খুনে ক্যানিয়ন – ৫

পাঁচ

সামনে দেখা যাচ্ছে নিচু লম্বা স্টেজ রিলে স্টেশন। হলদে ধূসর এই রুক্ষ এলাকায় কাদা রঙের মাটির দেয়াল কিছুটা ব্যতিক্রম। ঘরের চালের ওপর ঝোপঝাড় দিয়ে ঢাকা দেয়া হয়েছে। তার ওপর লেপা হয়েছে মাটি। সেই মাটি থেকে জন্মেছে ছোট ছোট নানা ধরনের ঝোপ। জানালাগুলো চৌকো গর্ত। সামনে চিকন একটা ছাদ দেয়া বারান্দা সামান্য ছায়া দিচ্ছে। বারান্দাটা ঝুলে আছে কয়েকটা খুঁটির ওপর। ঘরটার পেছনে এক পাশে কয়েকটা করাল।

আরও খানিক এগিয়ে এক লোককে গ্যালারিতে একটা রকিং চেয়ারে গা ছেড়ে বসে থাকতে দেখল বেনন। জানালাগুলোর পাশে রাইফেলের নল বের করার জায়গা ওর নজর এড়াল না। করালের পেছনে উঁচু দেয়াল তৈরি করে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেয়ালের ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঁটাঝোপ। হিংস্র অ্যাপাচিদের ঠেকানোর ব্যবস্থা।

ঘোড়া থেকে নেমে গ্যালারির খুঁটির সঙ্গে ঘোড়ার দড়ি বাঁধল বেনন, ছোট্ট করে নড করে শুভেচ্ছা জানাল রকারে বসা লোকটা, কিন্তু ওঠার কোন নাম নিল না। বেনন আন্দাজ করল এ স্টেশন এজেন্ট হবে। চৌকো আকৃতির লোক সে, রক্তলাল কুতকুতে চোখ। আকৃতিহীন স্টেটসনের তলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তার কোঁকড়ানো কালো চুল। চোয়ালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কোমরে ঝুলছে একটা ভারী ক্যালিবারের কোল্ট রিভলভার।

একটা চুরুট ধরিয়ে জিজ্ঞেস করল বেনন, ‘খাবার পাওয়া যায় এখানে?’

‘এক ডলার।’ লোকটার চোখে অস্বস্তির ছাপ দেখল ও।

‘পরিষ্কার হবো কোথায়?’ প্যান্টের পায়ে চাপড় মারল বেনন। একরাশ ধুলো উড়ল।

‘ঘোড়ার পানি পেছনে পাবে। ওখানে একটা বেসিনও আছে।’

স্টেশনের পেছনে একটা ব্যারেলের পাশে দুটো স্যাডল চাপানো ঘোড়া দেখল বেনন। একটা অদক্ষ হাতে তৈরি বেঞ্চের ওপর রাখা আছে টিনের একটা বেসিন। ওটার ওপরে একটা পেরেকে ঝুলছে তোয়ালে। বেঞ্চে একটা মগও আছে। ঘোড়াটাকে ব্যারেল থেকে পানি খাইয়ে মুখ হাত ধুয়ে তৃষ্ণা মেটাল ও। খেয়াল করল পোল করালে চারটে ঘোড়া আছে। ওগুলোর গায়ে এমএম ব্র্যাণ্ড। এ ঘোড়াগুলো স্টেজ টানার ঘোড়া নয়, সে তুলনায় অনেক বেশি ভারী। এগুলো ওয়্যাগন টানার জন্তু। কিন্তু কোন ওয়্যাগন চোখে পড়ল না ওর।

বাড়ির সামনে চলে এল ও আবার, ভেতরে ঢুকে দেখল সামনের ঘরটা ডাইনিং রূম। দরজার পাশে ঝুলছে একটা ব্রীচ লোডিং রাইফেল। মোটা এক মেক্সিকান মহিলা টেবিলে খাবার সার্ভ করছে। টেবিলে বসে আছে রেঞ্জের পোশাক পরা দু’জন লোক, খাচ্ছে। বেনন ঢুকতেই অস্বাভাবিক দ্রুত ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল তারা। বেননের নড় পাত্তা না দিয়ে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে থাকল। দু’জনের একজন বিশালদেহী, গোঁফে নিকোটিনের দাগ। অন্য লোকটার চেহারা তিক্ত। সুঠামদেহী লোক সে। এক নজরেই চিনতে পারল বেনন এদের। সীমান্তের কঠোর লোক এরা। এল পাসোতে এদের মত লোকের অভাব নেই।

