জনমিয়া এ সংসারে কিছুই শিখি নি আর , শুধু গাই গান । স্নেহময়ী মার কাছে শৈশবে শিখিয়াছিনু । দু - একটি তান । শুধু জানি তাই , দিবানিশি তাই শুধু গাই । শতছিদ্রময় এই হৃদয় - বাঁশিটি লয়ে । বাজাই সতত -- দূঃখের কঠোর স্বর রাগিনী হইয়া যায় , মৃদুূল নিশ্বাসে পরিণত । আঁধার জলদ যেন ইন্দ্রধনু হয়ে যায় । ভুলে যাই সকল যাতনা । ভালো যদি না লাগে সে গান ভালো সখা , তাও গাহিব না । এমন পণ্ডিত কত রয়েছেন শত শত এ সংসারতলে , আকাশের দৈত্যবালা উন্মাদিনী চপলারে বেঁধে রাখে দাসত্বের লোহার শিকলে । আকাশ ধরিয়া হাতে নক্ষত্র - অক্ষর দেখি গ্রন্থ পাঠ করিছেন তাঁরা , জ্ঞা নের বন্ধন যত ছিন্ন করে দিতেছেন ভাঙি ফেলি অতীতের কারা । আমি তার কিছুই করি না , আমি তার কিছুই জানি না । এমন মহান্ এ সংসারে জ্ঞা নরত্নরাশির মাঝারে আমি দীন শুধু গান গাই , তোমাদের মুখপানে চাই । ভালো যদি না লাগে সে গান ভালো সখা , তাও গাহিব না । বড়ো ভয় হয় , পাছে কেহই না দেখে তারে যে জন কিছুই শেখে নাই । ওগো সখা , ভয়ে ভয়ে তাই যাহা জানি সেই গান গাই , তোমাদের মুখপানে চাই । শ্রান্ত দেহ হীনবল , নয়নে পড়িছে জল , রক্ত ঝরে চরণে আমার , নিশ্বাস বহিছে বেগে , হৃদয় - বাঁশিটি মম বাজে না বাজে না বুঝি আর । দিন গেল , সন্ধ্যা গেল , কেহ দেখিলে না চেয়ে । যত গান গাই । বুঝি কারো অবসর নাই । বুঝি কারো ভালো নাহি লাগে -- ভালো সখা , আর গাহিব না ।