খোশগল্প
যখন-তখন লোকে বলে, গল্প বলো।
এ বাবদে স্বৰ্গত ক্ষিতিমোহন সেনের একাধিক রসাল উত্তর আছে। তিনি বাঙাল উচ্চারণে তখন বলতেন, ঘর লেপ্যা মুছা, আতুড়ঘর বানাইয়া, মা ষষ্ঠীর গেছে বাচ্যা চাইলেই তো আর বাচ্যা পয়দা হয় না। নয় মাস দশ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ গল্পের সময় এলে তবে গল্প বেরুবে।
ইহুদিদের গল্প এর চেয়ে একটু ভালো। কেন, সে-কথা পরে বলছি।
এক ভালো কথক রাব্বি (ইহুদিদের পণ্ডিত পুরুত) অনেকখানি হাঁটার পর অতিথি হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত চাষার বাড়িতে। চাষা-বউ জানত, রাব্বি গল্প বলতে ভারি ওস্তাদ। পাদ্য-অর্ঘ্য না দিয়েই আরম্ভ করেছে, গল্প বলুন, গল্প বলুন। ইতোমধ্যে চাষা ভিন গাঁয়ের মেলা থেকে ফিরেছে একটা ছাগি কিনে। চাষা-বউ সঙ্গে সঙ্গেই গল্পের বায়না বন্ধ করে দুইতে গেছে ছাগিকে–ইহুদি তো! একফোঁটা দুধ বেরুল না দেখে চাষা-বউ বেজার-মুখে স্বামীকে শুধাল, এ কী ছাগি আনলে গো? বিচক্ষণ চাষা হেসে বললে, ওটা হেঁটে হেঁটে হয়রান হয়ে গিয়েছে। দানা-পানি দাও–দুধ ঠিকই দেবে। রাব্বি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, সেই কথাই তো হচ্ছে। দানা-পানি না পেলে আমিই-বা গল্প বলি কী করে?
ক্ষিতিমোহনবাবু ইহুদি ছিলেন না বলে, নিজের সুবিধেটা উত্তরের মারফতে গুছিয়ে নিতে পারেননি ইহুদি পারে।
এ গল্পটা মনে রাখবেন। কাজে লাগবে। অন্তত চা-টা পাঁপর-ভাজাটা আসবে নিশ্চয়ই।
সঙ্গে সঙ্গে ইহুদি, স্কুটম্যান সাইক চালাতে আরম্ভ করে দেবেন। সে আবার কী? এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ, অর্থাৎ এক চিন্তার খেই ধরে অন্য চিন্তা, সেটা থেকে আবার অন্য চিন্তা, এইরকম করে করে মোকামে পৌঁছে যাবেন। এখনও বুঝতে পারলেন না। তবে একটা গল্প দিয়েই বোঝাই।
সেই যে বাঁদর ছেলে কিছুতেই শটকে শিখবে না, এ ছেলে তেমনি পেটুক যা-কিছু শিখতে দেওয়া হয়, পৌঁছে যাবেই যাবে মিষ্টি-সন্দেশে। তাকে একং দশং শিখতে দেওয়া হয়েছে। বলছে,
একং, দশং, শতং, সহস্র, অযুত, লক্ষ্মী, সরস্বতী–
(মন্তব্য : লক্ষ না বলে বলে ফেলেছে লক্ষ্মী এবং তিনি যখন দেবী তখন তার এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে চলে গেছে আরেক দেবী সরস্বতীতে; তার পর বলছে,)
লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক, অগ্রহায়ণ–।
(মন্তব্য: কার্তিক মাসও বটে, তাই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজে চলে গেল অগ্রহায়ণ পৌষে)।
অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাগ, ছেলে-পিলে—
(মন্তব্য : মাঘ-কে আমরা মাগই উচ্চারণ করে থাকি। তার থেকে ছেলে-পিলে)
পিলে, জ্বর, শর্দি, কাশী–
কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া, পুরী—
পুরী, সন্দেশ, রসগোল্লা, মিহিদানা, বোঁদে, খাজা, লেডিকিনি
ব্যস! পুরী তো খাদ্য, এবং ভালো খাদ্য। অতএব তার এসোসিয়েশনে বাদবাকি উত্তম উত্তম আহারাদি! পৌঁছে গেল মোকামে।
এই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে গল্পের যেই ধরে নেওয়া যায়।
ইহুদির কথা যখন উঠেছে তখন ইহুদির কসি, স্কটম্যানের কসি, তাবৎ কসির গল্প আরম্ভ করে দিতে পারেন।
এগুলোকে আবার সাইক্লও বলা হয়। এটা হল কসির সাই– অর্থাৎ দুনিয়ার যতরকম হাড়কিপটেমির গল্প এই সাইক্রে ঢুকে যাবে। ঠিক সেইরকম আরও গণ্ডায় গণ্ডায় সাই আছে। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর উপর অত্যাচার, স্ত্রীকে লুকিয়ে পরস্ত্রীর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি, ট্রেন লেটের সাইক্ল, ডেলি পেসেঞ্জারের সাইক্ল, চালাকির সাইক্ল–
চালাকির সাইক্ল এদেশে গোপালর্ভাড় সাইক্লই বলা হয়। অর্থাৎ চালাকির যে-কোনও গল্প আপনি গোপালের নামে চালিয়ে যেতে পারেন, কেউ কিছু বলবে না। ইংরেজিতে এটাকে ব্ল্যাঙ্কেট অমনিবাস গল্পগুষ্ঠিও বলা চলে।
গোপালের অপজিট নাম্বার অর্থাৎ তারই মতো চালাক ছোকরা প্রায় সব দেশেই আছে। প্রাচীন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির রাজদরবারে ছিলেন মিকশ, কিন্তু দুঃখের বিষয় তার অধিকাংশ গল্পই সমাজে কঙ্কে পায় না, ভিয়েনার ভাষায় গেজেলশাফেইষ নয় (সমাজে অচল)। সেদিক দিয়েও গোপালের সঙ্গে তার গলাগলি।
কিন্তু এ সংসারে বুদ্ধিমানের চেয়ে আহাম্মুকের সংখ্যাই বেশি, তাই আহাম্মকির সাইই পাবেন, দুনিয়ার সর্বত্র। অধুনা কেন্দ্রের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে একটি বিরাট সাইজ তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এর জুড়ি ভিয়েনাতে গ্রাফ ফ ববে, পশ্চিম ভারতে শেখ চিল্পি (আমার ঠিক মনে নেই, তবে বোধ করি শ্রীযুক্ত সীতা শান্তার হিন্দুস্তানি উপকথাতে এর গল্প আছে), এবং সুইটজারল্যান্ডে পলডি।
পলডির গল্প অফুরন্ত। আমি গত দশ বছর ধরে একখানা সুইস পত্রিকার গ্রাহক। প্রতি সপ্তাহে পলডি নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে। চলেছে তো চলেছে। এখনও তার শেষ নেই। কখনও যে হবে মনে হয় না।
কিছুমাত্র না ভেবে গোটা কয়েক বলি :
বন্ধু; জানো পলডি, অসিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। ১৭৭০-এ ওটা আবিষ্কৃত হয়।
পলডি : তার আগে মানুষ বাঁচত কী করে?
কিংবা
পলডি : (আমেরিকান টুরিস্টকে এক কাসল দেখিয়ে) ওই ওখানে আমার জন্ম হয়। আপনার জন্ম হয় কোনখানে?
টুরিস্ট : হাসপাতালে।
পলডি : সর্বনাশ! কী হয়েছিল আপনার?
কিংবা
বাড়িউলি : সে কী মি. পলডি? দশ টাকার মনিঅর্ডার, আর আপনি দিলেন পাঁচ টাকা বকশিশ!
পলডি : হেঁ হেঁ, ওই তো বোঝ না আর কিপ্টেমি কর। ঘন ঘন আসবে যে!
কিংবা
পলডি ঘোড়ার রেসে গিয়ে শুধোচ্ছেন : ঘোড়াগুলো এরকম পাগল-পারা ছুটছে কেন?
বন্ধু : কী আশ্চর্য, পলডি তা-ও জানো না! যেটা ফার্স্ট হবে সেটা প্রাইজ পাবে যে।
পলডি : তা হলে অন্যগুলো ছুটছে কেন?
এর থেকে আপনি রেসের গল্পের মাধ্যমে কুট্টি সাইক্লে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। যেমন, কুট্টি রেসে গিয়ে বেট করেছে এক অতি নিকৃষ্ট ঘোড়া। এসেছে সর্বশেষে। তার এক বন্ধু আরেক কুট্টি ঠাট্টা করে বললে, কী ঘোড়া (উচ্চারণ অবশ্য গোরা- আমি বোঝার সুবিধের জন্য সেগুলো বাদ দিয়েই লিখছি) লাগাইলায় মিয়া! আইলো সক্কলের পিছনে?
কুট্টি দমবার পাত্র নয়। বললে, কন্ কী কত্তা! দ্যাখলেন না, যেন বাঘের বাচ্চা বেবাকগুলিরে খ্যাদাইয়া লইয়া গেল!
কুট্টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুব-পশ্চিম উভয় বাঙলার রসিকমণ্ডলীই একদা সুপরিচিত ছিলেন। নবীনদের জানাই, এরা ঢাকা শহরের খানদানি গাড়োয়ান-গোষ্ঠী। মোগল সৈন্যবাহিনীর শেষ ঘোড়সওয়ার বা ক্যাভালরি। রিক্শার অভিসম্পাতে এরা অধুনা লুপ্তপ্রায়। বহুদেশ ভ্রমণ করার পর আমি নির্ভয়ে বলতে পারি, অশিক্ষিত জনের ভিতর এদের মতো witty (হাজির-জবাব এবং সুরসিক বাতুর) নাগরিক আমি হিল্লি-দিল্লি কলোন-বুলোন কোথাও দেখিনি।
এই নিন একটি ছোট ঘটনা। প্রথম পশ্চিম বাঙলার সংস্করণটি দিচ্ছি। এক পয়সার তেল কিনে ঘরে এনে বুড়ি দেখে তাতে একটা মরা মাছি। দোকানিকে গিয়ে অনুযোগ জানাতে সে বললে, এক পয়সার তেলে কী তুমি মরা হাতি আশা করেছিলে! এর রাশান সংস্করণটি আরও একটু কাঁচা। এক কপেকের (প্রায় এক পয়সা) রুটি কিনে এনে ছিঁড়ে দেখে এক বুড়ি তাতে একটুকরো ন্যাকড়া। দোকানিকে অনুযোগ করাতে সে বললে, এক কপেকের রুটির ভিতর কী তুমি আস্ত একখানা হীরের টুকরো আশা করেছিলে? এর ইংরিজি সংস্করণ আছে, এক ইংরেজ রমণী এক শিলিঙে একজোড়া মোজা কিনে এনে বাড়িতে দেখেন তাতে একটি ল্যাডার (অর্থাৎ মই– মোজার একটি টানা সুতো ছিঁড়ে গেলে পড়েনের সুতো একটার পর একটা যেন মইয়ের এক-একটা ধাপ-কাঠির মতো দেখায় বলে এর নাম ল্যাডার।) দোকানিকে অনুযোগ জানাতে সে বললে, এক শিলিঙের মোজাতে কি আপনি, ম্যাডাম, একখানা রাজকীয় মার্বেল স্টেয়ার কে আশা করেছিলেন!
এবারে সর্বশেষ শুনুন কুট্টি সংস্করণ। সে একখানা ঝুরঝুরে বাড়ি ভাড়া দিয়েছে পুলিশের এসআইকে। বর্ষাকালে কুট্রিকে ডেকে নিয়ে তিনি দেখাচ্ছেন, এখানে জল ঝরছে, ওখানে জল পড়ছে– জল জল সর্বত্র জল পড়ছে। পুলিশের লোক বলে কুট্টি সাহস করে কোনও মন্তব্য বা টিপ্পনী কাটতে পারছে না, যদিও প্রতি মুহূর্তেই মাথায় খেলছে বিস্তর। শেষটায় না থাকতে পেরে বেরুবার সময় বললে, ভাড়া তো দ্যা কুল্লে পাঁচটি টাকা। পানি পড়বে না তো কি শরবত পড়বে?
কুট্টি সম্বন্ধে আমি দীর্ঘতর আলোচনা অন্যত্র করেছি–পাঠক সেটি পড়ে দেখতে পারেন। আমার শোক-পরিতাপের অন্ত নেই যে, এ সম্প্রদায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলল। আমি জানি এদের উইট, এদের রিপোর্ট লেখাতে ও ছাপাতে সঠিক প্রকাশ করা যায় না; কিন্তু তৎসত্ত্বেও এ-সম্প্রদায় সম্পূর্ণ লোপ পাওয়ার পূর্বে পুববাঙলার কোনও দরদিজন যদি এদের গল্পগুলোর একটি সগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে তিনি উভয় বাঙলার রসিকমণ্ডলীর ধন্যবাদাহ হবেন।
***
পাঠক ভাববেন না, আমি মিষ্ট মিষ্ট গল্প বলার জন্য এ-প্রবন্ধের অবতারণা করেছি। আদপেই না। তা হলে আমি অনেক উত্তম উত্তম গল্প পেশ করতুম। এখানে গল্পের সাই ও এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ, কিংবা বলতে পারেন এসোসিয়েশন অব স্টরিজ বোঝাবার জন্য যেসব গল্পের প্রয়োজন আমি তারই কাঁচা-পাকা সবকিছু মিশিয়ে কয়েকটি গল্প নিবেদন করেছি মাত্র। (এবং সত্য বলতে কী, আসলে কোনও গল্পই কাঁচা কিংবা পাকা, নিরেস কিংবা সরেস নয়। মোকা-মাফিক জুৎসই করে যদি তাগ-মাফিক গল্প বলতে পারেন, তবে অত্যন্ত কাঁচা গল্পও শ্রোতমণ্ডলীর চিত্তহরণ করতে সমর্থ হবে, পক্ষান্তরে তথাকথিত শ্রেষ্ঠ গল্পও যদি হঠাৎ বেমক্কা বলে বসেন, তবে রসিকমণ্ডলী বিরক্ত হয়ে ভুরু কুঁচকাবেন।)।
গল্প বলার আর্ট, গল্প লেখার আর্টেরই মতো বিধিদত্ত প্রতিভা ও সাধনা সহযোগে শিখতে হয়। এবং দুই আর্টই ভিন্ন। অতি সামান্য, সাধারণ গল্পও পূজনীয় স্বৰ্গত ক্ষিতিমোহন অতি সুন্দর রূপ দিয়ে প্রকাশ করতে পারতেন অথচ তার লেখা রচনায় সে জিনিসের কোনও আভাসই পাবেন না; পক্ষান্তরে শ্রদ্ধেয় স্বর্গত রাজশেখরবাবু লিখে গিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের কয়েকটি শ্রেষ্ঠ হাসির গল্প, অথচ তিনি বৈঠক-মজলিসে ছিলেন রাশভারি প্রকৃতির। গল্প বলার সময় কেউ কেউ অভিনয় যোগ করে থাকেন। সুলেখক অবধূত এ বাবদে একটি পয়লা নম্বরি ওস্তাদ। যদি কখনও তার সঙ্গে আপনার দেখা হয় তবে চন্দননগর উঁচড়ো অঞ্চলের বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক কীভাবে নিমন্ত্রণ রক্ষা করেন তার বর্ণনা দিতে বলবেন। কিন্তু এ প্রবন্ধের গোড়াতে যে সাবধানবাণী দিয়ে আরম্ভ করেছি, সেটি ভুলবেন না। বেমক্কা যখন-তখন অনুরোধ করেছেন, কী মরেছেন। অবধূত তেড়ে আসবে। অবধূত কেন, রসিকজন মাত্রই তেড়ে আসে। এই তো সেদিন অবধূত বলছিল, জানেন, মাস কয়েক পূর্বে ১১০ ডিগ্রির গরমে যখন ঘণ্টাতিনেক আইঢাই করার পর সবে চোখে অল্প একটু তন্দ্রা লেগে আসছে এমন সময় পাড়া সচকিত করে টেলিগ্রাম পিয়ন ঢঙের সজোরে কড়া নাড়া। দরজা খুলতে দেখি দুই অচেনা ভদ্রলোক। কড়া-রোদ্দুর, রাস্তার ধুলো-মুলোয় জড়িয়ে চেহারা পর্যন্ত ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। কী ব্যাপার? আজ্ঞে, আদালতে শুনতে পেলুম, আমাদের মোকদ্দমা উঠতে এখনও ঘণ্টা দুয়েক বাকি, তাই আপনার সঙ্গে দু দণ্ড রসালাপ করতে এলুম। আমি অবধূতকে শুধোলুম, আপনি কী করলেন? অবধূত উদাস নয়নে ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে। আমি বেশি ঘাটালুম না। কারণ মনে পড়ে গেল, মোটামুটি ওই সময়ে চুচড়োর জোড়াঘাটের কাছে, সদর রাস্তার উপর দুটো লাশ পাওয়া যায়। খুনি ফেরার। এখনও ব্যাপারটা হিল্লে হয়নি।
ভালো করে গল্প বলতে হলে আরও মেলা জিনিস শিখতে হয় এবং সেগুলো শেখানো যায় না। আমি স্বয়ং তো আদৌ কোনও প্রকারের গল্প বলতে পারিনে। প্লট ভুলে যাই, কী দিয়ে আরম্ভ করেছিলুম কী দিয়ে শেষ করব তার খেই হারিয়ে ফেলি, গল্প আরম্ভ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেই খিলখিল করে হাসতে আরম্ভ করি, ঐ-যা, কী বলছিলুম প্রতি দু সেকেন্ড অন্তর অন্তর আসে, ইতোমধ্যে কেউ হাই তুললে তাকে তেড়ে যাই, শেষটায় সভাস্থ কেউ দয়াপরবশ হয়ে গল্পটা শেষ করে দেন– কারণ যে-গল্পটি আমি আরম্ভ করেছিলুম সেটি মজলিসে ইতোপূর্বে, আমারই মুখে, ভেঁড়া-ছেঁড়াভাবে অন্তত পঞ্চাশবার শুনে, জোড়া-তাড়া দিয়ে খাড়া করতে পেরেছে। তদুপরি আমার জিভে ক্রনিক বাত, আমি তোতলা এবং সামনের দু পাটিতে আটটি দাঁত নেই।
তা হলে শুধাবেন, তবে তুমি এ প্রবন্ধ লিখছ কেন? উত্তর অতি সরল। ফেল করা স্টুডেন্ট ভালো প্রাইভেট টুটর হয়! আমি গল্প বলার আর্টটা শেখার বিস্তর কস্ত করে ফেল মেরেছি বলে এখন এর ট্রটরি লাইনে আমিই সম্রাট।
***
কিন্তু এ আর্ট এখন মৃতপ্রায়; কারণটা বুঝিয়ে বলি।
পূর্বেই নিবেদন করেছি, গল্পের কাঁচা-পাকা কিছুই নেই, মোকা-মাফিক বলতে পারা, এবং বলার ধরনের ওপর ওই জিনিস সম্পূর্ণ নির্ভর করে।
এ তত্ত্বটি সবচেয়ে ভালো করে জানেন, বিশ্ব-গল্পকথক-সম্প্রদায় (ওয়ার্ল্ড স্টরি-টেলারস্ ফেডারেশন)। মার্কিন মুলুকে প্রতি বৎসর এদের অধিবেশন হয় এবং পৃথিবীর সর্বকোণ থেকে ডাঙর ডাঙর সদস্যরা সেখানে জমায়েত হন। এরা বিলক্ষণ জানেন, গল্প মোকা-মাফিক এবং কায়দা-মাফিক বলতে হয়। চীনের ম্যান্ডারিন সদস্য যে-গল্পটি বলতে যাচ্ছেন সেটি হয়তো সবচেয়ে ভালো বলতে পারেন বঙ্গে-ইন-কঙ্গোর লুসাবুবু। ওদিকে পৃথিবীর তাবৎ সরেস গল্পই এঁরা জানেন। কী হবে, চীনার কাঁচাভাষায় পাকা দাড়িওয়ালা ওই গল্পই তিনশো তেষট্টি বারের মতো শুনে। অতএব এরা একজোটে বসে পৃথিবীর সবকটি সুন্দর সুন্দর গল্প জড়ো করে তাতে নম্বর বসিয়ে দিয়েছেন। যেমন মনে করুন, কুষ্টির সেই পানিপড়ার বদলে শরবত পড়ার গল্পটার নম্বর ১৯৮।
এখন সে অধিবেশনে গল্প বলার পরিস্থিতিটা কী রূপ?
যেমন মনে করুন, কথার কথা বলছি, সদস্যরা অধিবেশনের শুরু শুরু কর্মভার সমাধান করে ব্যানকুয়েট খেতে বসেছেন। ব্যানকুয়েট বললুম বটে, আসলে অতি সস্তা লাঞ্চ লাঞ্ছনাও বলতে পারেন, একদম দা ঠাকুরের পাইস হোটেল মেলের। এক মেম্বর ডালে পেলেন মরা মাছি। অমনি তাঁর মনে পড়ে গেল, সেই বুড়ির এক পয়সার তেলে মরা মাছি, কিংবা পানি না পড়ে শরবত পড়বে নাকি গল্প। তিনি তখন গল্পটি না বলে শুধু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন নম্বর ১৯৮!
সঙ্গে সঙ্গেই হো হো অট্টহাস্য। একজন কাত হয়ে পাশের জনের পাঁজরে খোঁচা দিয়ে বার বার বলছেন, শুনলে? শুনলে? কীরকম একখানা খাসগল্প ছাড়লে! আরেকজনের পেটে খিল ধরে গিয়েছে তাকে ম্যাসাজ করতে শুরু করেছেন আরেক সদস্য।
***
অতএব নিবেদন, এসব গল্প শিখে আর লাভ কী? এদেশেও কালে বিশ্বগল্পকথক সম্প্রদায়ের ব্রাঞ্চ-আপিস বসবে, সব গল্পের কপালে কপালে নম্বর পড়বে, আপনি আমি কোনওকিছু বলার পূর্বেই কেউ-না-কেউ নম্বর হেঁকে যাবে। তার পর নিলাম। ৯৮ নম্বর বলতে না বলতেই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজে কারও মনে পড়ে যাবে অন্য গল্প– তিনি হাঁকবেন ২৭২। তার পর ৩১৮– আর সঙ্গে সঙ্গে হাসির হররা, রগড়ের গড়িয়াহাট আপনি আমি তখন কোথায়?
হ্যাঁ, অবশ্য, যতদিন-না ব্রাঞ্চ-আপিস কায়েম হয় ততদিন অবশ্য এইসব টুটা-ফুটা গল্প দিয়ে ত্রি-লেগেড রেস রান করতে পারেন। কিংবা দুষ্ট ছেলেকে শাসন করার জন্য গুরুমশাই যেরকম বলতেন, যতক্ষণ বেত না আসে ততক্ষণ কানমলা চলুক।
বাই দি উয়ে– এ গল্পটাও কাজে লাগে। নেমন্তন্ন বাড়িতে চপ-কাটলেট না-আসা পর্যন্ত লুচি দিয়ে ছোলার ডাল খেতে খেতে বলতে পারেন,
যতক্ষণ বেত না আসে ততক্ষণ কানমলা চলুক।
.
শের্শে লা ফাম (Cherchez la femme)
খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি যাই হোক না কেন, এ ফরাসি হাকিম বিচারের সময় অসহিষ্ণু হয়ে বার বার শুধোতেন, মেয়েটা কোথায়? শের্শে লা ফা– মেয়েটাকে খোজো! তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, দুনিয়ার কুল্লে খুন-খারাবির পিছনে কোনও না কোনও রমণী ঘাপটি মেরে বসে আছে। আসামি, ফরিয়াদি, সাক্ষী, কোনও না কোনওরূপে তাকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত (হাবেয়াস্ কর্ণস) না করা পর্যন্ত মোকদ্দমার কোনও সুরাহা হবে না। অতএব, শের্শে লা ফাম– মেয়েটাকে খোজো। একবার ইনশিওরেন্স মোকদ্দমা ছিল কোনও চিমনি-পরিদর্শককে নিয়ে। একশো ফুট উঁচু থেকে সে পড়ে যায়। তার খেসারতি মঞ্জুর হয়ে গেলে উকিল শুধোলেন, কই, হুজুর এ মোকদ্দমায় আপনার শের্শে লা ফাম তো খাটল না? হুজুর দমবার পাত্র নয়। সোল্লাসে বললেন, খোজো, পাবে। হবি তো হ–তাই! তালাশিতে বেরল, সিঁড়ি দিয়ে উঠবার সময় সে হঠাৎ নিচের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়েছিল এক সুন্দরীর দিকে পড়ে মরল পা হড়কে!
***
আকাশবাণী সম্বন্ধে নানাপ্রকারের ফরিয়াদ প্রায়ই শোনা যায়। আল্লার দুনিয়া সম্বন্ধেই যখন হামেহাল নালিশ লেগেই আছে তখন এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
গুণীজ্ঞানীরা বলেন প্রাচ্যের মানুষ অন্তর্মুখী প্রতীচ্যের বহির্মুখী। এতবড় তত্ত্বকথার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও কথা বলার হক আমার নেই। তবে একটা জিনিস আমি স্বচক্ষে লক্ষ করেছি– গরমের দেশের লোক বারান্দা রক তেঁতুলতলায় দিন কাটায় আর পশ্চিমের লোক বাড়ির ভেতর।
আমরা আপিস-আদালত কলেজ-কারখানা থেকে বেরিয়েই একটুখানি হাওয়া খেতে গা-টা জুড়িয়ে নিতে চাই। ইভনিং ওয়ক মর্নিং ওয়ক সমাসগুলো ইংরেজি ভাষাতে সত্যই চালু আছে কি না, কিংবা ইংরেজ এদেশে এসে নির্মাণ করেছে, জানিনে, কিন্তু ও দুটোর রেওয়াজ শীতের দেশে যে বেশি নেই সে-কথা বিলক্ষণ জানি। আমরা তাই ময়দানে, গঙ্গার পারে হাওয়া-টাওয়া খেয়ে বাড়ি ফিরি। নিতান্ত শীতকালের কয়েকটি দিন ছাড়া কখনও ঘরের ভিতর ঢুকতে চাইনে। রকে বসে রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা দেখি। পক্ষান্তরে শীতের দেশের লোক ছুটি পাওয়ামাত্রই ছুট দেয় বাড়ির দিকে। আপিসে-দপ্তরে আগুনের ব্যবস্থা উত্তম নয়– ওদিকে গৃহিণী বসবার ঘরে গনগনে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছেন। পড়িমরি হয়ে বাড়ি পৌঁছেই সে পা দুটি আগুনের দিকে বাড়িয়ে বসে যায় আরাম-চেয়ারে, খুলে দেয় রেডিও। আমাদের রকে রেডিও থাকে না, বৈঠকখানাতেও কমই– কারণ বাড়ির মেয়ে-ছেলেরা ওটা নিয়ে হরবকতই নাড়াচাড়া করে। তাই ওটা থাকে অন্দরমহলেই।
আমাদের যাত্রাগান, কবির লড়াই সবই খোলামেলায়। এ যুগের প্রধান আমোদ ফুটবল ও ক্রিকেট খেলাতে। নিতান্ত সিনেমাটা ঘরের ভিতর। কিন্তু সিনেমাও চেষ্টা করে সেটা ভুলিয়ে দিতে। ঘড়ি ঘড়ি মাঠ-ময়দান, নদী পুকুর, পাহাড়-সমুদ্র দেখায় বলে খানিকক্ষণ পরেই ভুলে যাই যে, ঘরের ভিতর বন্ধ রয়েছি। তবুও পাছে অন্য কোনও খোলামেলার আমাদের সন্ধান পেয়ে আমরা পালিয়ে যাই তাই সিনেমাওলারা ওটাকে অ্যারকন্ডিশন করে মাঠ-রক-বৈঠকখানার চেয়েও আরামদায়ক করে রাখে। কারণ ইয়োরোপে যে মুহূর্তে ঘরে বসে টেলিভিশনের সাহায্যে সিনেমার আনন্দ পাওয়া গেল সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের অভাবে আট থেকে দশ আনা পরিমাণ সিনেমা উঠে গেল।
আমাদের দেশের মেয়েরা হুট করে রাস্তায় বেরুতে পারে না, সিনেমা চায়ের দোকানে যেতে পারে না, তাই রেডিয়োটা ওদের কাছে এক বিধিদত্ত সওগাত। কর্তা-বাচ্চারা আপিস ইস্কুল চলে যাওয়ার পর তাঁরা নেয়ে খেয়ে চুল ঝুলিয়ে দিয়ে মুচড়ে দেন রেডিয়োর কানটা (পাশের বাড়ির রেডিয়োটা যে গাৰ্গা করে আপনার বিরক্তির উৎপাদন করে তার প্রধান কারণ ও-বাড়ির বউমা এ-ঘর ও-ঘর যেখানেই কাজ করুন না কেন, সেটা যাতে করে সর্বত্রই শুনতে পান তার জন্য ওটাকে চড়া সুরে বেঁধে রেখেছেন), মহিলা-মহল তো আছেই, তার পর সিংহল বেতারের বিস্তর ফিলিগানা যেগুলো বউমা, দিদিমণি সিনেমাতে একবার শুনেছিলেন, তখন বার বার শুনে শুনে কষ্ঠস্থ করতে চান।
পুরুষরা এদেশে যদিও-বা বেতার শোনে তবে সেটা খেয়ে-দেয়ে খবরটা শোনার জন্যে। এবং তার পরই আকাশবাণী আরম্ভ করে দেয় উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় কালোয়াতি সঙ্গীত। ওসবে কার, মশাই, ইনট্রেন্ট কিংবা হয়তো তখন ইংরেজিতে টক শুনলেন, মন্ত্রীমশাই বক্তৃতা দিচ্ছেন, জাপানের ড্রাই-ফার্মিং কিংবা জানজিবারের কোপারেটিভ সিসটেম সম্বন্ধে।
মেয়েরাই যে আকাশবাণী– অন্তত কলকাতা কেন্দ্রের মালিক সেকথা যদি বিশ্বাস করতে রাজি না হন তবে আমি আর একটি মোক্ষম প্রমাণ কাগজে কলমে পেশ করতে পারি।
বেতার-জগৎ পাক্ষিক পত্রিকাখানির বিজ্ঞাপনগুলো মন দিয়ে পড়লে দেখতে পাবেন তাতে আছে, গয়না, প্রসাধদ্রব্য, ভেজিটেবল ওয়েল, শাড়ি, কাপড়-কাঁচা সাবান। টাইয়ের বিজ্ঞাপন একটি আছে সেখানে এক তরুণী টাইটি পরিয়ে দিচ্ছেন তার প্রিয়জনকে, অর্থাৎ বিজ্ঞাপনটি মেয়েদের জন্যই। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক কথা–বইয়ের বিজ্ঞাপনটি প্রায় নেই। এবং দেশ পত্রিকাতে সেই জিনিসেরই ছয়লাপ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেতার জগৎ মেয়েদের কাগজ, আর দেশ প্রধানত পুরুষের কাগজ।
ইয়োরোপের উচ্চতম শিক্ষিত লোকেরা বেতার শোনেন এবং তাদের চাপে বিবিসিকে একটি হাইব্রাও– উন্নাসিক– থার্ড প্রোগ্মম আরম্ভ করতে হল। কলকাতা আকাশবাণীর সবচেয়ে পপুলার প্রোগ্রাম– ড্রামা। সে সময় বেতারযন্ত্রের চতুর্দিকে কারা ভিড় জমায় পাঠক সেটি লক্ষ করে দেখবেন। আমার নিজের ব্যক্তিগত দৃঢ় বিশ্বাস আকাশবাণী কলকাতা যদি প্রতিদিন একঘন্টাব্যাপী ড্রামা চালায় এবং তাতে যথাপরিমিত রোদন, আক্রোশ, হুঙ্কার এবং ন্যাকামি থাকে) তবে লাইসেন্সের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
এটা আমি কিছু মস্করা করে বলছিনে। আমার মূল বক্তব্য এই, যখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মেয়েরা কলকাতার রেডিয়ো-কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন (এবং তারা মোটামুটি সন্তুষ্টই আছেন, কারণ খবরের কাগজে কোনও নিন্দাসূচক চিঠি তাঁদের তরফ থেকে আমি বড় একটা দেখিনি) আর পুরুষরা ওই জিনিসটে অবহেলা করে যাচ্ছেন (যারা ওস্তাদি গাওনা গান তাঁদের চেলাচামুণ্ডা এবং শ্রোতৃসংখ্যা এতই কম যে অনুরোধের আসরে ওস্তাদি গান গাইবার অনুরোধ আসে অতিশয়, সাতিশয় কালে-কম্মিনে) তখন কেন বৃথা হাবি-জাবি নানা প্রোগ্রাম দিয়ে রুচি মার্জিত করা, অর্ধলুপ্ত ধামার ধ্রুপদ পুনর্জীবিত করার চেষ্টা, স্বরাজ লাভের পর জেলে কত গ্রেন কুইনিন দেওয়ার ফলে কত পার্সেন্ট ম্যালেরিয়া রুগী কমল সেইটি সাড়ম্বরে শোনানো, ফাইভ-ইয়ার প্ল্যান–কম্যুনিটিপ্রজেক্ট ড্রাইফার্মিং-ইন জানজিবার (কিংবা জাপানও হতে পারে, আমার মনে নেই) শোনানোর
তাই বলে কি কলকাতা বেতারকেন্দ্র শুধু রান্নার রেসিপি আর স্যাঁতসেঁতে নাটক শোনাবে? আদপেই না। এবং সেইটে নিবেদন করার জন্যই আমি এতক্ষণ অবতরণিকা করছিলুম।
এদেশের মেয়েরা শিক্ষায় পুরুষদের বেমানানসই পিছনে। সাহিত্য সঙ্গীত নাট্যে তাদের রুচি সম্বন্ধে অনেকেই অনেকরকম অপ্রিয় মন্তব্য করে থাকেন– এমনকি মেয়েরাও। কিন্তু একটা কথা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করব না– মেয়েরা আত্মোন্নতি চায় না।
তাই আমার বক্তব্য, ওই মহিলা-মহল ব্যাপারটি ব্যাপকতর করুন। বেলাদি ইন্দিরাদি উত্তম ব্রডকাস্টার, কিন্তু প্ল্যান করুন কী করে দেশের সবচেয়ে গুণী-জ্ঞানীকে স্ত্রী এবং পুরুষ দুই-ই– এ কাজে লাগানো যায়। অবকাশরঞ্জন আনন্দদানকে আস্তে আস্তে উচ্চতর পর্যায়ে তোলা, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ, বৃহত্তর জগতের সঙ্গে পরিচয় দান ইত্যাদি তাবৎ ব্যাপার, অনেকখানি সময় নিয়ে–এমনকি বেতারের বারো আনা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে উচ্চতর পর্যায়ে তুলুন, এবং সর্বক্ষণ ওই মেয়েদের চোখের সামনে রেখে। পাঠক এবং শ্রোতা যোগাড় করা বড় কঠিন। এস্থলে যখন পেয়ে গেছেন তখন এই বেতারের মাধ্যমে দিন না একটা আপ্রাণ চেষ্টা এঁদের আরও আনন্দ দিতে– এদের নারীত্ব মনুষ্যত্ব সফলতর পূর্ণতম করতে। জাপানি চাষ শুনিয়ে পুরুষকে তো পাচ্ছেনই না, শেষটায় মেয়েদের হারাবেন। ইতো ভ্রষ্ট ততো নষ্ট।
পুরুষদের জন্য অন্য একটা চ্যানেল (ওয়েভ লেন্থ) নিয়ে নতুন একটা চেষ্টা দিতে পারেন। ফল অবশ্য কিছু হবে না। কারণটা গোড়াতেই নিবেদন করেছি।
.