নিচু গলায় নিজেদের মাঝে কথা শুরু করল তারা। বেনন টেবিলে যোগ দিয়ে প্লেটে টরটিয়া তুলে নিল। খাওয়ার ফাঁকে চুমুক দিল কড়া কালো কফিতে। স্টেশন কীপারের আগমন ঘটল একটু পর। কী যেন কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে। খোলা দরজা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকাল বেনন। দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে মেক্সিকান মহিলা, তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে। আবছা আলোতেও বেননের বুঝতে দেরি হলো না যে মহিলা ভীত-সন্ত্রস্ত। কিছু একটা গোলমাল আছে এখানে। কিন্তু কী?

পেছনে রাখা ঘোড়া দুটো ওখানে থাকার পেছনে কোন যুক্তি নেই। চড়ার তুলনায় বা স্টেজ টানার তুলনায় ওগুলো অনেক বেশি ভারী। আশপাশে কোন ওয়্যাগনও নেই। তাছাড়া লোক দু’জন বারেবারে আড়চোখে দেখছে ওকে। এমন কি হতে পারে যে এরা বেন স্টার্কের দলের লোক? আবার এমনও হতে পারে যে ওরা বেন স্টার্কের লোক নয়, কিন্তু যোগ দিতে যাচ্ছে তার সঙ্গে। আউট-লদের বেশিরভাগই জানে অপর আউট-ল কী করছে।

রান্না মোটেই মজার হয়নি। কোনমতে মুখে কিছু গুঁজে চেয়ার পেছনে ঠেলে উঠে দাঁড়াল বেনন। গ্যালারিতে ঘুরঘুর করছে স্টেশন কীপার। লোকটার কড়া পড়া হাতে এক ডলার গছিয়ে দিল ও। এবার গা ছাড়া একটা ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, ‘লোক দু’জনকে তুমি চেনো?’

‘না, সেনিয়র,’ দ্রুত বলল স্টেশন এজেন্ট। ‘অনেকেই আসে যায়। চিনি না কাউকে। কোথা থেকে এসেছে বা কোথায় যাবে তা জিজ্ঞেসও করি না। এরা বলছিল ঘোড়া বিক্রি করার উদ্দেশ্যে চলেছে।’

তা হলে স্টেশন এজেণ্ট ভীত চিন্তিত কেন?

মাথা ঘামাল না বেনন, বাড়ির পেছনে চলে এল। রওনা হতে দেরি করার কোন ইচ্ছে নেই। খুনে ক্যানিয়নের খোঁজে আরও কতদিন পথ চলতে হবে কে জানে! ঘোড়ায় উঠে ওটার মুখ ঘুরিয়ে সামনের উঠানে চলে এল ও।

লোক দু’জন বারান্দায় দুটো পিঠ সোজা চেয়ারে আরাম করে বসেছে। স্টেশন কীপার দুলছে তার রকিং চেয়ারে। বেননকে এগিয়ে আসতে দেখে অজান্তেই তার দোলার গতি বেড়ে গেল। কঠোর লোক দু’জন একটু আড়ষ্ট হয়ে গেছে, অস্ত্রের বাঁটের কাছে চলে গেল তাদের হাত।

মুহূর্ত খানেক কাটল, নীরবতা ভাঙল শুধু রকিং চেয়ারের ক্যাঁচকোঁচ। থম মেরে বেননকে দেখছে স্টেশন কীপার। ঢোক গিলল, তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আবার ফিরলে কেন, সেনিয়র?’

‘ভাবছি ওদের দু’জনের সঙ্গে কিছু কথা বলে তারপর যাব।’ চোখের ইশারায় রুক্ষ লোক দু’জনকে দেখাল বেনন।

আর কিছু বলতে হলো না, অস্ত্রের দিকে হাত বাড়াল লোক দু’জন।

বেননও ছোবল মারল কোল্টের বাঁটে। ওর প্রথম গুলি নিকোটিনের দাগওয়ালা গুঁফো লোকটার হৃৎপিণ্ডে গাঁথল। চেয়ারে হেলান দিয়ে নিথর হয়ে গেল সে।

দ্বিতীয় লোকটার সিক্সগান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখল বেনন। ওর মাথার ওপর দিয়ে শিস কেটে বেরিয়ে গেল বুলেট। ধোঁয়া লক্ষ্য করে দু’বার আগুন ঝরাল বেননের অস্ত্র। বিশালদেহী লোকটার অস্ত্র আবারও গর্জাল। বেননের মাথার পাশে কাঠের খুঁটিতে গেঁথে কুচি ছিটাল গুলি। জবাব দিল বেনন পরপর দুটো গুলি করে। ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে দেখল’ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে লোকটার ঝাপসা আকৃতি। তার হাত থেকে সিক্সগান পিছলে গেল। ধড়াস করে শক্ত মাটিতে পড়ল লাশ।

ধোঁয়া সরে যেতে চেয়ারে আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকা স্টেশন এজেন্টের দিকে তাকাল বেনন। থম মেরে বসে আছে লোকটা, যেন জমে গেছে জায়গায়। দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে রকিং চেয়ারের হাতল। অস্ত্র বের করার কোন চেষ্টাই করেনি সে।

‘তোমার বন্ধু ছিল নাকি লোক দু’জন?’ নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল বেনন।

‘না, সেনিয়র!’ খসখসে গলায় প্রতিবাদের সুরে বলল সে। ‘জীবনেও আগে কখনও এদের দেখিনি আমি।’

‘তা হলে লড়াইতে আমার পক্ষ নিলে না কেন?’

জবাবে অস্ত্রটা বের করে বেননের দিকে বাড়িয়ে দিল স্টেশন এজেন্ট।

‘মাটিতে ফেলো!’ নির্দেশ দিল বেনন।

নির্দেশ পালিত হলো। উবু হয়ে অস্ত্রটা তুলে নিল বেনন, রিলিজ কী টেনে ভারী সিলিণ্ডারটা খুলে দেখল ভেতরে গুলি নেই।

‘কীভাবে?’ ভ্রূ কুঁচকাল বেনন।

কাঁধ ঝাঁকাল এজেন্ট। ‘মাঝরাতের আগে যে স্টেজটা আসবে সেটা ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল ওদের। সেজন্যেই আমাকে জোর করে নিরস্ত্র করে।’

অস্ত্রটা ফেরত দিয়ে পড়ে থাকা লাশ দুটো দেখাল বেনন। ‘কবর দিয়ে দিয়ো। ওদের ঘোড়া আর আউটফিট রাখতে পারো তুমি।’

মাথা কাত করল লোকটা।

‘তুমিই বা হঠাৎ করে নাক গলাতে গেলে কেন, ভাই?’

পাশ ফিরল বেনন অপরিচিত পুরুষ কণ্ঠ শুনে। নরম সুরে করা হয়েছে প্রশ্নটা।

এক অশ্বারোহী নিঃশব্দে এসে হাজির হয়েছে সোরেল ঘোড়ায় চেপে। চিকন-চাকন লোক। পরনে রেঞ্জের উপযোগী সাধারণ পোশাক। রোদে পোড়া তামাটে চেহারা। চোয়ালের গড়ন বলে দিচ্ছে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ। চোখের রং সমুদ্রের পানির মত গভীর নীল। দৃষ্টিতে বেপরোয়া একটা ভাব প্রকাশ পাচ্ছে। বোঝা যায় প্রয়োজন পড়লে কঠোর হতে জানে। এখন হাতের অস্ত্রটা আলতো করে ধরে রেখেছে সে ডানহাতে। নলটা ঠিক বেননের বুক লক্ষ্য করে চেয়ে আছে। বেননের অস্ত্রটা খালি!

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল স্টেশন এজেন্ট। মৃত্যুর ঝুঁকি দূর হওয়ায় তাকে দেখে নতুন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। ‘ওই লোকগুলো,’ বলল সে, ‘ওই লোকগুলো ডাকাত।’ বেননকে দেখাল। ‘এ আমাদের বাঁচিয়েছে।’ পা দিয়ে খোঁচা দিল একটা লাশের বুকে। ‘এরা স্টেজ ডাকাতি করতে এসেছিল।’

‘আচ্ছা!’ মৃদু হাসি ফুটল আগন্তুকের মুখে। ‘তা হলে এও দেখছি আমারই মত স্বাধীনচেতা মারকুটে লোক।’ হোলস্টারে অস্ত্র গুঁজে রাখল। নেমে পড়ল সে স্যাডল থেকে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘লোকে আমাকে ফ্ল্যানারি বলে ডাকে। নামটা মাইক ফ্ল্যানারি।’

‘রন জনসন,’ সংক্ষেপে পরিচয় সারল বেনন। হাতটা ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিল। টের পেল কাউহ্যাণ্ড হবার তুলনায় হাতটা অনেক বেশি নরম। কথার কথা জানতে চাইছে এমন সুরে জানতে চাইল, ‘এদিকের কোন র‍্যাঞ্চে কাজ করো তুমি?’

আইরিশ লোকটার উপস্থিতি অস্বস্তিকর ঠেকছে ওর কাছে।

‘কাজ করি কোন কাজ পছন্দ হলে,’ ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হাসল আগন্তুক। গলায় এমন কিছু আছে যে বেনন বুঝে নিল এব্যাপারে আলাপ করতে লোকটা মোটেও উৎসাহী নয়।

রকিং চেয়ারে ধপ করে বসল ফ্ল্যানারি, একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস হয়ে গেল। মনে হলো এখানের ঘটনায় সে উৎসাহ হারিয়েছে।

কিছুক্ষণ পর দু’একটা কথা হলো বেনন আর তার মধ্যে। সাধারণ মত বিনিময়। একটু পর যাত্রার জন্যে তৈরি হয়ে গেল বেনন। একাকীত্বে, নির্জনতায়, সন্ধ্যার মিষ্টি আলোয় চমৎকার রেশম কোমল দেখাচ্ছে মরুভূমিকে। কর্কশ ভাবটা দূর হয়ে গেছে একেবারেই। গোলাপি আকাশের গায়ে ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল সব নক্ষত্র।

পনির খুরের খটাখট শব্দে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল বেনন। ফ্ল্যানারি নামের আইরিশ লোকটা ওকে অনুসরণ করে আসছে। স্টিরাপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সে। বেননের ঘোড়ার পাশে চলে এসে বলল, ‘পথ চলার জন্যে রাতটা চমৎকার হবে। রাতে পথচলার একজন সঙ্গী পেয়ে গেছ তুমি।’

সতর্ক হয়ে উঠল বেনন। ওর জন্যে একশো ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এ লোক হয় বাউন্টি হান্টার, কোন ল-ম্যান, নয়তো পাকা বদমাশ। সাধারণ মানুষের এমন কোন কারণ ঘটে না যে বিরান মরুভূমিতে এই অসময়ে একা আসবে। আগন্তুক ঠিক কোন্ পেশার লোক তা কথাবার্তা বা আচরণ থেকে আন্দাজ করা কঠিন। একা দুর্গম ট্রেইলে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আরকানসাসের পশ্চিমের এই এলাকায় কে কোথা থেকে আসছে বা কোথায় যাবে সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। অপছন্দের প্রশ্নের জবাব যেকোন সময়ে আগুন ঝরানো পিস্তলের গুলিতে আসতে পারে। সাধারণ সতর্কতা বোধ বেননকে বলে দিল সতর্ক থাকতে হবে। নজর রাখতে হবে লোকটার ওপর। দেখতে হবে আসলে তার কী উদ্দেশ্য। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে তারপর। স্টেজ স্টেশনের লড়াইয়ের পর উত্তেজিত হয়ে আছে বেননের স্নায়ু। ওর মনে হলো ফ্ল্যানারি লোকটা ওকে বাজিয়ে দেখছে।

হঠাৎ করেই ঘোড়া পাশ ফিরিয়ে অনাহূত অতিথি ফ্ল্যানারির মুখোমুখি হলো বেনন। ফ্ল্যানারিও ঘোড়া থামিয়ে ফেলেছে। স্যাডলে বসে থাকল নিথর হয়ে। দেখছে, অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যার আলো ছায়ায় মূর্তির মত লাগছে তাকে দেখতে।

‘বাউন্টি হান্টারদের আমি দু’চোখে দেখতে পারি না,’ গম্ভীর গলায় বলল বেনন। মাঝে মধ্যে গভর্নরের অনুরোধে ওকেও যে বাউন্টি হান্টারের কাজ করতে হয় সেকথা আপাতত মনেই আনছে না। অস্ত্রের বাঁট ছুঁলো ওর হাতের তালু।

‘তার মানে তোমার মাথার ওপর বাউন্টি নির্ধারণ করা হয়েছে,’ নরম গলায় শান্ত সুরে বলল ফ্ল্যানারি। বেনন শপথ করে বলতে পারবে লোকটার গভীর নীল চোখে বিস্ময়ের ছাপ দেখেছে ও।

‘পুরস্কারের টাকাটা পাবার ইচ্ছে থাকলে চেষ্টা করতে দেরি কোরো না, ‘ বলল বেনন’। ‘সাহস থাকলে ড্র করো।’

হাসল ফ্ল্যানারি। ‘সাহসের কোন অভাব নেই আমার। কিন্তু ইচ্ছের অভাব আছে। আমি যদি বাউন্টির টাকার জন্যে আসতাম তা হলে স্টেশনেই তোমাকে পেছন থেকে গেঁথে ফেলতে পারতাম। ওখানে একেবারে বাচ্চাওয়ালা হাঁসের মত অসহায় অবস্থায় তোমাকে পেয়েছিলাম আমি।’

ভ্রূ কুঁচকাল বেনন। ‘ল-ম্যান তুমি?’

হেসে উঠল ফ্ল্যানারি। ‘আমার শত্রুও একথা বলতে পারবে না। একথা শুনলে খুনে ক্যানিয়নের আউট-লরা পর্যন্ত হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাবে।’

বিস্ময় গোপন করে জিজ্ঞেস করল বেনন, ‘খুনে ক্যানিয়ন সম্বন্ধে কী জানো তুমি?’

‘যথেষ্ট। সেজন্যেই ওব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। তোমার এত কৌতূহলের কারণ কী, বন্ধু?

‘ভাবছি ওখানে যাব যোগ দিতে।’

পরস্পরের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল ওরা। মেপে নিল পরস্পরকে, তারপর পাশাপাশি রওনা হলো। গুন গুন করে গান ধরল ফ্ল্যানারি, ভাব দেখে মনে হলো সে বেশ সন্তুষ্ট। থম মেরে গেল বেনন, পূর্ণ সতর্ক। ভাবছে।

আইরিশ লোকটা যদি বাউন্টি হান্টার বা ল-ম্যান না হয়ে থাকে তা হলে নিঃসন্দেহে রেনেগেড। লোকটা খুনে ক্যানিয়নের কথা হঠাৎ করে বলল কেন? এ কি বেন স্টার্কের দলের লোক? গুজব আছে যে বেন স্টার্কের লোক প্যানহ্যাণ্ডেল থেকে শুরু করে সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। তারাই বেন স্টার্কের চোখ-কান। তাদের কারণেই খুনে ক্যানিয়ন খুঁজতে গিয়ে জীবিত ফেরে না কেউ। মার্শাল ওভারহোলসারের একটা কথা বেননের মনে পড়ল হঠাৎ করে। বেন স্টার্কের ব্যাপারে প্রকাশিত পোস্টারে ছাপা ছিল কথাটা।

আন্দাজ করা হয় সে আইরিশ-স্কচ রক্তের লোক।

পাশের লোকটাকে আড় চোখে দেখল বেনন। এ কি স্বয়ং বেন স্টার্ক?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *