বরদাচরণ ও টিকটিকি
চোরে ও পুলিশে
ভূত ও গা-ছমছমানি
গায়ে ও গত্তিতে
হাসি ও মজা
কল্পনা ও বিজ্ঞান
1 of 2

গগন চাকি ও পবন দূত

গগন চাকি ও পবন দূত

কুখ্যাত ডাকাত গগন চাকিকে তাড়া করেছে বিখ্যাত পুলিশের গোয়েন্দা সুবল দত্ত। ধরো ধরো অবস্থা। গগনকে ধরতে পারলেই পেল্লায় পুরস্কার, কারণ এযাবৎ গগনকে শত চেষ্টাতেও ধরা যায়নি। তার কারণ গগন চাকিরও আবার একটি গগন চাকি আছে। অর্থাৎ কিনা গগনের গগাড়ি। যেটা এত জোরে ছোটে যে তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাধ্যি পুলিশের কোনও গাড়ির নেই। গগন শুধু ডাকাতই নয় মস্ত বৈজ্ঞানিকও। গোটা নেপচুন গ্রহটা দখল করে সে বিশাল গবেষণাগার বানিয়েছে মাটির তলায়। কেউ এটার ধারে কাছে যেতে পারে না, এমন এক রশ্মিবর্ম দিয়ে তার চারধারে বলয় তৈরি করা হয়েছে। সরকারি সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ করে গগন সুযোগ বুঝে পৃথিবীতে হানা দেয় এবং ইচ্ছেমতো ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। টাকাপয়সা অবশ্য সে ছোঁয়ও না, সে ডাকাতি করে রাসায়নিক অতিযন্ত্র বা নতুন কোনও গবেষণালব্ধ জিনিস। সর্বত্র তার চর আছে। তারাই খবর দেয় গগনকে।

নিউইয়র্কের বৈজ্ঞানিক রাসেল সাহেব এই তো মাত্র এক সপ্তাহ আগে একজোড়া হাওয়াই চটি আবিষ্কার করে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছেন। হাওয়াই চটি শুনে নাক সিটকোবার কিছু নেই। এ চটি পরে ইচ্ছেমতো শূন্যে উঠে ঘুরে বেড়ানো যায়। দু আড়াই মিটার শূন্যে যে কোথাও মানুষকে তুলে রাখার ক্ষমতা আছে এই হাওয়াই চপ্পল জোড়ার, প্রায় পাঁচশ বছর ধরে রাসেল সাহেবের নিরলস সাধনার ফলে এই আবিষ্কার। গগন যে এটা চুরি করতে পারে সেই ভয়ে আগে থাকতেই ব্যবস্থা করা ছিল, চারদিকে রোবো পাহারা দিয়েও নানারকম যন্ত্র, রশ্মি, চোরদ্ধ রনিক মোতায়েন। ঘন্টাখানেক আগে এসব বাধাকে কঁকি দিয়ে গগন যে কিভাবে চপ্পল জোড়া বাগিয়ে নিয়ে চলে গেল সেইটেই রহস্য। রহস্য অবশ্য তেমন কিছু নয়। গগন এসেছিল তার গগন চাকিতে করে। এই গগন চাকির একটা অদ্ভুত ক্ষমতা হলো, যখন-তখন অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। নিজের শরীরের পরমাণু প্রক্রিয়া বদল করে যে-কোনও মনিটরকে ফাঁকি দিতে পারে। আর গগন নিজেও চালাক কম নয়। সে হুবহু রাসেল সাহেবের রূপ ধরে এসে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে নিউইয়র্কের ইয়র্ক টাওয়ারের দুশো একান্ন তলার স্ট্রং রুম থেকে জিনিসটা বের করে নিয়ে সেই হাওয়াই চপ্পল পায়ে দিয়েই আকাশে তিনশো গজ দূরে তার গগন চাকিতে চেপে পালাচ্ছিল। সুবল দত্ত তার পুলিশী গাড়ি পবনদুতে বসে পাহারা দিচ্ছিল মাত্র পাঁচশ গজ দূরে। একটা লোককে হন হন করে শূন্যে হাঁটতে দেখেই তার সন্দেহ হয়। চোখে ভেদক দূরবিন লাগাতেই সে রাসেলের ছদ্মবেশের আড়ালে গগনকে চিনতে পারে। তারপরই তাড়া।

কিন্তু তাড়া করলেও একটা বাধা আছে। গগন চাকি হলো মহাকাশযান। পৃথিবীর সীমানা ডিঙিয়ে দূর-দূরান্তে চলে যেতে পারে। পবনদূত ততদূর পারবে না। তবে এক-দেড় লক্ষ মাইল অবধি পবনদূত বড় সাঙ্ঘাতিক। নানা ক্ষেপণাস্ত্র ও রশ্মি তো আছেই, পবনের গতিও দুর্দান্ত, এটাও একটা নতুন আবিষ্কার, খুব সম্প্রতি তৈরি হয়েছে।

পবনদূত যে তাকে তাড়া করেছে এটা গগন টের পায়নি, সে নিশ্চিত মনে নেপচুনকে লক্ষ্য করে চড়ে যাচ্ছিল, সুবল দত্ত স্পষ্ট দেখতেও পাচ্ছিল গগনকে। কারণ গগন চাকির দুর্ভেদ্য শরীরকে ভেদ করছিল সুবলের দূরবিন ভেদক। সুবল দেখল গগন খই আর কলা খাচ্ছে, ডানহাতে ঘাড় চুলকোচ্ছে। খুব নিশ্চিন্ত।

আচমকাই সুবলের কানে ইয়ার ফোনটা একটা গম্ভীর আওয়াজে যেন ফেটে পড়ল, কে রে তুই? আঁ?

গগনের গলা, সুবল দত্ত দাঁতে দাঁত পিষে, তোমার যম!

গগন হাঃ হাঃ করে হেসে বলল, তাই নাকি? চোর চোর খেলছিস বুঝি? যা দুধের ছেলে, ঘরে ফিরে যা, নইলে কঠিন অবস্থায় পড়ে যাবি।

আমি ভয় খাই না, আজ তোমারই একদিন কি আমারই একদিন। বটে! বটে! তাহলে আয় তোকে একটু কায়দা দেখাই।

বলেই গগন চাকি একটু থেমে উল্টো দিকে ধেয়ে আসতে লাগল, সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড, সোজা তার দিকেই আসছে যে। সুবল দত্ত দুটো ক্ষেপণাস্ত্র আর একটা রশ্মি ছুঁড়ল। গগন চাকি অদৃশ্য হয়ে গেল।

সুবল দত্ত নিশ্চিন্ত হলো না। আঁতিপাঁতি করে মনিটর খুঁজতে লাগল। পেল না। কিন্তু আচমকাই পেছন থেকে কি যেন তার পবনদূতকে প্রচণ্ড বেগে ঠেলতে শুরু করল।

সুবল চেঁচাল, এই এই! কী হচ্ছে?

গগন হাঃ হাঃ করে হেসে উঠে বলল, কেন খোকা ভয় পেলে? দুধের বাছা তুমি, গগনের সঙ্গে পাল্লা নিতে এসেছো?

সুবল দত্ত দেখল, সামনে ঘোর বিপদ। তার পবনদূতের পাল্লা মাত্র দেড় লক্ষ মাইল। তারা ইতিমধ্যেই এক লক্ষ পঁচিশ হাজার মাইল পেরিয়ে এসেছে, দেড় লক্ষ মাইল পেরিয়ে গেলে পবনদূত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। তাকে ফিরিয়ে নেওয়াই হবে কঠিন।

সুবল নানা কায়দায় পবনদূতকে থামানোর চেষ্টা করল। কিন্তু থামা কি সহজ! পিছন থেকে গগন চাকির প্রবল ঠেলায় তাকে নিয়ন্ত্রণ সীমার বাইরে নিয়ে যাবেই। সুবল ঘামছে।

কী খোকা, কেমন লাগছে?

ছেড়ে দিন আমাকে।

কেন, আমাকে ধরবে না?

আজ্ঞে না।

ধরলে যে পেল্লায় পুরস্কার।

আমার পুরস্কার চাই না।

তবে প্রাণটা চাই তো?

যে আজ্ঞে।

হাঃ হাঃ। তবে কান ধরো।

ধরেছি।

বলো আর কখনও এরকম করব না।

বলছি।

হাঃ হাঃ।

পবনদূতের পিছন থেকে চাপটা অদৃশ্য হলো। সুবল দত্ত দেখতে পেল, গগন চাকি সামনে দূর-দূরান্তে মহাকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে।

সুবল দত্ত পবনদূতের মুখ পৃথিবীর দিকে ফিরিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলল, খুব বেঁচে গেছি বাপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *