খুনে মার্শাল – ২৫

পঁচিশ

‘ভেবেছিলাম ডেভিলস কিচেনের কাছে তুমি আমার ট্রেইল হারিয়েছ,’ শান্ত স্বরে বলল মার্শ।

উদ্যত পিস্তল হাতে মাথা ঝাঁকাল বেইটস। ‘হ্যাঁ, কিছুক্ষণের জন্যে ধোঁকা খেয়েছিলাম বটে, কিন্তু যখন বুঝলাম তুমি আমার সামনে নেই, তখন আবার ফিরে এসপানিওলার পথ ধরলাম। ওখানে খবর নিয়ে জানলাম তুমি ওখানে ঠিকই গেছিলে, কিন্তু ভোরেই আবার কোম্যাঞ্চি ওয়েলসের দিকে রওনা হয়েছ।

‘ওই শহরে পৌঁছে শুনলাম তুমি দুজনকে হত্যা করেছ, আর তৃতীয়জনকে এমন জখম করেছ যে সে বাঁচবে কি মরবে বলা মুশকিল। তারপর ওই ডোটি নামের লোকটার কাছে জানলাম তোমাকে যে র‍্যাঞ্চার অ্যামবুশ করে মারতে চেয়েছিল তার খোঁজে তুমি এখানে এসেছ। তাই সোজা এখানেই চলে এলাম। তোমার ঘোড়াটা র‍্যাঞ্চহাউসের পাশে বাঁধা আছে দেখে, তখন থেকে তোমার জন্যে এখানেই অপেক্ষা করছি।’

‘জানো? তোমার এখানে আসাটাও প্রায় ব্যর্থ হতে চলেছিল!’ একটু শুকনো হাসি হাসল টেড।

নড করল ডোবি। ‘গুলির শব্দ শুনে আমিও সেই ভয়ই করছিলাম। ভাবলাম তোমাকে নিজের হাতে মারার আনন্দ থেকে বুঝি আমাকে বঞ্চিত করল র‍্যাঞ্চার। কিন্তু তোমাকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখে খুশি হলাম। বেরিয়েই তুমি পড়লে আমার পিস্তলের মুখে।’

উদাসীনভাবে কাঁধ উঁচাল টেড। চোখ ফিরিয়ে মিলার র‍্যাঞ্চে সবুজ মাঠগুলোর দিকে তাকাল সে। পুরোনো পথে চলা তার এখনও শেষ হয়নি। এই ডোবি বেইটসের সাথে তাকে আগে বোঝাপড়া করতে হবে। সেটা শেষ হলে, অবশ্য যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে ও পিস্তলবাজি বাদ দিয়ে দূরে কোথাও নতুন জীবন শুরু করতে পারবে।

‘তোমার পিস্তল?’ গর্জে উঠল টেড। ‘তুমি যে পিস্তলটা আমার দিকে তাক করেছ ওটা আমার পিস্তল! আমার থেকেই চুরি করা!’

আড়চোখে হাতের পিস্তলটার দিকে তাকাল ডোবি। ওটা সত্যিই মার্শের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া পিস্তল। প্রাক্তন লম্যানের দিকে কটমট করে চেয়ে রইল ডোবি। মুখে কিছু বলল না।

‘তুমি এভাবেই এর ইতি টানতে চাও?’ প্রশ্ন করল মার্শ।

‘নিশ্চয়!’ খেঁকিয়ে উঠল ডোবি। ‘তুমি কি মনে করো এতটা পথ আমি মিছেমিছি দাবড়ে এসেছি? তুমি আমার বোনকে মেরেছ-আমি প্রতিশোধ চাই!’

আবার কাঁধ উঁচাল মার্শ। মেয়েটাকে সে কেন মারতে বাধ্য হয়েছে, ওসব কথা নতুন করে বলে লাভ নেই। ‘ঠিক আছে, একটু দাঁড়াও, আমাকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামতে দাও—তারপর আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পুরুষের মত লড়ব।’

অবজ্ঞার সাথে মুখ বাঁকাল ডোবি। ‘তোমার কথায় আমি ভুলছি না! ঠিক আছে, তুমি চাইলে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দাঁড়াতে পারো, কিন্তু আমি পিস্তল নামাচ্ছি না। এত বোকা আমি নই, মার্শ!’

হাসল টেড। ‘তাহলে তুমি চাও আমি ড্র করব আর তুমি খোলা পিস্তল হাতে আমার মোকাবিলা করবে?’

‘ঠিক তাই, মার্শাল! তুমিও এর চেয়ে বেশি সুযোগ আমার বোনকে দাওনি!’

‘ভুল বললে!’ চিৎকার করে উঠল টেড। সেইসঙ্গে গোড়ালি দিয়ে ঘোড়ার পেটে খোঁচা দিল। রোনটা লাফিয়ে ডোবির দিকে এগোল। মুহূর্তে পিস্তল বের কোরে গুলি করল টেড।

ডোবি বেইটসই আগে গুলি করেছিল। কিন্তু ঘোড়াটা লাফিয়ে ওর দিকে এগোনোয় লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো সে। টেডের শার্টের হাতায় টান দিয়ে গুলিটা বেরিয়ে গেল। কিন্তু ডোবির কপাল মন্দ, টেডের বুলেট ওর হার্ট ফুটো করে দিয়েছে।

ধুলো আর ধোঁয়া পরিষ্কার হলে ডোবির নিঃসাড় লাশটার দিকে তাকাল মার্শ। এটা নিয়ে কয়টা হলো? একটা স্বর যেন ওকে ব্যঙ্গ করছে শুনতে পেল ও। কয়জন?

সে জানে না-এবং কেয়ারও করে না। সেই পুরোনো ঘটনাই আবার নতুন করে ঘটেছে। নিজেকে বাঁচাবার তাগিদে তাকে আবার গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। কেবল নিজস্ব দক্ষতায় সে আবারও জয়ী হয়েছে। তাহলে তার নিজেকে অপরাধী কেন মনে হবে? কিসের লজ্জা? নিজেকে বাঁচাবার লজ্জা?

বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ডোবির হাত থেকে নিজের পিস্তলটা নিয়ে খাপে ভরল সে। এটা অস্ত্র ব্যবহার করার ক্ষমতা আর সাহসের ফল। ঠিক যখন দরকার। সমালোচকরা কোনদিন বুঝবে না, বুঝতে চাইবে না যে সে খেয়ালের বশে কখনও মানুষ মারেনি- অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মারতে বাধ্য হয়েছে। সেসিলার মত মেয়েও এটা বুঝবে।

তাহলে সে পিস্তল ছাড়তে যাবে কেন? যেটা সে সবথেকে ভাল পারে, সেটাই ছেড়ে দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার মত জায়গায় সে কেন মরতে যাবে? ওখানে একটা মানুষকেও সে চেনে না- অসুখীভাবে তার জীবন কাটবে-শেষ পর্যন্ত একঘেয়েমিতেই শুকিয়ে মরবে।

জাহান্নামে যাক দুশ্চিন্তা, স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল টেড। হাল সে ছাড়বে না। ডোবির লাশ ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে ওকে এসপানিওলায় নিয়ে যাবে। ওখান থেকে কেউ ওকে বেইটস র‍্যাঞ্চে পৌঁছে দেবে। এরচেয়ে বেশি সে আর কি করতে পারে? ওখান থেকে দক্ষিণে সিলভার সিটিতে সে সেসিলার সাথে দেখা করতে যাবে। ওকে বলার মত অনেক কথা টেডের মনে জমে আছে। অনেক কথাই সে লজ্জায় চিঠিতে জানাতে পারেনি—অনেক কথাই বলার সাহস সে এর আগে পায়নি

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *