খুনে ক্যানিয়ন – ৪

চার

স্টেজ রোড ধরে এগোনোই সবচেয়ে সহজ। বেশ কিছুদূর তাই করল বেনন। চারপাশে দেখতে দেখতে চলেছে। পাথর আর ক্যাকটাস ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ছে না। অনেকক্ষণ পর ধূসরতার মাঝে উজ্জ্বল হলুদ রং চোখে পড়ল ওর। রাস্তা ছেড়ে মরুভূমির মাঝ দিয়ে সেদিকে এগোল। দুটো প্রিকলি পেয়ারের ঝোপের মাঝখানে আটকে আছে ওয়্যাগনটা। হলদে রং করা, শৌখিন জিনিস। মাথা গরম জন্তু এমন পাগলামিই করে। অজায়গায় কুজায়গায় এনে ফেলেছে ওয়্যাগনটা, তারপর আটকে গেছে মরণ ফাঁদে।

চাকার ওপর ওটা যেন মস্ত বড় একটা বাক্স। বিরাট বিরাট অক্ষরে ওটার পাশে লেখা:

প্রফেসর রুবেন স্টাসি
হারবালিস্ট-হীলার-ডেন্টিস্ট
রুবেনের মোক্ষম ওষুধ সব রোগের নিরাময়ক

দেখে মনে হচ্ছে ওয়্যাগনটা ভাল অবস্থাতেই আছে। এখন দেখতে হবে জন্তুগুলোর কী অবস্থা। প্রিকলি পেয়ারের ধার দিয়ে ওপারে গেল বেনন। চারটে মিসৌরি খচ্চর এখনও অক্ষত আছে, এখনও দড়িতে বাঁধা। সামনের দুটো পড়ে আছে মাটিতে। একটা মারা গেছে মাথায় অন্যগুলোর খুরের আঘাতে। অন্যটার বাম পা ভেঙে গেছে। বেননকে দেখে ওটার চোখের সাদা অংশ বেরিয়ে এল। নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ করছে। বেননের বুঝতে দেরি হলো না ঝামেলা এটাই শুরু করেছিল। এখন পা ভেঙে মরুভূমিতে ওটার জীবন শেষ হবে অতি ধীরে-কষ্টে। সিক্সগান বের করে ওটাকে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিল বেনন। মরুভূমির পাতলা বাতাসে অস্ত্রের গর্জন তীক্ষ্ণ শোনাল।

মরা খচ্চর দুটো দড়ি কেটে মুক্ত করে দিল ও। ওয়্যাগনের পেছনে একটা দড়ি বেঁধে সেটার সঙ্গে নিজের ঘোড়াটাকে বাঁধল। তারপর রওনা হলো চারটে খচ্চর নিয়ে। প্রিকলি পেয়ারের ঝোপের ভেতর থেকে সহজেই বের করে আনা গেল ওয়্যাগনটা।

যখন স্টেজ রোডে ফিরল ততক্ষণে মাথার ওপর উঠে এসেছে সূর্যটা। প্রফেসরকে যেখানে পেয়েছিল সেখানে ফিরে দেখল এখনও পাথরে হেলান দিয়ে বসে আছে সে।

ব্রেক আটকে ওয়্যাগন থেকে লাফ দিয়ে নামল বেনন, প্রথমে পেছনে ফেলে আসা রাস্তার ওপর নজর বুলিয়ে দেখে নিল কেউ আসছে কিনা, তারপর কেউ ওদিক থেকে আসছে না বুঝে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। বুঝতে পারছে এখানে অনেক বেশি সময় ও নষ্ট করে ফেলেছে। কিন্তু উপায় ছিল না কোন। ভাঙা ঠ্যাং নিয়ে প্রফেসরের সাধ্য হত না ওয়্যাগনে উঠে ওটা চালানোর। লোকটাকে ফেলে গেলে নির্ঘাত মারা পড়ত।

প্রফেসরের পাশে এসে দাঁড়াল বেনন। শুষ্ক স্বরে বলল, ‘এবার তোমার পা মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। বুঝতেই পারছ ব্যাপারটা তোমার কাছে খুব একটা আনন্দের মনে হবে না।’

