গাঁ-এর নাম ছমছমপুর – গৌর বৈরাগী
আজ সকালেই তুমুল একচোট ঝগড়া করল আদুরি। ঝগড়া অবশ্য একে বলা যায় না। গালমন্দ, শাপশাপান্ত যা হল সবই অবশ্য এক তরফা। আদুরি বলছে আর ওদিকে ছেলেটা শুয়ে শুয়ে শুনছে। এসব দেখে আজ সত্যি সত্যি মরে যেতে ইচ্ছে হল তার।
ছমছমপুরের পাটালি দাস ছেলেটা রামকুঁড়ে। বয়েস চব্বিশ পার হতে চলল এদিকে কাজকম্মের কোনো ধান্ধাই করে না। বিধবা মা কতরকম কাজই খুঁজে এনে দিল। হরি মুদির দোকানে ফর্দ ধরে ধরে মাল দেবার কাজ। তো সে—কাজ পোষাল না। কেন? না বড্ড ছোটাছুটি করতে হয়। তখন নিতাই—এর সাইকেল সারাই—এর দোকানের কাজ এনে দিল আদুরি। কিন্তু দু—দিন বাদে সে—কাজও ছেড়ে দিল পাটালি। চাকায় হাওয়া দিতে গেলে বড়ো হ্যাঁচকা দিতে হয়। অত পরিশ্রম সইবে কেন তার। তখন খবরের কাগজ কেটে ঠোঙা তৈরির কাজ বাড়িতেই নিয়ে এল মা। এ কাজে ছোটাছুটি নেই। হ্যাঁচকা দেওয়াও নেই। বসে বসে কাগজ কাটো আর আঠা দিয়ে জুড়ে জুড়ে ঠোঙা তৈরি করো, ব্যস।
কিন্তু এ কাজটাও হল না। দেখা গেল, কটা কাগজ ডাঁই করে ফেলে রেখে পাশে শুয়ে ভোঁস ভঁসিয়ে ঘুমোচ্ছে পাটালি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো ঠোঙা তৈরি করা যায় না, বসতে হবে। আর কে না জোনে যারা বেহদ্দ কুঁড়ে তারা সুযোগ পেলে বসতে চায়, বসতে পেলে শুতে চায় আর শুতে পেলে ঘুমোতে চায়। অতএব একাজও বাদ পড়ল। তাই গালমন্দ করে পাড়া মাথায় করল আজ। তারপর দুর ছাই বলে বেরিয়ে পড়ল আদুরি।
কিন্তু যাবে আর কোথায়। যতই হোক সে তো মা। পাটালিকে একটা কাজ জুটিয়ে দিতে না—পারলে সারাজীবন করবেটা কী? এদিকে ছেলেটার খুব বদনাম হয়ে গেছে। যার কাছেই যায় সে বলে, তোমার ছেলে তো একটাই কাজ জানে আদুরি। হয় বসা না—হয় ঘুমোনো। ও দিয়ে আমার তো চলবে না। ওই একই কথা বলল, বাজারওলা লালু। হাটে গুড়ের আড়ৎ শৈলেন খামারুর। মানুষটা ভালো। অপরের দুঃখ মন দিয়ে শোনেন। তিনি শুনেটুনে বললেন। আমার তো সব হিসেবের কাজ আদুরি। এদিকে তো তোমার ছেলে পাঁচ কেলাস অবধি পড়েছে। ও দিয়ে তো আমার কাজ হবে না।
হবে না?
না, আমার কাজ হবে না। তবে অন্য একটা কাজ আছে।
কী কাজ জ্যাঠামশাই?
শৈলেন খামারু হাসলেন। লোকে বলে, যার নেই কোনো কাজ, বসে বসে পালা ভাঁজ।
তার মানে কী জ্যাঠামশাই?
মানে হল, যাত্রাপালা। আমাদের এই ছমছমপুরে যাত্রাপালা এসেছে দেখোনি?
দেখেনি, তবে শুনেছে আদুরি। কী এক নাট্যসমাজ তিন রাত্তিরে তিনটে পালা করবে এখানে। মাইকে মাইকে বলে বেড়াচ্ছে। ওদিকে তো মন দিলে চলে না তার। কিন্তু সেখানে কী করবে আমার পাটালি?
অ্যাকটো করবে, অ্যাকটো। হো হো করে আবার হাসলেন শৈলেন খামারু। বলা যায় না কাজটা হয়তো তোমার পাটালির মনে ধরে গেল।
আদুরিরও মনে ধরল কথাটা। কী থেকে যে কী হয় কেউ জানে না। তাই সে হন হন করে হাঁটতে লাগল। ওই তো পালপাড়ার মাঠ। চট দিয়ে ঘিরে বিশাল ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। মাইকে কে যেন তারস্বরে চিৎকার করছে।
‘আসুন….আসুন…টিকিট কাটুন। আজকের পালা ‘ভূত বাংলো’। টিকিট পাঁচ টাকা আর দশ টাকা।’
মাইক শুনেই এগিয়ে গেল আদুরি। টেবিল পেতে দুটো ছোকরা বসে আছে। সে যেতেই একজন ছোকরা মাইক নিভিয়ে বলল, ক—টা দোব?
আদুরি ভয়ে ভয়ে বলল, কী জিনিস দেবে বাবা?
টিকিট গো টিকিট, আজ ভালো পালা আছে।
কিন্তু আমি তো টিকিট কিনতে আসিনি?
একটা ছোকরা ধমকে উঠল। তাহলে কী করতে এসেছ?
পালায় যদি কোনো অ্যাকটো পাওয়া যায় তাই জানতে এয়েচি।
কথা শুনে রাগের বদলে হো হো করে হাসল দুজন ছোকরা। অ্যাকটো করার খোঁজ নিতে এসেছ। এদিকে পালাই তো বন্ধ হয়ে যাবে শুনছি।
বন্ধ হবে?
হ্যাঁ। কাল কত বিক্রি হয়েছে জানো? মোটে সাতশো আশি টাকা।
যাও যাও সরো এখান থেকে।
কথা শুনে সরে আসে আদুরি। ভারী দুঃখ হয় তার। নাঃ এভাবে বেঁচে থাকার আর মানে হয় না।
২
বসে বসে দুঃখের কথা ভাবছিলেন ভবতারিণী নাট্যসমাজের ম্যানেজার নিবারণ হাজরা। নিজের মনে হাঁটতে হাঁটতে এই নির্জন জায়গাটা চোখে পড়ল তার। কাছে—পিঠে একটাও লোক নেই। চারপাশে ক—টা বাঁশঝাড়। মাঝখানে বেশ বড়ো একটা পুকুর। এতবড়ো পুকুর, টলটলে জল অথচ কোনো ঘাট নেই। তার মানে এটা কেউ ব্যবহার করে না। ভালোই হয়েছে, এমন নির্জন জায়গাতেই তো নিজের মনে একা একা দুঃখের কথা ভাবা যায়। দুঃখ বলে দুঃখ, কী দিনকালই এল। লোকে আর যাত্রামুখো হচ্ছে না। সবাই ঘরে বসে টিভি দেখছে। এখন গ্রামগঞ্জেও ঘরে ঘরে টিভি। ঘরের বাইরে এসে পালা দেখতে বয়ে গেছে তাদের। এই ছমছমপুরে এসে ভেবেছিলেন কিছু দর্শক পাওয়া যাবে। দু—চার টাকা ঘরে আসবে। কিন্তু কোথায় কী। তিন নাইটে তিনটে পালা। ফার্স্ট নাইট—গণেশ কেন বেকার? সেকেন্ড নাইট—ভূত বাংলো আর শেষে মরণ কামড়।
পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে ছমছমপুর। হাটতলা, মনসাতলা, স্কুলপাড়া, পিরের মাজার। তার ওপর দু—দিন ধরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে এনতার প্রচার হয়েছে। অথচ লাভ কী হল? কাল রাতে ‘গণেশ কেন বেকার?’ পালায় যা বিক্রি তাতে খাইখরচাটাও উঠবে না। নাঃ এভাবে চলে না। ভবতারিণী নাট্যসমাজকে উঠিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এমন যখন ভাবছেন তখন পুকুরের আঘাটা বেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল একজন। বিধবা মানুষ। পরনে একটা নোংরা শাড়ি। মাথার চুলে জট। তার দিকে তাকিয়ে বলল, কী ভাবছেন আজ্ঞে?
মনখারাপে নির্জনে বসে একটু ভাববেন তার উপায় নেই। তাই রাগ হয়ে গেল নিবারণ হাজরার। মেয়ে লোকটার আসপদ্দা তো কম নয়, কী ভাবছি তাকে বলতে হবে কেন? তাই কড়াগলায় বললেন, কে হে তুমি?
আজ্ঞে আমি আদুরি, এখেনেই বাস।
তা বেশ, তা কী ভাবছি সে—কথা তোমাকে বলব কেন?
না না আমি সে—কথা বলিনি। আদুরি জিব কাটল। আসলে জায়গাটা তো খারাপ।
খারাপ?
হ্যাঁ খারাপ। এই যে পুকুরটা এটার নাম বউডোবা পুকুর। মাঝে মাঝেই বউ—ঝি এখানে ডুবে মরে। ব্যাটাছেলেও ডোবেনি তা নয়। আসলে পানো বলে পুকুরটা ডাকে তাই এর ধারেকাছে কেউ আসে না।
কথা শুনে বেশ মজা পেলেন নিবারণ হাজরা। গ্রামগঞ্জে এরকম কত যে ভূত ছড়ানো আছে। তার অবশ্য কোনো ভূতের ভয় নেই। তাই অল্প হাসলেন। বললেন, তাহলে তুমি এসেছ কী করতে?
আজ্ঞে আমিও ডুবতে এয়েছিনু। কিন্তু পারলুম না।
কেন পারলে না?
ওই ভূতটার কথা ভেবে। আদুরি খুব দুঃখের গলায় বলল, বাড়িতে একটা জ্যান্ত ভূত রেখে কী করে জলে ডুবি বলুন?
‘জ্যান্ত ভূত’ কথাটা বেশ মনে ধরে গেল নিবারণ হাজরার। ব্যবসায়ী মানুষের চোখ—কান সবসময় খোলা রাখতে হয়। কখন কী কাজে লাগে কে জানে। এই যেমন এখন ‘জ্যান্ত ভূত’ কথাটা মনে ধরে গেল। বললেন, বাড়িতে কী করে তোমার ভূত?
শুধু পড়ে পড়ে ঘুমোয়। টানা দু—দিন না—খেয়েও শুধু ঘুমোবে। সে আর বলবেননি আজ্ঞে। আপনি বলুন, এরপর ওকে কেউ কাজ দেবে?
যদি দেয়, নিবারণ হাজরা মিটি মিটি হাসলেন। আমি যদি ওকে কাজ দিই?
আপনি দেবেন? এত অবাক জীবনে হয়নি আদুরি। সে বলল, কী কাজ দেবেন?
নিবারণ হাজরা বললেন, ঘুমোবার কাজ।
৩
ভবতারিণী নাট্যসমাজের ম্যানেজার খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরলেন সুযোগটা। এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। অনেক আশা নিয়ে ‘ভূত বাংলো’ পালাটা লিখেছিলেন। গল্পে রহস্য আছে। রোমাঞ্চ আছে। মোটামুটি অভিনয়ও ঠিক ঠিক হচ্ছে। কিন্তু ‘ভূত বাংলো’—তে একটা ভূতও আমদানি করা যায়নি। আর ভূত ছাড়া ভয়ই বা লোকে পাবে কেন।
নাটকটা শুরু হচ্ছে বনের ভেতর একটা পোড়োবাড়িতে। এক ঝড়ের রাতে হিরো—হিরোইন সেখানে আশ্রয় নেবে। প্রথম দৃশ্যে বাঁশের ফ্রেমের ওপর থার্মোকলের ভাঙা পাঁচিল দেখানো হয়েছে। পাশে ভাঙা লোহার গেট। হিরোইনের তেষ্টা পেয়েছে খুব। জলের খোঁজে দুজনেই ভেতরে ঢুকবে তখন।
তখন একটানা ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। টেপ করে রাখা শেয়ালের হুক্কাহুয়া শোনা যাচ্ছে আর তার সঙ্গে নিরাপদ দলুই—এর ভয় ধরানো মিউজিক। কিন্তু এতসব করেও তেমন ভয় পাওয়ানো যায় না দর্শকদের। মানুষ আজকাল ভয় পেতেও ভুলে গেছে। একমাত্র যদি তেমন এক জ্যান্ত ভূত দেখানো যেত।
তাই আদুরির কথায় সোজা ওর বাড়ি চলে গেলেন নিবারণ হাজরা। আদুরিই ডাকল, পাটালি পাটালি বলে। ছেলে সামনে এসে দাঁড়াতে বলল, এই আমার ভূত আজ্ঞে।
নিবারণ হাজরা দেখছিলেন, আহা, খাসা চেহারা ছেলেটার। যেমন যেমন চেয়েছিলেন এ যেন তার চেয়ে বেশি পাওয়া। যেমন গায়ের রং তেমনি রোগা রিংঠিঙে। গায়ের রং যা তাতে আবলুস কাঠ হার মানে। বুকের খাঁচায় ফুটে ওঠা হাড় ক—খানা গুনে ফেলা যায়। হবে, হবে। বেশ খুশির গলায় বললেন। আমাদের যাত্রাপালায় একটা ভূত দরকার। তোমাকে যদি ভূতের পার্টটা দিই পারবে তো হে?
ভাবনার জন্যে যেন কিছু সময় নিল পাটালি। তারপর সব বুঝেশুনে ভয়ে ভয়ে বলল, আমি কিন্তু বেশি নাচন—কোদন পারব না।
কথা শুনে হো হো করে হেসেছিলেন নিবারণ হাজরা। তোমাকে কিছু করতে হবে না। চুপচাপ শুয়ে থাকলেই কাজ হয়ে যাবে আমাদের। এরপর আর বেশি কথা বাড়াতে চাননি তিনি। পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে আদুরির হাতে দিয়ে বলেছিলেন। পার্ট ভালো হলে আরও পাবে। এখন আমি চললুম।
শুধু একা নন, সঙ্গে পাটালিকেও নিলেন তিনি। ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলিয়ে শিখিয়ে—পড়িয়ে দিতে হবে। আজ রাতে ‘ভূত বাংলো’ পালা।
ডিরেক্টর নবনী অধিকারী তখন গালে হাত দিয়ে বসেছিল। সকালে জলখাবার হয়েছিল মুড়ি বেগুনি। খুবই মুখরোচক খাবার। অথচ মুখেই রুচছে না। বেলা বারোটা বাজতে চলল। ওদিকে খবর এল দুশো টিকিটও বিক্রি হয়নি।
নিবারণ হাজরা বললেন, এক কাজ করলে হয় না অধিকারী মশাই?
কী কাজ?
ফার্স্ট সিনেই যদি একটা ভূত এনে ফেলা যায়?
ফার্স্ট সিনে?
হ্যাঁ। হিরো—হিরোইন স্টেজে অ্যাপিয়ার করার আগেই যদি ভূত বাংলোর পাঁচিল, মানে বাঁশের মাচায় যদি একটা ভূতকে শুইয়ে রাখা যায়।
তা যাবে না কেন, ডিরেক্টর ফস করে বড়ো একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তবে তাতে কাজের কাজ কিছু হবে না। লোকে আজকাল ভয় পেতে ভুলে গেছে।
সত্যি ভূত হলেও?
সত্যি ভূত…?
তখন নিবারণ হাজরা পাটালি দাসকে দেখালেন। হাড়—পাঁজরা বার হওয়া কালো—কুলো পাটালি এবার বড়োসড়ো একখানা হাসি হেসে উঠল। কালো মুখের ভেতর অমন ঝকঝকে সাদা একসারি দাঁত। দিনের বেলাতেই যেন চমকে গেল নবনী অধিকারী। তারপরেই ছেলেটাকে নিয়ে কাজে নামতে হল। নতুন ছেলে। শেখাতে—পড়াতে টাইম লাগল।
টাইম অবশ্য বেশি লাগার কথা নয়। লাগলও না। শুধু তো শুয়ে থাকতে হবে। মুখ দিয়ে একটা কথাও বার করতে হবে না। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সড়োগড়ো হয়ে গেল পাটালি।
নিবারণ হাজরা বললেন, কী মনে হচ্ছে পাটালি?
পাটালি হেসে বলল, আজ্ঞে এ তো খুব সহজ অ্যাকটো দেকচি।
৪
আটটায় পালা শুরু হলে সন্ধে ছ—টা থেকে তোড়জোড় শুরু হয়। ওদিকে স্টেজ সাজানো আছে। মেকআপ আছে। মেকআপ ম্যান শম্ভু পাল তার বাক্স—প্যাঁটরা সাজিয়ে বসেছে। তখন নবনী অধিকারী বলল, অ শম্ভু, এই হল পাটালি। এরই ভূতের মেকআপ হবে।
শম্ভু অবাকময় তাকিয়েছিল। এমন লোক বোধহয় সে জীবনে দেখেনি। বলল, এ তো মেকআপ নিয়েই এসেছে অধিকারীবাবু।
নবনী অধিকারী হাসলেন। ঠিক লোককেই বাছা হয়েছে তাহলে, তুমি শুধু টাচটা দিয়ে দাও।
শম্ভু পাল তুলিতে অ্যালুমিনিয়াম পেন্ট দিয়ে বুকের ক—খানা হাড়ের ওপর একবার করে বুলিয়ে দিল। চোখের চারপাশেও দুটো গোল এঁকে দিল। পাটালি ধাঁ করে বদলে গেল ভূতে।
ডিরেক্টর এগিয়ে এল। বলল, পাটালি তোমার ফার্স্ট অ্যাপিয়ারেন্স। এখন একধারে গিয়ে বসো। থার্ড বেল পড়ে গেলেই স্টেজ অন্ধকার হয়ে যাবে। তারপর যেমন যেমন বলেছি, চুপি চুপি গিয়ে বাঁশের মাচায় শুয়ে পড়বে। ব্যস, তোমার পার্ট শেষ। মনে আছে?
আজ্ঞে সব মনে আছে। বড়ো একটা ঘাড় নাড়ল পাটালি। এখন আমি বসছি।
পালা শুরুর মুখটায় খুব হুটোপাটি হয়। অন্য কোনো দিকে তাকাবার সময় হয় না। আজ কিন্তু নিবারণ হাজরার অন্যদিকে মন নেই। খবর পাচ্ছেন, টিকিট বিক্রি ভালো নয়। মেরে কেটে হাজার দেড়েক টাকা। আশা ছিল অন্যরকম কিছু হবে। সকালেই মাইক নামিয়ে প্রচার করিয়েছেন। ‘ভূত বাংলো’—য় আজ জ্যান্ত ভূত আনা হচ্ছে। যাত্রাজগতে এই প্রথম। জ্যান্ত ভূত দেখার এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করবেন না।
নাঃ, এত করেও ঠিক জমল না। রাত প্রায় আটটা বাজতে চলল। ফার্স্ট বেল পড়ব পড়ব। নিবারণ হাজরা দেখলেন দর্শকাসনের চার আনা ভরতি হয়েছে মোটে। ছেলে কোলে কিছু বউ—ঝি এসেছে। কিছু ছোকরা গুলতানি করছে। আর বাবা—কাকারা যাদের অনেক রাত অবদি এমনিতে ঘুম হয় না তারা এসেছে রাত কাটাতে।
এমন চিন্তার ভেতরেই ফার্স্ট বেল পড়ে গেল। আজ খুব ঘর—বার করছেন। ছেলেটা পারবে তো? না ডুবিয়ে দেবে? বড়ো একটা ঝুঁকি নেওয়া হয়ে গেল। ঝমঝম করে কনসার্ট বাজছে। একবার তাড়াতাড়ি টিকিট কাউন্টার থেকে ঘুরে এলেন নিবারণ হাজরা। কাউন্টারের সামনেটা শূন্য খাঁ খাঁ। নাঃ, প্রচারেও কোনো কাজ হয়নি। লোকের এতেও আর বিশ্বাস নেই। ফিরে আসতে আসতেই থার্ড বেলও পড়ে গেল।
স্টেজ অন্ধকার। কনসার্ট থেমে গেছে। টেপে ঝিঁঝি পোকা ডাকছে। এরপরেই শিয়ালের ডাক শোনা যাবে। পরিবেশ তৈরি। অন্ধকারে নিবারণ হাজরা ডিরেক্টর নবনী অধিকারীর গলা পেলেন। চাপা গলায় ডিরেক্টর বলছে, ছেলেটা গেল কোথায়?
কে একজন বলল, কোন ছেলেটা?
ডিরেক্টর ধমক দিয়ে বললেন, ভূত। ভূত কোথায়?
ওই তো স্টেজে উঠছে সে।
অন্ধকারেও দেখা গেল। স্টেজে উঠে পাটালি দাস বাঁশের মাচায় গিয়ে শুয়ে পড়ছে। চাপা গলায় ডিরেক্টর বলল, ডিমার।
সঙ্গে সঙ্গে আবছা হলুদ আলোটা জ্বলে উঠল। ফোকাসটা ভাঙা ভাঙা পাঁচিলের ওপর। ওই তো পাটালি শুয়ে আছে। আশ্চর্য পাটালি না ভূত? কে বলবে ও ভূত নয়। ওরকম মানুষের চেহারা হয় নাকি। বলে না—দিলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। মেকআপ ম্যান শম্ভু পালের হাতযশ আছে বলতে হবে।
চারপাশ থমথম করছে অন্ধকারে। দর্শকদের মুখে একটাও কথা নেই। একটা কী হয় কী হয় ভাব। এর মধ্যে হিরো—হিরোইন স্টেজে এসে গেছে। তাদের চোখে—মুখে ভয় আর আতঙ্ক। যদিও ভূতের দিকে তাদের চোখ পড়ার কথা নয়। বনের মধ্যে এক ভাঙা ভূত বাংলোই ভয় ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। ভয়ের গলায় এবার ডায়ালগ শুরু করবে হিরোইন।
কিন্তু তাদের কিছু বলার আগেই একটা ঘটনা ঘটল। পাটালি দাস শোয়া থেকে আধখানা শরীর তুলল। এরকম তো হওয়ার নয়। কিন্তু যা নয় তাই হল এখন। পুরো উঠে বসল ছেলেটা। শুধু বসাই নয়, মুখ হাঁ করে ধবধবে সাদা দাঁত দিয়ে ভয়ংকর একটা হাসি হেসে উঠল সে। সেই ভয়ার্ত হাসি ছড়িয়ে পড়ল অন্ধকারে।
খিল খিল। খিল খিল। খিল খিল।
সাতঘাটের জল খাওয়া নিবারণ হাজরার বুক গেল কেঁপে।
মিউজিক পার্টি সেতারের ওপর ছড় টানতে ভুলে গেল। হিরোইনের শুধু ভয় পাবার কথা। কিন্তু ভয়ের বদলে সে ঠক ঠক করে কেঁপে উঠল। বউ—ঝিদের কোলে যেসব বাচ্চাদের ঘুম আসব আসব হচ্ছিল তারা চিল্লে কান্না জুড়ে দিল। দর্শকরাও যেন হতবাক। হাসি শেষ করে ভূত শুয়ে পড়তেই ক্ল্যাপ—ক্ল্যাপ—ক্ল্যাপ। হাততালি যেন থামতেই চায় না।
যাত্রাপালায় একটা কথা আছে। শুরুটা যদি ঠিকঠাক উতরে যায় তাহলে সে পালা জমে যাবেই। নাম ছড়াবে লোকের মুখে মুখে। ভালো বায়না হবে। ম্যানেজার নিবারণ হাজরা ভাবলেন, ওই নতুন ছোকরাকে খাওয়াপরা বাদে দু—হাজার টাকা মাইনে দেবেন।
কিন্তু তার আফশোস হল এমন জিনিস হাজার হাজার দর্শকদের দেখাতে পারলেন। তিনি এতদিন যে যাত্রাপালায় আছেন তা তো শুধু টাকা কামাবার জন্যে নয়। যাত্রা শেষ হলে দর্শকদের চোখ—মুখের আনন্দ উচ্ছ্বাসটিও তিনি দেখে আনন্দ পান। আজও তাই তিনি গেটে দাঁড়িয়েছিলেন। আর তখনই অঘটনটা ঘটল। দর্শকরা বাড়ি ফেরার বদলে তাকে ঘিরে হইচই লাগিয়ে দিল।
কী ব্যাপার?
না ‘ভূত বাংলো’ পালাটাই আর একবার শো করতে হবে।
নিবারণ হাজরা বললেন, তা কী করে হয়। সব ঠিক হয়ে আছে। পোস্টার পড়ে গেছে। কিছু টিকিটও বিক্রি হয়েছে ‘মরণ কামড়’—এর।
রাখুন মশাই আপনার ‘মরণ কামড়’, ওসব আপনার আর চলবে না। আমরা ‘ভূত বাংলো’—র জ্যান্ত ভূতই দেখতে চাই আবার।
রাত বারোটায় চারদিক সরগরম। ‘ভূত বাংলো’ নিয়ে আবদার। এমন অবস্থায় কোনোদিন পড়েননি নিবারণ হাজরা। ভবতারিণী নাট্যসমাজের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। এই রাতে এত লোকই বা কোথা থেকে। শেষমেস তারা কথা আদায় করে চেলে গেল।
৫
পরদিন ছমছমপুর সরগরম। ভূতের এখনও এত ডিমান্ড। ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করা পাটালি দাসের কথাই হচ্ছিল। ছেলেটার ভেতরে এত এলেম ছিল জানতে পারেনি কেউ।
ম্যানেজার নিবারণ হাজরাও পাকা লোক। দর্শকের উত্তেজনা আগেই টের পেয়েছেন। সেটাকেই উসকে দিতে মাইক দিয়ে প্রচার শুরু হয়ে গেল পরদিন সকাল থেকেই।
‘…দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে ভবতারিণী নাট্যসমাজের ‘ভূত বাংলো’ পালাটি আজ রাতেও অভিনীত হইবে। দশ বছরের কম কোনো শিশু কিংবা হার্টের অসুখ আছে তেমন মানুষদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হইয়াছে…’
ব্যস আগুনে যেন ঘি পড়ল, টিকিট ছিল পাঁচ হাজার। বেলা বারোটার মধ্যে সব শেষ। ডেকরেটরকে বলে এক্সট্রা চট পাতানো হল। তাতে আরও হাজার দুয়েক দর্শক আঁটতে পারে।
সন্ধে ছ—টা বাজতে—না—বাজতেই হই হই কাণ্ড। পাল পাড়ার মাঠের যাত্রা উপলক্ষ্যে একটি তেলেভাজার দোকান টিমটিম করে চলছিল। সেটা বেড়ে হল চারটে। বাদাম ভাজার দোকান দুটো। একটা উনুনে কড়ায় তেল চেপেছে। তেলে পাঁপড় ছাড়তে যা দেরি। হু হু করে বিক্রি হচ্ছে পাঁপড়। ওদিকে কোথা থেকে খবর পেয়ে কে জানে দুটো ফুচকাওয়ালাও শো—কেস ভরতি ফুচকা নিয়ে হাজির। আটটায় শো শুরু হবে। তার আগেই প্রায় সব মাল শেষ।
বলতে বলতে ফার্স্ট বেল পড়ে গেল। কনসার্টও শুরু হয়ে গেল। ওদিকে গেটের পর্দা সরিয়ে দর্শক ঢুকছে তো ঢুকছেই। স্টেজম্যান একবার স্টেজ দেখে গেল। লাইটম্যান লাইট চেক করছে। পাশে দাঁড়িয়ে সব লক্ষ করছেন নিবারণ হাজরা। নয় নয় করে পঁচিশ বছর পালা করছেন তিনি। একসঙ্গে এত দর্শক কোনোদিন দেখা যায়নি। এত ভিড় দেখে মাথাই ঘুরে গেছল তার। কখন সময় গড়িয়ে গেছে, থার্ড বেল পড়তে খেয়াল হল।
স্টেজ অন্ধকার। ঝিঁঝি ডাকা শুরু হয়ে গেছে। টেপে এবার শেয়ালের ডাকও শোনা যাবে। এখন চাপা গলায় নবনী অধিকারীর নাম ধরে ডাকতে গেল। কিন্তু কাজের সময় নামটাই মনে আসছে না। তাই বুঝি চাপা গলায় ডিরেক্টর বলল। ভূত কোথায় ভূত?
অন্ধকারে বোধ হয় পাশেই দাঁড়িয়েছিল পাটালি। সে একটু বিরক্ত না—হয়ে বলল, এই তো স্যার। আমি।
যাও যাও, স্টেজে গিয়ে শুয়ে পড়ো।
সে বাঁশের মাচায় গিয়ে শুতেই ডিরেক্টর লাইটম্যানকে নির্দেশ দিল, ডিমার।
বলার সঙ্গে সঙ্গে আবছা আলোটা জ্বলে উঠল। ওই তো পাটালি দাস শুয়ে আছে। এখন দেখলে কে বলবে ও আসলে একটা মানুষ। এবার স্টেজে অ্যাপিয়ার করছে হিরো আর হিরোইন। সব বলা—কওয়া আছে। বলা না—থাকলেও সবই তো মুখস্থ থাকার কথা। ওই তো ঘাড় তুলে আধশোয়া হচ্ছে পাটালি। ভূত বাংলোর ভূত জেগে উঠছে বুঝি। চারপাশে কোনো শব্দ নেই। এত যে দর্শক কেউ টুঁ শব্দটি করছে না।
ঠিক তখনই খিল খিল খিল খিল শব্দে ভয়ংকর হাসিটা হেসে উঠল পাটালি। ভয়ে বুকের রক্ত জল হয়ে যাবার কথা। ভাগ্যিস জানা ছিল যে ওটা ভূত নয়, মানুষ।
নিবারণ হাজরা দেখলেন হিরোইন কালকের মতো আর চমকে ওঠেনি। শুধু ভয়টাই মুখে লেপটে যাচ্ছে। ওটাই তো দরকার। ওই ভয় নিয়েই পরের ডায়ালগ, ‘আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে’ কথাটা বলবে।
হিসেবমতো সব ঠিক ঠিক চলছে। ডায়ালগটা বলা শেষ হয়েছে কি হয়নি তখনই কে যেন অন্ধকার থেকে বলল, তেষ্টা পেয়েছে বুঝি?
কে বলল কথাটা? এটা তো ডায়ালগে ছিল না। আবছা আলোয় দেখা গেল শুয়ে পড়ার বদলে পাটালি দাস উবু হয়ে বসেছে। শুধু বসাই নয়, নতুন ডায়ালগটা তার মুখ থেকেই বেরিয়েছে বোঝা গেল।
তেষ্টা পেয়েছে বুঝি, বেশ বেশ। বলতে বলতে শূন্যে হাতটা তুলল পাটালি। আর কী আশ্চর্য, অন্ধকারে শূন্য থেকে তার হাতে চলে এল এক গেলাস জল। শুধু আনাই নয়, এবার হাতে ধরা জলের গ্লাসটি বাড়িয়ে দিল হিরোইনের দিকে।
এসব কী হচ্ছে? অভিনয় করার সময় কেউ ডায়ালগ ভুল বললে অন্য সহঅভিনেতা তা ম্যানেজ করে নেয়। কিন্তু এখানে তেমন কিছু করার কথা মনেই আসছে না। ওদিকে পাটালির হাতে ধরা এক গেলাস জল। তেষ্টা মেটাবার জন্য সেই জল হাত বাড়িয়ে নেবার কথা হিরোইনের। তো সে যখন এগিয়ে আসছে না। তখন তেষ্টার জল তার দিকেই এগিয়ে যাবার কথা। হলও তাই।
নাও ধরো। বলে হাত বাড়িয়ে ধরল পাটালি দাস। হাতটা তার বাড়ছে… আরও বাড়ছে… লম্বা হচ্ছে… বাড়তে বাড়তে সেটা এবার গিয়ে পৌঁছাল দশ হাত দূরে হিরোইনের মুখের সামনে।
এর পরেও আর দাঁড়িয়ে থাকা যায়! ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে স্টেজের ওপর পড়ে গেল হিরোইন। তেমনটা দেখেই আবার সেই আগের হাসিটা হাসল পাটালি। আর তারপর কাজ শেষ হয়েছে দেখে সে শুয়ে পড়ল।
এমন কাণ্ডে হাততালি পড়বে সে তো জানা কথা। সে হাততালি যেন থামতেই চায় না। নিবারণ হাজরাও চোখের সামনে এসব দেখলেন। যাত্রাপালা নয়, যেন ম্যাজিক দেখলেন। দর্শকরা না—বুঝুক, তিনি তো বুঝবেন। কিন্তু তিনিও বুঝতে পারছেন না। অন্ধকারে জল ভরতি একটা গেলাস পাটালি দাসের হাতে এল কী করে? দু—ফুট মাপের একটা হাত বাড়তে বাড়তে দশ ফুট দূরে পৌঁছলোই বা কী করে?
কিন্তু এসব ভাবার তখন সময় কোথা? পালা জমিয়ে দিয়েছে পাটালি। এবার শুধু দেখে যাওয়া। রাত বারোটায় শেষ হল যখন তখন চারপাশে লোকে লোকারণ্য। গ্রামের মুরুব্বি বিশাল দত্ত স্টেজে উঠে ঘোষণা করলেন, হাজার টাকা নগদ পুরস্কার দেবেন পাটালি দাসকে। আহা ভূতের ভূমিকায় যা ফাটাফাটি অভিনয় করেছে ছেলেটা।
তখনই খোঁজ পড়ল পাটালির। খোঁজ খোঁজ। কোথায় গেল সে? সে কোথাও নেই। তার বদলে পাওয়া গেল পাটালির মাকে।
কোথায় তোমার পাটালি আদুরি?
সে তো আমিই জানতে এয়েচি আজ্ঞে। অবাক গলায় নিবারণ হাজরাকে বলল, সেই সে আপনার সঙ্গে বাড়ি ছাড়ল তারপর দু—দিন তো তার পাত্তাই নেই। লোকের মুখে খপর পেলুম ছেলেটা আজও নাকি ভূত সেজে পালায় নেবেছে।
দু—দিন ফেরেনি? ভারি অবাক হলেন নিবারণ হাজরা। ছেলেটা মাঝখানে বেপাত্তা হয়ে গেল কী করে?
এমন যখন ভাবছেন তখনই খোঁজ পাওয়া গেল। ডেকরেটরের লোকেরা চট খুলছিল। তারাই গ্রিনরুম থেকে চিৎকার করল, পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে।
নিবারণ হাজরা গ্রিনরুমে ঢুকে দেখলেন, চটের থলে জড়িয়ে—মড়িয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে পাটালি। ওদিকে স্টেজ থেকে মাইকে ডাকা হচ্ছে পাটালি দাস। পাটালি দাস তুমি যেখানেই থাকো চলে এসো।
নিবারণ হাজরা গলা তুলে বললেন, অ্যাই ওঠ, ওঠ।
অমন ডাকে ধড়মড় করে উঠে বসল পাটালি। দু—হাতে ভালো করে চোখ ডোলে নিয়ে বলল, এবার বুঝি এসটেজে যেতে হবে?
সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। স্টেজে যাবি মানে?
আজ্ঞে হ্যাঁ। পাটালি লজ্জায় জিব কাটল। গায়ে রং টং মাখানো হতে আমি এখেনে বসলুম। বসার পর মনে হল একটু শুই। শুতেই তো ঘুম এসে বসল চোখে। সেই ঘুম ভাঙল এখন। আমার কি দেরি হয়ে গেল নাকি?
তার মানে? চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালেন নিবারণ হাজরা। তার মানে দুটো দিন তুই পড়ে পড়ে এখানে ঘুমিয়েছিস?
উত্তর দিল আদুরি। বলল, তাই—ই তাই। একবার ঘুমুলে দু—দিনের আগে ওর ঘুম ভাঙে না।
তাহলে ভূতের ভূমিকায় দু—দিন প্লে করল কে?
সবাই যখন এ ওর মুখ চাওয়া—চাওয়ি করছে তখন এগিয়ে এল পঞ্চায়েত সদস্য গুলু মাইতি। একগাল হাসি নিয়ে বলল, আপনারা আসল কথাটাই ভুলে গেলেন দেখছি।
আসল কথা?
আসল কথা হল, এ গাঁ—টার নাম ছমছমপুর।