কেমন আছেন?
‘কেমন আছেন?’
‘বলতে পারব না।’
‘যাচ্ছেন কোথায়?’
‘মাধ্যমিক।’
‘আগে পাস করেননি?’
‘আমি করেছি। এইবার আমার ছেলে। এখন যাচ্ছি ডাক্তারবাবুর কাছে।’
‘কেন? ছেলের পেট ছেড়েছে টেনশনে?’
‘ছেলে নয়। ছেলের মায়ের নাড়ি ছেড়ে গিয়েছে। স্ট্রোক। হাঁ করে পড়ে আছে। ঠোঁটের কাছে কান নিয়ে গিয়ে শুনলুম, বিড়বিড় করে বলছে, পাঁচটা নম্বর ছেড়ে দিয়ে এল, কী হবে রে?’
ভদ্রলোক ছুটলেন। ঊর্ধ্বশ্বাসে।
আর এক পরিচিতকে জিগ্যেস করলুম, ‘কী হল? অশৌচ না কি? দাড়ি কামাওনি!’
‘বাবা চলে গেলেন।’
‘সে কী? কী হয়েছিল?’
‘ইলেকট্রিক বিল।’
‘সে আবার কী অসুখ? কোনও নতুন ভাইরাস?’
‘না, না, ইলেকট্রিক বিল। হাতে নিলেন। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর ঘটের মতো উলটে গেলেন, আর সোজা হলেন না।’
আর একজনকে জিগ্যেস করলুম। ‘কেমন আছেন?’
‘নেই ভূত হয়ে গিয়েছি।’
‘সে আবার কী?’
‘থার্ড ইয়ারে পড়ল। বোধহয় রজত জয়ন্তী করে যেতে হবে।’
‘এখন ছুটছেন কোথায়?’
‘খোঁচাতে।’
খুব ধীরে ধীরে হাঁটছেন। বৃদ্ধ মানুষ। হাতে বাজারের ব্যাগ। জিগ্যেস করলুম, ‘জ্যাঠামশাই। কেমন আছেন?’
‘বড় দুশ্চিন্তায় আছি বাবা?’
‘কী আবার হল?’
বড় আশা করে আছি, বাংলার ছেলে ওয়ার্ল্ড কাপ কোলে করে দেশে ফিরবে, যদি না পারে?’
‘না পারলে কী আর করা যাবে। খেলায় হারজিত থাকবেই।’
‘তুমি বুঝছ না, এইটা আমার শেষ ওয়ার্ল্ড কাপ। এই একটা কাপই আমরা ঘরে আনতি পারি, ফুটবলে আমাদের আশা নেই।’
‘শেষ বলছেন কেন?’
‘গতবারের কাপে বিরাজ গেল। এবারে আমার পালা। এই টেনশন সহ্য করার মতো হার্টের অবস্থা আর নেই। একবার ধাক্কা মেরেছে। বাড়ির লোক টিভির সামনে আমাকে বসতেই দিচ্ছে না। সামনে গেলেই দুরদুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার কী বলছে জানো, আমি না কি অপয়া। আমি থাকলেই ভারত হারবে।’
‘যাচ্ছেন কোথায়?’
‘আজ শনিবার, যাই পুজো চড়িয়ে আসি, ডাব চিনি দিয়ে।’
এইবার নিজেকেই প্রশ্ন ‘কেমন আছ ভাই?’
উত্তর : ‘এ দেশে কেউ খারাপ থাকতে পারে! এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা।’