নিশ্চয়ই সে রকম মনে হচ্ছে। সাহারা এয়ারলাইন্সে এর আগে চড়িনি। কিন্তু আদব কায়দা পুরোদস্তুর আধুনিক। খাওয়া-দাওয়ার মেনুও বেশ লোভনীয়।
বোম্বের সান্তাক্রুজ এয়ারপোর্টে পৌঁছে একটা ট্যাক্সি নিয়ে ছোটোমামা আমাকে নিয়ে সোজা গেলেন পি কে মাথুরের বাসায়। উনি বাড়িতে ছিলেন না। একজন প্রৌঢ়া মহিলা বললেন—জেনেটিক্স সোসাইটিতে উনি আজ একটা লেকচার দেবেন। সেখানে গেলে ওঁর দেখা পাওয়া যেতে পারে।
ওখান থেকে ট্যাক্সি চেপে আমরা গেলাম জেনেটিক্স সোসাইটি। ছোটোমামাকে এখন বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বলে বোধ হচ্ছে। জেনেটিক্স সোসাইটিতে আমরা যখন পৌঁছলাম তখন সেমিনার শুরু হয়ে গিয়েছে। ছোটোমামা আমাকে নিয়ে একেবারে সামনের সারিতে বসালেন। সেমিনারের চেয়ারম্যান ছিলেন ভারতের নামকরা জেনেটিক্স বিজ্ঞানী ও পি আয়েঙ্গার। আয়েঙ্গারের সঙ্গে ছোটোমামার আগেই পরিচয় ছিল। ছোটোমামাকে এর আগে তিনি বেশ কয়েকটা চিঠি লিখেছেন। আয়েঙ্গার ডায়াসের ওপরে বসে ছিলেন। ছোটোমামাকে দেখে হাত নেড়ে সাদর সম্ভাষণ জানালেন।
মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে ড. মাথুর। ওঁর পাশের টেবিলের উপর যাকে দেখলাম তাতে তো আমাদের দুজনেরই চক্ষুস্থির হয়ে গেল। গৃধিনি চুপ করে টেবিলের উপর বসে আছে। আর ঘাড় ঘুরিয়ে সে চারিদিকে তাকাচ্ছে।
তখন ড. মাথুরের বক্তৃতা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি বলতে লাগলেন—আমার এই জেনেটিক্স বিজ্ঞানে এক নতুন আলোর সন্ধান দেবে একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। একটা বন্য শকুনের চেহারা সম্পূর্ণভাবে পালটে দিয়ে এই নতুন প্রাণীটা বানিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ আমার একার কৃতিত্ব…।
ড. মাথুরের বক্তৃতা তখনও শেষ হয়ে যায়নি ঠিক সেই সময়েই এই আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটল। গৃধিনি হঠাৎ উড়ে এসে আমার একেবারে কোলের উপর বসে পড়ল। তারপর তার ঘাড়টা আমার গায়ে ঘষতে লাগল। ঘর ভরতি লোকেরা তো এক্কেবারে অবাক! আমি আস্তে আস্তে গৃধিনির গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। হ্যাঁ, স্মরণশক্তি আছে বটে পাখিটার। আমাকে, আর সন্দেহ নেই ছোটোমাকেও, চিনতে সে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি।
যাইহোক ড. মাথুরের এই বক্তৃতার পর সেমিনারের চেয়ারম্যান ড. ও পি আয়েঙ্গার ছোটোমামার দিকে চেয়ে বললেন—আমাদের এই সেমিনারে আজ অনুগ্রহ করে এসেছেন কলকাতা থেকে ড. দেবপ্রসাদ। তাঁর পরিচয় দেওয়া বাহুল্য মাত্র। আপনারা সকলেই জানেন তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জেনেটিক বিজ্ঞানী। আমি ড. দেবপ্রসাদকে এই বিষয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।
আমি ভাবলাম ছোটোমামা এই সুযোগ ডায়াসে উঠে ড. মাথুরের সব চাল ফাঁস করে দেবেন। কিন্তু ও হরি! ছোটোমামা তার ধারে কাছেও গেলেন না। উলটে ড. মাথুরের এই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে এবং তাকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে ডায়াস থেকে নীচে নেমে এলেন।
সভা এখন প্রায় শেষ হবার মুখে। এদিকে গৃধিনি কিন্তু কিছুতেই আমার কোল ছাড়তে চাইছে না। ড. মাথুর নিজে এলেন ওকে তুলে নিতে। সঙ্গে অবশ্য আরও দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল। কিন্তু গৃধিনির সেই এক গোঁ—কিছুতেই সে আমার কাছ থেকে নড়বে না। সেমিনারের সমস্ত বিদগ্ধ লোকেরা এই দৃশ্য দারুণ উপভোগ করছে বুঝতে পারলাম।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে আবার একটা অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল।
রামবল্লভ ধরের ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হল সেখানে। রামবল্লভ প্রচণ্ড রেগে ড. মাথুরের দিকে চেয়ে বললেন—কাজটা আপনি মোটেই ভালো করেননি ড. মাথুর। এই শকুনকে রংবেরং-এর নতুন পাখিতে পরিবর্তন যিনি করেছেন তিনি আপনার সামনেই বসে আছেন—ড. দেবপ্রসাদ। আমি নিজে হাতে করে গবেষণার জন্য ওকে এই শকুনটা দিয়ে এসেছিলাম। জিন ও হরমোনের সাহায্যে শকুনের দেহে যাবতীয় পরিবর্তন এনেছেন ড. দেবপ্রসাদ, আপনি নন।
সভার সমস্ত লোকজন তখন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে। চারদিকে একেবারে নিস্তব্ধ, যাকে বলে পিন ড্রপ সাইলেন্স এমন আর কি।
ড. মাথুরের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। তিনি তোতলামি করে বলতে লাগলেন—’কি আবোল-তাবোল কথা বলছেন মশাই। এটা সম্পূর্ণ আমারই আবিষ্কার।’
—কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে? জিজ্ঞেস করলেন রামবল্লভ ধর।
—এই জলজ্যান্ত প্রাণীটাই তার প্রমাণ। আর প্রমাণ কি চাই? উত্তর দিলেন মাথুর।
—না, এটা আসল প্রমাণ নয়। আপনি কোথায় পেয়েছেন এই প্রাণীটাকে, তা আপনাকে এখন বলতেই হবে।
রামবল্লভ রীতিমতো উত্তেজিত।
চেয়ারম্যান ড. আয়েঙ্গার হতভম্ব হয়ে ওর মুখের দিকে চাইছেন এমন সময় ড. মাথুর তার জামার পকেট থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে দেখালেন।
কম্পিউটার প্রিন্ট-এর কি সব যেন লেখা ও আঁকা। আর দুটো ছবি। একটা শকুনের আর একটা শকুন থেকে রূপান্তরিত এই প্রাণীটার ছবি। এই ছবি দুটো দেখিয়ে ড. মাথুর বললেন—’এর থেকে কি প্রমাণ হয় না, আমিই এর আবিষ্কারক?’
রামবল্লভ ধর উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলেন—’মোটেই নয়, প্রমাণ যদি কিছু থাকে তবে তা নিশ্চয়ই আছে ড. দেবপ্রসাদের কাছে।
ছোটোমামা এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন। তিনি এবার ব্রিফকেস থেকে পর পর একুশটা ফটোগ্রাফ বের করলেন। শকুনের দেহে কি রকম পরিবর্তন, তার পরপর ধারাবাহিক চিত্র। স্লো-মোশান ফোটোগ্রাফিতে সেটা ধরে রাখা হয়েছে। এ এক আশ্চর্য চিত্র।
আমি বললাম—এই দেখুন, শকুনের ঘাড়ের কাছে স্কেচ পেনসিল দিয়ে আমার নিজের হাতে লেখা V চিহ্ন।
ড. মাথুর তখন তোতলামি করে রামবল্লভের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন—’আপনিই আমাকে এই প্রাণীটা এনে দিয়েছিলেন। আর আজ আপনিই আমাকে এইরকম একটা বিশ্রী ব্যাপারে জড়িয়ে ফেললেন?’
রামবল্লভ বলতে শুরু করলেন—
হ্যাঁ, একথা সত্যি যে আমিই শকুনটাকে আপনার কাছে পৌঁছে দিয়ে যাই। কিন্তু কথা ছিল আপনি এই আবিষ্কারের জন্য কাগজে আমাদের দুজনের নামই প্রকাশ করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আপনার। আপনি একাই সমস্ত কেকটা খেতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ সব কৃতিত্বের অধিকারী যে আপনিই সে কথা বোম্বের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সম্পাদককে ভালো করে জানিয়েছেন। ধন্য আপনি! আর ধন্য আপনার রিসার্চ!
আমার সমস্ত গোলমাল হয়ে যেতে শুরু করল। সব যেন হেঁয়ালি মনে হচ্ছে। তাহলে সত্যিই গৃধিনি আমাদের বাড়ি থেকে উড়ে পালিয়ে যায়নি। রামবল্লভ ধরই আবিষ্কারের খেতাব নেবার জন্যে ওকে মাথুরের কাছে চালান করে দিয়েছিল। রামবল্লভ নিজেই স্বীকার করল আমাদের বাড়ির সুইপার দেবকীর সঙ্গে যোগ সাজসে সে এই কাজটা করেছে। দেবকীর কাছে বাড়ির একটা একস্ট্রা চাবি থাকে এবং খুব ভোরে সে কাজ করতে আসে। ব্যাপারটা এখন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
এদিকে রামবল্লভ আর মাথুর যখন হাতাহাতি করার উপক্রম করছে, সেই সময় প্রেসের রিপোর্টাররা ছোটোমামাকে ঘিরে ধরল। ছোটোমামা শকুনের ট্রান্সফরমেশনের সমস্ত ছবি এবং কম্পিউটার অ্যানালিসিস-এর সব কপি ওদের হাতে দিয়ে বললেন—
‘এই ঘটনার জন্য বাস্তবিকই আমি দুঃখিত। ড. মাথুর এবং রামবল্লভ ধর দুজনেই আবিষ্কারের এই খ্যাতি চুরি করতে চেয়েছিলেন। সত্য মূল্য না দিয়েই বিজ্ঞানের খ্যাতি করা চুরি ভালো নয়, ভালো নয়, নকল সে সৌখিন মজদুরি। ভাগ্যিস আজকেই আমি খবরের কাগজের নিউজ দেখে এখানে এসেছিলাম, নইলে কী হত তা কে জানে, হ্যাঁ, আরও একটা কথা। এই শকুনির দেহ থেকে আমি একটা অ্যান্টিক্যানসার ড্রাগও আবিষ্কার করেছি যেটা বিলেতের নেচার পত্রিকার ছাপা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু হয়তো শকুনকে স্টাডি করে জানা যাবে। আচ্ছা চলি, নমস্কার।’
পরদিন সকালে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রথম পাতায় ছোটোমামার সমস্ত কৃতিত্ব ফলাও করে ছাপা হয়েছে। সেই সঙ্গে ড. মাথুর আর রামবল্লভ ধরের যাবতীয় কীর্তি কাহিনিও। সম্পাদকীয় স্তম্ভে ছোটোমামার যেমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে, ঠিক তেমনই নিন্দা করা হয়েছে ওই দুজনকে।
গতকাল আমি আর ছোটোমামা গৃধিনিকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা ফিরেই ইগারটন স্মিথের ই-মেল পেলাম। সামনের মাসের চার তারিখে ছোটোমামার বক্তৃতা। লন্ডনের কিংস কলেজেই। ছোটোমামার সঙ্গে আমিও যাচ্ছি।