‘ওয়্যাগন সীটের নিচে একটা বাক্স আছে,’ শান্ত গলায় বলল রুবেন। ‘ওটা ভেঙে স্প্রিন্টার তৈরি করতে পারবে। আর একবোতল ব্যথা নিরোধক ওষুধ এনো। বাক্সে কয়েক বোতল আছে।’ প্রফেসরের ধুলোমাখা চেহারায় হাসির অস্পষ্ট রেখা দেখা দিল। ‘শতকরা আশি ভাগ অ্যালকোহল! তরল ক্লোরোফর্ম! ওটা দরকার হবে আমার।’

প্যান্ট ছিঁড়ে ভাঙা হাড় সোজা করে বাক্সের কাঠ দিয়ে টাইট করে বাঁধল বেনন, প্রফেসরের মুখ দিয়ে টু শব্দ বের হলো না। ওর কাজ যতক্ষণে শেষ হলো ততক্ষণে ব্যথা নিরোধকের বোতল খালি করে ফেলেছে সে। আরেক বোতল নিয়ে এসে এক চুমুক গিলে তার হাতে দিল বেনন। গলা জ্বলে গেল। কোনমতে সামলে নিয়ে বলল, ‘এবার তোমাকে ওয়্যাগনে উঠিয়ে দেব। অনায়াসে চলে যেতে পারবে তুমি মেসিলা পর্যন্ত। ওখানে বোধহয় ডাক্তার আছে।’

উত্তাপে কাঁপছে দূরের দৃশ্য, তার মাঝ দিয়ে এল পাসোর দিকে তাকাল বেনন। চোখ আটকে গেল দুটো ধুলোর স্তূপের দিকে। অনেক দূরে, কিন্তু মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আসছে এদিকেই।

‘জলদি সরে পড়তে হবে আমাকে,’ প্রফেসরের চোখে তাকিয়ে বলল বেনন।

‘আইন? ওরা তোমার ধুলো দেখতে পাবে,’ বলল রুবেন। দ্রুত পায়ে ঘোড়ার কাছে চলে গেল বেনন। একটু ভাবল রুবেন, তারপর যোগ করল, ‘সম্ভবত আমাকে ওরা এই অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে যাবে এখানে পড়ে মরতে।’

‘দু’জনই আমরা বিপদে আছি, প্রফেসর,’ গম্ভীর চেহারায় মন্তব্য করল বেনন।

‘মাথাটা খাটাও, মিয়া,’ শান্ত স্বরে বলল রুবেন। ‘ওরা ঠিকই তোমাকে ধরে ফেলবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে ওদের ফাঁকি দেয়া যায়।’

দিগন্তের কাছে উড়তে থাকা ধুলোর দিকে আরেকবার তাকাল বেনন, তিক্ত চেহারা। ‘তুমি কী করতে বলো, প্রফেসর? চাইলেই কি আমার পাখা গজিয়ে যাবে যে উড়ে পালিয়ে যাব?’

‘ওয়্যাগনের পেছনের দরজাটা খোলো। ওটা একটা প্ল্যাটফর্ম।’

‘নষ্ট করার সময় নেই আমার হাতে,’ স্টিরাপে এক পা ভরে ফেলেছে বেনন।

‘তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ,’ প্রায় ধমকে উঠল প্রফেসর, ‘এবার আমি তোমার চামড়া বাঁচাতে চাইছি। ঘোড়া দাবড়ে ধুলো না উড়িয়ে যা বলছি করো।’

শ্রাগ করল বেনন, ঘোড়ার দড়ি মাটিতে ফেলে এগিয়ে গেল উজ্জ্বল হলদে রঙের ওয়্যাগনের দিকে। দু’পাশে উঁচুতে দুটো ছিটকিনি। খুলল ওগুলো। ওয়্যাগনের পেছন দিকটা নেমে এল খুলে। ভেতরটা গুহার মত। প্রায় খালি। এক পাশে পড়ে আছে কয়েকটা চটের ছালা আর কয়েক বাক্স ব্যথা নিরোধক ওষুধ।

‘ঘোড়াটাকে ভেতরে ভরে ফেলো, নির্দেশ দিল রুবেন।

তার পরিকল্পনা এতক্ষণে বুঝতে পারল বেনন। না হেসে পারল না। ঘোড়াটাকে ওয়্যাগনের পেছন দিয়ে গুহা আকৃতির ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলল দেখতে দেখতে। পেছনের দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে দিল।

‘এবার আমাকে ওয়্যাগনের ড্রাইভিং সীটে তুলে দাও,’ বলল রুবেন।

একটু পরই ওয়্যাগনটা ঝাঁকি খেতে খেতে রওনা হলো এবড়োখেবড়ো জমিনের ওপর দিয়ে। প্রফেসরের পাশে সীটে বসে আছে বেনন। আরেকবার পেছনে তাকাল। দুই রাইডার আগের চেয়ে কাছে চলে এসেছে। দুটো বিন্দুর মত লাগছে তাদের দেখতে। হঠাৎ জোরাল একটা আওয়াজ হলো। অদ্ভুত স্টলে ঢুকে অস্বস্তিতে পড়েছে ঘোড়াটা, লোহার নাল পরানো খুর দিয়ে লাথি মেরেছে ওয়্যাগনের পেছনের দরজার গায়ে।

‘বেয়াড়াপনা করে দরজাটা বোধহয় ভেঙেই ফেলবে ঘোড়াটা,’ শঙ্কিত স্বরে বলল বেনন। ড্রাইভারের সীটের পেছনের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকল ও, পেছনে শক্ত করে বন্ধ করে দিল দরজা। অন্ধকারে চোখ সয়ে আসতে আবছা ভাবে দেখতে পেল ঘোড়াটার আকৃতি। ঘন ঘন পা ঠুকছে নার্ভাস ঘোড়াটা। খুর পিছলে যাচ্ছে দোদুল্যমান ওয়্যাগনের মেঝেতে। তাড়াতাড়ি চটের ছালা ওটার পায়ের নিচে দিল বেনন। ব্রিডল ধরে পাশে দাঁড়িয়ে রইল। সতর্ক হয়ে রয়েছে, দরকার হলে ওটার নাকের ওপর হাত চাপা দেবে, যাতে শব্দ করে নাক ঝাড়তে না পারে। ওয়্যাগনের ক্যাঁচকোঁচ আর হার্নেসের আওয়াজ ছাপিয়ে এখন পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে অগ্রসরমান ঘোড়ার খুরের আওয়াজ।

ঘোড়াটাকে শান্ত করে আবছা অন্ধকারে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল বেনন, মনের চোখে দেখছে দুই অশ্বারোহীকে। ওয়্যাগনের পাশে চলে এসেছে তারা, আওয়াজে তাই মনে হয়। পাশে পাশে এগোচ্ছে।

‘হাওডি!’ চেঁচাল একজন।

প্রফেসরের ভারী কণ্ঠস্বর শুনতে পেল বেনন। ‘শুভ সকাল, স্যার! নির্জন এই বিরান মরুভূমিতে ল-ম্যানের ব্যাজ দেখতে পাওয়া বিরাট স্বস্তির ব্যাপার।’

রুবেন আভাসে জানিয়ে দিয়েছে এরা আইনের লোক, বুঝতে পারল বেনন।

ওয়্যাগনটা থেমে দাঁড়িয়েছে।

‘এই লোকের সঙ্গে পথে দেখা হয়েছে তোমার?’ নিশ্চয়ই ওয়ান্টেড পোস্টারটা দেখাচ্ছে ডেপুটি ইউ এস মার্শাল।

‘একটা বাকস্কিন ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছে সে,’ জানাল তার সঙ্গী

‘না, স্যার,’ দুঃখিত স্বরে বলল রুবেন। ‘এলকের সঙ্গে ট্রেইলে দেখা হয়নি আমার।’

‘চেহারাটা একটু ভাল করে দেখে নাও,’ বলল ডেপুটি। ‘ওকে দেখতে পেলে সবচেয়ে কাছের শেরিফের কাছে খবর দিয়ো। বিপজ্জনক লোক।’

‘আনন্দের সঙ্গে,’ ভদ্রতা করে বলল রুবেন।

ঘোড়া ছোটার আওয়াজ দূরে চলে যাচ্ছে দেখে স্বস্তির বিরাট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল বেনন। একটু পরই আওয়াজটা মিলিয়ে গেল। সাবধানে দরজা খুলে রুবেনের কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে তাকাল ও। ট্রেইল ধরে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে ডেপুটিদের ঘোড়া।

‘দরজা বন্ধ করে ভেতরেই থাকো আপাতত,’ ঘাড় না ফিরিয়ে পরামর্শ দিল প্রফেসর। ‘ভাগ্যদেবী সবসময় অপ্রত্যাশিত কাণ্ড ঘটায়।’

‘থাকলাম ভেতরে।’ দরজা বন্ধ করে দিল বেনন। ভাবছে, ওভারহোলসার যদি জানত কীভাবে তার ডেপুটিরা বোকা বনেছে তা হলে দু’হাতে মাথার চুল ছিঁড়ত।

বেশ কিছুক্ষণ পর প্রফেসরের পাশে এসে বসল বেনন। বহু দূরে দুটো বিন্দুর মত দেখাচ্ছে অশ্বারোহী দু’জনকে। কোন কথা না বলে একটা ওয়ান্টেড পোস্টার বেননের হাতে ধরিয়ে দিল রুবেন। জোরে জোরে পড়ল বেনন।

খোঁজা হচ্ছে অবাধ্যতা এবং জেল পালানোর অপরাধে।

রন জনসন। আন্দাজ ছ’ফুট দীর্ঘ। একশো ষাট পাউণ্ড ওজন। কালো চুল। চেনার বিশেষ কোন চিহ্ন নেই। গ্রেফতার করতে সাহায্য হবে এমন তথ্য দিলে পুরস্কার একশো ডলার।

‘ওরা আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না,’ গম্ভীর স্বরে মন্তব্য করল বেনন। ‘মাত্র একশো ডলার! আর বেন স্টার্কের গ্রেফতারের জন্যে ওরা দেবে পাঁচ হাজার ডলার।’

‘হয়তো ওরা তোমাকে সম্মানই দেখিয়েছে,’ হাসল রুবেন। ‘যে যতবড় বদমাশ তার জন্যে ওরা তত বেশি পুরস্কার ঘোষণা করে।’

‘হতে পারে,’ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল বেনন। সিগার ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘প্রফেসর, তুমি তো বোধহয় ওয়্যাগন নিয়ে সবখানেই যাও, তাই না?’

‘জিলার রূপার খনি থেকে শুরু করে প্যানহ্যাণ্ডেলের গরুর বাজার পর্যন্ত সবখানে। যেখানেই দাঁত তুলতে হবে সেখানেই আমি আছি। ব্যথার ওষুধের ক্রেতা হলে যেখানে সেখানে আমাকে তুমি খুঁজে পাবেই।’ মুখ দিয়ে ব্যথার অস্ফুট শব্দ করে ভাঙা পা সরাল রুবেন। ‘এখন আমি মেসিলা যেতে পারলে বাঁচি। সত্যিকার ডাক্তারের চিকিৎসা দরকার এখন।’

‘খুনে ক্যানিয়নে কখনও গেছ, প্রফেসর?’

‘কিলার্স ক্যানিয়নের কথা বলছ?’ দিগন্তের দিকে উদাস চোখে তাকাল রুবেন। ধীর কণ্ঠে বলল, ‘এধরনের প্রশ্নের জবাব দেয়া বিপজ্জনক। হঠাৎ প্রশ্ন করলে যে?’

‘শুনেছি ওখানে বেন স্টার্কের আস্তানা আছে।’

‘এ ব্যাপারে আমি কথা বলতে চাই না,’ মাথা নাড়ল রুবেন। ‘বেন স্টার্কের কানের কোন অভাব নেই।’

‘ভয় পাও তুমি বেন স্টার্ককে?’

‘কে না পায়?’ গম্ভীর প্রফেসরের চেহারা। ‘একা একজন নিরাপত্তাবিহীন লোক আমি, বহু দুর্গম বাজে জায়গায় যেতে হয়। যা দেখি ভুলে যেতে চেষ্টা করি। যা শুনি, মন থেকে মুছে ফেলি। যা জানি সেব্যাপারে কখনও কথা বলি না।’ বেননের দিকে তাকাল রুবেন। গর্তে বসা চোখ দুটোতে তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। ‘এভাবে না চললে বহু আগেই আমি মারা পড়তাম।’ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, ‘তুমি কি আইনের পক্ষ ত্যাগ করে বাউন্টি মানি জোগাড়ের পেশায় নেমেছ?’

‘আরে না,’ হাসল বেনন। ‘ভাবছি বেন স্টার্কের সঙ্গে যোগ দেব।’

‘মাথাগরম লোক বলে তোমাকে মনে হয়েছে আমার,’ মন্তব্য করল রুবেন। ‘বিপদে পড়ে যেতে পারো নির্বুদ্ধিতা করে।’

‘তবুও আমি খুনে ক্যানিয়নে একবার গিয়ে দেখতে চাই। আমাকে যদি বেন স্টার্ক দলে নেয় তা হলে ঠকবে না নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি।’

শ্রাগ করল প্রফেসর। সে কোন কথা না বলায় আলাপ থেমে গেল। খচ্চরগুলোর টানে মরুভূমির ওপর দিয়ে বিরাট একটা কচ্ছপের মত হেলতে দুলতে এগিয়ে চলেছে হলদে ওয়্যাগন। দূরের পাহাড়ের ওপর চলে গেছে সূর্য, ডুবে যাবে খানিক পরে। বেনন ধারণা করল প্রফেসরের ভাঙা পায়ে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু কোন অভিযোগ করছে না লোকটা।

দূরে দিগন্তের কাছে ধোঁয়া দেখতে পেল ওরা। সমভূমির শেষে বাড়ি ঘরের আবছা আকৃতি চোখে পড়ল। ‘মেসিলা,’ বলল বেনন, ‘এবার আমাকে কেটে পড়তে হয়।’

রাশ টেনে খচ্চর থামাল রুবেন, মৃদু স্বরে বলল, ‘যখন মানুষ বিপদে পড়ে তখন বিশ্বস্ত বন্ধুর দরকার হয়। আমার ধারণা বিরাট একটা ঋণ আছে আমার, তোমার কাছে।

‘ভুলে যাও,’ বলল বেনন, ‘বিপদের সময় আমাকেও তো সাহায্য করেছ তুমি।’

মাথা নেড়ে কথাটা উড়িয়ে দিল রুবেন। জিজ্ঞেস করল, ‘টাকা দরকার তোমার?’

‘না,’ হাসল বেনন। ‘আমার দরকার খুনে ক্যানিয়নের হদিস।’

রুবেনের চোখ স্থির হলো বেননের চোখে। ধীর গলায় বলল রুবেন, ‘ট্রেইল যত ঘোরাল, গন্তব্য ততই নিশ্চিত।’

‘তবুও যেতে হবে আমাকে।’

চিন্তিত স্বরে বলল রুবেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি, জিলা নদীতে চমৎকার মাছ পাওয়া যায়-এলডোরাডোর পশ্চিমে।’

আস্তে করে মাথা দোলাল বেনন। ইঙ্গিতটা ধরতে পেরেছে। ঘোড়া বের করে ওয়্যাগনের দরজা আটকে দিল ও, তারপর স্যাডলে উঠে রওনা হবার আগে বলল, ‘অনেক ধন্যবাদ, প্রফেসর। তথ্যটা খুব কাজে আসবে আমার।’

দু’দিন পার হয়েছে তারপরে। একটানা পশ্চিমে এগিয়ে চলেছে পলাতক আসামী রক বেনন। ওভারল্যাণ্ড স্টেজকোচের চাকার দাগ অনুসরণ করে যাচ্ছে ও। গত দু’দিনে কোন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। তপ্ত মরুতে নীল আকাশের গায়ে ঘুরে ঘুরে উড়ছে শুধু একটা বাজ পাখি। ওটাই বেননের সঙ্গী। একবার একটা গিরিগিটি দেখেছে ও, দৌড়ে পালিয়েছে ঝোপের ভেতর। আরেকবার একটা র‍্যাটল স্নেক চোখে পড়েছে, এঁকেবেঁকে চলে গেছে ক্যাকটাসের ভেতর দিয়ে।

পেছনে কেউ ধাওয়া করছে না এব্যাপারে বেনন এখন নিশ্চিত। ল-ম্যানরা নিজেদের এলাকার বাইরে পারতপক্ষে যায় না। ও চলেছে রুক্ষ মরুময় প্রান্তরের ওপর দিয়ে। ঢেউ খেলানো বালির ঢিবিগুলো বহুদূরে গিয়ে মিশেছে লালচে- খয়েরী পাহাড়শ্রেণীতে। গাছপালা জন্মায়নি বললেই চলে। আছে শুধু কিছু শুকনো ঝোপ, ওকাটিয়ো আর ইউকা। এখানে ওকে কেউ অনুসরণ করবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *