৫
সুমিঠ্ঠাগুরম থেকে রামেশ্বরম বাসে তিরিশ-পঁয়ত্রিশ মিনিট লাগলেও মোটামুটি স্পীডে জিপ চালিয়ে যেশুদাস পৌঁছে গেলেন সতেরো মিনিটের মধ্যেই। অনন্তপুরমের তিন রাস্তার মোড়ে গাড়িটাকে একেবারে রাস্তার বাঁ ধার ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে রেখে যেশুদাস এ বারে পেছনে তাকিয়ে আহিরাকে একটু অনুনয়ের সুরে বললেন, বিটিয়া, তোমরা তো রামেশ্বরমে যাবে। আর মিনিট তিনেকের মধ্যে আমি তোমাদের সেখানে পৌঁছে দিতেও পারি। আমার হাতে সেই সময়ও রয়েছে। কিন্তু আমি এখন ডিউটিতে রয়েছি। অন্য রুটে যাওয়াটা ঠিক হবে না—
চাচাজি! আপনি এতো দ্বিধার সঙ্গে বলছেন কেন? আহিরা পরিস্থিতিকে সহজ করে দিয়ে বলে উঠলো, আমাদেরই তো আগেই উচিত ছিল নেমে পড়া। আপনি যে হেভি ওয়াটার প্ল্যান্টে ঢুকবেন এ তো জানা কথা। না, না আপনার কোনো ভুল হয়নি। বরং……. সম্পূর্ণ কথাটা আহিরার আর বলা হলো না। তার আগেই সাত্যকি শ্রদ্ধা মিশ্রিত দৃষ্টিতে যেশুদাসের চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত গলায় বললো, আপনি মানুষটাই বড়ো অদ্ভুত, আর একটু বেশি পরিমাণেই ভালো। আজকের দিনে এমন ……
অনুগ্রহ করে আমাকে অতো ভালো বলবেন না। যেশুদাস হাসতে হাসতেই বললেন, বড়ো সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার পথে আপনাকে যদি রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখি, ভুলেও আপনার দিকে তাকাবো না, চেনা তো আরও অনেক দূরের ব্যাপার। কথাটা শেষ করেই যেশুদাস, ‘আবার দেখা হবে’ ইত্যাদি ধরনের দু’একটা শব্দ খরচ করে জিপ নিয়ে বাঁ দিকের চওড়া পিচ ঢালা মসৃণ রাস্তা ধরে হেভি ওয়াটার প্ল্যান্টের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন। আহিরা এবং সাত্যকি তখন অনন্তপুরমের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে। ডানদিকে ঘুরে কিছুটা এগোলেই রামেশ্বরম শহর। শহর অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। চতুর্দিকে দোতলা, তিনতলা, চারতলা বাড়ির ছড়াছড়ি। হাট-বাজার, নানা ধরনের সামগ্রীর দোকানে দোকানে ও মানুষের জটলায় এলাকাটা গিজগিজ করছে। ক্যাসেটের দোকান থেকে ভেসে আসছে হিন্দি ছায়াছবির মনমতানো লঘু সঙ্গীতের সুর। সামনেই মেয়েদের একটা স্কুল। টিফিন পিরিয়ড চলছে। স্কুলের গেটের বাইরে আচার, চাটনি, গালগোপ্পা, দই-বড়া, ধোসা-ইডলির ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের ঘিরে রয়েছে ষোলো-সতেরোর কিশোরীরা। অন্য ফুটপাথ থেকে ওদেরকে আবার তারিয়ে তারিয়ে দেখে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে বছর কুড়ির কয়েকটা তরুণ।
মোড়টায় সারাক্ষণই যেন হই-হট্টমেলা চলছে। যানবাহনের ছোটাছুটি, দোকান- পসারের ঝলমলে হাতছানিতে ক্রেতা সাধারণের ব্যস্ততা, সামান্য একটু দূরেই এক সিনেমা হলের সামনে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইনের সারি। ফুটপাথের হকারদের চিৎকার আর দরকষাকষিতে শব্দ দূষণের মাত্রা যে যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
হঠাৎ একটা হই-হল্লার আওয়াজে সাত্যকি সেদিকে চোখ ফেরালো। স্কুলের কিশোরীদের ‘নয়ন মেলে’ দেখতে দেখতে বছর উনিশ-কুড়ির ওই তরুণ চারজন ।ফুটপাথ ছেড়ে এমনভাবে বড়ো রাস্তার ওপরেই আড্ডা জমিয়ে নিজেদের হাহা- হিহিতে ব্যস্ত ছিল যে অন্য দিকে আর দৃষ্টি দেবার প্রয়োজন মনে করেনি। ওদিকে বছর তিপ্পান্ন-চুয়ান্নর এক সাইকেল আরোহী সমানে ক্রিং ক্রিং করে বেল বাজানো সত্ত্বেও টাল সামলাতে না পেরে ওদের গা ঘেঁষে পড়েছেন কী পড়েননি, আর তাতেই ছোকরা চারজন অগ্নিমূর্তি ধরে বাবার বয়সী লোকটাকে সমানে পেটাতে লাগলো। সাত্যকির সবচেয়ে খারাপ লাগছে যেটা তা হলো আশেপাশের একটা লোককেও সাইকেল আরোহীকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে না দেখে।
বিন্দুমাত্র দোষ না করেও লোকটার ওইভাবে অপদস্থ হওয়া, মার খাওয়াটা বরদাস্ত করতে পারলো না সাত্যকি। ছেলে চারজন ভেবেছে কী? অন্যায়ভাবে পেটানোর অধিকার তারা পেল কোন সাহসে? দলবদ্ধ বলে? তা হলেও কী একজন বয়স্ক মানুষকে অমনভাবে মারধর করাটা নিষ্ঠুরতা নয়? উনিশ-কুড়ি বছরের ছেলেদের ওই বোধটুকুও কী থাকবে না? সব কিছু বিসর্জন দিতে দিতে….সাত্যকি আর বেশি ভাবাভাবির মধ্যে গেল না। কেন না ছেলে চারজন লোকটাকে তখনও মেরেই চলেছে। রক্তে ওঁর জামাটামা ভিজে গেছে। সাত্যকি আহিরাকে ‘এক মিনিট আসছি বলে’ একটু দৌড়ে গিয়ে প্রথমে লোকটাকে ছাড়িয়ে নিল। তারপরেই চারজনের উদ্দেশে ধমক লাগালো, ওঁকে এ ভাবে মারছো কেন? দোষ তো তোমাদের।
বিচ মে বোলনেওয়ালা তু কৌন হ্যায় রে?
আমি যেই হই অন্যায়টা পুরোপুরি তোমাদেরই।
তু কেয়া নয়া দাদা আ গিয়া—
ওদের দুঃসাহসের মাত্রা দেখে তাজ্জব বনে গেল সাত্যকি। সে শুধু বলেছে, আমি দাদারও— না বাকি ‘দাদা’ কথাটা শেষ করতে পারেনি। তার আগেই নীল গোল গলার গেঞ্জি পরা একজন ধাঁ করে একটা ঘুষি চালিয়ে দিয়েছে ওর মুখ লক্ষ্য করে। লেগেছে তো বটেই, রক্তও ঝরছে। তবে সে সব সাত্যকি একেবারেই গ্রাহ্য করলো না। ‘মস্তানি কাকে বলে দেখবি’ বলে সে এ বারে নীল গেঞ্জির দফা রফা করে ছাড়লো।
.
ইতিমধ্যে আহিরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওদের মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিব্রত গলায় শুধু বলেছে, এ বারে ছাড়ুন। চলে আসুন। ‘আপনি একটু দাঁড়ান’ বলে সাত্যকি আবার নীল গেঞ্জিকে নিয়ে পড়লো। বাকিরা বন্ধুর মার খাওয়া দেখেই পালিয়েছে। সাত্যকি তাই হুমকি দিল, তোর বন্ধুরা কোথায় গেল রে? তোকে এখন কে বাঁচাবে?
ওস্তাদ গলতি হো গিয়া
এর মধ্যেই আমি ওস্তাদ হয়ে গেলাম। সাত্যকি এ বারে একটু হাসলো।
ওস্তাদো কে ওস্তাদ।
ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না—সাত্যকি হাসতে হাসতে বললো, তোরা আসলে মার খাওয়ার আগে পর্যন্ত বাঘ, মার খাওয়ার পর বেড়ালও নয়—চামচিকে, বাদুড়।
আমাকে ছেড়ে দিন ওস্তাদ। নীল গেঞ্জি রীতিমতো সাত্যকির হাত-পায়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যান্য দোকানদার ও পথ চলতি জনতারাও এসে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে। ওই চার মূর্তিমানের দাপটে ওরা এতো দিন কিছু বলার সাহস পায়নি। দলনেতার হেনস্থা দেখে ওদের প্রতিবাদ এ বারে জোরালো হলো।
সাত্যকি শুধু জনতার উদ্দেশে একটু আবেগ বিহ্বল হয়ে বললো, চারজন পুঁচকে ছেলে এই বয়স্ক মানুষটাকে হেনস্থা করছে দেখেও আপনারা মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন। এটা ঠিক নয়। প্রতিবাদে কী হয় তা তো দেখতেই পাচ্ছেন—একজন কাঁদছে, তিনজন আগেই পালিয়েছে। এ বারে অনুগ্রহ করে আহত ভদ্রলোককে একবার ডাক্তারখানায়….
ডাক্তারখানায় যাবার প্রয়োজন তো আপনারও! সহানুভূতির সুরে ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো, আপনার ঠোঁটের পাশ থেকে রক্ত পড়ছে।
ও কিছু নয়। রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে সাত্যকি আহত লোকটার পিঠে হাত রেখে বললো, ভালো থাকুন এইটুকুই প্রার্থনা। আমি আসছি।
আহত মানুষটা ছলছল চোখে সাত্যকির মুখের দিকে তাকালেন। ভেতর থেকে অনেক কথা উঠে আসতে চাইছে। বলতে পারছেন না। তাঁর ঠোঁট, গলা, বুক, হাত-পা কাঁপছে। বস্তুত মানুষটাই কাঁপছেন। কাঁপা-কাঁপা হাতটাই সাত্যকির মাথায় রেখে কোনো রকমে বললেন, বেঁচে থাকো বাবা।
সাত্যকির পাশে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আহিরা অনেক কথাই ভেবে চলেছে। প্রথমে ভেবেছিল, কলকাতার ছেলেটা এরপরে না জানি আরও কতো বীরত্বের কাহিনী শোনাবে। ওমা কোথায় কী? একটা টু শব্দও নয়। আগের অধ্যায় থেকে বাহবা নেবার সস্তা কাজের মধ্যে ঢুকে নিজেকে বড়ো করে জাহির করার মানসিকতা যে নেই তা বোঝা যায় ওর নিরুচ্চার চেহারা দেখে। ভেতরে বারুদ ঠাসা রয়েছে, সততা আর সহানুভূতির বারুদ—অথচ বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করা এ সব ঠিক আছে। কিন্তু তার জন্য তো একটা পটভূমিও তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশে বিভুঁয়ে এসে কিছু জানা নেই, চেনা নেই সরাসরি এতোটা ঝাঁপিয়ে পড়াটাও কী ঠিক? এর তো একটা উল্টো দিকও আছে। ওই উঠতি মাস্তান চারজন যদি এক সঙ্গেই সাত্যকির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো, তার পরের অবস্থাটা তা হলে কী হতো সেটাও তো একবার ভাবা দরকার। তা ছাড়া কথা নেই, বার্তা নেই, কোনো প্রস্তুতিও নেই, ‘এক মিনিট আসছি’ বলে একজন আধা পরিচিতাকে দাঁড় করিয়ে রেখে দুম করে কেউ ওভাবে নিজেকে জড়ায়? আহিরা অস্ফুট গলায় বললো, কাজটা ভালোই করেছেন কিন্তু…..
এই কিন্তুতে এসেই সব কিছু আটকে যায়। ফলে কোনো কাজই হয় না। সাত্যকি মৃদু হাসলো একটু।
ওরা সবাই মিলে যদি….
আপনিই তো বললেন কাজটা ভালো। ভালো কাজে ভয় পেলে চলে? যাক গিয়ে ছাড়ুন ওসব—আপনি আগে ভেঙ্কটেশ্বরের মন্দিরে পূজো দেবেন চলুন। সাত্যকি এমন সুরে কথাটা বললো যার পরিষ্কার অর্থ আগের ব্যাপারটা নিয়ে আর আলোচনা নয়।
আহিরারও মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যা সব ধুন্ধুমার কান্ড চলছে মাথা ঠিক রাখবে কী? ভেঙ্কটেশ্বরের মন্দির এখান থেকে খুব কম করেও মাইল দুয়েক হবে। অথচ সে কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব নিয়ে সাত্যকির পাশে পাশে হেঁটে চলেছে। আহিরা দেরি না করে হাতের ইশারায় একজন অটো চালককে ডাকতেই সে তার গাড়িটাকে ওদের কাছে নিয়ে গিয়ে থামালো। দু’জনে পাশাপশি বসতে বসতে এ ওর মুখের দিকে এক পলক তাকালো মাত্র। সাত্যকি বললো, আমাদের কলকাতায় এখন এই অটোরিকশা বা অটোস্কুটার যাই বলুন এর চলটা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। ওর কথার ধরনেই কথা খোঁজার স্পষ্ট প্রকাশ।
আহিরা নিস্তেজ গলায় উত্তর দিল, কলকাতা শুনেছি অনেক বড়ো শহর। সেখানে এতো ছোট গাড়ির স্থান কোথায়?
কয়েকটা মুহূর্ত চুপচাপ থাকার পর সাত্যকি আবার জিজ্ঞেস করলো, আপনি তো আনেক্কাপল্লীতে ফিরে যাবেন?
হ্যাঁ।
কবে যাচ্ছেন?
আমার নিজের ছুটি রয়েছে আরও দু’দিন। আড়িয়াপ্পা উৎসবের জন্য দু’দিন এবং একটা রবিবার অর্থাৎ সব মিলিয়ে দিন পাঁচেক থাকবো বাড়িতে।
আবার কবে আসবেন?
আগামী মাসেই।
আপনার মায়ের একটা কথা আমি কখনও ভুলবো না। সাত্যকি সামান্য একটু হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে বললো, “আজকাল তো মড়ক লাগার মতোই কলেজের ছুটি।” এক একটা কথা মনেতে খুব দাগ কেটে বসে যায়।
মা ওই রকমই বলেন। আহিরা ক্ষীণ একটু হাসলো। বললো, আমাদের সুমিঠ্ঠাগুরমে একটা ছেলে কিছুতেই পড়াশোনা করবে না। ভাবতে পারেন, ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠতে সব কটা বিষয়ে সে ফেল করেছে। অথচ বিন্দুমাত্র লজ্জিত না হয়ে বলে বেড়াচ্ছে, মাস্টাররাই ওকে ফেল করিয়ে দিয়েছে। কারণ মাস্টারদের হাতে যে অনেক ক্ষমতা। মা শুনে শুনে একদিন বলেই ফেললেন, ‘রাজু বেটে তোমার ক্ষমতাই বা কম কিসে? মাস্টাররা পারলো তোমার খাতায় নম্বর বসাতে? সেই যে রাজু চুপ করলো আর কখনও মাস্টারদের নিন্দে করেনি।
অটো ছুটে চলেছে।
নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আর নতুন জায়গা দেখার আনন্দই আলাদা। সারাক্ষণই সাত্যকির মনে হয় এই জায়গায় তো তার আসার কথা ছিল না। সাদামাঠা জীবনে হঠাৎ প্রাপ্তির এই ঝলকানি বুকের ভেতরটা অন্য অনুভূতিতে ভরিয়ে দেয়। ওই যে নিম গাছের ছায়ায় খাটিয়া পেতে এক বৃদ্ধ কী যে ভেবে চলেছেন তা উনিই জানেন। মধ্যবয়সী এক মহিলা কূয়ো থেকে জল তুলেই চলেছেন—সারা দিনে তাঁকে কতো জল তুলতে হয় সেটা সাত্যকির জানার কথা নয়। কিন্তু কলকাতায় ফিরে যাবার পরেও ওই দৃশ্য দুটো তার মন থেকে মুছে যাবে না। এটাই হলো নতুন জায়গার নতুন ঘ্রাণ। অথচ দৃশ্যগুলো তো পুরানোই।
পথের দু’পাশেই চোখ রেখে চলেছে সাত্যকি। কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে বেশ কয়েকটা সিনেমা হল দেখে সে আহিরার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো, এখানে এতো বেশি সিনেমা হল কেন?
এখানকার মানুষ ছায়াছবির ভক্ত। আরও ভেঙে বললে যা দাঁড়ায় তা হলো, অতি সাধারণ জীবনযাত্রায় যারা অভ্যস্ত সেই সব মানুষদের কাছে সিনেমাই হলো একমাত্র বিনোদন। এবং এরা একই ছবি তিনবার, চারবার পর্যন্ত দেখে। আহিরা ‘রায়’ দেবার ভঙ্গিতে বলে উঠলো, সিনেমা ছাড়া ওই শ্রেণীর মানুষরা অন্য কিছু বোঝে না।
ওই যে প্রচুর ভিড়, লাইনে মারামারি-গুঁতোগুঁতি হচ্ছে, ওটা কী বই?
আপনার কী আগে মারামারি-গুঁতোগুঁতিই চোখে পড়ে?
না, মানে—সাত্যকি কী যেন বোঝাতে যাচ্ছিলো, একটু আগের ঘটনাটা মনে পড়ে যাওয়ায় সে হো-হো করে প্রাণখোলা এক হাসি ছড়িয়ে বলে উঠলো, আসলে একটা ছবির সামনে এত ভিড় দেখে……..
ছবিটা আড়িমাপ্পন।
কে কে আছে?
জয়ললিতা, এম.জি.আর.। আহিরা আরও জানিয়ে দিল, ওই ছবিটা খুব কম করেও তেত্রিশ, চৌত্রিশ বছর আগের
আমাদের জন্মেরও দশ বছর আগের বই। আপন মনে কথাটা উচ্চারণ করেই সাত্যকি হঠাৎ অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল। বললো, কোট্টাই গ্রামটা এখানে কোথায় বলতে পারেন?
একেবারে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কোট্টাই গ্রামের কথা উঠতেই আহিরা লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে সরাসরি সাত্যকির চোখের দিকে তাকালো। কলকাতার একটা ছেলে এখানে এসে হঠাৎ করে কোট্রাইয়ের কথা বলছে, ব্যাপারটা কী? আহিরার তো রীতিমতো খটকাই লাগছে। সে জানতে চাইলো, ওখানে কী? আহিরার প্রশ্নে উৎকণ্ঠার সুর।
সাত্যকি হেসে উত্তর দিল, নির্ভয়ে থাকুন ওখানে মারামারি করতে যাচ্ছি না। ব্যাপারটা হয়েছে কী, আপনাদের বাড়িতে প্রথম দিন আসার সময়ে বাসে মুনিয়াপ্পা নাইডু নামে একাত্তর, বাহাত্তর বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। উনি বলেছিলেন ওঁর বাড়ি কোট্টাই গ্রামে।
তাই বলুন! আহিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, কোট্টাই এখন আর গ্রাম নেই। ওটা হলো ধনী কৃষিজীবীদের পাড়া। ভেঙ্কটেশ্বরের মন্দির থেকে অটোতে মিনিট দশ-বারোর পথ।