ক্রয় বিক্রয়-মুদ্রা।
যাহার যে বস্তু অধিক থাকে, সে সেই বস্তু বিক্রয় করে। আর যাহাদের অপ্রতুল থাকে তাহারা ক্রয় করে। লোকে মুদ্রা দিয়া বস্তু ক্রয় করিয়া থাকে। যদি মুদ্রা চলিত না থাকিত তাহা হইলে এক বস্তু দিয়া অন্য বস্তু বিনিময় করিয়া লইতে হইত। কিন্তু তাহাতে অনেক অসুবিধা ঘটিত। কোন বস্তু ক্রয় করিতে হইলে যত মুদ্রা দিতে হয় উহাকে ঐ বস্তুর মুল্য কহে। বস্তুর মূল্য সকল সময়ে সমান থাকে না, কখন অধিক কখন অল্প হয়। যথম কোন বস্তু অধিক মূল্যে ক্রয় করিতে হয় তখন তাহাকে মহার্য ও অক্রেয় কহে। আর যখন অল্পমূল্যে ক্রয় করিতে পাওয়া যায় তথন তাহাকে সুলভ ও শস্তা কহে।
মুদ্রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতুখণ্ড। স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র এই তিন প্রকার ধাতুতে মুদ্রা নির্ম্মিত হয়। এই সকল ধাতু দুষ্পাপ্য, এই নিমিত্ত ইহাতে মুদ্রা নির্ম্মণ করে। দেশের রাজা ভিন্ন আর কোন ব্যক্তিরই মুদ্রা প্রস্তুত করিবার অধিকার নাই! রাজাও স্বহস্তে মুদ্রা প্রস্তুত করেন না। মুদ্রা প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত রাজার লোক নিযুক্ত করা থাকে। রাজা স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র ক্রয় করিয়া দেন। ঐ নিযুক্ত ভূত্যেরা উহাতে মুদ্রা প্রস্তুত করে। যে স্থানে মুদ্রা প্রস্তুত করা যায় তাহাকে টাকশাল কহে। কলিকাতা রাজধানীতে একটী টাকশাল আছে।
টাকশালের লোকেরা হস্তদ্বারা মুদ্রা প্রস্তুত করে না। মুদ্রা প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত তথায় নানা প্রকার কল আছে। টাকার উপর যে মুখ ও ষে সকল অক্ষর মুদ্রিত থাকে তাহা ঐ কালে প্রস্তুত হয়। ঐ মুখ ও অক্ষর হস্ত দ্বারা নির্ম্মিত হুইলে এমত পরিষ্কার হইত না। কোন্ রাজার অধিকারে কোন্ বৎসরে মুদ্রা প্রথম প্রস্তুত ও প্রচলিত হইল,এবং ঐ মুদ্রার মূল্য কত,ঐ সকল অক্ষরে তাহাই লিখিত থাকে। আর ঐ মুখও তৎকালীন রাজার মুখের প্রতিকৃতি।
সকল দেশেই নানা প্রকার মুদ্রা চলিত আছে। আমাদের দেশে যে সকল মুদ্রা চলিত, তন্মধ্যে পয়সা তাম্রনির্ম্মিত; দুআনি, সিকি, আধুলি, টাকা রৌপ্যনির্ম্মিত; আর ঐরূপ সিকি, আধুলি, টাকা স্বর্ণনির্ম্মিতও আছে। স্বর্ণনির্ম্মিত টাকাকে সুবর্ণ ও মোহর কহে।
৪ পয়সায় ১ আনা; ৪ আনায় ১ সিকি;
২ সিকি, অথবা ৮ আনায় ১ আধুলি;
২ আধুলি, অথবা ৪ সিকি, কিম্বা ১৬ আনায় ১ টাকা
১৬ টাকায় ১ মোহর।
সিকি পয়সা অপেক্ষা অনেক ছোট; কিন্তু সিকির মুল্য পয়সা অপেক্ষা ষোল গুণ অধিক। ইহার কারণ এই যে, তাম্র অপেক্ষা রৌপ্য দুষ্প্রাপ্য, এজন্য রৌপ্যের মুল্য অধিক। স্বর্ণ সর্ব্বাপেক্ষ দুষ্প্রাপ্য, এজন্য স্বর্ণের মুল্য সর্ব্বাপেক্ষ অধিক। এক সুবর্ণের অর্থাৎ মোহরের মূল্য ১৬ টাকা, অথবা ১০২৪ পয়সা। যদি মুদ্রা এরূপ দুষ্প্রাপ্য ও মহামূল্য না হইত, আর সকলেই অনায়াসে পাইতে পারিত, তাহা হইলে মুদ্রার এত গৌরব হইত না, এবং মুদ্রা লইয়া কেহ কোন বস্তু বিক্রয় করিত না। ফলতঃ দুষ্প্রাপ্য হওয়াতেই মুদ্রার এত গৌরব ও মূল্য হইয়াছে।
কখন কখন মুদ্রার পরিবর্ত্তে নোট লওয়া যায়। নোট কেবল এক খণ্ড কাগজ। কতক গুলি ধনবান্ লোক একত্র হইয়া ব্যবসায় বাণিজ্যের সুবিধার নিমিত্ত নোট প্রচলিত করে। লোকে তাহাদিগের উপর বিশ্বাস করিয়া টাকার পরিবর্ত্তে ঐ কাগজ লয়। ঐ ধনিরা ঐ টাকার দায়ী থাকে। ঐ সকল ধনী কেবল পরোপকারার্থে নোট প্রচলিত করে না, তাহাদিগেরও যথেষ্ট লাভ আছে। কত টাকার নোট তাহা ঐ নোটে লেখা থাকে। যে স্থানে টাকা পাওয়া দুষ্কর, অথবা যে খানে টাকা পাঠাইতে অসুবিধা ঘটে, এমত স্থলেই নোট বিশেষ আবশ্বক। নোট ব্যাঙ্কে প্রস্তুত হয়। কলিকাতায় বাঙ্গাল ব্যাঙ্ক নামে ঐ রূপ এক ব্যাঙ্ক আছে। ঐ ব্যাঙ্কের নোট বাঙ্গালা দেশের সকল স্থানেই চলিত। লোকে নগদ টাকা আর ব্যাঙ্ক নোট দুই সমান জ্ঞান করে। ঐ ব্যাঙ্কে রাজার সম্পর্ক আছে এই নিমিত্ত উহার এত গৌরব।