খাবারচোর

ভলিউম ১০৪/২ – খাবারচোর  – তিন গোয়েন্দা – শামসুদ্দীন নওয়াব – সেবা প্রকাশনী

এক

কিশোর, মুসা আর রবিন বাঘাকে নিয়ে পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে এল। গেটের কাছে যখন ছিল ধূসরচুলো এক কিশোরকে দেখতে পায় ওরা। মুখে ফুটি-ফুটি দাগ। দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ও এখানে কী করছে? প্রশ্ন করল রবিন।

শশশ, বলল কিশোর। ছেলেটার নাম জিম কেলি। কিশোরদের পাড়ায় থাকে। ফিফথ গ্রেডে পড়ে-তিন গোয়েন্দার চাইতে এক ক্লাস উপরে।

তোমার কুকুর আছে, আমার নেই, জিম বলল কিশোরকে। ওর কণ্ঠে বেদনা আর ঈর্ষার মিশ্র অনুভূতি। ওকে একটু আদর করতে দেবে?

নিশ্চয়ই।

আহা, আমার যদি একটা কুকুর থাকত তা হলে আর কিছুই চাইতাম না, বলল জিম।

একটা পুষলেই পারো, এত যখন পছন্দ, বলল মুসা।

মা রাজি নয়, বলে বাঘার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করল জিম। ওকে কটা খেলা শেখাতে পারি? উঠে দাঁড়িয়েছে।

 এখন নয়, কিশোর জবাব দেওয়ার আগেই বলে বসল রবিন। আমরা এখন ওর সাথে খেলব।

তা ছাড়া এত ছোট বয়সে খেলা শিখতে পারবে কিনা সন্দেহ, বলল কিশোর। কদিন পরে এসো, কেমন?…চকোলেট খাবে? জিমকে জিজ্ঞেস করে বন্ধুদের মধ্যে চকোলেট বিলি করল ও।

 না, চকোলেটে আমার অ্যালার্জি আছে, বলল জিম।

তুমি তা হলে পরে এসো, বলল রবিন।

ঘাড় কাত করে সায় জানাল জিম। ধীর পায়ে চলে গেল।

ঘুরে দাঁড়াল কিলোর।

বাঘা কোথায়? জিজ্ঞেস করল। সিঁড়ির তলা থেকে বাঘা সহসা দৌড়ে এল ওর দিকে।

ব্যাকইয়ার্ডে বাঘাকে নিয়ে এল তিন বন্ধু। পরের আধঘণ্টা ওর সঙ্গে খেলা করল ওরা। একটা কাঠি চিবাল বাঘা। গোল হয়ে চক্কর কেটে দৌড়ে বেড়াল।

এবার কুকুরছানাটকে কোলে তুলে নিল কিশোর।

কিশোর! ড্রাইভওয়ে থেকে এসময় শাণিত এক কণ্ঠ ভেসে এল।

কিশোর মুখ তুলে চেয়ে দেখে মেরি চাচী কোমরে দুহাত রেখে, দাঁড়িয়ে। ভ্রূ কুঁচকানো।

তোরা কি মাফিনগুলো খেয়েছিস? জানতে চাইল।

তো, মাথা নেড়ে বলল কিশোর।

সত্যি করে বল, রেগে গেছে মেরি চাচী।

আমরা খাইনি, জানাল রবিন।

তা হলে কে খেল? প্রশ্ন করল মেরি চাচী। তিনটে মাফিন নেই!

দুই

মুখ লাল হয়ে গেল কিশোরের। চাচী কি খাবার চুরির দায় চাপাচ্ছে ওর উপরে?

আমরা ওগুলো খাইনি, বলতে গিয়ে প্রায় ককিয়ে উঠল কিশোর।

কেউ একজন নিয়েছে, বলল চাচী। বাঘা নিলেও আমি অবাক হব না।

না, জোর গলায় জানাল কিশোর। ও সারাক্ষণ আমাদের সাথেই ছিল।

খাইছে, কিন্তু ও তো একবার পালিয়ে গিয়ে সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে ছিল, মনে নেই? বলল মুসা।

দেখলি? ও দরজা ঠেলে ঢুকে মাফিনগুলো তো খেয়েছেই কাগজের কাপগুলোও রাখেনি, বলে উঠল মেরি চাচী।

 না! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।

ছানাদেরকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয়, মৃদু তিরস্কার করল মেরি চাচী। এখন ও হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তোকে আগেই বলে দেয়া উচিত ছিল-চকোলেট কুকুরছানাদের জন্যে ভাল নয়।

ভিতরে শশব্যস্তে ঢুকে পড়ল মেরি চাচী।

মনটা খারাপ হয়ে গেল কিশোরের। মেরি চাচী প্রথমে তিন গোয়েন্দাকে দোষী ভাবল, তারপর অপরাধী ঠাওরাল বাঘাকে!

চাচীর মাফিন কে নিল খুঁজে বের করতে হবে, বলল কিশোর।

রহস্য পাওয়া গেছে। সুপার্ব! বলে উঠল মুসা।

এসো, আমরা কু খুঁজি, বলল কিশোর।

বাঘার লাল কলারে একটা লাল ফিতে বাঁধল ও। এবার বাঘাকে নিয়ে ড্রাইভওয়ে ধরে হনহনিয়ে কিচেনের দরজার উদ্দেশে এগোল। ওকে অনুসরণ করল মুসা আর রবিন। স্ক্রীন ডোরের কাছে হঠাত্র থমকে দাঁড়াল কিলোর।

খাইছে, কী ব্যাপার! আরও মাফিন খোয়া গেছে? মুসার প্রশ্ন।

না বলে তর্জনী তাক করল কিশোর। দেখো, কু। বাঘার ফিতেটা রবিনের হাতে দিল ও। এবার ঝুঁকে পড়ল ভাল করে দেখার জন্য। স্ক্রীন ডোরের কিনারে কিছু একটা আটকে রয়েছে।

কী ওটা? কাছিয়ে এল মুসা।

জুতোর ফিতে, বলল কিশোর। সূত্রটা দরজার কাঠামো থেকে খুলে তুলে ধরল।

ফিতেটায় সাদা-কালো ডোরা। ছইঞ্চি লম্বা ফিতেটা ময়লা আর। ছেঁড়া।

হুম, এটা বোধহয় চোরের জুতোর, বলল কিশোর।

কী করে বুঝলে? রবিন জানতে চাইল।

কারণ আমার এ ধরনের কোন ফিতে নেই। চাচীরও নেই। এমনকী চাচারও, বলল কিশোর।

আচ্ছা, এটা জিমের নয় তো! প্রশ্ন করল মুসা। মাফিনগুলো হয়তো ও-ই নিয়েছে।

হতে পারে, বলল কিশোর। তবে আমার তা মনে হয় না। মনে নেই ও বলেছিল চকোলেটে ওর অ্যালার্জি আছে? মনে হয় না ও নিয়েছে।

 কিচেনের চারধারে চকিতে নজর বুলিয়ে নিল কিশোর। ওখানে আর কোন সূত্র পেল না। তড়িঘড়ি বেরিয়ে এল বাইরে।

গুঁড়ো পাই কিনা খুঁজি এসো, বলল ও।

এই যে, একটা গুঁড়ো! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। সাইডওয়কের দিকে ইশারা করল।

কোথায়? জিজ্ঞেস করল রবিন। বাঘার ফিতে চেপে দৌড়ে এল ড্রাইভওয়ে ধরে।

এসময় বাঘা জোরে টান দিল ফিতেয়। রবিনের হাত থেকে ছুটে দৌড়ে চলে এল কিশোরের কাছে। মাটি খুঁকে চাটতে লাগল গুঁড়ো।

খাইছে, ও কু সাবড়ে দিয়েছে, বলে উঠল মুসা।

রবিন, তোমার না ওকে ধরে থাকার কথা, বলল কিশোর। ধরছ না কেন?

 কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বাঘা কিশোরের পায়ের তলা দিয়ে তীরবেগে ছুটে চলে গেল।

তিন

ফিরে আয় বলছি! ডাক ছাড়ল কিশোর। বাঘার পিছু ধাওয়া করল।

কিন্তু কুকুরটা ব্লকের শেষ মাথায় দৌড়ে গিয়ে উধাও হয়ে গেল।

ফিরে আয়, বাঘা! দৌড়চ্ছে আর চেঁচাচ্ছে কিশোর।

মুসা আর রবিন পিছু পিছু ছুটল কিশোরের। ব্লকের শেষ মাথায় পৌঁছে থমকে দাঁড়াল ওরা। বাঘা নেই!

কোথায় গেছে দেখতে পেয়েছ? শ্বাসের ফাঁকে প্রশ্ন করল রবিন।

না, জানাল কিশোর। অদৃশ্য হয়ে গেছে।

সরি, আমার শক্ত করে ধরে রাখা উচিত ছিল,বলল রবিন।

ঠোঁট কামড়াল কিশোর। গেল কোথায় বাঘা?

আচমকা এসময় ওদের পাশে ঝোপের মধ্যে নড়াচড়ার শব্দ উঠল।

পরমুহূর্তে, ঝোপের ভিতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল বাঘ।

কিশোর হাত বাড়াল ওর ফিতেটা ধরতে, কিন্তু ও কোনা ঘুরে আবারও দৌড়ে চলে গেল।

দাঁড়া! ফিরে আয় বলছি! চেঁচাল কিলোর। দৌড় দিল ও।

পিছু ধাওয়া করল মুসা আর রবিনও। মিসেস বার্বাটভের সামনের উঠন অবধি ওরা অনুসরণ করল বাঘাকে। বাড়ির সামনে এক ফ্লাওয়ার বেডের সামনে উবু হয়ে বসা মিসেস বার্বাটভ। ওঁর গোলাপি-হলুদ ফুলছাপা ব্লাউজটা চমৎকার মানিয়েছে বাগানের ফুলগুলোর সঙ্গে।

হোয়া? কী ব্যাপার? বাঘা দৌড়ে এসে তার গায়ে লাফাতে থাকলে অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন ভদ্রমহিলা।

ওকে একটু ধরুন। ও আমার কুকুর! চেঁচাল কিশোর।

ঝট করে বাঘার ফিতে ধরে ফেললেন মিসেস বার্বাটভ। কিশোর দৌড়ে এসে ফিতেটা চেপে ধরল শক্ত করে।

এভাবে আর পালাস না বকে দিল বাঘাকে।

হ্যালো, কিশোর, হাসি মুখে বললেন মিসেস বার্বাটভ। কুকুরটা খুব জ্বালাচ্ছে বুঝি?

আর বলবেন না, বলল কিশোর। খুব সমস্যা করছে।

কুকুরছানারা অমন করেই। তা কী ধরনের সমস্যা করছে? প্রশ্ন করলেন মিসেস বার্বাটভ।

 খোয়া যাওয়া মাফিনগুলোর কথা বলল কিশোর। আরও জানাল চাচী বাঘাকে দায়ী করেছে।

বলো কী? আমার এখান থেকেও তো খাবার চুরি গেছে, বললেন ভদ্রমহিলা।

তাই নাকি? কখন? কিশোরের প্রশ্ন।

কালকে। গাড়ির বনেট থেকে কিছু সদাই খোয়া গেছে।

খাইছে, কী হয়েছিল? মুসা জিজ্ঞেস করল।

আমি পাঁচ ব্যাগ সদাই কিনেছিলাম, ব্যাখ্যা করলেন মিসেস বার্বাটভ। চার নম্বর ব্যাগটা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি এসময় একটা ফোন আসে। পাঁচ মিনিটের মত ফোনে কথা বলি। ফিরে এসে দেখি পাঁচ নম্বর ব্যাগটা হাওয়া!

মনে হচ্ছে এলাকায় খাবারচোরের উৎপাত শুরু হয়েছে, বলল রবিন।

বলতে চাই না, কিন্তু আমি মনে হয় ধরতে পেরেছি কাজটা কার, বললেন মিসেস বার্বাটভ।

কার? সাগ্রহে প্রশ্ন করল কিশোর।

ঠোঁট কামড়ালেন মিসেস বার্বাটভ। ওঁর ভঙ্গি দেখে মনে হলো, না জেনে গুজব রটাতে চান না।

জর্জ বেস্ট, আমার ইয়ার্ডে কিছু কাজ করিয়েছি ওকে দিয়ে, শেষমেশ বললেন।

আমি চিনি লোকটাকে। আমরাও তাকে দিয়ে কয়েকবার কাজ করিয়েছি। অনেকেই করিয়েছে, বলল কিশোর।

হ্যাঁ, ও বিশ্বাসী লোক ছিল, কিন্তু ইদানীং সে হার্ডওয়্যার স্টোরের চাকরিটা হারিয়েছে। পকেটে হয়তো পয়সা নেই, তাই খিদের জ্বালা সইতে না পেরে চুরি শুরু করেছে, বললেন মিসেস বার্বাটভ।

 কিন্তু আপনি তাকে গতকাল আশপাশে দেখেছেন? কিশোরের জিজ্ঞাসা।

হ্যাঁ, আমার লন মো করছিল। আমি মুদি দোকান থেকে ফেরার পরপরই চলে গেছে সে।

একই সময়ে অন্য আর কাউকে দেখেছেন?

মিসেস বার্বাটভ মাথা চুলকে কী যেন ভাবলেন।

হ্যাঁ, বললেন অবশেষে। ওই ছেলেটা, রয় হার্ভে।

জুলিয়ার ভাই? কৌতূহলী রবিন প্রশ্ন করল। জুলিয়া ফোর্থ গ্রেডে পড়ে। তবে অন্য স্কুলে।

হ্যাঁ, ও রাস্তায় স্কেট করছিল। আমি যখন মালপত্র নামাচ্ছিলাম।

ও কিন্তু বিশালদেহী ছেলে। রাগবি খেলে, বলল রবিন।

কিশোরের মনে পড়ল, জুলিয়া প্রায়ই বলে প্রচুর খায় ওর ভাই। ও-ই হয়তো পাড়ায় স্কেট করছে আর মানুষের খাবার চুরি করে  বেড়াচ্ছে।

ওর স্কেটের ফিতের রং কী কে জানে, বলে উঠল কিশোর।

খেয়াল করিনি, তবে অন্য একটা কথা মনে পড়ে গেল, বললেন মিসেস বার্বাটভ।

কী? মুসার প্রশ্ন।

থাবার ছাপ। মোইং শেষে স্প্রিংকলার অন করে জর্জ। ফলে ঘাস ভেজা ছিল। ড্রাইভওয়েতে, আমার গাড়ির পাশে কুকুরের ভেজা পায়ের ছাপ দেখেছি।

ওটা বাঘার ছাপ নয়, বলল রবিন। ও গতকাল বাঁধাই ছিল।

ও আচ্ছা, বলে হেসে উঠলেন মিসেস বার্বাটভ।

হুম, মনে মনে বলল কিশোর। কুকুরের থাবার ছাপ একটা সূত্র। বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠল ও। গোয়েন্দা নোটবইতে তথ্যগুলো টুকবে।

 মিসেস বার্বাটভের কাছ থেকে বিদায় নিল ওরা। এবার মুসা আর রবিনকে বিদায় জানাল কিশোর। ওদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।

 ফিতে শক্ত করে ধরে বাঘাকে হটিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর।

হঠাত্র প্রকাণ্ড এক ট্যান কুকুর বেরিয়ে এল এক গাছের আড়াল থেকে। কুকুরটা নোংরা, কলার নেই গলায়। দেখে মনে হলো বেওয়ারিশ। কিশোর চট করে চিনে ফেলল ওটাকে। পাড়ায় ছুটোছুটি করে বেড়াতে দেখেছে আগে। মা বাঘা ফিতেয় টান দিল কুকুরটার কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিশোর তা হতে দিল না।

যাবি না, বাঘাকে শাসাল ও।

বড় কুকুরটাকে রাস্তা পেরোতে দেখে একটা চিন্তা এল ওর মাথায়।

অ্যাই, দাঁড়া।

কুকুরটা কানে তুলল না ওর কথা।

এই কুকুরটাই কি মিসেস বার্বাটভের গাড়ির কাছে থাবার ছাপ ফেলে এসেছে? এটাই কি খাবারচোর ?

উঁহু, সিদ্ধান্তে এল শেষমেশ। কুকুর বড় এক ব্যাগ ভর্তি সদাই বইবে কীভাবে?

হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে বাঘাকে পিছনের উঠনে রাখল ও।

এখানে থাক, বলল। আমি এখুনি, আসছি।

এক দৌড়ে বাড়ি ঢুকে নিজের কামরায় উঠে এল ও। ডেস্ক থেকে নীল নোটবইটা তুলে নিল। এক হাতে নোটবই আর অন্য হতে কলম নিয়ে তড়িঘড়ি নেমে এল নীচে।

কিন্তু স্ক্রীন ডোর ঠেলতেই চমকে উঠল ও।

পিছনের গেটের পাশে দাঁড়িয়ে জর্জ বেস্ট। ওর কোলে বাঘা!

চার

বুক ধড়াস-ধড়াস করছে কিশোরের। বাঘার সঙ্গে কী করছে জর্জ বেস্ট?

গাঁট্টাগোঁট্টা, বয়স্ক লোকটার কাছে ছুটে গিয়ে তার বাহু চেপে ধরল। উদ্বিগ্ন কিশোর।

আমার কুকুরকে ছেড়ে দিন! চেঁচিয়ে উঠল।

আমি তো ওকে ব্যথা দিচ্ছি না, ভরাট স্বরে বলল লোকটা। এই একটু নেড়েচেড়ে দেখছি আর কী।

মোটা, পেশীবহুল হাত দিয়ে বাঘার গলী চুলকে দিচ্ছে সে। এবার, মাটিতে নামিয়ে দিল।

সুন্দর কুকুর! মৃদু হেসে বলল কিশোরকে।

 আপনি এখানে কী করছেন? কিশোর জবাব চাইল।

তোমার চাচা আমাকে ইয়ার্ডে কিছু কাজ করতে বলেছেন। তোমার চাচী গ্যারেজে গেছেন আমার জন্য হোস আনতে।

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জর্জের মুখের চেহারা পরখ করল কিশোর। দেখে মনে হলো না মিথ্যে বলছে। তবে সন্দেহ পুরোপুরি কাটল না ওর। প্রথমে মিসেস বার্বাটভের সদাই যখন চুরি গেল ও তখন ওখানে। আর এখন মাফিন খোয়া যাওয়ার দিনে কিশোরদের বাড়িতে!

চকিতে জর্জের জুতোর দিকে চাইল কিশোর-দেখে নিল ফিতে জোড়াও। ফিতে দুটো বাদামি, সাদা-কালো ডোরা কাটা নয়। কিচেনের দরজায় পাওয়া সূত্রটার সঙ্গে কোন মিল নেই।

তুমি ভয় পেয়ে গেছ নাকি? বলল জর্জ।

না, একটু চমকে গেছিলাম আরকী।

বাঘাকে পিছনে নিয়ে উঠন পেরোল ও। বসল এক গাছের তলায় গিয়ে। নোটবইটা উল্টে সাদা এক পাতা বের করল।

উপরে লিখল: হারানো মাফিন-রহস্য

নীচে লিখল:

সন্দেহভাজন
জর্জ বেস্ট, রয়হার্ভে, জিম কেলি।

এবার লিখল:

সূত্র ১. ছেঁড়া সাদা-কালো জুতোর ফিতে

সূত্র ২. খুঁড়ো, যেটা বাঘা সাবড়ে দিয়েছে

সূত্র ৩. মিসেস বার্বাটভের গাড়ির কাছে কুকুরের ভেজা পদচিহ্ন

জর্জের জুতোর ফিতে-বাদামি।

জিম-চকোলেটে অ্যালার্জি আছে।

রয়-প্রচুর খায়!

সন্দেহভাজনদেরকে আর সূত্রগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইল। কিশোর। কিন্তু বাঘা তা হতে দিল না। বারবার কিশোরের কোলে চড়ে কান চেটে দিচ্ছে।

নাম বলছি, ধমকে বলল কিশোর।

এসময় গেটের কাছ থেকে হাঁক ছাড়ল মেরি চাচী।

কীরে, মাফিনগুলোর কী খবর? চোখের তারা নাচিয়ে প্রশ্ন করল।

জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

ও তোমার মাফিন চুরি করেনি!

হয়তো…হয়তো নয়, কিশোরকে জ্বালানোর জন্য বলল চাচী। কিন্তু ও যদি খেয়ে না থাকে তবে কে খেল?

সেটাই তো জানতে চাই আমি, মনে মনে বলল কিশোর।

.

পরদিন সকাল। বিছানা থেকে নেমে সোজা নীচে চলে এল কিশোর। আজ শনিবার।

 গুড মর্নিং, কিশোর, কিচেনে কিশোরকে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকতে দেখে বলল রাশেদ চাচা।

হাই, চাচা, বলল কিশোর।

কিচেনের ছোট কামরাটায় গিয়ে ঢুকল ও। ক্রেটের দরজার হুড়কো খুলে দিল। ব্ল্যাঙ্কেট থেকে লাফিয়ে পড়ল বাঘা। লেজ নাড়তে নাড়তে ছুটে এল।

বাঘাকে এক পাত্র পানি আর কিছু খাবার দিল কিশোর। এবার মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল।

এসময় কিশোরের গাউনের বেল্ট ধরে জোরসে টান দিল বাঘা।

দেখো, ও পার্কে যেতে চায়! বলল কিশোর। আমিও।

নাস্তা খেয়ে তারপর যাবি, বলল রাশেদ চাচা।

নাস্তার পরে আর বাঘাকে নিয়ে পার্কে গেল না কিশোর। ব্লু জিন্স, টেনিস শু আর টিশার্ট পরে নিল। তারপর বাঘাকে নিয়ে বেড়া ঘেরা পিছনের উঠনে চলে এল। ও যখন পার্কে থাকবে, যত খুশি ছোটাছুটি করুক বাঘা।

পার্কে পৌঁছে ঘাসের বুকে হেঁটে বেড়াল ও, ড্যাণ্ডেলিয়ন তুলল। তারপর দৌড়ে চলে এল দোলনার কাছে।

দুলতে শুরু করেছে এসময় একজনকে দেখতে পেল-রয় হার্ভের মত দেখতে।

পিকনিক টেবিলগুলোর কাছে স্কেট করছে ও।

দোলনা থেকে লাফিয়ে নেমে টেবিলগুলোর কাছে শশব্যস্তে চলে এল কিশোর।

 কাছিয়ে এলে দেখতে পেল বড়সড় এক, পরিবার তাদের সমস্ত খাবার সাজিয়েছে দুটো টেবিলে। তবে এখনও খাওয়ার পাট শুরু করেনি। ফ্রিসবি খেলছে।

এসময় রয় স্কেট করে চলে এল এক টেবিলের কাছে। চোখের পলকে প্লেট থেকে একটা কুকি ছোঁ মেরে তুলে নিল। মুখ হাঁ হয়ে গেল কিশোরের। ওটা একটা চ কালেট চিপ কুকি।

রয় এবার স্কেট করে চলে গেল দ্রুতগতিতে!

পাঁচ

দাঁড়াও! ফিরে এসো! চিৎকার ছাড়ল কিলোর। কিন্তু থামল না রয়।

 কিশোর ওর পিছু ধাওয়া করল। কাঁধের উপর দিয়ে কিশোরের দিকে চাইল রয়। ওর মুখে ধূর্ত হাসি দেখতে পেল কিশোর।

এবার কুকিটা মুখে চালান করে দিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে চলে গেল দৃষ্টিসীমার আড়ালে।

পিকনিক টেবিলগুলোর দিকে ফিরে চাইল কিশোর। পরিবারটা ফিসবি খেলছে। একটা কুকি খোয়া গেছে বলে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই।

কিশোর ঠিক করল বাড়ি ফিরবে। হাঁটছে, সাইডওয়কে একটা আঁচড়ানির শব্দ শুনতে পেল। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল বেওয়ারিশ ট্যান কুকুরটা দুলকিচালে ওর পিছে পিছে দৌড়চ্ছে। মনে হচ্ছে অনুসরণ করছে।

না, আসিস না, আমার কুকুর আছে, বলে উঠল কিশোর। কথাগুলো বলামাত্র কুকুরটা কিশোরের কাছে এসে ওর হাত উঁকল।

থাম, দৃঢ় কণ্ঠে বলল কিশোর। থাম।

এবার রাস্তা পেরোল ও। পিছু ফিরে চাইল। উল্টোদিকের সাইডওয়কে বসে কুকুরটা। মনে হলো থাম মানে বোঝে ওটা।

কুকুরটার থাকার জায়গা নেই, দুঃখজনক। দেখতে একটু রুক্ষ হলেও স্বভাব ভাল কুকুরটার।

হঠাই ভরাট এক কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠল।

হাই, আবার দেখা হয়ে গেল।

কে? চারধারে নজর বুলিয়েও কাউকে দেখতে পেল না কিশোর।

এই যে এখানে, বলল কণ্ঠটি। মাথা নামাও। কিশোর মাথা নামিয়ে দেখতে পেল জর্জ বেস্টকে। এক প্রতিবেশীর ঝোপের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে। হাতে মোটা চামড়ার দস্তানা। গর্ত খুঁড়ছে।

ওহ, হাই, ভয় পেয়ে গেছিলাম। কী করছেন আপনি? কিশোর পিছে সরে প্রশ্ন করল। কিছু মাটিচাপা দিচ্ছেন নাকি?

 না, আগাছা সাফ করছি। তবে সহজে উপড়ানো যাচ্ছে না এগুলোকে, হেসে বলল জর্জ।

 হুম, ভাবল কিশোর, আজকে আজব এক দিন। প্রথমে রয় হার্ভের। সঙ্গে দেখা হলো। তারপর বেওয়ারিশ কুকুরটা ওকে অনুসরণ করতে শুরু করল। আর এখন ও যেখানে যাচ্ছে সেখানেই জর্জ বেস্টকে দেখতে পাচ্ছে।

সন্দেহভাজনরা আমাকে যেন অনুসরণ করছে, ভাবল ও।

ড্রাইভওয়েতে পৌঁছে, দৌড়তে দৌড়তে পিছনের উঠনে চলে এল কিশোর। কোলে তুলে নিল বাঘাকে।

.

সেদিন ডিনারের পর চাচার সঙ্গে হাঁটতে বেরোল কিশোর। জর্জ বেস্ট যে বাড়িটায় কাজ করছিল সেটা পেরিয়ে হাঁটতে লাগল ওরা।

 আচ্ছা, চাচা, তুমি জর্জ বেস্টকে বিশ্বাস করো? প্রশ্ন করল কিশোর।

নিশ্চয়ই। কেন রে?

কারণ যখনই খাবার চুরি যায় সে আশপাশে থাকে, বলল কিশোর।

 চাচাকে ও খুলে বলল কীভাবে সদাই চুরি যায় মিসেস বার্বাটভের বাড়ি থেকে। এবং মাফিনগুলো খোয়া যাওয়ার পরপরই জর্জ বেস্টকে দেখা গেছে ওদের বাড়িতে।

এতে কিছু প্রমাণ হয় না, বলল চাচা।

আমি জানি, কিন্তু–

ঠিক এ সময় রবি রেসের বাসার পিছন থেকে একটা শব্দ শোনা গেল। জর্জ এ বাড়িতেই আগাছা সাফ করছিল।

 কিশোর জমে গেল। ভয় পেয়েছে। এবার আবারও শব্দটা শুনতে পেল।

কীসের শব্দ? জিজ্ঞেস করল ও।

জানি না, বলল রাশেদ চাচা। আর্তনাদের মত শোনাল!

ছয়

চিৎকারটা রবি রেসের ব্যাকইয়ার্ড থেকে এসেছে, বলল রাশেদ চাচা। পিছনের গেটের উদ্দেশে ধেয়ে গেল ওরা।

হ্যাল্লো, রবি, গলা ছেড়ে বলল রাশেদ চাচা। সব ঠিক আছে। তো?

রবি রেস মুখ তুলে চাইলেন। হাতে ধরা স্পেটুলাটা নাড়লেন।

এবার ওদের সঙ্গে কথা বলতে গেটের কাছে হেঁটে এলেন।

 হাই, পাশা। হাই, কিশোর, বললেন। বললে বিশ্বাস করবে না, কিন্তু কে যেন আমার পিকনিক টেবিল থেকে এইমাত্র চারটে হ্যামবার্গার চুরি করে নিয়ে গেছে!

তাই নাকি? প্রশ্ন করল কিশোর। চোখের তারা জ্বলে উঠল ওর। আবারও খাবার চুরি!

কীভাবে চুরি গেল? জিজ্ঞেস করল রাশেদ চাচা।

গ্রিলে হ্যামবার্গার করছিলাম। একটা প্লেটে চারটে বার্গার সাজিয়ে টেবিলে রাখি। তারপর বাড়ির ভিতরে যাই সালাদ আনতে। বেরিয়ে এসে দেখি হ্যামবার্গার হাওয়া, বললেন রবি রেস।

কোন বেওয়ারিশ কুকুর হয়তো খেয়ে নিয়েছে, রাশেদ চাচা বলল।

 উঁহু, বলে স্পেটুলা দিয়ে নির্দেশ করলেন রবি। গোটা ইয়ার্ড ঘিরে বেড়া। গেটও বন্ধ ছিল। কুকুর এখানে ঢুকবে কীভাবে?

জর্জ বেস্টের ব্যাপারে… শুরু করল কিশোর।

কী? প্রশ্ন করলেন রবি।

আজকে তাকে আমি এখানে দেখেছি।

তা দেখতে পারো। ও কয়েক ঘণ্টা আগেই বাড়ি ফিরে গেছে, জানালেন রবি।

হেসে উঠল রাশেদ চাচা।

রহস্য বেশ জমাট বেঁধেছে দেখা যাচ্ছে। আমার ভাতিজা রহস্য ভালবাসে জানোই তো? ও হয়তো কালকের মধ্যেই রহস্যের সমাধান করে ফেলবে।

মৃদু হাসলেন রবি।

অত সময় কই? আজ রাতে ডিনার করতে হবে না?

ফিরতি পথে চুপ করে রইল কিশোর। চিন্তামগ্ন।

পেয়েছি! বাড়ি পৌঁছতেই বলে উঠল ও।

কী? চাচার জিজ্ঞাসা।

মিস্টার রবির পেছনের বাসাটা। ওখানে জুলিয়া থাকে, বলল কিশোর।

 তো? তোর ধারণা জুলিয়া খাবারগুলো চুরি করেছে! চোখ টিপে বলল রাশেদ চাচা।

না, ওর বড় ভাই রয় হার্ভে। চলে গিয়ে দেখি রয় বাসায় আছে। কিনা।

এখন না, অনেক রাত হয়ে গেছে। যা করার কালকে করিস, বলল চাচা।

.

পরদিন ঝটপট নাস্তা করল কিশোর। তারপর পোশাক পাল্টে নিল।

 তবে বাড়ি ত্যাগের আগে ডিটেকটিভ নোটবইটা খুলল। একটা তালিকা করল কেন রয় হার্ভেকে সন্দেহ করছে।

কিশোর লিখল:

১. সদাই চুরির দিনে মিসেস বার্বাটভের বাড়ির বাইরে দেখা গেছে। ওকে।

২. চকোলেট চিপ কুকি চুরি করেছে ও। এর মানে চকোলেট চিপ পছন্দ ওর। ও কি চকোলেট চিপ মাফিনও চুরি করেছে?

৩. ওর বাড়ি রবি রেসের বাড়ির ঠিক পিছনে।

এবার তড়িঘড়ি নীচে নেমে এল ও। বাঘার লাল কলারে লাল ফিতে বেঁধে দিল।

এত সকাল সকাল কই চললি? চাচী জিজ্ঞেস করল। কিশোর আর বাঘাকে কিচেন দরজার দিকে এগোতে দেখেছে।

জুলিয়াদের বাড়িতে। হারানো মাফিনের রহস্য এখনও ভেদ করতে পারিনি। তার সাথে যোগ হয়েছে এক ব্যাগ সদাই, চারটে বার্গার আর একটা চকোলেট চিপ কুকি।

ওহ, তোর বাঘা হয়তো চুরিগুলো করেনি, বলল চাচী।

অবশ্যই না। এত খাবার ও চুরি করবে কীভাবে?

ঠিকই বলেছিস। আমার আসলে ওকে দোষ দেওয়া ঠিক হয়নি।

বাদ দাও, হওয়ার হয়েছে, বলে দরজার দিকে পা চালাল কিশোর।

বাঘাকে নিয়ে বেরিয়ে এল ও। তাজা বাতাস আর ঝলমলে রোদ পেয়ে ফুর্তি ধরে না বাঘার। লেজ নাড়ছে আর কিশোরের পা চাটছে।

ওর কাণ্ড দেখে হেসে ফেলল কিশোর।

ওরা জুলিয়ার বাসার কাছে পৌঁছে সাইডওয়কে মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে রইল।

এবার মাথা নুইয়ে পা টিপে টিপে হার্ভেদের ব্যাকইয়ার্ডের উদ্দেশে এগোল কিশোর।

অ্যাই, তুমি এখানে কী করছ? পিছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলে উঠল।

 আঁতকে উঠল কিশোর। বাঘা ডাক ছাড়ল। ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে জুলিয়া।

ওহ, আহ, হাই, বলল কিশোর।

আমাদের ব্যাকইয়ার্ডে কী করছ তুমি?

লাল হয়ে গেল কিশোরের মুখের চেহারা। কী জবাব দেবে?

শেষমেশ ঠিক করল জুলিয়াকে সত্যি কথাটা বলে দেবে।

চটপট খাবারচোরের কথা ব্যাখ্যা করল ও। এবং জুতোর ফিতেটার কথা বলতেও ভুলল না। আরও জানাল পার্কে কীভাবে রয়কে কুকি চুরি করতে দেখেছে।

কাজেই আমি তোমার ভাইয়ের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছি, স্বীকার করল ও। ওর কোন জুতোয় কিংবা স্কেটে সাদা কালো ফিতে আছে কিনা দেখব।

চোখ সরু করল জুলিয়া।

ও, তুমি এ জন্যে এখানে এসেছ?

হ্যাঁ।

দারুণ! হাততালি দিয়ে উঠল জুলিয়া। আমি তোমাকে সাহায্য করব। শুনে খুব মজার কাজ বলে মনে হচ্ছে।

মৃদু হেসে মাথা ঝকাল কিশোর।

চলো, রয় ঘরে নেই। ওর রুমে গিয়ে ঢুকি। বলল জুলিয়া।

কিন্তু আমার কুকুরের কী হবে?

পিছনের বারান্দায় ওকে আটকে রাখতে পারো, বলল জুলিয়া।

কিশোর বাঘাকে একবার জড়িয়ে ধরল।

ভাল হয়ে থাকিস,বলল।

এবার বারান্দার রেলিঙের সঙ্গে ফিতেটা বেঁধে দিল ও। তারপর জুলিয়ার সঙ্গে তড়িঘড়ি বাড়ির ভিতর ঢুকল। সিঁড়ি বেয়ে সন্তর্পণে দোতলায় উঠে এল। হলের শেষ প্রান্তে রয়ের কামরা।

 নাক টিপে ধরো। ও নোংরার হদ্দ। কাপড়চোপড় ধোয় না, সতর্ক করল জুলিয়া।

নাক না টিপলেও শ্বাস চেপে রাখল কিশোর। অন্যের ঘরে ঢুকছে বলে কেমন ভয়-ভয় করছে।

বলেছিলাম না? দরজা খুলে বলল জুলিয়া। কিশোর মাথা ঝাঁকিয়ে ঢোক গিলল। মেঝেময় টি শার্ট আর মোজা ছড়ানো। ময়লা কাপড় উঁই করা বিছানার উপরে। এখানে ও ঘুমায়। কীভাবে, ভাবল কিশোর।

জুলিয়া একজোড়া পুরানো কালো হাই-টপ তুলে ধরল।

ও রোজ এগুলো পরে। আজকে অবশ্য স্যাণ্ডেল পরেছে, বলল ও।

জুতোজোড়া দেখে নিল কিশোর। কালো ফিতে।

ওর ইন-লাইন স্কেটজোড়া কোথায়? প্রশ্ন করল।

ক্লজিটে, জানাল জুলিয়া।

ঘরের ওপ্রান্তে প্রকাণ্ড এক ওয়াক-ইন ক্লজিট আঙুল ইশারায় দেখাল ও।

দেখতে পারি?

নিশ্চয়ই জানাল জলিয়া।

কিশোর আর জুলিয়া ক্লজিট খুলে পা রাখল ভিতরে।

এই যে, বলে ভারী এক স্কেট তুলল জুলিয়া। তবে ফিতে নীল সবুজ।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। এবার ঝুঁকে বসল এক সার জুতো দেখার জন্য। ক্লজিটের পিছনের দেয়ালে সার বেঁধে রাখা হয়েছে ওগুলোকে।

একজোড়া বাদামি লোফার-ফিতে নেই।

একজোড়া সাদা হাই-টপ-সাদা ফিতে।

একজোড়া পুরানো, ছেঁড়া সবুজ বাস্কেটবল শুনোংরা সবুজ ফিতে।

এবং একজোড়া ধূসর চামড়ার রানিং শু-উজ্জ্বল নীল ফিতে।

নাহ, এগুলো নয়, বলল কিশোর। ওর আর কোন জুতো আছে?

না, শুধু রাগবি ক্লিটস। ওগুলো কালো৷ ফিতেগুলোও কালো।

আচ্ছা, চলো, বলল কিশোর।

কিন্তু জুলিয়া ক্লজিট থেকে যেই বাইরে পা রাখতে যাবে, দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।

 অ্যাই, দরজা খোলো! চেঁচাল জুলিয়া। সর্বশক্তিতে ঠেলা দিল। ক্লজিটের দরজায়, কিন্তু নড়ল না ওটা।

আটকা পড়েছে ওরা!

সাত

বাঁচাও! বাঁচাও! চেঁচাল জুলিয়া। দুমাদুম কিল মারছে ক্লজিটের দরজায়।

কিশোরও ঠেলা দিল দরজায়, কিন্তু খুলতে পারল না।

নবটা ঘোরানো যাচ্ছে না। আটকে গেছে! চেঁচিয়ে বলল কিশোর। ক্রমাগত দরজায় কিল মেরে চলল ওরা, কিন্তু কোন কাজ হলো না।

হঠাই দরজার ওপাশ থেকে কাউকে খিকখিক করে হাসতে শুনল ওরা।

হি হি হি, খুদে ইঁদুরের গুষ্টি! রয়ের কণ্ঠ। ঠিক হয়েছে। অন্যের ঘরে উঁকি দেয়ার উচিত শাস্তি হয়েছে। তোমাদেরকে আর ছাড়ছি না!

দরজা খোলো, রয়, এক্ষুনি, চেঁচাল জুলিয়া।

না, তোমরা ফাঁদে পড়েছ। চিরদিনের জন্যে!

খোলো, নইলে মাকে বলে দেব, চেঁচাল জুলিয়া।

মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেল ঘরটা। এবার দরজাটা খুলে গেল ঝটকা দিয়ে। ট্যান শর্ট, ঘামে ভেজা টি-শার্ট আর স্যাণ্ডেল পরে রয় দাঁড়িয়ে।

 আহা রে, মাকে বলে দেব! ভেঙাল রয়! কী বলবে? আমার ঘরে চুরি করতে ঢুকে গোয়েন্দাগিরি করছিলে? যাও, বেরোও এখান থেকে!

 জুলিয়াকে বোকো না, সব দোষ আমার। আমি বের করার চেষ্টা করছি কে এলাকায় খাবার চুরি করছে, বলল কিশোর।

তো?

তো কালকে তোমাকে দেখেছি পার্কে কুকি চুরি করতে। চোখ উল্টাল রয়।

পিকনিকের একটা ছেলে আমার বন্ধু। আমরা একে অন্যের কুকি ছিনিয়ে নিই। এটা আমাদের একটা খেলা।

 ওহ, বলে গলা খাঁকরে নিল কিশোর। কিন্তু কালকে রাতে? তুমি কি বেড়া টপকে রবি রেসের বাসায় ঢুকেছিলে? খাবার চুরি করেছিলে ওখান থেকে?

হেসে উঠল রয়।

আমি কাল রাতে বাসাতেই ছিলাম না। বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে গেছিলাম।

ওহ, বলল কিশোর। মুখের চেহারা রক্তবর্ণ।

বেরোও এখান থেকে, জুলিয়া, বলে বোনের বাহু চেপে ধরল রয়। তুমিও, গোয়েন্দা কিশোর।

নিঃশব্দে বেরিয়ে এল ওরা।

এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর।

তোমাকে বিপদে ফেলার জন্যে দুঃখিত।

ও কিছু না, বলল জুলিয়া। বরং বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়ে গেল। তোমার আর কোন সাহায্য দরকার?

না, ধন্যবাদ। যাই, বাড়ি যাই।

ঠিক আছে, বলল জুলিয়া। পরে আবার এসো। আবারও গোয়েন্দাগিরি করা যাবে।

বাঘার ফিতে খুলতেই ও লালাফি, টানাটানি আরম্ভ করল। লেজ

যেন বলতে চাইছে, এসো! এখান থেকে বেরিয়ে যাই।

জুলিয়াদের ড্রাইভওয়ের শেষ মাথায় চলে এল কিশোর। কিন্তু বাঘা ওকে বাঁ দিকে টানল।

বোকা কোথাকার, বাসা ওদিকে নয়।

কিন্তু বাঘা ওকে টেনেই চলল। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিল কিশোর।

ঠিক আছে, তোর জন্যে ঘুরপথে বাসায় যেতে হবে দেখছি।

ব্লক ধরে অল্প কিছুদূর এগোল ওরা। জিম কেলিকে সামনের উঠনে দেখতে পেল।

কিশোরকে দেখামাত্র ডেকে উঠল ও।

অ্যাই, কিশোর, তোমার কুকুরটাকে একটু আদর করতে দেবে? ওকে কটা খেলা শেখাতে পারি? দৌড়ে এল কিশোরের কাছে।

এখন নয়, বলে বাঘাকে পিছনে টেনে ধরে রাখল ও। জিম যাতে ওকে ভয় দেখাতে না পারে।

জিম কুঁকে বসে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল বাঘার। জিমের মুখ চেটে দিল কুকুরটা। এবার জিমের জুতো কামড়াতে লাগল।

আরি, ও তো আমার জুতো চিবোচ্ছে। ওকে থামাও।

বাঘাকে টেনে সরাতে গিয়ে একটা জিনিস চোখে পড়ল কিশোরের। বুকের ভিতরে ধড়াস করে উঠল ওর।

সরাও না ওকে! আমার জুতোর ফিতে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে তো! চেঁচিয়ে উঠল জিম।

জানি, বলল কিশোর। সরাসরি জিমের চোখে চোখে চাইল। ও তোমার জুতোর ফিতে চিবোচ্ছে। এবং দুটো ফিতে ম্যাচ করেনি!

আট

তোমার জুতোর একটা ফিতে নতুন, এবং সাদা। অন্যটা পুরানো আর সাদা-কালো, বলল কিশোর।

বাঘার কাছ থেকে পা-টা সরিয়ে নিল জিম। ওর ফিতে খুলে গেল।

তাতে কী? বলে ঝুঁকে বসল বাঁধার জন্য। আমার ফিতে ছিঁড়ে গেছে।

জানি। কোথায় ছিঁড়েছে তাও জানি, আমাদের বাসায়-তুমি যখন চকোলেট চিপ মাফিন চুরি করছিলে! বলল কিশোর।

মিথ্যে কথা। ঝটপট জবাব দিল জিম। আমি চকোলেট খাই না। চকোলেটে আমার অ্যালার্জি।

 তা ঠিক, ভাবল কিশোর। কিন্তু ও যদি মাফিন চুরি না-ই করে থাকে তা হলে ওর জুতোর ফিতে স্ক্রীন ডোরে আটকাল কীভাবে?

আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমার পকেটে, বলে ঘেঁড়া ফিতেটা বের করে দেখাল কিশোর।

জিম চুপ করে আছে।

গড় ফলাফী ও চ দেখলে! তোমার জুতোর ফিতের সাথে হুবহু মিলে গেছে। এতে প্রমাণ হয় তুমি গত শুক্রবার আমাদের কিচেনে ঢুকেছিলে।

আহ… হ্যাঁ,বলল জিম। তবে ঢুকেছিলাম কেউ আমার নাম ধরে ডেকেছে ভেবে। দরজা খুলি আমি, কিন্তু কেউ ছিল না বলে চলে আসি।

ওর কথা বিশ্বাস করল না কিশোর। কিন্তু ও কিছু বলার আগেই হাত থেকে ঝটকা মেরে ফিতে ছুটিয়ে নিল বাঘা।

থাম! ফিরে আয়! চেঁচাল কিশোর। বাঘাকে ধাওয়া করে। বাড়িটাকে পাক খেয়ে জিমদের পিছনের উঠনে চলে এল।

ওকে অনুসরণ করল জিম।

উঠনের এক টুলশেডের উদ্দেশে সোজা ছুটল বাঘা। দরজায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিতরে ঢোকার জন্য আঁচড়াতে লাগল। একই সঙ্গে তারস্বরে ঘেউ-ঘেউ করছে।

ভেতরে ঢুকিস না! চিৎকার ছাড়ল জিম।

কিশোর বাঘাকে অনুসরণ করে শেডের কাছে এল। হাত রাখল দরজার হাতলে।

খুলো না! খুলো না! জিমের চিৎকার।

কেন? বলে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।

জবাব দিল না জিম। কী লুকোতে চাইছে ও, ভাবল কিশোর।

জিম ওকে থামাতে পারার আগেই হাতল ধরে টান দিল কিশোর।

পরমুহূর্তে সাত করে সেঁধিয়ে পড়ল বাঘা। গন্ধ শুঁকছে।

বাদামি এক কাগজের ব্যাগ। সদাই রাখার!

মিসেস বার্বাটভের সদাই! আমি জানতাম! কিশোর বলে উঠল। তোমার জুতোর ফিতেটা দেখামাত্র বুঝে গেছি তুমিই চোর!

বোঁ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রাখল ও। জ্বলন্ত চোখে জিমের দিকে চেয়ে। মাথা নুয়ে পড়েছে ছেলেটির।

হ্যাঁ, স্বীকার করছি চকোলেট চিপ মাফিনগুলো আমিই নিয়েছি। আর মিসেস বার্বাটভের গাড়ি থেকে সদাইয়ের ব্যাগও।

আর মিস্টার রেসের ব্যাকইয়ার্ড থেকে হ্যামবার্গার? প্রশ্ন করল কিশোর।

ডানে জুলিয়া হার্ভেদের বাড়ির দিকে চকিতে চাইল। কাছেই। বাড়িটা। জুলিয়াদের বাড়ির ঠিক পিছনেই রবি রেসের বাড়ি। জিম সহজেই ওখানে পৌঁছতে পারে।

হ্যাঁ, হ্যামবার্গারগুলোও আমি নিয়েছি, স্বীকার করল জিম। কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে?

 আছে, বলে মুচকি হাসল কিশোর। খুশি লাগছে ওর। এই-ই? নাকি আরও খাবার সরিয়েছ।

 আর সরাইনি, বলে মাটির দিকে দৃষ্টি নামাল জিম। একটু পরে চোখে মিনতি নিয়ে কিশোরের দিকে চাইল। কাউকে বোলো না, প্লিজ।

কেন করলে এসব?

আমার জন্যে করিনি। করেছি আমার কুকুরের জন্য। কিশোরের প্রশ্নের জবাবে বলল।

তোমার কুকুর? কিন্তু তোমার তো কুকুর নেই।

বেওয়ারিশ কুকুর। আমি ওকে জিপসি বলে ডাকি। ওকে খেতে দেই, যে কারণে রয়ে গেছে।

 ওহ, মাথা নেড়ে বলল কিশোর। বুঝতে পেরেছে কোন্ কুকুরটার কথা বলছে জিম-বেওয়ারিশ ট্যান কুকুরটা।

জিপসি আমাকে ফলো করছিল, মিসেস বার্বাটভ যেদিন বাড়ি ফেরেন, বলে চলল জিম। উনি বাড়ির ভিতর গেলে সদাই সরাই আমি।

সেজন্যেই ড্রাইভওয়েতে কুকুরের পায়ের ছাপ দেখা গেছে, আওড়াল কিশোর। জিপসি তোমার সাথে ছিল।

হ্যাঁ।

এবার শেডে রাখা সদাইয়ের ব্যাগটা নজরে এল কিশোরের।

কিন্তু ওটা তো এখনও প্রায় ভর্তি।

কাগজ দিয়ে ঠাসা। ন্যাপকিন, পেপার প্লেট, টিসু পেপার এবে। আর এক বাক্স ম্যাকারনি। খাবার বলতে ছিল এক প্যাকেট হ্যামবার্গার মিট।

কিশোর কাছ থেকে দেখল। জিমের কথাই ঠিক। বেশিরভাগই কাগজের জিনিস, তবে মাংসের রসের একটা দাগও রয়েছে।

বাঘা এটার গন্ধই পেয়েছিল, হঠাই অনুভব করল কিশোর। ঝুঁকে বসে বাঘাকে জড়িয়ে ধরল।

বাঘা লেজ নেড়ে কিশোরের নাক চেটে দিল।

সেদিন জিপসিকে মাংস খাইয়েছি, বলল জিম। তারপর খাবার গেল শেষ হয়ে। তাই তোমাদের বাসায় মাফিন দেখে তুলে নিই।

কাজটা ঠিক করনি। কুকুরদের জন্যে চকোলেট ভাল না। বলে কিশোর এক মুহূর্ত চিন্তা করল। জিপসি এখন কোথায়? চারধারে নজর বুলাল।

তোমাকে আসতে দেখে গ্যারেজে আটকে রেখেছি। তুমি আমার মাকে বলে দেবে না তো? জিম আকুল কণ্ঠে প্রশ্ন করল।

জিমদের বাসার পিছনে দড়াম করে উঠল এক স্ক্রীন ডোর।

ওকে আর বলতে হবে না। আমি সবই শুনেছি, বললেন মিসেস কেলি। দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন।

ওহ, না! বলে উঠল জিম, মাথা চাপড়াল।

জিমের কাছে হেঁটে এলেন মিসেস কেলি, ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।

জিম, আমি খুব দুঃখ পেয়েছি তুই খাবার চুরি করছিস শুনে।

কিন্তু, মা- জিম শুরু করেছিল।

না, আমাকে শেষ করতে দে, বাধা দিয়ে বললেন মিসেস কেলি। আমার বোঝা উচিত ছিল তুই কুকুর কতখানি ভালবাসিস।

মার দিকে চাইল জিম।

খাবার চুরির জন্যে আমি দুঃখিত। কিন্তু জিপসি আমাকে পছন্দ করে। আমিও ওকে পছন্দ করি।

বুঝলাম। এখন প্রথম কাজ হচ্ছে মিসেস বার্বাটভকে এগুলো ফেরত দেয়া। আর তুই তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবি।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল জিম।

হ্যামবার্গারের টাকা আমি দিয়ে দেব। এরপর মিসেস পাশার কাছে মাফিন চুরির জন্য মাফ চাইবি। মিস্টার রেসের কাছেও।

আচ্ছা, মৃদু স্বরে বলল জিম।

সদাইয়ের ব্যাগটা তুলে নিতে যাবে, ওর মা বাধা দিলেন।

এক মিনিট। আগে জিপসিকে গ্যারেজ থেকে বের কর। আমি ওকে দেখতে চাই-ও যেহেতু এখন থেকে এ বাড়িতেই থাকবে। বললেন মিসেস কেলি।

মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল জিমের।

মা, সত্যি বলছ? আমি ওকে রাখতে পারব?

হ্যাঁ, কেউ যদি ওকে ফেরত না চায়। তবে আগে ওকে ভেটের কাছে নিতে হবে, কটা শটের জন্য।

মুখ বেজার হয়ে গেল জিমের।

ওর কষ্ট হবে। হেসে উঠল কিশোর।

চিন্তা কোরো না। কুকুররা খুব একটা মাই করে না।

বাঘার ফিতে তুলে নিল কিশোর।

আচ্ছা, আমি যাই।

ধন্যবাদ, কিশোর, বললেন মিসেস কেলি।

মৃদু হাসি ফুটল কিশোরের ঠোঁটে। রহস্যের সমাধান হলো আবার জিমও একটা কুকুর পেল।

তবে আরও বেশি খুশি লাগছে এই ভেবে, চাচীর কাছে প্রমাণ করতে পারবে বাঘা চোর নয়। ও মাফিন চুরি করেনি।

.

বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে চলে এল কিশোর। নীল নোটবইটা বের করল। সাদা এক পাতা উল্টে লিখল:

অবশেষে, মাফিন-রহস্যের সমাধান হলো, দোষ না করেও দোষী হতে কেমন লাগে বুঝলাম আমি। খুব খারাপ লাগে। এখন থেকে আমি আর কাউকেই অযথা দোষী ভাবব না। (বিশেষ করে জর্জ বেস্টকে!)।

বি: দ্র: বাঘা গন্ধ শুঁকে আমাকে রহস্যটা ভেদ করতে সাহায্য করেছে। আমার বাঘা দুনিয়ার সেরা কুকুর।

কেস শেষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *