2 of 3

গার্হস্থ্য

গার্হস্থ্য

লেখালেখি নিয়ে আমার চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তারপরও আমি নিজে বাজার করি, রান্না করি। অতিথি এলে বারো পদের খাবার একা আমিই রাঁধি। কাজে সাহায্য করার যে মেয়েটি আসে চার ঘণ্টার জন্য, সে শাক সবজি পেঁয়াজ রসুন কেটে দিলো,ব্যস এটুকুই। মেয়েটি মূলত যে কাজগুলো করে, তা হলো, বাসন মাজা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঘর মোছা। মেয়েটি না এলে আমি ওসব নিজেই করি। তাছাড়া কাপড় কাঁচার মেশিনটা আমিই চালাই। গাছে আমিই জল দিই। আমি বলতে চাইছি, আমি পারি ঘরের কাজকম্ম করতে। কোনও কাজে আমার অনীহা নেই। আমি নিজেই তো টয়লেট পরিষ্কার করি। কারণ টয়লেট পরিষ্কার করতে সাহায্যকারীরা রাজি নয়। যেটা বলার জন্য এত সব বলছি, সেটা হলো, ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুরা যারা আমার কাছে আসে, থাকে, তাদের দেখেছি, তারা ঘরের কোনও কাজে হাত দিতে চায় না, তারা কিছু করতে অভ্যস্ত নয়। জুসটাও ঢেলে খেতে জানে না। আমি যখন তাদের জন্য রান্না করি, তারা ড্রইংরুমে বসে থাকে। আমি যখন বাসন মাজি, ঘর ঝাড়ু দিই, তারা দুরে বসে বসে দেখে। পুরোই হ্যাঁন্ডিক্যাড। তাদের কাজ হল, বসে থাকা, আর গল্প করা অথবা অনর্থক শুয়ে থাকা। তারা ঘরের কাজগুলো আমার সঙ্গে ভাগ করে করে না, তার কারণ কিন্তু এই নয় যে তারা আমাকে ভালোবাসে না, তারা করে না কারণ কিছু করতে তারা জানে না, করতে শেখেনি, করে অভ্যেস নেই। শেখার এবং করার কোনও ইচ্ছে তাদের নেই। যদি কিছু করতে বলি, যদি বলি তোমার বিছানার চাদরটা চেঞ্জ করো, বা বালিশে নতুন ওয়াড় লাগাও, তাদের মুখ ভার হয়ে যায়, ঘরের কোনও কাজ করাকে তারা ইনসাল্ট বলে মনে করে। যদি ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষই আমার বাড়িতে থাকতো,যারা ইউরোপ বা আমেরিকায় কয়েক বছর হলেও থেকেছে, তাহলে কিন্তু তারা আমার মতো সবকিছুই করতে জানতো। আমি একা ঘরের সব কাজ করছি দেখলে তারাও কিছু কাজ ভাগ করে নিত। নিতে লজ্জা করতো না। অথবা বাসনগুলো মেজে দাও বললে তারা গাল ফুলোতো না।

এই উপমহাদেশের উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েগুলো পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় কয়েক বছর করে থেকে এলে ভালো মানুষ হতে পারতো। কাজ ভাগ করে করা, কোনও কাজকে ঘৃণা না করা, মানুষকে সম্মান করা– এসব খুব জরুরি। মুশকিল হলো, জরুরি ব্যাপারগুলোকে মোটেও তারা জরুরি বলে মনে করে না। নিজেদের দেশে তারা গরিব লোক সবসময়ই পেয়ে যাবে, যারা সংসারের সব কাজ করে দেবে। সুতরাং তাদের খামোকা বসে থাকা আর শুয়ে থাকাটা তারা যতদিন বেঁচে থাকে, চালিয়ে নিতে পারবে। আমি বলছি না তারা সব আলসে লোক। তারা কিন্তু বাইরে কাজ করছে, চাকরি বাকরি করছে। কিন্তু ঘরের কাজগুলো তাদের কাজ নয়, ঘরের কাজগুলো চাকর বাকরের কাজ, এটা তাদের মস্তিষ্কে জন্মের পরই ঢুকে বসে আছে। প্রয়োজনে এই কাজগুলো যে নিজেও করা যায়, এতে যে কোনও লজ্জা নেই– এ সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *