খুনে মার্শাল – ১৫

পনেরো

সূর্যাস্তের পরপরই ছোট্ট শহর এসপানিওলায় পৌছে গেল টেড মার্শ॥ বছরখানেক আগে মাত্র একবারই আউটলর সন্ধানে এখানে এসেছিল। লোকটাকে ঠিকই খুঁজে বের করেছিল ও। একটা মেক্সিকান মেয়ের ঘরে লুকিয়ে ছিল আউটল। শহর থেকে অল্প দূরেই ছিল মেয়েটার বাড়ি। রোদে পোড়ানো ইটের একটা ছোট্ট অ্যাডোব। অন্যান্য আউটলর মত ওই লোকটাও আপোষে ধরা দিতে চায়নি। গুলি ছুঁড়ে টেডকে মেরে পালাতে চেয়েছিল। শেষে নিজেই খুন হলো। মেক্সিকান মেয়েটা প্রথমে শোকে অভিভূত হলেও পরে শান্ত হয়ে টেডকে তার সাথে রাত কাটাবার জন্যে অনেক সেধেছিল। কিন্তু প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করে হোটেলেই রাত কাটিয়েছিল ও। পরদিন সকালে আউটলৱ ঘোড়ার ওপরই তার লাশটাকে উপুড় কোরে শুইয়ে শিপরকে ফিরে গিয়েছিল।

আজ আবার শহরে ঢুকে খেয়াল করল গত এক বছরে বিশেষ কিছুই বদলায়নি। কেবল ঘরদোরগুলো আরও পুরোনো আর জীর্ণ হয়েছে। এল সমব্রেরো সেলুন, টেক্সাস হোটেল, এসট্রাডার লিভারি আস্তাবল, ব্রেনেম্যানস মার্কেন্টাইল স্টোর আর লঙহর্ন ক্যাফে, সব আগের মতই আছে।

কেবল একটা তফাত চোখে পড়ল। মার্শালের অফিস, আর তার সাথে জেইলহাউস। ওটা নতুন তৈরি করা হয়েছে।

মার্শাল লোকটা কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে এগোল টেড। কাঠের ফুটপাথে যারা চলাচল করছে তাদের প্রত্যেকের নজর ওর ওপর-কারণ সে স্ট্রেঞ্জার। ওদের কৌতূহলী দৃষ্টি উপেক্ষা করে টেক্সাস হোটেলের সামনে এসে পৌঁছল মার্শ। একতালা দালানটাকে চক্কর দিয়ে ঘুরে পিছনের আস্তাবলে পৌঁছল। ওখানে তরুণ আস্তাবলরক্ষীকে ঘোড়ার খাওয়া আর যত্ন নেয়ার ভার বুঝিয়ে দিল। তারপর স্যাডলব্যাগটা কাঁধে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে হোটেলে ঢুকল।

মেক্সিকান ক্লার্ক বিনা বাক্যব্যয়ে রেজিস্ট্রি খাতা বাড়িয়ে দিল। কামরায় স্যাডলব্যাগ রেখে হাতমুখ ধুয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পাশের সেলুনে ঢুকা টেড।

এল সমব্রেরো সেলুনে অনেক মানুষের ভিড়। সিগার আর সিগারেটের ধোঁয়ায় বাতাসটা ভারি। ভিড় ঠেলে বারে জায়গা করে নিয়ে বারটেণ্ডারকে ইশারায় ডাকল।

‘রাই হুইস্কি।’

হাত বাড়িয়ে বোতল বের করে গ্লাসের কানা পর্যন্ত ভরে এগিয়ে দিল এপ্রোন পরা লোকটা।

‘দাম দুই বিট,’ বলল সে।

বারের ওপর পয়সা রেখে গ্লাস তুলে নিল টেড। প্রশ্ন করল, ‘এখানকার মার্শাল কে?’

মার্শের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে একটু ইতস্তত করল বারটেণ্ডার। তারপর বলল, ‘ওর নাম ফ্র্যাঙ্ক রোমেরো। তোমার ওকে দরকার?

‘না। কৌতূহল। আচ্ছা, বলো তো, এখান থেকে আমি কোম্যাঞ্চি ওয়েলসে কিভাবে পৌঁছব?’

রুক্ষ চেহারার বারটেণ্ডারকে দেখেই বোঝা যায় লোকটা শক্ত মানুষ। লালচে চুল, আর ঘন ভুরু। কাঁধ উঁচিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে সে বলল, ‘শহর ছেড়ে বেরিয়ে তোমাকে সোজা পুবে যেতে হবে। নিউ মেক্সিকোর সীমানা পেরিয়ে টেক্সাসে ঢুকে প্রথম মেইন ট্রেইল ধরে দক্ষিণে গেলে তুমি কোম্যাঞ্চি ওয়েলসে পৌঁছে যাবে।’

‘ধন্যবাদ,’ বলে গ্লাস খালি করে আবার ভরে দেয়ার ইশারা করল টেড।

বিল মিটিয়ে একবারে সবটুকু মদ গলায় ঢেলে, পিছন ফিরে বারে কনুই রেখে দাঁড় ল। কামরার লোকগুলোকে দেখছে সে। এরই মধ্যে খদ্দেরের সংখ্যা আরও বেড়েছে। লোকজনের কথাবার্তায় একটানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মাঝেমাঝে উঁচু হাসির শব্দও উঠছে।

ওখানে এতগুলো অপরিচিত লোকের মাঝে দাঁড়িয়ে হঠাৎ টেডের মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। ভাবছে, সাতাশ বছর বয়স হলো, কিন্তু এই বিশাল পৃথিবীতে তার বন্ধু বলতে কেউ নেই। বেনরাই ছিল ওর একমাত্র বন্ধু, এখন ওরা দুজনেই মৃত। সেসিলার কথা মনে পড়ল তার, ভাবছে, তার বরখাস্ত হওয়ার খবর পেয়ে মেয়েটার কি প্রতিক্রিয়া হবে। টেডের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটল। একবারই ওকে রাগতে দেখেছে সে। তখন বেন জুনিয়র ছিল শিপরকের মার্শাল। কিন্তু সে তার বাবার অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। সেসিলা ওকে ভাল মত বকে দিয়েছিল। ওর কথার তোড়ে কুঁকড়ে গেছিল বেন। শেষ পর্যন্ত বেন বাবার বেশি মদ খাওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এতে খুশি হয়েছিল সেসিলা।

কিন্তু ওটা প্রায় বছরখানেক আগের কথা। আপন মনেই মাথা নাড়ল টেড। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারের দিকে ফিরে আরও একটা ড্রিঙ্ক কিনে গলায় ঢালল। গলা জ্বালিয়ে পেটে গিয়ে একটা গরম অনুভূতি জাগাল।

তিন গ্লাস হুইস্কি খাওয়ার পর মার্শের একটু যেন নেশা হয়েছে। এখন শিপরকের কাজটা হারানোর ব্যথা ওর ভিতরটাকে কুরেকুরে খাচ্ছে। নিজেকে সে যতই প্রবোধ দিক না কেন আসলে মার্শালের কাজটাই ছিল তার সব। নিজের জীবন বাঁচাতে দুজন আউটলকে হত্যা করে চাকরি হারানো তার কাছে নেহাত অন্যায় অবিচার বলেই মনে হয়।

দ্রুত কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে বাস্তবে ফিরে এল টেড। এখন সে আর লম্যান নয়। সে একজন ভাড়াটে গানম্যান-বাউন্টি হান্টারের কাজ নিয়েছে।

বারটেণ্ডারকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমাদের এখানে কিছু খাবার পাওয়া যাবে?’

একটা গ্লাস মুছতে-মুছতে টেডের দিকে চেয়ে বিশাল লোকটা বলল, ‘আমাদের শহরে একটা সুন্দর ক্যাফে আছে…ভাল খাবার, আর দামেও এখানকার চেয়ে সস্তা।’

‘এখন ফিটফাট হয়ে কোন ক্যাফেতে যাওয়ার সময় আমার নেই।’

কাঁধ উঁচিয়ে অল্প একটু হেসে সে বলল, ‘তাহলে আমিই নাহয় তোমাকে স্টেক, আলু, বীনস আর রুটি এনে দিচ্ছি, কিন্তু তোমার কাছে বিল মেটাবার মত পয়সা আছে তো?’

‘তা আছে,’ বলে হাসল টেড। ‘নিয়ে এসো!’

হুইস্কির বোতল আর গ্লাসটা নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসল সে। বার ছেড়ে যাওয়ার আগে বারটেণ্ডারকে জানাল পুরো বিল সে একবারেই খাওয়ার শেষে শোধ করবে।

আরও দু’গ্লাস হুইস্কি খাওয়ার পর জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করল টেড। কল্পনায় সেসিলার কাছে চলে গেল সে। একটা ঝর্নার ধারে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে মেয়েটা। টেড ওর কোলে মাথা রেখে চিত হয়ে শুয়ে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সেসিলা। নিচু মৃদু স্বরে কথা বলছে ওরা।

‘টেড…?’ মেয়েটার কোমল স্বর যেন মধু ঝরাল ওর কানে।

‘বলো?’ চোখ বুজেই জবাব দিল টেড।

‘আর কতদিন তুমি কথাটা আমার কাছে গোপন রাখবে?’

উঠে বসে সেসিলার দিকে তাকাল টেড। ‘গোপন রাখব? এ তুমি কি বলছ, সেসিলা? ‘তোমার কাছে গোপন করার মত আমার কিছুই নেই-কোনদিন থাকবেও না।’

‘কিন্তু আমি জানি আছে।’

হাসল টেড। ‘ঠিক আছে, তাহলে তুমিই বলো তোমার কাছে আমি কি গোপন করেছি!’

মেয়েটা লজ্জায় একটু লাল হলো। ‘আমি…আমি বলতে পারব না। মেয়েদের ওসব বলতে নেই।

‘তুমি ছল করছ। অর্ধেক কথা বলে বাকিটা গোপন রাখতে চাইছ!’

‘মোটেও তা নয়। আমি ছল করছি না।’

‘তাহলে বলো, গোপন কি কথা আছে আমার?’

গম্ভীর হলো ওর চেহারা। নরম দুটো হাতে টেডের মাথা চেপে ধরে সে বলল, ‘তুমি আমার কাছে গোপন রেখেছ যে তুমি আমাকে ভালবাস। কি, ঠিক বলিনি?’

কয়েক সেকেণ্ড টেডের মুখ থেকে কথা সরল না। চোখ নামিয়ে নিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল সে। তারপর বলল, ‘হ্যাঁ, বাসিই তো-তোমাকে আমি মনেপ্রাণে ভালবাসি। কিন্তু তুমি আমার বন্ধুর স্ত্রী। তাই এতদিন কথাটা জানাতে পারিনি।’

‘আমি বুঝি, টেড। কিন্তু বেন মরে গেছে, তার বাবাও আর নেই—কেবল রয়েছি আমরা। শুধু তুমি আর আমি।’

‘হ্যাঁ, তা ঠিক। কেবল তুমি আর আমি।

‘ওহ, টেড!’ ওকে জড়িয়ে ধরল সেসিলা।

‘এই যে, তোমার খাবার নাও!’ বারটেণ্ডারের ডাকে টেডের সুখ-স্বপ্ন ভেঙে গেল। বাস্তবে ফিরে এল সে।

অনেক খাবার এনেছে লোকটা। একটা বড় প্লেটে মোটা আর রসাল স্টেক, আলু, মাখন আর গ্রীন বীনস। একটা ছোট প্লেটে লেটুস আর টমেটো সালাদও রয়েছে।

‘ধন্যবাদ,’ বলে দাঁত বের করে হাসল টেড। ‘দেখেই বুঝতে পারছি খাওয়াটা দারুণ জমবে!’ সত্যিই খুশি হয়েছে সে। সেই ভোর থেকে নিয়ে আজ সারাটা দিন তার পেটে কিছুই পড়েনি। হুইস্কি তার খিদেটাকে আরও চাঙা করেছে।

‘বোতল সহ তোমার বিল পাঁচ ডলার হয়েছে,’ জানাল বারটেণ্ডার।

বিল মিটিয়ে খাওয়ায় মন দিল টেড। ওর খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এই সময়ে সেলুনের মেক্সিকান একটা মেয়ে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল।

‘কোমস্তা, সেনিওর।’ মিষ্টি চেহারার মেয়েটা চমৎকার সাদা দুপাটি দাঁত বের করে হাসল।

‘কোমস্তা, সেনিওরিনা!’ হেসে জবাব দিল টেড।

‘তোমার সঙ্গিনী চাই?’

‘নিশ্চয়! একা একা মদ খাওয়া ঠিক জমে না।’ বারটেণ্ডারকে ডেকে আরও একটা গ্লাস দিতে বলল টেড। খাওয়া শেষ হয়েছে দেখে গ্লাস দিয়ে খালি প্লেটগুলো নিয়ে গেল বারটেণ্ডার।

টেডের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসল মেয়েটা। বোতল থেকে মেয়েটার গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে দিয়ে নিজেও কিছুটা নিল। কথায়-কথায় সে জানল মেয়েটার নাম মারিয়া। এক বছর আগে সে যখন আউটলর খোঁজে প্রথমবার এসপানিওলায় এসেছিল তখনই মেয়েটা ওকে দেখেছে।

আরও আধঘণ্টা এটা-সেটা আলাপ করার পর বোতলের বাকি মদ মারিয়ার জন্যে রেখে বিদায় নিয়ে উঠে পড়ল টেড। হোটেলে ফিরে ওকে বিশ্রাম নিতে হবে।

‘দাঁড়াও, মার্শাল মার্শ!’ তীক্ষ্ণ স্বরে আদেশ দিয়ে পথ আটকে দাঁড়াল শক্ত গড়নের একটা লোক।

ষোলো

থমকে দাঁড়াল টেড। লোকটার দিকে তাকিয়ে ওকে চেনার চেষ্টা করছে। মাঝারি গড়নের একটা শক্ত মানুষ। কুচকুচে কালো চুল, পুরু গোঁফ আর গাল ভরা দাড়ি। ছোটছোট বোতামের মত চোখ দুটো সরু কোরে ঘৃণার দৃষ্টিতে চেয়ে আছে লোকটা। বিদ্বেষে ঠোঁট দুটো উলটে হলুদ দাঁতগুলো বেরিয়ে পড়েছে। একটু কুঁজো হয়ে পিস্তলবাজের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছে সে। কাঁধ দুটো সামনে ঝুঁকে এসেছে-যেন মোকাবিলার জন্যে তৈরি।

‘হয়তো তুমি শোনোনি,’ শান্ত স্বরে বলল টেড, ‘এখন আর আমি মার্শাল নই।’

‘কথাটা আমার কানেও এসেছে,’ বলল দাড়িওয়ালা। কিন্তু তুমি মার্শাল ছিলে, সেটাই যথেষ্ট। আমি এখানে বসে তোমাকে লক্ষ করছিলাম, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। উঠে দাঁড়াবার পর চিনলাম তুমিই সেই লোক!’

টেড এখনও মনে করার চেষ্টা করছে লোকটা কে হতে পারে। সেলুনের খদ্দেররা যে যা করছিল থামিয়ে ওদের দুজনকে দেখছে। দূর থেকে ভঙ্গুর কাঁচের কিছু পড়ে ভাঙার আওয়াজ হলো—সম্ভবত একটা গ্লাস।

‘কি ব্যাপার, মার্শাল? আমাকে চিনতে পারছ না?’

মাথা নাড়ল টেড। হয়তো অতীতে তার সাথে কোনসময়ে দেখা হয়েছে। লোকটার উদ্ধত চালচলনে মনে হচ্ছে সে একজন আউটল।

‘তুমি ঠিকই বলেছ, বন্ধু। তোমাকে চিনতে পারছি না।’

‘আমাকে চেনা তোমার উচিত!’ লোকটা খেঁকিয়ে উঠল। ‘আমি ড্যানি হল। বছরখানেক আগে তুমি আমার পার্টনারকে খুন করেছ। আর আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলে।

নামটা শুনে টেডের মনে পড়ল। একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়েছিল। ডাকাত দুজন ব্যাঙ্ক লুট করে নিজেদের ঘোড়ার দিকে ছুটে যাওয়ার সময়ে বাধা দিয়েছিল ও। ওকে আসতে দেখে দুজনই গুলি ছুঁড়েছিল। পালটা গুলিতে ড্যানি আহত হয়েছিল, আর ওর সঙ্গী মারা পড়ে।

সতর্ক হলো মার্শ। বেকায়দা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে তৈরি থাকল। মুখে বলল, ‘হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। কিন্তু…তোমাকে আমি জেলে পাঠাইনি, পাঠিয়েছিল জাজ। সে তোমাকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিল না?’

কুৎসিত একটা হাসি দিল হল। ‘আমাকে পাঁচ বছর আটকে রাখার মত জেল নিউ মেক্সিকোতে নেই!’

‘তাহলে তুমি জেল থেকে পালিয়ে এখানে এসেছ?’

‘এর চেয়ে ভাল জায়গা আর কোথায় আছে? এই এলাকাতেই আমি বড় হয়েছি, মার্শাল!’

শক্ত লোকটার চোখে প্রতিশোধ নেয়ার দৃঢ় সঙ্কল্প দেখতে পাচ্ছে মার্শ। প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রায় একই ঘটনা ঘটে। জেল থেকে ছাড়া পেলেই প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে খুন করার চেষ্টা করে।

ড্যানির চোখ টেডের কোমরে গোঁজা পিস্তলটার ওপর। এসপানিওলায় পৌঁছে খাপসহ গানবেল্ট আর পিস্তল কেনার ইচ্ছা ছিল ওর, কিন্তু এখনও তার সেই সুযোগ হয়নি।

‘দেখছি পিস্তলটা তুমি হাতের কাছেই রাখতে শুরু করেছ,’ একটু হেসে বলল হল, ‘কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ নেই, তোমার ওপর কোন আক্রোশ আমি পুষে রাখিনি।’

কঠিন এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল মার্শের ঠোঁটে। অনেক আগেই সে বুঝতে শিখেছে যে একজন আউটলর মুখের কথা আর কাজে অনেক তফাত।

‘আক্রোশ পুষে রাখলেও সেটা আমার জন্যে নতুন কিছু হবে না, ড্যানি,’ শান্ত স্বরে বলল টেড।

‘তোমার ওপর রাগ আছে বলিনি, রাগ নেই তাও বলছি না,’ উদ্ধত সুরে বলল সে। ‘আক্রোশ থাকাই উচিত—তুমি আমাকে জেলে পাঠিয়েছ, পার্টনারকে মেরেছ, তোমার জন্যেই বৌকে হারিয়েছি আমি-এতসবের বদলে তোমারও নিশ্চয় কিছু পাওনা হয়েছে।

মার্শ আর হলকে ঘিরে লোকজনের ভিড় আরও বেড়েছে। যারা দূরে ছিল তারাও জটলা দেখে কি হচ্ছে দেখার জন্যে এগিয়ে এল।

ড্যানির শেষ কথাটার কোন জবাব দিল না টেড। ঘৃণা ভরা চেহারায় চারপাশে লোকজনের ওপর চোখ বোলাল আউটল।

‘তোমরা সবাই শোনো,’ চিৎকার কোরে দর্শকদের উদ্দেশে বলল সে, ‘এই লম্যান-অবশ্য ওকে এক্স-লম্যানই বলা উচিত—এই লোক নিজেকে খোদার ডান হাত বলেই মনে করে। এবং নিজের ইচ্ছা মত খুন করে!’

দর্শকদের মধ্যে অসন্তোষের গুঞ্জন উঠল। জটলার ভিতর থেকে কেউ চিৎকার করে উঠল, ‘একটা হারামজাদা!’ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে দেখে বারটেণ্ডার একটা চেয়ারের ওপর উঠে চেঁচাল, ‘তোমরা সবাই শুনে রাখো! সেলুনের ভিতর কোন গোলমাল আমি চাই না! বুঝেছ?’

বিশাল বারটেণ্ডারের হুমকি কানেই তুলল না হল। সে বলে চলল, ‘আমার পার্টনারের বৌ আর তিনটে বাচ্চা ছিল, মার্শাল। ওদের ভাগ্যে কি ঘটেছে জানতে চাও? ওরা সবাই না খেতে পেয়ে মারা গেছে। হ্যাঁ, চারজনই একে একে মরেছে। তুমি আমার যা করেছ, আর আমার পার্টনারের পরিবারকে যেভাবে ধ্বংস করেছ, তাতে আমার কাছে তোমার অনেক পাওনা হয়েছে!’

‘ড্যানি, তুমি এর জন্যে মার্শালকে দায়ী করতে পারো না,’ প্রতিবাদ জানাল বারে দাঁড়ানো ভদ্র পোশাক পরা একজন। ‘এর জন্যে যদি কেউ দায়ী হয় তবে তোমার পার্টনারের প্রতিবেশীরাই দায়ী। ব্লেকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার জন্যে কেউ কিছুই করেনি। তাই দোষ দিতে হলে প্রতিবেশীদের দাও, মার্শালকে নয়!’

জ্বলন্ত চোখে বারে দাঁড়ানো লোকটার দিকে চাইল হল। ‘তোমাকে এর ভিতর নাক গলাতে কেউ ডাকেনি, মিস্টার! তুমি চুপ থাকো!

ধমক খেয়ে লোকটা চুপ হয়ে গেল। বুঝতে পারছে মার্শালের পক্ষ নিয়ে আরও কথা বলতে গেলে তার গোলাগুলির মধ্যে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

লম্বা সোনালী চুলওয়ালা একজন বলে উঠল, ‘আমার মনে হয় ব্লেক মারা না গেলেও ওর পরিবার না খেয়েই মরত। কারণ, বেঁচে থাকলে ওকেও তোমার সাথে জেলে যেতে হত।’

দ্বিতীয় লোকটার দিকেও জ্বলন্ত চোখে তাকাল হল, কিন্তু ওর কথার জবাব দিল না। ওর কঠিন দৃষ্টি মার্শের ওপর ফিরে এল। ‘তুমি একজন খুনে মার্শাল ছাড়া আর কিছুই নও। একটা টিন স্টারের পিছনে থেকে তুমি মানুষ খুন করে বেড়াও!’

মার্শের ভিতরটা রাগে গরম হয়ে উঠেছে, কিন্তু বাইরেটা শান্ত রাখল সে। ওর চোখ দুটো সরু হয়ে উঠেছে। ‘আমার কাজের জন্যে তোমাকে বা আর কাউকে আমি কৈফিয়ত দিতে যাব না, হল্! বুঝলে?’

‘তাই বটে!’ খেপে উঠল দাড়িওয়ালা। ‘তুমি ঠাণ্ডা মাথায় ব্লেককে গুলি করে হত্যা করেছ-এটা খুন! ‘

‘মিথ্যে কথা!’ গর্জে উঠল টেড। তার বাহ্যিক শান্ত ভাবটা বিদায় নিয়েছে। ‘আমাকে মারতে চেষ্টা না করলে আমি কাউকে হত্যা করি না। তোমার বন্ধু ব্লেক সেই চেষ্টাই করেছিল!’

‘হ্যাঁ, নিশ্চয়!’ বিদ্রূপ করল হল। ‘তোমাদের কেতাদুরস্ত উকিলরা বলেছিল তুমি আত্মরক্ষার জন্যে গুলি করেছিলে। কিন্তু আসল ঘটনা আমি জানি। ব্লেক পিস্তল বের করে তোমার দিকে তাক করার আগেই তুমি ওকে গুলি করেছিলে!’

‘বলতে চাও কেউ আমাকে গুলি করতে যাচ্ছে দেখেও চুপ করে বসে থাকব আমি? তুমি যা খুশি বলো, তাতে আমার কিছু আসে-যায় না,’ ধমকে উঠল টেড।

‘তবু তুমি একজন জঘন্য প্রকৃতির খুনী!’ থুতু ফেলল হল।

সেলুনে অদ্ভুত একটা নীরবতা নেমে এসেছে। চাপা একটা উত্তেজনা বিরাজ করছে কামরায়। ধীরে হাত নিচে নামাল টেড। কোমরের দুপাশে ওর হাত ঝুলছে। হলের পা দুটো ছড়ানো, মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে এসেছে-ওরও হাত নিচে নেমেছে। সমর্থন পাওয়ার আশাতেই যেন দর্শকদের দিকে আড়চোখে চাইল সে। লোকগুলো এখন সাবধানে গুলির লাইন থেকে সরে দাঁড়াল। ড্যানির কপালটা ঘামে চকচক করছে।

‘এইবার, এক্স-মার্শাল, আমি তোমাকে…’ হঠাৎ থেমে গেল সে।

ভিড় ঠেলে মার্শালের স্টার পরা পাতলা গড়নের একটা মানুষ এগিয়ে এল। ‘অনেক হয়েছে, ড্যানি। আমার শহরে ওই ধরনের কথাবার্তা আমি সহ্য করব না!’ তীক্ষ্ণ স্বরে ঘোষণা করল এসপানিওলার মার্শাল।

সতেরো

‘এখানে এসব কি হচ্ছে?’ জানতে চাইল মার্শাল রোমেরো। লোকটার পরনে নীল জীনস আর উজ্জ্বল লাল রঙের সিল্ক শার্ট। মাথার কালো হ্যাটে সাপের চামড়ার একটা ব্যাণ্ড। পায়ে ক্ষয়ে যাওয়া নোঙরা বুট। দুটো পিস্তল ঝুলছে ওর পাতলা কোমরে। পাতলা কঠোর চেহারায় ভাসাভাসা চোখে ঘুমঘুম একটা ভাব। ওর প্রতি লোকজনের সম্মান দেখে বোঝা যায় কোন রকম হাবিজাবি সে সহ্য করে না।

রোমেরোর দৃষ্টির সামনে ড্যানির বিদ্বেষে ভরা কঠিন চেহারাটা নরম হলো। ‘আমি পুরোনো এক বন্ধুর দেখা পেয়েছি, ফ্র্যাঙ্ক,’ হেসে বলল সে। ‘ওর সাথে পুরোনো দিনের আলাপ করছিলাম-আর কিছু নয়।’

রোমেরো একদৃষ্টে কিছুক্ষণ হলকে দেখে মার্শের দিকে চোখ ফেরাল। সন্দিগ্ধভাবে ভুরু কুঁচকাল সে। তারপর আবার কঠিন দৃষ্টিতে ড্যানির দিকে তাকাল।

‘আমার মনে হচ্ছে তুমি যা বলছ সেটা ঠিক সত্যি কথা নয়,’ বলল সে। ‘যেকোন বোকাও বুঝবে এখানে আরও কিছু ঘটছিল। আমি বোকা নই। বুঝেছ?’ একটু থেমে দর্শকদের ওপর চোখ বোলাল রোমেরো। আশা করছে ওদের কেউ মুখ খুলবে-কিন্তু কেউ কোন মন্তব্য করল না। কেউই সাক্ষী হয়ে নিজেকে এই ব্যাপারে জড়াতে চাইছে না। ব্যাপারটা মার্শও খেয়াল করল।

এই ধরনের ঘটনা মার্শাল হিসেবে টেড বহুবার দেখেছে। ইচ্ছে করলেই দর্শকরা মুখ খুলে লম্যানের কাজ অনেক সহজ করে তুলতে পারে, কিন্তু সহজে কেউ তা করে না-বোবা হয়ে থাকে। এর কারণটা বোঝা খুব সহজ। কেউ মুখ খুললে অপরাধী তাকে চিনে রাখে, পরে সুযোগ বুঝে শোধ নেয়। তাই সেধে কেউ ঝামেলায় জড়াতে চায় না।

‘আমি তোমাকে যা বলেছি তারচেয়ে বেশি কিছুই ঘটেনি, ফ্র্যাঙ্ক। ওটাই সত্যি। এভাবে আমার ওপর চড়াও হবার কোন অধিকার তোমার…

‘তোমাকে যা বলেছি সেটা মনে রেখো!’ ধমকে ওকে থামিয়ে দিল রোমেরো। ‘তুমি কোন ঝামেলা বাধালে তোমাকে শহর থেকে বের করে দিতে আমার মোটেও সময় লাগবে না। আসলে তোমাকে শহর থেকে তাড়াতে পারলেই আমি খুশি হতাম। কিন্তু বর্তমানে তা পারছি না, কারণ তুমি এখনও কিছু করনি। কিন্তু তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি…’

‘বাড়াবাড়ি কোর না, মার্শাল! আমি অন্যায় কিছু…’

‘ভামোনস্! প্রন্তো!’ রাগে মেক্সিকান মার্শালের মুখ থেকে মাতৃভাষা বেরিয়ে এল। ‘সেলুন ছেড়ে বেরিয়ে যাও! এক্ষুণি!’

অবাধ্য দৃষ্টিতে মার্শালের দিকে অল্পক্ষণ চেয়ে থেকে অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচাল সে। তারপর গোড়ালির ওপর ঘুরে দরজার দিকে এগোল। দরজার কাছে মুহূর্তের জন্যে থেমে পিছন ফিরে টেডের দিকে একবার জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বেরিয়ে গেল।

‘এবার বলো, মিস্টার মার্শ, তুমি এই শহরে কেন এসেছ?’ শান্ত ভদ্র স্বরে প্রশ্ন করল এসপানিওলার মার্শাল।

‘টেক্সাস যাওয়ার পথে রাত কাটাবার জন্যে থেমেছি। এতে দোষের কিছু আছে?’

ধূর্ত একটা হাসি খেলে গেল রোমেরোর ঠোঁটে। নিশ্চয় না, মিস্টার মার্শ! আজকের রাতটা বিশ্রাম করো, কিন্তু প্ল্যান মত কাল সকালেই তুমি আমার শহর ছেড়ে চলে গেলেই খুশি হব।’

শুষ্কভাবে একটু হাসল টেড। ‘তোমার কথার ধাঁচটা ঠিক অতিথিপরায়ণ হলো না, মার্শাল। সেটা কি…’

‘হ্যাঁ, তুমি শিপরক থেকে মার্শালের পদ—’

‘ওঃ—হ্যাঁ। ঠিক।’

‘মার্শ, অপরাধ নিয়ো না, কিন্তু আমি শুনেছি শিপরকের ওরা তোমাকে আর রাখতে চায়নি। তাই আমিও চাই না তুমি এসপানিওলায় বেশিদিন থাকো। আমি চাই শহরের কেউ নিজেকে ফাস্ট প্রমাণ করতে তোমার বিরুদ্ধে পিস্তল লড়াইয়ে নামার আগেই তুমি শহর ছাড়ো। এই শহর শূটিভ গ্যালারিতে পরিণত হোক তা আমি চাই না, কম্‌প্রেন্দে?’

মার্শের মেজাজটা আবার গরম হয়ে উঠছে। বোঝা যাচ্ছে ওকে নিয়ে বর্তমানে যেসব গুজব ছড়াচ্ছে, তার কিছুটা রোমেরোর কানেও পৌঁছেছে। কিন্তু নিজেও লম্যান হয়ে এসব ওর বোঝা উচিত ছিল। সাধারণত আউটলরাই এসব গুজব ছড়ায়। তারা অভিযোগ করে তাদের প্রতি অন্যায় অবিচার করা হয়েছে। যাহোক, ওসবে এখন আর তার কিছু আসে যায় না।

‘বুঝলাম,’ শান্ত স্বরে বলল টেড।

ড্যানির প্রস্থানের পর ভিড়টা একটু পাতলা হয়েছিল, কিন্তু কৌতূহলী শ্রোতার দল এখন মার্শ আর রোমেরোকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ওদের মধ্যে কি কথা হয় সব শুনতে হবে। একটা কথাও যেন মিস না হয় সেজন্যে সবাই কান পেতে রয়েছে।

‘তুমি কি লম্যান হয়ে টেক্সাসে যাচ্ছ, মিস্টার মার্শ? রোমেরো প্রশ্ন করল। ‘আমি কোথায় কি করি তা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাবার দরকার নেই। তুমি নিজের চরকায় তেল দাও!’

ভিড়ের মধ্যে একজন চেঁচিয়ে উঠল, ‘মার্শাল! এমন উদ্ধত কথাবার্তা তুমি সহ্য কোর না! ওকে বুঝিয়ে দাও তুমিই এখানকার ল।’

‘হ্যাঁ!’ দূরে থেকে আরেকজনের গলা শোনা গেল। ‘অন্তত তুমি ওর মত বিনা কারণে পিস্তল চালাও না!’

একটু বাঁকা হাসি ফুটল রোমেরোর ঠোঁটে। ‘মনে হচ্ছে পাবলিক সাপোর্ট আমার পক্ষে।’

‘নিশ্চিন্ত হয়ো না, মার্শাল,’ বিদ্রূপের সুরে বলল মার্শ। ‘ওরাই হয়তো একদিন তোমার বিরুদ্ধে বলবে!’

‘হয়তো।’

‘যাক, এবার আমি প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা সেরে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নেব।’

‘আগামীকাল ভোরেই তুমি শহর ছাড়ছ তো?’

‘অবশ্যই। এখানে অযথা নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। বুয়েনস্ নচেস্, মার্শাল।’

‘বুয়েনস্ নচেস্, সেনিওর।’

সেলুন থেকে বেরিয়ে এল টেড। স্টোর থেকে কোল্ট .৪৫-এর সাথে খাপসহ গানবেল্ট আর একটা উইনচেস্টার রাইফেল কিনে হোটেলে ফিরে এল। ওগুলোর জন্যে যথেষ্ট কার্তুজও কিনেছে।

টেক্সাস হোটেলে নিজের কামরায় ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল সে।

আঠারো

কথা মত ভোরবেলাই রোনের পিঠে জিন চাপিয়ে টেক্সাসের পথে রওনা হয়ে গেল মার্শ। রাতে চমৎকার ঘুম হয়েছে। গতদিনের ক্লান্তি কেটে গিয়ে এখন সে পুরোপুরি চাঙা বোধ করছে। বিশ্রামটা খুব কাজে এসেছে।

পথ চলতে চলতে ডোবি বেইটসের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। এসপানিওলায় লোকটার কোন চিহ্নই সে দেখতে পায়নি। গতকাল দক্ষিণে বাঁক নিয়ে সরে আসাতেই সম্ভবত ডোবি তার ট্রেইল হারিয়ে ফেলেছে।

সমস্যাটার এত সহজ আর সুন্দর সমাধান হওয়ায় মনে মনে খুশি হলো টেড। কিন্তু পরক্ষণেই একটা চিন্তা ওকে বিচলিত করে তুলল। ভাবছে, ডোবি এসপানিওলা শহরে লোকজনের সামনে ওর মোকাবিলা না করে টেক্সাসের পথে কিছুটা এগিয়ে তাকে অ্যামবুশ করার মতলব করেনি তো? অসম্ভব কিছুই না, বরং এটাই স্বাভাবিক। শহরে কাউকে হত্যা করলে মার্শাল তাকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত জেলে ভরে রাখবে। তাই ডোবির পক্ষে ওকে নির্জন জায়গায় অ্যামবুশ করে মেরে সরে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণত কেউ যেচে টেডের সাথে লড়তে এলে এড়িয়ে যাওয়াটা ওর স্বভাব নয়। কিন্তু এখন সে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তবে কি মার্শালের পদ হারানো, আর পরবর্তীতে ওর প্রতি কিছু লোকের ঘৃণা প্রদর্শনে ওর মন দুর্বল হয়ে পড়েছে?

নিজের মনেই মাথা নাড়ল টেড। তা হতেই পারে না, কারণ এসবে তার কিছু আসে যায় না। এবং চাকরির খাতিরে ও যতটা করা প্রয়োজন মনে করেছে, তাই করেছে।

ভাবনাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ডান হাতে খাপের কোল্টটাকে একটু তুলে আলগা করে দেখল। গানবেল্ট আর খাপ, দুটোই পুরোনো, তাই নতুন পিস্তলটা মসৃণভাবেই হাতে উঠে আসছে। গতকাল ভোর থেকে এখন পর্যন্ত ভাগ্য তার পক্ষেই আছে। বাকি দিনটাও এইভাবে কাটলেই ও খুশি।

জিনের ওপর নড়েচড়ে বসে ঘোড়াটাকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিল মার্শ। ভোরের চমৎকার ঠাণ্ডা বাতাসে পথ চলতে খুব ভাল লাগছে। পুবের আকাশে সূর্য ওঠার পরেও কিছুটা লালের আভাস রয়েছে। শিশিরে ভেজা ঘাস ভোরের কোমল আলোয় চিকচিক করছে।

ছোটছোট রবার জে পাখি ঝোপঝাড়ের ভিতর খেলছে। ট্রেইল থেকে কিছুটা দূরে খুঁটির ওপর বসে থেকে থেকে ডেকে উঠছে একটা মেঠো লার্ক। ফোঁস কোরে শ্বাস ফেলল টেড। টেক্সাস পর্যন্ত পুরোটা পথ এমন হলে ভাল হত। কিন্তু জানে তা হবার নয়। সামনে অনেকটা পথ তাকে ডেভিল্‌স্ কিচেনের দক্ষিণ প্রান্ত ঘেঁষে চলতে হবে। এই এলাকা সম্পর্কে এটুকু সে জানে। কিন্তু টেক্সাসে ঢুকে দক্ষিণে কোম্যাঞ্চি ওয়েল্স্ পর্যন্ত পথ তার অপরিচিত।

হঠাৎ কেন যেন টেডের মনে খটকা লাগল। কিছুই দেখেনি বা শোনেনি, তবু ওর মনে হচ্ছে সামনে বিপদ আছে। সতর্ক হলো সে, কিন্তু ভাবটা বাইরে প্রকাশ করল না। আগের মতই ঘোড়ার পিঠে স্থির বসে সহজ গতিতেই এগিয়ে চলল। কিন্তু ওর তীক্ষ্ণ আড়চোখের দৃষ্টি পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। প্রতিটা ঝোপ, অ্যাপাচি পিউম, মেসকিট আর সিডারের আড়ালগুলো খুঁটিয়ে লক্ষ করছে। ট্রেইলের পাশে যেসব বড় পাথরের পিছনে একটা মানুষের পক্ষে লুকানো সম্ভব, সেগুলোর ওপরও নজর রাখছে।

ডান দিকের ঝোপগুলোর মাঝে ফাঁকা একটা গলির মত জায়গায় হঠাৎ একটু নড়াচড়ার আভাস ওর চোখে পড়ল। পরক্ষণেই ড্যানি হল বেরিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়াল।

টেডের মুখ থেকে তেতো একটা গালি বেরোল। তার বোঝা উচিত ছিল গতরাতের ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হতে দেবে না হল। ওর প্রতি টেড একটা বিরাট অন্যায় করেছে বলেই সে মনে করে। তাই প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ ড্যানি ছাড়বে না।

‘দাঁড়াও, মিস্টার এক্স-মার্শাল! এখানেই তোমার যাত্রা শেষ! মরার জন্যে তৈরি হও!’ চিৎকার করল কঠিন চেহারার আউটল। পা ফাঁক কোরে দাঁড়িয়েছে লোকটা। পিস্তলের বাঁটের ওপর ওর ডান হাত। লাগাম টেনে রোনটাকে দাঁড় করাল টেড। ট্রেইলের ওপর পিছলে একটু এগিয়ে ঘোড়াটা থেমে গেল।

‘হল্! পিস্তল বের করার চেষ্টা কোর না! সাবধান করল টেড। ‘অস্ত্র বের করলেই তুমি মরবে! শুনছ? ওইখানে দাঁড়িয়েই তোমার মরণ হবে!’

কোন দম্ভ প্রকাশ পেল না ওর স্বরে। কথাটা নিছক একটা সত্য উক্তির মতই শোনাল।

মুখ কুঁচকাল হল। কিন্তু ওর কঠিন চেহারায় কোন পরিবর্তন হলো না। তবু কথাটা শুনে একটু ইতস্তত করল। এরই ফাঁকে ডান হাতটা কোমরের পাশে এনে তৈরি হয়েছে টেড।

‘শোনো, ওসব মিথ্যে হুমকিতে কোন কাজ হবে না!’ কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝট করে পিস্তল বের করল হল।

কিন্তু পিস্তল তাক করার আগেই টেডের কোল্টটা গর্জে উঠল। গুলির ধাক্কায় টলতে টলতে পিছিয়ে গেল লোকটা। ওর বুকের ওপর একটা লাল ছোপ দেখা দিল। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ওটা। রিফ্লেক্স অ্যাকশনেই ওর আঙুলটা ট্রিগারের ওপর চেপে বসল। গুলিটা ওরই পায়ের কাছে রোদে-পোড়া শুকনো মাটিতে ঢুকল। ‘ওহ্, ড্যাম!—জাহান্নামে যাও তুমি!’ তিক্ত স্বরে গালি দিল ড্যানি। তারপর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ল ওর লাশ।

‘ওই যে! ওদের গুলির আওয়াজ!’

চিৎকারটা বাম দিকে কতগুলো ঝোপের আড়াল থেকে এসেছে। মুহূর্তে বুটের গুঁতোয় ঘোড়াটাকে নিয়ে হলের লাশটার পিছনে সিডার ঝোপের ভিতরে ঢুকে গেল টেড।

দশ-বারো গজ যাওয়ার পর লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল। আড়াল থেকে মৃতদেহটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কারা ওকে অনুসরণ করছে দেখার অপেক্ষায় রইল সে।

বেশিক্ষণ ওকে অপেক্ষা করতে হলো না। অল্পক্ষণ পরেই পিস্তল হাতে দুজন লোককে দেখতে পেল। খুব সাবধানে এগোচ্ছে ওরা। ওদের চিনতে পেরে বিস্ময়ে অস্ফুট একটা শব্দ বেরোল টেডের মুখ থেকে। ওদের একজন মার্শাল রোমেরো-দ্বিতীয়জনের বয়স অনেক কম—ওর বুকের ওপর ব্যাজ দেখে টেড বুঝল, লোকটা রোমেরোর ডেপুটি। মাটিতে থুতু ফেলল রোমেরো।

‘মনে হচ্ছে আমাদের গ্রিঙ্গো (Gringo-আমেরিকান) বন্ধু চোখে ধুলো দিয়ে সরে পড়েছে,’ অসন্তুষ্ট স্বরে বলল সে। তারপর পিস্তল খাপে ভরে ড্যানির দিকে এগোল। লাশটাকে চিত করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘গুলিটা সরাসরি বুক ফুটো করে দিয়েছে। হল বুঝতেই পারেনি কিসের আঘাতে মরল।’

তরুণ ডেপুটিও মার্শালের পিছন পিছন এগিয়ে এসে ঝুঁকে লাশটাকে দেখল। ‘হল তার পিস্তল ঠিকই বের করেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছে মার্শের মত চালু ছিল না ওর হাত।’

রোমেরো তার কালো হ্যাটটা একটু পিছন দিকে ঠেলে দিল। ‘আমি আগেই বুঝেছিলাম এইরকম একটা কিছু ঘটতে পারে। ভেবেছিলাম হয়তো ঠেকাতে পারব। কিন্তু আমরা দেরি করে ফেলেছি। দুঃখজনক-সময় মত পৌঁছতে পারলে হল্ কিছু করার আগেই মার্শকে আমি গেঁথে ফেলতাম। কারণ খুনে মার্শাল আমার দু’চোখের বিষ। এমন লম্যানের জন্যেই আমাদের ছোট হতে হয়।’

ডেপুটি মৃতদেহের আড়ষ্ট মুঠি থেকে পিস্তলটা ছাড়িয়ে নিয়ে সামনের ট্রেইলটার দিকে মুখ তুলে তাকাল। ‘তোমার কি ইচ্ছা, মার্শাল? পিছনে ধাওয়া করে ওকে শেষ করতে চাও?’

‘হ্যাঁ। তাই করব। আমি জানি আমার পক্ষে কাজটা মোটেও কঠিন হবে না,’ জবাব দিল রোমেরো।

‘লোকটা বেশিদূরে সরে যেতে পারেনি। ড্যানির লাশটা এখনও গরম আছে।’

‘শয়তান গ্রিঙ্গো!’ আক্ষেপ করল রোমেরো। ‘ইশ, আমরা যদি একটু আগে এসে পৌছতে পারতাম!’

‘কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলে ওকে ধরা যাবে না। চলো আমরা এখনই রওনা হয়ে যাই!’ হলের পিস্তলটা কোমরে গুঁজে প্রস্তাব দিল ডেপুটি।

‘সি,’ বলল রোমেরো। বুঝতে পারছে ডেপুটির মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। লোকটা ওকে বড়াই করে চ্যালেঞ্জ করতে শুনেছে। স্বভাবতই ও আশা করছে তার বস্ নিজের কথামত কাজ করবে। ‘তুমি ঠিকই বলেছ, জিম। বেশিদূর যেতে পারেনি সে। জলদি! আমাদের ঘোড়া দুটো নিয়ে এসো!’

মার্শালের নির্দেশ পালন করে ঝোপের আড়াল থেকে ঘোড়া দুটো নিয়ে এল জিম। চট কোরে ঘুরে ডেপুটির কাছ থেকে নিজের ঘোড়ার লাগামটা নিয়ে জিনে উঠে বসল সে। জিমও ঘোড়ার পিঠে উঠতে দেরি করল না।

‘এই মার্শ লোকটা খুব চতুর, ডেপুটি, তাই খুব সাবধান। তুমি ট্রেইলের ডান দিক দিয়ে এগোও, আমি বাম পাশে থাকছি। চোখ-কান খোলা রেখো!’

‘আমাকে নিয়ে তুমি ভেবো না, মার্শাল, আমি সাবধান থাকব।’

ঝোপের আড়াল থেকে মার্শ ওদের এগিয়ে আসতে দেখল। পরিস্থিতিটা জটিল হওয়া সত্ত্বেও ওর ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। চোখে কৌতুক।

‘কিছুতেই ওকে তোমার পিছনে যেতে দিয়ো না, জিম,’ ডেপুটিকে উপদেশ দিল রোমেরো। ‘নির্লজ্জ লোকটা মানুষকে পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না।’

‘তাই নাকি?’ অবাক হলো জিম। ‘মার্শ কাউকে পিছন থেকে গুলি কোরে মেরেছে বলে শুনিনি।

‘হ্যাঁ, নিশ্চয় তাই, নইলে লোকে ওকে ‘খুনে মার্শাল’ নাম কেন দিয়েছে?’

‘লোকটার হাতে কতজন খুন হয়েছে তুমি জানো, মার্শাল?’

‘আমি নিশ্চিত বলতে পারছি না, তবে মনে হয় কমের পক্ষে গোটা পঁচিশেক হবে।’

মনেমনে হাসল টেড। পঁচিশ! সন্দেহ নেই পঁচিশেরও অনেক বেশি আউটলকে সে পাকড়াও করেছে-কিন্তু ওর হাতে মরেছে মাত্র বারোজন। এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আত্মরক্ষা করতেই সে গুলি ছুঁড়েছে।

ঘোঁৎ করে মুখ থেকে একটা শব্দ বের করল জিম। ‘এখন আমি বুঝতে পারছি ওর ওপর কেন তোমার এত রাগ। এমন মানুষের স্টার পরা মোটেও উচিত নয়।’

রোমেরো আর তার ডেপুটি ঘোড়া নিয়ে খুব সাবধানে, ধীর গতিতে এগোচ্ছে। ঝোপের আড়াল থেকে টেড ওদের পার হয়ে যেতে দেখল। ওর চেহারা থেকে কৌতুকের ভাবটা উবে সেখানে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। নিঃশব্দে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে খোলা ট্রেইলে উঠে এল টেড।

‘এই! মার্শাল রোমেরো! থামো!’ আদেশ করল সে।

রোমেরো আর তার ডেপুটি থেমে দাঁড়াল। ওদের দিকে এগিয়ে গেল মার্শ। ‘তুমি আর ডেপুটি হাতগুলো আমার নজরের মধ্যে রাখো, নিৰ্দেশ দিল সে। ‘আমি শুনলাম তুমি তোমার ডেপুটিকে বলছিলে আমি পিছন থেকে মানুষ মারতে দ্বিধা করি না। তোমরা কেউ চালাকি করতে গেলে সেটাই আমি প্রমাণ করতে বাধ্য হব।’

টেডের চেহারায় যেমন দ্রুত বিরক্তি ফুটে উঠেছিল তেমনি দ্রুতই সেটা কেটে আবার কৌতুক ফুটে উঠল।

‘ঠিক আছে, সেনিওর মার্শ। এখন আমাদের নিয়ে তুমি কি করতে চাও?’ প্রশ্ন করল রোমেরো।

‘আমি চাই তোমরা দুজনেই গানবেল্ট খুলে মাটিতে ফেলো। তারপর তোমার ডেপুটি যে পিস্তলটা ওখানে হলের থেকে নিয়ে কোমরে গুঁজেছে সেটাও তাকে ফেলতে হবে। কাজটা খুব ধীরে করবে। হঠাৎ নড়ার কারণে তোমাদের দুজনকে হত্যা করতে আমি চাই না।’

‘সি, সেনিওর,’ নরম সুরে বলল রোমেরো। ‘তোমার কথা মতই কাজ করব। আমরা মরতে চাই না।’

‘তাহলে সামনের ট্রেইলের দিকেই তাকিয়ে থাকো-এদিকে ফিরো না। বুঝেছ?’

‘সি, সেনিওর!’

ডেপুটি মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল বুঝেছে। কোন কথা বলল না। দুটো গানবেল্ট আর তিনটে পিস্তল মাটিতে পড়ার পর নিজের পিস্তলটা খাপে ভরে জিনের ওপর আয়েশ করে বসল টেড।

‘একটা ব্যাপার এই মুহূর্তে এখানেই পরিষ্কার করে নেয়া ভাল, মার্শাল রোমেরো। তুমি আমার সম্পর্কে তোমার ডেপুটিকে যেসব গল্প শোনাচ্ছিলে সেগুলো সব মনগড়া মিথ্যে কথা। আমি জীবনে কাউকে পিছন থেকে গুলি করে মারিনি। এখনও নতুন করে তা শুরু করতে চাই না। যেসব আউটলকে আমি গুলি করে মেরেছি তাদের সংখ্যা বারো। এবং ওদের প্রত্যেককেই আমি সামনে থেকে গুলি করেছি আত্মরক্ষার জন্যে। এটাও সত্যি, আমি এমন একটা কাজও করিনি, যা আমার বা অন্য লম্যানদের জন্যে লজ্জাকর হতে পারে।’

একটু নীরবতার পর রোমেরো বলল, ‘তুমি আমাদের যা বললে, সেনিওর…তার মানে, তুমি আমাদের মারতে চাও না?’

হাসল টেড। ‘তোমার ব্যাপারে আমি এখনও মনস্থির করিনি। আমি শুনেছি তুমি ডেপুটিকে বলছিলে আমার বিরুদ্ধে সামনা সামনি লড়তে চাও। তুমি চাইলে তোমাকে আমি সেই সুযোগ দিতে পারি।’

অস্বস্তিভরে জিনের ওপর একটু নড়েচড়ে বসল রোমেরো। ‘সেনিয়র মার্শ…কথাটা আমি ঠিক ওই অর্থে বলিনি। আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছিলাম তোমার সম্পর্কে আমি যা শুনেছি, সেসব কথা যদি সত্যি হয় তাহলে আমি তোমার মোকাবিলায় মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই।’

‘ঠিক আছে, এখন আমার মুখ থেকে সব জানতে পেরেছ…এখনও আমার বিরুদ্ধে লড়তে চাও?’

‘মার্শাল,’ জিম সাবধান করল, ‘ওর কথার জালে জড়িয়ে বোকার মত কিছু করে বসো না!’

জিমের দিকে অবজ্ঞার চোখে একবার চেয়ে আবার রোমেরোর দিকে মনোযোগ দিল টেড।

‘মার্শাল, তুমি ওর মুখোমুখি দাঁড়াতে না চাইলে আমাকে লড়তে দাও!’

বিরক্তিতে টেডের ঠোঁট পরস্পরের ওপর চেপে বসল। তরুণ ডেপুটি হিরো হয়ে নিজের জন্যে নাম কিনতে চায়। যতবার এমন ঘটে, দেখা যায় তরুণ মানুষটাই মারা পড়ে বা গুরুতরভাবে জখম হয়। এখন আবারও তাই ঘটতে যাচ্ছে।

‘চুপ করো! ভেঁপো ছোকরা!’ ধমকে উঠল মার্শ। ‘অকালে মরতে না চাইলে বড়দের কথার মাঝে কথা বলতে এসো না!’

ধমক খেয়ে একটা ঢোক গিলে চুপ করে রইল জিম।

‘কি হলো, মার্শাল?’ গতরাতের কথা মনে রেখে খোঁচা দিল টেড। ‘তোমার জবাবটা কি?’

‘আমি দুঃখিত, সেনিওর মার্শ। আমি…আমি না বুঝে যা বলেছি তা তুমি ভুলে যাও।’

‘তোমার ডেপুটির কি হবে? আমার নামে তুমি যেসব মিথ্যে কথা বলেছ, সেও কি ওগুলো ভুলে যাবে?’

জিমের দিকে তাকাল রোমেরো। ‘বাছা, তোমাকে আমি যা বলেছি সেসব ভুলে যাও। আমি সঠিক না জেনেই ওসব কথা বলেছি। সেনিওর মার্শ আমাদের সত্যি কথাই জানিয়েছে।

কোন মন্তব্য না কোরে একদৃষ্টে অনেকক্ষণ বসের দিকে চেয়ে থাকল জিম। তারপর মাটির দিকে চোখ নামিয়ে মাথা ঝাঁকাল সে। ‘তুমি যেমন বললে তাই হবে, মার্শাল। সরি, মার্শ।’

তরুণের মাফ চাওয়াটা গ্রাহ্য করল না টেড। রোমেরোর দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘মনে হচ্ছে তুমিই লম্যানদের কলঙ্ক, মার্শাল। তুমি একজন প্রাক্তন লম্যানের নামে কেবল মিথ্যাই প্রচার করোনি, তুমি যা বলেছ, সেটা অন্যজনকে খাঁটি সত্য বলে বিশ্বাস করাবার সাধ্যমত চেষ্টাও করেছ। কতদিন হলো তুমি এই কাজ করছ?’

ধীরে মাথা তুলে কপাল থেকে ঘাম মুছল রোমেরো। ‘আমি সত্যিই দুঃখিত, মার্শ। কেবল এইটুকুই আমি বলতে পারি।

‘ঠিক আছে, মার্শাল। এবারের মত তোমাকে আমি ক্ষমা করছি। কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যদি আমার নামে কোন মিথ্যে কথা বলো তাহলে তুমি যেখানেই থাকো, খুঁজে বের করে সামনা সামনি তোমার মোকাবিলা করব আমি! কমপ্রেন্দে, সেনিওর মার্শাল?’

‘সি। কমপ্রেন্দে! তোমার সম্পর্কে আমি আর কিছুই বলব না!’

‘ডেপুটি জিম, তুমি শুনেছ তো আমি যা বললাম?’

মাথা ঝাঁকাল তরুণ। ‘হ্যাঁ। শুনেছি।’

‘ঠিক আছে, তোমরা ঘোড়ার পিঠেই আপাতত বসে থাকো। আমি রওনা হচ্ছি। সামনের বাঁকে আমি অদৃশ্য হওয়ার পর তোমরা নিচে নেমে তোমাদের অস্ত্র আর হলের লাশ তুলে নিয়ে শহরে ফিরবে। আমি যা বলেছি সেসব কথা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখো। তাহলে পরবর্তীতে যদি আমাদের কখনও দেখা হয়, তখন ঝগড়া বা লড়াই করার বদলে আমরা একসাথে বসে বন্ধুর মত ড্রিঙ্ক করতে পারব।’

রোমেরো বা তার ডেপুটি বলার মত কোন কথা খুঁজে না পেয়ে চুপ করে থাকল। পরাজিত আর লজ্জিত বোধ করছে ওরা।

টেক্সাসের পথে রওনা হয়ে গেল টেড। বাঁকের কাছে পৌঁছে পিছন ফিরে দেখল রোমেরো আর জিম তখনও ঘোড়ার পিঠেই বসে আছে। বাঁক নিয়ে অদৃশ্য হলো সে।

উনিশ

ওই দিনই বিকেলের দিকে ধুলোময় আর ক্লান্ত অবস্থায় কোম্যাঞ্চি ওয়েলসে পৌঁছল মার্শ। ক্লান্ত ঘোড়াটাকে স্ট্র্যাণ্ড হোটেলের সামনে হিচিঙ রেইলের পাশে থামাল। কিন্তু ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল না, জিনের ওপর স্থির বসে চারপাশটা খুঁটিয়ে দেখল।

ছোট শহরটা ট্রেইল-ড্রাইভারদের শহর। কয়েকটা স্টোরের সামনে ঝুলানো বুলেটের গর্তে ভরা সাইনবোর্ড দেখেই তা বোঝা যায়। ওখানে অনেকগুলো সেলুন রয়েছে। কয়েকটা ঘরের জানালা আর দরজায় কতগুলো মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। অশালীন দাঁড়ানোর ভঙ্গি আর দেহ দেখানো জামা দেখেই ওদের ব্যবসাটা কি তা আঁচ করা যায়। কয়েকটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে শহরে। একটা জেনারেল স্টোর, একটা অস্ত্রের দোকান, একটা লিভারি আস্তাবল আর একটা নাপিতের দোকান। গোসল করার জন্যে গরম পানির ব্যবস্থা রয়েছে নাপিতের দোকানে। এছাড়াও তিন-চারটে বিভিন্ন আকারের ক্যাফে আছে।

শহরটায় অযত্ন, অবহেলা আর দারিদ্র্যের ছাপ সুস্পষ্ট। বাড়িঘর মেরামতের অভাবে জীর্ণ। এখানকার ব্যবসা পুরোপুরি মৌসুমী। কাউবয়রা শহরটার পাশ দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ার সময়েই কেবল ওদের ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দাঁড়াল টেড। রাইডিঙে অভ্যস্ত সে, সাধারণত দিনের শেষে ওর হাড় আর পেশী প্রতিবাদ জানায় না। কিন্তু নিউ মেক্সিকো থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এই লম্বা যাত্রা ওকে কিছুটা কাহিল করে ফেলেছে।

ঘোড়ার পিঠ থেকে স্যাডল ব্যাগ আর রাইফেল নামিয়ে হোটেলের বারান্দা পার হয়ে ভিতরে ঢুকল মার্শ। নিচু ছাদ, মলিন চেহারা। লবি থেকে একটা করিডর পিছন দিকে চলে গেছে, ওটারই দুপাশে থাকার ঘর।

বুড়ো রিসেপশনিস্ট নড় করে একটা খাতা আর পেনসিল এগিয়ে দিল। ‘এখানে সই করো,’ বলে, নাম লেখার জায়গাটা দেখিয়ে দিল সে। ‘কামরার ভাড়া এক ডলার।’

সই কোরে ভাড়া মিটিয়ে হাত বাড়িয়ে চাবিটা নিল টেড।

‘দশ নম্বর কামরা,’ বলল বুড়ো। ‘ওটা করিডরের শেষ মাথায়। ঘোড়ার আস্তাবল হোটেলের পিছনে।’

নিজের কামরায় ঢুকে রাইফেলটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রেখে স্যাডল ব্যাগটা চেয়ারের পিছনে ঝুলিয়ে রাখল টেড। তারপর কামরা ছেড়ে বেরিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ছোট উঠানে নামল। সামনেই আস্তাবল। হোটেলের বুড়োর মত চেহারার আরেকটা বুড়ো আস্তাবলের সামনে দেয়ালের সাথে চেয়ার ঠেকিয়ে বাইরে বসে আছে।

‘তুমিই আস্তাবলরক্ষী, মিস্টার?’ প্রশ্ন করল টেড।

দাড়িওয়ালা বুড়ো সামনের দিকে ঝুল দিয়ে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াল। ‘হ্যাঁ, আমিই সেই লোক। তোমার জন্যে আমি কি করতে পারি?’

‘আমার ঘোড়াটার যত্ন নিতে হবে,’ হেসে বলল মার্শ। ‘হোটেলের রেইলে বাঁধা বড় রোনটা আমার।’

‘তুমি আসার পথে ঘোড়াটাকে দেখেছি আমি,’ আইরিশ উচ্চারণে বলল বুড়ো। ‘চমৎকার ঘোড়া। ওকে কি করতে হবে?’

‘ভাল করে ডলে দলাই মলাই করার পর খাওয়াতে হবে। কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ওর বিশ্রামের ব্যবস্থাও কোর। লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছি আমরা।’

‘ঠিক আছে, তাই হবে। ওকে নিতে তুমি কখন আসবে?’

‘সম্ভবত সকালের আগে নয়। তবে বলা যায় না, ওকে আমার আগে ও দরকার হতে পারে।’

হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল বুড়োর চোখ। সে বলল, ‘তুমি কোন চিন্তা কোর না, বন্ধু, রাজকীয় যত্নই সে পাবে। এতে তোমার খরচ পড়বে দেড় ডলার।’

বিল মেটাবার জন্যে মার্শ টাকা বের করতে যাচ্ছে দেখে সে আবার বলল, ‘টাকাটা তুমি আমার ভাইকেই দিয়ো, সে এই হোটেলের ক্লার্ক। এখন থেকে একঘণ্টা পর তুমি যখন খুশি ওকে নিয়ে যেতে পারবে।’

মৃদু হাসি ফুটে উঠল মার্শের ঠোঁটে। ‘ধন্যবাদ,’ বলল সে।

কামরায় ফিরে টেড লক্ষ করল তার অনুপস্থিতিতে চিনামাটির জগে হাত- মুখ ধোয়ার পানি দেয়া হয়েছে। পরিষ্কার দুটো তোয়ালেও ঝুলছে ওয়াশ স্ট্যাণ্ডের পাশে।

শার্ট খুলে কুসুম গরম পানিতে কোমর পর্যন্ত ধুয়ে ফেলল টেড। তারপর শার্ট থেকে ধুলো ঝেড়ে ওটাই আবার পরল। নতুন শার্ট কেনা হয়ে ওঠেনি ওর। তাই একই শার্ট পরতে হচ্ছে। রেক্স বিলিঙের ব্যাপারটা চুকে যাওয়ার পর বেভিন মিলারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রথমেই কিছু নতুন জামা-কাপড় কিনতে হবে।

হাত-মুখ ধোয়ার পর এখন সে অনেক চাঙা বোধ করছে। হোটেলের করিডর পেরিয়ে বাইরে রাস্তায় নামল টেড।

রোনটা এখন আর ওখানে নেই। আইরিশ আস্তাবলরক্ষী ওকে নিয়ে গেছে। ঘোড়াটা এখন সম্ভবত পরম সুখে ওট চিবাচ্ছে। টেড এমন একটা ঘোড়া পেয়েছে বলে গর্ব বোধ করে। ওটা আজ পর্যন্ত প্রয়োজনের সময়ে তাকে পথে বসায়নি। তাই প্রথম শ্রেণীর যত্ন ওর প্রাপ্য।

রাস্তা ধরে এগোল টেড। পড়ন্ত বিকেলে রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা খুব কম। বিষম বাড়ির সারিতে ওর চোখ জোড়া ডাণ্ডি সেলুন খুঁজে বের করায় ব স্ত। এসপানিওলার পথে ডেবিকে হারানোর পর ওর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে সে। ওর সাথে আবার দেখা হতে পারে বলে ভাবছে না। বেভিন মিলারের কাজটা শেষ হওয়ার আগে ড্যানি হলের মত আর কোন প্রতিশোধকামী লোকের সাথে দেখা হোক, এটা সে চায় না। আউটল রেক্স বিলিঙকে হত্যা করার পর ডোবি বা আর কারও মোকাবিলায় তার আপত্তি থাকবে না।

রাস্তা ধরে প্রায় অর্ধেক পথ এগোনোর পর ডাণ্ডি সেলুন ওর চোখে পড়ল। সরু আর ছোট একটা সেলুন, তবে দালানটা দোতালা। শহরের অন্যান্য ঘরবাড়ির মত এটাও জীর্ণ। বাদামী মোড়কের কাগজ সেঁটে জানালার ভাঙা কাঁচ মেরামত করা হয়েছে। সামনের বারান্দার একটা দিক কিছুটা ঝুলে পড়েছে।

সেলুনের দিকে এগোল মার্শ। দোতালার জানালা থেকে একটা মেয়ে ওকে ডাকল। মাথা নেড়ে প্রত্যাখ্যান জানিয়ে বারান্দায় উঠে ব্যাটউইঙ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে।

ভিতরটা অন্ধকার আর চুপচাপ। এটা সে আশা করেনি। ভিতরে ঢুকে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকার পর অন্ধকার চোখ সওয়া হয়ে গেল। মাত্র দু’তিনটে তেলের বাতি ভিতরের অন্ধকার দূর করার বৃথা চেষ্টা করছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বারটা দেখতে পেল। রুক্ষ হলেও শক্ত পুরু তক্তা দিয়ে তৈরি। পিছনের দেয়ালে একটা তাক পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে-ওটাই ব্যাকবারের কাজ করছে। দোতালায় ওঠার সিঁড়ির কাছে তিনজন লোক একটা টেবিলে বসে আছে। ওরা আর বারটেণ্ডার ছাড়া কামরায় আর কেউ নেই।

‘তুমিই ক্লাইড ডোটি?’ ইঙ্গিতে একটা ড্রিঙ্ক ঢালার নির্দেশ দিয়ে প্রশ্ন করল টেড।

বারটেণ্ডার নড কোরে একটা গ্লাসে হুইস্কি ঢালতে শুরু করল। ‘আমি ডাঙি কি না জিজ্ঞেস না করায় অবাক হলাম। প্রায় প্রত্যেক স্ট্রেঞ্জারই ভাবে আমিই ডাণ্ডি।’

কাঁধ উঁচাল টেড। একটা কোয়ার্টার বারের ওপর রেখে গ্লাসটা তুলে নিল। ‘আমি অবাক হচ্ছি না-বাইরের সাইনবোর্ডে ওই নামই আছে।’

‘হ্যাঁ, তা ঠিক। শীঘ্রি একদিন ওটা আমার পালটানো দরকার।’

‘ডাণ্ডি যাওয়ার কতদিন হলো?’ প্রশ্ন করে আড়চোখে টেবিলে বসা লোকগুলোর দিকে তাকাল টেড। জানালায় দেখা মেয়েটার সাথে আরও একটা মেয়েকে সিঁড়ির মাথায় দেখা গেল-নিচে নামছে ওরা।

‘তা প্রায় দু’বছর হলো। তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকলে, সেটা কি কেবল আলাপ জমাবার জন্যে; নাকি আর কোন উদ্দেশ্য আছে?’

‘আমি রেক্স বিলিঙকে খুঁজছি,’ শান্ত স্বরে বলল টেড। তারপর বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে টেবিলে বসা তিনজনকে দেখিয়ে প্রশ্ন করল, ‘ওদের একজন?’

রেক্স বিলিঙের কথায় সচেতন হলো ডোটি। টেডকে কয়েক সেকেণ্ড খুঁটিয়ে দেখে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে চেয়ে মাথা নাড়ল সে। ‘না, সে এখানে নেই।

‘আমি শুনেছি লোকটা কোথায় আছে সেই খবর তোমার কাছে পাওয়া যাবে।’

ডোটিকে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে এখন। সে বলল, ‘হ্যাঁ। খবরটা আমি দিতে পারব। কিন্তু এতে আমার কিছু সময় লাগবে। জিজ্ঞাসাবাদ না করে সঠিক বলা যাবে না। তুমি কি হোটেলেই উঠেছ?’

ড্রিঙ্কটা শেষ করল টেড। ‘হ্যাঁ। ওখানে আমি একটা কামরা ভাড়া নিয়েছি। দশ নম্বর কামরায় তুমি আমাকে পাবে।’

‘ঠিক আছে, রেক্স কোথায় আছে জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি খবর পাঠাব।’

বিদায় নিয়ে আবার রাস্তায় বেরিয়ে এল টেড। সূর্যটা ডুবে গেছে। রাত ঘনিয়ে আসতে আর বেশি বাকি নেই। স্টোরগুলোতে এখনও বাতি জ্বালানো হয়নি। এখন গরমের ভাব কিছুটা কম। রাস্তায় লোকজনের চলাচল বেড়েছে। কোম্যাঞ্চি ওয়েলসে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা খুব কম। কারণ কোন ট্রেইল টাউন সংসার পেতে বসবাস করার উপযোগী নয়।

আরও একটু সামনে ‘রামুডা ক্যাফে-হোম কুকিঙ’ সাইনটা দেখা যাচ্ছে। এখানকার ক্যাফেগুলোয় দামের দিক থেকে বিশেষ তফাত হবে না বুঝে রামুড়াতেই সাপার খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল টেড। তাছাড়া ওখান থেকে হোটেলে ফেরার পথেই পড়বে ডাণ্ডি সেলুন। খাওয়া সেরে হোটেলে যাওয়ার পথে ওখানে একটা ঢুঁ মেরে জিজ্ঞেস করা যাবে কোন খবর আছে কি না।

পেট পুরে তৃপ্তির সাথে খেলো মার্শ। খাবারটা বেশ ভাল পরিমাণেও অনেক। ওখানেই বসে তিন কাপ কফি শেষ করে বিল মিটিয়ে আবার রাস্তায় নামল সে। এরই মধ্যে রাত নেমেছে, রাস্তাটা অন্ধকার।

ক্যাফে থেকে কেনা চুরুটটা আয়েশ কোরে টানতে-টানতে ডাণ্ডি সেলুনে পৌছল সে। ভিতরে ঢুকে একটা মেয়ের কাছে জানতে পারল ডোটি বিশেষ একটা কাজে বাইরে গেছে। কথাটা জানিয়ে একই শ্বাসে তাকে দোতালায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাল মেয়েটা। হেসে প্রত্যাখ্যান করল টেড। ‘ডোটি ফিরলে ওকে জানিয়ো আমি পরে আবার আসব,’ বলে, সেলুন থেকে বেরিয়ে হোটেলের পথ ধরল।

নাপিতের দোকানের কাছাকাছি পৌঁছতেই অন্ধকার গলি থেকে একটা লোক বেরিয়ে ওকে থামাল।

‘তুমিই কি রেক্স বিলিঙকে খুঁজছ?’

অপ্রত্যাশিতভাবে বাধা পেয়ে নিজের অজান্তেই মার্শের হাত ঝট করে তার পিস্তলের ওপর পড়েছিল। ভুল বুঝতে পেরে মাথা ঝাঁকাল সে।

‘হ্যাঁ, আমিই ওকে খুঁজছি। ডোটি তোমাকে পাঠিয়েছে?’

‘হ্যাঁ,’ বলে একটু পিছিয়ে গেল লোকটা, কারণ ওর চেহারাটা দেখার জন্যে ছাই ঝেড়ে চুরুটে লম্বা একটা টান দিয়েছে টেড।

সামনের লোকটার সরু তীক্ষ্ণ চেহারা। লালচে-বাদামী চুল, আর গলায় সিল্কের একটা লাল রুমাল পেঁচানো।

‘রেক্স বিলিঙ,’ শান্ত স্বরে বলল টেড, ‘লোকটা কোথায় আছে?’

জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল তরুণ। ‘শহর থেকে পাঁচ মাইল দক্ষিণে একটা পুরোনো চালা বাড়িতে আছে। তুমি সহজেই ওটা খুঁজে পাবে-একটা বড় চায়নাবেরি গাছ আছে ওটার পাশে।

‘সে একাই আছে? ওর সাথে আর কেউ নেই?’

‘আমার বিশ্বাস সে একাই আছে। যাহোক, ডোটি বলল ওর দেখা পেতে হলে আজ রাতেই তোমার ওকে ধরতে হবে, কারণ আগামীকালই ওই চালাঘর ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *