গানের মর্মস্থলে ঢুকে পড়ত – মৃণাল চক্রবর্তী
সেটা বোধহয় ১৯৫৫-এর শেষদিক। আরও অনেকের মতো সুধীনের সঙ্গেও প্রথম আলাপ হয়েছিল গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সাল রুমে। আমি তখন একটু পরিচিত শিল্পী, দু-তিনটে রেকর্ড বেরিয়ে গেছে। রীতিমতো পয়সা নিয়ে জলসাতে গান করি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্টার তো হইনি, তাই প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণ কলকাতার বকুলবাগান রোড থেকে সেই থ্রি এ নলিনী সরকার স্ট্রিটে যেতাম। ঘটনাটা ছিল প্রায় মন্দিরে গিয়ে হাজির হওয়ার মতো। এইচ এম ভি-র বাড়িটার পাশেই ছিল ‘কলম্বিয়া’র বাড়ি। সেই আসলে গ্রামোফোন কোম্পানির বাড়িটাকে আমাদের মতো তরুণ শিল্পীদের দেবতাদের মন্দির ভাবার যথেষ্ট কারণও ছিল। সেই সময়ের সেরা শিল্পী থেকে শুরু করে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকরা সেখানে নিয়মিত যেতেন। আমি ওখানে প্রথম গিয়েছিলাম ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের হাত ধরে। সে অন্য এক কাহিনী। সুধীনের সঙ্গে যখন প্রথম পরিচয় হয়েছিল তখন সে আমারই মতো তরুণ। শিল্পী নয়, সুরকার এবং গীতিকার। বয়সে আমার চেয়ে বোধহয় এক-দেড় বছরের বড়ই হবে। তবে তাতে সম্পর্ক তৈরিতে কোনও বাধা হয়নি, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ‘আপনি’ থেকে ‘তুই’-এ পৌঁছেছিলাম।
সুধীনের বাড়িতে পৌঁছে যাওয়াও অনিবার্য ছিল। কারণ তার অসাধারণ গুণপনা। হারমোনিয়াম থেকে শুরু করে সেতার পর্যন্ত— সবই আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে বাজাত সুধীন। ওর ছোট ভাই পরিমলও সুধীনের মতো অর্গান, পিয়ানো স্প্যানিশ গিটার বাজাত একেবারে পেশাদারি দক্ষতার সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে সুধীনের সুরে যখন রেকর্ড করেছি, তার প্রত্যেকটিতেই পরিমল বাজিয়েছিল। এইচ এম ভি-র সেই ‘দেবতার মন্দির’-এ প্রায় প্রতিদিনই যাওয়ার ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ উপকৃত হয়েছিলাম। বড় বড় সঙ্গীত-ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, তাঁদের গানের কাজকর্ম প্রত্যক্ষভাবে দেখতে শুনতে পাওয়ার মধ্যে শেখার অনেককিছু ছিল। সঙ্গীত-ব্যক্তিত্বদের সেই তালিকায় জগন্ময় মিত্র, রবীন মজুমদার, অনুপম ঘটক, কমল দাশগুপ্তরা যেমন ছিলেন, তেমন ছিল বাদ্যযন্ত্রের প্রতিভা মনোহারি সিং। এ ছাড়া ছিল সলিল চৌধুরি এবং সুধীন দাশগুপ্তর মতো কাছের প্রিয়জনও। আই পি টি এ এবং রাজপুর অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ার জন্য সলিলদার সঙ্গে পরিচয় ছিল আগেই। সুধীনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর দুজনের সঙ্গীত প্রতিভার মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু নিজস্বতার প্রশ্নে দুজনেই কিন্তু আলাদা পথের যাত্রী। বৈচিত্র্যময় দক্ষতার মিল থাকলেও দুজনের কাজের ধাঁচ ছিল ভিন্ন ধরনের। এটা আমাকে খুব আকর্ষণ করত।
এতকাল পরে একটা কথা আমার মনে হয় দুজনেই বিস্ময়কর মেলোডিমেকার, কিন্তু এখনকার সময়ের প্রশ্নে সুধীন যেন শ্রোতাদের কাছে আরও বেশি করে ফিরে এসেছে। সলিলদার সৃষ্টিকে এতটুকু অসম্মান না করেই কথাটা লিখছি।
গানের সুর করা নিয়ে সুধীনের ভাবনা-চিন্তা ছিল সারাক্ষণের কাজ। কোন গান কার গলায় কতটা খুলবে তা নিয়ে ওর চিন্তাকে সকলেই মূল্য দিতেন, আমি তো দিতামই। আরও একটা গুণ, গান তৈরি করে ও একেবারে খোলামনে শিল্পীবন্ধুদের শোনাত। অতি ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ ছিল, সর্বদা অন্যের মতকে গুরুত্ব দিয়েই শুনত। সুর করার পর কোন শিল্পীকে দিয়ে সেই গানটাকে গাওয়াবে তা নিয়ে ওর ভাবনাকে তখনও মূল্য দিয়েছি, এখন তো অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বিচারে আরও বেশি করে দিই। শুধু তা-ই নয়, সুরকার সুধীন দাশগুপ্তর কাজে আজ, এই বৃদ্ধ বয়সে যেন আরও বেশি করে মুগ্ধ হই।
ওর কাছে অনেকেই, অর্থাৎ অনেক শিল্পীই নিয়মিত যেতেন। উদ্দেশ্য পছন্দসই সুরের কোনও গান যদি পাওয়া যায়। এমন অনেকদিন হয়েছে যে যখন গিয়ে হাজির হয়েছি, তখন ও হয়ত কোনও একটা গান তৈরি করছে। ওকে বিরক্ত না করে চলে এসেছি। পরে ওকে খানিকটা রাগানো বা অপ্রস্তুতে ফেলার জন্য সেই গানটার প্রসঙ্গ তুলে ওকে বলেছি— ‘তুই গানটা তৈরি করে আমাকে একবার শোনালিই না, আমার কথা একবার ভাবলি না?’ সুধীন অবশ্য রাগবার ছেলে ছিল না। উত্তর দিয়েছিল— ‘আমি তো গানটা শেষ করার পরেই ভাবি কাকে দিয়ে গাওয়াব, আগে তো ভাবি না।’ উত্তরটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। সত্যিই তো, আগে থেকে কোনও শিল্পীর কথা ভাবলে সৃষ্টির স্বাভাবিক মেজাজটাই নষ্ট হয়ে যায়। এই ধরনের অনেক ছোটবড় শিক্ষা আমি ওর কাছ থেকে নিয়েছি।
ওর সুরের চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচনের একটা উদাহরণ এক্ষুনি মনে পড়ছে। ওর কাছে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা অনেকেই গানটা চেয়েছিলেন, কিন্তু ও কাউকে না দিয়ে তাঁদেরকে বলেছিল— ‘এই গানটা মৃণালের জন্যই ভেবেছি, ওকেই দেব।’ গানটা পেয়ে আমিও খুব খুশি হয়েছিলাম। ওয়েস্টার্ন মিউজিক সম্পর্কে অনেকের পাণ্ডিত্যের খ্যাতি শুনেছি, কিন্তু সুধীনের মতো দক্ষ কাউকে আমি দেখিনি। ক্যাসানোভা থেকে সুরটা তৈরি করেছিল এবং সেই গানটা (‘হারিয়ে ফেলেছি মন/ জানি না তো কোথায় কখন’) জনপ্রিয় হয়েছিল। সেইভাবে বলতে গেলে সুধীনের কথা-সুরে যে কয়েকটা গান করেছিলাম তার সবগুলোই শ্রোতাদের প্রশংসা পেয়েছিল (‘পথ নির্জন চল না এখন’, ‘তুমি যে আশা নদী’, ‘কতদিন যে খুঁজে গেলাম, কত রাত্রির কাছে এলাম’)।
এক একটা গান থাকে যার জন্য শিল্পীর মনের মধ্যে যেন নিকনো দাওয়ায় একটা আলাদা আসন পাতা থাকে। কিন্তু গানটা পথ ভুলে অন্যের বাড়ি চলে যায়। সুধীন ও শ্যামল দুজনেই আমার বন্ধু, দুজনের কেউই আজ নেই— একথা ভাবলেই বিষাদে মন ভরে যায়। আমার অত্যন্ত প্রিয় সেই গানটা ছিল— ‘তুমি চলে যাওয়ার পর/ সারাদিন বৃষ্টি হয়ে কেঁদেছিলাম’। গানটা গেয়েছিল শ্যামল মিত্র, সময়টা সম্ভবত ১৯৭০ বা ১৯৭১। শ্যামল অনেক বড় শিল্পী, অসাধারণ সুরেলা তার কণ্ঠস্বর। কিন্তু আমি সুধীনকে বন্ধু হিসেবে বলেছিলাম— ‘তুই তো জানিস আমি এই গানটা পেলে হয়ত একটু অন্যরকমভাবে খেলাতে পারতাম।’ বন্ধুবান্ধবের মধ্যে এই ধরনের কথাবার্তা হয়েই থাকে। জবাবে কিচ্ছু না বলে সে শুধু মুচকি হেসেছিল। আমি ওকে আরও একটু অস্বস্তিতে ফেলার জন্য একথাও বলেছিলাম— ‘আমি জানি আমি গাইলে গানটা যা বিক্রি হত তার চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে শ্যামল গেয়েছে বলে, কিন্তু তুই তো গানের ক্ষেত্রে বিক্রির কথা ভাবিস না!’ কিন্তু ওকে রাগানো অসম্ভব ছিল। সব কথার জবাবে ওর ছিল মুচকি হাসি। কথা বলত খুবই কম।
কত অসংখ্য স্মরণীয় গানই যে সুধীন উপহার দিয়ে গেছে আমাদের। সুরকার সুধীন আশ্চর্য ক্ষমতায় একেবারে গানের কথার মর্মস্থলে ঢুকে যেতে পারত। দুটো গান তো আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। প্রথমটা প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই’ আর আশা ভোঁসলের গাওয়া ‘আকাশে আজ রঙের খেলা’। দুটোই অপূর্ব সুরারোপ। বিশেষ করে কাজলাদিদির গানটায় আমার মনের ভেতরে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটতে থাকে। সুরটা মনে পড়লে আমি আজও ঘুমোতে পারি না। আজও মনে হয় ওই গানটার যেন অন্য কোনও রকমের সুর হয় না, হতেই পারে না। এই ধরনের সৃষ্টিতেই একজন সুরকার অমর হয়ে থাকেন। সুধীন দাশগুপ্তকে কি অকারণে মনে রেখেছেন বাংলা গানের শ্রোতারা?
সুধীনের কথা সবিস্তারে লিখতে গেলে বোধহয় একটা ছোট মহাভারত হয়ে যাবে। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। একবার ওর সঙ্গে আমার সুর করার প্রশ্নে মজার লড়াই হয়েছিল। ঘটনাটা কোন বছরের ঠিক কখন তা আর এখন মনে নেই। ‘ভারতী’ সিনেমায় একটা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুনতে গেছি সুধীন আর আমি। যেমন হয়, সারারাতের অনুষ্ঠান, টিকিট দুটো ও-ই কেটেছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল পণ্ডিত রবিশঙ্করের সেতার আর উস্তাদ বড়ে গোলাম আলির কণ্ঠসঙ্গীত। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই আসরের শেষ শিল্পী ছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি। তখন বোধহয় উস্তাদ কলকাতায় আয়োজিত কোনও অনুষ্ঠানেই কমপক্ষে দু-আড়াই ঘণ্টার আগে ছাড়া পেতেন না। শেষে ঠুংরি গাইবেন। কোন গান গাইবেন তা নিয়ে যেন কোনও দ্বিমত থাকতেই পারে না— এমন মেজাজে শ্রোতাদের অধিকাংশ চিৎকার করে বলতে থাকলেন— ‘কেয়া করু সজনী আয়ে না বালম’। কিন্তু খাঁ সাহেব সবিনয়ে জানালেন, ‘আয়ে না বালম’ অন্যদিন হবে, আজ অন্য গান শুনুন। এই কথা বলার পর তিনি একটা ভৈরবী ঠুংরি ধরলেন, গানটির কথা ছিল— ‘বহুৎ দিন বিতে হুয়ে সাঁইয়া নেহি আয়ে’। গোলাম আলি খাঁ সাহেব নিজের মেজাজে ঠুংরি গাইছেন, তার রূপ-রসের বর্ণনা আমি কী করে লিখব! কী অনবদ্য তার চলন, বারবার তিনি যখন মুখড়ায় ফিরছেন তখন আমরা সকলেই ‘আহা’ করে উঠছি। কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে পৃথিবীর সেরা গানও একসময় শেষ হয়। অনুষ্ঠান যখন শেষ হল তখন সকাল সাড়ে ছ’টা বেজে গেছে। খিদেও পেয়েছে। আমি আর সুধীন সেই ঠুংরির মুখড়া মাথায় নিয়ে চা-টোস্ট ইত্যাদি খাওয়ার জন্য ‘বনফুল’ রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলাম। খাচ্ছিলাম ঠিকই কিন্তু মন পড়ে ছিল সুরে। ঠাট্টার ছলে সুধীনকে বললাম— ‘ঠিক আছে আয় এই মুখড়াটাকে ধরে আমরা দুজনে দুটো গান তৈরি করি, দেখি কেমন হয়।’ সুধীন তো কথা বিশেষ বলত না, মুচকি হেসে রাজি হয়ে গেল।
সময় নির্দিষ্ট হল এক সপ্তাহ। তখনও একটু-আধটু লিখতাম, এখনও লিখি। সুধীন কথাটা জানত। এবং এটাও জানত সুর করার ক্ষেত্রে আমি একেবারে নিজস্ব ভাবনাচিন্তায় হাঁটি। বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা লাইন মাথায় এসে গেল— ‘কেন জানি না যে শুধু তোমার কথাই মনে পড়ে।’ সেই লাইনটা ঘিরে এবং শুধু সুরটাকে ধরে রাখার জন্য বাকি কয়েকটা লাইন স্রেফ গোঁজামিল দিয়ে একটা গান হল। কিন্তু যতই ইয়ার্কি করি না কেন, অন্যদিকের মানুষটি তো সুধীন দাশগুপ্ত, সে তো যেমন সুর করবে, তেমনই লিখবে। সুতরাং ভাবছি আর ভাবছি। গোটা ঘটনাই বন্ধুদের মধ্যে মজা করা। ওকে ফোন করলাম— ‘কী রে, তোর গানটা কতদূর? আমার কিন্তু গান তৈরি হয়ে গেছে।’ ও আমাকে একটু বিশেষভাবে অনুরোধ করার ভঙ্গিতে বলল— ‘অ্যাই শোন, তুই আমাকে আজ আর কালকের দিনটা ছেড়ে দে, পরশু দিন আয়।’ তা সেই পরশু দিনে পৌঁছে আমি আমার কথায় গোঁজামিল দেওয়া গানটা শোনাতে ও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সুরটার রীতিমতো প্রশংসা করল। পরে ওর গানটা শুনে আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। যেমন লেখা, তেমন সুর। রোমান্টিক প্রেমের গানে গীতিকারের কল্পনা কতদূর যেতে পারে গানটা যেন তারই উদাহরণ। গানটা ছিল— ‘তার চুড়িতে যে রেখেছি মন সোনা করে’। কিন্তু গানটা কে গাইবে? তখনও বাংলা গানের জগৎ মান্নাদাকে তেমন করে পায়নি, বোম্বাইতেই থাকেন। আমিই ওকে পরামর্শ দিলাম— ‘এই গানটা তুই মানবকে দিয়ে গাওয়া।’ ও সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়ে বলেছিল— ‘ভাল বলেছিস তো’। গানটা মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় কেমন গেয়েছিল তাও নিশ্চয় বাংলা গানের শ্রোতারা মনে রেখেছেন। আমার গানটা? আমার বন্ধু ভাস্কর বসুর চ্যালা কাম বন্ধু মিল্টু ঘোষের কথা মনে পড়ল। মিল্টু শৈলেনের (মুখোপাধ্যায়) কাছে নিয়মিত যেত। টেলিফোনে ওকে সেখানেই ধরলাম। বাড়িতে ডেকে সুরটা শুনিয়ে মিল্টু ঘোষকে দিয়ে বাকি লাইনগুলো লিখিয়ে নিজেই গেয়েছিলাম। চমৎকার লিখেছিল মিল্টু। কথা ও সুর দুটোই পছন্দ হয়েছিল গ্রামোফোনের পবিত্র মিত্রেরও।
আজকের দিনের পরিস্থিতিতে কথাগুলো বোধহয় পরিষ্কার করে বলা দরকার। কারও সঙ্গে সম্পর্ক শুধু মুখের কথায় হয় না। অভিনেত্রী মঞ্জু দে যখন পরিচালিকা হয়ে ‘অভিশপ্ত চম্বল’ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন উনি আমাকে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময়ে সুধীন বলেছিল, তার হাতে কোনও কাজ নেই। কথাটা জানিয়েছিল বলেই শুধু নয়, কী ধরনের গান হবে শুনে আমার অনুভব, উপলব্ধিও বলেছিল ছবিটাতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজটা সুধীন অনেক ভাল করবে। সেই জন্য মঞ্জুদিকে বলে আমি তাকেই কাজটা পাইয়ে দিয়েছিলাম। পরিচালিকার সঙ্গে শর্ত ছিল যে, সত্যটা ফাঁস করা চলবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোম্বেতে রেকর্ডিং করার সময় তিনি কথাটা ফাঁস করে দিয়েছিলেন। সুধীনও সকৌতুকে, বন্ধুত্বের মর্যাদায় সত্যটা মেনে নিয়েছিল।
বন্ধুত্বের সঙ্গে সঙ্গে যোগ্যতার স্বীকৃতিও বহুক্ষেত্রে পেয়েছি সুধীনের কাছ থেকে। পরিচালক রাজেন তরফদারের ছবিতে (‘আকাশ ছোঁয়া’) আমাকে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত (‘এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে’) গাইয়েছিল সুধীন এবং সেটা প্রায় পরিচালকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে। পরে রেকর্ডিং হয়ে গেলে রাজেনদা নিজেই অবাক হয়েছিলেন, সুধীনকে আমাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন।
আজ মনে হয় সুধীনের সবচেয়ে বড় অপরাধ তার অকালে চলে যাওয়া। ঠিক ওর মেজাজের রোমান্টিক গান তেমন লেখাও হয়নি। বাংলা গানের এবং বাংলা চলচ্চিত্রের জগতের জন্য সুধীন দাশগুপ্তর মতো একজন যথার্থ গুণী মানুষের আজ বিশেষ প্রয়োজন ছিল।