আট
বিশ্বরূপদর্শনে কৃষ্ণ তাই নিজের সেই অভীষ্ট সিদ্ধ করলেন যা দশ অধ্যায়ের ‘যুক্তি’তে সিদ্ধ হয়নি। এখন অর্জুন কী দেখলেন? অর্জুন দেখলেন দেব-দানব গন্ধর্ব-যক্ষ সব দলে দলে কৃষ্ণের মুখগহ্বরে প্রবেশ করছে। সমস্ত বিশ্বচরাচর একত্র হয়ে সেই গহ্বরে অবস্থান করছে। দিব্য মাল্য আভরণ, উদ্যত অস্ত্র, মাল্যগন্ধ সেখানে বিরাজ করছে। যদি আকাশে একই সঙ্গে সহস্র সূর্য উদিত হয় তবে সেখান থেকে যে দিব্যকিরণ সম্পাত ঘটে তেমনই জ্যোতি কৃষ্ণে। দেখে অর্জুন মোহিত হয়ে বললেন, ‘ভগবন, দেখছি তোমার দেহে একত্র উপস্থিত হয়েছেন সমস্ত দেবতা। প্রাণিকুল, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব, সর্ব ঋষিকুল, দিব্য সর্পকুল, এঁরা সবাই যুগপৎ বিদ্যমান তোমার মধ্যে। তোমার অনেক বাহু, উদর, মুখ তেজোদীপ্ত অবয়ব দেখাও কঠিন, কারণ জ্বলন্ত অগ্নি ও সূর্যকিরণের সমাবেশ তোমাতে।
‘তুমি অক্ষয়, ধর্মের রক্ষক, তুমি সনাতন পুরুষ। তোমার আদি, মধ্য, অন্ত নাই। আছে অজস্র বাহু, সূর্য-চন্দ্র তোমার দু’টি নেত্র, তোমার প্রভায় বিশ্বচরাচর প্রদীপ্ত; তোমার এই অদ্ভুত উগ্র রূপ দেখে ত্রিলোক ব্যথিত। ওই যে দেবকুল তোমাতে প্রবেশ করছে তার মধ্যে কেউ ভীত, জ্বলন্ত হয়ে তোমার স্তব করছে। অসংখ্য তোমার অবয়ব, আকাশস্পর্শী তোমার দেহ, মুখ খোলা, দীপ্ত জ্বলন্ত তোমার দুই নেত্র। প্রকাণ্ড তোমার উদর, করাল দত্ত, উন্মুক্ত তোমার মুখগহ্বর, নেত্র দু’টি বিশাল, উজ্জ্বল। তোমাকে দেখে চিত্ত অশান্ত, ব্যথিত। তাই আমি দিগ্বিদিক জ্ঞান হারাচ্ছি, চিত্তে প্রশান্তি নেই। ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ এঁরা সব দ্রুতবেগে তোমার মুখাভ্যন্তরে প্রবেশ করছে তোমার করাল দন্তে পিষ্ট হচ্ছে। কেউ বা দন্তের ফাঁকে আটকে আছে।
‘যেমন নদীর জলবেগ সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, যেমন পতঙ্গরা দীপ্ত অগ্নিশিখার অভিমুখে যায়, তেমনই আত্মবিনাশের জন্যে এই সব দেবমানব ও অন্যেরা তোমার মুখগহ্বরে প্রবেশ করছে; তুমি তোমার তীব্র তেজে তাদের দগ্ধ করছ।’
এক কথায় কৃষ্ণ যে আত্মপরিচয় দিয়েছিলেন তা ‘কালোহহং লোকক্ষয়কৃৎ।’ পুরাণের ভাষায় প্রলয় যেমন সৃষ্টিকে ধ্বংস করে তেমনই কৃষ্ণ বর্তমান সৃষ্টিকে নিঃশেষ করতে উদ্যত। এই সৃষ্টির মধ্যে যেমন আছেন দেবতারা, যক্ষ-বক্ষ-গন্ধর্ব-নাগ মুনি-ঋষিরা তেমনই আছে সৃষ্টির সমগ্র প্রাণীকূল। এরা ধ্বংস হলে কৃষ্ণের মহাকালরূপ ধ্বংসাত্মক রূপ সার্থক হবে। তাঁর প্রলয়ংকর রূপই প্রকটিত হবে। স্পষ্ট হবে তাঁর লোকক্ষয়কারী সর্ববিনাশী পরমা বিনষ্টির ভূমিকা। কিন্তু যে রূপ মানুষ কল্পনা করতেও ভয় পায়, সেই কল্পনাতেও অগম্য রূপ অর্জুন দেখতে পেলেন।
এর বিধ্বংসী বীভৎস তাঁকে যুগপৎ মুগ্ধ, আকুল ও সন্ত্রস্ত করে তুলল। ‘সকলকে গ্রাস করছ। তুমি কে? আমি জানি না, আমাকে জানাও।’ উত্তরে কৃষ্ণ বললেন, ‘আমি ত্রিলোকের বিনাশের জন্য আবির্ভূত হয়েছি, আমি মহাকাল। তুমি না থাকলেও এঁরা কেউ বাঁচবেন না। এই যে যোদ্ধারা সৈন্যদলের সম্মুখে অবস্থিত, আমি এদের পূর্বেই হত্যা করে রেখেছি, তুমি শুধু নিমিত্ত হয়ে বাকি কাজটুকু করো। এর জন্য অযথা ব্যথিত হয়ো না। যুদ্ধ করে জয়ী হও।’
অর্জুন কৃষ্ণের স্তব করে বলেন, ‘তোমার মহত্ত্ব কে না স্বীকার করবে? তুমি ব্রহ্মারও অধিক, সর্বতো ভাবে বন্দনীয় তুমি। কিন্তু এতকাল তোমাকে স্বরূপে জানতাম না বলে তোমাকে সখা বলে যে সম্বোধন করেছি সেই অজ্ঞানকৃত অপরাধ তুমি মার্জনা করো। আহার, বিহার, শয়নে তোমার সঙ্গে বন্ধু ভাবে যে আচরণ করেছি তা ক্ষমা কোরো। তুমি সর্বলোকের পিতৃতুল্য জেনে আজ তোমাকে প্রণাম করি। পিতা যেমন পুত্রের, সখা সখার, প্রিয়া প্রিয়ের আচরণ সহ্য করে তেমনই তুমিও আমার ধৃষ্টতা ক্ষমা কোরো। চক্রগদাধর কিরীপ-শীর্ষ কৃষ্ণকে আমি জানি। সেইরূপেই তুমি প্রকাশিত হও, আমার সন্ত্রাস কেটে যাক।’
কৃষ্ণ বললেন, ‘বেদধ্যায়ন, যজ্ঞসম্পাদন, অন্যান্য ধর্মক্রিয়া, উগ্র তপশ্চর্যার দ্বারা আমার এই রূপ তুমি ছাড়া অন্য কারও পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। তুমি খেদ, বিমূঢ়তা ত্যাগ করো। অর্জুনের স্বস্তি ‘তোমাকে পূর্বপরিচিত রূপে আবার দেখতে পেয়ে আশ্বস্ত বোধ করছি। কৃষ্ণের উত্তর হল, ‘যেরূপ তুমি দেখতে পেলে, দেবতারাও এইরূপ দেখবার জন্য ব্যাকুল। অবশ্য তোমার ভক্তির জন্যেই তুমি আমার এ রূপ দেখতে পেলে। যারা মহৎ কর্ম করে, সেই সব ভক্তরা আমাকে এ রূপে দেখতে পায় যেমন তুমি পেলে।’
এক অর্থে সত্যকার গীতাটির এখানেই শেষ, কারণ, গীতার শুরু হয়েছিল কৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন, অর্জুন সে চেষ্টা নানা ভাবে প্রতিহত করছিলেন। বহু যুক্তি, অযুক্তি, কুযুক্তি নিষ্ফল হলে পর জাদুবিদ্যার দ্বারা কৃষ্ণ তাঁর এক অলৌকিক মূর্তি দেখিয়ে অর্জুনের বশ্যতা ক্রয় করলেন। কৃষ্ণের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল; অর্জুন যুদ্ধ করতে রাজি হলেন। এর পরেও আর সাতটি অধ্যায় আছে গীতায়। বহু পণ্ডিতের মতে সেগুলি প্রক্ষিপ্ত। কারণ, গীতার মুখ্য উদ্দেশ্য একাদশেই সিদ্ধ হয়।
দ্বাদশ অধ্যায়ে ভক্তিযোগ। একাদশে কৃষ্ণকে ব্রহ্মরূপে বিস্ময়কর রূপে দেখে অর্জুনের মনে তাঁর প্রতি ভক্তির উদ্রেক। কৃষ্ণই বক্তা: সে সর্বতো ভাবে আমার ধ্যান উপাসনা করে সেই আমাকে ভক্তি করে। এর পরে ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাজনযোগ। শরীর হল ক্ষেত্র, একে যে স্বরূপে বোঝে সে ক্ষেত্রজ্ঞ। এ সমস্তের প্রভু ও ভর্তা মহেশ্বর বলেন, ক্ষেত্রজ্ঞরা মৃত্যুকে অতিক্রম করে। চতুর্দশ অধ্যায়ে গুণত্রয় বিভাগযোগ— অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃকে স্বরূপে বোঝানোই এর উদ্দেশ্য। পঞ্চদশ অধ্যায়ে পুরুষোত্তমযোগ। উপনিষদের সেই ঊর্ধ্বমূল নিম্নশাখ বনস্পতিটির কথা, যা স্বরূপ ধারণ করলে মানুষ পূর্বজন্ম থেকে মুক্তি পায়। চন্দ্রের আলোকে সে দীপ্তি পায় না। যে ধামে গিয়ে কেউ ফেরে না, সেই আমার পরম ধাম। ষোড়শ অধ্যায়ে দেবাসুর সম্পদ বিভাগ যোগ, অর্থাৎ দেবতাদের সম্পদ ও অসুরদের সম্পদ বিভাজন। যোগী দেবতাদের সম্পদ হল মুক্তি, অসুরদের সম্পদ বন্ধন। ভোগবিলাসের কামনায় প্রণোদিত জীবন অসুরদের পরিচালনা করে, আর দেবতাদের প্রেরণা দেয় যজ্ঞানুষ্ঠান, দান ও আনন্দ। সপ্তদশ অধ্যায়— শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ। দেবতাদের যাজন করে দেবতারা, যক্ষরক্ষরা রাজসভাতে থাকে, যক্ষরক্ষের আরাধনা করে আর ভূতপ্রেতের ভজনা করে তামসিক মানুষ। শেষ অষ্টাদশ অধ্যায় হল মোক্ষযোগ
সাংখ্য সর্বকর্ম সিদ্ধির জন্য পাঁচটি কারণ নির্ণয় করেছে। সেগুলি হল: দেহ, অহংকার, ইন্দ্রিয়সমূহ, প্রাণ ও মানুষের নানাবিধ কর্ম। এগুলিকে শুদ্ধ করলে মানুষ মোক্ষের পথে অগ্রসর হয়। আবার পুরনো কথায় ফিরে এসে কৃষ্ণ বলেন, কিছু গুণচ্যুত হলেও স্বধর্মই শ্রেয়, পরধর্ম ভয়াবহ। এতক্ষণ গীতা পড়ে বেশ বোঝা যায় অর্জুনের স্বধর্ম হচ্ছে যুদ্ধ আর পরধর্ম তাঁর মানবিক মৈত্রী, করুণা ইত্যাদি। বিশেষত তখন সমাজে বৌদ্ধ, জৈন, আজীবিক ও তদানুরূপ বার্হস্পত্য এগুলি এবং পরধর্ম এত আতঙ্ক সেগুলি বিদেশীয়, ধর্মবিশ্বাস, বোধ আচরণ তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
তবু মানুষ জানে যে, তার কর্ম থেকে কিছু ফল তো উদ্গত হয়, তার পরিণতি কোথায়? চাষির চাষের ফসল, মজুরের কারখানার উৎপাদন এত ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়ে ওঠে, কে তা ভোগ করে? কর্ম যে করে না এমন উচ্চবিত্ত মানুষই শ্রমিকের শ্রমফল ভোগ করে। এর থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, সেই দ্বিতীয় শতকেই সমাজে কর্মকারী ও পরকর্মের ফলভোগী দু’টি সম্প্রদায় রয়েছে। এবং তখনকার ধর্মগ্রন্থ গীতা স্পষ্ট করে বলছে, যারা কর্ম করবে, ফল তাদের জন্য নয়। যে সৌভাগ্যবান শ্রেণি ফলভোগ করবে, তারা নিষ্কর্মা। গীতা এই শ্রেণিবিভাজন শুধু উচ্চারণ করে বলেনি, সমর্থন করেছে স্পষ্ট ভাষায়। শ্রম যে করে সে ভুলেও (‘কদাচন’) ফলের আশা করবে না। ফল ভোগ করবে তারাই ফলে যাদের বিন্দুমাত্র সত্য অধিকার নেই, অর্থাৎ সমাজের অভিজাত শ্রেণি। ব্যবস্থাটা নিশ্চয়ই গীতার আগে থেকেই চলে আসছে, কিন্তু কৃষ্ণের মুখে গীতার এই উচ্চারণ সমস্ত ভাবীকালের জন্য এই অমানবিক অনৈতিক তত্ত্বকে সমর্থন জোগাল। এবং এ ব্যবস্থা আজও চলছে।
কর্ম বলতে গীতায় শুধু উৎপাদনমুখী কর্মই বোঝায় না, যজ্ঞকেও বোঝায়। এর পূর্বে যজ্ঞই ছিল ধর্মক্রিয়া। যজ্ঞও কর্ম, কিন্তু সেই কর্ম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত এবং এই বোধ সমাজে ততদিনই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত ছিল, যতদিন না মোক্ষের ধারণা প্রাধান্য লাভ করল। তখন আনুপাতিক মূল্যায়নে ধর্ম, অর্থের পরে কাম এবং সর্বোচ্চ স্থান পেল মোক্ষ। নির্গুণ ব্রহ্ম যখন শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হলেন তখনই— ব্রহ্মে লীন হওয়াই মোক্ষ বলে— মোক্ষই সর্বশ্রেষ্ঠ কাম্য ও সাধনা বলে বিবেচিত হল। এবং এই বোধ চলে এসেছে দীর্ঘকাল ধরে। এখনও এটিই সর্বপ্রধান। গীতা এ সম্বন্ধে দু’রকম কথা বলে: এক, ‘সর্বগত ব্রহ্মনিত্য যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত।’ (৩:৩২) আর অন্যত্র বলে সমুদ্রে নদীর জলপ্রবাহের যা সার্থকতা, কৃষ্ণের আগমনের পরে সমাজে যজ্ঞের ততটুকুই সার্থকতা। অর্থাৎ যজ্ঞ তার পূর্ব প্রতিষ্ঠা হারিয়েছে। এটা সম্ভবত বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে ঘটেছে। বৌদ্ধধর্মের প্রভাব গীতার শুরুতেই দেখি, যখন অর্জুন তাঁর বর্ণধর্ম পালন করতে অস্বীকার করছেন, কারণ তার মধ্যে হিংসা আছে। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে অহিংসা সমাজে একটি প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধে পরিণত হয়েছিল। এই প্রভাবেই যজ্ঞ তখনও সমাজে ইতস্তত চললেও মূল ধর্মবোধে অহিংসা প্রতিষ্ঠিত। তাই যজ্ঞ কর্ম, কিন্তু কৃষ্ণ সমর্থিত ধর্ম নয়।
যারা এ জীবনে শুধু কাজ করে যাবে, ফলভোগ করতে পারবে না, তাদের জন্য শাস্ত্র এবং গীতা একটা বড় রকমের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে, তা হল জন্মান্তর, এ কথাও আগেও বলেছি। রামায়ণ, মহাভারত সব গ্রন্থই এ ব্যবস্থা করেছে। গীতায় কৃষ্ণ প্রথম দিকেই অর্জুনকে বলেন, যে জন্মেছে সে অবশ্যই মরবে, আর যে মরেছে সে অবশ্যই জন্মাবে। (২:২৭) অতএব যে এ জন্মে সুখসমৃদ্ধি পেল না, পরজন্মে সে এ সব পেতে পারে। জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস বহু আগে থেকেই সমাজে রয়েছে; জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম দু’টিই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। ব্রাহ্মণ্যধর্মও এ বিশ্বাস গ্রহণ করেছিল। ফলে শূদ্র ও নারীকে সর্বতো ভাবে বঞ্চিত করেও তাদের আশ্বাস দেওয়া যেত: এ জন্মে পেলে না বটে কিন্তু পরজন্মে ঠিক পাবে, যদি উপযুক্ত ধর্মনির্দিষ্ট কর্ম করো। যুক্তিতে এ আশ্বাসের কোনও ভিত্তি ছিল না, কিন্তু এ আশ্বাস এমন লোভনীয় যে, মানুষ তা সহজেই গ্রহণ করত। করত অনন্যোপায় হয়েও বটে, না করলে তো তার ইহজন্ম পরজন্ম দুই-ই ফাঁকা হয়ে যাবে। তার চেয়ে এ জন্মে পেলাম না পরজন্মে পাব, এমন একটা আশ্বাস থাকলে, বর্তমানের দুঃখটা কতকটা সহনীয় হয়। জন্মান্তরবাদের পক্ষে প্রমাণ যুক্তি এ সব কিছুই ছিল না, কিন্তু এর কোনও বিকল্পও তো ছিল না কোথাও। তাই জন্মান্তরে বিশ্বাস দু’-এক স্থানে অন্য ভাবে বলা আছে— ‘ক্ষয়’ হচ্ছে সংসারে যা কিছু ক্ষয়শীল, অনিত্য তাই; এ হল আধিভৌতিক। যা কিছু নিত্য তা আধিদৈবিক, দেবতাদেরও ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ব্রহ্ম। আর যা কিছু যজ্ঞ ছাড়িয়ে অধিযজ্ঞ, তা হল অবতার। গীতায় কৃষ্ণ তাই অধিযজ্ঞ। গীতার একটি প্রধান প্রতিপাদ্য হল কৃষ্ণের অবতারত্ব।
যুগটা হল বেদোত্তর, ততদিনে ইতস্তত যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হলেও, উপাসনার প্রধান স্রোত না নয়। মনে রাখতে হবে বেদের যুগ থেকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-দ্বিতীয় শতকে, অর্থাৎ, গীতার রচনাকালের পূর্বে জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম প্রথমে প্রবল এবং পরে অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ হলেও সমাজে স্পষ্ট ভাবে বিদ্যমান, যদিও তখন মূল ব্রাহ্মণ্যসমাজে যজ্ঞক্রিয়াই প্রধান ধর্মাচরণ। গীতার প্রয়োজন তাকে অতিক্রম করে কৃষ্ণকেই শুধু প্রধান নয়, একমাত্র দেবতারূপে প্রতিষ্ঠিত করা। এর সাধারণ পঞ্চ বৃষ্ণিবীর এক একজনে সাময়িক ভাবে, কিছুটা আঞ্চলিক ভাবে, কতকটা ব্যাপক ভাবেই, কোথাও কোথাও পূজা পেয়েছেন। এই পরিবেশে বহু উপাস্যের ভিড়ে একটা অস্থিরতা সমাজে ঘূর্ণিত হচ্ছিল। সেটাকে প্রশমিত করবার জন্য প্রয়োজন ছিল উপাসনার একটিমাত্র কেন্দ্রবিন্দুকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যাতে, জনগণের যে বহুধা প্রসারিত ভক্তি এবং উপাসনার প্রবৃত্তি তা একটি স্থিরকেন্দ্র পায়। কৃষ্ণ সেই অধিযজ্ঞ পুরুষোত্তম। এই কৃষ্ণ গীতার কেন্দ্রবিন্দু। এই কথা সকলের হৃদয়স্থ করার জন্য নানা ভাবে কৃষ্ণকে প্রধানরূপে বর্ণনা করা হয়েছে, তার কিছু যদিবা মননগ্রাহ্য, আর অনেক কিছুই স্পষ্টতই ওই উদ্দেশ্যে অতিশয়োক্তি। যেমন কৃষ্ণ বলেন, বহু জন্ম আমি পার করে এসেছি, অর্জুন।
কেমন সে বহুজন্ম? যে কোনও ধর্ম হোতা কিছুকালের জন্যও যদি সমাজে বহুজনের ভক্তি পেয়ে থাকেন তো তাঁরাই তখনকার মতো সমাজের বা সমাজের ছোট বা বড় অংশের সার্বভৌম নেতারূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। কৃষ্ণ চাইলেন সারা উত্তর ভারতের ভক্তির একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু হবেন, এবং গীতায় সে চেষ্টা স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ‘মে বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি’– আমি বহু আগে থেকেই তোমাদের মধ্যে প্রধান হিসেবে জন্মে জন্মে প্রতিষ্ঠিত ছিলাম। অর্থাৎ পূর্বেও আমি অবতাররূপে ছিলাম। আর এখন? এখন আমি আবার জন্ম নিয়েছি, সর্বকালের একমাত্র অবতার, পুরষোত্তম। সমাজের সংহতির জন্যে এর প্রয়োজন ছিল— ধর্মের একটি ছত্রের নীচে সমস্ত সমাজ একীভূত হবে ধর্মেরই পরিসরে। মহম্মদ যা করেছিলেন: আরবের বহুধাবিভক্ত বহু গোষ্ঠীকে, বহু দেবদেবীর উপাসক আরব সমাজকে শ্রদ্ধেয় এক অদৃশ্য আল্লাহর ছত্রছায়ায় এমন একটি সংহতি দিলেন যার ফলে পূর্বের বহুধাবিভক্ত মুসলিম সমাজ আজও পৃথিবীর সব দেশে মিলে একটি বৃহৎ সংহতি পেয়েছে। এ কাজই গীতার মাধ্যমে কৃষ্ণ সাধন করলেন।
কৃষ্ণ যখন বলেন, আমি বহু পূর্ব জন্ম পেরিয়ে এসেছি, তখন জন্মান্তরবাদ দেবতাদের পক্ষেও প্রযুক্ত হয়। এতে মানুষের জন্মান্তর একটা দেবতাতুল্য ভাগ্যের সমর্থন পায়। শিব বা ব্রহ্মার জন্মান্তরের কথা শুনি না, একমাত্র বিষ্ণু নারায়ণই নানা নামে নানা যুগে অবতীর্ণ হয়েছেন এমন কথা শাস্ত্র বলে। তাই কৃষ্ণের জন্মান্তরের দ্বারাই মানুষের জন্মান্তর সমর্থিত, প্রত্যয়িত হয়। এবং তৎকালীন সমাজে, এর খুব প্রয়োজন ছিল যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এক সম্প্রদায়কে উচ্চ ত্রিবর্ণের প্রতি নিষ্প্রতিবাদ দাস্য মেনে নিতে বাধ্য করেছে। আর শূদ্র থেকে বৈশ্য, বৈশ্য থেকে ক্ষত্রিয় এবং সর্বশেষে ব্রাহ্মণ জন্ম পাবার একটা অঙ্গীকারও দেওয়া হয়েছে। পরে শিবলোক, ব্রহ্মলোক, গোলোক, বৈকুণ্ঠ, অক্ষয় স্বর্গবাস, ইত্যাদি সম্ভাবনা সাজিয়ে রেখেছে। অভুক্ত, অত্যাচারিত, চিরদরিদ্র, সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের কাছে জন্মান্তর একটি দুর্দমনীয় প্রলোভন
আর নারী, সমাজের অর্ধেক, যাদের এ জন্মের ঊনমানবের মতো হীন অবস্থান, তারাও কৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমতী হয়ে তাঁর আরাধনা করলে মুক্তি পাবে। পুরুষের পদসেবা যার সারাজীবনের কৃত্য তারাও যে জন্মান্তরে উচ্চ অবস্থানে বা পুরুষ হয়ে জন্মাতে পারে এমন কথা মহাকাব্যপুরাণে এবং বৌদ্ধশাস্ত্রেও উচ্চারিত হয়েছে। ফলে সমাজের যে সব ঘৃণ্য পীড়াদায়ক বৈষম্য নিত্যদিনের অপমান ও অত্যাচারকে কায়েম করে রেখেছিল, কৃষ্ণ তার বিকল্প নানা ভাবে একটি লোভনীয় মরীচিকা— পরজন্মে উন্নততর অবস্থান— এমন দৃঢ় ভাবে ঘোষণা করলেন যাকে অবিশ্বাস করা কঠিন। ব্রাহ্মণ্য মতবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত সমাজের পক্ষে এ একটি অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার ছিল। জন্মান্তরে এ বিশ্বাস না করলে তারা সমস্ত ভবিষ্যৎটাকেই অভিশপ্ত দুঃখময় বলে মানতে বাধ্য হত। তাই এ কল্পকথাই একমাত্র মরীচিকা ছিল যা তাদের অনুপ্রাণিত করত। দেখা যাচ্ছে ধর্মসাধনার ফল কিন্তু ধর্মীয় বা নৈতিক কিছু নয়, এই জগতেরই ভোগ্য ও কাম্যবস্তুই এ জাতীয় ধর্মসাধনার ফল।
পরজন্মে সুখ ছাড়াও অন্য প্রতিশ্রুতিও আছে: এ জন্মে নিম্নবর্গে বা নারী হয়ে জন্মেছে বলে যে মানুষকে হীনম্মন্যতা, জ্বালাযন্ত্রণা অপমান অত্যাচার অবিচার সহ্য করতে হয়েছে, তার কাছে প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে, এ জন্মে উচ্চ তিনবর্ণের আপ্রাণ সেবা করলে পরজন্ম যোগীদের বংশে, কিংবা শিক্ষিত ধনবানদের গৃহে জন্ম হবে। (৬:৪১-৪২) তখন তো সুখ অনিবার্য।
আর নারী। আগেই আমরা অর্জুনের কাছে শুনেছি কুলক্ষয়ের দোষে কী হয়। কুলক্ষয়ে সনাতন কুলধর্ম নষ্ট হয়। ধর্ম নষ্ট হলে সমস্ত কুল অধর্মের দ্বারা অভিভূত হয়। অধর্মে-অভিভূত সমাজে কুলস্ত্রী দূষিত হয়; আর নারী দূষিত হলে বর্ণসঙ্কর হয়। বর্ণসঙ্করের ফলে নরক, সে যে কুলকে বিনষ্ট করে এবং কুলের সকলেরই ওই দশা হয়। এবং পরলোকগত পিতৃকূল তর্পণের জল ও পিণ্ড থেকে বঞ্চিত হন। (১:৩৭-৪১) এখানে লক্ষ্যণীয় যে, এই সব অনর্থের মূলে ভ্রষ্টা নারীরা। পুরুষ যেন ভ্রষ্টাচারী না হয়। এটি একটি অযুক্তি, কিন্তু বেদের আমল থেকেই নারী নরকের দ্বার, এ কথাটা সমাজে চলে আসছে। গীতা সে কথা উচ্চারণ করছে দু’ জায়গায়।
দু’টি কথা মনে রাখতে হবে আগেই বলেছি, ওই যৌন দূষণ একা নারীর কাজ নয়, এতে পুরুষেরও সমান ভূমিকা থাকে। অর্জুনের মতে (যা কৃষ্ণেরও) নারীই এই দূষণের সক্রিয় কর্ত্রী ও একমাত্র আধারও বটে। দ্বিতীয়ত, নানা বিপর্যয়ে আক্রান্ত সমাজে বর্ণসঙ্করই কেন নরকের পথ এবং নরকের হেতু বলে বিবেচিত হবে? কারণ, বর্ণগুলির যথাযথ অবস্থান এ সমাজে একান্তই রক্ষণীয়, তাতে রাজার রাজত্ব করা সহজ, সমাজে একটা সংহতি থাকে, অন্তত আপাতদৃষ্টিতে। টি রুকমণি বলেন, ‘গীতার স্পষ্ট উদ্দেশ্য হল, যত বিচ্ছিন্ন ধর্মীয় ও দার্শনিক দলমত প্রচলিত ছিল সেগুলিকে একটি ছত্রের নীচে আনা… এই অভিন্ন মতবাদের মধ্যে ধর্ম এবং মোক্ষ দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে— এটা গীতায় স্পষ্ট।’[১৮]
[১৮. ‘T S Rukmani, Journal of studies on Ancient India, Vol 1 (1998) No. 1, p. 23]
পরজন্ম যুক্তিহীন, অপ্রমাণিত, কাল্পনিক। কিন্তু কে বলে কল্পনা চালিকা শক্তি হতে পারে না? এই সুনিশ্চিত মিথ্যাটি খুব কার্যকর ছিল। এখনও রয়েছে। এটি গীতার অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর এবং বারেবারে নানা ভাবে উচ্চারিত হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। গীতার প্রবক্তা যে সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছেন, সেই কৃষ্ণকেন্দ্রিক সমাজে নারীর অবনমন, দরিদ্র কৃষক শ্রমিকের অবদমন একান্ত প্রয়োজন। এবং এ সবেরই ভিত্তি মজবুত করবে জন্মান্তরবাদ। পুরাণে অসংখ্য কাহিনিতে এর সমর্থন আছে।
কোনও বর্ণে বেচাল ঘটলে রাজা শাস্তি দেন। এখন এ সমাজে যখন বর্ণসঙ্কর ঘটে, তখন তা নিদারুণ বিপর্যয় বলেই গণ্য হয়। মূল দোষটা নারীর হলে পুরুষ নির্দোষ, নির্মল বলে প্রতিপন্ন হয়। বাস্তবে কিন্তু তা সত্য নয়। নারী অপরাধী, অশুচি এবং প্রকারান্তরে নরকের দ্বার বলে গণিত হয়। এ সমাজের ওই ভ্রষ্টা (গীতায় ‘দুষ্টা’) বা অশুচি নারীকেও কৃষ্ণ তরিয়ে দেবেন এমন আশ্বাস দেন। বৈশ্য, শূদ্র এবং নারী— সর্বতো ভাবে পাপিষ্ঠার অগ্রগণ্যা— তাকেও পাপ থেকে বা তার শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেন। কৃষ্ণের প্রতিষ্ঠিত মহত্ত্ব এ তত্ত্বে তারও মহিমা লাভ করে।
সমাজে অত্যাচারিত শ্রেণি ও ব্যক্তি কিন্তু ভিতরে ভিতরে অসন্তোষ ও বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করত, এখনও করে। সবাক হয়ে, সমবেত ভাবে সেই বিরুদ্ধ মনোভাবকে বিপ্লবের আকৃতি দেওয়া সর্বত্র হয়নি। অধিকাংশস্থলেই প্রতিবাদী মনোভাব চাপা থাকে। এমনকী ওপরতলার মানুষ সব সময়ে টেরও পায় না যে, শক্তির অভিনয়ে নীচে জ্বলদগ্নি জমছে। উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে তা সার্থক বিপ্লবে ফেটে পড়ছে না।
মহাভারতে যে ভৃগুবংশীয় পণ্ডিতদের রচিত ও সংযোজন প্রক্ষেপ আছে তার মধ্যে নারীর অবনমন একটি অত্যাবশ্যক করণীয় ছিল। তার সঙ্গে দীর্ঘকাল সমাজের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব— শূদ্রের অবনমনকে মেনে নিয়ে তাকে শুধু কাজ করার অধিকার দেওয়া হল কিন্তু কর্মফলে— নৈব নৈব চ। ফলভোগ করার গুরু দায়িত্বটা নিতে রাজি ছিল সমাজের উচ্চবর্গীয় শ্রেণি। তারা যেমন কর্মে বিমুখ, তেমনই কর্মফলের নিঃসপত্ন অধিকারী। এ সমাজ বর্ণগুলির যথাযথ অবস্থান ও ক্রিয়ায় তীক্ষ্ণ ভাবে রক্ষণশীল এবং অতন্দ্র প্রহরী। বলা বাহুল্য, যে কৃষ্ণের এত দয়া যে, পত্রপুষ্প ফল জলের অর্ঘ্যেই তিনি প্রীত, তিনি স্বভাবত অশুচি নারী ও বর্ণাধম শূদ্রেরও গতি করে দিতে সম্মত। এতে সমাজ নিয়মাশ্রিত পরিসরে সুষ্ঠ ভাবে চলবে।
এ সব শ্লোকে এমন এক উদারতার কথা শুনি যাতে, হঠাৎ বিস্ময় জাগে। যে যেমন করে আরাধনা করুক, শুধু ফুল, ফল, পাতা, জল এই দিয়েই কৃষ্ণের পূজা করা যাবে। আর এ কথা স্বয়ং কৃষ্ণ বলছেন? এর একটা কারণ তখনও কৃষ্ণপূজার কোনও পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত ছিল না, কাজেই এই উদারতার কোনও বিকল্প ছিল না। তবু কৃষ্ণপূজা বলে কোনও পূজা প্রচলিত হল না। হল কৃষ্ণভক্তি— এবং সেটা অবতারবাদের মধ্যে দিয়ে নানা রূপে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ল। গীতার একটা বড় উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল। তাঁর ওপরে আর কিছু নেই, কেউ নেই। সুতোয় যেমন মণিরত্ন গাঁথা থাকে, তেমনই বিশ্ব কৃষ্ণে ওতপ্রোত ভাবে গ্রথিত। (৭:৭) ‘বাসুদেবই এই সমস্ত’, এ কথা যিনি বিশ্বাস করেন, ‘সেই মহাত্মা দুর্লভ। বহু জন্মের শেষে জ্ঞানবান আমাকে [কৃষ্ণকে] পায়।’ (৭:১৯)
কৃষ্ণের পূজা আজও সমাজে পূজা হিসাবে চলিত নয়, শুধু ভাগবতে উল্লিখিত অনুষ্ঠান বিশেষ বিশেষ তিথিতে কৃষ্ণকে নিয়ে পূজা, উপাসনা ও উৎসব হয়, যেমন জন্মাষ্টমী, দোল, রাস ইত্যাদি।
কৃষ্ণ আরাধনা সম্বন্ধে কৃষ্ণ নিজে বলছেন, এর পদ্ধতি হল, কৃষ্ণকে প্রণাম, সর্ব বিষয়ে কৌতূহল, পরিপ্রশ্ন এবং সেবা। (৪:৩৪) এর মধ্যে ওই পরিপ্রশ্ন অংশটি নতুন এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হল, কৃষ্ণকে সর্বতো ভাবে নানা দিক থেকে জানার চেষ্টা, যেটি গীতার মর্মবাণী। এখানে জ্ঞান, তপস্যা, যোগ, দান, ইন্দ্রিয় সংযম, ভক্তি, যজ্ঞানুষ্ঠান— সবগুলিকেই কৃষ্ণপূজার আবশ্যিক অঙ্গ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটা তাৎপর্য হল, পূর্বে প্রচলিত যতগুলি কর্ম ধর্মাচরণের অঙ্গ ছিল সব ক’টিকেই স্বীকৃতি দেওয়া; এবং সেই সঙ্গে বলা যে, এগুলি একক ভাবেও অসম্পূর্ণ, যৌথ ভাবেও তাই। এগুলিকে স্থান দিয়েও বলা হল যে, কৃষ্ণ যেহেতু ব্রহ্মস্বরূপ, তাই কৃষ্ণে একান্ত আত্মসমর্পণ হল মুক্তিলাভের নিশ্চিত উপায়।