কোরআন মতে পৃথিবী কি সমতল না গোলাকার
খুবই সিরিয়াস একই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঠিক আলোচনা নয়, আদতে হাসাহাসি হচ্ছে।
যারা হাসাহাসি করছে তাদের সবাই খুবই স্মার্ট। শুধু স্মার্টই নয়, ওভার স্মার্টও বলা যায়।
এরা কথায় কথায় বলে, আমরা বিজ্ঞান ছাড়া কিছু বুঝিনা। এরা উঠতে-বসতে, হাঁটতে-চলতে সবকিছুতেই বিজ্ঞানের প্রমাণ খুঁজে।
কেউ যখন তাদের বলে, বিজ্ঞানের এইটা এরকম নয়, ঐরকম, তখন তারা তেরেমেরে এসে বলবে, -‘বাপু, তুমি কি বিজ্ঞানী? বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা আছে? ক’ ক্লাশ বিজ্ঞান পড়েছ যে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে আসছো? যাও, আগে পড়ো, পরে লেকচার দিবা।
আবার এই তারাই অনলাইনে কিছু ছাইপাশ পড়া মুক্তমনা তথা নাস্তিকদের লেখা পড়ে সেটাকে এত পরিমান বিশ্বাস করে যে, নিজের বাবা-মাকেও এরা এতো বিশ্বাস করে না।
এইসব নাস্তিকগুলোর অধিকাংশই এমন, যারা আরবিতে কোরআন পড়তে জানে না। কিছু ইংরেজি অনুবাদ এবং বাংলা অনুবাদের খিস্তি উড়িয়ে বলে, কুরআনের এইটা ভুল, ওইটা ভুল। কোরআনের এইটা অবৈজ্ঞানিক, ওইটা অবৈজ্ঞানিক।
লেখা পড়ে মনে হবে, এরা একজন বড় বড় মুফতি ছিল একসময়। কুরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এত সব ভুলভাল দেখে তারা আজকে নাস্তিক হয়ে গেছে।
এরা আরবিতে কোরআন পড়াতো দূরে, অধিকাংশই ২৯ টি হরফ ঠিকমতো বলতেও পারবে না।
এই মুহূর্তে হাসাহাসি হচ্ছে কুরআনের পৃথিবীর আকার নিয়ে।
হাসাহাসি করছে বিপুল, সৌরভ আর নিপুন দা।
বিপুলকে আগে জুমার নামাজে দেখতাম। এখন সে নাকি ধর্ম কর্ম করছে না। বিপ্লব নিয়ে আছে। কমিউনিজম বিপ্লব। বিশ্ববিদ্যালয় আসলে ছেলেদের মধ্যে এমনিতেই রক্ত গরম রক্ত গরম টাইপ একটা ভাব থাকে। এই ভাবের সাথে যখন দু চারখানা মার্কস আর লেলিনের কিতাব যুক্ত হয়, তাহলেতো কথাই নেই। স্বপ্নের মধ্যেও তখন হেলাল হাফিজের পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ জপতে থাকে। বিপুলেরও একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কি না কি পড়েছে, এখন ঈশ্বরকে অলীক কল্পনা মনে করা শুরু করেছে। অবশ্যই এর পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন নিপুন দা। ইনি কট্টর বাম। আমাকেও কয়েকবার আরজ আলী মাতুব্বরের বই-টই পড়তে দিয়েছিল। আমি পড়ে হাসিমুখে ফেরত দিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে বই নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, -‘কী? কী বুঝলে ভাইয়া?’
আমি ফিক করে হেসে বললাম, -‘বুঝলাম যে, লোকটার মেন্টাল ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি বিনা চিকিৎসায় গত হয়েছেন।’
আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে নিপুন দা চমকে গেলেন। এখন বুঝতে পারছি ইনিই বিপুল আর সৌরভের ব্রেইনওয়াশ করেছেন।
এরা এখন যা পড়ে হাসাহাসি করছে, তা একজন ব্লগারের লেখা। ব্লগারটা হিন্দু পরিবারের। হিন্দু পরিবারের হলেও উনি নিজের ধর্ম ত্যাগ করে একসময় নাস্তিকতা চর্চা শুরু করেন। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
এই ব্লগার লিখেছেন, -‘মোহাম্মদের আল্লাহ কি জানতো না যে, পৃথিবী গোলাকার, সমতল নয়? তাহলে মোহাম্মদের আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল বলল কেন? আসলে, কোরআন কোন ঈশ্বরের বাণী-টানী না। এটা স্রেফ মুহাম্মদের নিজের বানানো।
১৫০০ বছর আগে মানুষ বিশ্বাস করতো যে পৃথিবী হল সমতল। মুহাম্মদ তখন যা বিশ্বাস করত, তাই তা লিখে দিয়েছে আর বলে দিছে এইটা আসছে আল্লাহর কাছ থেইকা। হা হা হা। বোকা মুমিনগুলা এটারে আল্লাহর বাণী মনে কইরা বাকুম বাকুম করতাছে।’ (নাউজুবিল্লাহ)
প্রমান হিসেবে উল্লেখ করল এই আয়াতগুলো –‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানা স্বরূপ।’- সূরা নূহ ১৯
[And Allah has made the earth for you as a carpet (spread out)]
‘তিনিই তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা স্বরূপ। আর তাতে তোমাদের জন্য করেছেন চলার পথ।’ সূরা তোয়াহা ৫৩
[He who has made for you the earth like a carpet spread out; has enabled to go about therein by roads (and channels)]
‘অতঃপর তিনি তার জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।’
-আন নাজিরাত ৩০
আমি আর সাজিদ পাশাপাশি বসে আছি। আমার তো গা জ্বলে যাচ্ছে এদের বিদ্রূপ ঠাট্টা দেখে। সাজিদ একদম শান্তভাবে বসে বসে এসব শুনছে। কি করে যে পারছে কে জানে।
নিপুন দা বলল, -‘কি সাজিদ মিয়া, তোমার কি কিছু বলার আছে এই ব্যাপারে?’
সাজিদ হাসলো। সচরাচর যেমন হাসে। এরপর বললো, -‘দাদা তোমরা বলে যাও। আমি না হয় আজ শুনেই যাই।’
-‘না, না। তোমাকেও বলতে হবে। বলতে হবে তুমি কি বিশ্বাস কর, পৃথিবীটা কার্পেটের মতো সমতল? নাকি বিশ্বাস কর পৃথিবীটা গোলাকার?’ –নিপুন দা বলল।
সাজিদ বলল, -‘আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীটা গোলাকার।’
-‘হা হা হা। তাহলে তো কোরানের সাথে বিপরীত হয়ে গেল। কোরআন বলছে পৃথিবীরে কার্পেটের মতো সমতল করে বিছানো হয়েছে। ইউ বিলিভ ইট?’
সাজিদ কিছু বললো না। একটু ঝেড়ে কেশে নিলো। এরপর বলল, -‘দাদা, অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছি তোমরা বলছো ‘সমতল সমতল’। আচ্ছা, কুরআনের ঠিক কোন জায়গায় বলা হয়েছে পৃথিবীটা সমতল?’
নিপুন দা বলল, -‘আরে, কোরআন বলছে পৃথিবীকে বিছানার মত বিছানো হয়েছে। এর মানে কি এই নয় যে, পৃথিবীটাকে সমতল বলা হয়েছে?’
সাজিদ বলল, -‘দাদা, প্রথমেই বলে রাখি, অনুবাদ দিয়ে কোরআনকে জাস্টিফাই করাটা ভুল। দেখো, সমতল শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘সাবি’ ‘আল মুস্তাবি’ এসব। কোরান যদি সত্যিই পৃথিবীকে সমতল বলতো, তাহলে কোরআন নিশ্চয়ই এই শব্দগুলো ব্যবহার করত। কিন্তু কোরআন এখানে এসব শব্দ ব্যবহার করে নি।
কোরআন এখানে ব্যবহার করেছে ‘ফারাশ’ ‘বাস্বাত’ ‘দাহাহা’ এই জাতীয় শব্দ, যার অর্থ সমতল নয়। এগুলোর অর্থ ‘কার্পেট বা বিছানার মত করে বিছানো’ Spread Out। এগুলো দিয়ে কোনভাবেই বুঝা যায় না যে, পৃথিবী সমতল।
নিপুন দা অনেকটাই বিদ্রূপ করে বলল, -‘তাহলে কি বুঝায় এগুলো দিয়ে স্যার সাজিদ?’
সাজিদ বলল, -‘Let me finish…….
আমরা কোরানের সে আয়াতে চলে যাই, যেটাকে নিয়ে তোমাদের আপত্তি। যেটাতে নাকি বলা হচ্ছে, পৃথিবী সমতল। আয়াতটি হলো, -‘তিনি তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা স্বরূপ। আর তাতে তোমাদের জন্য করেছেন চলার পথ।’
দেখো দাদা, আল্লাহ বলছেন, তিনি আমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা স্বরূপ, কার্পেটের মতো করে। আচ্ছা দাদা, বিছানা বলতে আমরা কি বুঝি? আমরা বুঝি, বিছানা এমন একটি জিনিস, যা নরম, আরামদায়ক। যাতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। যদি এটাকে রূপক হিসাবে ধরি, তাহলে এটা এমন কিছু যাতে স্বচ্ছন্দ বেঁচে থাকা যায়, চলাফেরা করা যায়। আজকের বিজ্ঞানও আমাদের সেটা বলছে।
বিজ্ঞান আমাদের বলছে, আমাদের পৃথিবীর ভূত্বক মোট সাতটি স্তরে বিভক্ত। এই স্তরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপরের স্তরের নাম হল Crust। এই স্তরের পুরুত্ব ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত। এটিই সেই স্তর, যে স্তরে আমরা বসবাস করি, চলাফেরা করি। এরপরে আসে Mentle।
এই স্তরের পুরুত্ব ২৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হল ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় মানুষ তো দূরের কথা, একটি ক্ষুদ্র জীবও মুহূর্তে ভস্ম হয়ে যাবে। চিন্তা করো তো, পৃথিবীর যে আমরা বাস করছি, হাঁটছি, চলছি, তার থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার গভীরে এই ভয়াল স্তর অবস্থিত।
এটা তো মাত্র দ্বিতীয় স্তরের কথা। এরপরের স্তরের নাম হলো Outer Core। উইকিপিডিয়া মতে, এর পুরুত্ব ২৮৯০ কিলোমিটার এবং এই স্তরের তাপমাত্রা হলো ৩৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চিন্তা কর, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ এইসব স্তরে কি ঘটে?
এরপরের স্তরের নাম হলো Inner Core। এটা তো আরো ভয়াবহ। এভাবে যত নিচে নামা হয়, স্তরগুলো ততই ভয়ানক। আমরা যে আগ্নেয়গিরি লাভা দেখি, এটা এই সব স্তরের ছোট একটি বিস্ফোরণ মাত্র। কিন্তু আমরা যে স্তরে থাকি, সেই Crust স্তরের তাপমাত্রা অন্য ৬ স্তরের তাপমাত্রার তুলনায় মাত্র ১%, যা আমাদের বসবাসের উপযোগী।
এখন, এই দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ যদি বলেন, আমি তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছি বিছানা স্বরূপ, তাতে কি বোঝা যায়, এটা দ্বারা পৃথিবীর শেইপ বুঝিয়েছেন? একদম না। এটা দিয়ে যে আল্লাহর ভূত্বকের স্তর এর কথাই মিন করেছেন যা, আমাদের বসবাসের উপযোগী, তা আয়াতের পরের অংশ থেকেই বোঝা যায়। এর পরের অংশেই আছে ‘আর’, তাতে তোমাদের জন্য করেছেন চলার পথ।’
এটা তো একদম ক্লিয়ার আছে যে এটা পৃথিবীর আকার নয়, ভূমির ব্যাপারে বলা হয়েছে। এবং, ভূমির সে অংশের ব্যাপারে, যে অংশে আমরা মানুষেরা বসবাস করছি। যেটা আমাদের বসবাসের জন্য উপযোগী। তাহলে এটা দিয়ে পৃথিবীকে সমতল বানিয়ে দেওয়া যায় কি করে? স্রেফ মনগড়া ব্যাখ্যা।’
নিপুন দা চুপ করে আছে। বিপুল বলে উঠল, -‘আচ্ছা সাজিদ ভাই, আপনার কথা মানলাম যে এখানে পৃথিবীর আকার নয়, ভূমির স্তরের কথা বলা হয়েছে আর সেটাকে বিছানার সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি কি কোরআনের এমন একটি আয়াত দেখাতে পারবেন যে, যেখানে বলা হচ্ছে পৃথিবী গোল? সমতল নয়?’
বিপুলের কথা শুনে সাজিদ হেসে উঠলো। বলল, -‘বিপুল, তার আগে তুমি বলোতো, কুরআন কি মানুষকে পৃথিবীর শেইপ কিরকম, পদার্থবিদ্যায় কি কি খাটে, রসায়নে কোন যৌগের সাথে কোন যৌগের বিক্রিয়া ঘটে এসব শেখানোর জন্য নাজিল হয়েছে?
-‘না।’ -বিপুল বলল।
-‘তাহলে তুমি কি করে এক্সপোর্ট করো যে কোরআন পৃথিবীর আকার, আয়তন নিয়ে বলবে?’
এবার বিপুলও চুপ। কিন্তু সাজিদ আর চুপ হল না। সে বলে যেতে লাগলো, -‘ঠিক আছে বিপুল। তুমি যখন আশা করছ, সোনা আমি প্রমাণ করে দেখাতে পারি যে কোরআন পৃথিবীর আকার নিয়ে বলছে, এবং, সেটা গোলাকার।’
এবার আমি, নিপুন দা, বিপুল আর সৌরভ চোখ বড় বড় করে সাজিদের দিকে তাকালাম। বলে কি বেট্যা !!! কোরান পৃথিবীকে গোলাকার যদি বলেই থাকে, তাহলে এতক্ষণ এত কাহিনী বলার কি দরকার ছিল?
নিপুন দা হো হো করে হেসে উঠল। বলল, -‘এবার কি নতুন তত্ত্ব শেখানো হবে নাকি? হা হা হা।
নিপুন দা’র সাথে সাথে বিপুল আর সৌরভও হেসে উঠল। তাদের সাথে সাজিদ হাসছে। আমার তখন সাজিদের উপর খুব রাগ হচ্ছে।
সাজিদ বলল, -‘নিপুন দা, একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবে প্লিজ। কোরআন সরাসরি পৃথিবীকে গোলাকার বলেনি। বলার দরকার ছিলো না। কারণ, কোরআন জিওগ্রাফির কোন বই নয় যে, এখানে পৃথিবীর আকার আকৃতি নিয়ে বলাই লাগবে। তবে, কোরআন কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে। জ্ঞানীদের উচিত তা বুঝে নেওয়া।
নিপুন দা বলল, -‘ও তাই বুঝি? তা বুঝাই দেন দেখি মহাজ্ঞানী সাজিদ ভাই। হা হা হা।’
সাজিদ বলল, –
‘প্রথমত,
সূরা আয যুমারের ৫ নং আয়াত। বলা হচ্ছে, “তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। ”
এই আয়াতে রাত দিন দ্বারা এবং দিন রাত দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়া বুঝাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা হল “ كوريا”। এই শব্দটির একদম সঠিক অর্থ হল প্যাঁচানো / জড়ানো।
ক্লাসিক্যাল আরবি ডিকশনারিতে এর অর্থের ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে, এটি ঠিক এমন -কোন পাগড়ির মধ্যে একটি কাপড় অন্য একটি কাপড়ের মধ্যে যেভাবে পেঁচিয়ে ঢোকানো হয়। একটি অন্যটির মধ্যে পেঁচিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। জীবনে কখনো পাগড়ী দেখলে বা পাগড়ী বেঁধে থাকলে ব্যাপারটা ভালো বুঝার কথা।
আল্লাহ বলেছেন, তিনি রাত দ্বারা দিনকে এবং দিন দ্বারা রাতকে ঠিক সেভাবেই আচ্ছাদিত করেন।
এখন রাতকে দিন দ্বারা এবং দিনকে রাত দ্বারা এভাবে আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে।
আমরা দেখি কিভাবে দিনরাত্রি হয়। প্রথমে ভোর, এরপর আস্তে আস্তে দুপুর, এরপর বিকেল, এরপর গোধূলী, এরপর সন্ধ্যা, এরপর একসময় দিন রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় যে ভাবে আস্তে আস্তে পাগড়ির একটা অংশ অন্য অংশের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
যদি পৃথিবী সমতল হতো, এটা লম্বা কাঠ বা তক্তার মত, তাহলে কি এভাবে দিনরাত্রি হতো? না। তখন এই দিন, আবার চোখের পলকে রাত নেমে পড়তো।
তাহলে সূরা যুমারের এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ রাতকে দিন এবং দিনকে রাতে আচ্ছাদিত করার যে প্রক্রিয়া বলেছেন সেটা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবী গোলাকার হবে। তাহলে কোরান ইন্ডিরেক্টলি ইঙ্গিত করেছে যে পৃথিবী গোলাকার।
দ্বিতীয়তঃ,
সূরা আর রহমানের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই দুই অস্তাচল আর দুই উদয়াচলের মালিক।
এখানে অস্তাচল আর উদয়চল বলতে সূর্যের উদয়-অস্তের কথা বলা হচ্ছে।
আমরা জানি, পৃথিবীতে একদিনে দুইবার সূর্যোদয় আর দুইবার সূর্যাস্ত ঘটে থাকে। আমরা বাংলাদেশে যখন সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত হতে দেখি, তখন আমেরিকানরা দেখে যে সেখানে সূর্যটা পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের এখানে যখন সকাল, তাদের কাছে তা সন্ধ্যা। আবার, আমরা যখন সূর্যকে পশ্চিমে ডুবে যেতে দেখি, তারা তখন সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হতে দেখে। তার মানে, পৃথিবীতে মোট দু’বার সকাল-সন্ধ্যা পরিলক্ষিত হয়। এখন দুবার সূর্যাস্ত আর দুবার সূর্যোদয় তখনই সম্ভব যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে। পৃথিবীর আকার যদি সমতল বা চ্যাপ্টা হত, তাহলে পৃথিবীতে একবারই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় ঘটতো। তক্তা সদৃশ্ পৃথিবীর একপাশে সূর্য উঠে অন্যপাশে ডুবে যেত। কিন্তু সেরকম হয় না। কারণ, পৃথিবী গোলাকার ।
এইজন্য পৃথিবীতে আমরা দুইবার সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখতে পাই।
আল্লাহ কোরআনে একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, -‘তিনিই মালিক দুই অস্তাচল আর উদয়াচলের।’ তাহলে তিনি নিশ্চয় জানেন, পৃথিবী গোলাকার। তাই তিনি দুই সূর্যাস্ত আর দুই সূর্যোদয়ের কথা বলেছেন। তিনি যদি পৃথিবীকে ফ্ল্যাট তথা সমতলই বলবেন, তাহলে অবশ্যই তিনি এক অস্তাচল আর উদয়াচলের কথাই বলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। তার মানে, কোরআন ইঙ্গিত করছে যে, পৃথিবী গোলাকার।
এতোটুকু বলে সাজিদ থামল। বিপুল চুপ করে আছে। নিপুণ দা’ও চুপ। তাদের হয়তো আর কিছু বলার নেই এই মুহূর্তে। সৌরভ বললো, -‘সবই বুঝলাম। কিন্তু পৃথিবীর ভূমিকে বিছানা বলার কি দরকার? এত জটিল করে।’
সাজিদ হাসলো। বললো, -‘সৌরভ আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তখন নিপুন দা আমাকে একটি লাভ লেটার দিয়েছিল বিপাশা দি কে দেবার জন্য। কি নিপুন দা, দেওনি?’
নিপুন দা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল, -‘হ্যাঁ। কিন্তু এখানে বলছো কেন এসব?’
-‘জানো নিপুনদা, আমি সেই চিঠিটা বিপাশা দি কে দেবার আগে খুলে একবার পড়ে নিয়েছিলাম। হা হা হা হা। কি রোমান্টিক প্রেমপত্র ছিল সেটা। হা হা হা।’
নিপুন দা হাসছে, লজ্জাও পাচ্ছে। আমরাও হাসছি। সাজিদ বলল, -‘জানো সৌরভ, সেই চিঠির শুরুতে বিপাশা দি’র রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিপুন দা লিখেছে, ‘তোমার ওই চাঁদ মুখখানা না দেখলে আমার দিনটাই পানসে লাগে।’
আমরা সবাই হো হো করে হাসছি। সাজিদ আবার বলল, -‘আচ্ছা সৌরভ, নিপুন দা যে বিপাশার দি’র মুখকে চাঁদমুখ বলেছে, এখানে নিপুন দা কি বুঝিয়েছে যে, বিপাশা দি’র মুখ দেখতে চাঁদের আকৃতি মতো? আই মিন গোলাকার?’
সৌরভ বললো, -‘না, উনি বিপাশা দি’র রূপ বুঝিয়েছেন এটা দিয়ে।’
-‘এক্সাক্টলি। নিপুন দা সেদিন ‘চাঁদমুখ’ দিয়ে আসলে বিপাশা দি’র রূপ বুঝিয়েছেন, বিপাশা দি’র মুখের আকৃতি না। এটাকে বলে উপমা। ঠিক সেরকম আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানার উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য কত উপযোগী করেই না এটা তৈরি করেছেন। এটা দিয়ে তিনি পৃথিবীর আকৃতি বা আমার বা তোমার বেডরুমের বিছানা বুঝান নি, বুঝেছো?’
সৌরভ একদম চুপ মেরে গেল। সে নিশ্চয়ই বুঝেছে। বিপূলও চুপচাপ।
সাজিদ নিপুন দা’র কাছে গিয়ে বললো, -‘স্যরি দা ভাই, ওই চিঠিটা তোমার পারমিশন ছাড়াই পড়েছিলাম বলে। কি করব বল? তোমাদের মত সিনিয়ারদের থেকেই তো এক্সপেরিয়েন্স নিতে হবে। তাই না? হা হা হা।’
নিপুন দা সাজিদকে ধরতে যাচ্ছিল আর সে অমনি দিল এক দৌড়………….
[তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, আল্লাহ সত্যি সত্যিই পৃথিবীকে কার্পেটের মতো করে তৈরি করেছেন, তা হলেও কোনো ভুল হবে না। কারণ, কার্পেট যে শুধু সমতল জিনিসে করা হয়, তা নয়। গোলাকার জিনিসও কার্পেট করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফুটবলের কথা চিন্তা করুন। ফুটবল একটি গোলাকার জিনিস। এর উপরিভাগ কিরকম? কার্পেটের মতো করে আচ্ছাদিত। সো, আল্লাহ যদি বলেন, তিনি ভূমিকে কার্পেটের মতো করে বিছিয়েছেন, তাহলে ধরা যায় যে, ফুটবলের মত গোলাকার ভূমিকে কার্পেটের মত বিছিয়েছেন।
তাছাড়া, সূরা আল ইনশিক্কাকের ৩ নম্বর আয়াতে আছে, – ‘যেদিন পৃথিবীকে সমতল করা হবে…’
এখানে বলা হচ্ছে কিয়ামত দিবসের কথা। সেদিন পৃথিবীকে আল্লাহ সমতল করবেন। তাহলে, তিনি যদি এখনই পৃথিবীকে সমতল করে তৈরি করতেন, আবার কিয়ামত দিবসে এটাকে সমতল করার কথা আসে কিভাবে?]
সূরা আল ইনশিকাক এর ৩ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে আপনি বলতেছে সমতল করা হবে কোনটা সঠিক?
সূরা ত্বহা আয়াত ১০৬-১০৭ পড়ুন।
কুরআন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একেক আয়াতে একেক রকম ব্যাখ্যা করা ধন্যবাদ
যে গ্রন্থটি সমগ্র মানবজাতির পথ প্রদর্শক হবে সেটি কোন নির্দিষ্ট ভাষায় রচনা করাই ছিল বড় ভুল। তাহলে আর আরিফ আজাদের মত পন্ডিতদের এই গ্রন্থের অলৌকিকত্ব প্রমাণের জন্য এত কষ্ট কল্পনার দরকার হত না। এই প্রমাণের জন্য ইতোমধ্যে আরিফ আজাদরা লাখ লাখ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছেন, লিখবেন আরো লাখ লাখ। তবুও শেষ হয়েও হবে না শেষ। কারণ কল্পনা তো অনন্ত অসীম।
আপনার মার উচিত ছিলো আপনাকে ২০৬ টা ভাষা এক সাথে শিক্ষানোর তাহলে আপনাকে পাবনাজেলার মানসিক হাসপাতালে পৃথিবীতে বিরল প্রজাতি হিসেবে দেখা যেত আসা করি বুঝবেন । না বুঝলে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি আপনি ১০০০০হাজার রকমের ওষুধ এক সাথে খাইবেন দেখবেন হুস ফিরে আইছে নেশার জগত থেকে
তোমাকে পূর্বে ও ভুল দেখলাম,এখনো সে যায়গায়।
তুমি বাতিকে পরে কথা বলো কেন?