গানের বাসা

               তোমরা দুটি পাখি,
           মিলন-বেলায় গান কেন আজ
               মুখে মুখে নীরব হল।
                   আতশবাজির বক্ষ থেকে
           চতুর্দিকে স্ফুলিঙ্গ সব ছিটকে পড়ে–
                   তেমনি তোমাদের
           বিরহতাপ ছড়িয়ে গিয়েছিল
               সারারাত্রি সুরে সুরে বনের থেকে বনে।
           গানের মূর্তি নিয়ে তারা পড়ল না তো ধরা–
                   বাতাস তাদের মিলিয়ে দিল
                       দিগন্তরের অরণ্যচ্ছায়ায়।
 
আমরা মানুষ, ভালোবাসার জন্যে বাসা বাঁধি,
    চিরকালের ভিত গড়ি তার গানের সুরে;
        খুঁজে আনি জরাবিহীন বাণী
           সে মন্দিরের গাঁথন দিতে।
    বিশ্বজনের সবার জন্যে সে গান থাকে
           সব প্রেমিকের প্রাণের আসন মেলে দিয়ে।
               বিপুল হয়ে উঠেছে সে
                   দেশে দেশে কালে কালে।
                       মাটির মধ্যখানে থেকে
           মাটিকে সে অনেক দূরে ছাড়িয়ে তোলে মাথা
                       কল্পস্বর্গলোকে।
 
               সহজ ছন্দে যায় আনন্দে জীবন তোমাদের
                       উধাও পাখার নাচের তালে।
                   দুরু দুরু কোমল বুকের প্রেমের বাসা
                       আপনি আছে বাঁধা
                          পাখির ভুবনে।
                       প্রাণের রসে শ্যামল মধুর,
                          মুখরিত গুঞ্জনে মর্মরে,
               ঝলকিত চিকন পাতার দোলনে কম্পনে,
                          পুলকিত ফুলের উল্লাসে,
        নব নব ঋতুর মায়া-তুলি
           সাজায় তারে নবীন রঙে–
               মনে-রাখা ভুলে-যাওয়া
                   যেন দুটি প্রজাপতির মতো
    সেই নিভৃতে অনায়াসে হালকা পাখায়
           আলোছায়ার সঙ্গে বেড়ায় খেলে।
 
        আমরা কেবল বানিয়ে তুলি
           আপন ব্যথার রঙে রসে
    ধূলির থেকে পালিয়ে যাবার সৃষ্টিছাড়া ঠাঁই,
               বেড়া দিয়ে আগলে রাখি
           ভালোবাসার জন্যে দূরের বাসা–
                   সেই আমাদের গান।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *