কোজাগর – ৪৩

৪৩

একবার বাইরে বেরিয়ে বারান্দায় রাখা জলে হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে আবার ঘরে ঢুকে পড়লাম। বড় অপমান লাগে। এমন ভয়ের মধ্যে জবুথবু অসম্মানের মধ্যে বাঁচতে কারই বা ভালো লাগে? এই চিতাটা যেন রোশনলালবাবুর, গোদা শেঠ এবং আমাদের বন-পাহাড়ের সমস্ত রকম ভয়েরই প্রতিভূ হয়ে উঠেছে। 

ঘরে বসে রান্নাঘরে তিতলি এবং তার মায়ের হাতে-হাতে রুটি বানানোর চটাস্ ফটাস্ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। রুপোর মল বাজছে রিনরিনিয়ে। বাইরে ঝিঁঝির ডাক। হঠাৎ-ওঠা কোনো উদাসী হাওয়ার আঁচল উড়ছে জঙ্গলের ডালপালাতে। হুলুকু পাহাড়ের নীচের পাহাড়তলি থেকে আবার হনুমানেরা হুপ্‌হাপ্ করে ডেকে উঠলো। অড়হড়ের ডালে এবার সবার দিল ঘি আর মশলা দিয়ে তিতলি। বাইরের রাতের প্রথম প্রহরের প্রকৃতির গন্ধর সঙ্গে ডাল সম্বারের গন্ধ মিশে গেল। তিতলি রান্না করছে বলেই বোধহয়, হঠাৎ আবার বাঁধুনি লালটু পাণ্ডের কথা মনে এল। কত শায়েরই না বানাতো লালটু! বেশির ভাগই ভুলে গেছি। তবু কিছু কিছু মনে পড়ে যায়, যেমন:

“রওশনী সুরজ সে হোতা হ্যায় 
সিঁতারোসে নেহী 
মুহব্বত্ এক সে হোতা হ্যায় 
হাজারোসে নেহী।” 

অথবা 

“লিতা হুঁ খাতেঁ খুসে, সিয়াহী না সমঝনা
মরতা হুঁ তেরী ইয়ামে জিন্দা না সামঝনা।”

অথবা 

“ফুল হ্যায় গুলাব্ কা শুঁকতে রহিয়েগা 
পত্র হ্যায় গরীব্বা ভেজতো রহিয়েগা।” 

সংসারের নিয়ম বোধহয় এই রকমই। যারা কিছুমাত্র বাকি না-রেখে অন্যকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে বসে থাকে তারাই, এমন করে ঠকে। যাদের বিবেক নেই, তারাই চিরদিন বিবেকবানদের ঠকিয়ে এসেছে, এসেছে সৃষ্টির আদি থেকে। এইটেই নিয়ম। অন্যরকম হলে হয়তো বলতে হত যে, নিয়মের ব্যতিক্রমই ঘটেছে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *