গল্প-পরিচয় – শোভন বসু

গল্প-পরিচয়

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গল্পসংগ্রহ’ গ্রন্থে সঙ্কলিত হয়েছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ে এ যাবৎ সংগৃহীত অলৌকিক অতিলৌকিক, প্রেম, সামাজিক, হাস্যকৌতুক প্রভৃতি বিচিত্র রসের গল্পগুলি। এই গল্পগুলি পূর্বে লেখকের বিভিন্ন ছোটগল্প গ্রন্থে এবং শরদিন্দু অম্‌নিবাস পঞ্চম-সপ্তম খণ্ড এবং একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছিল। এ ছাড়া ‘প্লেগ’ ও ‘রূপসী’ নামে দুটি অগ্রন্থিত গল্প বর্তমান সঙ্কলনে যুক্ত করা হল।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শরদিন্দুবাবুর সকল গল্পই সংগ্রহ করা এখনও সম্ভব হয়নি। কয়েকটি রচনার নাম এবং যে-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল লেখকের নোটখাতা থেকে তা জানা গেলেও সেই পত্রিকাগুলির সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে খোঁজ পেলে সেই রচনাগুলি শরদিন্দু অম্‌নিবাসের সংশ্লিষ্ট খণ্ডে ও বর্তমান সঙ্কলনের পরবর্তী মুদ্রণে যোগ করা যাবে।

শরদিন্দুবাবুর লেখা প্রথম ছোটগল্প হল একটি অলৌকিক কাহিনী—‘প্রেতপুরী’ (১৯১৫, বাংলা ১৩২২ সন)। লেখকের বয়স তখন ষোল বছর। এই প্রথম গল্পেই তিনি ভূতজ্ঞানী বরদার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। প্রথম দিকের ভূতের গল্পগুলি মূলত বরদারই কাহিনী। অধিকাংশ গল্পের পশ্চাৎপট মুঙ্গের শহর ও বিহারের গ্রামাঞ্চল। বরদার গল্প বলার একটি নিজস্ব ভঙ্গি ছিল। গোড়াতেই চমকপ্রদ একটা কথা বলে সে শ্রোতাদের হতবুদ্ধি করে দিত তারপর শ্রোতারা সামলাইয়া ওঠবার আগেই গল্প শুরু করত। তখন আর তাকে থামানোর উপায় ছিল না। এইভাবেই সে অল্পকালের মধ্যে পাঠকদের মনে আসন পেতে বসে। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের সঙ্গেও একবার ভূতাম্বেষী বরদার সাক্ষাৎ হয়েছিল। বরদার ভাগ্য কিন্তু ব্যোমকেশের মতো ভাল ছিল না। প্রায় পনেরো বছরের ব্যবধানের পর লেখক ব্যোমকেশ কাহিনীর দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভূতের গল্প সম্বন্ধে লেখকের “একটু দুর্বলতা” থাকলেও মৃত্যুর অল্পকাল পূর্বে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি আমায় বলেছিলেন, ‘নতুন কোন আইডিয়া না পেলে ভৌতিক গল্প আর লিখব না। আসলে বরদাই আমাকে ছেড়ে গেছে, আমি বরদাকে ছাড়িনি।’ এবং ‘বরদা চরিত্রটি কাল্পনিক।’

‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ গ্রন্থের ভূমিকায় শ্রীজগদীশ ভট্টচার্য শরদিন্দুবাবুর ভূতের গল্প সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন: ‘ভূতের ভয় মানুষের সংস্কারগ্রস্ত মনকে আদিম যুগ থেকে অধিকার করে আছে। ভয় যেমন প্রবল, আকর্ষণও তেমনি দুর্বার। কিন্তু ভৌতিক রহস্য চিরদিনই অন্ধকারে আবৃত। এ যুগের মানুষের বৈজ্ঞানিক কৌতুহল এই অন্ধকারকে আলোকিত করবার জন্যে অলৌকিক লোকেও তার বুদ্ধির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ভৌতিক রহস্যলোকে কবিকল্পনা চিরদিনই প্রসারিত হয়েছে। আমাদের ত্রৈলোক্য মুখজ্জের ভূতুড়ে গল্প থেকে পরশুরামের ‘ভূশণ্ডীর মাঠে’র রসিকতা পর্যন্ত বিচিত্র রসের অনেক ভৌতিক কাহিনী লিখিত হয়েছে। শরদিন্দুবাবুর ভূতের গল্পে ভয়ের চেয়ে বিস্ময়ের উপাদানই বেশী। ফলে সেগুলোতে ভয়ানক-রসের চেয়ে অদ্ভুত-রসেরই পরিবেশন। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত বলেছিল, ‘মৃত্যুর পরপারের ইতিহাসটা যদি কোন উপায়ে শুনিয়া লইতে পারা যায়, তবে তার চেয়ে লাভ আর কি আছে? তা সে যে-ই বলুক এবং যেমন করিয়াই বলুক না।’ শরদিন্দুবাবু জন্মজন্মান্তরের জীবনধারাকে সাহিত্যে গ্রথিত করে রেখেছেন। মৃত্যু ও পুনর্জন্মের মধ্যেকার তমসাবৃত জীবনরহস্য স্বভাবতই তাঁকে আকর্ষণ করেছে। এইখানেই তাঁর ভূতের গল্পের উৎপত্তি।’

বর্তমান সঙ্কলনে গল্পগুলি রচনাকাল অনুসারে সন্নিবিষ্ট। কয়েকটি গল্পের রচনাকাল জানা না গেলেও লেখকের নোটখাতায় যে-ক্রমে গল্পগুলি উল্লেখ করা আছে সেই ক্রমই এখানে অনুসরণ করা হয়েছে।

শরদিন্দুবাবুর গল্পগুলি যে-সব গ্রন্থে প্রথম সন্নিবেশিত হয় (গোয়েন্দা, ঐতিহাসিক ও কিশোর কাহিনী বাদে) তাদের পরিচয় এখানে দেওয়া হল। সব গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি; গ্রন্থের যে সংস্করণ পাওয়া গেছে তারই বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, কতকগুলি ছোটগল্প শরদিন্দুবাবুর জীবৎকালেই একাধিক গল্পগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। ইতিপূর্বে এধরনের অন্তর্ভুক্তির কথা যথাসাধ্য নির্দেশ করা হয়েছে শরদিন্দু অম্‌নিবাস সপ্তম খণ্ডের গল্প-পরিচয় অংশে। কয়েকটি ক্ষেত্রে বানানে সমতা আনা, কয়েকটি ক্ষেত্রে আধুনিক বানানরীতি অনুসরণ করা ছাড়া লেখকের ব্যবহৃত বানান-ই এই সঙ্কলনে রাখা হয়েছে।

চুয়াচন্দন। রমেশ ঘোষাল। দ্বিতীয় সংস্করণ, ফাল্গুন ১৩৫২। পৃ. [৪] + ১৫৮ +৪। মূল্য তিন টাকা।

প্রথম প্রকাশ—অগ্রহায়ণ ১৩৪২।

সুচী ॥ বাঘের বাচ্চা; রক্ত-খদ্যোত; কর্তার কীর্তি, রক্ত-সন্ধ্যা; মরণ-ভোমরা; চুয়াচন্দন।

গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স কর্তৃক প্রকাশিত তৃতীয় সংস্করণে (অগ্রহায়ণ ১৩৬২) ‘দেখা হবে’ নামে গল্পটি যুক্ত হয়।

বর্তমান সঙ্কলনে তিনটি গল্প—রক্ত-খদ্যোত, কর্তার কীর্তি, মরণ-ভোমরা—গৃহীত হয়েছে।

‘রক্ত-খদ্যোত’ গল্পের শেষ কয়েক পংক্তির ভাবাংশ স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের একটি গল্প হইতে গৃহীত হইয়াছে।’ (লেখকের নোট্‌স)

বুমের‍্যাং। কাত্যায়ণী বুক স্টল। প্রথম সংস্করণ, ১৩৪৫। পৃ. [৬] + ২০৩। মূল্য দুই টাকা। উৎসর্গ ॥ বাংলার মাসিক পত্রিকা/সম্পাদক মহোদয়গণের/করকমলে

“অস্ট্রেলিয়ান্‌ বুমের‍্যাং ছোঁড়া শিখি,

নবীন লেখক আমি—

রচনা পাঠাই সম্পাদকের কাছে,

ফিরে আসে পুনরায়

বাঁকা বুমের‍্যাং ঠিক।”

—চন্দ্রহাস

সূচী ॥ আদিম নৃত্য; ভেন্‌ডেটা; সবুজ চশমা; বহুবিঘ্নানি; তিমিঙ্গিল; প্রতিদ্বন্দ্বী; অশরীরী; জটিল ব্যাপার; কেতুর পুচ্ছ; মনে মনে; বহুরূপী; হাসি-কান্না; গ্রন্থকার; তন্দ্রাহরণ; শালীবাহন; অমরবৃন্দ; ব্রজলাট।

‘এই সংগ্রহের একাধিক গল্প বুমের‍্যাং জাতীয়। কিন্তু সন্তানের প্রতি মমতা স্বাভাবিক, তাই আপিলে উহাদের চরম আদালতের সম্মুখে উপস্থিত করিলাম। স্থির করিয়াছি, আপিলেও যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে উহাদের ত্যাজ্যপুত্র করিব; অপত্য স্নেহ আমাকে কর্তব্য পথ হইতে বিচলিত করিতে পারিবে না।’—ভূমিকা।

‘‘অশরীরী’ লিখিবার সময় দ্য-মোপাসাঁর ‘La Horla’ নামক গল্পটি মনের পশ্চাৎপটে বিদ্যমান ছিল। উভয় গল্পই ডায়েরীর আকারে লেখা—কিন্তু বিষয়বস্তুতে কোনো মিল নাই। ‘অশরীরী’-কে দ্য-মোপাসাঁর ভাবানুপ্রেরণায় লিখিত বলা যাইতে পারে।’ (লেখকের নোট্‌স)

কাঁচামিঠে। ডি. এম. লাইব্রেরী। প্রথম সংস্করণ, বৈশাখ ১৩৪৯। পৃ. [৬] + ২০৪। মূল্য দুই টাকা। উৎসর্গ ॥ রসিক ও রাসায়নিক বন্ধু/ডাক্তার বীরেন্দ্রকুমার নন্দী/করকমলেষু।

সূচী ॥ বিজয়ী; উল্কার আলো; মায়ামৃগ; সন্ধি-বিগ্রহ; শীলা-সোমেশ; মরণ দোল; ভল্লু সর্দার; ইতর-ভদ্র; দৈবাৎ।

‘বিজয়ী’ গল্পটির জন্য লেখক ‘পুষ্পপাত্র’ পত্রিকা থেকে পাঁচ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। ‘সাহিত্য হইতে ইহাই আমার প্রথম উপার্জন।’ (ডায়েরী, ৩.১.১৯৫১)

‘ভল্লু সর্দারের প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল। ভল্লুর প্রেম বলে একটি গল্প লেখার ইচ্ছেও হয়েছিল। প্ল্যানও করেছিলাম; তবে লেখার মুড আর আসেনি।’ (সাক্ষাৎকার, মার্চ ১৯৭০, দ্র. ‘জীবনকথা’, শরদিন্দু অম্‌নিবাস, দ্বিতীয় খণ্ড (চতুর্বিংশ মুদ্রণ, পৌষ ১৪০৪, পৃ. ৬৩৮)

কালকূট। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স। প্রথম সংস্করণ, মাঘ ১৩৫১। পৃ. [২] + ১৫৭| মূল্য দুই টাকা।

সূচী। টিকটিকির ডিম; কালকূট; ট্রনে আধঘণ্টা; আঙটি; বিদ্রোহী; স্বখাত সলিল; অভিজ্ঞান; একূল ওকূল; মন্দ লোক; প্রতিধ্বনি; নিশীথে; রোমান্স।

দ্বিতীয় সংস্করণে (আষাঢ় ১৩৫৭) ‘দেহান্তর’ ও ‘পূর্ণিমা’ নামে দুটি গল্প যুক্ত হয়।

দন্তরুচি। এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স লিঃ। পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ, পৌষ ১৩৬২। পৃ. [৪] + ১৬৫। মূল্য দুই টাকা আট আনা।

প্রথম সংস্করণ রমেশ ঘোষাল কর্তৃক প্রকাশিত; ১৩৫২।

সূচী ॥ অপরিচিতা; অযাত্রা; অলৌকিক; আরব সাগরের রসিকতা; আদায় কাঁচকলায়; ইচ্ছাশক্তি; এপিঠ ওপিঠ; কুতুব-শীর্ষে; কুলপ্রদীপ। গ্যাঁড়া; ঝি; টুথব্রাশ; দন্তরুচি; ধীরে রজনি; ধীরেন ঘোষের বিবাহ; নাইট ক্লাব; নারীর মূল্য; প্রণয় কলহ; প্রেমিক; প্রেমের কথা; বনমানুষ; বরলাভ; ভালবাসা লিমিটেড; মাৎস্যন্যায়; মেথুশীলা; লম্পট; শাপে বর; শুক্লা একাদশী; শ্রেষ্ঠ বিসর্জন; সন্দেহজনক ব্যাপার; স্বর্গের বিচার; স্বাধীনতার রস।

‘এই পুস্তকের একত্রিশটি গল্পে আকারগত হ্রস্বতা ছাড়া আর কোনও ঐক্য নাই; কেবলমাত্র দৈহিক ক্ষুদ্রতার অপরাধে ইহারা এক শ্রেণীভুক্ত হইয়াছে। অর্থাৎ একদল বেঁটে মানুষকে জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে যদি একই পংক্তিতে বসিয়া আহার করিতে বাধ্য করা হয়, ইহাদের দশাও তাই।

উপরন্তু গল্পগুলিকে গুণানুক্রমিক কোনও প্রাধান্য না দিয়া কেবল নামের বর্ণানুক্রমে সাজানো হইয়াছে। ইহাতে পাঠকের সুবিধা হইবে কিনা জানি না, কিন্তু প্রকাশকের সুবিধা এই যে কাগজের দুর্মূল্যতার দিনে সূচী ছাপিতে হইবে না।

কয়েকটি গল্পে ‘আমি’ নামক কিম্ভূত ব্যক্তি গল্পের বক্তা। এই ‘আমি’-কে গ্রন্থকার মনে করিলে ভ্রম হইবে। বস্তুতঃ এই ‘আমি’ এক ব্যক্তি নয়,—গল্পভেদে তাহাদের বয়স, চরিত্র, দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণ পৃথক।”—ভূমিকা।

ভূমিকায় একত্রিশটি গল্পের উল্লেখ থাকলেও দ্বিতীয় সংস্করণে মোট বত্রিশটি গল্প আছে। গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ দেখার সুযোগ হয়নি। মনে হয় এই ভূমিকাটি প্রথম সংস্করণে মুদ্রিত ছিল এবং পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণে একটি নূতন গল্প যুক্ত হয়।

পঞ্চভূত। বেঙ্গল পাবলিশার্স। প্রথম সংস্করণ, আশ্বিন ১৩৫২ পৃ. [৪] + ১১৮। মূল্য এক টাকা বারো আনা।

সূচী ॥ পঞ্চভূত; ঘড়ি; অরণ্যে; রূপকথা; পিছু ডাক।

প্রথম গল্পটি রেবতীভূষণ কর্তৃক চিত্রিত।

গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স কর্তৃক প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে (আশ্বিন ১৩৬০) ‘পরীক্ষা’ গল্পটি যুক্ত হয়।

গোপন কথা। বেঙ্গল পাবলিশার্স। প্রথম সংস্করণ, মাঘ ১৩৫২। পৃ. [৪] + ১৫৬। মূল্য আড়াই টাকা।

উৎসর্গ ॥ যিনি আমার সকল গোপন কথাই জানেন, যাঁর কাছে সব বিষয়েই ধরা পড়িয়া গিয়াছি, তাঁহাকেই এই গ্রন্থখানি অকপটতার নিদর্শনস্বরূপ উৎসর্গ করিলাম।

সূচী ॥ গোপন কথা; অন্ধকারে; দুই দিক; আলোর নেশা; যস্মিন্ দেশে; ভাল বাসা; অসমাপ্ত; ভূতোর চন্দ্রবিন্দু; মুখোস; সেকালিনী; দিগ্‌দর্শন; বাঘিনী।

শ্রেষ্ঠ গল্প। অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত। বেঙ্গল পাবলিশার্স। দ্বিতীয় সংস্করণ, শ্রাবণ ১৩৫৮। পৃ. [8] + দ. + ২৬৮। মূল্য পাঁচ টাকা।

সূচী ॥ প্রাগ্‌জ্যোতিষ; সেতু; তন্দ্রাহরণ; রক্ত-সন্ধ্যা; চুয়াচন্দন; ভল্লু সর্দার; হাসি-কান্না; অমরবৃন্দ; গোপন কথা; বহুরূপী; মন্দ লোক; আঙটি; মাকড়সার রস; অগ্নিবাণ; অমিতাভ।

বর্তমান সঙ্কলনে তন্দ্রাহরণ, ভল্লু সর্দার, হাসি-কান্না, অমরবৃন্দ, গোপন কথা, বহুরূপী, মন্দলোক, আঙটি গল্পগুলি গৃহীত।

এই গ্রন্থের শ্রীজগদীশ ভট্টাচার্য লিখিত দীর্ঘ মনোজ্ঞ ভূমিকাটি সম্পর্কে শরদিন্দুবাবু মন্তব্য করেছেন: ‘এবার পূজার সময় আমার শ্রেষ্ঠ গল্পের একটি সংগ্রহ পুস্তক বাহির হইয়াছে। গল্পগুলি পাঠক সাধারণের পরিচিত কিন্তু এই গ্রন্থে জগদীশ ভট্টাচার্য যে ভূমিকা লিখিয়াছেন অনেক দিক দিয়া তাহা নূতন। (ডায়েরী, ৬ নভেম্বর ১৯৪৮)’

শাদা পৃথিবী। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স। প্রথম সংস্করণ, ১৩৫৫। পৃ. [৮] + ১৬৬। মূল্য তিন টাকা।

সূচী ॥ মায়া কানন; স্মর-গরল; ছুরি; আকাশবাণী; নিষ্পত্তি; শাদা পৃথিবী; ভাগ্যবন্ত; মেঘদূত; তক্ত্‌ মোবারক; বালখিল্য; ইন্দ্রতূলক; যুধিষ্ঠিরের স্বর্গ।

এর মধ্যে দুটি গল্প—তক্ত্‌ মোবারক ও ইন্দ্রতূলক ‘ঐতিহাসিক কাহিনী সমগ্র’ গ্রন্থে যুক্ত হয়েছে।

গ্রন্থকারের নিবেদন-এর অংশবিশেষ:

‘…‘মায়া কানন’ বঙ্কিম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘প্রবাসী’তে মুদ্রিত হইয়াছিল।…

‘শাদা পৃথিবী’ রচনাটি ঠিক গল্প নয়; উহা আমার মনের উপর আণবিক বোমার প্রতিক্রিয়া। রচনাটি পড়িয়া পাঠকের মনে হইতে পারে, উহা অবান্তর। পাঠককে স্মরণ রাখিতে বলি যে আণবিক বোমা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যজাতির জীবনের ধারা পরিবর্তিত হইয়াছে। অতীতের সহিত তাহার ধারাবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হইয়াছে। আমরা অকস্মাৎ এক সম্পূর্ণ নূতন ও অপ্রত্যাশিত পরিবেশের মধ্যে উপস্থিত হইয়াছি। মানুষ যেদিন প্রথম কৃষি আবিষ্কার করিয়াছিল সেদিনও তাহার জীবনের ধারা এমনি অকস্মাৎ মোড় ঘুরিয়া গিয়াছিল। তফাৎ এই যে, কৃষি মানুষের জীবন-সম্ভাবনাকে বাড়াইয়া দিয়াছিল, আণবিক বোমা করিয়াছে ঠিক তাহার বিপরীত। ‘শাদা পৃথিবী’ আষাঢ়ে গল্প নয়, ভবিষ্যৎদ্বাণীও নয়, ইহা আশঙ্কাসঞ্জাত সৰ্তবাণী।…’

কালিদাস রায়ের মন্তব্য:

‘…‘মায়াকানন’ বঙ্কিমের কল্পকানন বিহার—নূতন টেকনিকের রচনা, ‘অমরবৃন্দে’র সগোত্র। স্মর-গরল অপূর্ব।…রবীন্দ্রনাথ একস্থানে বলিয়াছিলেন—‘কলাবিদ্যা যেখানে একেশ্বরী—সেখানেই তাহার আসল গৌরব।’ আপনার গল্পগুলি আসল গল্প—ইহাতে অন্য কোন কলার মিশ্রণ নাই।” (চিঠি, তারিখ ২ মার্চ ১৯৪৯)।

‘শাদা পৃথিবী গল্পটি আমাকে বড় বিচলিত করিয়াছে—সতর্কতা বাণী—তা নয়, সতর্ক হইবার উপায় কই? প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান বলিতে পারা যায়।’ (চিঠি, তারিখ ১৫ মার্চ ১৯৪৯)

সরস গল্প। মিত্র ও ঘোষ প্রকাশ কাল মুদ্রিত নাই। পৃ. [৪] + ১৯১। মূল্য চার টাকা।

প্রথম প্রকাশ-১৩৫৯।

সূচী ॥ কর্তার কীর্তি; তিমিঙ্গিল; প্রতিদ্বন্দ্বী; আদিম নৃত্য; ভেন্‌ডেটা; মনে মনে; কুতুব-শীর্ষে; ঝি; টুথ-ব্রাশ; আরব সাগরের রসিকতা; প্রেমিক; রূপকথা; গ্রন্থিরহস্য; আধিদৈবিক; ভূত-ভবিষ্যৎ; পরীক্ষা; ভক্তিভাজন; যস্মিন্ দেশে; ভাল বাসা; অসমাপ্ত; ভূতোর চন্দ্রবিন্দু; মুখোস; সেকালিনী; এপিঠ ওপিঠ; সন্দেহজনক ব্যাপার; বহুবিঘ্নানি; জটিল ব্যাপার; গ্রন্থকার।

কানু কহে রাই। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স। প্রথম সংস্করণ, বৈশাখ ১৩৬২। পৃ. [৬] + ১৩০। মূল্য দুই টাকা আট আনান।

সূচী ॥ কানু কহে রাই; বড় ঘরের কথা; কল্পনা; অপদার্থ; নিরুত্তর; অষ্টমে মঙ্গল; ভূত-ভবিষ্যৎ; ভক্তিভাজন; গ্রন্থিরহস্য; সন্ন্যাস; নূতন মানুষ; জোড় বিজোড়।

ভূত-ভবিষ্যৎ, ভক্তিভাজন ও গ্রন্থিরহস্য পূর্বে ‘সরস গল্প’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আলোর নেশা। আর্ট ইউনিয়ন। প্রথম প্রকাশ, ১৩৬৫| পৃ. ১২৭। মূল্য দুই টাকা পঞ্চাশ নয়া পয়সা।

সূচী। আলোর নেশা; ভাল বাসা; অন্ধকারে; মুখোস; অসমাপ্ত; গোপন কথা; দিগ্‌দর্শন; যস্মিন্ দেশে; গীতা; সেকালিনী; দুই দিক্‌; ভূতোর চন্দ্রবিন্দু; বাঘিনী; চরিত্র; ঘড়িদাসের গুপ্তকথা।

গীতা, চরিত্র ও ঘড়িদাসের গুপ্তকথা বাদে অন্য গল্পগুলি পূর্বে ‘গোপন কথা’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মায়া-কুরঙ্গী। শ্রীগুরু লাইব্রেরী। দ্বিতীয় সংস্করণ, আষাঢ় ১৩৬৮। পৃ. [8] + ১৫৩। মূল্য তিন টাকা পঞ্চাশ নয়া পয়সা।

প্রথম প্রকাশ—১৩৬৫|

সূচী ॥ মায়া-কুরঙ্গী; চিরঞ্জীব; মধু-মালতী; শূন্য শুধু শূন্য নয়; সতী; নখদর্পণ; গুহা; কালো মোরগ; নীলকর।

এমন দিনে। ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং প্রাইভেট লিঃ। প্রথম সংস্করণ, ৭ই ফাল্গুন ১৮৮৩ শকাব্দ [১৩৬৯]। পৃ. [৮] + ১৮২। মূল্য তিন টাকা পঁচাত্তর নয়া পয়সা।

সূচী ॥ এমন দিনে; সাক্ষী, প্রিয় চরিত্র; সেই আমি; স্ত্রী-ভাগ্য; হেমনলিনী; পতিতার পত্র; মানবী; সুত-মিত-রমণী; আদিম।

কেবল ‘আদিম’ গল্পটি ‘ঐতিহাসিক কাহিনী সমগ্র’ গ্রন্থে যুক্ত হয়েছে।

হসন্তী। বাক্ সাহিত্য। প্রথম সংস্করণ, চৈত্র ১৩৬৮। পৃ. [৪] + ১৯৫। মূল্য চার টাকা পঞ্চাশ নয়া পয়সা।

সূচী ॥ আদিম নৃত্য; আধিদৈবিক; আরব সাগরের রসিকতা; এপিঠ ওপিঠ; কর্তার কীর্তি, কুতুব-শীর্ষে; গ্রন্থকার; গ্রন্থিরহস্য; জটিল ব্যাপার; ঝি; টুথ-ব্রাশ; তিমিঙ্গিল; প্রতিদ্বন্দ্বী; বহুবিঘ্নানি; ভক্তিভাজন; ভাল বাসা; ভূত-ভবিষ্যৎ; ভূতোর চন্দ্রবিন্দু; ভেন্‌ডেটা; মুখোস; যস্মিন্ দেশে; সন্দেহজনক ব্যাপার; সেকালিনী; কা তব কান্তা।

তৃতীয় মুদ্রণে (মাঘ ১৩৭২) শঙ্কর-এর লেখা ভূমিকা যুক্ত হয়।

কা তব কান্তা বাদে অন্য গল্পগুলি পূর্বে ‘সরস গল্প’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

শঙ্খ-কঙ্কণ। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ১৩৬৩। পৃ. [৪] + ১১২। মূল্য দুই টাকা পঞ্চাশ নয়া পয়সা।

সূচী ॥ শঙ্খ-কঙ্কণ; রেবা রোধসি; প্রত্নকেতকী।

কেবল প্রত্নকেতকী গল্পটি বর্তমান সঙ্কলনে যুক্ত।

কেন বাজাও কাঁকন। মণ্ডল বুক হাউস। প্রথম প্রকাশ, শ্রাবণ ১৩৭১। পৃ. ১১৯। মূল্য দুই টাকা।

সূচী ॥ দিগ্‌দর্শন; যস্মিন্ দেশে; সেকালিনী; গোপন কথা; অসমাপ্ত; অন্ধকারে; দুই দিক্‌; ঘড়িদাসের গুপ্তকথা; বাঘিনী; চরিত্র।

মুখবন্ধে উদ্ধৃতি :

কেন বাজাও কাঁকন কন কন কত ছল ভরে।

ওগো, ঘরে ফিরে চল কনককলসে জল ভরে ॥

বইটি কয়েকটি পুরাতন গল্পের সঙ্কলন। গল্পগুলি পূর্বে ‘আলোর নেশা’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রঙীন নিমেষ। গ্রন্থ প্রকাশ। প্রথম প্রকাশ, ফাল্গুন ১৩৭২। পৃ. [৪] + ১৫৮| মূল্য চার টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

সূচী ॥ চলচ্চিত্র প্রবেশিকা; অবিকল; ফকির-বাবা; কিষ্টোলাল; আর একটু হলেই, বোম্বাইকা ডাকু; সুন্দরী ঝর্ণা; মুষ্টিযোগ; ডিক্‌টেটর; চিড়িক্‌দাস; গোদাবরী; কিসের লজ্জা; পিছু পিছু চলে; প্রেতপুরী; মালকোষ; ছোট কর্তা; চিন্ময়ের চাকরি; কা তব কান্তা; কামিনী।

নিজের কপিতে লেখকের নিজের হাতে সংশোধনে দেখা যায় যে চার ও পাঁচ সংখ্যক গল্প দুটি সূচী এবং শিরোনামে ভুলক্রমে ‘রঙীন নিমেষ’ ও ‘খবর একটু ভালই’ নামে মুদ্রিত হয়েছে।

কা তব কান্তা গল্পটি পূর্বে ‘হসন্তী’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বইটি সম্পর্কে রমেশচন্দ্র মজুমদারের মন্তব্য: ‘…পূর্ব বাংলায় চলিত কথা আছে যে রাঁধুনীর গুণে সাধারণ দ্রব্যেরও অপূর্ব আস্বাদন হয়। আপনার বই পড়ে মনে হল—রচনার গুণে সাধারণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে কিরূপ অপূর্ব সাহিত্যরস সৃষ্টি এবং মনুষ্যচিত্তের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা যায় এ বইখানি তার একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। যেগুলি সত্য কাহিনীরূপে বর্ণনা করেছেন—তা যদি সত্য হয়—বলব অদ্ভুত; আর কল্পনার সৃষ্টি হলে বলব অপূর্ব ও সরস। ‘কিষ্টোলাল’ টাঙ্গাওয়ালা, গোদাবরী ও ডিক্‌টেটর—এই শ্রেণীভুক্ত। ভূতের গল্পগুলিও বর্ণনা চাতুর্যে অভিনব। ‘কা তব কান্তা’ সম্বন্ধে এইটুকু বক্তব্য যে বন্ধুদের মধ্যে সাময়িকভাবে পত্নী বিনিময়—গ্রীক-রোমক সভ্যতায় প্রচলিত ছিল। সুতরাং বর্তমান ও ভবিষ্যতে যাহাই হউক অতীতে হই সত্য ছিল।’ (চিঠি, তারিখ ১৯ মার্চ ১৯৬৬)

কল্পকুহেলি। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম সংস্করণ, ডিসেম্বর ১৯৬৯। পৃ. [১৬] + ২৮৮। মূল্য আট টাকা।

সূচী ॥ অশরীরী; কামিনী; কালো মোরগ; চিরঞ্জীব; ছোট কর্তা; টিকটিকির ডিম; দেখা হবে; দেহান্তর; নিরুত্তর; নীলকর; পিছু পিছু চলে; প্রতিধ্বনি; ফকির-বাবা; বহুরূপী; মধু-মালতী; মরণ-ভোমরা; মায়া-কুরঙ্গী; রক্ত-খদ্যোত; শূন্য শুধু শূন্য নয়; সতী, সবুজ চশমা।

পূর্বে প্রকাশিত কয়েকটি অলৌকিক গল্পের এই সঙ্কলনটির ভূমিকা লিখেছেন শ্রীসুভদ্রকুমার সেন। তীক্ষ্ণ বিচার-বিশ্লেষণমূলক মনোজ্ঞ এই ভূমিকার মূল অংশটি শরদিন্দু অম্‌নিবাস পঞ্চম খণ্ডের ‘গল্প-পরিচয়’ অংশে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

তৃতীয় মুদ্রণে (অগস্ট ১৯৭৫) গল্পগুলিকে রচনাকাল অনুক্রমে সাজানো এবং গল্প-শেষে রচনার তারিখ উল্লেখ করা হয়।

উত্তম মধ্যম। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম সংস্করণ, ১লা বৈশাখ ১৩৭৭। পৃ. [৮] + ১৫৫। মূল্য পাঁচ টাকা।

সূচী ॥ কালস্রোত; রমণীর মন; প্রেম; ভাই ভাই; পলাতক; জননান্তর সৌহৃদানি; মটর মাস্টারের কৃতজ্ঞতা; বুড়ো বুড়ি দু’জনাতে; অমাবস্যা।

‘এই সংগ্রহের শেষ কাহিনী ‘অমাবস্যা’ প্রসঙ্গে কিছু নিবেদন আছে। ‘অমাবস্যা’ বকচ্ছপ জাতির কাহিনী। ইতিপূর্বে আরো কয়েকটি এই জাতের কাহিনী আমি লিখেছি।

বর্তমান কালে কাহিনী রচনার দু’টি প্রধান রীতি প্রচলিত আছে; এক, গল্প-উপন্যাস; দুই; মঞ্চনাট্য চিত্রনাট্য। এই দুই রীতির টেক্‌নীক্‌ সম্পূর্ণ আলাদা। নাট্যের আবেদন চক্ষুকর্ণ দিয়ে। গল্প-উপন্যাসের আবেদন মনের কাছে লিখিত শব্দের সাহায্যে সে মনের পটে ছবি আঁকে, চরিত্র আঁকে, ঘটনা তৈরী করে।

কিছুদিন আগে আমার ইচ্ছা হয় এই দুই রীতিকে একত্র করে একটা নতুন রচনাশৈলী তৈরী করি, যাতে গল্প-উপন্যাসের স্বাদও থাকবে আবার নাটকের প্রত্যুৎপন্নতাও (immediacy) অনুপস্থিত থাকবে না। ‘অমাবস্যা’ এই জাতের কাহিনীর সাম্প্রতিক নমুনা।

এই রচনাভঙ্গী উত্তম কি মধ্যম কিংবা একেবারেই অধম তা বিচারের ভার পাঠক-পাঠিকার ওপর রইল।

কাহিনী আদৌ ইংরেজীতে লেখা হয়েছিল, শ্রীমান শোভন বসু তার অনুবাদের খসড়া তৈরী করে আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন।—’ ভূমিকা।

শরদিন্দু অম্‌নিবাস একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ডে ‘অসঙ্কলিত রচনা’ অংশে মুদ্রিত গল্পগুলির প্রথম প্রকাশের বিবরণ দেওয়া হল।

শরদিন্দু অম্‌নিবাস একাদশ খণ্ড: বিজ্ঞাপন বিভ্রাট (বসুমতী, আশ্বিন ১৩৩৭); উড়ো মেঘ (বসুমতী, আষাঢ় ১৩৩৭)। লেখকের মতে এইটি তাঁর ‘প্রথম পরিপূর্ণ গল্প’। (দ্র. ‘আমার লেখক জীবনের আদিপর্ব’)

বেড়ালের ডাক (দেশ, ১৩ নভেম্বর ১৯৪৩); কবি-প্রিয়া (প্রভাতী, শারদীয়া ১৩৫০); আণবিক বোমা (দেশ, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫); ও কুমারী (দেশ, ২৮ অগস্ট ১৯৪৮); তাই নে রে মন তাই নে (দেশ, ১১ আষাঢ় ১৩৬১)।

শরণার্থী—রচনা খাতায় লেখকের মন্তব্য :: ‘২০ জুলাই ১৯৫৫ তারিখে ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস দৈনিক পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছিল। সেই সংবাদকে ভিত্তি করিয়া এই একাঙ্ক নাটিকা লিখিত হইয়াছে। সংবাদটি এইরূপ—‘Saving of Rana Pratap’s Life/Copper Plate Find Revelation/ From our Correspondent/Madras, July 19.’

রচনাখাতা থেকে কপি করে সরাসরি শরদিন্দু অম্‌নিবাস একাদশ খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পূর্বে এটি কোন সাময়িক পত্রে প্রকাশিত হয়েছে কি না আমাদের জানা নেই।

বক্কেশ্বরী (দেশ, সাহিত্য সংখ্যা ১৩৭৭)। এইটি শরদিন্দুবাবুর লেখা শেষ গল্প।

শরদিন্দু অম্‌নিবাস দ্বাদশ খণ্ড: হৃৎকম্প (৪ মার্চ ১৯৬৬; প্র. জলসা পূজাসংখ্যা ১৯৬৬), করুণাময়ী (মাসিক বসুমতী, পৌষ ১৩৩৮); কুবের ও কন্দর্প (প্র. পুষ্পপাত্র, মাঘ ১৩৪০); ন্যুডিসম্‌-এর গোড়ার কথা (শনিবারের চিঠি, কার্তিক ১৩৪৪); তা তা থৈ থৈ (প্র. শারদীয়া যুগান্তর ১৩৬০)।

সচিত্র শিশির-এ প্রকাশিত ‘প্লেগ’ ও ‘রূপসী’ নামে যে দুটি ছোটগল্পের কথা শরদিন্দুবাবু অনেকবার অন্তরঙ্গদের বলেছেন এতদিনে সেই দুটি গল্পের কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। প্লেগ (প্র. সচিত্র শিশির ৪র্থ বর্ষ ১০ম সপ্তাহ, ৯ মাঘ ১৩৩৩) ও রূপসী (প্র. সচিত্র শিশির ৪র্থ বর্ষ ১১শ সপ্তাহ ১৫ মাঘ ১৩৩৩) এই প্রথম গ্রন্থভুক্ত হল। গল্প দুটিতে লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল এভাবে—শ্রীশরদিন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বি-এল।

শরদিন্দুবাবুর বিচিত্র স্বাদের কয়েকটি ছোটগল্প সম্পর্কে আচার্য সুকুমার সেন মহাশয় মন্তব্য করেছেন:

‘…সাধারণ গল্প রচনাতেও শরদিন্দুবাবুর দুরূহ নিপুণতার পরিচয় যথেষ্ট রয়েছে। দু’-একটি গল্পের সম্বন্ধে কিছু মন্তব্যের প্রয়োজন অনুভব করছি।

প্রথমেই উল্লেখযোগ্য ‘কুলপ্রদীপ’ গল্পটির রচনাকাল ১৯৩১। ঘটনা স্বাভাবিক, পরিণতিও অস্বাভাবিক নয় তবে অকথনীয়। অকথনীয়ের দুরূহতা কাটিয়ে লেখক যে সংযত কৌশল দেখিয়ে কাহিনীকে স্বাভাবিক পরিণতিতে নিয়ে গেছেন তা তখনকার পক্ষে অত্যন্ত সাহসের কাজ ছিল। রচনার গুণে গল্পটিতে সামাজিক ভাবনার কদর্যতা মুছে গেছে স্বাভাবিক ঘটনার সরল প্রবাহে।

অনেকদিন আগে একটা ‘সত্যঘটনা’ শুনেছিলাম। সুন্দরবন অঞ্চলে একজন জেলে গর্তে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে সাপের কামড় খায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে নি যে তাকে সাপে কামড়েছে, তাই এখন তার কিছু হল না। পরের দিন আবার সেইখানে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে সেই গর্তে সাপ দেখে। তখন তার আগের দিনের কামড়ের কথা মনে হয় এবং অনতিবিলম্বে শরীরে বিষক্রিয়া প্রকট পায়। সে প্রাণত্যাগ করে। এই কাহিনী মনে এল ‘কালকূট’ গল্পটি পড়ে। মনস্তত্ত্বের সূচিকামুখে গল্পটির তীক্ষ্ণ-বিষরসটুকু ফুটে উঠেছে। নিঃসন্দেহে ‘কালকূট’ শরদিন্দুবাবুর শ্রেষ্ঠ গল্পের অন্যতম।

মনস্তত্ত্বের সূচিকাভরণের অমৃতরস ‘ট্রেনে আধঘণ্টা’ গল্পে প্রযুক্ত। এই কালকূট দুটি গল্পে কাজ করেছে। একটিতে নায়িকা বিষের দাহে জরজর। আর একটিতে নায়ক সে বিষ হজম ক’রে ফেলেছে।

‘ব্রজলাট’ গল্পের উপসংহারে শরদিন্দুবাবু ও-হেনরির দক্ষতা দেখিয়েছেন।

নিতাইবাবুর এড্‌ভেঞ্চার (‘সন্ধি-বিগ্রহ’) অত্যন্ত উপাদেয় গল্প।

‘আলোর নেশা’র নায়ক হারাণের বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়ায়। ‘সে বুদ্ধিমান, কিন্তু বুদ্ধির লক্ষণ মুখে কিছু প্রকাশ পায় না। মুখখানি ঈষৎ শীর্ণ, চোখে একটা অস্বচ্ছন্দ সঙ্কোচের ভাব; কখনও কখনও আঘাত পাইয়া তাহা রূঢ়তার শিখায় জ্বলিয়া উঠে। বাঙ্গালীর মজ্জাগত অভিমান—sensitiveness— চারিদিক হইতে খোঁচা খাইয়া যেন একই কালে ভীরু ও দুঃসাহসী হইয়া উঠিয়াছে। শিক্ষার ধারা যে পথে গিয়াছে, সহবৎ সে পথে যাইতে পারে নাই—তাই মনটা তাহার আশ্রয়হীন নিরালম্ব হইয়া আছে।’ (দ্র. শরদিন্দু অম্‌নিবাস ষষ্ঠ খণ্ডের ভূমিকার শেষাংশ, ২৮, ২. ১৯৭৬)

শরদিন্দুবাবুর কয়েকটি ভূতের গল্প সম্পর্কে প্রমথনাথ বিশীর মন্তব্য: ‘মরণ-ভোমরা’ ও ‘রক্ত-খদ্যোত’ ভৌতিক গল্প। ভূতের গল্পের দুটি অত্যাবশ্যক অঙ্গ—তাহা ভূত হওয়া চাই এবং গল্প হওয়া চাই। শরদিন্দুবাবু এ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত। ইহার প্রধান কারণ—রহস্যের রস। সংস্কার এখানে বুদ্ধির বড় শরীক। শরদিন্দুবাবুর মধ্যে এই রহস্য ঘনীভূত করিয়া তুলিবার শক্তি যথেষ্টই আছে।…এবার হইতে ভোমরা দেখিলেই শরদিন্দুবাবুর কথা মনে পড়িবে, কি জানি তিন দিনের মধ্যে কাহাকে ইহধাম ত্যাগ করিতে হইবে।’ (দ্র. চুয়াচন্দন গন্থের সমালোচনার অংশবিশেষ, শনিবারের চিঠি, আষাঢ় ১৩৪৩)

পরিশেষে নিজের লেখা ছোটগল্প সম্পর্কে লেখকের নিজের দুটি মন্তব্য উদ্ধৃত করছি।

‘‘আলোর নেশা’ ও ‘ট্রেনে আধঘণ্টা’ এই দুটি গল্পে আমি এমন স্থানে প্রবেশ করিবার চেষ্টা করিয়াছি, দেবদূতেরাও সেখানে যাইতে ভয় পান। আমার মূঢ়তা-প্রণোদিত এই স্পর্ধা পাঠকগণ ক্ষমার চক্ষে দেখিবেন।’ (লেখকের নোট্‌স)

‘ছোট গল্পটাই আমার হাতে বেশি আসে। গল্প লেখার সময় সর্বদা মনে রাখি-Brevity is the soul of wit. যাই লিখি না কেন যত্ন করে লিখতে হয়। (সাক্ষাৎকার, মার্চ ১৯৭০)

৮ জানুয়ারি ২০০১

শোভন বসু

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *